ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ১৪ পৃষ্ঠা ১০৮-১১৫
  • “আমরা একমত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “আমরা একমত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি”
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “এই বিষয়টা ভাববাদীদের গ্রন্থে যা বলা আছে, সেটার সঙ্গে মিলে যায়” (প্রেরিত ১৫:১৩-২১)
  • ‘কয়েক জন ব্যক্তিকে মনোনীত করে আন্তিয়খিয়ায় পাঠান’ (প্রেরিত ১৫:২২-২৯)
  • “সেই উৎসাহজনক চিঠির জন্য সবাই আনন্দ করল” (প্রেরিত ১৫:৩০-৩৫)
  • আজকের দিনে কীভাবে পরিচালকগোষ্ঠী কাজ করে?
    আজকে কারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করছে?
  • কে বর্তমানে ঈশ্বরের লোকেদের নেতৃত্ব দিচ্ছে?
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • ‘অনেক কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হওয়ার পর’
    ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস“ কে আর তারা কী করে থাকে?
    চিরকাল জীবন উপভোগ করুন!—ঈশ্বরের কাছ থেকে শিখুন
আরও দেখুন
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ১৪ পৃষ্ঠা ১০৮-১১৫

অধ্যায় ১৪

“আমরা একমত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি”

পরিচালকগোষ্ঠী সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় আর এর ফলে মণ্ডলীর একতা বজায় থাকে

প্রেরিত ১৫:১৩-৩৫ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. (ক) প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর সামনে কোন দুটো প্রশ্ন উঠে আসে? (খ) কোন বিষয়টা প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের বুঝতে সাহায্য করেছিল যে, তাদের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত?

জেরুসালেমের একটা ঘরে প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা একত্রিত হয়েছেন। তারা একে অন্যকে দেখছেন আর বুঝতে পারছেন যে, সেই সময় এসে গিয়েছে, যখন তাদের ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সমস্যাটার ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে। যেমন, খ্রিস্টানদের কি মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে? যিহুদি খ্রিস্টান এবং ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য থাকা উচিত?

২ প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা ইতিমধ্যে অনেক তথ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখেছেন। তারা শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো এবং চাক্ষুষ সাক্ষিদের বলা কথাগুলো নিয়ে বিবেচনা করে দেখেন, যেখান থেকে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, যিহোবা ন-যিহুদিদের আশীর্বাদ করেছেন। প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা এই সমস্যাটা নিয়ে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করেন এবং তাদের মতামত জানান। যিহোবার পবিত্র শক্তি তাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে যে, তাদের কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ভাইয়েরা কি পবিত্র শক্তির এই নির্দেশনা মেনে নেবেন?

৩. প্রেরিত ১৫ অধ্যায় থেকে আমরা কী কী জানতে পারব?

৩ পবিত্র শক্তির এই নির্দেশনা মেনে নেওয়ার জন্য পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইদের দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহসের প্রয়োজন হবে। কেন? কারণ তারা যখন এই নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন যিহুদি ধর্মগুরুরা তাদের আরও ঘৃণা করবে। শুধু তাই নয়, মণ্ডলীর সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকেও তাদের বিরোধিতা সহ্য করতে হবে, যারা জেদ ধরে বসে রয়েছে যে, মোশির ব্যবস্থা পালন করতেই হবে। এখন পরিচালকগোষ্ঠী কী করবে? আসুন, প্রেরিত ১৫ অধ্যায় থেকে এই সম্বন্ধে দেখি। সেইসঙ্গে আমরা এও জানতে পারব, পরিচালকগোষ্ঠী সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল আর বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী কীভাবে সেই একই উদাহরণ অনুকরণ করে থাকে। আমাদের জীবনে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় কিংবা আমাদের সামনে কোনো সমস্যা আসে, তখন আমরাও প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে শিখতে পারি।

“এই বিষয়টা ভাববাদীদের গ্রন্থে যা বলা আছে, সেটার সঙ্গে মিলে যায়” (প্রেরিত ১৫:১৩-২১)

৪, ৫. যাকোব কোন শাস্ত্রপদগুলো তুলে ধরেছিলেন?

৪ সেই ঘরে থাকা সমস্ত লোকের সামনে শিষ্য যাকোব উঠে দাঁড়ান এবং কথা বলতে শুরু করেন। যাকোব ছিলেন যিশুর সৎ ভাই।a প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের যে-সভা চলছিল, সম্ভবত তিনি এর সভাপতি ছিলেন। পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা একমত হয়ে যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এখন যাকোব সেটা সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন: “ঈশ্বর তাঁর নাম বহন করার জন্য ন-যিহুদিদের মধ্য থেকে একদল লোককে একত্রিত করার জন্য কীভাবে তাদের প্রতি প্রথম মনোযোগ দিয়েছেন, তা শিমিয়োন বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়টা ভাববাদীদের গ্রন্থে যা বলা আছে, সেটার সঙ্গে মিলে যায়।”—প্রেরিত ১৫:১৪, ১৫.

৫ শিমিয়োন অর্থাৎ পিতরের বক্তৃতা শোনার এবং পৌল ও বার্ণবার দেওয়া প্রমাণ বিবেচনা করার পর যাকোবের হয়তো এমন শাস্ত্রপদগুলো মনে পড়েছিল, যেগুলো ভাইদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল। (যোহন ১৪:২৬) যেমন তিনি বলেন: “এই বিষয়টা ভাববাদীদের গ্রন্থে যা বলা আছে, সেটার সঙ্গে মিলে যায়।” এরপর, তিনি আমোষ ৯:১১, ১২ পদের কথাগুলো উদ্ধৃতি করেন। ইব্রীয় শাস্ত্রে “ভাববাদীদের” বইগুলোর মধ্যে আমোষ হল একটা। (মথি ২২:৪০; প্রেরিত ১৫:১৬-১৮) লক্ষ করুন, যাকোব যে-শব্দগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন, সেগুলো বর্তমানে বাইবেলের আমোষ বইয়ে লেখা শব্দগুলো থেকে একটু আলাদা। এই পার্থক্যের কারণ যাকোব সম্ভবত সেপ্টুয়াজিন্ট থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন, যেটি ইব্রীয় শাস্ত্রের গ্রিক ভাষার অনুবাদ।

৬. শাস্ত্রে লেখা বিষয়গুলো থেকে কোন বিষয়টা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়?

৬ যিহোবা আমোষ ভাববাদীর মাধ্যমে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে, যখন যিহোবা “দায়ূদের পতিত কুটীর” পুনরায় গেঁথে তুলবেন। এর অর্থ হল, সেই রাজবংশকে পুনরায় স্থাপন করবেন, যেখান থেকে মশীহ রাজ্য আসবে। (যিহি. ২১:২৬, ২৭) তবে এর মানে কি এই যে, যিহোবা ইজরায়েল জাতির সঙ্গে পুনরায় এক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করবেন? না। কারণ ভবিষ্যদ্‌বাণী এরপর বলে যে, “সমস্ত জাতির লোকদের” একত্রিত করা হবে, যারা “[ঈশ্বরের] নাম বহন করে।” মনে করে দেখুন যে, প্রেরিত পিতর সবেমাত্র এটা বুঝিয়েছেন যে, ঈশ্বর “আমাদের [যিহুদি খ্রিস্টান] এবং তাদের [ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের] মধ্যে কোনো প্রভেদ রাখেননি, বরং তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদের হৃদয় শুচি করেছেন।” (প্রেরিত ১৫:৯) অন্যভাবে বললে, ঈশ্বর চেয়েছিলেন যিহুদি ও ন-যিহুদি উভয় ব্যক্তিরাই যেন রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়। (রোমীয় ৮:১৭; ইফি. ২:১৭-১৯) বাইবেলের ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলোতে কোথাও এইরকম ইঙ্গিত পাওয়া যায় না যে, রাজ্যের উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য ন-যিহুদিদের প্রথমে ত্বকচ্ছেদ করতে হবে কিংবা ধর্মান্তরিত হতে হবে।

৭, ৮. (ক) যাকোব সেই লোকদের সামনে কী বলেছিলেন? (খ) যাকোব যখন বলেছিলেন, “আমার সিদ্ধান্ত এই” তখন সেটার মানে কী ছিল?

৭ শাস্ত্রের এই সমস্ত প্রমাণ এবং পিতর, বার্ণবা ও পৌলের চমৎকার বক্তৃতা মনে রেখে, যাকোব সেই লোকদের সামনে বলেন যে: “তাই, আমার সিদ্ধান্ত এই, ন-যিহুদিদের মধ্যে যারা ঈশ্বরের সেবা করতে চায়, আমরা যেন তাদের অস্থির করে না তুলি, বরং তাদের লিখে পাঠাই, যেন তারা প্রতিমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো কিছু, যৌন অনৈতিকতা, গলা টিপে মারা প্রাণীর মাংস ও রক্ত থেকে পৃথক থাকে। প্রাচীন কাল থেকেই এমন লোকেরা রয়েছে, যারা নগরে নগরে গিয়ে মোশির গ্রন্থাবলি থেকে প্রচার করে, কারণ প্রতি বিশ্রামবারে তারা সমাজগৃহে এইসমস্ত গ্রন্থ থেকে জোরে জোরে পাঠ করে।”—প্রেরিত ১৫:১৯-২১.

৮ যাকোব যখন বলেন, “আমার সিদ্ধান্ত এই” তখন তার মানে কী ছিল? তিনি কি সভাপতি হিসেবে নিজের অধিকার ফলাচ্ছিলেন এবং অন্যান্য ভাইয়েদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছিলেন? একেবারেই না! কারণ যে-গ্রিক শব্দের অনুবাদ “আমার সিদ্ধান্ত এই” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ এও হয়, “আমার মতে” অথবা “আমার মনে হয়।” যাকোব এখানে সমস্ত ভাইয়ের হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন না বরং তিনি শুধুমাত্র পরামর্শ দিচ্ছিলেন যে, শাস্ত্রের কথা এবং প্রমাণগুলো মাথায় রেখে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে।

৯. যাকোবের পরামর্শ মেনে চললে কোন উপকার হত?

৯ যাকোব কি ভালো পরামর্শ দিয়েছিলেন? অবশ্যই। তাই, প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই পরামর্শ মেনে নেওয়ার কোন উপকার ছিল? প্রথমত, ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের মোশির ব্যবস্থা মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে “অস্থির করে” তোলা হত না অর্থাৎ ‘বিরক্ত করা’ হত না। (প্রেরিত ১৫:১৯; জুবিলী বাইবেল) দ্বিতীয়ত, যিহুদি খ্রিস্টানদের বিবেকের প্রতি বিবেচনা দেখানো হত, যারা বছরের পর বছর ধরে ‘মোশির গ্রন্থাবলি থেকে প্রতি বিশ্রামবারে সমাজগৃহে জোরে জোরে পাঠ করত।’b (প্রেরিত ১৫:২১) এই সিদ্ধান্তের ফলে যিহুদি ও ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে যে-সম্পর্ক ছিল সেটা মজবুত হত। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই সিদ্ধান্ত যিহোবাকে খুশি করত কারণ এটা তাঁর উদ্দেশ্য অনুযায়ী হত। যে-গুরুতর সমস্যাটা মণ্ডলীর একতা ও শান্তিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারত, ভাইয়েরা সেটা কত ভালোভাবেই না সমাধান করেছিল! বর্তমানে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য এটা কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ!

১৯৯৮ সালে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাই অ্যালবার্ট শ্রোডার বক্তৃতা দিচ্ছেন

১০. প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী কী করে থাকে?

১০ আগের অধ্যায়ে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানেও যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী, যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিখিলবিশ্বের শাসক যিহোবা এবং মণ্ডলীর মস্তক যিশু খ্রিস্টের কাছ থেকে নির্দেশনা চান।c (১ করি. ১১:৩) কীভাবে তারা তা করে থাকে? ভাই অ্যালবার্ট ডি. শ্রোডার এই বিষয়ে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন। ভাই ১৯৭৪ সালে পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্য হন এবং ২০০৬ সালের মার্চ মাসে তিনি তার পার্থিব জীবন শেষ করেন। তিনি বলেছিলেন: “প্রতি সপ্তাহে বুধবার পরিচালকগোষ্ঠীর সভা হয়। তারা প্রার্থনার মাধ্যমে তাদের সভা শুরু করেন এবং নির্দেশনার জন্য যিহোবার কাছে তাঁর পবিত্র শক্তি চান পরিচালকগোষ্ঠী এই বিষয়টা খেয়াল রাখে যে, তারা যে-সমস্যাই সমাধান করুক না কেন কিংবা যে-বিষয়টাই সিদ্ধান্ত নিক না কেন, তা যেন ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের উপর ভিত্তি করে হয়।” ভাই মিল্টন জি. হেন্‌শেলও এই একইরকম কথা বলেছিলেন। ভাই অনেক বছর ধরে পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য ছিলেন এবং ২০০৩ সালে তিনি তার পার্থিব জীবন শেষ করেন। তিনি গিলিয়েড স্কুলের ১০১তম ক্লাসের গ্র্যাজুয়েশনের সময় ছাত্রদের একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছিলেন, “পৃথিবীতে কি এইরকম কোনো সংগঠন রয়েছে, যার পরিচালকগোষ্ঠী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাইবেল থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে?” উত্তরটা পরিষ্কার, যিহোবার সাক্ষিদের সংগঠন ছাড়া আর কোনো সংগঠন নেই।

‘কয়েক জন ব্যক্তিকে মনোনীত করে আন্তিয়খিয়ায় পাঠান’ (প্রেরিত ১৫:২২-২৯)

১১. কীভাবে পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত সমস্ত মণ্ডলীতে পাঠানো হয়েছিল?

১১ জেরুসালেমের পরিচালকগোষ্ঠী ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রত্যেকটা মণ্ডলীতে এই সিদ্ধান্তটা স্পষ্টভাবে এবং প্রেমের সাথে তুলে ধরতে হবে, যেন তারা আনন্দের সঙ্গে এটা গ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে একতা বজায় থাকে। মণ্ডলীতে এটা তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়টা কী? বিবরণ বলে: “প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা পুরো মণ্ডলীর সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের মধ্য থেকে কয়েক জন ব্যক্তিকে মনোনীত করে পৌল ও বার্ণবার সঙ্গে আন্তিয়খিয়ায় পাঠাবেন; তারা যিহূদাকে, যাকে বার্শব্বা বলে ডাকা হয় এবং সীলকে পাঠালেন; যে-ভাইয়েরা বিভিন্ন কাজে নেতৃত্ব নিতেন, তাদের মধ্যে এরাও ছিলেন।” এ ছাড়া, এদের হাতে একটা চিঠি পাঠানো হয়, যাতে আন্তিয়খিয়া, সিরিয়া ও কিলিকিয়ার সমস্ত মণ্ডলীতে এটা পড়ে শোনানো হয়।—প্রেরিত ১৫:২২-২৬.

১২, ১৩. (ক) যিহূদা ও সীলকে মণ্ডলীগুলোতে পাঠানোর ফলে কোন উপকার এসেছিল? (খ) পরিচালকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যে-চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তার ফলে কোন উপকার এসেছিল?

১২ “যে-ভাইয়েরা বিভিন্ন কাজে নেতৃত্ব নিতেন,” তাদের মধ্যে যিহূদা ও সীল ছিলেন। তাই, তারা পরিচালকগোষ্ঠীর হয়ে সিদ্ধান্ত শোনানোর জন্য পুরোপুরি যোগ্য ছিলেন। এই চার জন ভাই যখন মণ্ডলীতে যান, তখন ভাই-বোনেরা এটা বুঝে যায় যে, ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে যে-প্রশ্ন উঠেছিল, এই ভাইয়েরা শুধু সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে আসেননি বরং এই বিষয়ে পরিচালকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে নির্দেশনাও দিতে এসেছেন। ‘মনোনীত ব্যক্তিরা’ অর্থাৎ যিহূদা ও সীল যখন মণ্ডলীতে যান, তখন তাদের উপস্থিতির কারণে সেখানকার ন-যিহুদি খ্রিস্টান এবং জেরুসালেমের যিহুদি খ্রিস্টানদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর নিশ্চিতভাবে, এর ফলে যিহোবার লোকদের মধ্যে শান্তি ও একতা বৃদ্ধি পেয়েছে সত্যিই এই চার জন ভাইকে পাঠিয়ে পরিচালকগোষ্ঠী কতই-না বিজ্ঞ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে! এখান থেকে এটাও বোঝা যায় যে, তারা মণ্ডলীগুলোকে কতটা ভালোবাসে।

বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী কীভাবে কাজ করে থাকে?

প্রথম শতাব্দীতে পরিচালকগোষ্ঠী যেমন খ্রিস্টানদের নির্দেশনা দিত, ঠিক একইভাবে বর্তমানেও পরিচালকগোষ্ঠী যিহোবার সাক্ষিদের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এই পরিচালকগোষ্ঠী অভিষিক্ত ভাইদের নিয়ে গঠিত। প্রতি সপ্তাহে এই ভাইয়েরা একসঙ্গে মিলিত হয় এবং একটা দল হিসেবে সভা করে। পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যেরা ছ-টা আলাদা আলাদা কমিটিতে সেবা করে আর প্রতিটা কমিটির কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

  • কোঅর্ডিনেটরস্‌ (সমন্বয়কারী) কমিটি: এই কমিটি আইন সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করে আর প্রয়োজনে মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে থাকে যাতে আমাদের শিক্ষার বিষয় লোকদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশে যিহোবার সাক্ষিরা যদি কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়, তাদের উপর তাড়না করা হয় কিংবা হঠাৎ কোনো আপৎকালীন সমস্যা দেখা দেয়, তখন এই কমিটি তাদের সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।

  • টিচিং (শিক্ষাদান সংক্রান্ত) কমিটি: এই কমিটি সম্মেলন এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে কোন বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এই কমিটির অধীনে সংগঠনের অডিও, ভিডিও কার্যক্রম প্রস্তুত করা হয়। এই কমিটি গিলিয়েড স্কুল, অগ্রগামী পরিচর্যা বিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্কুলের কোর্স প্রস্তুত করে। এ ছাড়া, শাখা অফিসের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বাইবেলভিত্তিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে।

  • পাবলিশিং (প্রকাশনা সংক্রান্ত) কমিটি: এই কমিটি বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি ছাপানো এবং সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এই কমিটি সেই ছাপাখানা আর সম্পত্তিগুলোর দেখাশোনা করে, যেগুলো যিহোবার সাক্ষিদের সংস্থার নামে রয়েছে এবং যেগুলোর ব্যবহার এই সংস্থা করে থাকে। এই কমিটি শাখা অফিস নির্মাণ, কিংডম হল আর সম্মেলন হল নির্মাণ কাজের দেখাশোনাও করে। এ ছাড়া, দানের অর্থকে কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করা যায়, তার ব্যবস্থা করে।

  • পারসোনেল (কর্মী সংক্রান্ত) কমিটি: এই কমিটি বেথেল পরিবারের সমস্ত সদস্যের শারীরিক বিষয়গুলো যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক যেন দৃঢ় হয় তার ব্যবস্থা করে। বেথেল পরিবারের নতুন সদস্যদের বাছাই করা এবং তাদের বেথেলে আমন্ত্রণ জানানোর কাজও এই কমিটি করে।

  • রাইটিং (লিখন সংক্রান্ত) কমিটি: এই কমিটি মণ্ডলী এবং জনসাধারণের জন্য বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা প্রস্তুত করে। এই কমিটি বাইবেলের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে এবং বিশ্বব্যাপী অনুবাদ কাজের দেখাশোনা করে। আর সেইসঙ্গে নাটকের স্ক্রিপ্ট ও বক্তৃতার আউটলাইনের অনুমোদন দেয়।

  • সার্ভিস (পরিচর্যা সংক্রান্ত) কমিটি: এই কমিটি প্রচার কাজের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিষয় দেখাশোনা করে। আর সেইসঙ্গে মণ্ডলীর প্রাচীন, সীমা অধ্যক্ষ এবং পূর্ণ সময়ের প্রচারকদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। এই কমিটি গিলিয়েড স্কুলের জন্য ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানায় এবং তারা কোথায় সেবা করবে, তা নির্ধারণ করে। গিলিয়েড স্কুলে ভাই-বোনদের শেখানো হয় যে, কীভাবে তারা বিশ্বব্যাপী মণ্ডলীগুলোকে মজবুত করতে পারে।

পরিচালকগোষ্ঠী মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য যিহোবার পবিত্র শক্তির উপর নির্ভর করে। পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা নিজেদের যিহোবার সাক্ষিদের গুরু অথবা নেতা বলে মনে করে না। এর পরিবর্তে, তারা অন্যান্য অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মতো “মেষশাবক [যিশু খ্রিস্ট] যেখানেই যান, তারা সেখানেই তাঁকে অনুসরণ করে।”—প্রকা. ১৪:৪.

১৩ পরিচালকগোষ্ঠীর চিঠি থেকে ন-যিহুদি খ্রিস্টানেরা ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে এক স্পষ্ট নির্দেশনা পায়। তারা এটাও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে যে, ঈশ্বরের অনুমোদন ও আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য তাদের কী করতে হবে। এই চিঠির মূল বিষয় ছিল: “পবিত্র শক্তি আমাদের এই উপসংহারে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে যে, এই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ছাড়া আর কোনো বোঝা তোমাদের উপর চাপানোর প্রয়োজন নেই: প্রতিমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো কিছু, রক্ত, গলা টিপে মারা প্রাণীর মাংস এবং যৌন অনৈতিকতা থেকে পৃথক থাকা। তোমরা যদি সযত্নে এই বিষয়গুলো থেকে নিজেদের আলাদা রাখ, তা হলে তোমাদের মঙ্গল হবে। ভালো থেকো!”—প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.

১৪. কেন যিহোবার লোকদের মধ্যে একতা রয়েছে?

১৪ বর্তমানে, সারা পৃথিবীতে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি মণ্ডলীতে যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা ৮০ লক্ষেরও বেশি রয়েছে। কিন্তু, তারপরও তারা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে এবং একই শিক্ষা মেনে চলে। যেখানে সারা পৃথিবীতে অশান্তি ছেয়ে রয়েছে এবং লোকদের মধ্যে ভেদাভেদের মনোভাব ছেয়ে রয়েছে, সেখানে কীভাবে যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে এত একতা রয়েছে? এর একটা কারণ হল, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক যিশু খ্রিস্ট ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের’ মাধ্যমে অর্থাৎ পরিচালকগোষ্ঠীর মাধ্যমে আমাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এই একতার আরেকটা কারণ হল, সারা পৃথিবীতে থাকা ভাই-বোনেরা পরিচালকগোষ্ঠীর নির্দেশনা আনন্দের সঙ্গে মেনে নেয় এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে।

“সেই উৎসাহজনক চিঠির জন্য সবাই আনন্দ করল” (প্রেরিত ১৫:৩০-৩৫)

১৫, ১৬. পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে মণ্ডলীর ভাইদের কেমন লেগেছিল এবং কেন পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তের ফলাফল এত ভালো হয়েছিল?

১৫ এরপর প্রেরিত বইয়ের বিবরণ জানায় যে, যখন জেরুসালেম থেকে ভাইয়েরা আন্তিয়খিয়ায় পৌঁছায়, তখন তারা “সমস্ত দলকে একত্রিত করে তাদের হাতে সেই চিঠি দিলেন।” পরিচালকগোষ্ঠীর নির্দেশনা পেয়ে মণ্ডলীর ভাইদের কেমন লেগেছিল? “তারা সেই চিঠি পড়ল এবং সেই উৎসাহজনক চিঠির জন্য সবাই আনন্দ করল।” (প্রেরিত ১৫:৩০-৩১) চিঠি দেওয়া ছাড়াও, যিহূদা ও সীল “অনেক বক্তৃতার মাধ্যমে ভাইদের উৎসাহ জোগালেন এবং তাদের শক্তিশালী করলেন।” যিহূদা ও সীলকে এই জন্য “ভাববাদী” বলা হয়েছে, কারণ তারা পৌল, বার্ণবা ও অন্যান্য ভাইদের মতো মণ্ডলীতে যিহোবার ইচ্ছা সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৩:১; ১৫:৩২; যাত্রা. ৭:১, ২.

১৬ পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তের উপর যিহোবা আশীর্বাদ করেন আর তার ভালো ফলাফল হয়েছিল। এটা এই জন্য সম্ভব হয়েছিল, কারণ পরিচালকগোষ্ঠী ঈশ্বরের বাক্য থেকে এবং পবিত্র শক্তির সাহায্যে সঠিক সময়ে আর স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল। সেইসঙ্গে, পরিচালকগোষ্ঠী অনেক প্রেমের সাথে তাদের সিদ্ধান্ত মণ্ডলীগুলোকে জানিয়েছিল।

১৭. কীভাবে বর্তমানে সীমা অধ্যক্ষেরা পৌল, বার্ণবা, যিহূদা ও সীলের উদাহরণ অনুকরণ করেন?

১৭ প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী পৃথিবীব্যাপী সমস্ত ভ্রাতৃসমাজকে উপযুক্ত সময়ে নির্দেশনা দেয়। পরিচালকগোষ্ঠী যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই সিদ্ধান্ত পৃথিবীব্যাপী সমস্ত মণ্ডলীকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়। কীভাবে? একটা উপায় হল, সীমা অধ্যক্ষের মাধ্যমে। এই ভাই আলাদা আলাদা মণ্ডলী পরিদর্শন করেন এবং পরিচালকগোষ্ঠীর নির্দেশনা স্পষ্টভাবে জানান আর সেটা মেনে চলার জন্য তাদের উৎসাহিত করেন। পৌল ও বার্ণবার মতো তারাও প্রচারে ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে “যিহোবার বাক্যের সুসমাচার সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে এবং ঘোষণা” করার ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম করেন। (প্রেরিত ১৫:৩৫) শুধু তাই নয়, তারা যিহূদা ও সীলের মতো মণ্ডলীতে “অনেক বক্তৃতার মাধ্যমে ভাইদের উৎসাহ” জোগান এবং তাদের শক্তিশালী করেন।

১৮. মণ্ডলীতে কখন যিহোবার আশীর্বাদ থাকে?

১৮ বর্তমানে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কীভাবে শান্তি ও একতা বজায় থাকে? মনে করে দেখুন, শিষ্য যাকোব পরে কী লিখেছিলেন: “যে-প্রজ্ঞা স্বর্গ থেকে আসে, তা সবচেয়ে প্রথমে শুদ্ধ, পরে শান্তিপ্রবণ, যুক্তিবাদী, বাধ্য হতে প্রস্তুত . . . যারা অন্যদের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখে, তারা শান্তি স্থাপন করে আর এর ফলে তারা ধার্মিক কাজ করে।” (যাকোব ৩:১৭, ১৮) আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, যাকোব পরিচালকগোষ্ঠীর সেই সভা সম্বন্ধে স্মরণ করে এই কথাগুলো লিখেছিলেন কি না। তবে, প্রেরিত বইয়ের ১৫ অধ্যায়ে লেখা ঘটনাগুলো থেকে আমার এটা বুঝতে পারি যে, মণ্ডলীতে যিহোবার আশীর্বাদ তখনই থাকে, যখন ভাই-বোনদের মধ্যে একতা থাকে এবং তারা নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন এমন ভাইদের নির্দেশনা মেনে চলে।

১৯, ২০. (ক) কোন বিষয়টা দেখায় যে, আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে শান্তি ও একতা ছিল? (খ) পৌল ও বার্ণবা এখন কোন কাজ মন দিয়ে করতে পারেন?

১৯ আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে এখন কত একতা ও শান্তি রয়েছে! সেখানকার ভাইয়েরা জেরুসালেম থেকে আসা ভাইদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করেনি বরং পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। তারা এই বিষয়টার জন্য কৃতজ্ঞ হন যে, যিহূদা ও সীল তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। যিহূদা ও সীলের বিষয়ে বাইবেল জানায়: “তারা সেখানে কিছুসময় কাটালেন। এরপর, ভাইয়েরা তাদের শান্তিতে বিদায় দিয়ে [জেরুসালেমে] সেই ভাইদের কাছে ফেরত পাঠালেন, যারা তাদের পাঠিয়েছিলেন।”d (প্রেরিত ১৫:৩৩) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহূদা ও সীল যখন জেরুসালেমের ভাইদের নিজেদের যাত্রার সমস্ত ঘটনা বলেন, তখন তারাও অনেক আনন্দিত হয়েছিল। যিহোবার মহাদয়ার কারণেই এই দুই ভাই তাদের কার্যভার ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।

২০ পৌল ও বার্ণবা আন্তিয়খিয়াতেই থেকে যান। এখন তারা মন দিয়ে প্রচার করতে পারেন এবং এই কাজে ভালোভাবে নেতৃত্ব নিতে পারেন। ঠিক যেমন, বর্তমানে সীমা অধ্যক্ষেরা মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করার সময় প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন। (প্রেরিত ১৩:২, ৩) পৌল ও বার্ণবা যিহোবার লোকদের জন্য সত্যিই এক আশীর্বাদ স্বরূপ ছিলেন। যিহোবা এই দু-জন উদ্যোগী প্রচারককে পরবর্তী সময়ে কীভাবে ব্যবহার করেন এবং তারা কোন আশীর্বাদ লাভ করেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে জানতে পারব।

এক সম্মেলনে একজন মা এবং তার মেয়ে “যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে” বইয়ের খণ্ড ২ দেখছে।

বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী এবং তার প্রতিনিধিরা যে-নির্দেশনা দেয়, তা থেকে খ্রিস্টানেরা অনেক উপকৃত হয়

যাকোব—“প্রভুর ভাই“

যাকোব ছিলেন, যোষেফ ও মরিয়মের ছেলে। যিশুর সৎ ভাইদের বিষয়ে যখনই উল্লেখ করা হয়েছে, তখনই যাকোবের নাম সবার প্রথমে এসেছে। (মথি ১৩:৫৪, ৫৫) তাই সম্ভবত এটা মনে করা হয়, যিশুর পর যাকোবই ছিলেন মরিয়মের বড়ো ছেলে। যাকোব যিশুর সঙ্গে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন এবং তিনি যিশুকে প্রচার করতে দেখেছিলেন আর তিনি জানতেন যে, যিশু “অলৌকিক কাজ” করেন। তবে, তিনি নিজের চোখে যিশুকে অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিলেন কি না, তা আমরা জানি না। যিশু যখন এই পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন, তখন যাকোব এবং তার অন্যান্য ‘ভাইদের তাঁর ওপর বিশ্বাস ছিল না।’ (যোহন ৭:৫) একবার যখন যিশুর কিছু আত্মীয় বলেছিল যে, “[যিশুর] মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে,” তখন যাকোবও সম্ভবত এটাই ধরে নিয়েছিলেন।—মার্ক ৩:২১.

যাকোব একটা গোটানো পুস্তক থেকে পড়ছেন।

কিন্তু, যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর যাকোবের চিন্তাভাবনা পুরোপুরিভাবে বদলে গিয়েছিল। বাইবেল জানায় যে, যিশু পুনরুত্থিত হওয়ার পর যখন ৪০ দিন ধরে অনেক লোককে দেখা দিয়েছিলেন, তখন যাকোবকেও দেখা দিয়েছিলেন। যদিও গ্রিক শাস্ত্রে যাকোব নামে আরও তিন জন ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু যিশু যে-যাকোবকে দেখা দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর সৎ ভাই যাকোব ছিলেন। (১ করি. ১৫:৭) যিশুকে পুনরুত্থিত হতে দেখে যাকোব এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, নিশ্চিতভাবে তার দাদা ঈশ্বরের একজন পুত্র আর তিনি তাঁর উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেন। যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার প্রায় দশ দিন পর, যখন সমস্ত প্রেরিত জেরুসালেমে উপরের একটা ঘরে প্রার্থনা করার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন, তখন সেখানে যাকোব, তার মা মরিয়ম আর সেইসঙ্গে অন্যান্য ভাইয়েরাও ছিল।—প্রেরিত ১:১৩, ১৪.

পরবর্তী সময়ে, যাকোব জেরুসালেম মণ্ডলীর একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাই হয়ে ওঠেন। এমনটা মনে করা হয় যে, তাকে একজন প্রেরিত হিসেবে দেখা হচ্ছিল, যার মানে হল “কাউকে পাঠানো।” (গালা. ১:১৮, ১৯) কীভাবে আমরা জানতে পারি যে, মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা তাকে অনেক সম্মান করত? ঈশ্বর যখন অলৌকিকভাবে পিতরকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন, তখন পিতর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এই বিষয়গুলো যাকোবকে এবং অন্য ভাইদের জানাও।” (প্রেরিত ১২:১২, ১৭) এরপর, যখন ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় এবং জেরুসালেমের “প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা” এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য একত্রিত হন, তখন এমনটা মনে করা হয়, যাকোব সেই সভার সভাপতি ছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৬-২১) এ ছাড়া, পৌল তার এক চিঠিতে লিখেছিলেন, যাকোব, কৈফা (পিতর) ও যোহন, জেরুসালেম মণ্ডলীতে “প্রধান ব্যক্তি ছিলেন।” (গালা. ২:৯) অনেক বছর পর, যখন পৌল তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রা শেষ করে জেরুসালেমে ফিরে আসেন, তখন তিনি যাকোব আর ‘সেখানে উপস্থিত সমস্ত প্রাচীনের’ সামনে তার কাজের রিপোর্ট দেন।—প্রেরিত ২১:১৭-১৯.

বাইবেলে যাকোব নামের বইটি হয়তো এই যাকোবই লিখেছিলেন। পৌল তাকে “প্রভুর ভাই” বলে সম্বোধন করেন। (গালা. ১:১৯) এই বইয়ে যাকোব নিজেকে প্রেরিত কিংবা যিশুর ভাই বলে উল্লেখ করেননি বরং নম্রতার সঙ্গে বলেন, তিনি “ঈশ্বরের এবং প্রভু যিশু খ্রিস্টের একজন দাস।” (যাকোব ১:১) যাকোবের বই থেকে জানা যায়, যিশুর মতো তিনিও প্রকৃতি এবং মানুষের আচার-আচরণ ভালোভাবে লক্ষ করতেন। তাই, তিনি কিছু সত্য সম্বন্ধে বোঝানোর জন্য এমন বিষয়গুলোর উদাহরণ দিয়েছিলেন, যা লোকেরা খুব সহজেই বুঝতে পারত। যেমন সমুদ্রের ঢেউ, তারা ভরা আকাশ, সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, ঘাসের ফুল, বনে-জঙ্গলে লাগা আগুন এবং পোষ মানানো যায় এমন পশু। (যাকোব ১:৬, ১১, ১৭; ৩:৫, ৭) ঈশ্বরের সাহায্যেই যাকোব লোকদের চিন্তাভাবনা এবং তাদের আচার-আচরণ সম্বন্ধে ভালোভাবে বুঝতে পারতেন আর ভালো পরামর্শ দিতে পারতেন। এই কারণেই যাকোব বইয়ে দেওয়া পরামর্শ মেনে চললে আমরা অন্যদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারব।—যাকোব ১:১৯, ২০; ৩:২, ৮-১৮.

১ করিন্থীয় ৯:৫ পদে বলা পৌলের কথা থেকে বোঝা যায় যে, যাকোব বিবাহিত ছিলেন। তিনি কখন ও কীভাবে মারা গিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে বাইবেল কিছু জানায় না। কিন্তু, যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস বলেন যে, প্রায় ৬২ খ্রিস্টাব্দে যাকোবের প্রতি কী ঘটেছিল। সেইসময় রোমীয় রাজ্যপাল পর্কিয় ফীষ্ট মারা যান এবং পরবর্তী রাজ্যপাল আলবিনাস তখনও ক্ষমতায় আসেননি। জোসিফাস লেখেন, মহাযাজক অ্যানানাস (হানন) “মহাসভার বিচারকদের নিয়ে এক সভা করেছিলেন এবং যিশু, যাঁকে খ্রিস্ট বলা হত, তাঁর ভাই যাকোবকে ও সেইসঙ্গে অন্য কয়েক জনকে তাদের সামনে নিয়ে এসেছিলেন।” জোসিফাসের মতে, অ্যানানাস “সেই লোকদের উপর আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ নিয়ে আসেন আর তাদের পাথর ছুড়ে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন।”

a “যাকোব—‘প্রভুর ভাই’” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b যাকোব খুবই সতর্কতার সঙ্গে মোশির লেখা বইগুলো থেকে উদ্ধৃতি করেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ এই বইগুলোতে মোশির ব্যবস্থা ছাড়াও এমন অনেক বিষয় লেখা রয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায় যে, ব্যবস্থা দেওয়ার আগেও ঈশ্বর লোকদের কাছ থেকে কী আশা করতেন। উদাহরণস্বরূপ, আদিপুস্তক বই থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, তারা রক্ত খাবে না এবং ব্যভিচার ও মূর্তিপূজা থেকে দূরে থাকবে। (আদি ৯:৩, ৪; ২০:২-৯; ৩৫:২, ৪) এই নীতিগুলো এমন ছিল যা প্রত্যেককে মেনে চলতে হত, তা তারা যিহুদি হোক অথবা ন-যিহুদি।

c “পরিচালকগোষ্ঠী বর্তমানে কীভাবে কাজ করে থাকে?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

d কিছু বাইবেল অনুবাদে ৩৪ পদে লেখা আছে সীল আন্তিয়খিয়াতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (জুবিলী বাইবেল) কিন্তু, সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে এই পদে এমন কিছু পাওয়া যায় না। এটা মনে করা হয় যে, প্রেরিত বই লেখার অনেক পরে এই বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার