একজন ঈশ্বর কি আছেন যিনি যত্ন নেন?
১, ২. (ক) আপনি কি প্রথম অনুচ্ছেদে প্রদত্ত প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করেছেন? (খ) কোন্ পরিস্থিতি লোকেদের এই ধরনের প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করতে পরিচালিত করেছে?
ঈশ্বর যদি আছেনই, তবে কেন তিনি যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে এত জঘন্য বিষয়সকল ঘটতে দিলেন? তিনি যদি আমাদের প্রকৃতই যত্ন নেন, তবে কেন তিনি দুষ্টতা এবং কষ্ট চলতে দিচ্ছেন?
২ চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সর্বত্রই এই প্রশ্নগুলি করে। আর এর উত্তম যুক্তি আছে, কারণ বহু শতাব্দী ধরে মানব পরিবার ভয়ানক যুদ্ধ, খাদ্যসমস্যা, দারিদ্র্য, অপরাধ এবং রোগে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। অন্যায় এবং নির্যাতনও বহু দুঃখ এনেছে। আবার আছে বন্যা এবং ভূমিকম্পের ন্যায় দুর্দশাগুলি। প্রায়ই নির্দোষেরা বিনাদোষেই কষ্ট পায়। এই সমস্তই কি প্রমাণ করে যে আমাদের প্রতি কী ঘটে তাতে ঈশ্বর চিন্তিত নন? এইসকল কষ্টবিমুক্ত পৃথিবীতে যেখানে জীবন প্রকৃতই পূর্ণরূপে উপভোগ করতে পারা যায় এমন একটি উত্তম জগতের জন্য কি সত্যই আশা আছে?
৩. এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পাওয়া যুক্তিযুক্ত কেন?
৩ এই প্রশ্নগুলি দাবি করে সত্য, সন্তুষ্টিপূর্ণ উত্তর। কিন্তু এটা বলা সত্য বা সন্তুষ্টিজনক হবে না যে “আমাদের কষ্ট পাওয়া ঈশ্বরেরই ইচ্ছা,” অথবা, “এসমস্ত বিষয় আমাদের বোধগম্য হয় না”। ঈশ্বর যদি এইরূপ আশ্চর্য শৃঙ্খলাপন্ন বিস্ময়কর বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তবে নিশ্চয়ই মনুষ্যজাতিকে এরূপ বিশৃঙ্খল হতে দেওয়ার জন্য তাঁর উত্তম কারণ আছে। আর এরূপ স্রষ্টা কি, কেন দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন তা আমাদের বলে তাঁর নিজস্ব মনুষ্য সৃষ্টির যথেষ্ট যত্ন নেবেন না? তাঁর শক্তি থাকলে তিনি কি নিরূপিত সময়ে এই মন্দ পরিস্থিতি সংশোধন করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করতেন না? যে কোন প্রেমময় পিতার সামর্থ্য থাকলে তিনি তা তার সন্তানদের জন্য করতেন। তবে একজন সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ প্রেমময় স্রষ্টা তাঁর পার্থিব সন্তানদের জন্য অবশ্যই কোন অংশে অক্ষম হবেন না।
কে সবচাইতে উত্তমরূপে উত্তর দিতে সক্ষম?
৪. ঈশ্বর কেন দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন তা আমাদের উত্তমরূপে বলতে সমর্থ কে?
৪ ঈশ্বরের দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নাদির কে সবচাইতে উত্তমরূপে উত্তর দিতে সক্ষম? ভাল, আপনাকে যদি কোন দোষে দোষী করা হয় তবে কি আপনি চাইবেন যে অন্যেরা এ সম্বন্ধে কী বলেছিল লোকেরা কেবল তাই শুনুক? অথবা যারা সরলভাবে জানতে চায় আপনি কি তাদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করে জানাতে নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতে চাইবেন? দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে দোষী করা হয়। যেহেতু তিনি সবচাইতে উত্তমরূপে জানেন কেন তা থাকতে দিয়েছেন তবে তাঁকেই কি নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতে দিলে ভাল হবে না? মানুষের কাছে উত্তর চাইলে তা কখনও মনঃপূত হবে না; কারণ এইসব বিষয়ে প্রায়ই তাদের মতবিরোধ দেখা যায়।
৫. বাইবেলের স্রষ্টা যে ঈশ্বর তা বিশ্বাস করা কি যুক্তিসঙ্গত? (২ পিতর ১:২১; হবক্কূক ২:২)
৫ ঈশ্বর কোথায় উত্তর দিয়েছেন? কেবলমাত্র একটি উৎস আছে যাতে স্রষ্টা কী ঘটেছিল এবং কেন ঘটেছিল তা আমাদের বলেছেন বলে দাবি করেন। সেই উৎসটি হল বাইবেল, যা বলে “প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি ঈশ্বর-নিশ্বসিত।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) এটি মোটেই আশ্চর্যের নয়, কারণ ঈশ্বরের যদি বিস্ময়কর বিশ্বের সৃষ্টি করার শক্তি থাকে তবে তিনি নিশ্চয়ই একটা পুস্তকের স্রষ্টাও হতে পারেন। সামান্য মনুষ্যেরা অদৃশ্য বায়ুতরঙ্গের উপর দিয়ে গলার স্বর, কথাবার্তা, এমন কি ছবি, আপনার রেডিও অথবা টেলিভিশনে পাঠাতে পারে। কাজেই সর্বশক্তিমান স্রষ্টার পক্ষে তাঁর চিন্তাগুলি তাঁর বিশ্বস্ত লেখকদের কাছে পাঠানো এবং সেগুলি সঠিকরূপে লেখা হয়েছে কি না তা দেখা মোটেই বড় কাজ হবে না। তাই প্রেরিত পৌল দৃঢ়রূপে বলতে পেরেছিলেন: “আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয় কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে।”—১ থিষলনীকীয় ২:১৩.
৬. বাইবেলের ইতিহাস কতদূর পশ্চাতে যায়, তাই ইহা আমাদের কী সংবাদ দিতে পারে? (লূক ১:১-৪; লূক ৩:২৩-৩৮ পদও লক্ষ্য করুন.)
৬ সম্ভবত আপনি কখনও বাইবেল পরীক্ষা করেননি। তথাপি আপনি হয়ত জানতে আগ্রহী হবেন যে এতে আছে আজ পর্যন্ত অস্তিত্বশীল এক অতি সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক বিবরণ। বস্তুত, প্রথম শতাব্দীর একজন ঐতিহাসিক, চিকিৎসক লূক, নাসরতীয় যীশুর পূর্বপুরুষদের বংশ বিবরণীর চার সহস্র বৎসরের ইতিহাস নামানুসারে, ধাপে ধাপে প্রথম মানব পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। যেহেতু বাইবেলে মানব অস্তিত্বের আরম্ভ সম্বন্ধে জানা যায়, তা আমাদের বলতে পারে যে দুষ্টতার জন্য দায়ী কে, ঈশ্বর তা থাকতে দিয়েছেন কেন এবং কিরূপে এর সমাধান হবে।
ঈশ্বর কি এতে দোষী?
৭. অন্যায় করা হলে, কাকে দোষ দেওয়া উচিৎ?
৭ অন্যের অপরাধে আপনাকে দোষী করলে আপনি কেমন অনুভব করেন? আপনি তা খুব অন্যায় বলে মনে করবেন। ন্যায়ের দাবি অনুযায়ী দোষীর শাস্তি এবং নির্দোষেরা দোষমুক্ত হওয়া উচিত। একজন মোটরগাড়ির চালক যদি একটি ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে থামাবার সংকেত চিহ্ন উপেক্ষা করে একটি খারাপ দুর্ঘটনায় পড়ে তবে তা আইনের দোষ নয়। একজন ব্যক্তি যদি পেটুকের মত অতিরিক্ত খেয়ে পীড়িত হয়, তবে তা খাদ্য উৎপাদনকারী কৃষকের দোষ নয়! উত্তমরূপে লালিত পালিত হয়ে বড় হওয়া সত্ত্বেও যদি একজন যুবক গৃহ পরিত্যাগ করে, তার পিতার উত্তম উপদেশ উপেক্ষা করে বিপদে পড়ে, তবে পিতাকে দোষী করা যায় না। তাহলে মানবজাতি অন্যায় করলে স্বর্গীয় পিতা ঈশ্বর কেন দোষী হবেন? দোষটা কি প্রকৃত দোষীকেই দেওয়া উচিৎ নয়?
৮. মন্দ বিষয়ের জন্য ঈশ্বরকে দোষী করলে পরস্পর বিরোধী কী দেখা দেয়?
৮ তাছাড়াও, আরও অন্য কিছু বিবেচনা করার আছে। আমরা যদি খাদ্যাভাব হেতু ক্ষুধায় মৃত্যুর জন্য ঈশ্বরকে দোষী করি তবে আমরা বহু দেশের প্রচুর ফলে ফুলে ভরা উর্বরা ক্ষেত এবং ফলবাগানের জন্য কাকে প্রশংসা করব? আমরা যদি অসুস্থতার জন্য ঈশ্বরকে দোষী করি তবে শরীরের অপূর্ব আরোগ্য প্রণালীর জন্য কাকে বাহবা দেব? শহরের নোংরা পরিবেশের জন্য যদি আমরা ঈশ্বরকে দোষী করি তবে উন্নত পর্বতমালা, স্বচ্ছ হ্রদ, মনোরম ফুল এবং সুন্দর বৃক্ষাদির জন্য কাকে আমরা গৌরব দেব? স্পষ্টতই, আমরা যদি জগতের দুর্দশার জন্য ঈশ্বরকে দোষী করি এবং তারপরে পৃথিবীর উত্তম জিনিসগুলির জন্য তাঁকে প্রশংসা করি তবে তা পরস্পরবিরোধী কাজ হবে। একজন প্রেমময় ঈশ্বর একই সময়ে ভাল এবং মন্দ উভয়ের বিকাশ করেন না।
৯. মানুষেরা মন্দ আচরণ করে বলে ঈশ্বর নেই বলা কি যুক্তিযুক্ত? (যিশাইয় ৪৫:১৮)
৯ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করায় সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায়। এই পৃথিবী এবং এর অপরূপ প্রাণীবর্গ আপনা আপনিই হয়েছে বিশ্বাস করার অর্থ ঘটনাবলী উপেক্ষা করা। বিষয়টি হল এই যে কোন গৃহ অপেক্ষা পৃথিবী জীবনধারণের জন্য আরও উত্তমরূপে সজ্জিত, তথাপি প্রত্যেক গৃহের একজন বুদ্ধিসম্পন্ন পরিকল্পনাকারী এবং নির্মাতা আছে। তাহলে, এই গ্রহ সম্বন্ধেই বা কী বলা যেতে পারে যাতে আছে আরও চমকপ্রদ জীবন-রক্ষাকারী ভূমি, বায়ু এবং জলের ব্যবস্থা? বাইবেল যুক্তিসম্মতরূপে বলে: “প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:৪) সত্য, মানুষের মন্দ আচরণের জন্য কেউ কেউ এই সিদ্ধান্ত নেয় যে ঈশ্বর নেই। যাইহোক, এটি এই কথা বলার মত যে, যেহেতু গৃহের বাসিন্দারা মন্দ কাজ করে, তাই সেই গৃহটির কোন পরিকল্পনাকারী বা নির্মাতা নেই। এটি এও বলার মত যে, যেহেতু একজন ব্যক্তি কিছু অন্যায় করেন তাই তার কখনও কোন পিতা ছিল না।
১০. দুষ্টতার জন্য কাকে আমরা বেশি দোষী করব?
১০ তাহলে, মানব পরিবারের প্রতি সংঘটিত এসকল জঘন্য বিষয়ের জন্য কে দোষী? বেশির ভাগ দোষের জন্য লোকেরা নিজেরাই দায়ী। মানব অসাধুতা এবং হতাশার ফল হয় অপরাধ। মানব অহংকার এবং স্বার্থপরতা আনে বিবাহে ভাঙ্গন, ঘৃণা এবং জাতিগত বিদ্বেষ। মানব ত্রুটি এবং উদাসীনতা ঘটায় দূষণ এবং নোংরামি। মানুষের একগুঁয়েমি এবং বোকামির পরিণাম যুদ্ধ এবং সমগ্র জাতিগুলি যখন ঐ সকল যুদ্ধে অন্ধের ন্যায় রাজনৈতিক নেতৃবর্গকে অনুসরণ করে, তখন তাদের অবশ্যই কষ্টের জন্য দোষের ভাগী হতে হবে। ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য প্রধানত মানবীয় অবহেলা এবং লোভের জন্যই ঘটে। বিবেচনা করুন: জগৎ এখন যুদ্ধাস্ত্রের জন্য প্রতি বৎসর ২০০ বিলিয়ন ডলার (২০ হাজার কোটি টাকা) খরচ করে। এই সমস্তই যদি খাদ্য উৎপাদনে এবং সমবন্টনে ও গৃহের অভাব দূরীকরণে উপযুক্তরূপে ব্যয় হত, চিন্তা করুন কত কিছু না করা যেত!
১১. পুরোহিতেরা যেহেতু তাদের জাতিদের সৈন্যদের জন্য প্রার্থনা করে, ঈশ্বর কি ঐ সকল সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য দায়ী? (যিশাইয় ১:১৫; হিতোপদেশ ২৮:৯)
১১ ধর্মের নামে কৃত অন্যায়ের জন্যও ঈশ্বর দোষী নন। উদাহরণস্বরূপ, পুরোহিতেরা তাদের জাতির যুদ্ধতে ঈশ্বরের আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করে। তথাপি প্রায়ই দেখা যায় যে, উভয় পক্ষে পরস্পর নিধনে লিপ্ত সৈনিকেরা হয় একই ধর্মাবলম্বী। এইজন্য ঈশ্বরকে দোষী করা যায় না, কারণ যারা তাঁকে প্রকৃতই সেবা করে ‘তাদের পরস্পরের মধ্যে অবশ্যই প্রেম থাকবে’ এই বলে তিনি তাদের কাজকে দোষারোপ করেন। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) তাদের এই প্রেম না থাকলে তারা ঈশ্বরের বাক্যানুসারে ‘কয়িনের ন্যায় হয় যে সেই পাপাত্মার লোক এবং আপন ভ্রাতাকে বধ করিয়াছিল।’ (১ যোহন ৩:১০-১২) ধর্মীয় বিচারেই হোক অথবা যুদ্ধের সময়েই হোক ঈশ্বরের নামে লোকেদের হত্যা, মিথ্যা দেবতাদের কাছে সন্তান বলিদানের প্রাচীন অভ্যাসেরই সমরূপ, যে বিষয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর বলেন, ‘ইহা আমি আজ্ঞা করি নাই, আমার মনেও ইহা উদয় হয় নাই।’—যিরমিয় ৭:৩১.
১২. বাইবেলে ধর্মীয় পুরোহিতদের “ভণ্ড”—বলা হয় কেন? (মথি ১৫:৭-৯)
১২ পাদ্রীদের রাজনীতিচর্চা, যুদ্ধ সমর্থন, জগতের দুর্দশার জন্য ঈশ্বর দায়ী অথবা তিনি লোকেদের আক্ষরিক নরকাগিনতে চিরকাল দগ্ধ করেন এই ধরনের মিথ্যা শিক্ষা ঈশ্বর এবং যুক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিকট বিরক্তিকর। ঈশ্বর-বিরোধী বিষয়সকল অভ্যাস এবং শিক্ষাদানে রত ধর্মীয় নেতাদের ঈশ্বরের বাক্য “কপটী” বলে থাকে, তাদের এও বলে যে: “তোমরা চূণকাম করা কবরের তুল্য; বাহিরে দেখিতে সুন্দর বটে; কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের অস্থি ও সর্ব্বপ্রকার অশুচিতা ভরা। তদ্রূপ তোমরাও বাহিরে লোকদের কাছে ধার্ম্মিক বলিয়া দেখাইয়া থাক কিন্তু ভিতরে তোমরা কাপট্য ও অধর্ম্মে পরিপূর্ণ।” (মথি ২৩:২৭, ২৮) বস্তুত, যীশু কপটী ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের।”—যোহন ৮:৪৪.
১৩. (ক) কাজেই মনুষ্য, এমন কি ধর্মীয় নেতারা অন্যায় করলে ঈশ্বর কি দোষী? (খ) তবুও কী প্রশ্নগুলি ওঠে?
১৩ না, মনুষ্যের নিজের ভুলের জন্য ঈশ্বর দোষী নন। আর ঈশ্বরকে সেবা করে বলে দাবি করে কিন্তু যারা সত্য বলে না অথবা অভ্যাস করে না এইরূপ পাদ্রীদের দ্বারা অন্যায়কে আশীর্বাদ করার জন্য তিনি দোষী নন। তাহলে কি, মনুষ্যজাতির নির্মাণ প্রণালীতে কিছু ভুল ছিল? তিনি কি মানবজাতিকে একটি খারাপ আরম্ভ দিয়েছিলেন?
একটি সিদ্ধ আরম্ভ
১৪. ঈশ্বর আমাদের প্রথম পিতামাতাকে কিভাবে শুরু করেছিলেন তা বর্ণনা করুন। (আদিপুস্তক ১:২৬-৩১; ২:৭-৯, ১৫)
১৪ আদিপুস্তকের প্রথম দুইটি অধ্যায় পড়লে এটা খুব স্পষ্ট হয় যে ঈশ্বর প্রথম মানব মানবীকে শুরুতে সিদ্ধ করে সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি তাদের সৃষ্টি করেছিলেন সিদ্ধ শরীর ও মন দিয়ে, যাতে রোগ এবং মৃত্যু কখনও তাদের জর্জ্জরিত করতে না পারে। তাদের গৃহ ছিল মনোরম ফুল, শস্যাদি এবং ফলবতী বৃক্ষে ভরপুর একটি বাগানের ন্যায় সুন্দর। তাদের ছিল না কোন অভাব। বরঞ্চ ছিল প্রাচুর্য। আরও ঈশ্বর আমাদের প্রথম পিতামাতার সামনে রেখেছিলেন আগ্রহপূর্ণ কাজ এবং উদ্দীপক লক্ষ্যসকল। আর ঐ পরমদেশের উদ্যানতুল্য অবস্থা সমগ্র পৃথিবীতে প্রসারিত করতে তিনি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সময়ে এই ব্যাপারে তারা তাদেরই অনেক সিদ্ধ সন্তানদের দ্বারা সাহায্য পাবে। এইরূপে, পরিশেষে, পার্থিব পরমদেশে বসবাসকারী, অনন্ত জীবন উপভোগকারী এবং এমন কি জন্তুদেরও প্রেমপূর্ণ বশ্যতায় আনয়নকারী মানব পরিবার হবে একটি সিদ্ধ মনুষ্যজাতি।
১৫. মানবীয় সিদ্ধতা বলতে কী বুঝায় এবং কী বুঝায় না?
১৫ কিন্তু বিষয়সকলের এমন দুর্দশাপূর্ণ পরিণতি হল কেন? এটি কি এই কারণে যে ঈশ্বর প্রকৃতই মনুষ্যজাতিকে সিদ্ধ করে সৃষ্টি করেননি? না, ব্যাপারটা তা নয়, কারণ দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪ ঈশ্বর সম্বন্ধে বলে “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ”। যাইহোক, মানবীয় সিদ্ধতার অর্থ এই নয় যে প্রথম মনুষ্যদম্পতি সবই জানত, সবই করতে পারত অথবা কোন ভুলই করতে পারত না। এমন কি সিদ্ধ প্রাণীরাও সীমিত। উদাহরণস্বরূপ তারা শারীরিক দিক দিয়ে ছিল সীমিত ক্ষমতাযুক্ত। তারা যদি খাদ্য, পানীয় জল এবং বাতাস না গ্রহণ করত তবে মারা যেত। তারা মাধ্যাকর্ষণের আইন লঙ্ঘন করে উচ্চস্থান হতে ঝাঁপ দিলে আঘাত পাবে না এই আশা করতে পারত না। আরও, মানসিক দিক দিয়েও তারা ছিল সীমিত। স্পষ্টতই অনভিজ্ঞ আদম ও হবার অনেক শিখবার ছিল। কিন্তু যতই শিখুক না কেন তারা কখনও তাদের স্রষ্টার সমকক্ষ হতে পারত না। সুতরাং যদিও সিদ্ধ, মনুষ্য হিসাবে তারা ছিল সীমিত। সিদ্ধ বলতে বুঝায় তারা শারীরিক এবং মানসিক গঠনে ছিল ত্রুটিহীন।
১৬. কোন্ সীমানার মধ্যে মনুষ্য স্বাধীনতা সর্বোত্তমরূপে কার্যকরী হতে পরিকল্পিত হয়েছিল? (১ পিতর ২:১৬)
১৬ আরও, ঈশ্বর মনুষ্যদের স্বাধীন নীতিবান ব্যক্তিরূপে সৃষ্টি করেছিলেন, জন্তুদের মত সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হতে নয়। আর আপনি নিশ্চয়ই এরূপ স্বাধীনতা উপলব্ধি করেন। আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কী করা উচিৎ সে বিষয়ে অন্যের দ্বারা নির্দেশিত হতে চান না। যাইহোক ঐ স্বাধীনতা অবাধ সীমাহীন ছিল না, কিন্তু ছিল, আপেক্ষিক। তা ঈশ্বরের আইনের সীমানার মধ্যেই কার্যকারী করতে হবে। ঐ সুন্দর আইনগুলি হবে স্বল্প এবং সরল যা সমগ্র মানব পরিবারের সর্বোত্তম সুখের কথা স্মরণে রেখেই পরিকল্পিত হয়েছিল। মনুষ্যের জন্য ঈশ্বরের প্রেমের নিদর্শন হল তাঁর আইনগুলি মান্য করতে চাওয়া, যেহেতু তিনি জানতেন যে ঐগুলির প্রতি সম্মান আনবে তাদের জন্য চিরন্তন উপকার। ঈশ্বর এবং তাঁর আইনগুলির অসম্মান তাদের সুখে বাদ ঘটাবে। তা কোনই ভাল করবে না। বস্তুত তা আনবে নিশ্চিত দুর্দশা, কারণ ঈশ্বর আদম এবং হবাকে সাবধান করেছিলেন যে তারা যদি তাঁকে পরিত্যাগ করে তবে “অবশ্যই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৭) কাজেই বেঁচে থাকতে তাদের শুধু খাদ্য, পানীয় এবং বাতাসেরই প্রয়োজন ছিল না কিন্তু ঈশ্বর এবং তাঁর আইনগুলির দ্বারাও পরিচালিত হওয়া দরকার ছিল।
১৭. মনুষ্যজাতির ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি কী? (গীতসংহিতা ১৪৬:৩; যিরমিয় ১৭:৫-৯)
১৭ আমাদের প্রথম পিতামাতার ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করার প্রয়োজন কেন ছিল সেই সম্বন্ধে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি আছে। ঐ যুক্তিটি হল এই যে মনুষ্যজাতি ঈশ্বর বিনা কৃতকার্যতার সঙ্গে নিজেদের বিষয় পরিচালিত করতে সৃষ্টি হয়নি। ঈশ্বর তাদের তা করতে অধিকার অথবা ক্ষমতা দেননি। যেমন বাইবেল বলে: “মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) সেইজন্য বাইবেল ঘোষণা করে: “যে নিজ হৃদয়কে বিশ্বাস করে, সে হীনবুদ্ধি।”—হিতোপদেশ ২৮:২৬.
দুষ্টতা কিরূপে শুরু হয়?
১৮. প্রথম পিতামাতার কি ভুল হয়েছিল? (যাকোব ১:১৪, ১৫, গীতসংহিতা ৩৬:৯)
১৮ এইরকম সুন্দর আরম্ভ হয়েও কী ভুল হল? এই: আমাদের প্রথম পিতামাতা, আদম এবং হবা তাদের স্বাধীন মনোনয়ন ভুলভাবে ব্যবহার করেছিল। তারা ঈশ্বরের শাসনের বশীভূত না হয়ে নিজস্ব পথ বেছে নিল। বস্তুত, স্ত্রী মনে করল “ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ৩:৫) তারা নিজেদের চিন্তার উপরেই নির্ভর করে নিজেদের জন্য কোনটা ভাল এবং কোনটা মন্দ তা স্থির করতে চেয়েছিল। ঐ চিন্তার ফলে যে বিশাল ক্ষতি হবে তা তারা পূর্ব হতে জানতে পারেনি। কিন্তু তাই হল, যেহেতু ‘ঈশ্বর মিথ্যা বলেন না।’ (তীত ১:২) ঈশ্বরের শাসন হতে সরে যাওয়ার ফলে যা হল তা বড় অর্থে কোন ইলেকট্রিক পাখার প্লাগ খুলে নিলে যা হয় তদ্রূপ। শক্তির উৎস হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে, পাখাটি পরিশেষে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সেইরূপে জীবনের উৎস, যিহোবা ঈশ্বর হতে সরে এসে প্রথম মানবদম্পতি, ঈশ্বরের সাবধান বাক্যানুযায়ী পরিশেষে ক্ষয় পেতে থাকল এবং মারা গেল।
১৯. কেন সমগ্র মানবজাতি অসিদ্ধ হয়ে জন্মায়? (রোমীয় ৫:১২)
১৯ যেহেতু আমাদের প্রথম পিতামাতা তাদের সন্তান হবার পূর্বেই ঈশ্বরের বিদ্রোহী হয়, অসিদ্ধতা তাদের প্রথম সন্তান জন্মাবার পূর্বেই শুরু হয়। আদম এবং হবা একটি ত্রুটিপূর্ণ নমুনার ন্যায় হল। তাদের থেকে উৎপন্ন সমস্ত কিছুও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তারা এখন তাদের যা আছে কেবল তাই সন্তানদের দিতে পারত— অসিদ্ধ শরীর এবং মন। সিদ্ধতা এবং জীবনের উৎস যিহোবা ঈশ্বর থেকে সরে আসায় তারা আর সিদ্ধ ছিল না। তাই বাইবেলের রোমীয় ৫:১২ পদানুসারে, তখন হতে জন্মপ্রাপ্ত প্রত্যেকেরই জন্ম অসিদ্ধতায় এবং তারা রোগ, বার্দ্ধক্য ও মৃত্যু প্রবণ। কিন্তু এ বিষয়ে ঈশ্বর দোষী নন। দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫ (NW) পদে বলে: “তারা নিজেরাই ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে; তারা তাঁর সন্তান নয়, ত্রুটি তাদের নিজেদের।” আর উপদেশক ৭:২৯ বলে: “ঈশ্বর মনুষ্যকে সরল করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা অনেক কল্পনার অন্বেষণ করিয়া লইয়াছে।”
২০. কয়েকজন লোকের ভুলের জন্য কিরূপে অনেকের ক্ষতি সাধন হয়?
২০ কিন্তু এটি কি যুক্তিযুক্ত যে কেবলমাত্র দুজন ব্যক্তির অবাধ্যতায় প্রত্যেকের জন্য ঘটবে এই দুঃখজনক পরিণতি? উত্তম, আমরা জানি যে একটি বাড়ি নির্মাণে একটি ছোট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় কেবলমাত্র একজন ব্যক্তির অসতর্কতাই বহু লোকের জীবন নাশ করতে পারে। একটি বাঁধেও সমরূপ ব্যবস্থার যত্ন নিতে অকৃতকার্যতা বাঁধটির ভাঙ্গন ঘটিয়ে জলের তোড় প্রভূত ধ্বংস সাধন করতে পারে। একজন শাসকের একটি দুর্নীতিমূলক কাজ সরকারে পর পর আরও অন্যায়ের পথ করে উন্মুক্ত, যার ফলে কোটি কোটি লোকের জন্য হয় ভয়ানক ক্ষতি। একটি পরিবারে একজন পিতা ও মাতা ভুল পথ নিলে তাদের সন্তানেরা অতি সাংঘাতিকরূপে ভোগে। আমাদের প্রথম পিতামাতা ভুল পথ বেছে নিলেন। ফলে সমগ্র মানব পরিবার অসিদ্ধতা এবং দুর্দশায় নিমজ্জিত হল।
২১. ঈশ্বর কেন মৃত্যুদণ্ড বলবৎ রাখলেন, তথাপি কিরূপে তাঁর দয়া প্রদর্শিত হল?
২১ এখানে ঈশ্বরের আইন এবং তাঁর সাধুতা জড়িত হওয়ায় তিনি ঐ আইন বলবৎ না করে ঐ অমান্যতাকে মেনে নিতে পারতেন না। তিনি কিছু না করলে তাঁর জন্য এবং তাঁর আইনের জন্য লোকেদের কি সম্মান থাকবে? আমরা কি আজ ঐ শাসকদের সম্মান করি যারা তাদের নিজেদের আইন মানে না অথবা যারা বিনা শাস্তিতে কোন কোন লোকেদের ঐ সকল স্বেচ্ছায় অমান্য করতে দেয়? সুতরাং ঈশ্বর, অবাধ্যতার জন্য নির্দেশিত শাস্তি মৃত্যুকে কার্যকরী করলেন। কিন্তু তিনি দয়ার সাথে প্রথম দম্পতিকে সন্তানাদি করতে দিলেন যা আমাদের উপলব্ধি করা উচিৎ, নতুবা আমরা কখনও জন্মাতাম না। আর যদিও আদম ও হবার অকৃতকার্যতার জন্য আমরা অসিদ্ধ তবুও কি আমরা মরার চেয়ে বেঁচে থাকতে চাই না?
২২. দুষ্টতার জন্য আর কে আরও বেশিরূপে দায়ী? (মথি ৪:১-১১, ইফিষীয় ৬:১২)
২২ এর অর্থ কি এই যে মনুষ্যেই দুষ্টতার উৎপত্তিস্থল? না, এতে আরও কিছু আছে। ঈশ্বরের উৎপন্ন বুদ্ধিমান প্রাণীবর্গ কেবল মনুষ্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ইতিমধ্যে স্বর্গে অন্যান্য অসংখ্য বুদ্ধিমান স্বর্গীয় পুত্রদের সৃষ্টি করেছিলেন, আত্মিক প্রাণীবর্গ। তারা যদিও স্বাধীন নীতিসম্পন্ন তবুও তাদেরও জীবিত থাকতে ঈশ্বরের উত্তম এবং যুক্তিপূর্ণ আইনগুলির বশীভূত থাকতে হবে। যাইহোক, এসকল আত্মিক প্রাণীদের একজন, ভ্রান্ত ধারণা চিন্তা করতে লাগল। আর ভ্রান্ত চিন্তা একজনকে এতদূর নিয়ে যেতে পারে যখন সে ঐ ভ্রান্ত চিন্তাটি কার্যত করেই ফেলে। এই আত্মিক প্রাণীটির বেলাতেও তাই। তার উত্তুঙ্গ উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে ঈশ্বরের কার্যসকলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পরিচালিত করল। সে আদমের স্ত্রী হবাকে বলল যে ঈশ্বরের অবাধ্য হলেও, “কোন ক্রমে মরিবে না।” (আদিপুস্তক ৩:৪) সে প্রশ্ন তুলেছিল তাদের চিরন্তন সুখ এবং জীবনের জন্য স্রষ্টার উপরে নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে। বস্তুত সে বলেছিল যে অবাধ্যতার ফলে প্রকৃতপক্ষে তাদের অবস্থার উন্নতিই হবে, তারা ঈশ্বরতুল্য হবে। এইরূপে সে ঈশ্বরের সত্যবাদিতার উপরে প্রশ্ন তুলেছিল। আর ঈশ্বরের আইনগুলিকে প্রশ্ন করে সে ঈশ্বরের শাসনপ্রণালীর উপরে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে—সত্যই, ঈশ্বরের শাসনের অধিকারর উপর। এই কারণেই তাকে শয়তান এবং দিয়াবল বলা হয় যার অর্থ প্রতিরোধী ও অপবাদক।
কেন এটি এতদিন থাকতে দেওয়া হয়েছে?
২৩, ২৪. বিচার্য বিষয়গুলির সমাধানে সময় লাগবে কেন?
২৩ যেহেতু ঈশ্বর এত শক্তিশালী, তিনি প্রারম্ভেই এসকল মনুষ্য এবং আত্মিক বিদ্রোহীদের সহজেই দূরীভূত করতে পারতেন। কিন্তু তাতে বিষয় সকলের সন্তুষ্টিজনক নিষ্পত্তি হত না। কেন নয়? কারণ ঈশ্বরের শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়নি। উত্থিত বিচার্য বিষয়গুলি ছিল নৈতিক। এবং ঐগুলির মধ্যে একটি মূল্যবান বিষয় ছিল এই: বিদ্রোহের পথ কি কৃতকার্য প্রমাণিত হবে? ঈশ্বরকে উপেক্ষিত শাসনব্যবস্থা কি সমগ্র মানব পরিবারের জন্য স্থায়ী উপকার সকল আনতে পারবে? লোকদের জন্য ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা অথবা মনুষ্যের শাসনব্যবস্থা কোন্টি উত্তম হবে? ঈশ্বর তাঁর প্রজ্ঞায় জানতেন যে এটি এবং অন্যান্য উত্থিত প্রধান প্রধান বিচার্য বিষয়গুলির সমাধান সময় সাপেক্ষ। কাজেই তিনি একটি সুনির্দিষ্ট সময় দিলেন যা মনুষ্যদের তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, শিল্পতান্ত্রিক এবং বৈজ্ঞানিক কর্মসকলের চূড়ান্তে পৌঁছাবার প্রচুর সুযোগ দেবে।
২৪ ঐ সময় কেবলমাত্র কয়েকদিন অথবা কয়েক বৎসরের হতে পারত না। কোনপ্রকার সন্দেহ বিনা প্রশ্নটির সদুত্তর পেতে অনেক কাল পার হয়ে যাবে। এমন কি দুইজন লোক জড়িত হলেও বিচারালয়ের মোকদ্দমা মেটাতে কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাসও লাগতে পারে ঈশ্বরের শাসন সম্বন্ধীয় মহান বিচার্য বিষয়গুলি অর্দ্ধেক নয় সম্পূর্ণ উত্তর দাবি করে। এইরূপ এই বিচার্য বিষয়গুলির সমাধান হওয়ার ঐগুলি আর কখনও ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি করতে হবে না। একজন প্রেমময় পিতা চান বিষয়টির সম্পূর্ণ সমাধান। আর আমরা এতে আনন্দিত কারণ একমাত্র এই ধরনের সমাধানই স্বর্গে এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের সার্বভৌম পরিবারে আনবে চিরন্তর শান্তির পথ।
২৫. বস্তুতান্ত্রিক উন্নতি সত্ত্বেও ঈশ্বর হতে স্বাধীনতা কি মানুষের জন্য প্রকৃত শান্তি এবং সুখ এনেছে?
২৫ ঐ বিচার্য বিষয়গুলি প্রথম উত্থিত হওয়া থেকে ৬০০০ বৎসর উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ঈশ্বরের শাসন হতে স্বাধীনতা কী ফল এনেছে? সর্বপ্রকারের সরকার, জাতীয়ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলিও চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কিছুই প্রকৃত শান্তি, নিরাপত্তা, চিরস্থায়ী সুখ এবং স্বাস্থ্য আনতে পারেনি। একজন কি বস্তুবাদী উন্নতি সম্বন্ধে গর্ব করতে পারে যখন কেবলমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই পঞ্চাশ কোটিরও উপরে জীবন নাশ হয়? চাঁদে মনুষ্য প্রেরণ কি উন্নতির লক্ষণ যখন পরমাণু যুদ্ধে সজ্জিত ঐ একই রকেটগুলি মানবজাতিকে ধংস করতে পারে, আর যখন পৃথিবীতে শত শত কোটি কোটি লোকেরা ক্ষুধা এবং দারিদ্রে নিপীড়িত তখন ঐ একই সময়ে মনুষ্যের চাঁদে হেঁটে বেড়ায়? বহু রকমের সুবিধাজনক গৃহ থেকে কী লাভ যখন পরিবারগুলি বাগবিতণ্ডা দ্বারা ছিন্নভিন্ন, বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা ক্রমবর্দ্ধমান, প্রতিবেশীদের মধ্যে অপরাধ ভয় বিস্তৃত; যখন দূষণ এবং ঘনবসতি বৃদ্ধি, প্রতি বৎসরই সংঘটিত দাঙ্গাহাঙ্গামা, রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ যুদ্ধ এবং সরকারের পতন মানুষের গৃহ এবং জীবনযাত্রাকে করে ভয়াবহ?
২৬. ঈশ্বর হতে মানুষের স্বাধীনতা সম্বন্ধে প্রদত্ত সময় কী প্রকাশ করেছে? (গীতসংহিতা ১২৭:১)
২৬ রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল কার্ট ওয়ালডেহিমের স্বীকারোক্তিরই ন্যায় সত্য কথা হল: “বস্তুবাদী উন্নতি সত্ত্বেও, মানবজীবন আজকের মত কখনও এরূপ অনিশ্চয়তা সম্মুখীন হয়নি।”a এনভায়রনমেন্টাল এথিকস্ পুস্তকটিও বলে: “মানুষ সৃষ্ট হয়েছিল বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ এবং জল পান করতে ও তার পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির অভজ্ঞতায় আনন্দিত হতে, এখন সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিবর্তিত করে তার সাথে আর খাপ খাওয়াতে পারছে না। সে নিজেই নিজের ধ্বংস বৃহদাকারে প্রস্তুত করছে।”b প্রকৃতই দীর্ঘদিনের দুষ্টতার অনুমতি সমস্ত যুক্তিপূর্ণ ব্যাক্তিদের নিকট নিদর্শনস্বরূপ যে মানুষ ঈশ্বরের পরিচালনা বিনা তাদের কার্যসকলের কৃতকার্যপূর্ণ নির্দেশনা দিতে অপারগ। আর ছয় সহস্র বৎসরের মানবীয় অপদার্থতাই সাক্ষ্য দেয় যে মানুষকে চেষ্টা করতে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি এই অভিযোগ কেউ কখনও নায্যত ঈশ্বরের প্রতি আনতে পারবে না। প্রদত্ত সময় স্পষ্টরূপে প্রমাণ করেছে যে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক।
দুষ্টতার শীঘ্রই অবসান হবে
২৭. কত ব্যাপক একটি পরিবর্তনের বিষয়ে ঈশ্বর স্থির করেছেন? (হিতপদেশ ২:২১, ২২; রোমীয় ১৬:২০)
২৭ মনুষ্য পরিবারের উন্নতির জন্য একটা পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন। বাস্তবিক, আমাদের এক সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতির প্রয়োজন। যেমন সমাজবিজ্ঞানী এরিক ফ্রম স্বীকার করেছিলেন, সমাজের মন্দতা কেবলমাত্র সংশোধন করা যেতে পারে “যদি নাকি ৬০০০ বৎসরের অস্তিত্বশীল এই সমগ্র পরিস্থিতির বুনিয়াদকে এক ভিন্ন পরিস্থিতির দ্বারা পরিবর্তিত করা যায়।”c এটাই ঈশ্বরের মনে আছে। ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত সময়ে এই বর্তমান সমগ্র দুষ্ট পরিস্থিতিকে ও যারা একে চায় তাদের নির্মূল করতে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। “তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।”—গীতসংহিতা ১৪৫:২০.
২৮. আমরা যে সময়ে বাস করছি তাকে বাইবেল কী বলে এবং কেন? (২ তীমথিয় ৩:১-৫, ১২, ১৩; মথি ২৪:৩-১৪)
২৮ কখন এটি ঘটবে? শীঘ্রই, কারণ ঈশ্বরের বাক্য দেখায় যে ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতে মানব পরিবারকে য নজিরহীন কষ্টগুলি আঘাত আনছে তা বাইবেলে কথিত ‘শেষ কালকে” শনাক্ত করতে একটি চিহ্ন তৈয়ারি করে। বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী আছে যে এই “শেষ কালে” বিশ্বযুদ্ধ, অপরাধের বৃদ্ধি, ক্ষুধা, মহামারী, বিলাসপ্রিয়তা, ঈশ্বরে অবিশ্বাস, ধর্মীয় ভণ্ডামী এবং অবনতি ও আরও বহুবিধ ঘটনা ঘটাবে। এইগুলি একটি আঙ্গুলের ছাপের রেখাগুলির মত সুনিশ্চিতরূপে শনাক্ত করে যে আমাদের কালই হল শেষ কাল যখন ঈশ্বর এইরূপ ভয়ানক অবস্থাগুলি সহ্য করবেন। যিশু ভাববাণী করেছিলেন যে আমাদের সময়েই পৃথিবীতে পরিতৃপ্ত এই পরিস্তিতির শেষ হবে।
২৯. আমরা কিরূপে জানি যে এই পরিস্থিতির শেষ নিকটে?
২৯ যে কালের লোকেরা ১৯১৪ সালে “শেষ কালের” আরম্ভ দেখেছিল তাদের সম্বন্ধে যীশু আরও বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি এই কালের লোকেদের লোপ হইবে না, যে পর্য্যন্ত না এ সমস্ত সিদ্ধ হয়।” (মথি ২৪:৩৪) এর অর্থ ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন কেউ কেউ এই বর্তমান পরিস্থিতির শেষ দেখতে জীবিত থাকবেন। ঐ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বংশটি এখন খুবই বৃদ্ধ আর এটাই দৃঢ় প্রমাণ যে দুষ্টতার পরিসমাপ্তি দ্রুত সমীপবর্তী।
৩০. আজ কর্তৃত্বশালী সমস্ত মনুষ্য শাসন ব্যবস্থাগুলির কী হবে? (সফনিয় ৩:৮; যিশাইয় ১:২৮)
৩০ যখন শেষ আসবে, ঈশ্বর তাঁর মহাপরাক্রম প্রদর্শন করে সরাসরি মানুষের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন। তাঁর বিরোধী সমস্ত মানব ব্যবস্থাগুলি চূর্ণ হবে। দানিয়েল পুস্তকের দ্বিতীয় অধ্যায় ৪৪ পদের ভাববাণী এই সম্বন্ধে বলে: “আর সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।” সর্বনাশা সমস্ত মনুষ্য ব্যবস্থাগুলিকে পথ হতে সরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের শাসন পৃথিবীর উপরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে।
৩১. মানবজাতির জন্য ঈশ্বর কি সরকার প্রদান করবেন? (মথি ৬:৯, ১০)
৩১ সুতরাং ঈশ্বরের শাসন পরিচালিত হবে একটি নূতন সরকারের দ্বারা, একটি স্বর্গীয় সরকার, ঈশ্বরের সরকার। ঐ সরকারই ছিল যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষার মূল বিষয়। আর তিনি ভাববাণী করেছিলেন যে নিরূপিত সময়ে কেবলমাত্র ইহাই সমগ্র পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করবে। যেহেতু এই রাজ্য ঈশ্বরের পরিচালনাধীনে স্বর্গ থেকে রাজত্ব করবে তাই স্বার্থপর মনুষ্য দ্বারা তার কলুষিত হবার সুযোগ থাকবে না। সুতরাং শাসনক্ষমতা প্রথমে যেমন ছিল তেমনি স্বর্গে ঈশ্বরের হাতেই থাকবে। পৃথিবী ঈশ্বরের শাসনাধীনে থাকার ফলে তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে “জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।” (যিশাইয় ২৬:৯) এমন কি কেউ ভ্রান্তধর্ম দ্বারা বিপথে যাবেন না কারণ তখন ঐরূপ একটিও থাকবে না। জীবিত সকলেই ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য শিখবে যাতে সম্পূর্ণ অর্থে “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।”—যিশাইয় ১১:৯.
একটি ধার্মিক নূতন পদ্ধতি
৩২. ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনাধীনে, শান্তি কতদূর প্রসারিত হবে? (যিশাইয় ২:২-৪)
৩২ ঈশ্বরের রাজ্যর শাসনাধীনে গড়ে উঠবে ঈশ্বরের লোকেদের নিয়ে নির্মিত সম্পুর্ণ এক নূতন মানবসমাজ। এই নূতন ব্যবস্থায়, ঈশ্বর যা কিছু করবেন তা থেকে বোঝা যাবে তিনি আমাদের কত যত্ন নেন। কারণ একটি বিষয়, যুদ্ধ আর কখনও মানুষের সুখ এবং শান্তি বিনষ্ট করবে না। কেন না? কারণ এই বর্তমান দুষ্ট জগতের শেষে জীবিতপ্রপ্তেরা ইতিম্যধ্যেই শান্তির পথে শিক্ষিত হয়েছে যেন নূতন মনুষ্য সমাজের সূচনা শান্তিতে শুরু হয়। তারপরে, ঐ নূতন পরিস্থিতিতে আগত সমস্ত জীবিতেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনার্থে এই একই শিক্ষা পেতে থাকবে। সেইজন্য বাইবেলের প্রতিজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হবে যে ঈশ্বর “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন।” (গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯) ঐ শান্তি কতটা সম্পূর্ণ হবে? ঈশ্বরের ভাববাণীপূর্ণ বাক্য বলে: “কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.
৩৩. পৃথিবীতে কী পরিবর্তন হবে?
৩৩ এছাড়াও, ঐ নূতন ব্যবস্থায় বসবাসকারীরা ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য অনুসারে এই পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করবে। মনুষ্যের জন্য সেটা কী সন্তোষজনক কাজই না হবে। আর এই পুনঃস্থাপিত পরমদেশে, মনুষ্য হ্রদ, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, পর্বত, সমতল, উপত্যকা, সুন্দর সুন্দর ফুল, লতা এবং বৃক্ষাদি এমন কি আগ্রহজনক জন্তুদের পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারবে। খাদ্য সংকট আর কখনও হবে না, কারণ “পৃথিবী নিজ ফল দিয়েছে, ঈশ্বর, আমাদের ঈশ্বর আমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন।” হ্যাঁ, “দেশমধ্যে পর্ব্বত শিখরি প্রচুর শস্য হইবে।”—গীতসংহিতা ৬৭:৬; ৭২:১৬.
৩৪. দৈহিক আর কি আরোগ্য সংঘটিত হবে?
৩৪ চিরস্থায়ী শান্তি খাদ্যের প্রাচুর্য্যের সাথে আসবে সুস্বাস্থ্য। মানুষের স্রষ্টারূপে ঈশ্বর যে কোন ডাক্তারের চাইতে আরও উত্তমরূপে জানেন পঙ্গুকে আরগ্য করতে, অন্ধকে দৃষ্টি দিতে, বধিরকে শ্রবণশক্তি দিতে কী করতে হবে এবং কিরূপে সমস্ত রোগ, জ্বরা ও মৃত্যুর অবসান হবে। পৃথিবীতে থাকাকালে যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে এটি করার বিষয়ে ঈশ্বরের শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। বাইবেল আমাদের জানায়: “আর বিস্তর লোক তাঁহার কাছে আসিতে লাগিল, তাহার আপনাদের সঙ্গে খঞ্জ, অন্ধ, বোবা, নুলা এবং আরও অনেক লোককে লইয়া তাঁহার চরণের নিকট ফেলিয়া রাখিল, আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। এইরূপে বোবারা কথা কহিতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে এবং অন্ধেরা দেখিতেছে, ইহা দেখিয়া লোকেরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।”—মথি ১৫:৩০, ৩১.
৩৫, ৩৬. কিরূপে মৃতদের ঈশ্বরের নূতন ব্যবস্থায় বাঁচাবার সুযোগ দেওয়া হবে? (যোহন ৫:২৮, ২৯; লুক ৭:১১-১৫)
৩৫ যীশু তাঁর পার্শ্বে পেরেকবিদ্ধ লোকটিকে “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে” বলার সময়ে এই পার্থিব পরমদেশের প্রতিই নির্দেশ করেন। (লূক ২৩:৪৩) কিন্তু ঐ মানুষটি মারা যায়। কাজেই কিরূপে সে পরমদেশে উপস্থিত থাকবে? আরেকটি আশ্চর্য্য ব্যবস্থার দ্বারা যা প্রমাণ করে ঈশ্বর আমাদের কতটা যত্ন নেন—তা হল মৃতদের পুনরুত্থানের দ্বারা। প্রেরিত ২৪:১৫ পদে বাইবেলে বলা হয়: “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” পৃথিবীতে থাকাকালে, যীশু ঈশ্বরের শক্তির পরিচয় দিতে মৃতদের পুনরুত্থিত করেন যা তাঁর রাজ্যের শাসনাধীনে করবেন।
৩৬ আপনি কি এই পুনরুত্থানের ধারণায় বিশ্বাস করা কঠিন মনে করেন? তবুও আপনি এমন কি এখনই টেলিভিশনের প্রোগ্রামে বহু বৎসর পূর্বে মৃত ব্যক্তিদের দেখতে পান। আপনি তাদের স্বর শুনতে পান ও তাদের কার্যকলাপ এবং চরিত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেন। সামান্য মানুষ যদি টেলিভিশনের টেপে এই ধরনের বিষয় রক্ষা করতে পারে তবে সর্বজ্ঞ ঈশ্বর যাদের পুনঃসৃষ্টি করতে চান সেই প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনায়াসে স্মরণে রাখতে পারেন। তিনি ইহা করেছেন এবং তিনি ঐ মৃতদের আবার জীবনে পুনরুত্থিত করবেন। এইরূপে, তারাও ঈশ্বরের নূতন ব্যবস্থায় জীবন উপভোগ করার সুযোগ পাবে। আর কবর বিলুপ্ত করে এবং লোকেদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগ, বার্দ্ধক্য এবং মৃত্যু হতে আরোগ্য করে ঈশ্বর “প্রকৃতই মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করবেন।” (যিশাইয় ২৫:৮) এইরূপে, লোকেরা অনন্তকাল জীবিত থাকতে পারবে।
৩৭. অন্যায়ভাবে লব্ধ যে কোন আঘাতকে ছাপিয়ে ঈশ্বয় লোকেদের জন্য করবেন, একথা কেন বলা যেতে পারে?
৩৭ দীর্ঘকাল যাবৎ বিদ্যমান মন্দ পরিস্থিতি ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করবেন তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে। অতীতে প্রাপ্ত যে কোন আঘাতকে ছাপিয়ে ঈশ্বরের বর্ষিত আশীর্বাদ আমাদের প্রতি তাঁর চিরন্তন যত্নকে প্রমান করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতালব্ধ পূর্ববতী কষ্টসকল স্মৃতিচারণ করতে চাইলেও তা স্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা হল: “আমি নূতন আকাশমণ্ডলের [মানব জাতির উপর একটি নূতন স্বর্গীয় সরকার] ও নূতন পৃথিবীর [একটি ধর্মিক মানব সমাজ] সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর।” (যিশাইয় ৬৫:১৭, ১৮) এইরূপ পরম আশীর্বাদগুলি সম্মুখে থাকায় আপনি লক্ষ্য করতে পারেন কেন বাইবেল বলে যে ঈশ্বর “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” আর কেন নয়? কারণ “মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
ঈশ্বর যত্ন নেন—আমরাও কি করি?
৩৮. কী ধরনের ব্যক্তিদের ঈশ্বর তাঁর নূতন ব্যবস্থায় চান? (গীতসংহিতা ৩৭:৩৭, ৩৮)
৩৮ ঈশ্বর যে মন্দতার শীঘ্র পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে একটি নূতন আনন্দদায়ক ব্যবস্থা আনবেন এ বিষয়ই প্রমাণ করে যে তিনি প্রকৃতই আমাদের যত্ন নেন। কিন্তু আমরাও কি তাঁর বিষয়ে চিন্তা করি? আমরা যদি তাই করি, আমাদের তা দেখাতে হবে। আমাদের কী করতে হবে? বাইবেল বলে: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে, কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) তাঁর ইচ্ছা পালনে রত এবং তাঁর ধর্মিক শাসনের বশীভূত ব্যক্তিদেরই ঈশ্বর তাঁর নূতন ব্যবস্থাতে চান। এই ধরনের লোকেরা তাঁর নিয়মের বাধ্য হবে এবং “নূতন পৃথীবিকে” একটি সুন্দর বাসপোযোগী স্থানে পরিণত করতে অংশ নেবে। ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধবাদীরা কেবলমাত্র অসুবিধা সৃষ্টিকারীই হবে, তাই তাদের সেখানে থাকতে দেওয়া হবে না।
৩৯. আপনি যদি অনন্ত জীবন চান, কী অনুসন্ধান আপনাকে অবশ্যই করতে হবে? (হিতোপদেশ ২:১-৬)
৩৯ আপনি কি ঈশ্বরের ধার্মিক নূতন ব্যবস্থায় বাস করতে চান? তবে প্রথম বিষয় হল জীবনের জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তাসকল শিক্ষা করা। এতে কি অনেক বেশি চাওয়া হল? আপনাকে যদি বিনামুল্যে একটি সুশোভিত পরিবেশে একটি সুন্দর গৃহ দেওয়া হয়, তবে কি আপনি কিরূপে যোগ্য প্রতিপন্ন হওয়া যায়তা জানতে সময় করে নেবেন না? ঈশ্বরেরে বাক্য আরও বেশি প্রস্তাব করে—পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন—যদি আমরা আমাদের জন্য তাঁর ইচ্ছা কি জানতে অনুসন্ধান করি ও তারপরে তা করি। বাইবেল বলে: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে জানিতে পায়।”—যোহান ১৭:৩.
৪০. বাইবেল এখন আর কী কী অতিরিক্ত উপকার প্রদান করে? (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭)
৪০ আরও বাইবেল শিক্ষা আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে যোগাবে এই কষ্টকর সময়ে দৈনন্দিন জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বাস্তব পরিচালনা। উপরন্তু, তা প্রদান করে সত্যিকারের মনের শান্তি, যেহেতু এটি বলে কেন পরিস্থিতি এত মন্দ এবং ভবিষ্যতে কী আছে। সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ হল, এটি আপনাকে ঈশ্বরের জন্য আন্তরিক প্রেম গঠন সক্ষম করবে, তা দেখে যে “তিনি যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে তাদের পুরস্কৃত করেন।”—ইব্রীয় ১১:৬.
৪১. যিহোবার সাক্ষীরা আপনাকে বিনামূল্যে কী সাহায্য দেবে?
৪১ তাঁর নূতন পরিস্থিতিতে জীবনের জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থা সম্বন্ধে আরও শিখতে আপনাকে সাহায্য করার নিমিত্ত যিহোবার সাক্ষীরা তাদের সময় সানন্দে এবং বিনামুল্যে দেবে। নিঃসন্দেহে, ঈশ্বর এবং বাইবেল সম্বন্ধে আপনার আরও প্রশ্ন আছে। যিহোবার সাক্ষীর আপনার নিজের বাড়িতে, আপনার নিজের বাইবেল থেকে আপনাকে সাথে এসকল আলোচনা করতে খুশি হবে। তারপর স্বাধীন জীবনযাপন অথবা অসিদ্ধ মনুষ্যদের চিন্তার উপর নির্ভর করা ব্যতিরেকে আপনি অধুনা সবচাইতে উত্তম সংবাদের দ্বারা পরিচালিত হবেন। সুতরাং সময় থাকতে আপনাকে ঈশ্বরের বাক্যের অনুপ্রাণিত উপদেশ অনুসারে করতে বলা হচ্ছে: “অতএব তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও . . . কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৬, ৭.
[পাদটীকাগুলো]
a নিউইয়র্ক টাইমস, নভেম্বর ৬, ১৯৭২, পৃ. ৫.
b এনভায়রনমেন্টাল এথিকস্, ডোনাল্ড আর, স্কবি কর্তৃক সম্পাদিত, ১৯৭১,পৃ. ১৭.
c নিউইয়র্ক পোষ্ট, মার্চ ৩০, ১৯৭৪, পৃ. ৩৫.
[২২ পৃষ্ঠার তালিকা]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
সকলই একটা কালে হবে
১৯১৪
বিশ্বযুদ্ধ
ব্যাপক দুর্ভিক্ষ
রোগ মহামারী
দৌরাত্ম্য অপরাধ
পৃথিবীব্যাপী দূষণ
এই যুগের শেষ
[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
দারিদ্র্যপীড়িত মনুষ্যজাতির জন্য যদি ঈশ্বর অভিযুক্ত হন . . .
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
. . . তবে পৃথিবীর সৌন্দর্য এবং এর ফলবতী ক্ষেতের জন্য কাকে প্রশংসা দেওয়া যায়?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
জীবন ধারণার্থে কোন গৃহ অপেক্ষা পৃথিবী আরও উত্তমরূপে সজ্জিত
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যেহেতু প্রত্যেক গৃহেরই একজন নির্মাতা আছেন, পৃথিবীর ক্ষেত্রে আরও কত না বেশি!
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেল দেখায় যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল মনুষ্যের অনন্তকাল উপভোগ্যরূপে সমগ্র পৃথিবীকে একটি পরমদেশে তৈরি করা
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
একটি পাখাকে শক্তির উৎস হতে খুলে নিলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়। সেইরূপে, মানবজাতি ঈশ্বর হতে সরে গেলে, ফল হয় অবনতি
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
একটি ছোট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা উপেক্ষা করলেও একটি বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে। আমাদের প্রথম পিতামাতা যখন ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করে, দুষ্টতা এবং কষ্টের প্লাবন শুরু হয়
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
দুইজন লোক জড়িত হলেও একটি মোকদ্দমা বহু সপ্তাহ সময় নিতে পারে। ঈশ্বরের শাসনের সাথে জড়িত বিচার্য বিষয়গুলির সম্পূর্ণ, চিরস্থায়ী সমাধান প্রচুর সময় সাপেক্ষ
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের নূতন ব্যবস্থায় যুদ্ধ আর হবে না, কারণ তিনি “যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন”
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের আশীর্বাদে পৃথিবীতে প্রচুর শস্য হবে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
মানবজাতি আর কখনও ক্ষুধাক্লিষ্ট হবে না
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
বৃদ্ধেরা আবার যৌবনত্ব এবং সিদ্ধস্বাস্থ্য ফিরে পাবেন
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের স্মরণে রাখা সমস্ত মৃতেরা জীবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদের প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হবে
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
এখনকার যে কোন অন্যায়রূপে অভিজ্ঞতালব্ধ কষ্টকে ছাপিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যাধীনে জীবন হবে আরও আনন্দময়
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
মনোরম পরিবেশে জীবন দেওয়া হলে আপনি কি কিরূপে যোগ্য প্রতিপন্ন হওয়া যায় তা জানতে চাইবেন না? ঈশ্বরের নূতন ব্যবস্থা আরও বেশি কিছুর প্রস্তাব করে, কিন্তু কিরূপে যোগ্য প্রতিপন্ন হওয়া যায় তা শিখতে আমাদের অবশ্যই সময় করতে হবে
বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়
আপনি কি বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয় সে সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত, সহজ-বোধ্য একটি উপস্থাপনা চান? এটি আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন পকেট-সাইজ বইটিতে পেতে পারেন। জনসাধারণের চাহিদা মিটাতে এই বইটি ইতিমধ্যেই ১১৪টি ভাষায় ৬,৭৪,০০,০০০, সংখ্যায় ছাপান হয়েছে।
৩০টি অধ্যায় ২৫৬ পৃষ্ঠার মূল্য মাত্র ২০·০০ টাকা
আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন
বাইবেল ভিত্তিক শিক্ষাগুলি ক্রমানুসারে সাজান হয়েছে
বাইবেল সত্যগুলির মধ্যে আলোচিত হয়েছে:
• আমরা এখানে কেন?
• মৃত্যুতে কি হয়?
• নরক কি ধরনের স্থান?
• দুষ্ট আত্মার শক্তিশালী
• ঈশ্বর কেন দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দিয়েছেন?
• প্রার্থনার মাধ্যমে কিভাবে সাহায্য পাওয়া যায়
• পারিবারিক জীবনকে সার্থক করে তোলা
এছাড়াও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা ও প্রমাণ সমন্বিত ১৯২-পৃষ্ঠার ইজ দিস লাইফ অল দেয়ার ইজ্? বইটি পেতে পারেন। (ডাকমাশুল মাত্র ১২·০০ টাকা)
এই আকর্ষণীয় বইগুলির আপনার কপিগুলি পেতে মলাটের ভিতরের পাতা থেকে একটি ঠিকানা ব্যবহার করে ওয়াচ টাওয়ারকে মুল্য পাঠান। (মুল্য পরিবর্তনীয়)