বড় পরিবারগুলো একসঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করছে
গীতরচক লিখেছিলেন, “সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ব্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার। যেমন বীরের হস্তে বাণ সকল, তেমনি যৌবনের সন্তানগণ। ধন্য সেই পুরুষ, যাহার তূণ তাদৃশ বাণে পরিপূর্ণ।”—গীতসংহিতা ১২৭:৩-৫.
হ্যাঁ,ছেলেমেয়েরা যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। আর ঠিক যেমন একজন তীরন্দাজ জেনে খুশি হন যে তার তূণের বাণগুলোকে কোন্ দিকে ছুঁড়তে হবে তেমনই বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের অনন্ত জীবনের পথে চলতে সাহায্য করে আনন্দ পান।—মথি ৭:১৪.
প্রাচীনকালে ঈশ্বরের লোকেদের পরিবারগুলোর “তূণ” অনেক ছেলেমেয়ে দিয়ে পরিপূর্ণ থাকা স্বাভাবিক ছিল। উদাহরণ হিসাবে মিশরে বন্দি থাকার দিনগুলোর কথা চিন্তা করুন: “ইস্রায়েল-সন্তানেরা ফলবন্ত, অতি বর্দ্ধিষ্ণু ও বহুবংশ হইয়া উঠিল, ও অতিশয় প্রবল হইল এবং তাহাদের দ্বারা দেশ পরিপূর্ণ হইল।” (যাত্রাপুস্তক ১:৭) মিশরে যাওয়ার সময় তাদের যে সংখ্যা ছিল তার সঙ্গে মিশর থেকে তাদের বেরিয়ে আসার সময়কার সংখ্যা তুলনা করলে বোঝা যায় যে ইস্রায়েলীয়দের পরিবারগুলোতে গড়ে দশজন করে ছেলেমেয়ে ছিল!
পরে আমরা দেখেছি, যীশু যে পরিবারে বড় হয়েছিলেন সেটাও আজকে অনেকের কাছে বেশ বড় বলে মনে হতে পারে। যীশু ছিলেন যোষেফ ও মরিয়মের বড় ছেলে কিন্তু যীশু ছাড়াও তাদের আরও চার ছেলে ও কয়েকটা মেয়ে ছিল। (মথি ১৩:৫৪-৫৬) তাদের এতগুলো ছেলেমেয়ে ছিল যে যীশু তাদের সঙ্গে নেই তা খেয়াল না করেই যোষেফ ও মরিয়ম যিরূশালেম থেকে ফিরে আসার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন।—লূক ২:৪২-৪৬.
আজকে বড় পরিবারগুলো
আজকে অনেক খ্রীষ্টান আধ্যাত্মিক, আর্থিক, সামাজিক ও অন্যান্য কারণের জন্য তাদের পরিবারগুলোকে ছোট রাখেন। কিন্তু তবুও অনেক সমাজে বড় পরিবার খুবই সাধারণ বিষয়। বিশ্বের শিশুদের অবস্থা ১৯৯৭ (ইংরাজি) নামক বই বলে যে আফ্রিকার দক্ষিণ সাহারা অঞ্চলে জন্মের হার সবচেয়ে বেশি। সেখানে স্ত্রীলোকেরা গড়ে ছজন করে সন্তানের জন্ম দেন।
বড় পরিবারের খ্রীষ্টান বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েরা যেন যিহোবাকে ভালবাসতে শেখে তেমন করে মানুষ করা খুব সহজ কাজ নয় কিন্তু অনেকেই সফলতার সঙ্গে তা করে চলেছেন। পরিবারের সবাই একসঙ্গে সত্য উপাসনা করার মধ্যেই সাফল্য লুকিয়ে আছে। করিন্থীয় মণ্ডলীর জন্য লেখা প্রেরিত পৌলের কথাগুলো আজকে খ্রীষ্টান পরিবারগুলোর জন্য সমানভাবে কাজে লাগে। তিনি লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, . . . আমি তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলি, তোমরা সকলে একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হউক, কিন্তু এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব হও।” (১ করিন্থীয় ১:১০) কিভাবে এইরকমের একতা গড়ে তোলা যায়?
বাবামাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিকমনা হতে হবে
একটা মুখ্য বিষয় হল যে বাবামাদের অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি পুরোপুরি উৎসর্গীকৃত হতে হবে। মোশি ইস্রায়েলীয়দের যা বলেছিলেন সে বিষয়ে চিন্তা করুন: “হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে। আর এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৭.
ভাল করে দেখুন যে মোশি বলেছিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞা বাবামাদের ‘হৃদয়ে থাকতে’ হবে। একমাত্র তখনই বাবামা প্রতিদিন তাদের ছেলেমেয়েদেরকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতে চাইবেন। আসলে বাবামা যদি আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী হন, তাহলেই তারা তাদের ছেলেমেয়েদের আরও বেশি করে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো শেখাতে চান।
একজনকে আধ্যাত্মিকমনা হতে হলে ও যিহোবাকে হৃদয় থেকে ভালবাসতে গেলে রোজ ঈশ্বরের বাক্য পড়া, তার ওপর ধ্যান করা এবং তা জীবনে কাজে লাগানো খুবই জরুরি। গীতরচক লিখেছিলেন, একজন ব্যক্তি যে যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করে তাঁর ব্যবস্থা “দিবারাত্র” ধ্যান করে “সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।”—গীতসংহিতা ১:২, ৩.
একটা গাছে রোজ জল দেওয়া হলে তাতে যেমন খুব ভাল ফল ধরে ঠিক তেমনই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পুষ্ট পরিবার ঈশ্বরকে খুশি করে এমন ফল উৎপন্ন করতে পারে যা যিহোবার প্রশংসাও নিয়ে আসে। ওয়াডিগিউ যিনি পশ্চিম আফ্রিকায় থাকেন তার পরিবার এক আদর্শ পরিবার। যদিও ওয়াডিগিউ ও তার স্ত্রী আটটা ছেলেমেয়ের বাবামা, তবুও তারা দুজনেই নিয়মিত অগ্রগামীর কাজ করেন বা তারা যিহোবার সাক্ষীদের পূর্ণ-সময়ের পরিচারক। ওয়াডিগিউ বলেন: “২০ বছর ধরে আমরা পুরো পরিবার একসঙ্গে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করে চলেছি। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের ছেলেবেলা থেকে ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখিয়েছি শুধু পারিবারিক অধ্যয়নেই নয় কিন্তু প্রচারে ও অন্য সময়েও। আমাদের সব ছেলেমেয়েরা রাজ্যের সুসমাচারের প্রচারক আর সবচেয়ে ছোট জন যার বয়স এখন ছয় বছর শুধু সে এখনও বাপ্তিস্ম নেয়নি।”
দল বেঁধে কাজ করা
“প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়,” বাইবেল বলে। (হিতোপদেশ ২৪:৩) পরিবারের মধ্যে এই প্রজ্ঞা দল বেঁধে কাজ করতে সাহায্য করে। পারিবারিক দলের “প্রধান” হলেন বাবা; যিহোবা তাকে পরিবারের মস্তক করে নিযুক্ত করেছেন। (১ করিন্থীয় ১১:৩) প্রেরিত পৌল অনুপ্রাণিত হয়ে এই দায়িত্বের গুরুত্ব কতখানি তা বলেন যখন তিনি লিখেছিলেন “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য [বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক দুটো বিষয়েই] চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।”—১ তীমথিয় ৫:৮.
ঈশ্বরের বাক্যের এই পরামর্শ মেনে খ্রীষ্টান স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের আধ্যাত্মিকতার দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। স্ত্রীরা যদি সারাদিন ঘরের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তাদের আধ্যাত্মিকতার ক্ষতি হবে। আফ্রিকার একটা দেশে একজন নতুন বাপ্তিস্মিত খ্রীষ্টান তার মণ্ডলীর প্রাচীনের কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন যে আধ্যাত্মিক ব্যাপারে তার স্ত্রীর মন নেই। প্রাচীন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তার স্ত্রীর বাস্তব কিছু সাহায্যের দরকার। তাই এর পর থেকে স্বামী তাকে ঘরের কাজে সাহায্য করতে লাগেন। এছাড়াও তিনি স্ত্রীকে বাইবেল পড়ার অভ্যাস বাড়াতে ও বাইবেলের জ্ঞান নিতে সাহায্য করার জন্য সময় দিতেন। স্ত্রী খুব তাড়াতাড়িই উন্নতি করেছিলেন আর এখন পুরো পরিবার একসঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করেন।
বাবাদের, ছেলেমেয়েদের আধ্যাত্মিকতার দিকেও নজর রাখা দরকার। পৌল লিখেছিলেন: “আর পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) যখন বাবামারা বাইবেলের কথা মেনে ছেলেমেয়েদের অযথা বকাঝকা করেন না বরং তাদের হাতে ধরে শেখান, তখন ছেলেমেয়েরা বোঝে যে তারা পারিবারিক দলের এক অংশ। আর এর ফলে ছেলেমেয়েরাও আধ্যাত্মিক কাজে একে অন্যকে সাহায্য করতে ও উৎসাহ দিতে শিখবে।
দল বেঁধে কাজ করার মানে হচ্ছে ছেলেমেয়েদের আধ্যাত্মিক কাজের দায়িত্বগুলো দেওয়া যখন তারা তা পালন করতে শিখেছে। ১১টা ছেলেমেয়ের বাবা এমন একজন খ্রীষ্টান প্রাচীন যিনি খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেন আর কাজে বের হওয়ার আগে ছেলেমেয়েদের কয়েকজনের সঙ্গে অধ্যয়ন করেন। এখন বাপ্তিস্মের পর দাদা দিদিরা তাদের ছোট ভাইবোনদের পালা করে পড়াশোনা করায় সাহায্য করে যার মধ্যে তাদেরকে বাইবেল শেখানোও পড়ে। বাবা নিজে দেখাশোনা করেন যে তারা কিভাবে তা করছে আর তিনি তাদের কাজের প্রশংসাও করেন। ছেলেমেয়েদের ছজন এখন বাপ্তিস্মিত আর অন্যান্যরা বাপ্তিস্ম নেওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।
নিজেদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন ও একসঙ্গে লক্ষ্যে পৌঁছান
পরিবারে একতা চাইলে নিজেদের মধ্যে মন খুলে কথাবার্তা বলা ও আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছানোর জন্য মিলেমিশে কাজ করা খুবই জরুরি। গর্ডন একজন প্রাচীন এবং তিনি নাইজিরিয়ায় থাকেন। আর তার সাতটা ছেলেমেয়ে যাদের বয়স ১১ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। তাদের ছজন ছেলেমেয়ে তাদের বাবামার মতোই অগ্রগামী। সবচেয়ে ছোট জন সম্প্রতি বাপ্তিস্ম নিয়েছে আর সে পরিবারের বাকিদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে শিষ্য-করণের কাজে বের হয়। বড় দুই ছেলে মণ্ডলীর পরিচারক দাস।
গর্ডন নিজে তার প্রত্যেকটা ছেলেমেয়ের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বাইবেল অধ্যয়ন করতেন। এটা ছাড়াও বাইবেল থেকে শেখার জন্য পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থাও তাদের পরিবারে রয়েছে। রোজ সকালে তারা বাইবেলের একটা পদ আলোচনা করার জন্য এক জায়গায় হন আর তারপর মণ্ডলীর সভার জন্য প্রস্তুতি করেন।
পরিবারের প্রত্যেকের একটা লক্ষ্য ছিল যে তারা প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকার প্রত্যেকটা প্রবন্ধ পড়বে। আজকাল তারা তাদের সূচিতে প্রত্যেকদিন বাইবেল পড়াকেও যোগ করেছেন। পড়ার পর সেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে তারা এই অভ্যাস বজায় রেখে চলার জন্য একে অন্যকে উৎসাহ দেন।
প্রত্যেক সপ্তায় পারিবারিক বাইবেল অধ্যয়ন এতই সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে আর এটা সবারই এতই ভাললাগার বিষয় যে কাউকে অধ্যয়নের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় না—সবাই এর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। পারিবারিক অধ্যয়নে কোন্ বিষয় আলোচনা করা হবে, কিভাবে তা আলোচনা করা হবে আর কতক্ষণ সময় ধরে অধ্যয়ন চলবে তা ছেলেমেয়েদের বয়স ও চাহিদা অনুযায়ী সবসময়ই বদলেছে। এই পরিবার ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসেদের সঙ্গে মেলামেশা করে আর এতে ছেলেমেয়েরা অনেক উপকার পেয়েছে।
পরিবারের সবাই মিলে তারা কাজ করেন ও আমোদপ্রমোদের জন্যও কিছুটা সময় রেখে দেন। সপ্তায় একদিন তারা কিছুটা আনন্দ করেন, যাকে তারা “পারিবারিক সন্ধ্যা” নাম দিয়েছেন আর এই সময়ে তারা ধাঁধা বলেন, ভাল চুটকি বলেন, পিয়ানো বাজান, গল্প বলেন ও অন্যান্য গল্পগুজব করেন। কখনও কখনও তারা সমুদ্রের ধারে বা অন্য কোন জায়গায় বেড়াতে যান।
যিহোবার ওপর নির্ভর করা
ওপরে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের কেউই বড় পরিবারের ঝক্কিকে ছোট বলবেন না। একজন খ্রীষ্টান বাবা বলেন, “আটটা ছেলেমেয়ের একজন ভাল বাবা হওয়া সত্যিই খুব কঠিন কাজ। তাদের পুষ্টির জন্য অনেক শারীরিক ও আধ্যাত্মিক খাদ্যের দরকার; তাদেরকে ঠিক করে দেখাশোনা করার জন্য আমাকে যথেষ্ট পয়সা রোজগার করতে হয়। বড় ছেলেমেয়েরা এখন কিশোর বয়সী আর আটজনই স্কুলে যায়। আমি জানি যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা খুবই জরুরি তবুও আমার কয়েকজন ছেলেমেয়ে জেদি আর অবাধ্য। তারা আমাকে দুঃখ দেয় কিন্তু আমি জানি যে আমিও কখনও কখনও এমন কাজ করে বসি যার জন্য যিহোবা দুঃখ পান তবুও তিনি আমাকে ক্ষমা করেন। তাই আমি ধৈর্য ধরে আমার ছেলেমেয়েদের শুধরানোর চেষ্টা করি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে।
“যিহোবা আমাদের জন্য ধৈর্য দেখান কারণ তিনি চান যেন আমরা সবাই মন পরিবর্তন করি আর আমি যিহোবার এই উদাহরণ অনুকরণ করে চলতে চেষ্টা করি। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে অধ্যয়ন করি আর আমার কয়েকজন ছেলেমেয়ে এখন বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ফল পাওয়ার জন্য আমি আমার নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করি না কারণ আমি নিজের শক্তিতে কিছুই করতে পারব না। আমি প্রার্থনা করে যিহোবার খুব কাছে আসার চেষ্টা করি আর এই উপদেশ মেনে চলি যা বলে: ‘তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।’ আমি জানি আমার ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তুলতে যিহোবা আমাকে সাহায্য করবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
কখনও হাল ছেড়ে দেবেন না!
কখনও কখনও মনে হতে পারে যে ছেলেমেয়েদের মানুষ করার কাজের যেন কোন কদরই নেই কিন্তু কখনও হাল ছেড়ে দেবেন না! এতে লেগে থাকুন! যদি আপনার ছেলেমেয়েরা আপনার কথা না শোনে বা তারা যদি আপনি তাদের জন্য যা করছেন এখন তার জন্য কোনরকম কৃতজ্ঞতা নাও দেখায়, তারা পরে তা বুঝবে। একটা শিশুর জন্য আত্মার ফল উৎপন্ন করার মতো একজন খ্রীষ্টান হয়ে গড়ে উঠতে সময়ের দরকার।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
মনিকা কেনিয়ায় থাকেন আর তিনি দশ ভাইবোনের একজন। তিনি বলেন: “আমার বাবামা আমাদের ছোটবেলা থেকে বাইবেলের সত্য শিখিয়েছেন। প্রত্যেক সপ্তায় বাবা আমাদের সঙ্গে সোসাইটির বইগুলো থেকে অধ্যয়ন করতেন। তার কাজের জন্য হয়ত প্রত্যেক সপ্তায় একই দিনে অধ্যয়ন করা হয়ে উঠত না। কখনও কখনও যখন তিনি কাজ থেকে ঘরে আসতেন, তিনি হয়ত দেখতেন যে আমরা সবাই বাইরে খেলা করছি, তিনি আমাদের বলতেন যে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা সবাই যেন চলে আসি কারণ বাইবেল অধ্যয়ন শুরু হবে। বাইবেল অধ্যয়নের পরে আমাদেরকে আমাদের মনে কোন প্রশ্ন থাকলে তা জিজ্ঞাসা করতে বলা হতো বা আমাদের কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হতো।
“আমার বাবামা নজর রাখতেন যে আমরা কেবল ঈশ্বরকে ভয় করে এমন ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই মেলামেশা করছি কি না। বাবা নিয়মিতভাবে স্কুলে যেতেন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতেন ও আমাদের আচার ব্যবহার সম্বন্ধে জানতে চাইতেন। একবার স্কুলে গিয়ে তিনি শুনেছিলেন যে আমার তিন দাদা স্কুলের অন্য ছেলেদের সঙ্গে মারপিট করেছে আর তারা মাঝে মাঝে একটু বেশি দুষ্টুমি করে। বাবা তাদের এই অন্যায়ের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি সময় নিয়ে তাদের সঙ্গে বসে শাস্ত্র থেকে বুঝিয়েছিলেন যে ঈশ্বর যেমন চান তাদের সেইরকম আচরণ করা দরকার।
“আমাদের বাবামা আমাদের সঙ্গে বসে সভার জন্য প্রস্তুতি করতেন আর তারা আমাদের বুঝিয়েছিলেন যে সভায় উপস্থিত হওয়া কত দরকারি আর তা আমাদের জন্য কত উপকারী। পরিচারক হয়ে ওঠার জন্য আমাদের ঘরে মহড়া দিয়ে শেখানো হতো। একেবারে ছোটবেলা থেকে আমরা বাবামার সঙ্গে প্রচারে যেতাম।
“আজকে আমার বড় দুই দাদা বিশেষ অগ্রগামী, এক দিদি নিয়মিত অগ্রগামী এবং আরেকজন দিদি যিনি বিবাহিতা ও তার পরিবার আছে, তিনিও উদ্যোগী সাক্ষী। আমার দুই ছোট বোনের বয়স এখন আঠারো আর ষোল বছর আর তারা এখন বাপ্তাইজিত প্রকাশক। আমার ছোট দুই ভাই এখন শিখছে। তিন বছর হয়ে গেল আমি যিহোবার সাক্ষীদের কেনিয়া বেথেলে কাজ করছি। আমি আমার বাবামাকে ভালবাসি ও শ্রদ্ধা করি কারণ তারা আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি আর আমাদের জন্য এক ভাল উদাহরণ।”
আপনার কতগুলো ছেলেমেয়ে সেটা কোন বিষয় নয় কিন্তু বিষয় হল তাদেরকে অনন্ত জীবনের পথে চলতে শেখানোর কাজকে কখনও বন্ধ করে দেবেন না। যিহোবা যখন আপনার চেষ্টাকে আশীর্বাদ করেন তখন আপনি প্রেরিত যোহনের সেই শব্দগুলোর প্রতিধ্বনি করতে পারবেন যিনি তার আধ্যাত্মিক ছেলেমেয়েদের জন্য বলেছিলেন: “আমার সন্তানগণ সত্যে চলে, ইহা শুনিলে যে আনন্দ হয়, তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ আমার নাই।”—৩ যোহন ৪.