খণ্ড ৮
মশীহের দেখা পাওয়া যায়
দানিয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করার ৫০০ বছরেরও বেশি সময় পরে ঈশ্বরের স্বর্গদূত গাব্রিয়েল, মরিয়ম নামে এক যুবতী কুমারীকে দেখা দেন, যিনি রাজা দায়ূদের একজন বংশধর ছিলেন। স্বর্গদূত গাব্রিয়েল তাকে “শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, ‘প্রভু [ঈশ্বর] তোমার সংগে আছেন এবং তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।’” (লূক ১:২৮) কিন্তু, মরিয়ম এতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। গাব্রিয়েলের এই সম্ভাষণের অর্থ কী হতে পারে?
গাব্রিয়েল মরিয়মকে বলেছিলেন যে, মরিয়ম মশীহের জন্ম দেবেন
“মরিয়ম, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে,” গাব্রিয়েল ব্যাখ্যা করেন। “প্রভু ঈশ্বর তাঁর পূর্বপুরুষ রাজা দায়ূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন। . . . তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।” (লূক ১:৩০-৩৩) কতই না অপূর্ব এক সংবাদ! মরিয়ম সেই দীর্ঘপ্রতীক্ষিত ‘বংশ’ মশীহের জন্ম দেবেন!
এর পরের বছর যিশু বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করেন। সেই রাতে একজন স্বর্গদূত স্থানীয় মেষপালকদের কাছে এই ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাদের কাছে খুব আনন্দের খবর এনেছি। . . . আজ দায়ূদের গ্রামে তোমাদের উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন। তিনিই মশীহ, তিনিই প্রভু।” (লূক ২:১০, ১১) পরে, যিশুর পরিবার নাসরতে চলে যায়, যেখানে তিনি বড়ো হয়েছিলেন।
সাধারণ কাল ২৯ সালে—ঠিক যে-বছর মশীহের দেখা পাওয়ার কথা—যিশু, ঈশ্বরের নবি বা ভাববাদী হিসেবে সেবা করতে শুরু করেন আর তখন তাঁর বয়স ছিল “প্রায় তিরিশ বছর।” (লূক ৩:২৩) অনেক লোক বুঝতে পেরেছিল যে, ঈশ্বর যিশুকে পাঠিয়েছেন। তারা বলেছিল: “আমাদের মধ্যে একজন মহান নবী উপস্থিত হয়েছেন।” (লূক ৭:১৬, ১৭) কিন্তু, যিশু কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?
যিশু লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যেন তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে ও তাঁকে ভক্তি বা উপাসনা করে: তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমাদের প্রভু ঈশ্বর এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে।” (মার্ক ১২:২৯, ৩০) তিনি আরও বলেছিলেন: “তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে।”—লূক ৪:৮.
যিশু লোকেদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা পরস্পরকে ভালোবাসে: “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে,” তিনি বলেছিলেন। (মার্ক ১২:৩১) তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা অন্য লোকদের কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে সেই রকম ব্যবহার কোরো। এটাই হল মোশির আইন-কানুন ও নবীদের শিক্ষার মূল কথা।”—মথি ৭:১২.
যিশু অন্যদেরকে উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন: “আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে হবে, কারণ এরই জন্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন,” তিনি বলেছিলেন। (লূক ৪:৪৩) কেন ঈশ্বরের রাজ্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ?
শাস্ত্র শেখায় যে, ঈশ্বরের রাজ্য হল এক স্বর্গীয় সরকার, যা পুরো পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। মশীহ যিশু হলেন এই রাজ্যের রাজা, যাঁকে ঈশ্বর নিযুক্ত করেছেন। ভাববাদী দানিয়েল দর্শনে দেখেছিলেন যে, স্বর্গে ঈশ্বর মশীহকে “কর্তৃত্ব, সম্মান ও রাজত্ব” দিয়েছেন। (দানিয়েল ৭:১৪) সেই রাজ্য পৃথিবীব্যাপী পরমদেশ প্রতিষ্ঠা করবে এবং ঈশ্বরের দাসদের অনন্তজীবন দিয়ে পুরস্কৃত করবে। এটা কি সবচেয়ে উত্তম খবর নয়?