খণ্ড ৯
মশীহের কাছ থেকে আমরা যা শিখতে পারি
ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তিনি মশীহকে সমস্ত লোকের জন্য নেতা হিসেবে নিযুক্ত করবেন। ঈশ্বর জানেন যে, আমাদের আসলে ঠিক কোন ধরনের নেতা প্রয়োজন আর তাই তিনি সবচেয়ে উত্তম নেতাকে বাছাই করেছেন। মশীহ কোন ধরনের নেতা বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন? একজন শক্তিশালী সেনাপতি? একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ? একজন বিজ্ঞ দার্শনিক? পবিত্র শাস্ত্র অনুসারে, মশীহ ছিলেন খুবই বিশেষ একজন ভাববাদী—যিশু খ্রিস্ট।—মথি ২৩:১০.
ঈশ্বর এই বিষয়টা লক্ষ রেখেছিলেন যেন যিশু সিদ্ধ ও পবিত্র অবস্থায় জন্ম নেন। এ ছাড়া, শয়তান যিশুকে কলুষিত করার জন্য যে-সমস্ত প্রচেষ্টা করেছিল, সেগুলোকে যিশু প্রতিরোধ করেছিলেন। যিশু তাঁর কথায় এবং কাজে নির্ভুলভাবে দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর নিখুঁতভাবে তাঁর শক্তি ও সেইসঙ্গে তাঁর ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা এবং প্রেম ব্যবহার করেন। কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ থেকে শিখতে পারি, তা বিবেচনা করুন।
যিশু উদারভাবে অন্যদের সাহায্য করতেন
তিনি অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য তাঁর ঈশ্বরদত্ত শক্তিকে ব্যবহার করেছিলেন। যিশু প্রকৃতই লোকেদের জন্য চিন্তা করতেন এবং তিনি তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য তাঁর শক্তিকে উদারভাবে ব্যবহার করেছিলেন। “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ . . . এদের কাছে কোন খাবার নেই,” তিনি বলেছিলেন। (মার্ক ৮:২) এরপর যিশু অলৌকিকভাবে সেই বিস্তর লোককে খাইয়েছিলেন, যারা তাঁর শিক্ষা শুনতে এসেছিল।
এ ছাড়া, যিশু ভ্রমণ করেছিলেন, শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং ‘লোকদের সব রকম রোগ ভাল করেছিলেন।’ (মথি ৪:২৩) তাই এটা স্বাভাবিক যে, বহু লোক তাঁকে অনুসরণ করেছিল এবং “সব লোক তাঁকে ছোঁবার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়ে সকলকে সুস্থ করছিল।” (লূক ৬:১৯) সত্যিই, যিশু “সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।” (মথি ২০:২৮)a কত জন মানবনেতা এই ধরনের এক আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখায়?
যিশু ছোটো ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসতেন
তিনি ঈশ্বরের মতো ন্যায়বিচার দেখিয়েছিলেন। যিশু ঈশ্বরের আইনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন ও সেইসঙ্গে এই আইনের মধ্যে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। বলতে গেলে, শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তিনি বলেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার ইচ্ছামত চলাই আমার আনন্দ; তোমার সব নির্দেশ আমার অন্তরে আছে।” (গীতসংহিতা ৪০:৮) যিশু—ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, ছোটো-বড়ো—সকলের সঙ্গে মর্যাদা ও সম্মান সহকারে এবং পক্ষপাতহীনভাবে আচরণ করেছিলেন, যেমনটা ঈশ্বর করেন। একবার, যিশুর শিষ্যরা সেই বাবা-মাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছিল, যারা তাদের ছোটো সন্তানদের যিশুর কাছে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, যিশু বলেছিলেন: “ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মতো লোকদেরই।”—মার্ক ১০:১৪.
তিনি ঐশিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছিলেন। যিশু লোকেদের সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানতেন। “মানুষের মনে যা আছে তা তাঁর জানা ছিল।” (যোহন ২:২৫) যিশুর শত্রুরা যখন তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকেদের পাঠিয়েছিল, তখন এমনকী এই লোকেরাও স্বীকার করেছিল: “লোকটা যেভাবে কথা বলে সেইভাবে আর কেউ কখনও বলে নি।” কোথা থেকে যিশু তাঁর প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন? তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি যে শিক্ষা দিই তা আমার নিজের নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই।”—যোহন ৭:১৬, ৪৬.
যিশু সমবেদনা দেখিয়ে অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন
তিনি ঈশ্বরের মতো প্রেম দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া, লোকেদের প্রতি যিশুর কোমল সমবেদনা ছিল। “সারা গায়ে খারাপ চর্মরোগ ছিল” এমন একজন ব্যক্তি যিশুকে কাকুতি-মিনতি করে বলেছিলেন: “প্রভু, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।” করুণাবিষ্ট হয়ে যিশু “হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, ‘আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।’ আর তখনই সে ভাল হয়ে গেল।” (লূক ৫:১২, ১৩; মার্ক ১:৪১, ৪২) যিশু সত্যিই সেই রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট দূর করতে চেয়েছিলেন।
যিশু কি আপনার জন্যও চিন্তা করেন? যিশু নিজে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন: “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও নম্র। এতে তোমরা অন্তরে বিশ্রাম পাবে।”—মথি ১১:২৮-৩০.
যিশু হলেন আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম নেতা। তাই, তিনি আমাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন: “আমার কাছ থেকে শেখো।” আপনি কি তাঁর এই হৃদয়গ্রাহী আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন? তা করা এক সুখী জীবন এনে দেবে।
a মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে আলোচনার জন্য চিরকাল জীবন উপভোগ করুন! বইয়ের ২৭ পাঠ দেখুন।