ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • g৯৪ ১/৮
  • নিঃসঙ্গতা

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • নিঃসঙ্গতা
  • ১৯৯৪ সচেতন থাক!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • আপনার উপর নির্ভর করছে
  • আপনি যেমন বোধ করতে চান তেমন ব্যবহার করুন
  • যে চূড়ান্ত সম্পর্কের আপনার প্রয়োজন
  • যেখানে আপনি একটি গোলাপ তৈরি করেন, কাঁটা গাছ সেখানে তৈরি হয় না
  • জীবনকে কী প্রকৃতই অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে
  • ঈশ্বর আপনার সাথে থাকলে, আপনি কখনই একা থাকবেন না
  • নিসঃঙ্গতা
    ১৯৯৪ সচেতন থাক!
  • একাকিত্বকে আপনি জয় করতে পারেন
    ২০০২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই করার জন্য বন্ধুত্ব করুন—বাইবেল যেভাবে সাহায্য করতে পারে
    অন্যান্য বিষয়
  • যেভাবে একাকিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়
    ২০১৫ সচেতন থাক!
১৯৯৪ সচেতন থাক!
g৯৪ ১/৮

নিঃসঙ্গতা

এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে জয় লাভ করতে কি আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ?

আপনি কি নিঃসঙ্গ বোধ করেন? আপনি বিবাহিত বা অবিবাহিত, পুরুষ অথবা মহিলা, যুবক বা বৃদ্ধ যাই হোন না কেন, জীবনে এমন এক এক পরিস্থিতি এসে থাকে যখন নিঃসঙ্গ বোধ করা স্বাভাবিক হয়ে থাকে। এই বিষয়টিও উপলব্ধি করুন, একা থাকলেই যে নিঃসঙ্গ বোধ হয়, তা নয়। এক পণ্ডিত নিজের গবেষণায় নিমগ্‌ন থাকার সময় একাকী বোধ করে না। এক শিল্পী, ছবি আঁকার সময় নিঃসঙ্গ বোধ করার কোন সুযোগই পায় না। তারা একা থাকতে পছন্দ করে এবং নির্জনতা তাদের সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়।

প্রকৃতরূপে নিঃসঙ্গতা বোধ করা বাহ্যিকভাবে সৃষ্টি হয় না কিন্তু আমাদের ভিতরেই সৃষ্টি হয়। কোন দুঃখজনক পরিস্থিতি নিঃসঙ্গতার উদ্রেক করতে পারে​—⁠মৃত্যু, বিবাহ-বিচ্ছেদ, চাকুরি হারানো, কোন দুঃখজনক ঘটনা। যদি আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ জগতকে উজ্জ্বলরূপে আলোকিত করি তখন নিঃসঙ্গতা ম্লান হয়ে যায়, এমনকি সময়ক্রমে সম্ভবত তা হারিয়ে যায় আর আমরা যা হারিয়েছি সে সম্পর্কে বোঝাপড়া করা যায়, ভুলে যাওয়া যায়।

আপনার চিন্তাধারা থেকে অনুভূতিগুলি আসে। কাউকে হারাবার পর সেই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার পর এবং যে ভাবাদ্বেগ হয় তা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাওয়ার পর, সময় আসে গঠনমূলক চিন্তাধারার প্রতি জোর দেওয়ার যা আপনাকে আবার সক্রিয় জীবন-যাপন করতে সুযোগ দেয়।

কার্যতৎপর হোন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। গঠনমূলক কিছু করার আছে। মিশুকে হোন। কাউকে ফোন করুন। চিঠি লিখুন। বই পড়ুন। লোকেদের ঘরে নিমন্ত্রণ করুন। ভাব আদান-প্রদান করুন। বন্ধু পেতে হলে আপনাকে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে। আপনার অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্বকে পরীক্ষা করুন যাতে আপনি অপরের কাছে নিজেকে প্রসারিত করতে পারেন। সাধারণ ব্যাপারে করুণা দেখান। অপরের সাথে সান্ত্বনামূলক ছোট ছোট আধ্যাত্মিক বিষয়গুলি ভাগ করে নিন। আপনি যীশুর বাক্যগুলি সত্য বলে বুঝতে পারবেন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” আপনি আর একটি উপদেশমূলক সত্য উপলব্ধি করবেন: “জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়।”​—⁠প্রেরিত ২০:৩৫; হিতোপদেশ ১১:⁠২৫.

আপনার উপর নির্ভর করছে

তা করা কি কষ্টকর? করার থেকে বলা সহজ? যে কোন উপযোগী বিষয়ই করার থেকে বলা সহজ হয়ে থাকে। সেইজন্য তা করা আপনার জন্য পরিতৃপ্তি আনে। আপনাকে বিশেষ প্রচেষ্টা করতে হবে। দেওয়ার মধ্যে আপনার একটি অংশ যায় এবং আপনার অভ্যন্তরীণ আলোটি আরও উজ্জ্বল হয়। যে নিঃসঙ্গতার বশে আপনি রয়েছেন তা দূর করতে প্রচেষ্টা করা আপনার উপর নির্ভর করছে। আধুনিক পরিপক্কতা (ইংরাজিতে পাওয়া যায়) পত্রিকার একজন লেখক বলেন: “আপনার নিঃসঙ্গতার জন্য অন্য কেউই দায়ী নয়, কিন্তু আপনি এই সম্বন্ধে কিছু করতে পারেন। একটি বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি নিজের জীবনকে প্রসারিত করতে পারেন। আপনাকে দুঃখ দিয়েছে বলে আপনি যাকে মনে করেন তাকে আপনি ক্ষমা করতে পারেন। আপনি চিঠি লিখতে পারেন। আপনি ফোনে কারুর সাথে কথা বলতে পারেন। একমাত্র আপনিই আপনার জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন। অন্য কোন ব্যক্তি আপনার জন্য তা করে দিতে পারবে না।” তার পাওয়া এক চিঠি থেকে তিনি উল্লেখ করেন যে, “যা সঠিকরূপে বিষয়টি ব্যক্ত করে: ‘আমি লোকেদের বলি, জীবনে নিঃসঙ্গ বা অতৃপ্ত বোধ করা, নিজেদের উপর নির্ভর করছে। সচেতন হোন, কোন কিছু করুন!’”

আপনার সাহায্যকারী বন্ধুদের যে মানুষ হতে হবে, তা নয়। এক গবাদি পশু রোগ চিকিৎসক বলেন: “বয়স্কদের কাছে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা আসে তা শারীরিক সমস্যা নয় কিন্তু যে নিঃসঙ্গ ও অবজ্ঞা তারা অনুভব করে। সঙ্গ . . . দিয়ে, পোষা জন্তুরা (এমনকি কুকুরও) অনেক সময় উদ্দেশ্য ও অর্থ প্রদান করে যখন বয়স্কেরা সমাজ থেকে দূরে সরে যায়।” ভাল ঘর ও বাগান (ইংরাজি) পত্রিকাটি বলে: “পোষা জন্তুরা মানসিকরূপে বিচলিতদের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে; শারীরিকভাবে অসুস্থদের, প্রতিবন্ধীদের ও বিকলাঙ্গদের প্রেরণা দেয়; নিঃসঙ্গ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের আবার সক্রিয় করে তোলে।” যারা পোষা প্রাণীর প্রতি নতুনকরে আগ্রহ গড়ে তুলছে তাদের সম্বন্ধে আর একটি পত্রিকা বলে: “রোগীর উদ্বেগ কমে যায় এবং অবজ্ঞার ভয় না করেই তারা পোষা প্রাণীদের প্রেম প্রকাশ করতে পারে। পরে তারা লোকেদের সাথে কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করে, প্রথমে তারা তাদের পোষা প্রাণীটির যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে বলে। তারা দায়িত্ববোধ উপলব্ধি করতে আরম্ভ করে। তাদের প্রয়োজন আছে বলে তারা বোধ করে, কিছু তাদের উপর নির্ভর করছে।”

অনেকসময়ই যিনি নিঃসঙ্গ বোধ করছেন তিনি নিজেকে সাহায্য করার জন্য, হতাশার মধ্যে থেকে নিজেকে বার করে আনার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা করেন না। এই পর্যন্ত নিজেকে কষ্ট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক আলস্য, অনিচ্ছা থাকে কিন্তু সে যদি তার নিঃসঙ্গতার গভীরে যেতে চায় তাহলে কিছু তাকে করতেই হবে। যে পরামর্শ লোকেদের ভাল লাগে না তার প্রতি তাদের বিরোধিতা সম্পর্কে ডা. জেমস্‌ লিঞ্চ লেখেন: “মানুষের স্বভাব এমন হয়, আমাদের যে বিষয়গুলি ভাল লাগে না তা আমরা সাধারণত শুনতে চাই না অথবা নিজেদের আচারব্যবহারে তা প্রয়োগ করতে চাই না।” এক ব্যক্তি হয়ত নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে চায় কিন্তু কাটিয়ে ওঠার জন্য যে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন তা অর্জন করতে সে ইচ্ছুক নয়।

আপনি যেমন বোধ করতে চান তেমন ব্যবহার করুন

অতি গভীর অবসাদকে অতিক্রম করতে একজনের প্রয়োজন প্রকৃত আনন্দ ও দয়ার মনোভাবকে বজায় রাখার চেষ্টা করা। (তুলনা করুন প্রেরিত ২০:৩৫.) এর অর্থ হল মারাত্মক সেই আলস্যতার ঠিক বিপরীত কাজ করে নিঃসঙ্গতায় ঘেরা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা। হাসিখুশি থাকুন, নেচেগেয়ে বেড়ান, মজার গান করুন। যা কিছুই করুন না কেন তা যেন আনন্দকে প্রতিফলিত করে। বাড়িয়ে করুন, বেশি করে করুন, দুঃখের মনোভাবকে আনন্দের বিষয় দিয়ে ভরিয়ে দিন। কী ধরনের আনন্দের বিষয়?

যেমন ফিলিপীয় ৪:৮ পদে যা আছে: “অবশেষে, হে ভ্রাতৃগণ, যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক, সেই সকল আলোচনা কর।”

আপনার জীবনে কিছু অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনার জীবনে কোন অর্থ আছে তাহলে আপনি তার প্রতি সাড়া দিতে ও তা পরিপূর্ণ করতে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠবেন। আপনি হয়ত তখন হতাশাজনক নিঃসঙ্গ বোধ করবেন না। এই বিষয়টি আগ্রহজনকরূপে, ভিক্টর ফ্রঙ্কল্‌-এর অর্থের খোঁজে মানুষ (ইংরাজি) বইতে দেখানো হয়। তিনি হিটলারের কন্‌সেনট্রেশন ক্যাম্পের বন্দীদের সম্পর্কে আলোচনা করেন। যাদের জীবনে কোন অর্থবোধ ছিল না, নিঃসঙ্গতা তাদের গ্রাস করে এবং বেঁচে থাকার ইচ্ছাটি তারা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু “একজনের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ যদি উচ্চ হয়, আরও আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি নোঙর বাঁধা থাকে তাহলে তা ক্যাম্পের জীবনও সেটিকে বিচলিত করতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন: “যখনই অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় তখন সেই যন্ত্রণা ভোগ আর যন্ত্রণা ভোগ থাকে না, যেমন ত্যাগের অর্থ। . . . আনন্দ উপভোগ বা বেদনাকে এড়িয়ে যাওয়াই মানুষের প্রধান চিন্তার বিষয় নয়, পরিবর্তে তারা জীবনের অর্থ পেতে চায়। সেইজন্য মানুষ এমনকি দুঃখকষ্ট ভোগ করতেও প্রস্তুত থাকে এই বিষয়টির উপর নির্ভর করে যে তার এই দুঃখকষ্ট ভোগের যেন একটা অর্থ থাকে।”

যে চূড়ান্ত সম্পর্কের আপনার প্রয়োজন

প্রকৃত এক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে হলে এক ব্যক্তিকে ঈশ্বর ও তাঁর বাক্য বাইবেলের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরতা রাখতে হয়। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর কাছে সাগ্রহে প্রার্থনা করলে তা আমাদের জীবনে অর্থ প্রদান করে। এমনকি তখন, মানব সম্পর্ক টুকরো-টুকরো হলেও, আমরা আর একা থাকব না, নিঃসঙ্গতা আমাদের গ্রাস করবে না। যেমন ফ্রঙ্কল্‌ বলেন, দুঃখকষ্ট ভোগ করার যদি কোন অর্থ থাকে তাহলে তা সহ্য করা যায়, এমনকি তা হয় আনন্দের উৎস। মানব স্বভাবের এক পর্যবেক্ষক বলেন: “ফাঁসি কাঠের শহীদেরও এমন আনন্দ হয় যে রাজারাও হয়ত তাকে হিংসা করবেন।”

মানুষের দ্বারা তাড়না ভোগ করার সময় খ্রীষ্টের প্রেরিতেরা যিহোবার কাছ থেকে আনন্দ পেয়েছিলেন; সেই দুঃখকষ্ট তাদের জন্য এক মহান অর্থ এনেছিল। “ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গরাজ্য তাহাদেরই। ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত।” (মথি ৫:​১০-১২) অনুরূপ প্রতিক্রিয়া প্রেরিত ৫:​৪০, ৪১ পদে লিপিবদ্ধ আছে: “প্রেরিতদিগকে কাছে ডাকিয়া প্রহার করিলেন, এবং যীশুর নামে কোন কথা কহিতে নিষেধ করিয়া ছাড়িয়া দিলেন। তখন তাঁহারা মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন।”

যেখানে আপনি একটি গোলাপ তৈরি করেন, কাঁটা গাছ সেখানে তৈরি হয় না

আপনার মনের ভূমিকে সৌন্দর্য ও গঠনমূলক উদ্দেশ্যের বীজ দিয়ে ভরিয়ে দিন; নেতিবাচক হতাশা ও অন্ধকারময় নিঃসঙ্গতার জন্য কোন স্থানই রাখবেন না। (তুলনা করুন কলসীয় ৩:২; ৪:⁠২.) তা করা কি কষ্টকর? কিছু পরিস্থিতিতে তা অসম্ভব বলে মনে হয়। এক মহিলা-কবি লক্ষ্য করেন: “আপনি যেখানে গোলাপ তৈরি করেন, . . . সেখানে কাঁটা গাছ তৈরি হয় না,” এর জন্য প্রয়োজন গঠনমূলক প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তি ব্যবহারের দৃঢ় সঙ্কল্প। কিন্তু তা করা যেতে পারে, তা করাও হয়।

লরেল্‌ নিজ্‌বেট্‌-এর উদাহরণটি বিবেচনা করুন। তিনি পোলিও দ্বারা আক্রান্ত হন এবং ৩৬ বছর বয়সে তাকে লোহার ফুসফুস দেওয়া হয়, যার ফলে তাকে ৩৭ বছর ধরে সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত তার পক্ষাঘাত হওয়ার জন্য তিনি শুধুমাত্র তার মাথাটিই নাড়াতে পারতেন। প্রথমে তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, প্রায় একদিন নিজের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করার পর, তিনি মনে করলেন ‘যথেষ্ট হয়েছে!’ তার দুটো ছেলেমেয়েকে মানুষ করে তোলার ও স্বামীকে যত্ন করার ছিল। তার জীবনকে আবার গঠন করতে তিনি আরম্ভ করলেন; লোহার ফুসফুস নিয়ে সংসার করতে তিনি শিখলেন।

লরেল্‌ খুব কমই ঘুমাতেন। তিনি কিভাবে রাতের বেলার সেই দীর্ঘ সময় কাটাতেন? নিঃসঙ্গ বোধ করতেন? না। তিনি তার স্বর্গস্থ পিতা, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতেন। নিজের শক্তির জন্য প্রার্থনা করতেন, তার খ্রীষ্টীয় ভাই-বোনদের জন্য প্রার্থনা করতেন এবং অপরকে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ সম্বন্ধে প্রার্থনা করতেন। তিনি প্রচার করার পথ করে নিয়েছিলেন এবং অনেককে যিহোবার নামের সাক্ষ্য দিয়ে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি নিঃসঙ্গতার কোন কাঁটাকে সৃষ্টি হতে দেননি; তিনি গোলাপ সৃষ্টি করার জন্য খুবই ব্যস্ত ছিলেন।

ওয়াচ টাওয়ার মিশনারী, হ্যারল্ড কিং-এর ক্ষেত্রেও একই ঘটে। চীনা জেলখানায় পাঁচ বছর নির্জন কারাবাসের দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সময়, তার একাকী বোধ করা খুবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি সেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে বহিষ্কার করেন, বিচার বিবেচনার মাধ্যমে তার ইচ্ছা শক্তিকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করেন। পরে তিনি এটিকে এইভাবে বর্ণনা করেন:

“আমি ‘প্রচার’ কাজের এক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করি। কিন্তু নির্জন কারাবাসে থাকলে কার সাথে সে প্রচার করতে পারে? আমার যা কিছু স্মরণে ছিল তার থেকে উপযুক্ত কিছু বাইবেল উপদেশ প্রস্তুত করি আর তারপর আমার কল্পনা করা ব্যক্তির কাছে তা বলতে আরম্ভ করি। যেমন হয়ে থাকে, সেইভাবে আমি প্রচার কাজ করা শুরু করি, কল্পনা করা প্রত্যেকটি দরজায় আঘাত করে, কল্পনা করা প্রত্যেকটি গৃহকর্তাকে সাক্ষ্য দিয়ে, এইভাবে সকালবেলা বেশ কিছু ঘরে যাই। সময়ক্রমে, কল্পনা করা শ্রীমতি কার্টার-এর সাথে আমার দেখা হয়, যিনি কিছুটা আগ্রহ দেখান এবং বেশ কয়েকটি পুনর্সাক্ষাত করার পর, নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের আমরা ব্যবস্থা করি। এই অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা ‘ঈশ্বরই সত্য হোন’ (ইংরাজি) নামক বইটি থেকে প্রধান বিষয়গুলি আমার যতটা মনে ছিল তা আলোচনা করি। এই সব কিছুই আমি জোরে জোরে করেছিলাম, যাতে এই সকলের শব্দ আমার মনে আরও গভীরভাবে বিষয়গুলি গেঁথে দেয়।”

হাজার হাজার যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ, যারা হিটলারের কন্‌সেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী হয়েছিল তারা স্বাধীনতা পেতে পারত যদি তারা তাদের বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করত। খুব কমই সেইরকম করেছিল। বিশ্বস্তভাবে হাজার হাজার লোক মারা যান​—⁠কিছু জনকে হত্যা করা হয়, কিছু রোগ ও অপুষ্টির জন্য মারা যান। একজন কারারুদ্ধ সাক্ষী​—⁠যার নাম হল ইয়োজেফ্‌​—⁠তার দুই বড় ভাই অন্য ক্যাম্পে ছিল। একজনকে জোর করে উপরের দিকে মুখ করে শোয়ানো হয় যাতে সে তার গলা কাটার ছুরির ফলাকে নেমে আসতে দেখে। ইয়োজেফ্‌ বর্ণনা করেন: “ক্যাম্পের মধ্যে অন্যেরা যখন এই বিষয়টি শুনল তখন তারা আমাকে অভিনন্দন জানাল। তাদের ইতিবাচক মনোভাব আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। বেঁচে থাকার থেকে বিশ্বস্ত থাকা আমাদের কাছে আরও বেশি অর্থ রাখে।”

তার অন্য ভাই, গুলি করার দলের সম্মুখীন হয়, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় সে কিছু বলতে চায় কি না। সে প্রার্থনা করার অনুমতি চায়, তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। প্রার্থনার মধ্যে এত মর্মস্পর্শী করুণা ও হৃদয়পূর্ণ আনন্দ ছিল যে যখন গুলি করতে আদেশ দেওয়া হয় তখন দলের কেউই গুলি করে না। আবার আদেশ দেওয়া হয়। ফলে একটি গুলি করা হয়, যা তার দেহে বিদ্ধ হয়। এই দেখে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে কমাণ্ডিং অফিসার তার নিজের পিস্তল বার করে তাকে হত্যা করার কাজ শেষ করে।

জীবনকে কী প্রকৃতই অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে

এই সকল ঘটনাগুলির মধ্যে জড়িত ছিল ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস। যখন সমস্ত কিছু প্রচেষ্টা করার পরও ব্যর্থতা আসে, নিঃসঙ্গতাকে জয় লাভ করার ও একদা শূন্য জীবনকে অর্থে পরিপূর্ণ করার সুযোগ সব সময় থাকে। জাগতিক দিক দিয়ে বহু জীবনকে অর্থপূর্ণ বিবেচনা করা হলেও তা বাস্তবে অর্থহীন। কেন তা হয়? কারণ এদের শেষ ফল মৃত্যু, তারা ধূলিতে ফিরে যায়, স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়, মানবজাতির সাগরে কোন লহরী তুলে যায় না, সময়ের বালুকায় কোন পদচিহ্ন রেখে যায় না। উপদেশক ৯:৫ পদে যা বলে, তা হল তাই: “কারণ জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে।” যিহোবার উদ্দেশ্য ব্যতীত জীবন-যাপন করাকে যে কোন অর্থ দিলেও তা হয় অসার।

তারকাশোভিত আকাশকে দেখুন, আপনার মাথার উপর এই অন্ধকার ছাদের বিশালতাটি অনুভব করলে, তার সামনে আপনার অর্থের জ্ঞানের কোন মূল্যই থাকে না। আপনি গীতরচক দায়ূদের অনুভূতিটি উপলব্ধি করতে পারেন যখন তিনি লেখেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” দায়ূদের পুত্র শলোমন মানুষের কাজকে বর্জন করে বলেন, “সকলই অসার,” এবং এই পরিসমাপ্তি করেন: “আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য।”​—⁠গীতসংহিতা ৮:​৩, ৪; উপদেশক ১২:​৮, ১৩.

তাহলে, সর্বশেষ বিশ্লেষণে, কিভাবে একজন নিঃসঙ্গ ব্যক্তি বা সেই ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তি, জীবনে অর্থ আনতে পারে? ঈশ্বরের ভয়ে জীবন-যাপন করে, ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে। একমাত্র তখনই সে এই বিশাল মহা বিশ্বের স্রষ্টা, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তার স্থান পাবে এবং সেই অনন্ত ঐশিক ব্যবস্থার অংশ হবে।

ঈশ্বর আপনার সাথে থাকলে, আপনি কখনই একা থাকবেন না

একজন আফ্রিকাবাসী বিশ্বস্ত যিহোবার সাক্ষী, প্রচণ্ড তাড়না সহ্য করার এবং পরিত্যক্ততা অনুভব করার সময়, বলেন যে তার মানব সম্পর্ক ব্যর্থ হলেও, তিনি কখনও নিঃসঙ্গ বোধ করেননি। তিনি গীতসংহিতা ২৭:১০ পদ উদ্ধৃত করেন: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” যীশুও সেইরূপ অনুভব করেছিলেন। “দেখ, এমন সময় আসিতেছে, বরং আসিয়াছে, যখন তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে যাইবে, এবং আমাকে একাকী পরিত্যাগ করিবে; তথাপি আমি একাকী নহি, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন।”​—⁠যোহন ১৬:⁠৩২.

যীশু একা থাকতে ভয় পাননি। তিনি প্রায়ই নিঃসঙ্গতা ইচ্ছা করে বেছে নিতেন। যখন তিনি একা ছিলেন, তখন তিনি নিঃসঙ্গ বোধ করেননি। ঈশ্বরের আত্মার প্রবাহের কাছে তিনি নিজেকে মেলে দেন এবং তাঁর সৃষ্টি দিয়ে ঘেরা পরিবেশে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠতা বোধ করেন। এক এক সময় তিনি লোকেদের সঙ্গ এড়িয়ে চলেন যাতে তিনি একা ঈশ্বরের সঙ্গ উপভোগ করতে পারেন। তিনি ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হয়েছিলেন, তাহাতে তিনিও তার নিকটবর্ত্তী হন।’ (যাকোব ৪:⁠৮) সন্দেহাতীতরূপে, তিনি ঈশ্বরের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ছিলেন।

শাস্ত্র যে বন্ধুকে বর্ণনা করে সেই ধরনের বন্ধুত্ব মূল্যবান। (হিতোপদেশ ১৭:১৭; ১৮:২৪) যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস এবং কোন প্রশ্ন না করেই তাঁর প্রতি তার বাধ্যতার জন্য, অব্রাহাম “ঈশ্বরের বন্ধু এই নাম পাইলেন।” (যাকোব ২:২৩) যীশু তার অনুসরণকারীদের বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু। আমি তোমাদিগকে আর দাস বলি না, কেননা প্রভু কি করেন, দাস তাহা জানে না; কিন্তু তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি, কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি।”​—⁠যোহন ১৫:​১৪, ১৫.

যিহোবা ঈশ্বর এবং খ্রীষ্ট যীশুর মত বন্ধুরা থাকার জন্য, যাদের বিশ্বাস আছে তারা কেন নিঃসঙ্গতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে জয় লাভ করতে পারেন না? (g93 9/22)

প্রার্থনা এবং অন্যান্য কাজ নিঃসঙ্গতা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারে

কন্‌সেনট্রেশন ক্যাম্পে হ্যারল্ড কিং ও হাজার হাজার অন্যান্য যিহোবার সাক্ষীবৃন্দের উদাহরণ প্রদর্শন করে যে অত্যন্ত মন্দ পরিস্থিতিতেও ঈশ্বরে বিশ্বাস নিঃসঙ্গতাকে জয় করে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার