“তোমরা এই প্রকার লোকদিগকে চিনিয়া মান্য করিও”
করিন্থীয় মণ্ডলীতে সবকিছু সন্তোষজনক ছিল না। সেখানে জঘন্য ধরনের অনৈতিকতা আর ভাইয়েদের মধ্যে দলাদলি বিদ্যমান ছিল। কেউ কেউ গুরুতর ব্যক্তিগত সমস্যাগুলির সম্মুখীন হয়েছিল অথবা উত্তরের প্রয়োজন আছে এমন প্রশ্নসকল তাদের ছিল। কিছু ভাইয়েরা পরস্পরকে আদালতে পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছিল; অন্যেরা এমনকি পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে চলেছিল।
গুরুতর প্রশ্নগুলিও উত্থাপিত হয়েছিল। যারা ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারে বাস করত তারা কি তাদের অবিশ্বাসী সাথীদের সাথে বাস করবে অথবা তাদের পৃথক হওয়া উচিত? মণ্ডলীতে বোনেদের ভূমিকা কী? প্রতিমার কাছে উৎসর্গীকৃত মাংস গ্রহণে অংশ নেওয়া কি উপযুক্ত ছিল? কিভাবে সভাগুলি—যার অন্তর্ভুক্ত প্রভুর সান্ধ্য ভোজ—পরিচালিত হওয়া উচিত?—১ করিন্থীয় ১:১২; ৫:১; ৬:১; ৭:১-৩, ১২, ১৩; ১১:১৮, ২৩-২৬; ১৪:২৬-৩৫.
নিঃসন্দেহে এইধরনের সমস্যাপূর্ণ আধ্যাত্মিক পরিস্থিতিতে তাদের ভাইয়েদের মঙ্গলের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আখায়িক, ফর্তুনাত ও স্তিফান ইফিষীয়তে পৌলের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য যাত্রা করেছিলেন। এই সমস্যাজনক সংবাদগুলির সাথে অতিরিক্তভাবে সম্ভবত তারা মণ্ডলী থেকে এই বিষয়গুলি সম্বলিত একটি পত্রও পৌলের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৭:১; ১৬:১৭) স্পষ্টতঃই, এই তিন জন ভাই একমাত্র ছিলেন না যারা পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে পৌল, ইতিমধ্যেই “ক্লোয়ীর পরিজনের” দ্বারা সংবাদ পেয়েছিলেন যে মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। (১ করিন্থীয় ১:১১) নিঃসন্দেহে, ওই সংবাদবাহকদের বর্ণনা পৌলকে পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে, কোন্ পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে তা স্থির করতে এবং উত্থিত প্রশ্নগুলির উত্তর কিভাবে দেওয়া যেতে পারে, সেবিষয়ে সাহায্য করেছিল। এটি দেখা যায় যে, এখন যে পত্রটিকে আমরা প্রথম করিন্থীয় বলে জানি সেটি পৌলের উত্তর, যেটি ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আখায়িক, ফর্তুনাত ও স্তিফান হয়ত ছিলেন একজন যারা পত্রটি প্রদান করেছিলেন।
আখায়িক, ফর্তুনাত এবং স্তিফান এরা কারা ছিলেন? শাস্ত্র তাদের সম্বন্ধে যা বলে সেবিষয়ে অধ্যয়ন করে আমরা কী শিক্ষালাভ করতে পারি?
স্তিফানের পরিজনেরা
স্তিফানের পরিজনেরা প্রায় সা.শ. ৫০ সালের কাছাকাছি সময়ে দক্ষিণ গ্রীসে, রোমীয় প্রদেশের আখায়ায় পৌলের পরিচর্যার “অগ্রিমাংশ” ছিল, আর তারা পৌলের দ্বারা বাপ্তিস্মিত হয়েছিলেন। স্পষ্টতঃই, পৌল তাদের উদাহরণযোগ্য, করিন্থীয়দের জন্য এক পরিপক্ব দৃঢ়তর প্রভাব বলে বিবেচনা করতেন। মণ্ডলীর জন্য তাদের কার্যের কারণে তিনি আন্তরিকভাবে তাদের প্রশংসা করেছিলেন: “আর হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে নিবেদন করিতেছি;—তোমরা স্তিফানের পরিজনকে জান, তাঁহারা আখায়া দেশের অগ্রিমাংশ, এবং পবিত্রগণের পরিচর্য্যায় আপনাদিগকে নিযুক্ত করিয়াছেন;—তোমরাও এই প্রকার লোকদের, এবং যত জন কার্য্যে সাহায্য করেন, ও পরিশ্রম করেন, সেই সকলের বশবর্ত্তী হও।” (১ করিন্থীয় ১:১৬; ১৬:১৫, ১৬) ঠিক কাদের নিয়ে স্তিফানের ‘পরিজন’ গঠিত হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়নি। এই অভিব্যক্তিটি সাধারণভাবে পরিবারের সদস্যদের বোঝাতে পারে, কিন্তু আবার দাস অথবা কর্মচারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। যেহেতু আখায়িকা দাসের জন্য ব্যবহৃত প্রতীক ল্যাটিন নাম ও ফর্তুনাত মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসের জন্য প্রতীক নাম, কিছু সমালোচকেরা অনুমান করেন যে ওই দুজনও সম্ভবত একই পরিজনের সদস্য হতে পারেন।
বিষয়টি যাই হোক না কেন, পৌল স্তিফানের পরিজনকে উদাহরণযোগ্য বলে বিবেচনা করেছিলেন। এর সদস্যেরা “পবিত্রগণের পরিচর্য্যায় আপনাদিগকে নিযুক্ত” করেছিলেন। স্তিফানের পরিবার অবশ্যই শনাক্ত করেছিলেন যে, মণ্ডলীর মঙ্গলের জন্য কাজ করার ছিল আর ব্যক্তিগত দায়িত্ব হিসাবে এই পরিচর্যাকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে পবিত্রগণের প্রতি এইধরনের পরিচর্যা সম্পাদন করার তাদের ইচ্ছা নৈতিক সমর্থন ও স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
“তাঁহারা আমার ও তোমাদেরও আত্মাকে আপ্যায়িত করিয়াছেন”
যদিও পৌল করিন্থের পরিস্থিতি সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন ছিলেন, এই তিন সংবাদবাহকের আগমন তাকে আশ্বস্ত করেছিল। পৌল বলেছিলেন: “স্তিফানের, ফর্তুনাতের ও আখায়িকের আগমনে আমি আনন্দ করিতেছি, কেননা তোমাদের ত্রুটি তাঁহারা পূর্ণ করিয়াছেন; কারণ তাঁহারা আমার এবং তোমাদেরও আত্মাকে আপ্যায়িত করিয়াছেন।” (১ করিন্থীয় ১৬:১৭, ১৮) পরিস্থিতি বিবেচনা করে, করিন্থীয়দের থেকে তার দৈহিক বিচ্ছেদ সম্ভবত পৌলের জন্য উদ্বিগ্নতার উৎস হয়েছিল, কিন্তু এখন তাদের প্রেরিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি সমস্ত মণ্ডলীতে অনুপস্থিতির ক্ষতিপূরণস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের রিপোর্ট সম্ভবত পৌলকে সম্পূর্ণ তথ্য জানিয়েছিল এবং অন্তত তার কিছুটা ভয় দূরীভূত করেছিল। সম্ভবত বিষয়গুলি তিনি যেমন কল্পনা করেছিলেন ততখানি খারাপ ছিল না।
পৌলের কথা অনুযায়ী ওই তিন ব্যক্তির দৌত্যকার্য কেবলমাত্র তার আত্মাকেই আপ্যায়িত করেনি, কিন্তু, করিন্থীয় মণ্ডলীর আত্মাকেও উন্নত করেছিল। কোন সন্দেহ নেই, এটি জানা তাদের জন্য স্বস্তির বিষয় ছিল যে, তাদের প্রেরিত ব্যক্তিরা স্পষ্টভাবে পরিস্থিতির সমস্ত দিক পৌলের কাছে ব্যাখ্যা করেছিল এবং তার পরামর্শ সহ ফিরে এসেছিল।
সুতরাং করিন্থীয়দের পক্ষে তাদের পরিশ্রমের জন্য আন্তরিকতার সাথে স্তিফান ও তার দুই সঙ্গীকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এই ব্যক্তিদের জন্য পৌলের উপলব্ধি এমন ছিল যে, তাদের ফিরে আসার পর বিভক্ত করিন্থীয় মণ্ডলীতে তাদের নেতৃত্ব নেওয়া উচিত। প্রেরিত ভাইয়েদের উৎসাহিত করেন: “এই প্রকার লোকদের, এবং যত জন কার্য্যে সাহায্য করেন, ও পরিশ্রম করেন, সেই সকলের বশবর্ত্তী হও। . . . তোমরা এই প্রকার লোকদিগকে চিনিয়া মান্য করিও।” (১ করিন্থীয় ১৬:১৬, ১৮) এই প্রকার জোরালো সুপারিশ মণ্ডলীর ভিতরে চাপগুলি থাকা সত্ত্বেও এই ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে। এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করা উচিত।—ফিলিপীয় ২:২৯.
বিশ্বস্ত সহযোগিতা উত্তম ফল উৎপন্ন করে
এই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই যে, যিহোবার সংগঠন ও এর প্রতিনিধিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা উত্তম ফল উৎপন্ন করে। প্রথম পত্রটি লেখার অল্প পরেই যখন পৌল এখন যেটি দ্বিতীয় করিন্থীয় নামে পরিচিত সেটি লিখেছিলেন, মণ্ডলীতে ইতিমধ্যেই বিষয়বস্তু ভালভাবে চলছিল। আখায়িক, ফর্তুনাত ও স্তিফানের মত ভাইয়েদের ধৈর্যপূর্ণ ক্রমাগত কার্য ও সেইসাথে তীতের পরিদর্শন এক উত্তম ফল উৎপন্ন করেছিল।—২ করিন্থীয় ৭:৮-১৫; তুলনা করুন প্রেরিত ১৬:৪, ৫.
যিহোবার লোকেদের আধুনিক-দিনের মণ্ডলীগুলির সদস্যেরা শাস্ত্রে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত উল্লেখের বিষয়ে ধ্যান করে উপকৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মনে করুন স্থানীয় মণ্ডলীর মধ্যে ঘটে চলেছে এমন এক পরিস্থিতি যা কিছু কারণে তাড়াতাড়ি সমাধান করা যাচ্ছে না এবং ভাইয়েদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী করা যেতে পারে? স্তিফান, ফর্তুনাত ও আখায়িককে অনুকরণ করুন, যারা পৌলকে পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানানোয় তাদের যে দায়িত্ব তা থেকে সরে যাননি এবং তারপর নিশ্চয়তার সাথে যিহোবার উপর বিষয়টি ছেড়ে দিন। ধার্মিকতার জন্য উদ্যোগ কোনভাবেই তাদের স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার অথবা “সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট” হওয়ার কারণ হয়নি।—হিতোপদেশ ১৯:৩.
মণ্ডলীগুলি, যীশু খ্রীষ্টের অধিকারভুক্ত এবং তাঁর উপযুক্ত সময়ে তিনি, ঠিক যেমন করিন্থে হয়েছিল, যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেবেন যা হয়ত তাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গল ও শান্তির পক্ষে আঘাতজনক। (ইফিষীয় ১:২২; প্রকাশিত বাক্য ১:১২, ১৩, ২০; ২:১-৪) ইতিমধ্যেই যদি আমরা স্তিফান, ফর্তুনাত ও আখায়িক দ্বারা স্থাপিত উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করি এবং আমাদের ভাইয়েদের পরিচর্যায় ক্রমাগত পরিশ্রম করি, তাহলে আমরাও বিশ্বস্ততার সাথে মণ্ডলীর ব্যবস্থাকে সমর্থন করব, আমাদের ভাইয়েদের গেঁথে তুলব এবং ‘প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে তাহাদেরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিব।’—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.