রাজাবলির প্রথম খণ্ড
১৩ যারবিয়াম বেদির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যাতে তিনি বলি উৎসর্গ করতে পারেন এবং সেগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয়। সেইসময় যিহোবার একজন দাস তাঁর আজ্ঞা পেয়ে যিহূদা থেকে বৈথেলে এলেন। ২ তিনি যিহোবার আজ্ঞা অনুযায়ী বেদির দিকে মুখ করে উচ্চস্বরে বললেন: “হে বেদি! হে বেদি! যিহোবা এই কথা বলেন: ‘দেখো! দায়ূদের পরিবারে যোশিয় নামে একটি ছেলের জন্ম হবে। তিনি তোমার উপর সেই যাজকদের বলি হিসেবে উৎসর্গ করবেন, যারা উঁচু জায়গাগুলোতে সেবা করে এবং তোমার উপর বলি উৎসর্গ করে, যাতে সেগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয়। তিনি তোমার উপর মানুষের হাড় পোড়াবেন।’” ৩ এরপর, তিনি সেই দিনই একটা চিহ্ন দিলেন। তিনি বললেন: “এই কথা যে পূর্ণ হবেই, সেই বিষয়ে যিহোবা এই চিহ্ন দিয়েছেন: দেখো! এই বেদি দু-টুকরো হয়ে যাবে আর এর উপরে যে-ছাই* রয়েছে, তা ছড়িয়ে পড়বে।”
৪ সত্য ঈশ্বরের দাস বৈথেলের বেদির বিরুদ্ধে যে-বার্তা শুনিয়েছিলেন, সেই বার্তা শোনামাত্রই রাজা যারবিয়াম বেদি থেকে তার হাত সরিয়ে নিলেন আর ঈশ্বরের দাসের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন: “ধরো ওকে!” যেই-না তিনি এই কথা বললেন, অমনি তিনি যে-হাতটা বাড়িয়ে ছিলেন, সেটা শুকিয়ে গেল* আর তিনি সেটা নাড়াতে পারলেন না। ৫ তখন বেদিটা দু-টুকরো হয়ে গেল আর বেদির সমস্ত ছাই ছড়িয়ে পড়ল। সত্য ঈশ্বর যিহোবার দাস তাঁর আজ্ঞা পেয়ে যে-চিহ্নের বিষয়ে বলেছিলেন, এভাবে সেই চিহ্ন পূর্ণ হল।
৬ রাজা সত্য ঈশ্বরের দাসকে বললেন: “দয়া করে আপনার ঈশ্বর যিহোবার কাছে আমার জন্য অনুগ্রহ চেয়ে প্রার্থনা করুন। আমার জন্য প্রার্থনা করুন, যেন আমার হাত ঠিক হয়ে যায়।” তখন সত্য ঈশ্বরের দাস যিহোবার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে প্রার্থনা করলেন আর রাজার হাত আগের মতো হয়ে গেল। ৭ তখন রাজা সত্য ঈশ্বরের দাসকে বললেন: “আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে গিয়ে একটু খাওয়া-দাওয়া করুন। আমি আপনাকে একটা উপহারও দিতে চাই।” ৮ কিন্তু, সত্য ঈশ্বরের দাস রাজাকে বললেন: “আপনি আমাকে আপনার অর্ধেক রাজপ্রাসাদ দিয়ে দিলেও আমি আপনার সঙ্গে যাব না আর এই জায়গায় আমি রুটি অথবা জল, কিছুই খাব না। ৯ কারণ যিহোবা আমাকে আজ্ঞা দিয়েছেন: ‘তুমি রুটি অথবা জল, কিছুই খাবে না আর যে-রাস্তা ধরে এসেছ, সেই রাস্তা ধরে ফিরে যাবে না।’” ১০ তাই, তিনি অন্য রাস্তা ধরে ফিরে গেলেন। তিনি যে-রাস্তা ধরে বৈথেলে এসেছিলেন, সেই রাস্তা ধরে গেলেন না।
১১ বৈথেলে একজন বৃদ্ধ ভাববাদী থাকতেন। তার ছেলেরা বাড়ি এসে তাকে বলল, সেই দিন সত্য ঈশ্বরের দাস বৈথেলে কী কী করেছেন এবং রাজাকে কী কী বলেছেন। এই সমস্ত কিছু শুনে ১২ তাদের বাবা তাদের জিজ্ঞেস করলেন: “তিনি কোন রাস্তা ধরে গিয়েছেন?” তার ছেলেরা তাকে বলল যে, যিহূদা থেকে আসা সত্য ঈশ্বরের দাস কোন রাস্তা ধরে গিয়েছেন। ১৩ তখন তিনি তার ছেলেদের বললেন: “আমার জন্য গাধাটা প্রস্তুত করো।” তারা গাধাটা প্রস্তুত করল আর তিনি সেই গাধায় চড়ে বেরিয়ে পড়লেন।
১৪ তিনি সত্য ঈশ্বরের দাসকে খুঁজতে খুঁজতে গেলেন আর তাকে একটা বড়ো গাছের নীচে বসে থাকতে দেখলেন। বৃদ্ধ ভাববাদী তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “আপনিই কি সত্য ঈশ্বরের সেই দাস, যিনি যিহূদা থেকে এসেছেন?” তিনি বললেন: “হ্যাঁ, আমিই সেই ব্যক্তি।” ১৫ ভাববাদী তাকে বললেন: “আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে চলুন আর খাওয়া-দাওয়া করুন।” ১৬ কিন্তু, সেই দাস বললেন: “ক্ষমা করবেন, আমি আপনার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারব না। আমি আপনার সঙ্গে যেতে পারব না। আমি এই জায়গায় রুটি অথবা জল, কিছুই খেতে পারব না। ১৭ কারণ যিহোবা আমাকে আজ্ঞা দিয়েছেন, ‘তুমি সেখানে রুটি অথবা জল, কিছুই খাবে না আর যে-রাস্তা ধরে এসেছ, সেই রাস্তা ধরে ফিরে যাবে না।’” ১৮ এতে সেই বৃদ্ধ ভাববাদী বললেন: “আমিও আপনার মতোই একজন ভাববাদী আর একজন স্বর্গদূত আমাকে যিহোবার এই বার্তা জানিয়েছেন, ‘যাও, তাকে ফিরিয়ে আনো। তাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে এসো, যাতে সে রুটি ও জল খেতে পারে।’” (ভাববাদী তাকে মিথ্যা কথা বললেন।) ১৯ তখন সেই দাস তার সঙ্গে ফিরে গেলেন, যাতে তার বাড়ি গিয়ে রুটি ও জল খেতে পারেন।
২০ তারা যখন টেবিলে বসে ছিলেন, তখন যিহোবার বার্তা সেই বৃদ্ধ ভাববাদীর কাছে এল, যিনি তাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ২১ সেই ভাববাদী যিহূদা থেকে আসা সত্য ঈশ্বরের দাসকে বললেন: “যিহোবা এই কথা বলেন: ‘তুমি যিহোবার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছ আর তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে যে-আজ্ঞা দিয়েছিলেন, তুমি সেটা পালন করনি। ২২ তুমি রুটি ও জল খাওয়ার জন্য সেই জায়গায় ফিরে গিয়েছ, যে-জায়গার বিষয়ে তোমাকে বলা হয়েছিল, “তুমি রুটি অথবা জল, কিছুই খাবে না।” এইজন্য তোমার মৃতদেহকে তোমার পূর্বপুরুষদের কবরে কবর দেওয়া হবে না।’”
২৩ সত্য ঈশ্বরের দাসের খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পর সেই বৃদ্ধ ভাববাদী যে-ভাববাদীকে ফিরিয়ে এনেছিলেন, তার জন্য গাধা প্রস্তুত করলেন। ২৪ তারপর, সেই ভাববাদী গাধায় চড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু, রাস্তায় একটা সিংহ এসে তাকে মেরে ফেলল। তার মৃতদেহ রাস্তার উপরই পড়ে রইল আর গাধাটা মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। সিংহটাও মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। ২৫ সেই রাস্তা ধরে যারা যাওয়া-আসা করছিল, তারা দেখল, রাস্তার উপর একটা মৃতদেহ পড়ে রয়েছে আর সেটার পাশে একটা সিংহ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা গিয়ে সেই নগরে এই খবর জানাল, যেখানে সেই বৃদ্ধ ভাববাদী থাকতেন।
২৬ যে-ভাববাদী তাকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন, তিনি যখন এই খবরটা শুনলেন, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে বললেন: “ওটা নিশ্চয়ই সত্য ঈশ্বরের সেই দাসের মৃতদেহ। তিনি যিহোবার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছিলেন। তাই, যিহোবা তাকে সিংহের হাতে তুলে দিয়েছেন, যাতে সেটা তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে। যিহোবা তাকে যেমনটা বলেছিলেন, ঠিক তেমনটাই হল।” ২৭ তখন সেই বৃদ্ধ ভাববাদী তার ছেলেদের বললেন: “আমার জন্য গাধাটা প্রস্তুত করো।” তারা গাধাটা প্রস্তুত করল। ২৮ ভাববাদী সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লেন আর তিনি দেখলেন, রাস্তার উপর মৃতদেহটা পড়ে রয়েছে আর সেটার পাশে গাধা ও সিংহটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিংহটা মৃতদেহ খায়নি কিংবা গাধাটাকে আক্রমণও করেনি। ২৯ ভাববাদী সত্য ঈশ্বরের দাসের মৃতদেহটা তুলে সেই গাধার পিঠে চাপালেন। তিনি তাকে নিজের নগরে নিয়ে এলেন, যাতে তিনি তার জন্য শোক করতে এবং তাকে কবর দিতে পারেন। ৩০ ভাববাদী নিজের জন্য যে-কবরটা তৈরি করেছিলেন, সেটার মধ্যে মৃতদেহটা রাখলেন। তিনি তার জন্য কাঁদতে কাঁদতে বললেন: “হায় আমার ভাই! তোমার এ কী দশা হল!” ৩১ তাকে কবর দেওয়ার পর ভাববাদী তার ছেলেদের বললেন: “আমার মৃত্যুর পর আমাকে সেই জায়গায় কবর দিয়ো, যেখানে সত্য ঈশ্বরের সেই দাসকে কবর দেওয়া হয়েছে। আমার হাড়গোড় তার হাড়গোড়ের পাশেই রেখো। ৩২ তিনি বৈথেলের বেদির বিরুদ্ধে এবং শমরিয়ার নগরগুলোর উঁচু জায়গাগুলোতে নির্মিত সমস্ত উপাসনার ঘরের বিরুদ্ধে যিহোবার যে-বার্তা শুনিয়েছেন, সেটা অবশ্যই পূর্ণ হবে।”
৩৩ এত কিছু হওয়ার পরও যারবিয়াম মন্দ পথ ত্যাগ করলেন না। তিনি উঁচু জায়গাগুলোতে সেবা করার জন্য সাধারণ লোকদের মধ্য থেকেই যাজকদের নিযুক্ত করতে থাকলেন। যে-ই যাজক হতে চাইত, যারবিয়াম তাকে যাজক হিসেবে নিযুক্ত করতেন। তিনি বলতেন: “ও যাজক হতে চাইলে হোক!” ৩৪ যারবিয়ামের পরিবারের এই পাপের কারণেই তারা বিনষ্ট হল এবং পৃথিবী থেকে তাদের নাম মুছে গেল।