বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি
ঈশ্বরের শাসনে সন্তানদের মানুষ করে তোলা
“আপনার বাচ্চারা লঙ্ঘন করবে না এমন নিয়মগুলো যেভাবে স্থাপন করবেন”
“পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে আপনার সন্তানকে পাঁচটা মূল্যবোধ শেখানো উচিত”
“পাঁচটা মানসিক দক্ষতা প্রত্যেক সন্তানের থাকা উচিত”
“পাঁচটা লক্ষণ যে আপনি অতি দরদি”
“এক মিনিটের শাসনের জাদু”
সন্তানদের শাসন করা যদি এত সহজই হতো, তা হলে ওপরে তালিকাবদ্ধ পত্রিকার প্রবন্ধগুলোর প্রতি তেমন আগ্রহ থাকত না। এমনকি সন্তান লালনপালনের ওপর রাশি রাশি বই লেখার হিড়িকও কমে যেত। কিন্তু, সন্তানদের মানুষ করে তোলা কখনোই সহজ ছিল না। এমনকি হাজার হাজার বছর আগে, কথিত ছিল যে, “একজন নির্বোধ পুত্র তার পিতার জন্য দুঃখ বয়ে আনে। সে তার মায়ের তিক্ততার কারণ।”—হিতোপদেশ ১৭:২৫, বাংলা ইজি-টু-রিড-ভারসন।
আজকে, এই বিষয়ের ওপর প্রচুর পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও, অনেক বাবামা তাদের সন্তানদের কীভাবে শাসন করতে হবে সেই ব্যাপারে অনিশ্চিত। এই বিষয়ে বাইবেল কোন সাহায্য জোগায়?
শাসনের প্রকৃত অর্থ
শাসন সম্বন্ধে বাইবেল স্পষ্টভাবে বাবামার ভূমিকাকে সঠিকভাবে বর্ণনা করে। উদাহরণস্বরূপ, ইফিষীয় ৬:৪ পদ বলে: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” এই শাস্ত্রপদ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, বাবার উচিত তার সন্তানদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া। অবশ্য, মা তার স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন।
এই বিষয়ের ওপর দি ইন্টারপ্রিটারস্ ডিকশনারি অফ দ্যা বাইবেল বলে: “বাইবেলে শাসন শব্দটির সঙ্গে একদিকে প্রশিক্ষণ, নির্দেশনা ও জ্ঞান জড়িত আর অন্যদিকে ভর্ৎসনা, সংশোধন এবং শাস্তিও যুক্ত। এর স্বাভাবিক প্রয়োগ সন্তানদের প্রশিক্ষণের পরিধির মধ্যে রয়েছে।” অতএব, শাসন বলতে কঠোর তিরস্কারের চেয়েও আরও অনেক বেশি কিছুকে বোঝায়; এর অন্তর্ভুক্ত সেই সমস্ত প্রশিক্ষণ, যা উন্নতি করার জন্য সন্তানদের প্রয়োজন। কিন্তু, কীভাবে বাবামারা বিরক্তি জন্মানো এড়াতে পারে?
সহমর্মী হোন
কোন বিষয়টা একজন সন্তানকে ক্রুদ্ধ বা বিরক্ত করে? এই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন। আপনার একজন সহকর্মী রয়েছে, যিনি বদমেজাজি ও অধৈর্য প্রকৃতির। আপনার কোনোকিছুতেই তিনি খুশি হন না। আপনার সব কথা ও কাজে তিনি দোষ খুঁজে বেড়ান। তিনি প্রায়ই আপনার করা কাজকে বাতিল করে দেন আর এর ফলে আপনি নিজেকে একজন পরিত্যক্ত ব্যক্তি হিসেবে মনে করেন। এটা কি আপনাকে বিরক্ত ও নিরুৎসাহিত করবে না?
কোনো সন্তানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে, যখন তার বাবামা সবসময় তার খুঁত ধরতে থাকে বা রাগারাগি করে তার ভুল শুধরাতে থাকে। এটা ঠিক যে, সন্তানদের সময়ে সময়ে সংশোধনের প্রয়োজন আর বাইবেল বাবামাদের তা করার অধিকার দেয়। কিন্তু, কর্কশ, রূঢ় ব্যবহারের দ্বারা একজন সন্তানকে বিরক্ত করা আবেগগত, আধ্যাত্মিক ও এমনকি শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে পারে।
আপনার সন্তানরা আপনার মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য
বাবামাদের অবশ্যই তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সময় করে নিতে হবে। ঈশ্বরের নিয়মাবলি সম্বন্ধে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদ বাবাদের বলে: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” সন্তানরা এই চাহিদা নিয়ে জন্মেছে যে, তাদের বাবামা যেন আন্তরিকভাবে তাদের যত্ন নেয়। প্রতিদিন শান্তভাবে আপনার সন্তানদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা আপনাকে তাদের অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করবে। এটা করা বাইবেলভিত্তিক নীতিগুলো তাদের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়াকে সহজতর করবে, ‘ঈশ্বরকে ভয় করিতে, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করিতে’ তাদের অনুপ্রাণিত করবে। (উপদেশক ১২:১৩) এটা হল ঈশ্বরীয় শাসনের অংশ।
সন্তানদের মানুষ করে তোলাকে যদি একটা বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তা হলে শাসন হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রীগুলোর মধ্যে একটা। বাবামারা যখন সঠিকভাবে এটাকে ব্যবহার করে, তখন তারা তাদের সন্তানদের ব্যক্তিত্বে কাম্য গুণগুলো গড়ে তুলতে পারে এবং তাদেরকে জীবনের পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতে সজ্জিত করে। হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫ পদ ফলাফল সম্বন্ধে বর্ণনা করে: “ধার্ম্মিকের পিতা মহা-উল্লাসিত হন, জ্ঞানবানের জন্মদাতা তাহাতে আনন্দ করেন। তোমার পিতামাতা আহ্লাদিত হউন, তোমার জননী উল্লাসিতা হউন।”
[২১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
‘যিহোবার চেতনা প্রদান’
ইফিষীয় ৬:৪ পদ ‘যিহোবার চেতনা প্রদান’ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। ‘চেতনা প্রদান’ অভিব্যক্তিটির জন্য মূল গ্রিক শব্দকে কিছু বাইবেলে “মনোযোগিতা,” “পরামর্শ” এবং “উপদেশ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে। এই সমস্ত শব্দ ইঙ্গিত করে যে, পরিবারগুলোর শুধুমাত্র বাইবেল পড়া বা রুটিন মতো কোনো বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক থেকে বিষয়বস্তু পড়ে শেষ করার চেয়েও আরও বেশি কিছু করতে হবে। বাবামাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, তাদের সন্তানরা যেন ঈশ্বরের বাক্যের অর্থ, বাধ্যতার গুরুত্ব, তাদের প্রতি যিহোবার ভালবাসা এবং তিনি যে তাদের সুরক্ষা জোগান, তা তারা বুঝতে পারে।
এটা কীভাবে সম্পাদন করা যেতে পারে? তিন সন্তানের মা জুডি তার সন্তানদের শুধুমাত্র ঈশ্বরীয় নীতিগুলো সবসময় মনে করিয়ে দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। “আমি লক্ষ করেছিলাম যে, আমি যখন একই বিষয় বার বার একইভাবে তাদের বলতাম, তারা সেটা পছন্দ করত না। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি ভিন্ন উপায়গুলো খুঁজতে থাকি। একটা উপায় ছিল সচেতন থাক! পত্রিকায় সেই প্রবন্ধগুলো খোঁজা, যেগুলো সেই বিষয়গুলোকে আরও নতুনভাবে তুলে ধরে। এভাবে আমি শিখেছিলাম যে, কীভাবে বাচ্চাদেরকে বিরক্ত না করেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো মনে করিয়ে দেওয়া যায়।”
আনজিলো, যার পরিবার কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল, তিনি বলেন যে কীভাবে তিনি তার মেয়েদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ধ্যান করতে শিখিয়েছিলেন: “আমরা একসঙ্গে বাইবেলের পদগুলো পড়তাম ও এরপর আমি নির্দিষ্ট কয়েকটা বাক্যাংশ আলাদা করে সেগুলো কীভাবে আমার মেয়েদের নানা পরিস্থিতির প্রতি প্রযোজ্য, তা বুঝিয়ে দিতাম। পরে, যখন তারা নিজেরা বাইবেল পড়তে শুরু করে, তখন আমি লক্ষ করতাম যে, তারা সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে, তাদের জন্য প্রযোজ্য বিষয়গুলোর অর্থ নিয়ে ধ্যান করছে।”