আমি জুয়া খেলায় আসক্ত! আমি কিভাবে জুয়া খেলা বন্ধ করতে পারি?
“আমি যখন ১৩ বছরের ছিলাম তখন থেকেই আমি এক ধরনের জুয়া খেলার [স্লট] মেশিনে খেলা আরম্ভ করি,” ডেভিড স্বীকার করে। “আমি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাই যে মনোরঞ্জন কেন্দ্রের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমি স্লট মেশিনে জুয়া না খেলে পারতাম না।” থমাস্ নামক আরেক জন প্রাক্তন জুয়াড়ি স্বীকার করে: “আমার অভ্যাসের জন্য এমন কি আমি বন্ধু-বান্ধব, পরিবার এবং কর্মসাথীদের কাছ থেকে চুরি করতাম। যে কোন জিনিসের উপর আমি জুয়ো খেলতাম।”
ডেভিড এবং থমাস্ এই দুজনেই খ্রীষ্টীয়রূপে বড় হয়। উভয়েই জুয়া খেলায় নেশাগ্রস্ত হয়—মারাত্মক এক নেশার বশে আসে। গবেষকগণ বলেন যে, অত্যধিক সংখ্যায় যুবক-যুবতীরা এই ধূর্ত মানসিক স্ফূর্তির বলি হয় যা তাদের জুয়া খেলতে প্রলোভিত করে। টাইম পত্রিকা বলে: “জুয়া খেলা সম্বন্ধীয় গবেষকেরা গণনা করেছেন যে আমেরিকার ৮০ লক্ষ নেশাগ্রস্ত জুয়াড়িদের মধ্যে সম্পূর্ণ ১০ লক্ষ কিশোর-কিশোরীরা রয়েছে।” অনেকে বিশ্বাস করে যে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সমস্ত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৪ থেকে ৬ শতাংশ অত্যধিক নেশাগ্রস্ত জুয়াড়ি।
যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন উপায়ে এই অসৎ অভ্যাসে লিপ্ত হয়। জাপানে কমবয়সীদের বাজি ধরার বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ম থাকা সত্ত্বেও যুবক-যুবতীদের “ঘোড়দৌড়ের মাঠে এবং বাইরে জুয়া খেলার অন্যান্য জায়গায় জুয়াড়ি হিসাবে অত্যধিক মাত্রায় দেখা দেওয়ার জন্য তারা বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে, যা এক বৃদ্ধিরত বিভ্রান্তিজনক প্রবণতা,” মাইনিচি ডেলি নিউজ্ বলেছে। যে যুবক-যুবতীরা বাজি ধরার নেশায় আসক্ত তাদের মধ্যে লটারি খেলা, খেলাধূলার ফলের উপরে বাজি ধরা এবং তাশ খেলাও হল এক জনপ্রিয় পন্থা।
জুয়া খেলার নেশা—ফলাফল
গ্যাম্বলারস্ আ্যনোনিমাস্ সংগঠনের, গর্ডন মুডি বলেন: “প্রথমে [জুয়া খেলা] এক অপূর্ব নতুন অভিজ্ঞতার মত হয়, যেন কোন কিছু নতুন আবিষ্কার করার অথবা প্রেমে পড়ার মত। . . . ভাগ্যের সাথে খেলা হল আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় বিষয়।” (জুয়ার নেশাকে ত্যাগ করা Quit Compulsive Gambling) হ্যাঁ, অনেকের কাছে এক নাগাড়ে পর পর জেতা এবং প্রচণ্ড আনন্দপোভোগ করা হল এক উত্তেজনার বিষয়। কিন্তু চিরকাল জেতা সম্ভব নয়। অবশেষে জুয়াড়িই অকৃতকার্য হয়। ধার-দেনা ও আর্থিক ক্ষতি হয় যা তার সমস্যার সূত্রপাত মাত্র।
যে অবসর-বিনোদন নেশার মত সেগুলি নেশাকর বস্তুর মতই হয়, যা অবর্ণনীয় আত্মিক, মানসিক এবং নৈতিক ক্ষতি করতে পারে। সেটি আপনার ভিতরে এক “বঞ্চনামূলক স্বভাবের সৃষ্টি করে . . . যা অবশেষে আপনাকে দাসে পরিণত করে,” গর্ডন মুডি বলেছেন। প্রেরিত পৌলের কথাগুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়: “তোমরা কি জান না যে, আজ্ঞা পালনার্থে যাহার নিকটে দাসরূপে আপনাদিগকে সমর্পণ কর, যাহার আজ্ঞা মান, তোমরা তাহারই দাস।” (রোমীয় ৬:১৬) জে. বি. ফিলিপস্ এই পদটি এইভাবে অনুবাদ করেছেন: “তোমরা সেই শক্তির অধীনে যার বাধ্য হতে তোমরা বেছে নিয়েছ।” ধারণা করুন, এক অত্যাচারী অভ্যাসের বশে এসে আপনি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না!
যেহেতু এক যুবক তার অভ্যাসের জন্য অনেক সময় মিথ্যা কথা, প্রতারণা এবং চুরির আশ্রয় নেয় তাই তার পারিবারিক সম্পর্কেও ক্ষতি হতে বাধ্য। ব্রিটিশ পত্রিকা বর্তমানের যুবব্যক্তিরা (Young People Now) লক্ষ্য করে: “তুমি যখন উপলব্ধি কর যে যাদের তুমি ভালবাস এবং যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের কাছে এক চোর, মিথ্যাবাদী এবং দায় হয়ে পড়েছ তখন তোমার আত্ম-সম্মানে ঘা লাগে।” তাই আশ্চর্যের নয় যে দ্যা হারভার্ড মেন্টাল হেলথ লেটার রিপোর্ট করে যে নেশাগ্রস্ত জুয়াড়িদের “অত্যন্ত নৈরাশ্যবোধ, উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে,” ভোগার প্রবণতা দেখা যায় এবং শারীরিক অসুবিধা যেমন “হজমের গোলমাল, নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, পিঠেব্যথা এবং বুকে ব্যথা” হয়।
সবথেকে মারাত্মক ফলাফল হল, আত্মিকতার ক্ষতি। বাইবেল লোভ এবং টাকাপয়সার প্রতি প্রেমকে ঘৃণা করে। (১ করিন্থীয় ৫:১০, ১১; ১ তীমথিয় ৬:১০) অন্যান্য নেশার মতই বাজি ধরার এই নেশাও হল “মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য।” (২ করিন্থীয় ৭:১) যতই তুমি বাজি ধরবে ততই তোমার বিবেক এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক নষ্ট করবে।—তুলনা করুন ১ তীমথিয় ৪:২.
ত্যাগ করার ইচ্ছা
এই অভ্যাসের কবল থেকে তুমি কিভাবে মুক্ত হতে পার? প্রথমতঃ, ত্যাগ করতে তোমার প্রকৃতই ইচ্ছা থাকা দরকার। “কোন নেশাই ত্যাগ করা যায় না যদি না নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি আসলে পরিবর্তিত হতে চায়,” বলেন লিজ্ হজকিন্সান্ নেশাগুলি (Addictions) নামক তার বইতে। এর অর্থ হল জুয়া খেলাকে ঘৃণা করতে হলে “দুষ্টতাকে ঘৃণা” করতে শিখতে হবে। (গীতসংহিতা ৯৭:১০) কিভাবে? এর আনন্দ সম্পর্কে চিন্তা করার বদলে এর ফলাফল সম্বন্ধে চিন্তা করতে হবে। “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ,” কি—কোন খেলা জেতার মজা—অনন্ত জীবন হারানোর যোগ্য? (ইব্রীয় ১১:২৫) এইভাবে চিন্তা করলে সেটি তোমাকে পরিত্যাগ করার পরিসমাপ্তিতে আসতে সাহায্য করবে।
গবেষিকা লিজ্ হজকিনসন্ লক্ষ্য করেন: “যে কোন প্রকারেরই নেশা এত বেশি ভিতরে গেঁথে যায় যে তা পরিত্যাগ করা হয় কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কেটে ফেলার সমান।” কিন্তু যীশু বলেছিলেন: “তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়া অপেক্ষা বরং এক অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল।” (মথি ৫:২৯) যে কোন জিনিস যা ঈশ্বরের সাথে তোমার সম্পর্ককে বিপন্ন করে তাকে তোমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়াই উচিত!
এর অর্থ হল আত্ম-সংযম অর্জন করা। প্রেরিত পৌলের কোন কিছু বার বার করতে ইচ্ছা হত যেটি তিনি বাড়তে দিতে পারতেন কিন্তু তিনি তার দাস হতে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি।” (১ করিন্থীয় ৯:২৭) তুমিও নিজের প্রতি কঠিন হতে শেখ, তোমার ইচ্ছাকে তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিও না।
সমস্যার মূলে যাওয়া
এই সংগ্রামে বিজয় লাভ করতে, ইচ্ছা শক্তির থেকেও আরও কিছু প্রয়োজন আছে। নেশা বেশির ভাগ সময়েই আরও গভীর সমস্যাকে প্রকাশ করে। ডিক্ নামক একজন নেশাগ্রস্ত জুয়াড়ি বলে: “আমার ছেলেবেলা অদ্ভুতরকমের ছিল। আমার পরিবারে কোন ভালবাসা ছিল না। . . . আমাকে সব সময় নিচু করা হত। নিজের সম্বন্ধে আমার ধারণাটি খুব ছোট ছিল।” সেই প্রকৃতির মানসিক চাপের পরিণাম হয় তার জুয়া খোলার।
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় জগতের অনেকেই এখন শিশু অত্যাচার ও অবহেলার জন্য মানসিক আঘাতের সাথে বিভিন্ন নেশাকে যুক্ত করছেন। যে কোন পরিস্থিতিই হোক না কেন, তোমার সমস্যার মূলে গেলে তা তোমাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করবে। গীতরচক প্রার্থনা করেন: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার উদ্বেগজনক চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪, NW) একজন পরিপক্ক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি, হয়ত মণ্ডলীর প্রাচীনের সাথে তোমার উদ্বেগজনক চিন্তা সকল আলোচনা করলে তুমি কেন জুয়া খেল এবং তোমার চিন্তাধারা ও আচরণের পরিবর্তন করতে হলে তোমাকে কী করতে হবে তা বুঝতে তিনি তোমাকে অনেকটা সাহায্য করবেন।a
a মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জগতের বেশির ভাগ জনই বিশ্বাস করেন যে নেশা ত্যাগ করতে পেশাদারী পরামর্শের প্রয়োজন। যদি কোন খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি এমন এক চিকিৎসা প্রণালী গ্রহণ করেন যা বাইবেলের নীতি বিরুদ্ধ নয়, তাহলে এটি হল সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
“আরও ভাল কিছু”
জুয়ার নেশাকে ত্যাগ করা, অনুসারে বন্ধ করা “সমস্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রথম [পদক্ষেপ]।” তোমার জীবন-ধারায় আমূল পরিবর্তনও আনতে হবে। পুনরাবৃত্তি না হওয়ার জন্য জুয়া খেলার আগের সাথীদের এড়াতে হবে এবং জুয়া খেলার ঘাঁটি যেমন তাশ খেলার আড্ডা, বাজি ধরে বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা এবং ওই রকম স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে। (হিতোপদেশ ১৩:২০) এর অর্থ এই নয় যে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। (হিতোপদেশ ১৮:১) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে গঠনমূলক, সমর্থনযোগ্য সাহচর্য বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হও। ফলদায়ক কাজে, আত্মিক কাজে এবং গঠনমূলক আমোদ-প্রমোদে নিজেকে ব্যস্ত রাখ।
হজকিনসান্ যদিও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে নেশাসক্ত ব্যক্তি এই সংগ্রামে একমাত্র তখনই জয়ী হতে পারে যখন সে “উপলব্ধি করতে পারে যে এর থেকেও আরও ভাল কিছু আছে—নিজের নেশাকে তৃপ্ত করার চাইতেও জীবন আরও কিছু প্রদান করে।” তাই, বাইবেল যে আশা প্রদান করে তার থেকে আর কী ভাল বিষয় হতে পারে?
রডি নামক এক ব্যক্তি এই বিষয়টি সত্য বলে উপলব্ধি করে। সে ২৫ বছর ধরে “সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্ত এক জুয়াড়ি” বলে নিজেকে বর্ণনা করে, যা সে শুরু করেছিল এক কিশোর হিসাবে। রডি সব রকমের জুয়া খেলে—ঘৌড়দৌড়, কুকুরদৌড়, ফুটবল ম্যাচের ফলাফলের উপর জুয়াখেলা, তাশের আড্ডায় জুয়াখেলা। কিন্তু তারপর সে যিহোবার সাক্ষীদের কাছ থেকে শেখা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলি কাজে লাগাতে আরম্ভ করল। “মাত্র তিন মাসে,” রডি বলে, “এক আশ্চর্যজনক আমূল পরিবর্তন দেখা যায়।” সে জুয়া খেলা পরিত্যাগ করে এবং আজ তিনি খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে এক প্রাচীন হিসাবে সেবা করছেন।
হয়ত, তোমার ইতিমধ্যেই বাইবেল শিক্ষার কিছু জ্ঞান রয়েছে। প্রথমে উল্লেখ করা ডেভিড এবং থমাসের মত, তুমিও হয়ত এখনও বাইবেলের সত্যকে নিজের করে নিতে পারনি। যদি তাই হয়, তাহলে বাইবেল অধ্যয়ন গুরুত্বের সাথে করে ‘তোমার পক্ষে উত্তম, প্রীতিজনক ও সিদ্ধ স্বরূপ ঈশ্বরের ইচ্ছাটি কী তা জেনে নাও’ না কেন? (রোমীয় ১২:২) ডেভিড ও থমাস, যা শিখেছিল তা একবার কাজে লাগাতে আরম্ভ করার পর তারা প্রকৃত বিশ্বাস ও দৃঢ় নিশ্চয়তা গড়ে তুলতে শুরু করল আর তখন তারা নেশার মত সেই জুয়া খেলা পরিত্যাগ করতে পারল। তুমিও করতে পারবে!
বাইবেল অধ্যয়ন করলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বাইবেলের আশাকে—যা জুয়া খেলার থেকে আরও ভাল—তোমার কাছে আরও বাস্তব করে তুলবে। এর সাথে, তা তোমাকে ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। ফলে তুমি সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে “অবিরত প্রার্থনা” করতে পারবে, এই বিশ্বাস নিয়ে যে তিনি তোমার মনোভাব বুঝতে পারেন। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭; গীতসংহিতা ১০৩:১৪) জুয়া খেলার নেশাকে অতিক্রম করার সংগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে তিনি তোমার অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টার পুরস্কার দেবেন।—গালাতীয় ৬:৯; ফিলিপীয় ৪:১৩. (g93 8/8)
জুয়াড়িরা জুয়া খেলার অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সময়ে মিথ্যাকথা ও চুরির আশ্রয় নেয়