বিশ্বনিরীক্ষা
নীতিবোধের উন্নতি?
কিছুদিন আগে চিন দেশে করা একটা সমীক্ষায় জানা যায় যে “যদিও চিনা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা মনে করেন যে বিবাহ সাথি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা দোষের কিছু নয় কিন্তু বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরী এর বিরোধী,” চায়না টুডে পত্রিকা বলে। ৮,০০০ জনের ওপর করা একটা সমীক্ষা থেকে এটা জানা যায়। ওই সমীক্ষা দেখায়, “তিন-পঞ্চমাংশ কিশোর-কিশোরী একমত যে যারা বিবাহিত ব্যক্তিদের প্রেমে পড়ে তাদের ঘর ভেঙে দেয় তাদের টাকাপয়সা জরিমানা অথবা অন্য কোন শাস্তি হওয়া উচিত,” যখন কি না “৩৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৭০ শতাংশ লোকই মনে করেন যে এর জন্য কোন শাস্তির দরকার নেই।”
দয়ার তালিকা
দ্যা টরেন্টো স্টার খবরের কাগজ বলে, “ছোট বাচ্চারা অন্তত চার বছর পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর এরপর তাদের অন্যের জন্য সহানুভূতি দেখানোর মতো মানসিক বিকাশ ঘটে।” বাবামাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন তারা ঘরেতেই তাদের ছেলেমেয়েদের শেখান যে কী করে তারা অন্যদের দয়া দেখাতে পারে। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য হয়তো একটা তালিকায় রোজ তাদের নিজের থেকে করা ভাল কাজের অন্তত দুটো লিখে রাখতে পারে। বাবামায়েরা যখন দেখেন যে ছেলেমেয়েরা কোন ভাল কাজ করছে তখন তারাও সেটা সেই তালিকায় লিখে রাখতে পারেন। অনেক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি মারামারি বন্ধ করার জন্যও এমন তালিকা বানানো হয়। স্কুলের বাচ্চাদের বলা হয় যে তারা যদি অন্য ছেলেমেয়েদের দয়া দেখাতে দেখে, তাহলে তারাও যেন সেগুলো লিখে রাখে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, “এটা বাচ্চাদের শিখতে সাহায্য করে যে দয়া আসলে কী আর এর মাধ্যমে অন্যদের জন্য তাদের মনে দয়া আসে এবং তারা অন্যদের দয়া দেখায়।”
পায়রা এখনও চিঠি পৌঁছে দেয়
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলে, ভারতে ওড়িশার পুলিশ বিভাগের কাছে আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে, তবুও তারা এখন পর্যন্ত “পায়রার মাধ্যমে যোগাযোগ করা” বন্ধ করেনি। আর প্রায় ৮০০টা পায়রা এই কাজ করে থাকে। ওড়িশার পুলিশ বিভাগের সাধারণ পরিচালক মি. বি. বি. পান্ডে বলেন যে গত ৫০ বছর ধরে বন্যা ও সাইক্লোনের সময়গুলোতে যোগাযোগের জন্য পায়রাই ছিল একমাত্র মাধ্যম এবং এখনও যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেইসব জায়গাতে পায়রাই হল যোগাযোগের একমাত্র উপায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৮২ সালের বন্যায় যখন বাংকি শহর ডুবে গিয়েছিল তখন সেই শহর এবং কটকের জেলা কেন্দ্রীয় দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল পায়রা। ওড়িশায় প্রথমে ১৯৪৬ সালে পায়রার ব্যবহার শুরু হয়েছিল আর তখন বেলজিয়ামের হোমার নামে একধরনের পায়রা ছিল, যেগুলো একটানা ঘন্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার বেগে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার উড়তে পারত। এই পায়রাগুলো ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে আর এখন তিনটে কেন্দ্রে ৩৪ জন কনস্টেবল এই পায়রাগুলোর দেখাশোনা করেন। মি. পান্ডে বলেন: “আজকের এই সেলুলার ফোনের যুগে পায়রাদের ব্যবহার হয়তো সেকেলে মনে হতে পারে কিন্তু তারা আমাদের রাজ্যের জন্য আজও খুব কাজের ও তারা বিশ্বস্তভাবে সেবা করে চলেছে।”
ছেলেমেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র সংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রণীত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল যে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। যদিও আজকে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনেক প্রশংসাজনক কাজ করা হয়েছে, তবুও এই লক্ষ্য এখনও নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রণীত হবার পঞ্চাশ বছর পরও ১৩ কোটিরও বেশি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত যারা স্কুলের মুখ দেখেনি আর এর মানে হল যে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ শিশুই মৌলিক শিক্ষা পায়নি,” জার্মানির খবরের কাগজ অ্যালগেমিইন জেইটাং মেইনজ্ রিপোর্ট করে। জার্মানির রাষ্ট্র সংঘের শিশু তহবিলের প্রধান রেইনহার্ট সোলাজিন্টভিটের মতে, সারা বিশ্বের সব শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার দরকার। আসলে এই অর্থ খুবই কম, কারণ ইউরোপে প্রতি বছর আইসক্রিম উৎপাদন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে প্রসাধন সামগ্রীর পিছনে এর চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়। আর সারা পৃথিবীতে অস্ত্র তৈরির জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় তার তুলনায় এটা কিছুই নয়।
দুর্যোগ-প্রধান মহাদেশ এশিয়া
“গত বছর সারা পৃথিবীর ১০টা বড় বড় দুর্যোগের মধ্যে ছটাই হয়েছে এশিয়া মহাদেশে আর এতে প্রায় ২৭,০০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন ও ৩,৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ নষ্ট হয়েছে,” সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট খবরের কাগজ বলে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও চিনের বন্যা এবং ইন্দোনেশিয়ার বনভূমি পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে, যে কারণে আশেপাশের দেশগুলোতেও বায়ু দূষিত হয়ে পড়েছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলগুলোর জন্য রাষ্ট্র সংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন বলে, “বিশ্বের আর যে কোন জায়গায় এত বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না যতখানি কিনা এশিয়াতে হয়ে থাকে। আর এশিয়াতে, বিশেষ করে এইরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কমানোই হবে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
নিজের সুড়সুড়িতে হাসি পায় না কেন
“ঠিক জায়গায় সুড়সুড়ি দিলে এমনকি একজন বয়স্ক লোকও হাসতে বাধ্য হবেন। কিন্তু অতি সংবেদনশীল ব্যক্তিরাও অন্তত এই জেনে সান্ত্বনা পেতে পারেন যে নিজের সুড়সুড়িতে কেউ হাসে না,” দি ইকোনমিস্ট বলে। কেন নয়? কিছুদিন আগেই করা এক গবেষণায় এর উত্তর পাওয়া যায়। আর এটা হল আমাদের লঘুমস্তিষ্ক, মস্তিষ্কের যে অংশ পেশীর সঞ্চালনের মধ্যে সমন্বয় আনে। গবেষকরা মনে করেন যে লঘুমস্তিষ্ক শুধু সঞ্চালনেই সমন্বয় আনে না কিন্তু সেইসঙ্গে এই সঞ্চালনের ফলে যে অনুভূতি হবে তাও আগে থেকেই বুঝে ফেলে। তাই, কেউ যখন নিজেকে সুড়সুড়ি দেয় তখন লঘুমস্তিষ্ক এর অনুভূতিকে আগেই বুঝে ফেলে আর এই অনুভূতিকে চেপে রাখে, যার ফলে আমাদের হাসি পায় না। কিন্তু যখন অন্য কেউ আমাদের সুড়সুড়ি দেয় তখন শরীরের উদ্দীপনা এবং লঘুমস্তিষ্কের ধারণা মেলে না আর তাই অনুভূতি চাপা থাকে না। দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এই একই বিষয়ে লেখা একটা প্রবন্ধ বলেছিল: “মস্তিষ্ক বলে দিতে পারে যে কোন্ সুড়সুড়ি আমরা নিজেরা নিজেদের দিচ্ছি তাই আমরা সেটাকে খুব বেশি পাত্তা দিই না, ফলে বাইরে থেকে আসা উত্তেজনার প্রতি আরও ভাল করে সাড়া দিতে পারি যেটা করা আরও বেশি জরুরি।”
চিনে বাইবেল ছাপানো হচ্ছে
“গত কুড়ি বছরে চিনে ২ কোটির বেশি পবিত্র বাইবেল ছাপানো হয়েছে আর ১৯৯০ দশকের শুরু থেকে বাইবেল ওই দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হয়ে [গিয়েছে],” সিনহোয়া নিউজ এজেন্সি বলে। চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সোস্যাল সায়েন্সেস এর অধীনে ইনস্টিটিউট অফ ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নস এর অধ্যাপক ফেঙ জিনুয়ানের মতে, চিনের খ্রীষ্টান নাগরিকদের দুটো করে বাইবেল কেনার অধিকার আছে। ২০টারও বেশি সংস্করণ ইতিমধ্যে ছাপা হয়ে গেছে, “এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি সংস্করণের চিনা ভাষায় অনুবাদ, ঐতিহ্যগত ও সহজ চিনা লিপির চিনা সংস্করণ, লঘু সম্প্রদায়ের ভাষায় চিনা সংস্করণ এবং সহজে বহনীয় ও ছোট সাইজের বাইবেল।” এছাড়াও, বাইবেলের গল্প নিয়ে অনেক বই ছাপা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে সেগুলো বিক্রির সংখ্যা বাইবেলের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। “সেই ১৯৯০ এর দশক থেকে এখানে বাইবেল প্রভাবশালী বইগুলোর মধ্যে ৩২তম স্থান দখল করেছে,” প্রবন্ধটা বলে কিন্তু “সাধারণভাবে বলতে গেলে, পাশ্চাত্যের লোকেদেরকে ধর্ম যতটা প্রভাবিত করে সেই তুলনায় চিনা লোকেদেরকে ধর্ম ততখানি প্রভাবিত করে না।”
জুতোর সঙ্গে শরীরে সম্পর্ক
“চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজনের পায়ে গুরুতর সমস্যা রয়েছে আর এর কারণ তাদের জুতো,” দ্যা টরেন্টো স্টার বলে। হাঁটুর ব্যথা, কোমর ব্যথা, পিঠে ব্যথা এবং এমনকি মাথা ব্যথার জন্য আপনাকে আপনার জুতো পরীক্ষা করে দেখতে বলা হচ্ছে। “যে কথাটা মনে রাখা খুবই জরুরি তা হল জুতো আপনার পায়ের সঙ্গে মানিয়ে নেয় না আপনার পা জুতোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়” স্টার বলে। “পরতে পরতে ঠিক হয়ে যাবে ভেবে জুতো কিনবেন না। দোকানে বসেই যদি আপনার মনে হয় যে জুতো পরে আপনি আরাম পাচ্ছেন না, তাহলে সেই জুতো কিনবেন না।” জুতো কেনার জন্য বিকেলের দিকে দোকানে যান কারণ “সারাদিনে পা কিছুটা ফুলে যায়” আর “শুধু পায়ের গোড়ালির মাপ মতোই নয় কিন্তু জুতো কেনার সময় দেখে নিন যে পায়ের পাতাও যেন জুতোতে ঠিক মতো বসে।” তুলনামূলকভাবে মেয়েদের বেশি পায়ের সমস্যা ও ব্যথা হয়। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় যে ৯০ শতাংশ মহিলা “তাদের পায়ের চেয়ে ছোট অথবা টাইট জুতো পরে” আর “হিল জুতো পরলে পায়ে অনেক সমস্যা হতে পারে।” ওই খবরের কাগজ আরও বলে: “এটা মনে রাখাও জরুরি যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যাওয়ার পরই ব্যথা হয়।”
মোর্স কোডের উত্তরাধিকারী
১৮৩২ সালে আবিষ্কৃত মোর্স কোড “ব্যাবসা-বাণিজ্যের উন্নতিতে ও ইতিহাসে এক বড় ভূমিকা রেখেছে,” রাষ্ট্র সংঘের এজেন্সি, যা বিশ্বের জাহাজ বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে এর পরিচালক রজার কন্ বলেন। এই মোর্স কোড এক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড যেটাকে জাহাজগুলো দুর্যোগের সময় ব্যবহার করে। আর এটা ১৯১২ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই বছরই টাইটানিক এসওএস—তিনটে বিন্দু, তিনটে ড্যাস, তিনটে বিন্দু দিয়ে বিপদ সংকেত পাঠিয়েছিল—দ্যা টরেন্টো স্টার বলে। কিন্তু ১৯৯৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সমুদ্রযাত্রা সংগঠন একটা নতুন স্যাটেলাইট পদ্ধতি চালু করেছে। প্রত্যেকটা সিপবোর্ড স্যাটেলাইট টার্মিনালে একটা করে “বোতাম” থাকবে যেটা বিপদের সময় ব্যবহার করা হবে। যখন এই বোতাম টেপা হবে তখন এই নতুন স্যাটেলাইট পদ্ধতি “পৃথিবীর যে কোন জায়গায় উদ্ধার কেন্দ্রে” খবর পৌঁছে দেবে। এই পদ্ধতি থাকায় এখন জাহাজের নয়টা সংখ্যার পরিচিতি নম্বর ছাড়াও আরও অনেক তথ্য জানা যাবে, যেমন “জাহাজ কোথায় আছে, সময় কী, কোন্ ধরনের বিপদ ঘটেছে—জাহাজে আগুন লেগেছে, জাহাজে জল ঢুকছে, জাহাজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে বা ডাকাত হামলা করেছে অথবা এমন কোন কারণ যা এটা জানে না,” স্টার বলে। আর অতীতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এটা বলে: “ইতিহাসের সবচেয়ে ভাল খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও মোর্স কোড ব্যবহার করা হয়েছিল: দুটো বিশ্বযুদ্ধই শেষ হওয়ার সুখবর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটাকে ব্যবহার করা হয়েছিল।”