ভদ্র আচরণ
“নব নৈতিকতার” দ্বারা প্রত্যাখ্যাত?
‘ধিক্ তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আঁধারকে আলো, তিক্তকে মিষ্ট বলিয়া ধরে।’—যিশাইয় ৫:২০.
এই বিংশ শতাব্দী ভদ্র আচরণ এবং নৈতিকতা সম্বন্ধে অনেক পরিবর্তন দেখে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পরের দশকগুলিতে পুরনো মূল্যবোধ ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে সেকেলে বলে ধরা হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং মানব আচরণ ও বিজ্ঞানের বিষয়ে নতুন তত্ত্ব অনেককে দৃঢ় নিশ্চিত করে দেয় যে পুরনো মূল্যবোধ বৈধ নয়। ভদ্র আচরণ যা আগে উচ্চ মান হিসাবে ধরা হত এখন সেটিকে বাড়তি মাল হিসাবে ফেলে দেওয়া হয়। বাইবেলের নিদের্শাবলী যা আগে সম্মান করা হত তা এখন অপ্রয়োজনীয় বলে বাতিল করা হয়। তা বিংশ শতাব্দীর অবাধ, মুক্ত সমাজের অত্যাধুনিক ব্যক্তিদের জন্য বাধাস্বরূপ ছিল।
মানব ইতিহাসের যে বছরটি এই পরিবর্তনগুলি দেখে তা হল ১৯১৪ সাল। সেই বছর এবং প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সম্বন্ধে ঐতিহাসিকদের লেখা আলোকন দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়, যা ১৯১৪ সালকে বৃহৎ পরিবর্তনের সময়, মানব ইতিহাসে ভিন্ন যুগারম্ভের এক প্রকৃত প্রকাশ হিসাবে ঘোষণা করে। গর্জনকারী কুড়ির দশক, যুদ্ধের পরে আসে এবং লোকেরা যুদ্ধের সময়ে যে মজা করতে পারিনি তা করবার চেষ্টা করে। পুরনো মূল্যবোধ এবং অসুবিধাজনক নৈতিক বাধাসকল সরিয়ে দেওয়া হয় যাতে করে লোকে আনন্দে মেতে থাকতে পারে। নতুন নৈতিকতা, মাংসিক বিষয়ে অসংযম, বিধিবহির্ভূতরূপে স্থাপন করা হয়—সব কিছু চলবে মনোভাব। নতুন নৈতিক নিয়ম স্বভাবতই সাথে করে আচরণের পরিবর্তন নিয়ে আসে।
ঐতিহাসিক ফ্রেডরিক্ লুইস আ্যলেন এই বিষয়ে মন্তব্য করেন: “বিপ্লবের আরেকটি ফল হল যে, ভদ্র আচরণের শুধু পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু—কিছু বছরের জন্য—হয়ে যায় অভদ্র . . .এই দশকে তত্তাবধায়িকরা দেখেন যে অতিথিরা তাদেরকে আসবার ও যাবার সময়ে সম্ভাষণ জানানোর চেষ্টা করে না; ঢিকিট ছাড়া কিংবা নিমন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও লোকেরা নাচেতে আসে, খাবার নিমন্ত্রনে ‘দেরি করে আসা ফ্যাশান’ হয়ে দাঁড়ায়, যে কোন জায়গায় জ্বলন্ত সিগারেট ছেড়ে দেওয়া, কারপেটে সিগারেটের ছাই ফেলে অপরাধ স্বীকার না করা। পুরনো বাধাসকল ছিল না কিন্তু কোন নতুন নিয়মও বানানো হয়নি ইতিমধ্যে অভদ্র লোকেরা যা ইচ্ছা তাই করতে লাগল। যুদ্ধের পরে দশ বছর হয়ত কোনদিন সঠিকভাবে অভদ্র আচরণের দশক বলা হবে। . . . যদি সেই দশক অভদ্র ছিল তার সাথে অসুখীও ছিল। পুরনো নির্দেশ যাওয়ার সাথে সেই সব মূল্যবোধ যা লোকেদের জীবনকে উন্নতি আর অর্থ দিয়েছিল তাও চলে গেল আর এর পরিবর্তে মূল্যবোধ আর সহসা খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
পরিবর্তিত মূল্যবোধ লোকেদের জীবনে যা উন্নতি আর অর্থ পুনঃস্থাপন করে তা আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তা খুঁজবার চেষ্টাও করা হয়নি। গর্জনকারী কুড়ির দশকের সব কিছু চলবে উত্তেজনামূলক জীবন-ধারা, লোকেরা যা চেয়েছিল সেই সব নৈতিক বাধাগুলি থেকে মুক্ত করে। তারা নৈতিকতাকে সরিয়ে দেয়নি কিন্তু তাতে কিছু রদবদল, কয়েকটি নৈতিক বাধাসকল কম করছিল। কালক্রমে তারা সেটিকে নব নৈতিকতা বলে আখ্যা দেয়। তাতে প্রত্যেকে যা তাদের চোখে সঠিক তাই তারা করে। সে নিজের বিষয়ে চিন্তা করে। সে যা ইচ্ছা তাই করে। সে এক স্বাধীনচেতা পথ অবলম্বন করে।
অথবা তাই সে মনে করে থাকে। বস্তুতপক্ষে তিন হাজার বছর আগে জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেন: “সূর্য্যের নীচে নূতন কিছুই নাই।” (উপদেশক ১:৯) এর আগেও, বিচারকর্তৃগণের সময়ে ইস্রায়েলজাতি ঈশ্বরের নিয়ম পালন করবে কি করবে না সেই সম্বন্ধে তাদের অনেক স্বাধীনতা ছিল: “তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না; যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত, সে তাহাই করিত।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২১:২৫) কিন্তু বেশিরভাগ ব্যক্তি নিয়ম পালন করতে রাজি ছিল না। এইরূপ ব্যবহারের ফলে ইস্রায়েলজাতিকে বছরের পর বছর জাতীয় দুর্দশা কাটতে হয়েছিল। ঠিক তেমনি, আজকের দিনে জাতিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী যন্ত্রণা আর দুঃখকষ্ট কাটচ্ছে—এবং এর থেকেও ভয়াবহ সময় আসতে চলেছে।
এই নব নৈতিকতাকে আরও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে আরেকটি কথা ব্যবহার করা হয়েছে তা হল “সম্বন্ধবাদ।” ওয়েবস্টারস নাইন্থ নিউ কলেজিয়েট ডিকশনারি এইভাবে বর্ণনা করে: “এক ধরনের চিন্তাধারা যা হল নৈতিক সত্য ব্যক্তি অথবা দলগুলির উপর নির্ভর করে।” ছোট করে বলতে গেলে সম্বন্ধবাদের শিষ্যরা বলে যে, যা তাদের জন্যে উত্তম তা নৈতিক দিক দিয়ে সঠিক। এক লেখক এই নৈতিকতাকে আরও বাড়িয়ে বলেন যখন তিনি এই বক্তব্যটি করেন: “সম্বন্ধবাদ, সব সময়ই ছিল এবং সত্তরের ‘আমির দশকে’ প্রাদুর্ভূত দর্শন হিসাবে তা উত্থিত হয়; এবং সেটা এখনও আশির দশকের ইয়াপ্পিইসমের উপরে রাজত্ব করে। আমরা হয়ত আমাদের ঐতিহ্যমূলক মানগুলিকে মৌখিক শ্রদ্ধা করি কিন্তু অভ্যাসে, আমাদের কাছে যা সঠিক তা আমাদের জন্য উত্তম।”
আর তার অন্তর্ভুক্ত হল ভদ্র আচরণ—‘যদি আমার ভাল লাগে, তাহলে আমি করব; যদি না লাগে তাহলে করব না। যদিও বা তোমার কাছে এটি ভদ্র আচরণ হলেও আমার জন্য সেটি উপযুক্ত নয়। আমার মৌলিক ব্যক্তিত্ববাদকে নষ্ট করে দেবে, আমাকে দুর্বল দেখাবে, আমাকে নিরীহ করে দেবে।’ আসলে, এইধরনের লোকেদের শুধু রূঢ় কাজের বিষয় বলা হচ্ছে না কিন্তু এমনকি সহজ, দৈনন্দিন মনোরম কথাগুলি যেমন ‘দয়া করে, আমি দুঃখিত, ক্ষমা করুন, ধন্যবাদ, আসুন আপনার জন্য দরজা খুলে দিই, আমার জায়গায় বসুন, আপনার জিনিসটি আমি ধরি।’ এই কথাগুলি এবং এইধরনের অন্য কথাগুলি হল উওম তৈলের মত যা আমাদের মানব সম্বন্ধকে মসৃণ আর আরও উত্তম করে দেয়। ‘অপরের প্রতি ভদ্র আচরণ দেখালে’ আমি-আগে এই ধরনের মানসিকতা যুক্ত ব্যক্তি হয়ত প্রতিবাদ করতে পারে যে, ‘আমার নম্বর ওয়ানের প্রতিমূর্তি তুলে ধরা এবং সেই অনুযায়ী চলাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’
সমাজবিজ্ঞানী জেমস্ খিউ. উইলসন বলেন এই ধরনের ঘৃণা এবং অপরাধমূলক আচরণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হল যা আজকাল “অবজ্ঞাপূর্ণ ভাবে বলা হয় ‘মধ্য-বিত্ত শ্রেণীর ভাঙ্গন” এবং রিপোর্ট আরও বলে: “মানের অবক্ষয়—নৈতিক সম্বন্ধবাদ বৃদ্ধি পাওয়াতে—হয়ত অপরাধ বাড়ার কারণ হতে পারে।” এটি নিশ্চিতরূপে আধুনিক দিনের ধারা যে আত্ম-অভিব্যক্তির উপর কোন বাধা না মানা তা যতই অভদ্র আর ঘৃণার্হ হোক না কেন এর সাথে সম্পর্ক আছে। এটি ঠিক তেমনি যেমন আরেক সমাজবিজ্ঞানী জারেদ টেলার বলেন: “আমরা ধীরে ধীরে আত্ম-সংযম থেকে আত্ম-অভিব্যক্তির দিকে চলে গেছি, অনেক লোকে পুরনো মানগুলি অদম্য বলে বাতিল করে।”
সম্বন্ধবাদ অভ্যাস করলে আপনি আপনার ব্যক্তিগত আচরণের ন্যায়াধীশ হয়ে যান, ফলে তখন অন্যদের বিচার অবজ্ঞা করা যায় এমনকি ঈশ্বরেরও। আপনিই আপনার জন্য কোনটি ঠিক এবং ভুল তার বিচার করেন, ঠিক যেমন এদনে প্রথম মানব দম্পতি করেছিল যখন তারা ঈশ্বরের আদেশ অগ্রাহ্য করে নিজেদের জন্য ঠিক কিংবা ভুল নির্ণয় করেছিল। সর্প হবাকে প্রবঞ্চনা করেছিল এই চিন্তা করতে যে যদি সে ঈশ্বরের অবাধ্য হয় এবং নিষিদ্ধ ফল খায়, তাহলে সে এইরকম হবে যা সে তাকে বলে: “সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” তাই হবা ফলের কিছুটা নেয় এবং খায় আর তারপর কিছুটা আদমকে দেয় এবং সেও তা খায়। (আদিপুস্তক ৩:৫, ৬) আদম আর হবার খাবার সেই সিদ্ধান্ত তাদের এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছিল।
রাজনীতিবিদ্, ব্যবসায়ীরা, দৌড়বীর, বৈজ্ঞানিকরা, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং এক পাদ্রির মধ্যে যে দূষিত অবস্থা দেখা যায় তার লম্বা সারাংশ বলতে গিয়ে এক পর্যবেক্ষক হারভার্ড বিসনেস স্কুলে বলেন: “আমার মনে হয় আজকে আমাদের দেশে যে পরিস্থিতি আমরা অভিজ্ঞতা করছি তা আমি এইরূপে বর্ণনা করতে পছন্দ করি, চরিত্রের অবক্ষয়, পাশ্চাত্ত্য সভ্যতা অনুযায়ী যা মনে করা হয়েছিল অন্তরতর বাধা ও অন্তরতর সদ্গুন তার অভাব যা আমাদের নিজেদের নিম্ন প্রবৃত্তি সন্তুষ্ট করতে দেয় না।” তিনি বলেন “এমন কথাগুলি যা পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্পূর্ণ অপরিচিত, যেমন সাহস, সম্মান, কর্তব্য, দায়িত্ব, সহানুভূতি, সভ্যতা—যে কথাগুলি পুরোপুরি এখন আর ব্যবহার হয় না।”
ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বিষয়গুলি খুব তীব্রভাবে ওঠে। অনেকে দাবি করে যে ‘ঈশ্বর নেই, ঈশ্বর মৃত, কিছু নেই, কোন নৈতিক মান নেই, জীবন পুরোপুরি অর্থহীন এবং এই অর্থহীনতা শুধু বীর ব্যক্তিতাবাদের দ্বারা এটি অতিক্রম করা যেতে পারে।’ হিপ্পিরা মনে করল এটি শুরুর নিদের্শ এবং জীবনের অর্থহীনতা অতিক্রম করার জন্য ‘কোকেন শোঁকা, মারিউয়ানা ধুমপান করা, অবিবাহিত অবস্থায় জীবন-যাপন করা এবং ব্যক্তিগত শান্তি অন্বেষণ করা।’ যা তারা কখনও খুঁজে পায়নি।
এছাড়াও ষাটের দশকের প্রতিবাদ অন্দোলনগুলিও ছিল। এটি শুধুমাত্র ধারা ছিল না বরং মুখ্য আমেরিকান সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায় যা সত্তরের আমি দশকে নিয়ে আসে। এর ফলে সেই দশকে আসি যা সামাজিক সমালোচক টাম উলফ্ বলেছিলেন “আমির দশক।” তার পরিণতি আশির দশকে যা অনেকে ঘৃণার সঙ্গে বলে থাকে “লোভের সুবর্ণ যুগ।”
এর সঙ্গে ভদ্র আচরণের সম্পর্ক কী? সেটি হল নিজেকে প্রথমে রাখা, আর যদি নিজেকে প্রথমে রাখা হয়, তাহলে অপরের সামনে নিচু হতে পারবে না, অপরকে সামনে রাখতে পারবে না, অপরের প্রতি ভদ্র আচরণ দেখাতে পারবে না। নিজেকে প্রথমে রাখলে আপনি হয়ত আত্ম-উপাসনায় জড়িয়ে পড়তে পারেন, নিজের উপাসনা। যারা এইরকম করে থাকে বাইবেল তাদের সম্বন্ধে কী বলে? ‘লোভী ব্যক্তি—যার অর্থ প্রতিমাপূজক,‘ সেটি দেখায় ‘লোভ, যা হল প্রতিমাপূজা।’ (ইফিষীয় ৫:৫; কলসীয় ৩:৫) প্রকৃতপক্ষে সেই ধরনের লোকেরা কাকে সেবা করে? “উদর তাহাদের ঈশ্বর।” (ফিলিপীয় ৩:১৯) নোংরা পরিবর্তিত জীবন-ধারা যা অনেক লোকে নৈতিক দিক দিয়ে ঠিক বলে পছন্দ করেছে এবং সেই জীবন-ধারার চরম দুর্দশা, মৃত্যুগামী পরিণতি যিরমিয় ১০:২৩ পদের সত্যতা দেখায়: “হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।”
বাইবেল আগে থেকে এই বিষয়গুলি জানত এবং সেগুলিকে ‘শেষ কালের’ বিপদ সংকেত বলে দেখায়, যা ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদে লিপিবদ্ধ আছে, নিউ ইংলিশ বাইবেল: “তোমাকে এই বিষয়ের সম্মুখীন হতেই হবে: এই জগতের শেষ যুগ সমস্যার সময় হবে। লোকেরা আত্মপ্রিয় আর অর্থপ্রিয় ছাড়া আর কিছুই হবে না; তারা উদ্ধত হবে, দাম্ভিক, এবং অরুচিকর হবে; পিতামাতার প্রতি কোন সম্মান দেখাবে না, কৃতজ্ঞতাহীন, ভক্তিহীন, অনুভূতিহীন, বিদ্বেষে অপ্রশম্য হবে, কুৎসারটনাকারী, অসংযমী এবং হিংস্র, কোন সাধুতা থাকবে না, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, আত্ম-গুরত্বে ফেঁপে ওঠা ব্যক্তি হবে। এরা এইরকম ব্যক্তি হবে যারা বিলাসিতাকে ঈশ্বরের আগে স্থান দেবে, এইসব ব্যক্তি যারা উপরে উপরে ধর্মকে ধারণ করে তার বাস্তবতাকে অস্বীকার করে। এই সকল লোকেদের কাছ থেকে দূরে থাক।
আমাদের যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল—ঈশ্বরের সাদৃশ্যে এবং প্রতিমূর্তিতে—তার থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। প্রেম, প্রজ্ঞা, ন্যায় এবং শক্তি সম্ভাব্য গুণাবলিগুলি এখনও আমাদের মধ্যে আছে কিন্তু সেগুলি ভারসাম্যহীন ও বিকৃত হয়ে গেছে। প্রথম পদক্ষেপ ফিরবার জন্যে উপরে দেওয়া বাইবেলের শেষ লাইনে প্রকাশ করা হয়েছে: “এই ধরনের ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাক।” নতুন পরিবেশের অন্বেষণ করুন, যা আপনার ভিতরের অনুভূতিকে পরিবর্তন করবে। এই বিষয়ে জ্ঞানদায়ক কথাগুলি বহু বছর আগে ডরোথি থম্সন্-এর দ্বারা লিখিত দ্যা লেডিস হোম জার্নাল-এ পাওয়া যায়। তিনি তার লেখা শুরু করেন এইরকম এক ঘোষণা দিয়ে, যে কিভাবে কিশোর অপরাধ অতিক্রম করা যেতে পারে, কিশোরদের অনুভূতিকে শিক্ষিত করতে হবে তাদের বোধশক্তিকে নয়:
“কিশোর অবস্থায় তার কাজ ও মনোভাবের উপর তার কিশোর অবস্থার কাজ ও মনোভাবের বেশিরভাগ নির্ভর করে। কিন্তু এইগুলি তার মস্তিষ্ক দ্বারা নয় বরং অনুভূতি থেকে সঞ্চারিত। তাকে যা প্রেম, প্রশংসা, উপাসনা, প্রতিপালন এবং আত্মত্যাগ করতে শিক্ষা ও উৎসাহ দেওয়া হয় সে সেইরকম তেরি হয়। . . . এইসব বিষয়ে ভদ্র আচরণ মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে, কারণ ভদ্র আচরণ হল অপরের প্রতি সহানুভূতির অভিব্যক্তি থেকে কমও নয় অথবা বেশিও না। . . . অন্তরের অনুভূতি বহিরাগত আচরণে প্রদর্শিত হয়, কিন্তু বহিরাগত আচরণ অন্তরের অনুভূতি গড়তে সাহায্য করে। সহানুভূতি দেখানোর সাথে সাথে রূঢ় মনোভাব দেখানো কঠিন। ভদ্র আচরণ শুরুতে অগভীর হতে পারে, কিন্তু তা সেই অবস্থাতে থাকে না।”
তিনি এও লক্ষ্য করেন যে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, ভাল এবং মন্দ “বুঝবার ক্ষমতা মস্তিষ্ক থেকে আসে না বরং অনুভূতি থেকে আসে” আর “অপরাধী তৈরি হয় ধমনী কঠিন হয়ে যাওয়ার জন্য নয় বরং হৃদয় কঠিন হয়ে যাওয়ার জন্য।” তিনি জোর দেন যে বেশির ভাগ আমাদের মস্তিষ্কের থেকে আমাদের অনুভূতি আচরণের উপর বেশি কর্তৃত্ব করে এবং যেভাবে আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যেভাবে আমরা কাজ করি, যদিও প্রথমে শক্ত হতে পারে আমাদের অন্তরের অনুভূতিকে প্রভাবিত এবং হৃদয়কে পরিবর্তন করে।
কিন্তু, বাইবেল আমাদের অন্তরের ব্যক্তিত্বকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে সর্ব উচ্চ অনুপ্রাণিত ফরমুলা দেয়।
প্রথমে, ইফিষীয় ৪:২২-২৪: “যেন তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর, যাহা প্রতারণার বিবিধ অভিলাষ মতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িতেছে; আর আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে।”
দ্বিতীয়, কলসীয় ৩:৯, ১০, ১২-১৪: “পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়াছ, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে। অতএব তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরা তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন।”
ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট বলেন: “আমাদের সময়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সাম্যবাদ বনাম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য নয়, ইউরোপ বনাম আমেরিকা নয়, এমনকি প্রাচ্য বনাম পাশ্চাত্ত্য নয়; সেটি হল যে মানুষ কি ঈশ্বর ছাড়া বাঁচতে পারে।”
সাফল্যের সাথে জীবনযাপন করতে হলে আমাদের এই উপদেশটি মানতে হবে। “বৎস, তুমি আমার ব্যবস্থা ভুলিও না; তোমার চিত্ত আমার আজ্ঞা সকল পালন করুক। কারণ তদ্দ্বারা তুমি আয়ুর দীর্ঘতা, জীবনের বৎসর-বাহুল্য, এবং শান্তি, প্রাপ্ত হইবে। দয়া ও সত্য তোমাকে ত্যাগ না করুক; তুমি তদুভয় তোমার কণ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ তোমার হৃদয়-ফলকে লিখিয়া রাখ। তাহা করিলে অনুগ্রহ ও সুবুদ্ধি পাইবে, ঈশ্বরের ও মনুষ্যের দৃষ্টিতে পাইবে। তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।”—হিতোপদেশ ৩:১-৬.
বহু দশক ধরে জীবনযাপনের মাধ্যমে শেখা সদাশয় এবং সহানুভূতিশীল ভদ্র আচরণ অবশ্যই বাড়তি মাল নয়, আর জীবনযাপনের বিষয়ে বাইবেলের নিয়মাবলী পুরনো নয় বরং মানবজাতির অনন্ত পরিত্রাণের জন্য প্রমাণিত হবে। যিহোবা ছাড়া তারা বাঁচতে পারবে না, কারণ ‘যিহোবার কাছে জীবনের উনুই আছে।”—গীতসংহিতা ৩৬:৯.
কিছু লোকে বলে: ‘বাইবেল এবং নৈতিক মানগুলিকে দূর করে দাও’
“ঈশ্বর মৃত”
“জীবনের কোন অর্থ নেই!”
“মারিওয়ানা ধুমপান কর, কোকেন শোঁকো
টেবিলে খাওয়ার নিখুঁত ভদ্র আচরণ যা অনুকরণের যোগ্য
সিডার ওয়াক্সভিংস, সুন্দর, ভদ্র আচরণসহ, অত্যন্ত সামাজিক, একসঙ্গে বসে ক্ষুদ্র রসাল ফলে ভর্তি ঝোপেতে ভোজ করছে। গাছের ডালেতে লাইন করে বসে তারা ফল খায় কিন্তু পেটুকের মত নয়। একটার মুখ থেকে আরেকটার মুখে, তারা একে অপরের কাছে দিতে থাকে, অবশেষে একজন মাধুর্যের সাথে সেটি খায়। তারা তাদের “ছানাদের” কখনও ভুলে যায় না, অক্লান্ত পরিশ্রমে এক একটি করে তারা ফল নিয়ে আসে, যতক্ষণ না তাদের সব ক্ষুধার্ত পেট ভরে যায়। (g94 7/22)
যেভাবে আমরা কাজ করি, যদিও এমনকি প্রথমে কঠিন হতে পারে, আমাদের অন্তরের অনুভূতিকে প্রভাবিত এবং হৃদয়কে পরিবর্তন করে