তিমি? শুশুক?
না, এ তো তিমশুক!
হাওয়াইয়ের সচেতন থাক! প্রতিনিধি কর্তৃক
বন্ধনশালায় বন্য পশুর জন্ম সবসময় এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। কিন্তু হাওয়াইয়ের সী লাইফ্ পার্কে ১৯৮৫ সালের মে ১৫ তারিখটি ছিল অসাধারণভাবে এক বিশেষ দিন।
গর্ভবতী মা ছিল অতলান্তিক বোতল-নাক শুশুক, (dolphin) হাওয়াই ভাষায় যার নাম হল পুনাহেলে, (উচ্চারণ করা হয় পু-না-হেইলে) যার অর্থ হল “প্রিয় বন্ধু।” গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পুনাহেলের পেট একটু বেশি বড় দেখাচ্ছিল। তাই পার্কের কর্মকর্তারা মনে করেছিলেন যে অস্বাভাবিক কোন কিছু হচ্ছে। তাদের সন্দেহ ঠিক প্রমাণিত হয় যখন পুনাহেলের শাবকের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় কেকাইমালু (উচ্চারণ করা হয় কে-কাই-মাহ্লু)। কেকাইমাহ্লু শুধুমাত্র শুশুকের থেকে গাঢ় রঙের ছিল না তার বাইরের দিকে বার করা নাকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যতা অনুযায়ী ছিল ছোট।
এরপর কেকাইমালু তার মুখ খোলে।
অতলান্তিক বোতল-নাক শুশুকের ৮৮টি দাঁত থাকার কথা। কিন্তু কেকাইমালুর দাঁত বার করা হাসি দেখায় মাত্র ৬৬টি দাঁত—সেগুলি নজর কাড়ে এমন বড় ছিল। তাহলে কী ঘটেছিল?
এই নবজাতকের মা সী লাইফ্ পার্কের হোয়েলার্স কোভ্ প্রদর্শনীতে প্রতিদিন অন্যান্য শুশুকদের সাথে খেলা দেখাতো। তার সাথীদের মধ্যে একজন ছিল ১৮, বছরের ৯০০ কিলোগ্রামের নকল কিলার তিমি।a প্রতিদিন দিনের শেষে জলক্রীড়া প্রদর্শনকারীদের একটি চৌবাচ্চায় সাঁতার কাটতে দেওয়া হত।
a সী লাইফ্ পার্কের একটি প্রকাশনা অনুযায়ী, “নকল কিলার তিমি” (false killer whale) নামটি তারা পায় বৈজ্ঞানিক নামের আক্ষরিক অনুবাদের দ্বারা (স্যুডো = নকল, অর্কা = এক জাতীয় তিমি) এবং পরিচিত হত্যাকারী তিমির সাথে এদের নিকট সম্পর্ক আছে যাদের বহু ওশেনারিয়ামে (oceanarium) দেখানো হয়ে থাকে।”
তার আশাতীত পরিণামটি ছিল কেকাইমালু—প্রাণীটি হল অর্দ্ধেক শুশুক এবং অর্দ্ধেক তিমি। পার্কের কর্মকর্তারা এই বিরল সঙ্কর প্রাণীটিকে আনন্দের সাথে নাম দেন “তিমশুক” (wholphin)। তার ৬৬টি দাঁত, তার শুশুক মায়ের ৮৮টি দাঁত ও তিমি বাবার ৪৪টি দাঁতের সাথে আপোশ করে হয়েছে। যদিও তার গাঢ় রং ও বড় আকার স্পষ্টরূপেই তিমির উত্তরাধিকারকে প্রকাশ করে, পার্কের মহিলা কর্মকর্তারা তাকে “পিতামাতা উভয়েরই এক অদ্ভুত মিশ্রণ” বলে। তার সরু মুখ বা “ঠোঁট” শুশুকেরই মত কিন্তু একটু ছোট।
আর একটি মাত্র তিমশুকের জন্ম হয়েছিল ১৯৮১ সালে জাপানের ওশেনারিয়ামে। কিছু মাস পরে এই সঙ্কর প্রাণীটি মারা যায়। কেকাইমালুর ভবিষ্যতের আশা কি কিছু ভাল অছে?
ষোল কিলোগ্রামের শিশু তিমশুকটি সুস্থ মনে ও স্বাভাবিকভাবেই মায়ের দুধ খেতে আরম্ভ করে। একজন পার্ক কর্মকর্তার মন্তব্য লেখার সময়ে হোনোলুলু স্টার বুলেটিন আ্যণ্ড আ্যডভার্টাইজার্ বলে কেকাইমাহ্লুর জন্মের কিছুদিন পরে: “এই ছোট শিশুটির পরিণত বয়স অবধি বেঁচে থাকার আশা তার এক প্রজাতির ভাই-বোনদের মত অত ভাল নয়। . . . সঙ্কর জাতীয় সাধারণত মৃতাবস্থায় জাত হয় বা তাদের রোগব্যাধি দেখা দেয় এবং তাড়াতাড়ি মারা যায়। মঙ্গলজনক যে, . . . পুনাহেলে হল এক অভিজ্ঞ ও প্রেমময় মা, যে তার অন্য দুটি শুশুক শাবককে [সী লাইফ পার্কে] বড় করে তুলেছে।” কর্মকর্তা বলেন: “সে খুবই মানিয়ে নেয়, সে প্রকৃতই ভাল মা।” মা হিসাবে পুনাহেলের সুনাম উপযুক্ত প্রমাণিত হয়।
কেকাইমালু এখন সাত বছরেরও বেশি বেঁচে আছে। তিনশো কিলোগ্রাম ওজনের তার মাকে তার চাইতে অনেক ছোট দেখায়। হোয়েলার্স কোভ্ প্রদর্শনীতে কিছু বছর খেলা দেখাবার পর, যখন সে পাঁচ বছরের ছিল, আর সকলেই যখন তাকে বন্ধ্যা মনে করত, তখন সে ১৯৯০ সালের জুন মাসে ইতিহাস সৃষ্টি করে। সে নিজেই মা হয়। “সাধারণত মনে করা হয় যে সঙ্করজাতিরা বন্ধ্যা হয়” বলেন মার্লি ব্রীস্, মাকাপু-এর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তত্ত্বাবধায়ক। “কিন্তু কেকাইমালু অবশ্যই বন্ধ্যা নয়।” দুঃখের বিষয়, তার প্রথমজাত—এক চতুর্থাংশ তিমি ও তিন চতুর্থাংশ শুশুক—মাত্র এক সপ্তাহ বাঁচে।
প্রকৃতপক্ষে তার শিশুকে প্রতিপালন করতে কেকাইমালু জানত না। “সঙ্করজাতীয় হওয়াতে যে এর সাথে কোন সম্পর্ক আছে আমার তা মনে হয় না,” বলেন ব্রীস্। তিনি মনে করেন কেন কেকাইমালু তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়নি তার একটি কারণ হয়ত হতে পারে যে সে ছিল ছোট এবং কিভাবে দুধ খাওয়াতে হয় তা সে জানত না। “এই প্রাণীরা সাধারণত যৌন পরিপক্কতায় আসে ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে,” বলেন ব্রীস্। তার প্রথম বাচ্চা জন্মাবার সময় তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।
নভেম্বর ৮, ১৯৯১ সালে কেকাইমালু দ্বিতীয় বাচ্চার জন্ম দেয়। কিন্তু এইবার কর্মকর্তারা প্রস্তুত ছিল। মা তিমশুক বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে আগ্রহ নিচ্ছে কি না তা ২৪ ঘন্টা নিরীক্ষণ করার পর কর্মকর্তারা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। কেকাইমালুকে জল থেকে একটি ফাঁসের মধ্যে ঝুলিয়ে, স্ত্রীদের স্তন থেকে পাম্পের সাহায্যে দুধ বার করে নেওয়া হয়। ‘মায়ের প্রথম দুধ পাওয়া ছিল বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন ব্রীস্, ‘কারণ এই দুধ বাচ্চাকে আ্যন্টিবডি দেয়।’ কিছু সপ্তাহের জন্য কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে দিনে একবার মায়ের দুধ দুইত, তার কাছ থেকে তারা প্রায় এক লিটার দুধ পেত।
তারপর তিমশুকের দুধ, মানুষের তৈরি দুধ মিশ্রণে মিশানো হত। সমুদ্র তীরে আটকে পড়া শুশুককে বাঁচাবার চেষ্টায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লরিডাতে প্রস্তুত করা হয়। সকাল ছয়টা থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত প্রতি আড়াই ঘন্টা অন্তর শিশু তিমশুককে পেটের নল দিয়ে খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন তার প্রায় পাঁচশো গ্রাম ওজন বাড়ে। খাওয়ার মাঝে দিদিমা, মা ও শিশু একটি বড় চৌবাচ্চায় একসঙ্গে আনন্দ করত।
এটি লেখার সময়ে, জগতে এখনও পর্যন্ত জানা তিমি ও শুশুকের একমাত্র নাতনির বেঁচে থাকার আশা ভালই বলে মনে হয়। হয়ত একদিন সে পরিবারের রীতি অনুসরণ করে হোয়েলার্স কোভ্ প্রদর্শনীতে খেলা দেখাবে। ইতিমধ্যে ঈশ্বর যে তাঁর সৃষ্টিতে বৈচিত্র্যের আশ্চর্যজনক ক্ষমতা রেখেছেন তার প্রতি জগৎ আর এক পলক দেখার সুযোগ পায়। (g94 2/22)
তিমশুক তার শুশুক সাথীদের সাথে