পাঠ ৮
কেন ঈশ্বর মন্দতা ও দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?
১. কীভাবে মন্দতা শুরু হয়েছিল?
ঈশ্বর মানুষকে এটা দেখানোর জন্য যথেষ্ট সময় ধরে শাসন করার সুযোগ দিয়েছেন যে, তারা মানবজাতির সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে না
পৃথিবীতে সেই সময় মন্দতা শুরু হয়েছিল, যখন শয়তান প্রথম মিথ্যা বলেছিল। শুরুতে শয়তান একজন সিদ্ধ স্বর্গদূত ছিল কিন্তু সে “সত্যে থাকে নাই।” (যোহন ৮:৪৪) সে সেই উপাসনা পেতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলেছিল, যা উপযুক্তভাবে কেবল ঈশ্বরেরই প্রাপ্য। শয়তান প্রথম নারী হবার কাছে মিথ্যা বলেছিল এবং ঈশ্বরের পরিবর্তে বরং তার বাধ্য হওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। হবার মতো আদমও ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল। আদমের সিদ্ধান্ত দুঃখকষ্ট এবং মৃত্যু নিয়ে এসেছিল।—পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১-৬, ১৯.
শয়তান যখন হবাকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে বলেছিল, তখন সে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের অথবা পরাৎপরের অবস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শুরু করেছিল। বেশিরভাগ মানবজাতিই ঈশ্বরকে তাদের শাসক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে শয়তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এভাবে, শয়তান “জগতের অধিপতি” হয়ে উঠেছে।—পড়ুন, যোহন ১৪:৩০; ১ যোহন ৫:১৯.
২. ঈশ্বরের সৃষ্টিতে কি কোনো ত্রুটি ছিল?
ঈশ্বরের সমস্ত কাজই সিদ্ধ। ঈশ্বর যে-মানুষ এবং দূতেদের সৃষ্টি করেছিলেন, তারা পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের বাধ্য হতে সমর্থ ছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫) ঈশ্বর আমাদেরকে আমরা উত্তম কাজ করব, নাকি মন্দ কাজ করব, সেই ব্যাপারে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই স্বাধীনতা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম প্রকাশের একটা সুযোগ করে দিয়েছে।—পড়ুন, যাকোব ১:১৩-১৫; ১ যোহন ৫:৩.
৩. কেন ঈশ্বর এখনও পর্যন্ত দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?
একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সুযোগ দিয়েছেন। কেন? এটা দেখানোর জন্য যে, তাঁকে বাদ দিয়ে শাসন করার কোনো প্রচেষ্টাই লোকেদের জন্য উপকার নিয়ে আসবে না। (উপদেশক ৭:২৯; ৮:৯) মানবইতিহাসের ৬,০০০ বছর পর, এই প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে। মানবশাসন যুদ্ধ, অপরাধ, অবিচার এবং রোগব্যাধি দূর করে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছে।—পড়ুন, যিরমিয় ১০:২৩; রোমীয় ৯:১৭.
মানবশাসনের বিপরীতে ঈশ্বরের শাসন সেই ব্যক্তিদের উপকৃত করে, যারা এটা মেনে নেয়। (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) শীঘ্র, যিহোবা সমস্ত মানবসরকারের শেষ নিয়ে আসবেন। একমাত্র যে-ব্যক্তিরা ঈশ্বরের শাসন বেছে নেবে, তারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।—যিশাইয় ১১:৯.—পড়ুন, দানিয়েল ২:৪৪.
কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন? শিরোনামের ভিডিওটা দেখুন।
৪. ঈশ্বরের ধৈর্য আমাদের কী করার সুযোগ করে দিয়েছে?
শয়তান দাবি করেছিল যে, কেউই নিঃস্বার্থ প্রেম সহকারে যিহোবার সেবা করবে না। আপনি কি এই মিথ্যাকে ভুল বলে প্রমাণিত করতে চান? আপনি তা করতে পারেন! ঈশ্বরের ধৈর্য আমাদের সবাইকে এটা দেখানোর সুযোগ করে দেয় যে, আমরা ঈশ্বরের শাসনের পক্ষে, নাকি মানুষের শাসনের পক্ষে। আমরা আমাদের জীবনধারার মাধ্যমে এই বাছাই সম্বন্ধে ইঙ্গিত দিই।—পড়ুন, ইয়োব ১:৮-১২; হিতোপদেশ ২৭:১১.
৫. কীভাবে আমরা ঈশ্বরকে আমাদের শাসক হিসেবে বেছে নিতে পারি?
আমাদের বাছাইগুলো দেখায় যে, আমরা ঈশ্বরকে আমাদের শাসক হিসেবে চাই কি না
ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের ওপর ভিত্তি করে সত্য উপাসনা সম্বন্ধে জানার এবং তা পালন করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরকে আমাদের শাসক হিসেবে বেছে নিতে পারি। (যোহন ৪:২৩) যিশুর মতো আমরাও রাজনীতি এবং যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে শয়তানকে আমাদের শাসক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করতে পারি।—পড়ুন, যোহন ১৭:১৪.
শয়তান অনৈতিকতা এবং ক্ষতিকর অভ্যাস তুলে ধরার মাধ্যমে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে। আমরা যখন এই ধরনের অভ্যাস প্রত্যাখ্যান করি, তখন কোনো কোনো বন্ধু এবং আত্মীয় হয়তো আমাদের উপহাস অথবা বিরোধিতা করে। (১ পিতর ৪:৩, ৪) তাই, আমাদেরকে কোনো একটা বিষয় বেছে নিতেই হয়। আমরা কি ঈশ্বরকে ভালোবাসে এমন লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করব? আমরা কি তাঁর বিজ্ঞ এবং প্রেমময় আইনগুলো পালন করব? যদি করি, তাহলে আমরা এই প্রমাণ দিই যে, শয়তান সেই সময় মিথ্যা বলেছিল, যখন সে দাবি করেছিল যে, চাপের মুখে কেউই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করবে না।—পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ১৫:৩৩.
মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রেম এই নিশ্চয়তা দেয় যে, মন্দতা এবং দুঃখকষ্ট শেষ হয়ে যাবে। যারা এর প্রতি বিশ্বাস প্রদর্শন করে, তারা পৃথিবীতে অনন্তজীবন উপভোগ করবে।—পড়ুন, যোহন ৩:১৬.