পাঠ ৩৮
যিহোবা শিম্শোনকে শক্তিশালী করেন
ইজরায়েলীয়দের মধ্যে অনেকে আবার মূর্তিপূজা করতে শুরু করে। তাই, যিহোবা তাদের দেশ পলেষ্টীয়দের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে, কিছু ইজরায়েলীয় তখনও যিহোবাকে ভালোবাসত। এদের মধ্যে ছিলেন, মানোহ এবং তার স্ত্রী। তাদের কোনো সন্তান ছিল না। একদিন যিহোবা মানোহের স্ত্রীর কাছে একজন স্বর্গদূতকে পাঠান। সেই স্বর্গদূত তাকে বলেন: ‘তোমার একটি ছেলে হবে। সে পলেষ্টীয়দের হাত থেকে ইজরায়েলকে উদ্ধার করবে। সে একজন নাসরীয় হবে।’ তুমি কি জান, নাসরীয়েরা কারা ছিল? তারা যিহোবার বিশেষ দাস ছিল। নাসরীয়েরা তাদের চুল কাটতে পারত না।
পরে, মানোহের একটি ছেলে হয় আর তিনি তার নাম রাখেন শিম্শোন। শিম্শোন যখন বড়ো হয়, তখন যিহোবা তাকে অনেক শক্তিশালী করেন। তার এত শক্তি ছিল যে, তিনি খালিহাতে একটা সিংহকে মেরে ফেলতে পেরেছিলেন। একবার, শিম্শোন একাই ৩০ জন পলেষ্টীয়কে হত্যা করেছিলেন। পলেষ্টীয়েরা তাকে ঘৃণা করত আর তাই তারা তাকে মেরে ফেলার সুযোগ খুঁজতে থাকে। একদিন রাতে গাজাতে শিম্শোন ঘুমাচ্ছিলেন। তখন তারা নগরের দরজার কাছে যায় এবং সেখানে অপেক্ষা করতে থাকে, যাতে তারা সকাল বেলায় শিম্শোনকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু, মাঝরাতে শিম্শোন জেগে উঠে নগরের দরজার কাছে যান এবং পুরো দরজা প্রাচীর থেকে উপড়ে ফেলেন। তিনি সেই দরজা কাঁধে তুলে হিব্রোণের সামনের পর্বতের চূড়ায় ওঠেন।
পরে, পলেষ্টীয়েরা শিম্শোনের প্রেমিকা দলীলার কাছে যায় এবং বলে: ‘তুমি যদি বের করতে পার, শিম্শোন কেন এত শক্তিশালী, তা হলে আমরা তোমাকে প্রচুর টাকা দেব। আমরা তাকে ধরে কারাগারে রাখব।’ দলীলা টাকার লোভে রাজি হয়ে যান। প্রথমে, শিম্শোন দলীলাকে বলতে চাননি যে, কেন তিনি এত শক্তিশালী। কিন্তু, শিম্শোন তার শক্তির রহস্য সম্বন্ধে না বলা পর্যন্ত দলীলা ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকেন। অবশেষে, শিম্শোন তা বলতে বাধ্য হন। তিনি দলীলাকে বলেন: ‘আমার চুল কখনো কাটা হয়নি, কারণ আমি একজন নাসরীয়। আমার চুল যদি কেটে ফেলা হয়, তা হলে আমার শক্তি ফুরিয়ে যাবে।’ তাকে এই কথা বলার মাধ্যমে শিম্শোন এক বড়ো ভুল করেন, তাই না?
দলীলা সঙ্গেসঙ্গে পলেষ্টীয়দের বলেন: ‘আমি তার শক্তির রহস্য জানতে পেরেছি!’ তিনি শিম্শোনকে তার কোলে ঘুম পাড়িয়ে দেন এবং একজন লোককে ডেকে তার চুল কেটে দেন। দলীলা চিৎকার করে বলেন: ‘শিম্শোন, পলেষ্টীয়েরা এসে পড়েছে!’ এই কথা শুনে শিম্শোন জেগে ওঠেন আর দেখেন, তার শক্তি চলে গিয়েছে। পলেষ্টীয়েরা তাকে ধরে তার চোখ দুটো উপড়ে ফেলে আর তাকে কারাগারে রেখে দেয়।
একদিন হাজার হাজার পলেষ্টীয় তাদের দেবতা দাগোনের মন্দিরে একত্রিত হয় এবং চিৎকার করে বলতে থাকে: ‘আমাদের দেবতাই শিম্শোনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন! শিম্শোনকে বাইরে নিয়ে আসো! আমরা তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করি।’ তারা তাকে দুটো স্তম্ভের মাঝে দাঁড় করায় এবং তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে শুরু করে। শিম্শোন যিহোবাকে ডেকে বলেন: ‘হে যিহোবা, দয়া করে এই শেষ বার আমাকে শক্তি দাও।’ ততদিনে, শিম্শোনের চুল কিছুটা বেড়ে যায়। তিনি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে মন্দিরের স্তম্ভগুলোতে ধাক্কা মারেন। এতে পুরো বাড়িটা ভেঙে পড়ে আর মন্দিরে থাকা সমস্ত লোক মারা যায় আর তাদের সঙ্গে শিম্শোনও মারা যান।
“যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁর মাধ্যমে আমি সব কিছুই করতে পারি।”—ফিলিপীয় ৪:১৩