যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য . . .
শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে আমি কেন কষ্টভোগ করব?
“আমার তখন পাঁচ বছর বয়স ছিল,” বেকি স্মরণ করে। “আমি একজন বন্ধুর সঙ্গে তার সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ উল্টোদিক থেকে একটি গাড়ি এসে আমাদের ধাক্কা মারে।” তার ফল? “আমার পা ভেঙে যায় এবং মাথায় খুব বেশি আঘাত লাগে। ডাক্তারেরা আশা করেননি যে আমি বাঁচব।” কিন্তু বেকি বেঁচে গিয়েছিল আর এখন সে একজন প্রাণোচ্ছল ১৬-বছর বয়স্ক কিশোরী। কিন্তু, সেই দুর্ঘটনা তার ছাপ রেখে গেছে। “আমি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছি,” সে বলে।
ক্রেগ্ নামে একজন যুবকও বিকলাঙ্গ, সি.পি. (সেরিব্রাল প্যাল্সি) নামে একটি রোগের ফলস্বরূপ। “সি.পি. আমার পেশী এবং নার্ভতন্ত্রকে আক্রান্ত করে,” ক্রেগ্ জানায়। “মস্তিষ্ক থেকে যে নির্দেশ পাঠানো হয়, আমার পেশীগুলি ঠিক সেইমত কাজ করে না। সুতরাং, হাঁটতে, কথা বলতে এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমার অসুবিধা হয়। এইসব আমি করতে পারি কিন্তু খুব সহজভাবে নয়।”
তোমারও কি এইরকম কিছু শারীরিক বিকলাঙ্গতা আছে? পরিসংখ্যান দেখায় যে ২০০০ সালের মধ্যে, পৃথিবীতে বিকলাঙ্গ যুবক-যুবতীদের সংখ্যা প্রায় ৫.৯ কোটি হয়ে দাঁড়াবে। (ওয়ার্ল্ড হেল্থ্, জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) কিন্তু, তোমার মত আরও অনেকেরই যে একই সমস্যা আছে তা জেনেও, যখন তুমি অন্যান্য যুবক-যুবতীদের মত দৌড়াতে, লাফাতে অথবা খেলতে চাও কিন্তু পার না, তখন খুব কমই সান্ত্বনা পাওয়া যায়।
বিকলাঙ্গদের সমস্যা
শারীরিক বিকলাঙ্গতা নতুন কিছু নয়। বাইবেলের সময়ে কিছু ব্যক্তি খঞ্জ (২ শমূয়েল ৪:৪; ৯:১৩), অন্ধ (মার্ক ৮:২২) এবং বিকলাঙ্গ (মথি ১২:১০) ছিল। এইরকম বিকলাঙ্গ ব্যক্তিদের জন্য জীবনের খুব সাধারণ কাজ করাও প্রায়ই দুষ্কর হয়ে পড়ত।—তুলনা করুন দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২৯; হিতোপদেশ ২৬:৭.
তুমি যেভাবে ক্ষমতায় সীমিত রয়েছ সেইজন্যে হয়ত তোমাকেও একইরকম লড়াই করতে হয়। জামাকাপড় পরা, খাওয়া, স্কুলে যাওয়ার জন্য হয়ত বহু পরিশ্রম করতে হয়—আর অন্যদের কাছ থেকেও বেশ কিছুটা সাহায্য নিতে হয়। “ডান দিক দিয়ে কোন নির্দিষ্ট নড়াচড়ার কাজ আমি করতে পারি না,” বেকি বলে। “সুতরাং আমাকে বাঁ হাত দিয়ে লেখা শিখতে হয়। হাঁটা-চলা করাও মুস্কিল ছিল। এখন আমি বেশ সাধারণভাবেই হাঁটি কিন্তু কোন কোন দিন খুবই খুঁড়িয়ে চলতে হয়।” অথবা একজন কিশোর যে খুবই বেঁটে ছিল তার সমস্যার কথা চিন্তা করুন। কিছুটা ঠাট্টার সুরে সে বলে: “দেওয়ালে আলোর সুইচের নাগাল পাওয়া আরেকটি ঝামেলা . . . বাড়ির নক্সাগুলো নির্ঘাত লম্বা লোকেদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।”—জিল্ ক্রেমেন্টজ্-এর হাউ ইট্ ফিলস্ টু লিভ উইথ্ এ ফিজিকাল ডিস্ত্রবিলিটি।
কিন্তু তুমি হয়ত দেখবে যে তোমার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলি শরীরের সঙ্গে জড়িত নয়। পেরেন্টস্ পত্রিকা ব্যাখ্যা করে: “অন্যদের প্রতিক্রিয়া কিশোর-কিশোরীরা খুবই অনুভব করে, যে জন্য যাদের কোন বিকলাঙ্গতা আছে, তাদের জন্য জীবন আরও কষ্টকর হয়ে পড়ে। . . . তাদের চেহারা সম্বন্ধে অন্যেরা কী মনে করে সেই সম্বন্ধে প্রায়ই তারা চিন্তা করে এবং প্রায়ই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবকে সন্দেহ করে, তারা মনে করে যে এই সদুদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার হল অবাঞ্ছিত করুণা প্রদর্শন।” অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তাদের প্রিয়পাত্র হওয়ার ইচ্ছা খুবই সাধারণ। কিন্তু, তুমি হয়ত নিঃসঙ্গ বোধ কর। কিশোরী মিশেল্ যেমন বলেছিল: “সারা জীবন আমি অন্যদের থেকে আলাদা। তার কারণ হল আমার বাঁ হাত নেই।”
অন্যরকম হওয়ার জন্য তুমি হয়ত ক্রমাগত ঠাট্টার পাত্র হতে পার। “পঞ্চম গ্রেডের আগে পর্যন্ত আমি বিকলাঙ্গদের জন্য স্কুলে পড়তাম,” ক্রেগ্ বলে। “কিন্তু পঞ্চম গ্রেড থেকে আমি সাধারণ স্কুলে যেতে শুরু করি। আমার খুব একটা অসুবিধা হয়নি কিন্তু একদিন কয়েকজন ছেলে আমাকে দেখে হাসতে শুরু করে। কারণ আমার হাঁটার ধরন।” বেকিও তার সহপাঠীদের কাছে নিষ্ঠুর ব্যবহার পাওয়া সম্বন্ধে মনে রেখেছে। পূর্বেকার অপারেশনের জন্য তার স্বরতন্ত্রীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তার স্বর একটু কর্কশ হয়ে পড়েছে। “স্কুলের ছাত্রীরা বলত আমার কণ্ঠস্বর দৈত্যের মত,” সে বলে।
বয়স্করাও অশোভন পক্ষপাতিত্ব দেখাতে পারেন। কেউ কেউ তোমার দিকে তাকানো এড়িয়ে যেতে পারেন। অন্যেরা তোমার সঙ্গে কোনই কথা বলেন না, তোমার বাবা-মা অথবা সঙ্গীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যান—এমন ভাব করেন যেন তুমি অদৃশ্য রয়েছ অথবা তোমার মানসিক দুর্বলতা আছে। সবচেয়ে বিরক্তিকর সেই হিতাকাঙ্ক্ষীরা হতে পারে যখন ক্রমাগত তারা তোমার প্রতি করুণা দেখায়, বার বার মনে করিয়ে দেয় যে তুমি যেন ক্ষতিগ্রস্ত কোন বস্তু।
এই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি
কিন্তু ঈশ্বর তোমার সম্বন্ধে কী মনে করেন? তোমার বিকলাঙ্গতা কি তোমার উপর তাঁর অনুমোদন নেই এইরকম কোন চিহ্ন? যীশু একটি “জন্মাবধি অন্ধ” ব্যক্তিকে দেখে কী বলেছিলেন লক্ষ্য কর। তার শিষ্যেরা জিজ্ঞাসা করেছিল: “কে পাপ করিয়াছিল, এ ব্যক্তি, না ইহার পিতামাতা, যাহাতে এ অন্ধ হইয়া জন্মিয়াছে?” যীশু উত্তর দিয়েছিলেন: “পাপ এ করিয়াছে, কিম্বা ইহার পিতামাতা করিয়াছে, তাহা নয়।” (যোহন ৯:১-৩) না, সেই ব্যক্তির অন্ধত্বের কারণ তার অথবা তার বাবা-মার কোন নির্দিষ্ট পাপ ছিল না। বরং, আদম থেকে আমাদের সকলের পাওয়া অসিদ্ধতার ফল ছিল। প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছেন: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”—রোমীয় ৫:১২.
সুতরাং, শারীরিক বিকলাঙ্গতা ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ অথবা শাস্তির ফল নয়। কিছু ঘটনা ঘটে অসাবধানতার জন্য। আর অন্যগুলি শুধুমাত্র “সময় ও আকস্মিক” ঘটনার জন্য। (উপদেশক ৯:১১, NW) আর পিতামাতার কাছে অপব্যবহার অথবা অবহেলা পাওয়ার জন্যও কিছু কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ক্ষতি হয়।
তোমার সমস্যার কারণ যাই হোক না কেন, ঈশ্বর যে তোমাকে অস্বাভাবিক মনে করেন, এমন ভাবার কোন কারণ নেই। বরং, তিনি তোমাকে মূল্যবান এবং অপরিহার্যরূপে দেখেন, বিশেষত তুমি যদি ঈশ্বরভয়শীল হও। (লূক ১২:৭) তিনি ব্যক্তিগতভাবে “তোমাদের জন্য চিন্তা করেন” এবং তাঁর পরিচর্যায় তোমাকে ব্যবহার করে আনন্দ পান। (১ পিতর ৫:৭) এমনকি, ঈশ্বরের সেবকদের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, প্রেরিত পৌলের একটি শারীরিক দৌর্বল্য ছিল—তার “মাংসে একটি কন্টক।” (২ করিন্থীয় ১২:৭) “মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন,” এই বিষয়ে জানা কত সান্ত্বনাদায়ক। (১ শমূয়েল ১৬:৭) তোমার ক্ষমতা তিনি সম্পূর্ণরূপে বোঝেন এবং নতুন জগতে সিদ্ধতা পাওয়ার পর তুমি কী করতে পারবে সেই সম্বন্ধেও জানেন।
অন্যদের সহ্য করা
দুঃখের বিষয়, তোমার সহপাঠীদের এবং অন্যান্যদের হয়ত ঈশ্বরের মত উদার দৃষ্টিভঙ্গি নাও থাকতে পারে। এমনকি, কয়েকসময় লোকে সরাসরি নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে। সুতরাং, তোমার সমস্যা সম্বন্ধে তোমার সহপাঠীরা যদি একইরকম নির্দয় ব্যবহার করে তাহলে আশ্চর্য হয়ে যেও না। সাধারণত, লোকে দুঃখ অথবা লজ্জা দিতে চায় না; কখনও কখনও তারা শুধুমাত্র কৌতুহল প্রকাশ করে। তোমার সমস্যা সম্বন্ধে অস্বস্তি বোধ করায় অথবা শুধুমাত্র অবিবেচক হয়ে তারা দুঃখজনক অথবা বোকার মত কিছু বলে ফেলতে পারে।
তুমি কী করতে পার? কখনও কখনও তুমি লজ্জাকর পরিস্থিতি এড়াতে পার। উদাহরণস্বরূপ, অন্যেরা যদি তটস্থ হয়ে থাকে অথবা কী বলবে তা না জানে, তাহলে তুমিই তাদের সহজ বোধ করতে সাহায্য করতে পার। আমরা সকলেই যা বুঝি না তাকে যে ভয় করি, তা বুঝবার চেষ্টা কর। তোমার বিকলাঙ্গতার দিকে না দেখে তারা যাতে প্রকৃতই তোমাকে জানতে পারে সেই বিষয়ে তাদের সাহায্য কর। পরিস্থিতি উপযুক্ত হলে, তুমি এইরকম কিছু বলতে পার: “আপনি কি ভাবছেন আমি কেন হুইল্চেয়ার ব্যবহার করি?” পেরেন্টস্ পত্রিকা অনুযায়ী, একজন শিক্ষিকা, যার শরীরের একটি অঙ্গ নেই, তার ছাত্রদের কৌতুহল নিবৃত্ত করতে গিয়ে তিনি প্রথমেই বলেন: “তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ কী হয়েছিল? জানতে চাও কি?”
সব চেষ্টা সত্ত্বেও, কখনও কখনও তুমি দুঃখ পাবে। কিশোরী বেকি বলেছে: “আমি যখন আরও ছোট ছিলাম, তখন অন্যেরা ঠাট্টা করলে আমি খুবই দুঃখ পেতাম; সারা জীবন আমি অল্পেতেই মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। কিন্তু এখন নিজেকে দুঃখ পেতে দিই না। কয়েকসময়ে এমনকি আমার পরিস্থিতিতে আমি নিজেই হাসি।” হ্যাঁ, দুঃখজনক উক্তি থেকে দুঃখ না পেতে হলে, হাস্যরসবোধ অনেক কিছু করতে পারে। “হাস্য করিবার কাল”ও আছে। (উপদেশক ৩:৪) রাজা শলোমন আরও উপদেশ দিয়েছিলেন: “যত কথা বলা যায়, সকল কথায় মন দিও না।” (উপদেশক ৭:২১) কখনও কখনও মূর্খের মত কথার মোকাবিলা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল তা উপেক্ষা করা। বেকি বলে, “লোকে কী বলে সে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।”
আশা তোমাকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে
বাস্তবপক্ষে, সমস্ত মানবজাতিরই খুঁত রয়েছে। “সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে,” বাইবেল বলে। (রোমীয় ৮:২২) কিন্তু ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তুমি আশা রাখতে পার। উদাহরণস্বরূপ, একজন কিশোরীর বিষয়ে দেখুন যাকে আমরা ক্যারোল বলব। সে প্রায় বধির হয়ে জন্মেছিল। তারপর একটি সাইকেল দুর্ঘটনায় তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। ক্যারোল মৃত্যু চেয়েছিল। কিন্তু সে যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে বাইবেল পড়তে শুরু করে এবং জানতে পারে যে একটি নতুন জগৎ আসছে যেখানে “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” (যিশাইয় ৩৩:২৪) বাস্তবিকই সে এখন আশা রাখে যে তার বিকলাঙ্গতা একদিন দূর হয়ে যাবে—অলৌকিকভাবে!—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬.
ঈশ্বর সম্বন্ধে জেনে ক্যারোলের স্বভাবে কী পরিবর্তন এসেছে? কিছু ঘনিষ্ঠ খ্রীষ্টীয় বন্ধু তার সম্বন্ধে বলে: “সে সবসময়েই খুশি থাকে আর তার বিকলাঙ্গতা সম্বন্ধে কখনও চিন্তা করে না।” আগ্রহজনকভাবে, তারা আরও বলে: “তার বন্ধুদের অনেকেই বোঝে না যে সে একটি কৃত্রিম পা পরে থাকে আর সে বধির।” কেন? “সে ঠোঁট দেখে কথা বুঝতে এবং হিয়ারিং এডের উপরে নির্ভর করে।” স্পষ্টতই ভবিষ্যতের জন্য আশা করা ছাড়াও ক্যারোল আরও কিছু করেছে। এখন তার পক্ষে যা করা সম্ভব, সেই সবকিছুই সে করবার চেষ্টা করেছে। তুমিও কিভাবে তা করতে পার, সেই সম্বন্ধে এই বিষয়ের পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। (g93 5/22)
যারা কৌতুহল দেখায় তাদের কাছে নিজেদের অবস্থার কথা বর্ণনা করে অনেকে সাহায্য পেয়েছে