আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য . . .
ঈশ্বরকে জানার জন্য সকলেরই কি সমান সুযোগ রয়েছে?
▪ যিশুকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সবচেয়ে মহৎ আজ্ঞা কোনটা, তখন তিনি বলেছিলেন: “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৭) কিন্তু ঈশ্বরকে ভালোবাসার আগে, লোকেদেরকে তাঁর সম্বন্ধে জানতে বা সঠিক জ্ঞান নিতে হবে। (যোহন ১৭:৩) এই জ্ঞান লাভ করার জন্য সকলেরই কি সমান সুযোগ থাকবে?
ঈশ্বর সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রধান উৎস হল বাইবেল। (২ তীমথিয় ৩:১৬) অনেকে এমন এলাকাগুলোতে বাস করে, যেখানে বাইবেল সহজেই প্রাপ্তিসাধ্য। এ ছাড়া, সেই একই লোকেরা হয়তো ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য বার বার আমন্ত্রণও লাভ করে থাকে। (মথি ২৮:১৯) কেউ কেউ এমন প্রেমময় খ্রিস্টীয় বাবা-মার দ্বারা বড়ো হয়ে উঠেছে, যারা তাদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখার জন্য প্রতিদিন সুযোগ প্রদান করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭; ইফিষীয় ৬:৪.
কিন্তু, অন্যেরা অতটা ভালো পরিস্থিতির মধ্যে বাস করে না। কেউ কেউ এমন খারাপ পরিবারগুলো থেকে আসে, যেখানে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের প্রতি কোনো স্নেহ দেখায় না। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যারা এই ধরনের এক পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে, তারা হয়তো ঈশ্বরকে একজন প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা হিসেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করতে পারে। অনেকে পর্যাপ্ত শিক্ষা পায়নি, যা বাইবেল পড়ার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতাকে সীমিত করে দেয়। আবার অন্যদের মন মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলোর দ্বারা অন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা তারা এমন পরিবার, সমাজ বা দেশগুলোতে বাস করে, যেখানে বাইবেলের সত্য শিক্ষাকে মেনে নেওয়া হয় না। (২ করিন্থীয় ৪:৪) এই ধরনের ব্যক্তিদের পরিস্থিতিগুলো কি তাদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে শেখার ও তাঁকে ভালোবাসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে?
যিশু স্বীকার করেছিলেন যে, কেউ কেউ যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হয়, সেগুলো তাদের জন্য ঈশ্বরকে ভালোবাসা এবং তাঁর বাধ্য হওয়াকে কঠিন করে তুলবে। (মথি ১৯:২৩, ২৪) কিন্তু, যিশু তাঁর শিষ্যদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, এমনকী কোনো কোনো বাধা মানুষের কাছে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হলেও “ঈশ্বরের সকলই সাধ্য।”—মথি ১৯:২৫, ২৬.
নীচের এই বিষয়গুলো বিবেচনা করুন: যিহোবা ঈশ্বর এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর বাক্য বাইবেল যেন সর্বকালের সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিতরিত বই হয়। বাইবেল ভাববাণী করেছিল যে, ঈশ্বর এবং পৃথিবীর জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় সুসমাচার “সমুদয় জগতে” প্রচার করা হবে। (মথি ২৪:১৪) আজকে, যিহোবার সাক্ষিরা দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩০-টারও বেশি জায়গায় এই সুসমাচার প্রচার করে এবং প্রায় ৫০০-টা ভাষায় বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি উৎপাদন করে থাকে। এমনকী যাদের বাইবেল পড়ার সুযোগ নেই, তবুও তারা তিনি যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো লক্ষ করার দ্বারা সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারে।—রোমীয় ১:২০.
অধিকন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলে: “সদাপ্রভু সমস্ত অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করেন, ও চিন্তার সমস্ত কল্পনা বুঝেন; তুমি যদি তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন।” (১ বংশাবলি ২৮:৯) তাই যদিও যিহোবা এই প্রতিজ্ঞা করেননি যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই একেবারে একইরকম সুযোগ লাভ করবে কিন্তু তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করেন যে, সৎহৃদয়ের সমস্ত ব্যক্তির কাছে এক সুযোগ প্রদান করা হবে। তিনি এমনকী এই বিষয়টাও নিশ্চিত করবেন যে, যাদের কখনোই তাঁর সম্বন্ধে জানার সুযোগ হয়নি, তাদেরকেও এক ধার্মিক নতুন জগতে জীবনে পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে এক সুযোগ প্রদান করা হবে।—প্রেরিত ২৪:১৫. (w১০-E ০৮/০১)