ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • bt অধ্যায় ২৩ পৃষ্ঠা ১৮১-১৮৮
  • “আমি আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি, শুনুন”

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • “আমি আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি, শুনুন”
  • ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “তারা ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন” (প্রেরিত ২১:১৮-২০ক)
  • তারা এখনও “উদ্যোগের সঙ্গে ব্যবস্থা পালন করে” (প্রেরিত ২১:২০খ, ২১)
  • “যে-সমস্ত গুজব শুনেছে, সেগুলো মিথ্যা” (প্রেরিত ২১:২২-২৬)
  • “ও বেঁচে থাকার যোগ্য নয়!” (প্রেরিত ২১:২৭–২২:৩০)
  • “আমি একজন ফরীশী” (প্রেরিত ২৩:১-১০)
  • উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করা
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৬
  • পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
    ২০০৫ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • প্রাথমিক খ্রিস্টান এবং মোশির ব্যবস্থা
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • সাহসী হোন—যিহোবা আপনার সাহায্যকারী
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
আরও দেখুন
ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়া’!
bt অধ্যায় ২৩ পৃষ্ঠা ১৮১-১৮৮

অধ্যায় ২৩

“আমি আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি, শুনুন”

উত্তেজিত জনতা এবং মহাসভার সামনে পৌল নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করেন

প্রেরিত ২১:১৮–২৩:১০ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. প্রেরিত পৌল জেরুসালেমে কেন এসেছিলেন আর সেখানে তিনি কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন?

প্রেরিত পৌল আবারও একবার জেরুসালেমে রয়েছেন আর সেখানকার সরু গলি দিয়ে হেঁটে চলেছেন। সব সময়ের মতো সেখানে হইচই হচ্ছে। জেরুসালেম হল পৃথিবীর সমস্ত নগরের তুলনায় এক বিশেষ নগর। কারণ বছরের পর বছর ধরে এই নগরটা যিহোবার উপাসনা করার এক বিশেষ স্থান হয়ে এসেছে। এখানকার বেশিরভাগ লোক সেই পুরোনো দিনের কথা মনে করে নিজের নগরের জন্য গর্ব করে। পৌল জানতেন যে, কিছু যিহুদি খ্রিস্টানও একইরকম অনুভব করে। তাদের জন্য এটা মেনে নেওয়া কঠিন যে, মোশির ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে আর যিহোবা উপাসনা করার জন্য তাদের এক নতুন ব্যবস্থা দিয়েছেন। তাই, পৌল যখন ইফিষ থেকে জেরুসালেমে আসেন, তখন তার দুটো উদ্দেশ্য ছিল। একটা হল, ভাই-বোনদের কাছে দান পৌঁছে দিয়ে তাদের সাহায্য করা আর দ্বিতীয়টা হল, তাদের চিন্তাভাবনা সংশোধন করা। (প্রেরিত ১৯:২১) তিনি জানতেন, জেরুসালেমে যাওয়া তার জন্য সত্যিই বিপদজনক। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তিনি ভাই-বোনদের সাহায্য করার জন্য এখানে আসেন।

২ পৌল কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হন? একটা সমস্যা তো মণ্ডলীর ভিতর থেকেই আসে। কিছু ভাই পৌলের বিষয়ে গুজব শুনেছিল আর তাই তারা চিন্তিত। কিন্তু, এর থেকেও বড়ো সমস্যা খ্রিস্টের শত্রুদের কাছ থেকে আসে। তারা পৌলের উপর মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসে, তাকে মারধর করে এবং হত্যা করারও চেষ্টা করে। সেই সময় পৌল সত্যের পক্ষ সমর্থন করারও সুযোগ পান। পৌল যেভাবে সাহস, বিশ্বাস এবং নম্রতা সহকারে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করেন, সেখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।

“তারা ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন” (প্রেরিত ২১:১৮-২০ক)

৩-৫. (ক) জেরুসালেমে পৌল কাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন আর তিনি তাদের সঙ্গে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন? (খ) পৌলের মতো বর্তমানে আমরাও কী কী করতে পারি?

৩ জেরুসালেমে পৌঁছানোর পরের দিনই পৌল এবং তার সঙ্গীরা জেরুসালেমের প্রাচীনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যান। সেখানে একটা সভা হয় আর পৌল এবং “সমস্ত প্রাচীন সেখানে উপস্থিত” থাকেন। (প্রেরিত ২১:১৮) এই বিবরণে প্রেরিতদের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এর কারণ হতে পারে, তারা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় গিয়ে সেবা করছিলেন। কিন্তু, যিশুর ভাই যাকোব এখনও জেরুসালেমে রয়েছেন। (গালা. ২:৯) এমনটা মনে করা হয়, তিনিই ছিলেন সেই সভার সভাপতি।

৪ পৌল সেই প্রাচীনদের সম্ভাষণ জানান “এবং তার পরিচর্যার মাধ্যমে ঈশ্বর ন-যিহুদিদের মধ্যে যা যা করেছেন, সেগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা” করেন। (প্রেরিত ২১:১৯) পৌলের কথাগুলো শুনে সেই ভাইয়েরা নিশ্চয়ই খুব খুশি হয়েছিলেন। বর্তমানে, আমরাও যখন শুনি অন্যান্য দেশে কীভাবে প্রচার কাজে উন্নতি হচ্ছে, তখন আমরাও অনেক খুশি হই।—হিতো. ২৫:২৫.

৫ পৌল নিশ্চয়ই সেই প্রাচীনদের বলেছিলেন যে, তিনি ইউরোপ থেকে দান নিয়ে এসেছেন। এই বিষয়টা সেই প্রাচীনদের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল যে, ভাই-বোনেরা অনেক দূর থেকে তাদের সাহায্য পাঠিয়েছে, যারা এমনকী তাদের চেনেও না। পৌলের কাছ থেকে এই সমস্ত কথা শুনে “তারা [প্রাচীনেরা] ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন।” (প্রেরিত ২১:২০ক) পৌল এবং জেরুসালেমের প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? বর্তমানেও খ্রিস্টানেরা যখন কোনো দুর্যোগের শিকার হয় অথবা গুরুতর অসুস্থ হয়, তখন ভাই-বোনেরা দ্রুত তাদের সাহায্য করে। তারা সেই খ্রিস্টানদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেয় এবং নিজেদের কথার দ্বারা তাদের উৎসাহিত করে। ভাই-বোনদের এই প্রেম দেখে সেই খ্রিস্টানেরা অনেক খুশি হয় এবং তাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যায়।

তারা এখনও “উদ্যোগের সঙ্গে ব্যবস্থা পালন করে” (প্রেরিত ২১:২০খ, ২১)

৬. পৌলের বিষয়ে কোন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল?

৬ এখন প্রাচীনেরা পৌলকে জানান, যিহুদিয়ায় তার সম্বন্ধে গুজব শোনা যাচ্ছে। তারা তাকে বলেন: “ভাই, তুমি দেখতে পাচ্ছ, যিহুদিদের মধ্যে হাজার হাজার ব্যক্তি যিশুর অনুসারী হয়েছে আর তারা সকলে উদ্যোগের সঙ্গে ব্যবস্থা পালন করে। কিন্তু, তারা তোমার বিষয়ে এই গুজব শুনেছে যে, তুমি ন-যিহুদিদের মধ্যে বসবাসকারী সমস্ত যিহুদিকে মোশির ব্যবস্থা পরিত্যাগ করতে শিক্ষা দিচ্ছ, তাদের সন্তানদের ত্বকচ্ছেদ না করাতে অথবা পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন না করতে বলছ।”a—প্রেরিত ২১:২০খ, ২১.

৭, ৮. (ক) অনেক যিহুদি খ্রিস্টান কী মনে করেছিল? (খ) এর মানে কি এই যে, তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না? ব্যাখ্যা করুন।

৭ মোশির ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর, প্রায় ২০ বছর কেটে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও, কেন বেশিরভাগ খ্রিস্টান মোশির ব্যবস্থা পালন করার ক্ষেত্রে একগুঁয়ে মনোভাব দেখিয়েছিল? (কল. ২:১৪) ৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত ও প্রাচীনেরা জেরুসালেমে একটা সভা রেখেছিলেন। এরপর সমস্ত মণ্ডলীকে একটা চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের ত্বকচ্ছেদ করার এবং মোশির ব্যবস্থা পালন করার প্রয়োজন নেই। (প্রেরিত ১৫:২৩-২৯) কিন্তু, সেই চিঠিতে যিহুদি খ্রিস্টানদের জন্য কোনো কিছু লেখা ছিল না। তাই, বেশিরভাগ যিহুদি খ্রিস্টান এটা মনে করেছিল যে, তাদের এখনও মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে।

৮ এই যিহুদি খ্রিস্টানদের চিন্তাভাবনা ভুল ছিল। এর মানে কি এই যে, তারা যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। বিষয়টা এইরকম নয়। তারা আগেও মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করত না এবং উপাসনার সঙ্গে যুক্ত রীতিনীতি পালন করত না আর তারা এখনও তা করছে না। তারা শুধুমাত্র সেই নিয়মই পালন করছিল, যেটা যিহোবা তাদের দিয়েছিলেন। সেই নিয়মে কোনো ভুল ছিল না আর এর সঙ্গে কোনো মন্দ স্বর্গদূতও জড়িত ছিল না। তবে, এই নিয়ম সেই সময় দেওয়া হয়েছিল, যখন তারা পুরোনো চুক্তির অধীনে ছিল। কিন্তু, খ্রিস্টানেরা এখন নতুন চুক্তির অধীনে রয়েছে। এর মানে হল, এখন তাদের আর মোশির নিয়ম অনুসারে উপাসনা করার প্রয়োজন নেই বরং যিহোবা উপাসনা করার যে-নতুন নিয়ম দিয়েছিলেন, সেটা মানতে হত। এই বিষয়টাই যিহুদি খ্রিস্টানেরা ভালোভাবে বুঝতে পারছিল না। তাই, তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা সংশোধন করতে হত।b—যির. ৩১:৩১-৩৪; লূক ২২:২০.

“যে-সমস্ত গুজব শুনেছে, সেগুলো মিথ্যা” (প্রেরিত ২১:২২-২৬)

৯. পৌল মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে কী শিখিয়েছিলেন?

৯ পৌলের বিষয়ে যে-গুজব রটানো হয়েছিল, সেটা কি সঠিক ছিল? পৌল কি সত্যিই অন্যান্য দেশে বসবাসকারী যিহুদিদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে, “তারা তাদের সন্তানদের ত্বকচ্ছেদ করাবে না আর এমনকি পরম্পরাগত রীতিনীতিও পালন করবে না”? পৌলকে ন-যিহুদিদের কাছে প্রচার করার জন্য প্রেরিত হিসেবে বাছাই করা হয়েছিল। তিনি সবসময় এটাই শিক্ষা দিয়ে এসেছেন যে, পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের মোশির ব্যবস্থা পালন করার প্রয়োজন নেই। তিনি সেই ব্যক্তিদের ভুল বলে প্রমাণ করেন, যারা মোশির ব্যবস্থা পালন করার এবং ত্বকচ্ছেদ করার বিষয়ে ন-যিহুদিদের জোর করেছিল। (গালা. ৫:১-৭) পৌল যে-সব নগরগুলোতে প্রচার করেছিলেন, সেখানে ন-যিহুদিদের সঙ্গে সঙ্গে যিহুদিদের কাছেও প্রচার করেছিলেন। সৎ হৃদয়ের যিহুদিদের তিনি নিশ্চয়ই এটা বোঝান যে, যিশুর মৃত্যুতে মোশির ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গিয়েছে। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক হওয়ার জন্য তাদের মোশির ব্যবস্থা পালন করার প্রয়োজন নেই।—রোমীয় ২:২৮, ২৯; ৩:২১-২৬.

১০. মোশির ব্যবস্থা পালন করার ক্ষেত্রে এবং ত্বকচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে কীভাবে পৌল অন্যদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন?

১০ কিন্তু, কিছু খ্রিস্টানের এখনও মনে হচ্ছিল যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে। যেমন, বিশ্রামবার পালন করা কিংবা কিছু খাবারদাবার থেকে দূরে থাকা। (রোমীয় ১৪:১-৬) পৌল তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন এবং এগুলো পালন করার ক্ষেত্রে বাধা দেননি। শুধু তা-ই নয়, ত্বকচ্ছেদ করার বা না করার বিষয়ে পৌল কোনো নিয়ম তৈরি করেননি। একটা সময় পৌল নিজে তীমথিয়কে ত্বকচ্ছেদ করতে বলেছিলেন। আসলে পৌল চাননি সেই যিহুদিরা বিঘ্ন পাক, যারা জানত যে, তীমথিয়ের বাবা একজন গ্রিক। (প্রেরিত ১৬:৩) তারপরও একজন ব্যক্তি ত্বকচ্ছেদ করবেন কি করবেন না, তা তাকে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হত। পৌল গালাতীয়দের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “ত্বকচ্ছেদ করানোর কিংবা না করানোর কোনো মূল্যই নেই, বরং যে-বিশ্বাস ভালোবাসার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, সেটার মূল্য রয়েছে।” (গালা. ৫:৬) কিন্তু, কোনো খ্রিস্টান যদি মনে করেন যে, ত্বকচ্ছেদ করলেই তিনি ব্যবস্থার অধীনে থাকতে পারবেন কিংবা ঈশ্বরকে খুশি করতে পারবেন, তা হলে এটা ভুল। আর এটা দেখায় যে, তার বিশ্বাসের অভাব রয়েছে।

১১. (ক) প্রাচীনেরা পৌলকে কী করতে বলেছিলেন? (খ) তাদের কথা মেনে চলার সময় পৌল কোন বিষয়টা খেয়াল রেখেছিলেন? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

১১ যদিও পৌল সম্বন্ধে যে-গুজব ছড়ানো হয়েছিল, তা মিথ্যা ছিল, তারপরও কিছু যিহুদি খ্রিস্টান তা শুনে বিঘ্ন পায় এবং চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই, জেরুসালেমের প্রাচীনেরা পৌলকে বলেন: “আমাদের মধ্যে এমন চার জন পুরুষ রয়েছে, যারা ঈশ্বরের কাছে অঙ্গীকার করেছে। তুমি এই লোকদের তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও এবং তাদের সঙ্গে নিজেকেও রীতিগতভাবে শুচি করো আর তাদের খরচ বহন করো, যাতে তারা তাদের মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে পারে। তা হলে, সকলে জানতে পারবে, তোমার বিষয়ে তারা যে-সমস্ত গুজব শুনেছে, সেগুলো মিথ্যা, বরং তুমি সঠিকভাবে চলছ এবং ব্যবস্থাও পালন করছ।”c—প্রেরিত ২১:২৩, ২৪.

১২. কীভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে, তিনি মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন?

১২ পৌল চাইলে প্রাচীনদের কথা না-ও মানতে পারতেন। তিনি তাদের বলতে পারতেন, যিহুদি খ্রিস্টানদের সমস্যার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। কারণ তারা মোশির ব্যবস্থা পালন করার জন্য জেদ ধরে বসে আছে। কিন্তু, তারপরও তিনি জানতেন যে, প্রাচীনেরা তাকে যেটা করতে বলছেন, সেটা ঈশ্বরের নীতির বিরুদ্ধে নয়। কিছু সময় আগে পৌল নিজে লিখেছিলেন: “আইনের অধীনে না থাকা সত্ত্বেও, আইনের অধীনে থাকা লোকদের কাছে, আইনের অধীনে থাকা লোকের মতো হয়েছি, যেন তাদের লাভ করতে পারি।” (১ করি. ৯:২০) তাই, তিনি নিজেকে নত করেন এবং প্রাচীনদের কথা মেনে নেন। এভাবে তিনি নিজেকে “আইনের অধীনে” করেন। পৌল আমাদের জন্য কতই-না ভালো এক উদাহরণ রেখেছেন! প্রাচীনেরা যদি আমাদের এমন কিছু করতে বলেন, যেটা বাইবেলের বিরুদ্ধে নয়, তা হলে আমরা তাদের কথা শুনতে পারি।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

কোলাজ: ১. পৌল জেরুসালেমের প্রাচীনদের নির্দেশনাগুলো শুনছেন। ২. বর্তমানে প্রাচীনদের এক সভায় একজন প্রাচীন লক্ষ করেন যে, বাকি প্রাচীনেরাও তাদের হাত তুলেছেন।

কোনো বিষয় যদি বাইবেলের নীতির বিরুদ্ধে না হয়, তা হলে আপনিও কি পৌলের মতো তা মেনে নেবেন?

রোমীয় আইন এবং রোমীয় নাগরিক

রোম সাম্রাজ্যের অধীনে যে-প্রদেশগুলো ছিল, তাদের নিজেদের সরকার চালানোর স্বাধীনতা ছিল। এই বিষয়ে রোমীয় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করত না। যিহুদিদের বেশিরভাগ মামলাগুলো তারা নিজেরাই নিজেদের আইন অনুযায়ী বিচার করত। তা হলে, পৌলের মামলার ক্ষেত্রে কেন রোমীয় সরকার বিচার করেছিল? এর কারণ হল, পৌলকে দেখে নগরের লোকেরা এতটাই উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল যে, সেই নগরের শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারত।

যাদের কাছে রোমীয় নাগরিকত্ব থাকত না, তাদের উপর রোমীয় আধিকারিকেরা জোর ফলাত। কিন্তু, যাদের কাছে রোমীয় নাগরিকত্ব থাকত, তাদের তারা বেশি জোর ফলাত না।f রোমীয় নাগরিকদের কিছু বিশেষ অধিকার দেওয়া হত আর এই অধিকারকে পুরো রোমীয় সাম্রাজ্যে গুরুত্ব দেওয়া হত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যতক্ষণ না কোনো রোমীয় নাগরিকের দোষ প্রমাণ হত, ততক্ষণ তাকে মারধর করা কিংবা বন্দি করা বেআইনি ছিল। শুধুমাত্র দাস-দাসীদের সঙ্গেই এইরকমটা করা হত। রোমীয় নাগরিকদের কাছে আরেকটা অধিকার ছিল আর সেটা হল তাদের যদি মনে হয় যে, তারা যেখানে থাকে সেই রাজ্যপাল মামলার সঠিক বিচার করেননি, তা হলে তারা রোমীয় সম্রাটের কাছে আপিল করতে পারে।

রোমীয় নাগরিকত্ব বিভিন্ন উপায়ে পাওয়া যেত। যেমন একটা হল, উত্তরাধিকার সূত্রে। আরেকটা হল, কখনো কখনো রোমীয় সম্রাট কোনো ব্যক্তিকে কিংবা সমস্ত নগর ও জেলার লোকদের পুরস্কার হিসেবে রোমীয় নাগরিকত্ব দিতেন। এ ছাড়া, সেই দাসদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হত, যারা তাদের রোমীয় মালিককে টাকাপয়সা দিয়ে বন্দিত্ব থেকে ছাড়া পেত অথবা রোমীয় মালিকেরা নিজেরাই তাদের দাসদের মুক্ত করে দিত। সেইসঙ্গে রোমীয় নয় এমন একজন সৈন্য যখন সেনাবাহিনীতে তার কাজ সম্পন্ন করত, তখন তাকেও রোমীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হত। আবার কিছু পরিস্থিতিতে, রোমীয় নাগরিকত্ব কেনাও যেত। এই কারণেই, সেনাপতি ক্লোদিয় লুষিয় বলেন: “‘আমি এই নাগরিকত্ব প্রচুর অর্থ দিয়ে কিনেছি।’ তখন পৌল বললেন: ‘কিন্তু, আমি জন্মসূত্রেই রোমীয়।’” (প্রেরিত ২২:২৮) এর থেকে বোঝা যায়, পৌলের কোনো বংশধর রোমীয় নাগরিকত্ব পেয়েছিল এবং তার থেকেই পৌল জন্মসূত্রেই নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তার বংশধর, কবে এবং কীভাবে এই নাগরিকত্ব পেয়েছে এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

f প্রথম শতাব্দীতে যিহুদিয়ায় বসবাসকারী খুব কম লোকের কাছেই রোমীয় নাগরিকত্ব ছিল। কিন্তু, তৃতীয় শতাব্দী আসার আগেই রোমীয় প্রদেশে থাকা সমস্ত লোককে রোমীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল।

“ও বেঁচে থাকার যোগ্য নয়!” (প্রেরিত ২১:২৭–২২:৩০)

১৩. (ক) কেন কিছু যিহুদি মন্দিরে গণ্ডগোল করেছিল? (খ) কীভাবে পৌল রক্ষা পেয়েছিলেন?

১৩ পৌল সেই চার জন পুরুষকে নিয়ে জেরুসালেম মন্দিরে আসেন। অঙ্গীকারের দিন শেষ হতে চলেছে। তখন এশিয়া থেকে আসা যিহুদিরা পৌলকে দেখতে পায়। তারা পৌলকে হত্যা করতে চায়। তাই, তারা জেনে শুনে গণ্ডগোল শুরু করে দেয় আর তার উপর অভিযোগ নিয়ে আসে যে, তিনি ন-যিহুদিদের মন্দিরে এনে মন্দির অশুচি করেছেন। তারা লোকদের উসকে দেয় এবং সবাই মিলে পৌলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখনই একজন রোমীয় সেনাপতি পৌলকে রক্ষা করেন, নাহলে তারা তাকে মেরেই ফেলত। তিনি তাকে তার হেফাজতে নেন। এরপর পৌলকে প্রায় চার বছর বন্দি অবস্থায় থাকতে হবে। যখন গণ্ডগোল শুরু হয়, তখন সেই সেনাপতি যিহুদিদের জিজ্ঞেস করে, ‘কেন তারা পৌলকে মারধর করছে?’ উত্তরে জনতা চেঁচিয়ে ওঠে। তারা এক একজন একেক রকম অভিযোগ করতে থাকে। এই চ্যাঁচামেচির মধ্যে সেনাপতি কিছুই বুঝতে পারেন না। সেই জনতা এতটা হিংস্র হয়ে উঠে যে, সৈন্যদের পৌলকে তুলে নিয়ে যেতে হয়। তখন পৌল সেনাপতিকে বলেন: “আমি আপনার কাছে বিনতি করছি, আমাকে এই লোকদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিন।” (প্রেরিত ২১:৩৯) সেনাপতি তাকে অনুমতি দেন আর পৌল সাহসের সঙ্গে তার বিশ্বাসের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।

১৪, ১৫. (ক) পৌল যিহুদিদের কী বলেছিলেন? (খ) যিহুদিরা কেন রেগে গিয়েছিল, তা জানার জন্য রোমীয় সেনাপতি কী করেছিলেন?

১৪ পৌল নিজের কথা এভাবে শুরু করেন: “এখন আমি আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি, শুনুন।” (প্রেরিত ২২:১) তিনি ইব্রীয় ভাষায় কথা বলেন, তাই জনতা শান্ত হয়ে যায়। তিনি স্পষ্টভাবে তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেন যে, কেন তিনি খ্রিস্টের একজন শিষ্য হয়েছেন। তিনি সেই যিহুদিদের খুবই কৌশলতার সঙ্গে এমন কিছু বলেন, যা সঠিক কি না তা তারা নিজেরাই যাচাই করে দেখতে পারত। পৌল আরও বলেন, তিনি মহান শিক্ষক গমলীয়েলের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন এবং প্রথমে তিনি খ্রিস্টের শিষ্যদের তাড়না করতেন। এই বিষয়টা সেই জনতার মধ্যে হয়তো কিছু জন জানে। পরে পৌল আরও বলেন, একবার তিনি যখন তার সঙ্গীদের সঙ্গে দামেস্কে যাচ্ছিলেন, তখন রাস্তায় পুনরুত্থিত যিশু তাকে দেখা দেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেন। পৌলের সঙ্গীরাও একটা উজ্জ্বল আলো দেখতে পায় এবং এক কণ্ঠস্বরও শুনতে পায়। কিন্তু, তারা বুঝতে পারে না যে, সেই কণ্ঠস্বর কী বলছে। (প্রেরিত ৯:৭; ২২:৯) পরে, পৌলের সঙ্গীরা তার হাত ধরে দামেস্কে নিয়ে যায় কারণ দর্শনের ফলে পৌল অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। দামেস্কে অননিয় নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে সেখানকার যিহুদিরা চিনত। তিনি অলৌকিকভাবে পৌলের চোখ ঠিক করে দিয়েছিলেন।

১৫ পৌল আরও বলেন, তিনি যখন জেরুসালেমে ফিরে এসেছিলেন, তখন মন্দিরে যিশু তাকে দেখা দিয়েছিলেন। যিহুদি জনতা যখন এই বিষয়টা শোনে, তখন তারা রেগে লাল হয়ে যায়। তারা জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল: “ওকে পৃথিবী থেকে দূর করে দাও, কারণ ও বেঁচে থাকার যোগ্য নয়!” (প্রেরিত ২২:২২) সেনাপতি সঙ্গেসঙ্গে তার লোকদের আদেশ দেন যেন তারা পৌলকে সৈন্যদের থাকার জায়গায় নিয়ে যায়, তা নাহলে লোকেরা তাকে মেরে ফেলবে। সেনাপতি জানতে চান যে, যিহুদিরা পৌলের উপর কেন এত রেগে রয়েছে। তাই, তিনি তার লোকদের আদেশ দেন যেন তারা পৌলকে চাবুক মেরে জেরা করে। কিন্তু পৌল তাদের বলেন, তিনি একজন রোমীয় নাগরিক। এভাবে তিনি আইনের সাহায্য নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। বর্তমানেও, যিহোবার উপাসকেরা নিজেদের বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করার জন্য নিজের দেশের আইনের সাহায্য নেয়। (“রোমীয় আইন এবং রোমীয় নাগরিক” এবং “বর্তমানে আইনি লড়াই” শিরোনামের বাক্সগুলো দেখুন।) সেনাপতি যখনই জানতে পারেন পৌল একজন রোমীয় নাগরিক, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, তাকে জেরা করার জন্য অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তাই, পরের দিন তিনি তাকে মহাসভায় অর্থাৎ যিহুদিদের সবচেয়ে বড়ো আদালতের সামনে হাজির করেন, যেন সেই মামলার বিচার হয়।

বর্তমান দিনে আইনি লড়াই

বর্তমান দিনে বেশ কিছু দেশে যখন প্রচার কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তখন যিহোবার সাক্ষিরা পৌলের মতো আইনের সাহায্য নিয়েছে। তারা “সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করার আর তা প্রচার করার বৈধ অধিকার লাভ করার” জন্য অনেক কিছু করেছে।—ফিলি. ১:৭.

১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে শত শত যিহোবার সাক্ষিকে বাইবেলভিত্তিক সাহিত্যাদি বিতরণ করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯২৬ সাল পর্যন্ত জার্মানির আদালতে ৮৯৭টা মামলা চলছিল। সাক্ষিদের এই মামলাগুলো লড়ার জন্য জার্মানির শাখা অফিসে একটা আইনি বিভাগ তৈরি করা হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রতি বছর ঘরে ঘরে প্রচার করার জন্য অনেক যিহোবার সাক্ষিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১৯৩৬ সালে ১,১৪৯ জন ভাই-বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমেরিকার ভাইদের আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য সেখানেও একটা আইনি বিভাগ তৈরি করা হয়। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ মধ্যে রোমানীয়াতে সাক্ষিদের বিরুদ্ধে ৫৩০টা মামলা চলছিল। কিন্তু, সাক্ষিরা যখন রোমানিয়ার হাইকোর্টে আপিল করে, তখন বেশিরভাগ মামলার রায় তাদের পক্ষে গিয়েছিল। অন্যান্য অনেক দেশেও সাক্ষিদের একইরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

নিরপেক্ষ থাকার জন্যও সাক্ষিদের অনেক আইনি লড়াই করতে হয়েছে। (যিশা. ২:২-৪; যোহন ১৭:১৪) বিরোধীরা তাদের উপর দেশদ্রোহী হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছে আর এমনকী অনেক বার তাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু, বিগত কয়েক বছর ধরে অনেক সরকার এটা মেনে নিয়েছে যে, যিহোবার সাক্ষিরা দেশের জন্য বিপদজনক নয়।g

g যিহোবার সাক্ষিরা অনেক দেশে আইনি লড়াই জিতেছে। এই বিষয়ে আরও জানার জন্য ঈশ্বরের রাজ্য শাসন করছে! (ইংরেজি) বইয়ের ১৫ অধ্যায় এবং যিহোবার সাক্ষিরা—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) বইয়ের ৩০ অধ্যায় পড়ুন।

“আমি একজন ফরীশী” (প্রেরিত ২৩:১-১০)

১৬, ১৭. (ক) পৌল যখন মহাসভার সামনে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, তখন কী ঘটেছিল? (খ) কীভাবে পৌল নম্র হওয়ার উদাহরণ রেখেছিলেন?

১৬ পৌল মহাসভার সামনে নিজের পক্ষ সমর্থন করে বলতে শুরু করেন: “ভাইয়েরা, আমি এই পর্যন্ত ঈশ্বরের সামনে পুরোপুরি শুদ্ধ বিবেক সহকারে জীবনযাপন করে আসছি।” (প্রেরিত ২৩:১) পৌল আর কিছু বলার আগেই, “মহাযাজক অননিয়, যারা পৌলের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের আদেশ দিলেন, যেন তারা পৌলের মুখে আঘাত করে।” (প্রেরিত ২৩:২) এটা পৌলের জন্য কতই-না বড়ো এক অপমান ছিল! মহাযাজকের মনে জমে থাকা ঘৃণা তার মুখে প্রকাশ পায়। এই কারণেই পৌলের সব কথা না শুনেই তিনি তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আর তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌল মহাযাজককে বলেন: “হে ভণ্ড, ঈশ্বর তোমাকে আঘাত করবেন। তুমি আমাকে ব্যবস্থা অনুযায়ী বিচার করতে বসেছ, অথচ আমাকে আঘাত করার আদেশ দিয়ে নিজেই ব্যবস্থা লঙ্ঘন করছ?”—প্রেরিত ২৩:৩.

১৭ সেখানে থাকা লোকেরা অবাক হয়ে যায়, তবে এই কারণে নয় যে, পৌলকে চড় মারা হয়েছে বরং এই কারণে যে, কীভাবে পৌল মহাযাজককে এই কথা বলতে পারেন। তারা পৌলকে বলে, “তুমি ঈশ্বরের মহাযাজককে অপমান করছ?” উত্তরে পৌল বললেন, “ভাইয়েরা, আমি জানতাম না, উনি মহাযাজক। কারণ লেখা আছে, ‘তুমি তোমার কোনো নেতাকে অপমানজনক কথা বলবে না।’”d (প্রেরিত ২৩:৪, ৫; যাত্রা. ২২:২৮) এভাবে পৌল নম্র হওয়ার এবং আইনের প্রতি বাধ্য থাকার উদাহরণ রেখেছিলেন। এরপর, পৌল তাদের সঙ্গে যুক্তি করার জন্য অন্য একটা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি জানতেন যে, মহাসভা সদ্দূকী ও ফরীশীদের নিয়ে গঠিত। তাই, তিনি তাদের বলেন: “ভাইয়েরা, আমি একজন ফরীশী এবং ফরীশীদের সন্তান। মৃতদের পুনরুত্থানে আমি বিশ্বাস করি বলে আমার বিচার করা হচ্ছে।”—প্রেরিত ২৩:৬.

একজন ভাই এক পাদরিকে তার বাইবেল থেকে একটা শাস্ত্রপদ খুলে দেখাচ্ছেন আর সেই পাদরি খুবই মনোযোগের সঙ্গে সেই পদটা পড়ছে।

অন্যান্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পৌলের মতো এমন বিষয় নিয়ে কথা বলুন, যাতে তারা কথা বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করে

১৮. (ক) কেন পৌল নিজেকে একজন ফরীশী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন? (খ) পৌল যে-পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন কীভাবে আমরা তা, প্রচারে ব্যবহার করতে পারি?

১৮ পৌল নিজেকে কেন একজন ফরীশী বলেছেন? তার পরিবার ফরীশী বংশ থেকে এসেছিল আর তাই, তিনি “ফরীশীদের সন্তান” ছিলেন। এই কারণে অনেক লোক তখনও তাকে ফরীশী হিসেবেই চিনত।e তবে, মৃত ব্যক্তিদের বেঁচে ওঠার বিষয়ে ফরীশীদের ভুল ধারণা ছিল। তারা বিশ্বাস করত, একজন ব্যক্তি মারা গেলে তার শরীরটা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু আত্মা বলে কিছু বেঁচে থাকে। আর যখন একজন ধার্মিক ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আত্মা বেরিয়ে অন্য আরেকটা শরীরে প্রবেশ করে। পৌল এগুলোকে বিশ্বাস করতেন না। তবে তিনি এটা জানতেন, ফরীশীরা অন্তত এটা বিশ্বাস করে যে, মানুষের মৃত্যুর পর সমস্ত কিছু শেষ হয়ে যায় না, কিন্তু অপর দিকে সদ্দূকীরা তো সেটাও বিশ্বাস করত না। সেইজন্য পৌল মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থানের বিষয় উল্লেখ করেন, যেমন যিশু শিক্ষা দিয়েছিলেন। (যোহন ৫:২৫-২৯) পৌলের এই পদ্ধতিটা আমরাও প্রচারে ব্যবহার করতে পারি। আমরা যখন অন্যান্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে কথা বলি, তখন তাদের আমরা বলতে পারি, তাদের মতো আমরাও ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। যদিও তারা আলাদা আলাদা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে আর আমরা বাইবেলে বলা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করি, তবে আমরা এই বিষয়ে একমত যে, একজন ঈশ্বর অবশ্যই আছেন।

১৯. কোন কথায় মহাসভায় ঝগড়া বেঁধে গিয়েছিল?

১৯ পৌলের কথায় মহাসভায় ঝগড়া বেঁধে যায়। শাস্ত্র বলে: “তখন প্রচণ্ড গণ্ডগোল শুরু হয়ে গেল আর ফরীশী দলের মধ্য থেকে কয়েক জন অধ্যাপক উঠে ভীষণ তর্ক জুড়ে দিল, বলল: ‘আমরা এই ব্যক্তির মধ্যে কোনো দোষই খুঁজে পাচ্ছি না, কিন্তু কোনো অদৃশ্য প্রাণী অথবা স্বর্গদূত যদি এর সঙ্গে কথা বলে থাকেন, তা হলে—।’” (প্রেরিত ২৩:৯) এই কথা শুনেই সদ্দূকীদের মাথা গরম হয়ে গেল কারণ স্বর্গদূতেরা যে বাস্তবে রয়েছে, এটা তারা বিশ্বাস করত না। (“সদ্দূকী ও ফরীশী” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) ঝগড়াঝাঁটি এত চরমে চলে যায় যে, আবারও সেনাপতিকে পৌলের জীবন রক্ষা করতে হয়। (প্রেরিত ২৩:১০) কিন্তু, বিপদ এখনও কাটেনি। এবার পৌলের কী হবে তা আমরা পরের অধ্যায়ে জানতে পারব।

সদ্দূকী ও ফরীশী

মহাসভা যিহুদিদের সবচেয়ে বড়ো আদালত ছিল আর এটা পুরো দেশের প্রশাসনকে দেখাশোনা করত। এই মহাসভা সদ্দূকী ও ফরীশী নামের দুটো দলকে নিয়ে গঠিত ছিল। প্রথম শতাব্দীর ইতিহাসবিদ ফ্লেভিয়াস জোসিফাস এই দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পার্থক্য কী ছিল, তা তুলে ধরেন। ফরীশীরা রীতিনীতি ও আচার আচরণের উপর বেশি জোর দিত। আর এর বিপরীতে সদ্দূকীরা শুধুমাত্র মোশির ব্যবস্থায় লেখা কথাগুলোই মেনে চলত। যদিও এই দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল, কিন্তু যিশুর বিরোধিতা করার জন্য এরা একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল।

সদ্দূকীরা মোশির ব্যবস্থা পালন করার ক্ষেত্রে একেবারে গোঁড়া ছিল। এমনটা মনে করা হয়, যাজক পরিবারের সঙ্গে তাদের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং প্রধান যাজক হানন ও কায়ফাও এই দলের সদস্য ছিলেন। এই দু-জন ব্যক্তি এক সময় মহাযাজক ছিলেন। (প্রেরিত ৫:১৭) জোসিফাসের কথা অনুযায়ী, সদ্দূকীদের শিক্ষা “শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই পছন্দ করত।”

অন্যদিকে, ফরীশীদের প্রভাব সাধারণ লোকদের উপর বেশি ছিল। কিন্তু, একজন সাধারণ লোকের পক্ষে তাদের শিক্ষা অনুযায়ী চলা অনেক কঠিন ছিল। যেমন, শুদ্ধ থাকার বিষয়ে তাদের নিয়ম। ফরীশীরা সদ্দূকীদের থেকে আরও একটা দিক দিয়ে আলাদা ছিল। তারা বিশ্বাস করত, সবকিছু আগে থেকে লেখা থাকে। তারা এও বিশ্বাস করত যে, মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা বলে কিছু শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। আর সেই ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় যেমন কর্ম করেছে, তার আত্মা তেমনি ফল পাবে অর্থাৎ যদি ভালো কাজ করে থাকে, তা হলে পুরস্কার পাবে আর যদি খারাপ কাজ করে থাকে, তা হলে শাস্তি পাবে।

a সেই সময়ে যিহুদি খ্রিস্টানেরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। সম্ভবত এই কারণেই বেশ কিছু মণ্ডলী আলাদা আলাদাভাবে ভাই-বোনদের বাড়িতে সভার জন্য মিলিত হত।

b কিছু বছর পর, প্রেরিত পৌল ইব্রীয়দের উদ্দেশে একটা চিঠি লেখেন। তিনি সেই চিঠিতে ব্যাখ্যা করেন, কেন নতুন চুক্তি পুরোনো চুক্তির চেয়ে আরও ভালো। তিনি সঠিক যুক্তি দেখিয়ে প্রমাণ করেন, নতুন চুক্তি আসার ফলে, পুরোনো চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এই যুক্তিগুলোর সাহায্যে যিহুদি খ্রিস্টানেরা, সেই যিহুদিদের মুখ বন্ধ করতে পারত, যারা মোশির ব্যবস্থা পালন করার ক্ষেত্রে গোঁড়া ছিল। শুধু তাই নয়, যে-খ্রিস্টানেরা আগে মোশির ব্যবস্থাকে বেশি গুরুত্ব দিত, তারা পৌলের এই যুক্তি থেকে আরও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, আগের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।—ইব্রীয় ৮:৭-১৩.

c পণ্ডিতদের মতে সেই চার জন পুরুষ সম্ভবত নাসরীয় হওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। (গণনা. ৬:১-২১) এটা সত্য যে, মোশির ব্যবস্থায় নাসরীয়দের অঙ্গীকার করার নিয়ম ছিল, কিন্তু এখন সেটার আর কোনো মূল্য নেই। তবে, পৌল হয়তো এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন যে, সেই পুরুষেরা যিহোবার কাছে যে-অঙ্গীকার করেছে, তা পূরণ করে তারা কোনো ভুল করছে না। সেইজন্য তাদের খরচ বহন করা এবং তাদের সঙ্গে মন্দিরে যাওয়া কোনো ভুল বিষয় ছিল না। আমরা সঠিকভাবে জানি না, সেই পুরুষেরা কোন অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, পৌল কোনো পশুবলি উৎসর্গ করাকে সমর্থন করেননি, যেমনটা নাসরীয়েরা করত। পশুবলি এই জন্য উৎসর্গ করা হত যে, তা দিয়ে মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে। কিন্তু, যিশু যখন তাঁর সিদ্ধ জীবন বলি হিসেবে উৎসর্গ করেছিলেন, তখন থেকে আর পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য পশুবলি উৎসর্গ করার প্রয়োজন ছিল না। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত যে, পৌল সেই সময় এমন কিছু করেননি, যেটা থেকে তার বিবেক দংশাতে পারত।

d কিছু লোক মনে করে, পৌল চোখে একটু কম দেখতেন, তাই তিনি মহাযাজককে দেখতে পাননি। আবার এও হতে পারে, পৌল অনেক দিন পর জেরুসালেমে এসেছিলেন, তাই তিনি বর্তমান মহাযাজককে, তাকে চিনতেন না। অথবা এটাও হতে পারে, যেহেতু সেখানে অনেক ভিড় ছিল, তাই পৌল দেখতে পাননি যে, তাকে মারার আদেশ কে দিয়েছেন।

e ৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত ও প্রাচীনেরা যখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন যে, ন-যিহুদিদের মোশির ব্যবস্থা পালন করতে হবে কি হবে না, তখন “ফরীশী দলের মধ্য থেকে যিশুর অনুসারী হয়েছিল এমন কয়েক জন” সেখানে উপস্থিত ছিল। (প্রেরিত ১৫:৫) তাই এটা স্বাভাবিক যে, খ্রিস্টান হওয়ার পরও তাদের লোকেরা ফরীশী হিসেবেই চিনত।

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার