শমূয়েলের দ্বিতীয় পুস্তক
১০ পরে, অম্মোনীয়দের রাজা মারা গেলেন আর তার জায়গায় তার ছেলে হানূন রাজা হলেন। ২ তখন দায়ূদ বললেন: “হানূনের বাবা নাহশ যেভাবে আমার প্রতি অটল প্রেম দেখিয়েছিলেন, সেভাবেই আমিও হানূনের প্রতি অটল প্রেম দেখাব।” তাই, দায়ূদ হানূনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার কাছে নিজের সেবকদের পাঠালেন। কিন্তু, দায়ূদের সেবকেরা যখন অম্মোনীয়দের দেশে গেল, ৩ তখন অম্মোনীয়দের অধ্যক্ষেরা তাদের প্রভু হানূনকে বললেন: “আপনার কী মনে হয়, দায়ূদ কি সত্যিই আপনার বাবাকে সমাদর করার এবং আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তার সেবকদের পাঠিয়েছেন? না। তিনি তো আমাদের নগরটা দেখার এবং সেটার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার লোকদের পাঠিয়েছেন, যাতে পরে তিনি এসে নগরটা ধ্বংস করতে পারেন।” ৪ তখন হানূন দায়ূদের সেবকদের ধরে তাদের সবার এক পাশের দাড়ি কামিয়ে দিলেন আর তাদের পোশাকের কোমরের নীচের অংশটা কেটে দিলেন আর তারপর তাদের পাঠিয়ে দিলেন। ৫ দায়ূদকে যখন জানানো হল যে, তাদের প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে সেই সেবকদের কাছে তার লোকদের পাঠালেন কারণ সেই সেবকদের চরম অপমান করা হয়েছিল। রাজা তাদের কাছে এই বার্তা পাঠালেন: “তোমাদের দাড়ি আবারও বেড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা যিরীহোতেই থাকো, তারপর তোমরা এখানে ফিরে এসো।”
৬ কিছুসময় পর, অম্মোনীয়েরা বুঝতে পারল যে, তারা নিজেদের দায়ূদের শত্রু করে তুলেছে। তাই, অম্মোনীয়েরা অন্যান্য দেশে তাদের বার্তাবাহকদের পাঠাল আর সেই জায়গাগুলো থেকে লোক ভাড়া করে আনল। বৈৎ-রহোব ও সোবা থেকে ২০,০০০ জন সিরিয়ার লোক এল, যারা পদাতিক সৈন্য ছিল। মাখার রাজা তার ১,০০০ জন লোককে নিয়ে এলেন আর ইশ্টোব থেকে* ১২,০০০ জন লোক এল। ৭ দায়ূদ যখন এই বিষয়ে শুনলেন, তখন তিনি যোয়াব এবং তার পুরো সেনাবাহিনীকে ও সেইসঙ্গে তার বীরযোদ্ধাদের পাঠালেন। ৮ অম্মোনীয়েরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে নগরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। সোবা ও রহোব থেকে আসা সিরিয়ার লোকেরা আর ইশ্টোব* এবং মাখার লোকেরা তাদের ছাড়াই খোলা মাঠে ছিল।
৯ যোয়াব যখন দেখলেন, শত্রুপক্ষের সৈন্যেরা সামনে ও পিছনে, দু-দিক থেকেই তাকে আক্রমণ করার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছে, তখন তিনি ইজরায়েলের সবচেয়ে ভালো সৈন্যদের বেছে নিলেন আর তাদের সিরিয়ার লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত করে দাঁড় করালেন। ১০ তিনি বাকি সৈন্যদের তার ভাই অবীশয়ের অধীনে* মোতায়েন করলেন আর তাদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে অম্মোনীয়দের সঙ্গে লড়াই করার জন্য পাঠালেন। ১১ তিনি অবীশয়কে বললেন: “সিরিয়ার সৈন্যেরা যদি আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, তা হলে তুমি আমাকে সাহায্য করতে এসো। কিন্তু, অম্মোনীয়েরা যদি তোমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, তা হলে আমি তোমাকে সাহায্য করতে যাব। ১২ আমাদের নিজেদের লোকদের জন্য এবং আমাদের ঈশ্বরের নগরগুলোর জন্য দৃঢ় থাকতে হবে এবং সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। আর যিহোবা সেটাই করবেন, যেটা তাঁর দৃষ্টিতে সঠিক।”
১৩ তারপর, যোয়াব এবং তার লোকেরা সিরিয়ার লোকদের মোকাবিলা করার জন্য এগিয়ে গেলেন আর সিরিয়ার লোকেরা তার সামনে থেকে পালিয়ে গেল। ১৪ অম্মোনীয়েরা যখন দেখল যে, সিরিয়ার লোকেরা পালিয়ে গিয়েছে, তখন তারা অবীশয়ের সামনে থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের নগরের ভিতরে চলে গেল। এরপর, যোয়াব অম্মোনীয়দের কাছ থেকে জেরুসালেমে ফিরে এলেন।
১৫ সিরিয়ার লোকেরা যখন দেখল যে, তারা ইজরায়েলের কাছে পরাজিত হয়েছে, তখন তারা আবারও যুদ্ধের জন্য নিজেদের সেনাবাহিনী একত্রিত করল। ১৬ হদদেষর নদীর* এলাকায় বসবাসরত সিরিয়ার লোকদের ডেকে পাঠালেন আর তারা হদদেষরের সেনাপতি শোবকের নেতৃত্বে হেলমে এল।
১৭ দায়ূদকে যখন এই বিষয়ে জানানো হল, তখন তিনি সঙ্গেসঙ্গে ইজরায়েলের পুরো সেনাবাহিনীকে একত্রিত করলেন আর জর্ডন পার হয়ে হেলমে গেলেন। তখন সিরিয়ার লোকেরা দায়ূদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে দাঁড়াল আর তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ১৮ কিন্তু, সিরিয়ার লোকেরা ইজরায়েলের কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে গেল আর দায়ূদ তাদের ৭০০ জন রথচালক এবং ৪০,০০০ জন অশ্বারোহীকে মেরে ফেললেন। তিনি তাদের সেনাপতি শোবককে আঘাত করলেন আর তিনি সেখানেই মারা গেলেন। ১৯ হদদেষরের অধীনে থাকা সমস্ত রাজা যখন দেখলেন যে, তারা ইজরায়েলের কাছে পরাজিত হয়েছেন, তখন তারা সঙ্গেসঙ্গে ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করলেন আর ইজরায়েলের প্রজা হয়ে গেলেন। এরপর, সিরিয়ার লোকেরা আর কখনো অম্মোনীয়দের সাহায্য করার সাহস দেখায়নি।