ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ১৯ পৃষ্ঠা ১৪৮-১৫৫
  • “কথা বলতে থাকো আর থেমে যেয়ো না”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “কথা বলতে থাকো আর থেমে যেয়ো না”
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “তাদের পেশা ছিল, তাঁবু তৈরি করা” (প্রেরিত ১৮:১-৪)
  • “করিন্থের অনেকে . . . বিশ্বাস করতে লাগল” (প্রেরিত ১৮:৫-৮)
  • “এই নগরে আমার অনেক লোক রয়েছে” (প্রেরিত ১৮:৯-১৭)
  • “যদি যিহোবার ইচ্ছা হয়” (প্রেরিত ১৮:১৮-২২)
  • আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা—এক উদাহরণযোগ্য দম্পতি
    ১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই”
    ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • প্রেরিত বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
    ২০০৮ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ১৯ পৃষ্ঠা ১৪৮-১৫৫

অধ্যায় ১৯

“কথা বলতে থাকো আর থেমে যেয়ো না”

পৌল নিজের খরচ মেটানোর জন্য কাজ করেন, কিন্তু তারপরও প্রচার কাজকে জীবনে প্রথম স্থান দেন

প্রেরিত ১৮:১-২২ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. কেন প্রেরিত পৌল করিন্থে এসেছিলেন এবং তার মনে কোন প্রশ্নগুলো এসেছিল?

পঞ্চাশ খ্রিস্টাব্দ প্রায় শেষ হতে চলেছে আর পৌল করিন্থে রয়েছেন। এই সম্পদশালী নগর বাণিজ্যের জন্য খুবই পরিচিত আর এখানে অনেক গ্রিক, রোমীয় ও যিহুদি লোকেরা বসবাস করে।a পৌল এখানে কেনা-বেচা করার অথবা চাকরি কিংবা কাজের জন্য আসেননি। তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এসেছেন। তবে, তার থাকার জন্য একটা জায়গার প্রয়োজন এবং নিজের খরচ মেটানোর জন্য টাকাপয়সারও প্রয়োজন। তিনি স্থির করেছেন কারো উপর বোঝা হবেন না। তিনি এও চান না লোকেরা এমনটা মনে করুক, তিনি ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে এসেছেন বলে তাদের দায়িত্ব তার প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু জোগানো। কিন্তু প্রশ্ন হল, তিনি করিন্থে নিজের খরচ মেটানোর জন্য কী করবেন?

২ পৌল তাঁবু তৈরি করার কাজ জানতেন। এই কাজ সহজ ছিল না, কিন্তু তারপরও পৌল পরিশ্রম করতে ভয় পাননি। তিনি কি এই নগরে কাজ খুঁজে পাবেন? তিনি কি থাকার জন্য একটা জায়গা খুঁজে পাবেন? প্রেরিত পৌলের মনে এই সমস্ত প্রশ্ন ছিল, তারপরও তিনি এটা ভুলে যাননি যে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল প্রচার করা।

৩ পৌল বেশ কিছুদিন করিন্থে থেকে যান আর সেখানে তিনি প্রচারে খুব ভালো সাড়া পান। আমরাও আমাদের এলাকায় ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে চাই। আসুন দেখি, পৌল করিন্থে যেভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

করিন্থ—দুই সমুদ্রের মাঝে এক নগর

প্রাচীন করিন্থ সংকীর্ণ ভুমিতে অবস্থিত ছিল যা গ্রিসের মূল ভূখণ্ডকে দক্ষিণে পেলোপনিস উপদ্বীপের সাথে যুক্ত করেছিল। এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশটা চওড়ায় ছয় কিলোমিটারের চেয়েও কম ছিল। এই কারণে করিন্থে দুটো বন্দর ছিল। পশ্চিম দিকে লুকিয় বন্দর, যেখান দিয়ে সমুদ্র পথে ইতালি, সিসিলি ও স্পেনে যাওয়া যেত। পূর্ব দিকে কিংক্রিয়া বন্দর, যেখান থেকে ঈজিয়ান দ্বীপ, এশিয়া মাইনর, সিরিয়া ও মিশরের জাহাজ চলাচল করত।

পেলোপনিসের দক্ষিণ দিকে অনেক জোরে বাতাস বইত, তাই সেই রাস্তা দিয়ে জাহাজ চলাচল করা বিপদজনক ছিল। সেইজন্য নাবিকেরা সাধারণত করিন্থের কোনো একটা বন্দরে জাহাজকে থামিয়ে সমস্ত মালপত্র নামিয়ে দিত। এরপর সেই মালপত্র অন্য বন্দরে নিয়ে গিয়ে আরেকটা জাহাজে তুলে দিত। তবে, জাহাজ খুব একটা ভারি না হলে, একটা বিশেষ পথ দিয়ে সেই জাহাজকে টেনে এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত। করিন্থ নগরটা এমন একটা জায়গায় ছিল, যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা সমুদ্রপথে অথবা সড়কপথে এসে ব্যাবসা করতে পারত। এই কারণে এই নগর ধীরে ধীরে অনেক ধনী হয়ে উঠেছিল। তবে, এখানে মন্দতাও ভরে গিয়েছিল। তাই, করিন্থ নগর অনৈতিক কাজের জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল।

প্রেরিত পৌলের সময় করিন্থ নগর রোমীয় প্রদেশের আখায়ার রাজধানী ছিল। আর সেইসঙ্গে সমস্ত সরকারি কাজকর্ম করার প্রধান কেন্দ্র ছিল। করিন্থের লোকেরা আলাদা আলাদা ধর্মে বিশ্বাস করত। যেমন, সেখানে রোমীয় সম্রাটকে উপাসনা করার জন্য একটা মন্দির ছিল, গ্রিক ও মিশরীয় দেব-দেবীর ছোটো বড়ো মন্দির ছিল আর যিহুদিদের সমাজগৃহও ছিল। —প্রেরিত ১৮:৪.

করিন্থে ইস্‌থামিয়া নামে একটা জায়গায় প্রতি দু-বছর অন্তর ইস্‌থামিয়ান খেলার প্রতিযোগিতা হত। ইস্‌থামিয়ান প্রতিযোগিতা অলিম্পিক প্রতিযোগিতার মতোই জনপ্রিয় ছিল। ৫১ খ্রিস্টাব্দে পৌল যখন করিন্থে ছিলেন, তখন সম্ভবত ইস্‌থামিয়ান প্রতিযোগিতা চলছিল। বাইবেলের একটা ডিকশনারি বলে: “এইজন্য আমরা এটা জেনে আশ্চর্য হই না যে, পৌল যখন করিন্থের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন, তখন তিনি প্রথম বার সেই খেলার প্রতিযোগিতার উল্লেখ করে তাদের উদাহরণ দিয়েছিলেন।”—১ করি. ৯:২৪-২৭.

“তাদের পেশা ছিল, তাঁবু তৈরি করা” (প্রেরিত ১৮:১-৪)

৪, ৫. (ক) করিন্থে পৌল কাদের সঙ্গে থাকতেন আর সেখানে তিনি কী কাজ করতেন? (খ) কীভাবে পৌল তাঁবু তৈরি করার কাজ শিখেছিলেন?

৪ করিন্থে আসার কিছু সময় পর, পৌল একজন যিহুদি ব্যক্তি আক্কিলা এবং তার স্ত্রী প্রিষ্কিল্লার সঙ্গে দেখা করেন। প্রিষ্কিল্লাকে লোকেরা প্রিষ্কা বলেও ডাকত। এই দম্পতি আতিথেয়তা দেখানোর জন্য খুবই পরিচিত ছিলেন। তারা কয়েক দিন আগেই করিন্থে এসেছেন, “কারণ সম্রাট ক্লৌদিয় সমস্ত যিহুদিকে রোম ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন।” (প্রেরিত ১৮:১, ২) আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লা পৌলকে তাদের বাড়িতে এসে থাকতে বলেন আর তাদের সঙ্গে কাজও করতে বলেন। শাস্ত্রপদ বলে: “তার [পৌল] ও তাদের পেশা যেহেতু একই ছিল, তাই তিনি তাদের বাড়িতে থাকতে শুরু করলেন এবং তাদের সঙ্গে কাজ করতে লাগলেন। তাদের পেশা ছিল, তাঁবু তৈরি করা।” (প্রেরিত ১৮:৩) পৌল যতদিন করিন্থে ছিলেন, ততদিন এই দম্পতির বাড়িতেই ছিলেন। সেই সময় তিনি হয়তো কিছু চিঠিও লেখেন, যা পরবর্তী সময়ে বাইবেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।b

৫ পৌল “গমলীয়েলের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষা লাভ” করেছিলেন, তা হলে কীভাবে তিনি তাঁবু তৈরির কাজ শিখলেন? (প্রেরিত ২২:৩) এমনটা মনে হয়, প্রথম শতাব্দীতে যিহুদি ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু হাতের কাজও শেখাত। তারা এটাকে নীচু কাজ বলে মনে করত না। পৌল কিলিকিয়ার তার্ষ নগরের বাসিন্দা ছিলেন। এই নগর কিলিকিয়ম নামে একপ্রকার কাপড়ের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল, যা দিয়ে তাঁবু তৈরি করা হত। পৌল হয়তো খুব ছোটো বয়সে এই কাজ শিখেছিলেন। তাঁবু তৈরি করার কাজ সহজ ছিল না। কারণ এটা তৈরি করার জন্য কাপড়কে হয় বুনতে হত নতুবা সেই কাপড় কেটে সেলাই করতে হত। আর সেই কাপড় যেহেতু মোটা ও শক্ত হত, তাই সেটাকে কাটা কিংবা সেলাই করাও সহজ ছিল না। এই কাজ করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হত।

৬, ৭. (ক) কেন পৌল তাঁবু তৈরির কাজ করতেন? (খ) কোন বিষয়টা দেখায় যে, আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লা কাজকে পৌলের মতো একই চোখে দেখতেন? (গ) বর্তমানে খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা পৌল, আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লার মতো কী করে থাকে?

৬ পৌল তার সমস্ত সময় ও শক্তি তাঁবু তৈরি করার কাজে ব্যবহার করেননি। তিনি শুধুমাত্র নিজের খরচ মেটানোর জন্য এই কাজ করতেন, যাতে “বিনা বেতনে” অন্যদের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করতে পারেন। (২ করি. ১১:৭) আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লা তাদের কাজকে পৌলের মতো একই চোখে দেখতেন। তাই, ৫২ খ্রিস্টাব্দে যখন পৌল করিন্থ ছেড়ে ইফিষে চলে যান, তখন তারাও তাদের সমস্ত কিছু ত্যাগ করে পৌলের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ইফিষে আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লার বাড়িতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী উপাসনা করার জন্য মিলিত হত। (১ করি. ১৬:১৯) এরপর তারা রোমে ফিরে যান এবং পরে আবারও ইফিষে ফিরে আসেন। এই উদ্যোগী দম্পতি সবসময় তাদের জীবনে রাজ্যের কাজকে প্রথম স্থানে রাখেন আর সেইসঙ্গে অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেন। সেইজন্য ‘ন-যিহুদিদের সমস্ত মণ্ডলী’ তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ ছিল। —রোমীয় ১৬:৩-৫; ২ তীম. ৪:১৯.

৭ বর্তমানে অনেক খ্রিস্টান ভাই-বোন পৌল, আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লার মতো হওয়ার চেষ্টা করে। তারা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করার পাশাপাশি কিছু কাজও করে, যাতে ‘কারো উপর ভারী বোঝা না হয়।’ (১ থিষল. ২:৯) যেমন, কোনো কোনো অগ্রগামী পার্ট-টাইম কাজ করে, আবার কেউ কেউ বছরের কিছু দিন কিংবা কিছু মাস কাজ করে। কিন্তু, অগ্রগামীর কাজই হল তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তারা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য! আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লার মতো অনেক ভাই-বোন তাদের বাড়িতে সীমা অধ্যক্ষকে থাকতে দেয়। ভাই-বোনেরা জানে, আতিথেয়তা দেখানোর মাধ্যমে তারা নিজেরা উৎসাহিত হয় এবং সতেজতা লাভ করে।—রোমীয় ১২:১৩.

পৌলের চিঠিগুলো উৎসাহিত করে

পৌল ৫০ থেকে ৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ১৮ মাস করিন্থে ছিলেন। সেখানে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় থিষলনীকীয় নামে দুটো চিঠি লেখেন, যা পরে খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের অংশ হয়ে উঠে। আর এই সময় অথবা এর কিছু সময় পর তিনি গালাতীয় মণ্ডলীর উদ্দেশেও একটা চিঠি লেখেন।

প্রথম থিষলনীকীয়: পৌল ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় যে-চিঠিগুলো লিখেছিলেন, এটা ছিল সেগুলোর মধ্যে প্রথম চিঠি। প্রায় ৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রার সময় থিষলনীকীতে যান। সেখানে একটা নতুন মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল, তবে সেই মণ্ডলীকে দ্রুত বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়। সেইজন্য পৌল ও সীলকে নিরুপায় হয়ে সেই নগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। (প্রেরিত ১৭:১-১০, ১৩) পৌল এই নতুন মণ্ডলীর ভাই-বোনদের জন্য চিন্তিত ছিলেন। তাই, তিনি দু-বার তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু “শয়তান [তাদের] পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” সেইজন্য পৌল তীমথিয়কে থিষলনীকীতে পাঠান, যাতে তিনি সেখানকার ভাইদের উৎসাহিত করতে পারেন এবং শক্তিশালী করতে পারেন। পরে, সম্ভবত ৫০ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তীমথিয় আবার করিন্থে আসেন আর পৌলকে থিষলনীকীয় মণ্ডলী সম্বন্ধে ভালো খবর জানান। এরপর পৌল থিষলনীকী মণ্ডলীকে প্রথম চিঠিটা লেখেন।—১ থিষল. ২:১৭–৩:৭.

দ্বিতীয় থিষলনীকীয়: প্রথম চিঠিটা লেখার পর পরই পৌল প্রায় ৫১ খ্রিস্টাব্দের দিকে হয়তো দ্বিতীয় চিঠিটা লেখেন। এই দুটো চিঠিতেই পৌলের সঙ্গে সঙ্গে তীমথিয় ও সীলবান, (যাকে প্রেরিত বইয়ে সীল বলা হয়েছে) থিষলনীকীর ভাইদের সম্ভাষণ জানান। তবে, পৌল করিন্থ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বাইবেলে কোথাও পাওয়া যায় না যে, এই তিন জন আবার একত্রিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৮:৫, ১৮; ১ থিষল. ১:১; ২ থিষল. ১:১) কেন পৌল এই দ্বিতীয় চিঠিটা লেখেন? যিনি পৌলের প্রথম চিঠিটা পৌঁছে দেন, সম্ভবত তিনি ফিরে এসে পৌলকে মণ্ডলী সম্বন্ধে আরও কিছু জানান। এই খবর শুনে পৌল এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি দ্বিতীয় চিঠিটা লেখেন। তিনি তার চিঠিতে থিষলনীকীর ভাইদের দেখানো প্রেম ও ধৈর্যের প্রশংসা করেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি কিছু ভাইদের ভুল চিন্তাভাবনাও সংশোধন করেন, যারা মনে করত, খ্রিস্টের উপস্থিতি সন্নিকট।—২ থিষল. ১:৩-১২; ২:১, ২.

গালাতীয়: এই চিঠি থেকে বোঝা যায়, সেখানকার খ্রিস্টানদের উদ্দেশে এই চিঠি লেখার আগে, পৌল কমপক্ষে দু-বার তাদের সঙ্গে দেখা করেন। ৪৭ থেকে ৪৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৌল ও বার্ণবা পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া, ইকনিয়, লুস্ত্রা এবং দর্বী ভ্রমণ করেন। এই সমস্ত নগর রোমীয় প্রদেশের গালাতিয়ার মধ্যে পড়ে। এরপর ৪৯ খ্রিস্টাব্দে পৌল সীলের সঙ্গে দ্বিতীয় বার গালাতিয়া প্রদেশে যান। (প্রেরিত ১৩:১–১৪:২৩; ১৬:১-৬) পৌল গালাতীয়দের উদ্দেশে এই চিঠি এইজন্য লিখেছিলেন, কারণ তার ভ্রমণ করার পরপরই কিছু ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি মণ্ডলীকে এই শিক্ষা দিচ্ছিল যে, ত্বকচ্ছেদ করা এবং মোশির ব্যবস্থা পালন করা জরুরি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পৌল যখনই এই বিষয়ে শুনেছিলেন, তখন তিনি কোনোরকম দেরি না করে, গালাতীয়দের উদ্দেশে এই চিঠি লেখেন। সম্ভবত তিনি করিন্থে থাকার সময়ই এই চিঠি লেখেন। আবার এও হতে পারে, সিরিয়ার আন্তিয়খিয়া থেকে ফিরে আসার সময় তিনি যখন ইফিষে কিছু সময় ছিলেন, তখন লেখেন কিংবা আন্তিয়খিয়ায় পৌঁছে সেখান থেকে লেখেন।—প্রেরিত ১৮:১৮-২৩.

“করিন্থের অনেকে . . . বিশ্বাস করতে লাগল” (প্রেরিত ১৮:৫-৮)

৮, ৯. পৌলের প্রচার কাজে যখন বিরোধিতা করা হয়, তখন তিনি কী করেছিলেন আর এরপর তিনি কোথায় গিয়ে প্রচার কাজ করেছিলেন?

৮ পৌল তাঁবু তৈরির কাজ শুধুমাত্র তার পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্যই করতেন। এই বিষয়টা সেই সময়ে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যখন ম্যাসিডোনিয়ার মণ্ডলী সীল ও তীমথিয়ের মাধ্যমে পৌলের জন্য অনেক উপহার পাঠিয়েছিল। (২ করি. ১১:৯) শাস্ত্রপদ বলে, এর পর পরই “পৌল তার সমস্ত সময় ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করায় ব্যয় করতে লাগলেন।” (প্রেরিত ১৮:৫) এরপর পৌল যখন উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করছেন, তখন যিহুদিরা বিরোধিতা করতে শুরু করে। তারা খ্রিস্টের বিষয় সেই সুসমাচার প্রত্যাখ্যান করে, যা তাদের জীবনকে রক্ষা করতে পারত। তাই, পৌল এই বিষয়টা দেখানোর জন্য তার কাপড় ঝেড়ে ফেলেন যে, এরপর যা ঘটবে তার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী হবে। তিনি তাদের বললেন: “তোমাদের রক্তের দায় তোমাদের উপরই আসুক। আমি দায়মুক্ত। এখন থেকে আমি ন-যিহুদিদের কাছে যাব।”—প্রেরিত ১৮:৬; যিহি. ৩:১৮, ১৯.

৯ তা হলে, পৌল এখন কোথায় গিয়ে প্রচার করবেন? তিতিয় যুষ্ট নামে একজন ব্যক্তি তাকে নিজের বাড়িতে ডাকেন। তিনি হয়তো যিহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন আর তার বাড়ি সমাজগৃহের পাশেই ছিল। সেইজন্য পৌল যুষ্টের বাড়িতে যান আর সেখানে প্রচার কাজ করতে থাকেন। (প্রেরিত ১৮:৭) পৌল যতদিন করিন্থে ছিলেন, ততদিন তিনি আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লার সঙ্গে তাদের বাড়িতেই থাকতেন। তবে, তিনি প্রচার কাজ যুষ্টের বাড়ি থেকে করতেন।

১০. কোন বিষয়টা দেখায় যে, পৌল একগুঁয়ে মনোভাব দেখাননি?

১০ পৌল যখন বলেছিলেন, এখন থেকে তিনি ন-যিহুদিদের কাছে যাবেন, তখন এর মানে কী ছিল? তিনি কি এখন থেকে আর যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করবেন না, এমনকী তারা যদি শুনতে চায়? আসলে, ঠিক তা নয়। বিবরণ জানায়: “সমাজগৃহের অধ্যক্ষ ক্রীষ্প ও সেইসঙ্গে তার পরিবার ও পরিজন প্রভু যিশুর অনুসারী হলেন।” ক্রীষ্প ছাড়াও সমাজগৃহে আসা অন্যান্য যিহুদি ব্যক্তিরাও প্রভু যিশুর অনুসারী হয়ে উঠেছিলেন। বাইবেল বলে: “করিন্থের অনেকে সুসমাচার শুনে বিশ্বাস করতে লাগল এবং বাপ্তিস্ম নিতে লাগল।” (প্রেরিত ১৮:৮) এভাবে করিন্থে একটা নতুন মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল আর সেই মণ্ডলী তিতিয় যুষ্টের বাড়িতে একত্রিত হত। লূক যদি এই বিবরণটা ঘটনার ক্রম অনুযায়ী লেখেন, যেমনটা তিনি করেন, তা হলে এর মানে হল পৌল তার কাপড় ঝেড়ে ফেলার পরেও যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করেছিলেন, ফলে তারা খ্রিস্টান হয়েছিল। এই বিবরণ দেখায়, পৌল একগুঁয়ে মনোভাব না দেখিয়ে বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

১১. কীভাবে পৌলের মতো বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরা গির্জার লোকদের সাহায্য করে?

১১ বর্তমানে, অনেক দেশে গির্জাগুলো দাবি করে যে, তারা খ্রিস্টকে অনুসরণ করে। আর বহু বছর ধরে এই গির্জাগুলো তাদের সদস্যদের উপর এক জোরালো প্রভাব ফেলে আসছে। কিছু দেশ ও দ্বীপে গির্জার মিশনারিরা অনেক ব্যক্তিকে তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। কিন্তু গির্জার এই খ্রিস্টানেরা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে মজবুত করার পরিবর্তে, তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে, ঠিক যেমন করিন্থের যিহুদিরা করেছিল। তারপরও আমরা যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সাহায্য করতে চাই। আমরা পৌলের মতো তাদের কাছে প্রচার করি এবং বাইবেলকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করি। কখনো কখনো তারা আমাদের বিরোধিতা করে অথবা তাদের ধর্মগুরুরা আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। তারপরও আমরা হাল ছেড়ে দিই না। আমরা জানি এমন অনেক গির্জার লোকেরা রয়েছে, যাদের “ঈশ্বরের জন্য . . . উদ্যোগ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা সঠিক জ্ঞান অনুযায়ী নয়।” (রোমীয় ১০:২) আমাদের সেই ব্যক্তিদের খুঁজতে হবে, যারা সত্য জানতে চায়।

“এই নগরে আমার অনেক লোক রয়েছে” (প্রেরিত ১৮:৯-১৭)

১২. যিশু এক দর্শনের মাধ্যমে পৌলকে কী আশ্বাস দিয়েছিলেন?

১২ পৌল হয়তো এটা ভেবে চিন্তিত রয়েছেন যে, করিন্থে প্রচার কাজ চালিয়ে যাবেন কি না। কিন্তু এখন যা ঘটে, তাতে তার চিন্তা দূর হয়ে যায়। রাতে প্রভু যিশু তাকে দর্শন দেন আর বলেন: “ভয় পেয়ো না, বরং কথা বলতে থাকো আর থেমে যেয়ো না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, কেউই তোমাকে আক্রমণ করে তোমার ক্ষতি করতে পারবে না; কারণ এই নগরে আমার অনেক লোক রয়েছে।” (প্রেরিত ১৮:৯, ১০) একটু কল্পনা করুন, এই দর্শন পৌলকে কতই-না শক্তিশালী করেছিল! যিশু নিজে তাকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেন, কেউই তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর এই নগরে এখনও এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের সুসমাচার শোনা বাকি আছে। সেই দর্শনের পর পৌল কী করেন? শাস্ত্রপদ বলে: “তিনি দেড় বছর সেখানে থেকে সেখানকার লোকদের ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিলেন।”—প্রেরিত ১৮:১১.

১৩. (ক) “বিচারাসনের” সামনে যাওয়ার সময় পৌল হয়তো কী চিন্তা করছিলেন? (খ) কিন্তু পৌল কোন বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন এবং কেন?

১৩ করিন্থে এক বছর থাকার পর, পৌল আরেকটা প্রমাণ পান যে, যিশু তাকে সাহায্য করছেন। লক্ষ করুন, যখন ‘যিহুদিরা একজোট হয়ে পৌলের উপর চড়াও হয় এবং তাকে ধরে বিচারাসনের সামনে নিয়ে যায়,’ তখন কী ঘটে। (প্রেরিত ১৮:১২) কিছু লোক মনে করে, এই বিচারাসন ছিল একটা উঁচু জায়গা, যেটা সাদা ও নীল মার্বেল পাথর দিয়ে সুন্দর নকশা করে তৈরি। এই বিচারাসন হয়তো করিন্থের বাজারে ছিল আর এর সামনের খোলা জায়গাটা এতটা বড়ো ছিল যে, সেখানে অনেক লোক জড়ো হতে পারত। কিছু ঐতিহাসিক বলেন, এই বিচারাসন হয়তো সমাজগৃহের কাছাকাছি ছিল অর্থাৎ বলা যায় যুষ্টের বাড়ির কাছেই। পৌলকে যখন বিচারাসনের সামনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তার নিশ্চয়ই স্তিফানের কথা মনে পড়ছিল। এমনটা মনে করা হয় যে, স্তিফান ছিলেন খ্রিস্টানদের মধ্যে প্রথম শহিদ। এ ছাড়া, পৌল, যাকে তখন শৌল বলে ডাকা হত, তিনি স্তিফানকে “হত্যা করার বিষয়ে . . . সম্মতি” দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:১) এখন করিন্থে পৌলের সঙ্গে কি এইরকমই কিছু ঘটবে? কখনোই না। কারণ যিশু তাকে দর্শনে আশ্বস্ত করেছিলেন, “কেউই তোমাকে আক্রমণ করে তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।”—প্রেরিত ১৮:১০.

গাল্লিয়ো পৌলের উপর আনা অভিযোগ মামলাটা শেষ করে দেন। রোমীয় সৈন্যেরা রাগী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।

“তিনি তাদের বিচারাসনের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিলেন।”—প্রেরিত ১৮:১৬

১৪, ১৫. (ক) যিহুদিরা পৌলের উপর কোন অভিযোগ নিয়ে এসেছিল? (খ) কেন গাল্লিয়ো এই মামলাটা শেষ করে দিয়েছিলেন? (গ) সোস্থিনীর প্রতি কী ঘটেছিল আর এর ফলাফল কী হয়েছিল?

১৪ পৌল যখন বিচারাসনের সামনে পৌঁছান, তখন কী ঘটে? পৌলের বিচার আখায়ার দেশাধ্যক্ষ গাল্লিয়ো করবেন, যিনি রোমীয় দার্শনিক সেনেকার দাদা। যিহুদি লোকেরা গাল্লিয়োর সামনে পৌলের উপর এই অভিযোগ নিয়ে আসে: “এই ব্যক্তি লোকদের এমনভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য উসকে দিচ্ছে, যা আইনবিরুদ্ধ।” (প্রেরিত ১৮:১৩) তারা আসলে বলতে চাইছিল, পৌল আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু যিহুদিদের খ্রিস্টান করছে। কিন্তু গাল্লিয়ো লক্ষ করেন, পৌল না তো কোনো “অন্যায়” করেছেন, আর না শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো “গুরুতর অপরাধ” করেছেন। (প্রেরিত ১৮:১৪) গাল্লিয়ো যিহুদিদের ঝগড়ার মধ্যে নিজেকে জড়াতে চান না। পৌল নিজের পক্ষ সমর্থন করে কিছু বলার আগেই গাল্লিয়ো সেই মামলাটা শেষ করে দেন। এর ফলে সেই যিহুদিরা রেগে লাল হয়ে যায় আর সোস্থিনী নামে একজন ব্যক্তির উপর তাদের রাগ মেটায়। সোস্থিনীকে সম্ভবত ক্রীষ্পের জায়গায় সমাজগৃহে অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তারা সবাই মিলে “সমাজগৃহের অধ্যক্ষ সোস্থিনীকে ধরল এবং বিচারাসনের সামনে তাকে প্রহার করতে লাগল।”—প্রেরিত ১৮:১৭.

১৫ এই সমস্ত দেখে গাল্লিয়ো কেন সেই জনতাকে বাধা দেননি? গাল্লিয়ো হয়তো মনে করেছিলেন, সোস্থিনী হল সেই ব্যক্তি যে জনতাকে পৌলের বিরুদ্ধে উসকে ছিল আর এখন সে তার কাজের পরিণতি ভোগ করছে। সোস্থিনী সত্যিই এই কাজ করেছিলেন কি না আমরা তা জানি না, কিন্তু এমনটা মনে হয় এর ফলাফল ভালো হয়েছিল। কয়েক বছর পর, যখন পৌল করিন্থ মণ্ডলীকে তার প্রথম চিঠি লেখেন, তখন সেই চিঠিতে সোস্থিনী নামে একজন ভাইয়ের বিষয়ে উল্লেখ করেন। (১ করি. ১:১, ২) ইনি কি সেই সোস্থিনী, যাকে জনতা মারধর করেছিল? যদি তা-ই হয়, তা হলে হয়তো সেই দুঃখজনক ঘটনার পর সোস্থিনী একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন।

১৬. যিশু পৌলকে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কোন উৎসাহ লাভ করি?

১৬ মনে করে দেখুন, যখন যিহুদিরা পৌলের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন প্রভু যিশু তাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, “ভয় পেয়ো না, বরং কথা বলতে থাকো আর থেমে যেয়ো না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (প্রেরিত ১৮:৯, ১০) আমাদেরও যিশুর এই কথাগুলো মনে রাখা উচিত, বিশেষ করে সেই সময়ে যখন লোকেরা আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। কখনো ভুলে যাবেন না, যিহোবা লোকদের হৃদয় পড়তে পারেন এবং সৎ হৃদয়ের ব্যক্তিদের তাঁর প্রতি আকর্ষণ করতে পারেন। (১ শমূ. ১৬:৭; যোহন ৬:৪৪) এখান থেকে আমরা কোন উৎসাহ লাভ করি? আমরা যেন ক্রমাগত প্রচার কাজ করে চলি। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেয় অর্থাৎ দিনে প্রায় শত শত লোক। যিশু আজ্ঞা দিয়েছিলেন, “তোমরা সমস্ত জাতির লোকদের শিষ্য করো।” যারা এই আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখায়, তিনি তাদের এই নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, “এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময় পর্যন্ত আমি সবসময় তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৮:১৯, ২০.

“যদি যিহোবার ইচ্ছা হয়” (প্রেরিত ১৮:১৮-২২)

১৭, ১৮. কিংক্রিয়া ছাড়ার সময়ে পৌলের কোন বিষয় মনে পড়েছিল?

১৭ এরপর করিন্থের সেই নতুন মণ্ডলী শান্তিতে উপাসনা করতে থাকল। এর কারণ কি এই ছিল যে, গাল্লিয়ো প্রেরিত পৌলের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন? আমরা তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। তবে বিবরণ জানায়, পৌল করিন্থের ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে “আরও বেশ কিছুদিন” সেখানে থাকেন। এরপর, ৫২ খ্রিস্টাব্দের বসন্তকালে তিনি কিংক্রিয়া বন্দর থেকে সিরিয়া যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। এই বন্দর করিন্থের পূর্ব দিকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু, “কিংক্রিয়াতে থাকাকালীন তিনি [পৌল] তার চুল ছেঁটে একেবারে ছোটো করে ফেললেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের কাছে একটা অঙ্গীকার করেছিলেন।”c (প্রেরিত ১৮:১৮) পৌলের সঙ্গে আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লা ছিলেন এবং তারাও ঈজিয়ান সাগর পার করে এশিয়া মাইনরের ইফিষে এসে পৌঁছান।

১৮ কিংক্রিয়া ছেড়ে আসার সময় পৌল নিশ্চয়ই করিন্থের ঘটনাগুলো নিয়ে চিন্তা করছিলেন। তার কাছে অবশ্যই অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি ছিল এবং আনন্দে থাকার জন্য অনেক কারণও ছিল। তিনি সেখানে প্রায় ১৮ মাস প্রচার করেছিলেন আর তার দারুণ ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। করিন্থে একটা নতুন মণ্ডলী গঠিত হয়, যারা যুষ্টের বাড়িতে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হত। সেই মণ্ডলীতে যুষ্ট, ক্রীষ্প এবং তার বাড়ির লোকেরা সেই সঙ্গে অন্যান্য লোকেরাও ছিল। পৌল এই নতুন ব্যক্তিদের খুব ভালোবাসতেন কারণ তিনি তাদের খ্রিস্টান হওয়ার জন্য সাহায্য করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি তাদের একটা চিঠির মাধ্যমে বলেন যে, তোমরা আমার কাছে সেই সুপারিশ করা চিঠির মতো, যা আমার হৃদয়ে খোদাই করে লেখা আছে। পৌলের মতো আমরাও যাদের সত্য শেখাই, তাদের খুব ভালোবাসি। আর এই ব্যক্তিরা আমাদের কাছে সেই ‘সুপারিশ করা চিঠির’ মতো যাদের দেখে আমরা কতই-না আনন্দিত হই!—২ করি. ৩:১-৩.

১৯, ২০. (ক) ইফিষ পৌঁছানোর পর পরই পৌল কী করেছিলেন? (খ) আমরা যদি ঈশ্বরের সেবায় আরও বেশি কিছু করতে চাই, তা হলে পৌলের মতো আমাদের কী করা উচিত?

১৯ ইফিষ পৌঁছানোর পরেই পৌল প্রচার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি “সমাজগৃহে গিয়ে যিহুদিদের সঙ্গে যুক্তিতর্ক করলেন।” (প্রেরিত ১৮:১৯) তবে, তিনি খুব বেশি দিন ইফিষে থাকেননি। যদিও সেখানকার লোকেরা তাকে সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু “তিনি তাতে রাজি হলেন না।” তিনি তাদের এই বলে বিদায় নেন, “যদি যিহোবার ইচ্ছা হয়, তা হলে আমি আবার তোমাদের কাছে ফিরে আসব।” (প্রেরিত ১৮:২০, ২১) পৌল জানতেন, ইফিষে আরও অনেক ব্যক্তির কাছে প্রচার করা বাকি রয়েছে। সেইজন্য তিনি এখানে আবারও আসার পরিকল্পনা করেন ঠিকই, তবে সেটা যিহোবার হাতে ছেড়ে দেন। পৌল আমাদের কাছে এক উত্তম উদাহরণ। ঈশ্বরের সেবায় আরও বেশি কিছু করার জন্য আমাদের নিজে থেকে অবশ্যই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে, এর পাশাপাশি আমাদের যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা চাইতে হবে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।—যাকোব ৪:১৫.

২০ পৌল আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লাকে ইফিষে ছেড়ে সমুদ্রপথে কৈসরিয়াতে আসেন। এরপর, তিনি কৈসরিয়া থেকে “জেরুসালেমে গিয়ে” সেখানকার মণ্ডলীর ভাইদের সঙ্গে দেখা করেন। (প্রেরিত ১৮:২২) পরে তিনি সেখান থেকে সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় চলে যান, যেখান থেকে তিনি তার প্রতিটা মিশনারি যাত্রা শুরু করতেন। এভাবে তিনি তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করেন। এবার তার তৃতীয় এবং শেষ মিশনারি যাত্রা কেমন হতে যাচ্ছে? এই বিষয়ে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে দেখব।

পৌলের অঙ্গীকার

প্রেরিত ১৮:১৮ পদ বলে, পৌল যখন কিংক্রিয়াতে ছিলেন, তখন “তিনি তার চুল ছেঁটে একেবারে ছোটো করে ফেললেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের কাছে একটা অঙ্গীকার করেছিলেন।” এটা কোন ধরনের অঙ্গীকার ছিল?

সাধারণত অঙ্গীকার করার মানে হল, ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করা। একজন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছায় ঈশ্বরের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি তাঁর সেবায় একটা নির্দিষ্ট কাজ করবেন, তাঁর কাছে একটা নির্দিষ্ট বলি উৎসর্গ করবেন কিংবা কোনো বিশেষ উপায়ে তাঁকে সেবা করবেন। কেউ কেউ বলে যে, পৌল নাসরীয় হওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন আর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করার পরই তার চুল কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু, শাস্ত্র অনুযায়ী যখন একজন নাসরীয় তার অঙ্গীকার পূর্ণ করতেন, তখন “সমাগম-তাম্বুর দ্বারে” তাকে তার মাথার সব চুল কেটে ফেলতে হত। এই অঙ্গীকার শুধুমাত্র জেরুসালেমেই পূর্ণ করা যেত, কিন্তু পৌল যেখানে ছিলেন, সেই কিংক্রিয়াতে কখনোই পূর্ণ করা যেত না। সেইজন্য আমরা বলতে পারি, পৌল নাসরীয় হওয়ার কোনো অঙ্গীকার করেননি।—গণনা. ৬:৫, ১৮.

পৌল কখন তার অঙ্গীকার করেছিলেন, সেই বিষয়ে প্রেরিত বই আমাদের কিছু জানায় না। হতে পারে, তিনি খ্রিস্টান হওয়ার আগে এই অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রেরিত বই আমাদের এটাও জানায় না যে, এই অঙ্গীকার করার সময় পৌল যিহোবার কাছে তার কোনো বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন কি না। তবে একটা বই জানায়, পৌল তার চুল কেটে ফেলার মাধ্যমে হয়তো এটা দেখাচ্ছিলেন যে, “তিনি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ তিনি তাকে রক্ষা করেছেন আর তাই, তিনি করিন্থে তার পরিচর্যা সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।”

a “করিন্থ—দুই সমুদ্রের মাঝে এক নগর” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b “পৌলের চিঠিগুলো উৎসাহিত করে” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

c “পৌলের অঙ্গীকার” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার