প্রকৃত সুখ আসে যিহোবার সেবায়
“ধন্য সেই, যাহার সহায় যাকোবের ঈশ্বর, যাহার আশাভূমি যিহোবা।”—গীতসংহিতা ১৪৬:৫.
১, ২. সুখের সংজ্ঞা সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে, এবং অনেক লোকের জন্য আজ সুখের অর্থ কি?
সুখ কি? শতাব্দী ধরে অভিধান-রচয়িতারা, দার্শনিকরা, এবং থিয়লোজিয়ানরা এর সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা এমন কোন সংজ্ঞা দিতে পারিনি যা বিশ্বব্যাপী গ্রহনীয় হয়েছে। দ্যা অ্যানসাইক্লোপিডিয়া ব্রিট্যানিকা স্বীকার করে: “‘সুখ’ সব থেকে এক ছলনাময় শব্দ।” সুখ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন বিষয় বোঝাতে পারে, তা নির্ভর করে তারা জীবন সম্বন্ধে কিরূপ চিন্তাধারা পোষন করে তার উপর।
২ অনেকের জন্য সুখ নির্ভর করে উত্তম স্বাস্থ্য, জাগতিক বিষয়আসয়, এবং ভাল সহচর্যের উপর। তবুও, অনেক লোক আছে যাদের কাছে এই সব আছে তাও তারা সুখী নয়। যে পুরুষ ও স্ত্রীরা যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত, তাদের জন্য বাইবেল সুখের এক অন্য চিন্তাধারা দেয় যা সাধারণ ধারানার থেকে আলাদা।
সুখের এক অন্য চিন্তাধারা
৩, ৪. (ক) যীশু কাকে সুখী আখ্যা দেন? (খ) যীশু সুখ সম্বন্ধে যে কারণগুলি বর্ণনা করেন সেই সম্বন্ধে কি লক্ষ্য করা যেতে পারে?
৩ তার পার্বত্য উপদেশে, যীশু খ্রীষ্ট বলেনি যে সুখ নির্ভর করে উত্তম স্বাস্থ্য, জাগতিক বিষয়আসয়, এবং ঐরূপ বিষয়গুলির উপর। তিনি তাদের প্রকৃত সুখী ঘোষনা করেন যারা “তাদের আত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন” এবং যারা “ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুদিত ও তৃষিত।” এই দুই বিষয়ের সাথে যুক্ত সত্য সুখের জন্য হচ্ছে যীশুর প্রচলিত মতবিরোধী মন্তব্য: “ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে।” (মথি ৫:৩-৬) অবব্যই, যীশু বলছেন না যে লোকে যখন তাদের প্রিয়জনদের হারায় তখন আপনা থেকে তারা সুখী হবে। বরঞ্চ, তিনি এখানে তাদের কথা বলছেন যারা তাদের পাপগত পরিস্থিতির ফলসমূহের জন্য দুঃখার্ত হয়।
৪ প্রেরিত পৌল মনুষ্য সৃষ্টি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেন যে তাহা পাপের অধীনে যন্ত্রণা পাচ্ছে এক প্রত্যাশার উপর যে তাকে “ক্ষয়ের দাসত্ব থেকে মুক্ত করা যাইবে।” (রোমীয় ৮:২১, ২২; NW) মানুষেরা যারা যিহোবার পাপের-প্রায়শ্চিত্তরূপ ব্যবস্থা খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপী বলিদান গ্রাহ্য করে এবং যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে তাদের সত্যই সান্ত্বনা ও সুখী করা হবে। (রোমীয় ৪:৬-৮) পার্বত্য উপদেশে, যীশু তাদেরও সুখী ঘোষনা করেন “যাহারা মৃদুশীল,” “যাহারা দয়াশীল,” “যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ,” এবং “যাহারা শান্তিপ্রিয়।” তিনি আস্বাস দেন যে যদিও তাদের তাড়না করা হয়, এই ধরনের নম্র ব্যক্তিরা তাদের সুখ হারাবে না। (মথি ৫:৫-১১, NW) ইহা জানা খুব আগ্রজনক যে এই ধরনের উন্নত সুখের কারণ ধনবান্ এবং দরিদ্রকে এক স্তরে নিয়ে আসে।
সত্য সুখের ভিত্তি
৫. ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত লোকদের জন্য সুখের ভিত্তি কি?
৫ সত্য সুখের চাবিকাঠি পাওয়া যায়না জাগতিক ধনসম্পদে। জ্ঞানি রাজা সলোমন বলেন: “যিহোবার আশীর্ব্বাদই—ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সাথে কোন মনোদুঃখ দেন না।” (হিতোপদেশ ১০:২২) যে প্রাণীরা যিহোবার সার্ব্বভৌমত্বকে মেনে নেয়, সুখ অবিচ্ছেদ্যভাবে ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদের সাথে যুক্ত। উৎসর্গীকৃত ব্যক্তির যার যিহোবার আশীর্বাদ আছে এবং যে অনুভব করে তার উপর সে পুরুষ অথবা নারী হোক সে সত্যই সুখী। বাইবেলের দিক দিয়ে দেখতে গেলে, সুখের সাথে যুক্ত আছে পরিতৃপ্তি, সন্তোষের এক অনুভুতি, এবং যিহোবার সেবায় পরিপূর্ণতা।
৬. যিহোবার লোকেরা যদি সত্যই সুখী হতে চায় তাবে তাদের কাছে চাহিদা কি?
৬ সত্য সুখ নির্ভর করে যিহোবার সাথে সঠিক সর্ম্পকের উপর। তার ভিত্তি ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততার উপর। যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাসেরা পূর্ণ হৃদয় দিয়ে পৌলের বাক্যগুলি প্রতি সম্মতি জানায়: “কারণ আমাদের মধ্যে কেহ আপনার উদ্দেশে জীবিত থাকে না . . . আমরা জীবিত থাকি তবে যিহোবার উদ্দেশে . . . কারণ আমারা যিহোবার।” (রোমীয় ১৪:৭, ৮ NW) সেইকারণে, প্রকৃত সুখ অর্জন করা যায় না যিহোবার প্রতি বাধ্যতা ছাড়া এবং তাঁর উদ্দেশ্যের প্রতি আনন্দপূর্ণ বশ্যতাস্বীকার ব্যতিরেকে। যীশু বলেন: “ধন্য তাহারাই যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে!”—লূক ১১:২৮.
পরিবর্তনশীল সুখের কারণগুলি
৭, ৮. (ক) সুখের কারণগুলিকে কিভাবে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে? (খ) বিবাহ ও সন্তানধারণ সম্বন্ধে কি বলা যেতে পারে?
৭ সুখের পূর্ববর্ত্তী যে কারণগুলি দেওয়া হয়েছে তাকে আমরা অবিহিত করতে পারি “মৌলিক” অথবা “অপরিবর্ত্তনীয়” বলে, কারণ সেগুলি যিহোবার উৎসর্গীকৃত সাক্ষীদের ক্ষেত্রে সর্ব্বসময় বৈধ। অতিরিক্ত আরও, কারণগুলি থাকতে পারে যাকে আমরা বলতে পারি পরিবর্ত্তনশীল, যে কারণগুলি হয়ত একসময় আমাদের সুখের জন্য কাজ করতে পারে কিন্তু অন্য সময় তা কাজ নাও করতে পারে। কুলপতি ও খ্রীষ্টীয় যুগ আরম্ভের পূর্বে, বিবাহ ও সন্তানাদি হওয়াকে সুখের এক অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে দেখা হত। ইহা পরিষ্কার দেখা যায় রাহেল যাকোবের কাছে যে তীব্র আবেদন করেন তার মাধ্যমে: “আমাকে সন্তান দেও, নতুবা আমি মরিব।” (আদিপুস্তক ৩০:১) সন্তানধারনের প্রতি এই মনোভাব যিহোবার তখনকার যে উদ্দেশ্য তার সাথে উপযুক্ত ছিল।—অদিপুস্তক ১৩:১৪-১৬; ২২:১৭.
৮ প্রাচীনকালে যিহোবার লোকদের মধ্যে বিবাহ ও সন্তানধারনকে এক আশীর্বাদরূপে দেখা হত। যাহাহোক, এর সাথে বেদনা যুক্ত ছিল এবং অন্যান্য পরিস্থিতিগুলি যা তাদের ইতিহাসে দুর্দশাময় সময় ছিল। (তুলনা করুন গীতসংহিতা ১২৭, ১২৮; যিরমিয় ৬:১২; ১১:২২; বিলাপ ২:১৯; ৪:৪, ৫, সাথে) ইহা, সেইজন্য, স্পষ্ট যে বিবাহ এবং সন্তানধারন চিরসুখের কারণগুলি নয়।
অতীতকালে বিবাহ না করেও সুখী
৯. যিপ্তহের কন্যা কেন বাৎসরিক যশঃকীর্ত্তন পায়?
৯ অনেক ঈশ্বরের সেবকেরা সত্য সুখ পেয়েছে বিবাহ না করে। তার পিতার মানতের প্রতি সম্মান প্রযুক্ত, যিপ্তহের কন্যা অবিবাহিত থাকেন। কিছু সময়ের জন্য সে এবং তার কুমারী সঙ্গীরা তার কুমরীত্বের জন্য রোদন করে। কিন্তু তার কি আনন্দই না আসে যিহোবার ঘৃহে পূর্ণ সময় সেবা করার দ্বারা, হয়তবা সে সেই “শ্রণীভূত স্ত্রীলোকদের মধ্যে যাহারা সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সেবা করে।” (যাত্রাপুস্তক ৩৮:৮, NW) এরজন্য সে বাৎসরিক যশঃকীর্ত্তন পায়।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৩৭-৪০.
১০. যিহোবা যিরমিয়ের কাছ থেকে কি চান, এবং এর দরুন কি মনে হয় যে তিনি এক অসুখী জীবনযাপন করেন?
১০ যে ঘটনাবহুল সময় যিরমিয় বাস করছিলেন, ঈশ্বরের চাহিদা ছিল সে যেন বিবাহ করা ও সন্তানউৎপন্ন করা থেকে বিরত থাকে। (যিরিমিয় ১৬:১-৪) কিন্তু যিরমিয় ঈশ্বরের কথার সত্যতা অভিজ্ঞতা করেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে যিহোবাতে নির্ভর করে, যাহার বিশ্বাসভূমি যিহোবা।” (যিরমিয় ১৭:৭) তার ৪০ বৎসরের ভাববাদীর সেবায়, যিরমিয় ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে একজন অবিবাহিত ব্যক্তি হিসাবে। আমরা যতদূর জানি, তিনি কখনও বিবাহ করেননি এবং তার কোন সন্তানাদিও ছিল না। তবুও, কে সন্দেহ করতে পারে যে ‘যাহারা যিহোবার মঙ্গলদানে আনন্দগান করে’ সেই বিশ্বস্ত যিহুদী অবশিষ্টাংশের মত যিরমিয় সুখি ছিলেন না?—যিরমিয় ৩১:১২.
১১. শাস্ত্রের কতগুলি যিহোবার বিশ্বস্ত সেবকদের উদাহরণ কি যা দেখায় যে তাদের বিবাহ সঙ্গী না থাকলেও তারা সুখী ছিল?
১১ অনেক অবিবাহিত ব্যক্তিরা যিহোবাকে আনন্দের সাথে সেবা করেছেন একজন বিবাহ সঙ্গী ছাড়া। তারা হয় ছিলেন অবিবাহিত, বিধবা, অথবা বিপত্নীক। তাদের মধ্যে ছিলেন ভাববাদীণী হান্না; হয়তবা দরকা, অথবা টাবিথা; প্রেরিত পৌল; আর সকলের থেকে মহৎ উদাহরণ—যীশু খ্রীষ্ট।
একাকী কিন্তু আজ সুখী
১২. কিসের জন্য যিহোবার কিছু সুখী উৎসর্গীকৃত সেবকরা আজ, স্থান করে নিয়েছে, এবং কেন?
১২ আজ, হাজার হাজার যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরকে সেবা করছেন কোন বিবাহ সঙ্গী ছাড়া। কেউ কেউ যীশুর সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে: “যে কেহ গ্রহণ করিতে পারে [অবিবাহিত থাকার দান] সে গ্রহণ করুক।” (মথি ১৯:১১, ১২) তাহল, তারা তাদের ঈশ্বর দত্ত স্বাধীনতাকে উত্তমভাবে ব্যবহার করছে আরও সময় ও শক্তি রাজ্যের আগ্রহকে বৃদ্ধি করার কাজের জন্য ব্যয় করে। তাদের অনেকে অগ্রগামি, মিশ্ন্রি, অথবা বেথেলের সদস্য হয়ে ওয়াচ টাওয়ার সমিতির প্রধান কার্য্যালয়ে অথবা তার কোন শাখায় কাজ করছেন।
১৩. কি উদাহরণ দেখায় যে খ্রীষ্টানেরা একাকী এবং সুখী থাকতে পারে?
১৩ একজন প্রিয় বয়স্কা ভগ্নী তার জীবন কাহিনীর এইরূপ রহস্যসূচক শিরনাম দেন “একজন অগ্রগামি হিসাবে একাকী এবং সুখী।” (দ্যা ওয়াচটাওয়ার, ১লা মে ১৯৮৫, পৃষ্ঠা ২৩-৬) আর একজন একাকী ভগ্নী যিনি বেথেল সেবায় প্রায় ৫০ বৎসর ব্যয় করেছেন বলেন: “আমি আমার জীবন ও কাজ নিয়ে সম্পূর্ণ খুশী। যে কাজ আমি সব থেকে বেশী ভালবাসি সেই কাজ নিয়ে এখন আমি সর্বসময়ের থেকে বেশী ব্যস্ত। আমার কোন আক্ষেপ নেই। আমি আবার একই নির্ণয় নেব।”—দ্যা ওয়াচটাওয়ার, জুন ১৫, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ১৫.
১৪, ১৫. (ক) প্রেরিত পৌলের কথা অনুসারে, একাকী থাকার জন্য কিসের প্রয়োজন? (খ) কেন পৌল বলেন যে একাকী ব্যক্তি “ভাল করে” এবং “আরও সুখী”?
১৪ “নির্ণয়” কথাটি লক্ষ্য করুন। পৌল লেখেন: “কিন্তু যে ব্যক্তি হৃদয়ে স্থির, যাহার কোন প্রয়োজন নাই, এবং আপনি ইচ্ছা সম্বন্ধে কর্ত্তা, সে যদি আপনার কুমারীত্ব হৃদয়ে রাখিতে স্থির করিয়া থাকে, তবে ভাল করে। অতএব যে আপন কমারীত্ব বিবাহে দেয়, সে ভাল করে, এবং যে না দেয়, সে আরও সুখী।” (১ করিন্থীয় ৭:৩৭, ৩৮, NW) কেন “ভাল”? পৌল ব্যাখ্যা করেন: “কিন্তু আমার বাসনা এই যে, তোমরা চিন্তা-রহিত হও। যে অবিবাহিত, সে প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে প্রভুর সন্তুষ্ট করিবে। . . . আর অবিবাহিত স্ত্রী ও কুমারী প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, . . . এই কথা আমি তোমাদের নিজের হিতের জন্য বলিতেছি, . . . তোমরা যেন শিষ্টাচরণ কর, এবং একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাক।”—১ করিন্থীয় ৭:৩২-৩৫.
১৫ “একাগ্র মনে প্রভুতে আসক্ত থাক” ‘প্রভুর যাতে অনুমদোন পেতে পার’ লক্ষ্য কি সুখের সাথে সংযুক্ত? ইহা প্রতীয়মান যে পৌল তাই ভেবেছিলেন। খ্রীষ্টীয় বিধবাদের সম্বন্ধে কথা বলার সময়, তিনি বলেন: “যাহাকে ইচ্ছা করে, তাহার সহিত বিবাহিতা হইতে পারে, কিন্তু কেবল প্রভুতেই। তথাপি আমার মতানুসারে সে অমনি থাকিলে আরও ধন্যা। আর আমার বোধ হয়, আমিও ঈশ্বরের আত্মাকে পাইয়াছি।”—১ করিন্থীয় ৭:৩৯, ৪০.
অবিবাহিত অবস্থার সুবিধাসকল
১৬. কিছু অবিবাহিত যিহোবার সাক্ষীরা কি সুযোগ উপভোগ করেছেন?
১৬ একজন খ্রীষ্টান অবিবাহিত আছেন তার ব্যক্তিগত সঙ্কল্পের জন্য অথবা পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে, কিন্তু অবিবাহিত অবস্থা তার সাথে অনেক ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে আসে। একজন একাকী ব্যক্তির সাধারণতঃ আরও বেশী সময় থাকে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন ও তার উপর ধ্যান করার। যদি তারা এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়, তাহলে তাদের আত্মিকতা আরও গভীর হবে। যেহেতু তাদের কোন বিবাহ সঙ্গী নেই যার সাথে তারা তাদের সমস্যা সকল অলোচনা করতে পারে, অনেকে শেখে যিহোবার উপর আরও বেশী করে নির্ভর করতে এবং সর্ব ক্ষেত্রে তাঁর পরিচালনার অন্বেষন করতে। (গীতসংহিতা ৩৭:৫) ইহা সাহায্য করে যিহোবার সাথে এক নিকট সম্বন্ধে আসতে।
১৭, ১৮. (ক) যিহোবার যে সেবকরা অবিবাহিত তাদের জন্য আরও কি বৃহৎ সুযোগ খোলা রয়েছে সেবা প্রসারিত করার জন্য? (খ) কোন কোন অবিবাহিত যিহোবার সেবকরা তাদের সুখ কিভাবে বর্ণনা করেছেন?
১৭ অবিবাহিত খ্রীষ্টানদের সুযোগের অনেক বৃহৎ ক্ষেত্র রয়েছে যিহোবার সেবায় ও তার প্রশংসায়। বিশেষ যে ট্রেনিং এখন মিনিস্ট্রিয়াল স্কুলে দেওয়া হচ্ছে তা সীমাবদ্ধ অবিবাহিত ভাই ও বিপত্নীক ভাইদের জন্য। একাকী ভগ্নীরাও ঈশ্বরের সেবায় সুযোগসকল পেতে আরও বেশী সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। যে বয়স্কা ভগ্নীর কথা আগে বর্ণনা করা হয়েছে তিনি এক আফ্রিরিকার দেশে স্বেছায় সেবা করার জন্য নিজেকে অগিয়ে দেন, তার উক্তি উদ্ধৃত করলে, তিনি ছিলেন “এক ৫০ বৎসর বয়স্কা কিছুটা ভঙ্গুর স্ত্রীলোক।” আর তিনি সেখানে থেকে যান, যখন কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এবং অন্য সব মিশন্যারিদের বার করে দেওয়া হয়। তিনি সেখানে এখনও সেবা করে যাচ্ছেন যদিও তার বয়স এখন প্রায় ৮০ বৎসরের উপর। তিনি কি সুখী? তার জীবনকাহিনীতে তিনি লেখেন: “অবিবাহিত থাকার দ্বারা আমার যে অতিরিক্ত স্বাধীনতা ও সহজলভ্য অবস্থা আসে তা আমি ব্যবহার করি পরিচর্য্যায় ব্যস্ত থাকার জন্য, আর তা আমাকে অনেক সুখ এনে দিয়েছে। . . . বিগত বৎসরগুলিতে যিহোবার সাথে আমার যে সম্পর্ক তা আরও দৃঢ় হয়েছে। আফ্রিকার দেশে একজন একাকী নারী হিসাবে, আমি তাকে আমার রক্ষাকর্তা হিসাবে দেখেছি।”
১৮ লক্ষণীয়, এক ভাইয়ের কথা যিনি অনেক দশক ধরে ওয়াচ টাওয়ার সমিতির প্রধানকার্য্যালয়ে সেবা করেন। তিনি সুখী ছিলেন, যদিও তিনি কখনও বিবাহ করেননি এবং যদিও তার আশা ছিল স্বর্গীয় জীবনের যেখানে বিবাহের কোন সম্ভাবনা নেই। তার বয়স যখন ৭৯ বৎসর তখন তিনি লেখেন: “প্রত্যেকদিন আমি আমার প্রিয় স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে সাহায্য চাই প্রজ্ঞার জন্য এবং যেন তিনি আমাকে আত্মিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ ও সবল রাখেন যাতে আমি তাঁর ইচ্ছা পালন করে যেতে পারি। বিগত এই উনচল্লিশ বৎসরে যিহোবার সেবায় আমি প্রকৃতই সুখী, এবং উত্তম ফল প্রদানকারী আশির্বাদদায়ক এক জীবন উপভোগ করেছি। আর যিহোবার অযাচিত করুনার দ্বারা আমি তাকিয়ে আছি তাঁর সেবায় মহিমা গৌরবে ও তাঁর লোকদের আশির্বাদে সেবা করে যেতে। . . . যিহোবার আনন্দ আমাকে সাহায্য করে বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে রত থাকতে, সেই সময়ের দিকে তাকাতে যখন যিহোবার শত্রূরা আর থাকবে না এবং সমস্ত পৃথিবী তাঁর গৌরবে পরিপূর্ণ হবে।”—গণনাপুস্তক ১৪:২১; নহিমিয় ৮:১০; দ্যা ওয়াচটাওয়ার, নভেম্বর ১৫, ১৯৬৮, পৃষ্ঠা ৬৯৯-৭০২.
কিসের উপর প্রকৃত সুখ নির্ভর করে?
১৯. কিসের উপর আমাদের সুখ সব সময় নির্ভর করবে?
১৯ যিহোবার সাথে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ক, তাঁর অনুমোদন ও আশীর্বাদ—এই বিষয়গুলি আমাদের জন্য অনন্তকালের সত্য সুখ নিয়ে আসবে। এই সঠিক চিন্তাধারা রেখে, যে কি প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে, যারা বিবাহিত যিহোবার সেবক তারাও উপলব্ধি করে যে তাদের জীবনে বিবাহ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তারা প্রেরিত পৌলের উপদেশে মনোযোগ দেন: “আমি এই কথা বলিতেছি ভ্রাতৃগণ, সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই।” (১ করিন্থীয় ৭:২৯) এর অর্থ এই নয় যে তাদের স্ত্রীদের অবহেলা করতে হবে। পরিপক্ক খ্রীষ্টান স্বামীরা যিহোবার সেবাকে প্রথম স্থান দেয়, এবং তাদের ঈশ্বরপ্রিয়, প্রেমময়, এবং সাহায্যকারী স্ত্রীরাও তেমনি করে থাকে, অনেকে তাদের স্বামীদের সাথে পূর্ণ সময় সেবার সাথী হিসাবে কাজ করে।—হিতোপদেশ ৩১:১০-১২, ২৮; মথি ৬:৩৩.
২০. অনেক খৃষ্টানরা তাদের বিবাহের যে সুযোগ রয়েছে তার প্রতি কিরূপ মনোভাব পোষন করে?
২০ বিবাহিত ভাইরা যারা ভ্রমণ অধ্যক্ষ, বেথেলে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে, মণ্ডলীর প্রাচীন—হ্যাঁ, সকল বিবাহিত খ্রীষ্টানরা যারা রাজ্যের আগ্রহকে প্রথম স্থান দেয়—তারা ‘জগতকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করে না’; তারা কাজ করে যাতে বিবাহিত হবার সুযোগ তাদের উৎসর্গীকৃত জীবনে যিহোবার সেবায় ব্যয় করতে পারে। (১ করিন্থীয় ৭:৩১) তবুও, তারা সুখী। কেন? কারণ তাদের জীবনের সুখের প্রধান কারণ বিবাহ নয় কিন্তু যিহোবার প্রতি তাদের সেবা। আর অনেক বিশ্বস্ত স্বামী ও স্ত্রীরা—হ্যাঁ, তাদের ছেলেমেয়েরা—তারাও আনন্দের সাথে এই পথে রয়েছে।
২১, ২২. (ক) যিরমিয় ৯:২৩, ২৪ পদের উপর ভিত্তি করে, কি আমাদের সুখে পরিপূর্ণ করবে? (খ) হিতোপদেশ ৩:১৩-১৮ পদে সুখের কি বিষয়গুলি বর্ণনা করা আছে?
২১ ভাববাদী যিরমিয় লেখেন: “যিহোবা এই কথা কহেন: ‘জ্ঞানবান্ আপন জ্ঞানের শ্লাঘা না করুক, বিক্রমী আপন বিক্রমের শ্লাঘা না করুক, ধনবান্ আপন ধনের শ্লাঘা না করুক। কিন্তু যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ে শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি যিহোবা পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে আমি প্রীত, ইহা যিহোবা কহেন।”—যিরিমিয় ৯:২৩, ২৪, (NW).
২২ আমরা বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হই, আমাদের সুখের প্রধান উৎস হল যিহোবার জ্ঞান এবং সেই দৃঢ় বিশ্বাস যে আমাদের তাঁর আশীর্বাদ আছে কারণ আমরা তাঁর ইচ্ছা পালন করছি। আমরা আরও সুখী এইজন্য কারণ আমাদের অন্তরদৃষ্টি রয়েছে যে কি সত্য মান স্থাপন করে, সেই বিষয়গুলিতে যাতে যিহোবা অতিশয় আনন্দ করেন। অনেক বিবাহ করে শলোমন বিবাহকে সুখের একমাত্র চাবিকাঠি মনে করেননি। তিনি বলেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, সেই ব্যক্তি যে বুদ্ধি লাভ করে; কেননা রৌপ্যের বাণিজ্য অপেক্ষাও তাহার বাণিজ্য উত্তম, সুবণ অপেক্ষাও প্রজ্ঞা-লাভ উত্তম। তাহা মুক্তা হইতেও বহুমূল্য; তোমার অভীষ্ট কোন বস্তু তাহার সমান নয়। তাহার দক্ষিণ হস্তে দীর্ঘ পরমায়ু, তাহার বাম হস্তে ধন ও সম্মান থাকে। তাহার পথ সকল মনোরঞ্জনের পথ, তাহার সমস্ত মার্গ শান্তিময় যাহারা তাহাকে ধরিয়া রাখে, তাহাদের কাছে তাহা জীবনবৃক্ষ; যে কেহ তাহা গ্রহণ করে, সে ধন্য।”—হিতোপদেশ ৩:১৩-১৮.
২৩, ২৪. আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবার সব বিশ্বস্ত সাক্ষীরা নতুন বিধিব্যবস্থায় সুখী হবে?
২৩ আমরা যারা বিবাহিত যেন অনন্তকালের আনন্দ পাই ঐশিক ইচ্ছা পালনে। আর আমাদের সেই প্রিয় ভাই বোনেরা যারা হয় স্বেছায় বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অবিবাহিত আছেন তারা যেন তাদের সব পরীক্ষা সহ্য করেন এবং যিহোবাকে এখন ও চিরকালের জন্য সেবা করে সুখ এবং সন্তোষ পান। (লূক ১৮:২৯, ৩০; ২ পিতর ৩:১১-১৩) ঈশ্বরের আগত জগত ব্যবস্থায়, “কয়েকখান পুস্তক” খোলা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২) এর মধ্যে থাকবে অনেক রোমাঞ্চকর নতুন আদেশ ও আইন যা বাধ্য মানবজাতির সুখের জন্য কাজ করবে।
২৪ আমরা, অবশ্যই নিশ্চিত বোধ করতে পারি যে “সুখী ঈশ্বর” আমাদের জন্য অনেক উত্তম বস্তু গচ্ছিত রেখেছেন যা আমাদের সম্পূর্ণ সুখের জন্য কাজ করবে। (১ তিমথীয় ১:১১) ঈশ্বর তাঁর ‘হাত খুলে সকল প্রাণীর বাঞ্ছা সকল পূর্ণ করবেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:১৬) কোন সন্দেহ নেই যে এখন ও সবসময় যিহোবাকে সেবা করে প্রকৃত সুখ আসবে। (w92 5/15)
আপনি কি ভাবে সাড়া দেবেন?
▫ যিহোবার উৎসর্গীকৃত সেবকদের সুখের ভিত্তি কি?
▫ বাইবেলের সময়, যিহোবার কিছু অবিবাহিত সুখী সেবক কারা ছিলেন?
▫ পৌল কেন একাকী থাকা সুপারিশ করেন, এবং কোন কোন খ্রীষ্টানেরা কিভাবে ইহাকে সুখী জীবনরূপে পেয়েছে?
▫ কিসের উপর আমাদের সুখ সব সময় নির্ভর করবে?
▫ আমরা কেন নিশ্চিত হব যে সব বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা নতুন জগত ব্যবস্থায় সুখী হবে?
[Pictures on page 29]
অনেক অবিবাহিত ভগ্নীরা সুখে যিহোবার সেবা করছেন পূর্ণ-সময়ের পরিচারিকা হিসাবে
[Pictures on page 31]
যিহোবার সেবা করা হচ্ছে সুখের প্রধান উৎস