হূল্যা—হাওয়াইয়ের এক নৃত্যবিশেষ
হাওয়াইয়ের সচেতন থাক! প্রতিনিধি কর্তৃক
হাওয়াইয়ের নাম উল্লেখ করলে প্রায়ই হূল্যার কথা মনে ভেসে উঠবে। যদিও হূল্যা স্বতন্ত্রভাবে হাওয়াইয়ের সাথে জড়িত, কিন্তু এর সূত্রপাত ঘটে দক্ষিণ প্রশান্ত সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে।
প্রাচীন কালে হাওয়াইনদের কোন লিখিত ভাষা ছিল না, তাই গান ও স্তুতির মাধ্যমে তাদের ইতিহাস ও রীতিনীতির বিবৃতি দেওয়া হত। উরুদেশ, হাত ও পায়ের বিচলন এবং তার সাথে মুখের অভিব্যক্তির দ্বারা যে স্তুতি ও গানগুলি গাওয়া হত সেটাই হল হূল্যা।
১৭৭৮ সালে, যখন ক্যাপ্টেন কুক ও তার লোকেদের আবির্ভাব ঘটে, তখন এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না যার সাথে হূল্যার কোন সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। আজকে যা জানা গেছে তার ভিত্তি হল প্রধানত উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কার্যকলাপের সাথে সংযুক্ত গান ও স্তুতিগুলি।
প্রথম দিকে হূল্যা হয়ত কেবল একটা আচারানুষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু তবুও এটা কখনও ভাবা হত না যে হূল্যা একটা উপাসনা অথবা ধর্মীয় পরিচর্যার কোন অংশ।
মিশনারীদের প্রভাব
অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে অনাবাসিক জাহাজের অভিযানকারী ও নাবিকদের জন্য হূল্যা পরিবেশিত হত। এটা সম্ভব ছিল যে ব্যয়কারী খরিদ্দার হিসাবে তারা চাইত যে হূল্যার মধ্য দিয়ে যেন যৌন বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়।
যখন ১৮২০ সালে মিশনারীদের আগমন ঘটে, তখন এই হূল্যাকে নিন্দা করার জন্য তাদের যথেষ্ট জোরালো কারণ ছিল। প্রধান কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর মিশনারীরা হূল্যাকে এক বর্বর ও অশ্লীল—দিয়াবলের কর্ম হিসাবে বর্ণনা করে। এমনকি এরও আগে, ১৮১৯ সালে রাজা কামেহামেহা ১ম এর বিধবা স্ত্রী রাণী রিজেন্ট কাহুমানুর দ্বারা প্রাচীন ধর্মীয় কার্যকলাপের মধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মূর্তিগুলি ভেঙে ফেলা এবং জটিল আচারানুষ্ঠানগুলিকে বর্জন করা। অগণিত নৃত্য ও স্তুতিগুলি চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়।
১৮২৫ সালে কাহুমানুকে গির্জাতে গ্রহণ করা হয়। ১৮৩০ সালে তিনি একটি অনুশাসন জারি করেন যেখানে জনসাধারণের সামনে হূল্যার প্রদর্শনকে নিষেধ করা হয়। ১৮৩২ সালে তার মৃত্যুর পর, কয়েকজন প্রধান কর্তৃপক্ষ তার এই অনুশাসনকে অগ্রাহ্য করে। কয়েক বছর, যখন নৈতিক বিধিনিষেধকে যুবক রাজা কামেহামেহা তৃতীয় ও তার সহকারীরা সরাসরিভাবে অগ্রাহ্য করতে থাকে, তখন কিছু সময়ের জন্য হূল্যা আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ১৮৩৫ সালে রাজা উপলব্ধি করেন যে তার পথ ভুল ছিল এবং রাজ্যটি ক্যালভিনিস্টদের ক্ষমতার অধীনে ফিরে আসে।
হূল্যার পুনঃপ্রবর্তন
রাজা কালাকুয়ার রাজত্বের সময় (১৮৭৪-৯১), জনসাধারণের সামনে প্রদর্শনের জন্য হূল্যাকে আবার সম্পূর্ণরূপে পুনর্গৃহীত করা হয়। ১৮৮৩ সালে তার অভিষেকের সময়, মাসব্যাপী অনুশীলন ও উত্তেজনা চরম পর্যায় পৌঁছায় যখন জনসাধারণের সামনে বহু স্তুতিগান ও হূল্যা প্রদর্শিত হয় আর এদের মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে সেই অনুষ্ঠানের জন্যই রচিত হয়েছিল। ১৮৯১ সালে তার মৃত্যুর সময়, পদক্ষেপ ও দেহ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে হূল্যার মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে এবং কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র যেমন উকুলেলে, গিটার ও বেহালার প্রবর্তন করা হয়।
১৮৯৩ সালে রাজতন্ত্র শাসনের শেষে, হূল্যার ক্ষেত্রে আবার অবনতি লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, এটি আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের দর্শকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নানা ধরনের নতুন বিষয়ের প্রবর্তন করা হয়। যেহেতু অনেকে হাওয়াইন ভাষা বুঝতে পারত না, তাই ইংরাজি শব্দের ব্যবহার করা হয়। আধুনিক হূল্যা বিশেষভাবে জোর দেয় নৃত্যের উপর—হাত, পা ও কোমরের বিচলন এবং মুখের অভিব্যক্তি।
যতই দ্বীপগুলিতে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, ততই হূল্যা অধিকতররূপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রধান দেশগুলি থেকে আগত ভ্রমণকারীরা এই নৃত্যগুলি শিখে, হলিউড চলচ্চিত্রের মধ্যে হাওয়াইনবাসী নয় এমন নর্তকীদের দ্বারা এই নৃত্যগুলি পরিবেশন করে। ১৯৩৫ সালে এমনকি মিন্নি নামক ইঁদুর, মিকির জন্য হূল্যা নৃত্য করে ও সে তার স্টীলের গিটারটি বাজায়।
আজকের দিনে হূল্যা
১৯৭০ দশকে “হাওয়াইন পুনর্জাগরণের” সাথে সাথে কিছু স্তুতি গায়ক, নৃত্যশিল্পী এবং দক্ষ শিক্ষকদের জ্ঞান প্রাচীন হূল্যা নৃত্যকে জাগিয়ে তোলার এক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। আজকে হূল্যা শিক্ষক রয়েছে যারা প্রাচীন নৃত্যগুলিকে আবার জাগিয়ে তোলে এবং এমন শিক্ষকও আছে যারা নতুন কিছু নৃত্য সৃষ্টি করে। যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন তাদের এই প্রচেষ্টা এক ব্যয়বহুল ও আকর্ষণীয় প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে।
বহু হাওয়াইন দেবদেবীর সাথে সম্পর্কযুক্ত আধ্যাত্মিক সংযোগের ধারা আধুনিক যুগেও কিছুটা মাত্রায় চলে এসেছে। মেরী মনার্কের উৎসব যা হাওয়াইয়ের, হিলোতে অনুষ্ঠিত হয়, হূল্যা স্কুল, পরিব্রাজকের ভ্রমণে পেলের অগ্নি গহ্বরের অভিমুখে অথবা সাম্প্রতিক লাভা বিষ্ফোরণের স্থানটির অভিমুখে যাত্রা করে। তারা স্তুতি গান, নাচ করে এবং ফুল, রসাল ফল ও বিশিষ্ট মদ অর্পণ করে যাতে করে প্রতিযোগিতায় তাদের এই প্রচেষ্টার উপর তার আশীর্বাদ লাভ করা যায়। তিনদিন ধরে সমগ্র পৃথিবী থেকে আসা বিভিন্ন দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে যাকে হূল্যার অলিম্পিক হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
হাওয়াইয়ের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে হূল্যার এক বিরাট অংশ আছে। এর অন্তর্ভুক্ত হল স্তুতি গান ও দেবদেবীর প্রতি সম্মানসূচক এক বিষণ্ণ নৃত্য এবং তারই সাথে দ্বীপগুলির দৈনন্দিন জীবনধারার কিছু অভিব্যক্তি যার মধ্যে ধর্মীয় কোন তাৎপর্য নেই।
কয়েক ধরনের হূল্যা নৃত্য করা ও দেখার ক্ষেত্রে খ্রীষ্টানদের অবশ্যই বিশেষ নির্ণয় নিতে হবে। তাদের নিশ্চিত থাকার প্রয়োজন যে অজান্তে তারা যেন কোন দেবদেবীর প্রতি কোন আনুগত্য প্রকাশ না করে। গান ও স্তুতিগুলি শোনা ও গাওয়ার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। এগুলির মধ্যে এমন কিছু শব্দ আছে যার গুপ্ত অথবা দুধরনের অর্থ রয়েছে। এগুলি যদি মনে রাখা যায়, তাহলে দর্শক অথবা অংশগ্রহণকারী হূল্যাকে এক গঠনমূলক চিত্তবিনোদন হিসাবে উপভোগ করতে পারে।