বিশ্ব সরকার
রাষ্ট্রসঙ্ঘ কি এর উত্তর?
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জগতে আবার দৃঢ় নিশ্চয়তা ও সম্মান লাভ করেছে। লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে “ইউ এন” এই দুটি অক্ষর এক বীরসুলভ প্রতিচ্ছবি জাগিয়ে তোলে: সমস্যাবহুল অঞ্চলে সৈন্যদলেরা নীল টুপি পরে শান্তি স্থাপন করতে যাচ্ছে, ত্রাণ কর্মচারীরা আফ্রিকার ক্ষুধার্ত উদ্বাস্তুদের খাদ্য দান করছে এবং নতুন জগৎ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য উৎসর্গীকৃত পুরুষ ও নারীরা নিঃস্বার্থপরভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট কর্তৃক নয় মাসের অনুসন্ধান অনুসারে, যা ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন রিপোর্ট করে, এই বীরসুলভ প্রতিচ্ছবির পিছনে বাস্তবতা হল “এক প্রচণ্ড, বৃহৎ অনিয়ন্ত্রিত আমলাতন্ত্র, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রষ্টাচার ও অভাব যা কার্যকারিতার হানি করে।” দলিলপত্রের হাজার হাজার পৃষ্ঠা এবং বর্তমান ও প্রাক্তন ইউ এন সচিবদের সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করে একটি গবেষণা নিম্নোক্ত চিত্রটি প্রকাশ করে।
আফ্রিকায় সাহায্য: ইউ এন আফ্রিকায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোটি কোটি ডলারের ত্রাণ দান করে, যে মহাদেশ যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য ও রোগব্যাধি দ্বারা জর্জরিত। অসংখ্য জীবন রক্ষা পেয়েছে।
তবুও, পরিচালনার অভাব, অবজ্ঞা এবং অনেক সময় দুর্নীতির জন্যও হাজার হাজার জীবন ও লক্ষ লক্ষ ডলারের ক্ষতি হয়েছে। ইউ এন দুর্ভিক্ষ-অধ্যুষিত সোমালিয়ায় ত্রাণ দান করেছে, যেখানে বহু লোক প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। কিন্তু অরে নায়ের, মানব অধিকার পর্যবেক্ষণের কার্যনির্বাহক পরিচালকের বক্তব্য ট্রিবিউনে উদ্ধৃত করা হয় যিনি বলেন: “রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থা এমন আশ্চর্যজনকরূপে এত অবহেলাকারী এবং অসমর্থ যে তারা সোমালিয়ার দুঃখদুর্দশা রোধ করতে প্রায় কোন ভূমিকাই গ্রহণ করেনি।”
রিপোর্ট এই বিষয়েও অভিযোগ করে যে কিছু ইউ এন সচিব খাদ্য ত্রাণ-সামগ্রী অন্য পথে নিয়ে যাওয়াতে, মানবীয় সহায়তাকে আত্মসাৎ করাতে, খাদ্য-সামগ্রী জালভাবে গ্রহণ করাতে, কালবাজারী ও মুদ্রা-বিনিময়ে জড়িত আছে। ইউ এন গবেষণাকারীরা এই ধরনের জালের প্রমাণ কম করে সাতটি আফ্রিকার দেশগুলিতে পান।
শান্তি বজায় রাখা: শান্তি বজায় রাখা ইউ এন-এর প্রধান লক্ষ্য, কিন্তু ১৯৪৫ সালে এটি স্থাপন হওয়ার পর থেকে একশোটিরও বেশি প্রচণ্ড বিরোধিতা দেখা গেছে এবং ২ কোটি লোক যুদ্ধে মারা গেছে। যাইহোক, ১৯৮৭ সাল থেকে ইউএন ১৩টি শান্তি বজায় রাখার অভিযান গ্রহণ করেছে, যা হল এর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্পূর্ণ ইতিহাসে যতগুলি ছিল ঠিক ততগুলি।
হয়ত অনেকে যুক্তি দেখাতে পারেন যে এই অভিযানগুলির জন্য যা খরচ হয় তা যুদ্ধে ব্যয়িত অপরিসীম মূল্যের থেকে বাঞ্ছনীয়, তবুও অনেকে অভিযোগ করেন যে বিষয়গুলি অনেক দূরে চলে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, শান্তিবজায় রাখার অভিযান বছরের পর বছর চলতে থাকে, যাতে শত শত ডলার খরচা হয়েই চলে কিন্তু মীমাংসা হওয়ার বিষয় স্থগিত থাকে। ইউ এন শান্তিবজায় অভিযান কাম্বডিয়াতে ১০ লক্ষ ডলার বিতরণ করে সৈন্যদের টিভি ও ভিসিআরের জন্য এবং আরও ৬,০০,০০০ ডলার পত্রিকা ও সংবাদপত্রের গ্রাহক ভুক্তির জন্য।
উন্নতি সাধন: ইউ এন-এর মধ্যেই উন্নতি সাধন করার জন্য জগদ্ব্যাপী সাড়া পড়েছে, কিন্তু কিসের উন্নতি সাধন করতে হবে সেই সম্বন্ধে মন্তব্যের পার্থক্য থাকতে পারে। উন্নতিশীল দেশগুলি সিদ্ধান্ত-নেওয়ার পন্থাগুলির ক্ষেত্রে আরও ক্ষমতার কথা বলছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমকে আরও বাড়াতে চাইছে। শিল্প-সমৃদ্ধ দেশগুলি এই সকল কার্যক্রম হ্রাস করতে এবং দুর্নীতি, পরিচালনার অভাব ও অপচয় নিঃশেষ করতে চাইছে।
এক উচ্চ পদস্থ ইউ এন সচিব বলেন: “উন্নতি সাধন করতে হলে, আমলাতন্ত্রে যা একেবারেই করা সম্ভব নয় তার কিছু করতে হবে: আপনাকে সেই স্থান পরিষ্কার করতে হবে। অর্থপূর্ণ কোন কিছু করতে হলে আপনাকে ৪৫ বছরের বার্নাকলকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে আর সেই ধরনের বার্নাকল প্রচুর আছে।”
যদিও খ্রীষ্টানেরা মনে করে যে মানবজাতির ব্যাপারে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন তবুও তারা রাষ্ট্রসঙ্ঘকে এর উত্তর হিসাবে বিশ্বাস করে না। পরিবর্তে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, যে সরকার সম্বন্ধে যীশু তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে বলেছিলেন।—মথি ৬:১০. (g93 9/22)