ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯১ ১১/১ পৃষ্ঠা ২৬-২৯
  • বিধবা হয়েও আমি প্রকৃত সান্ত্বনা পেয়েছি

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • বিধবা হয়েও আমি প্রকৃত সান্ত্বনা পেয়েছি
  • ১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • বাইবেলের সত্য শেখা
  • সদ্যপ্রাপ্ত জ্ঞানের বিতরণ করা
  • রাস্তায় সাক্ষ্যদান
  • ভীতি দূর করতে উৎসাহ দান
  • শক্তি ও আশীর্বাদপ্রাপ্ত
  • দায়িত্বগুলির ভারসাম্যতা
  • জীবনব্যাপী সান্ত্বনা
  • বাইবেল পড়ে ভারতবাসীরা বিশ্বাস করেছেন
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • যারা দুঃখার্ত তাদের সান্ত্বনা দিন
    ২০০৩ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • আট ছেলেমেয়েকে যিহোবার পথে মানুষ করে তোলা ছিল এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আনন্দ
    ২০০৬ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯১ ১১/১ পৃষ্ঠা ২৬-২৯

বিধবা হয়েও আমি প্রকৃত সান্ত্বনা পেয়েছি

লিলি আর্থার দ্বারা বর্ণিত

ভারত বর্ষের উটাকামাণ্ডের এক স্থানে, যিহোবার সাক্ষীদের এক তরুণ পরিচারক ঘরে ঘরে প্রচার কাজে রত। এখানকার সামাজিক প্রথা হিসাবে অচেনা লোকের সামনে মহিলারা দরজা খোলেন না। কয়েক ঘন্টা পরে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে তিনি বাড়ীর দিকে ফিরলেন। কিন্তু আবার থেমে গিয়ে যেন জোর করেই পরবর্ত্তী দরজায় গেলেন। চিন্তা করে দেখুন কি ঘটল, যে মহিলাটি দরজা খুললেন, তিনি বর্ণনা করছেন।

কোলে তখন আমার দু’মাসের মেয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে আমার ২২ মাস বয়সী বড় ছেলে, দরজা খুলেই দেখি এক অচেনা ভদ্রলোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে। তার আগের রাতেই আমি আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত ছিলাম। সান্ত্বনা খুঁজছিলাম আর প্রার্থনা করছিলাম: “স্বর্গীয় পিতা, দয়া করে তোমার বাক্যের মাধ্যমে আমাকে সান্ত্বনা দাও।” আজ, আশ্চর্যের বিষয়, সেই ভদ্রলোক বলেন: “আমি ঈশ্বরের বাক্য থেকে আপনার কাছে সান্ত্বনা ও আশার কথা বলতে এসেছি।” আমি ভাবলাম ইনি নিশ্চয় কোন ভাববাদী যিনি ঈশ্বর-প্রেরিত। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে আমি ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম?

বাইবেলের সত্য শেখা

দক্ষিণ ভারতবর্ষের মনোহর নীলগিরি পাহাড়ের গুদালুর গ্রামে ১৯২২ সালে আমার জন্ম। আমার বয়স যখন তিন, তখন মা মারা যান। পরে বাবা যিনি প্রোটেস্টান্ট পাদ্রী ছিলেন পুনরায় বিবাহ করেন। কথা বলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই বাবা আমাদের ভাইবোনদের প্রার্থনা করতে শেখান। সেই চার বছর বয়স থেকেই, বাবা যখন টেবিলে বসে প্রতিদিন বাইবেল পড়তেন, তখন আমিও মাটিতে বসে আমার নিজের বাইবেল পড়তাম।

বড় হয়ে আমি স্কুল টিচার হই। এরপর ২১ বছর বয়সে আমার বাবা আমার বিয়ে দেন। আমাদের সুন্দর নামে একটি ছেলে ও পরে একটি মেয়ে হয়, রত্না। যখন রত্না জন্মায় আমার স্বামী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিছু পরেই তিনি মারা যান। হঠাৎ বিধবা হলাম, এর ওপর দুটি ছোট সন্তানের দায়িত্ব।

তারপরই আমি ঈশ্বরের কাছে তার বাক্যের দ্বারা সান্ত্বনা পেতে চাইলাম, আর তার পরদিনই যিহোবার সাক্ষীদের পরিচারক আমার কাছে আসেন। আমি ওনাকে ভিতরে ডাকলাম, আর ওনার কাছ থেকে “লেট গড বি ট্রু” এই বইটি নিই। সেই রাত্রে বইটি পড়ছি, আর বার বার এই নাম চোখে পড়ছে যিহোবা, যেটি আমার কাছে ভীষণ অচেনা। পরে সেই ভদ্রলোক পুনরায় এলেন, আর আমাকে বাইবেল থেকেই দেখালেন যে এটি ঈশ্বরের নাম।

এরপর আরও শিখলাম যে ত্রিত্ব নরকাগ্নির যে শিক্ষা তা বাইবেলভিত্তিক নয়। এছাড়া যখন শিখলাম যে ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে পৃথিবী পরমদেশ হবে এবং মৃত প্রিয় ব্যক্তিরা পুনরুত্থিত হবেন, তখন আশা ও সান্ত্বনা ফিরে পেলাম, সবচেয়ে বড় কথা এই যে সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে আমি চিনতে ও ভালবাসতে পারলাম, যিনি আমার প্রার্থনা শুনেছেন ও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন।

সদ্যপ্রাপ্ত জ্ঞানের বিতরণ করা

তখনই আমি ভাবতে শুরু করি, বাইবেলের ঐ সব পদগুলি যাতে ঈশ্বরের নাম লেখা তা পড়বার সুযোগ কতই না হারিয়েছি। আমার নিজের বাইবেল অধ্যয়নের সময় কেন আমি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের স্পষ্ট আশা দেখতে পাইনি? আমি যে স্কুলে পড়াতাম, তার পরিচালক ছিল প্রোটেস্টান্ট মিশনারীরা, তাই আমি স্কুলের ম্যানেজারকে বাইবেলের পদগুলি দেখালাম। (যাত্রাপুস্তক ৬:৩; গীতসংহিতা ৩৭:২৯; ৮৩:১৮; যিশাইয় ১১:৬-৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) আমি বললাম কি ভাবে আমাদের যেন ওগুলি দেখা বাদ হয়ে গেছে। কিন্তু অমি আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম, সেই মহিলা খুশী হলেন না।

এরপর আমি প্রিন্সিপালকে যিনি অন্য শহরে ছিলেন, তাকে বাইবেলের পদগুলি উল্লেখ করে লিখলাম। আমি তার সঙ্গে কথা বলবার সুযোগ চেয়ে অনুরোধ জানালাম। তিনি উত্তর দিলেন, তার বাবা যিনি ইংলণ্ডের নামকরা পাদ্রী, তিনি আমার সাথে এ বিষয় কথা বলবেন। প্রিন্সিপালের ভাই এক নামকরা বিশপ ছিলেন।

আমি সব কটি পয়েন্ট ও শাস্ত্র দেখে নিয়ে আমার “লেট গড বি ট্রু” বই সঙ্গে এবং ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেই শহরে গেলাম। উৎসাহের সঙ্গে যিহোবা কে, ত্রিত্ত্ব বলে কোনও কিছু নেই এবং অন্য সব কিছু ব্যাখ্যা করলাম, আমি যা শিখেছিলাম। তারা কিছুক্ষণ শুনলেন, কিন্তু একটিও কথা বললেন না। এরপর সেই ইংলণ্ডের পাদ্রী বললেন: “আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করব।” তখন আমার জন্য প্রার্থনা করে বিদায় দিলেন।

রাস্তায় সাক্ষ্যদান

একদিন যিহোবার সাক্ষীদের পরিচারক আমায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওয়াচ টাওয়ার ও আওয়েক! পত্রিকা নিয়ে সাক্ষ্য দিতে আমন্ত্রণ জানালেন। আমি তাকে বললাম এই বিষয়টি আমি কোনদিনই পারব না। আসলে ভারতের মানুষরা যদি কোনও মহিলাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা ঘরে ঘরে প্রচার করতে দেখে ত খুব খারাপ ধারণা করে। এতে মহিলার ও তার পরিবারের সুনাম নষ্ট হতে পারে। যেহেতু আমি বাবাকে গভীর ভাবে ভালবাসতাম ও সম্মান করতাম, তাই আমি তার উপর বদনাম আনতে চাইনি।

কিন্তু পরিচারক আমাকে একটি বাইবেলের পদ দেখালেন যেখানে বলছে: “বৎস জ্ঞানবান হও, আমার চিত্তকে আনন্দিত কর, তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারী দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১, কিং জেমস্‌ ভারসন) তিনি বললেন, “যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে তুলুন, প্রকাশ্যে দেখিয়ে দিন যে আপনি তাঁর রাজ্যের পক্ষে।” যিহোবার হৃদয়কে খুশী করার ইচ্ছা অন্য সব কিছুর চাইতে এত প্রবল ছিল যে আমি ম্যাগাজিনের ব্যাগ নিয়ে তার সঙ্গে রাস্তায় সাক্ষ্য দিতে গেলাম। আজও আমি ভাবতে পারিনা কি ভাবে আমি তা করি। সেটা ছিল ১৯৪৬ সাল, আমার সাথে যোগাযোগ করার প্রায় চার মাস পর।

ভীতি দূর করতে উৎসাহ দান

১৯৪৭ সালে ভারতের মাদ্রাজের পূর্বউপকুলের শহরতলীতে এক শিক্ষিকার কাজ গ্রহণ করে বাচ্চাদের নিয়ে চলে গেলাম। যিহোবার সাক্ষীদের ৮ জনের এক ছোট দল নিয়মিত সংঘবদ্ধ হতেন। সেই সভাতে যোগদান করার জন্য ২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হত। ভারতে তখন সেই সময়ে সাধারণতঃ মহিলারা একলা ভ্রমণ করত না। পুরুষদের সঙ্গে যাতায়াত করত। আমি জানি না কি ভাবে বাসে উঠব, কি ভাবে টিকিট কাটব, কিভাবে নামব, এই সব। আমি অনুভব করতে পারছি, আমাকে যিহোবার সেবা করতে হবে, কিন্তু কিভাবে? তাই আমি প্রার্থনা করি: “যিহোবা ঈশ্বর, আমি তোমাকে সেবা না করে বেঁচে থাকতেও চাই না। কিন্তু একজন ভারতীয় নারী হিসাবে আমার পক্ষে অসম্ভব যে আমি ঘরে ঘরে সাক্ষ্যদান করতে যাব।”

আমি আশা করেছিলাম যিহোবা হয়ত আমার মৃত্যু এনে আমাকে মুক্তি দেবেন। তবুও আমি স্থির করলাম বাইবেল থেকে কিছু পড়ব। ঘটনাক্রমে আমি যিরমিয়র পুস্তক খুলি যেখানে বলা আছে: “আমি বালক, এমন কথা বলিও না; কিন্তু আমি তোমাকে যাহার কাছে পাঠাইব, তাহারই কাছে তুমি যাইবে; এবং তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিব, তাহাই বলিবে, উহাদের সম্মুখে ভীত হইও না, কেননা তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—যিরমিয় ১:৭, ৮.

আমি অনুভব করলাম যেন যিহোবা সত্য সত্যই আমার সঙ্গে কথা বলছেন। সুতরাং আমি সাহস পেয়ে তৎক্ষণাৎ আমার সেলাই মেশিনে একটি ব্যাগ বানিয়ে ফেললাম, যাতে ম্যাগাজিন নিয়ে যেতে পারব। মন খুলে প্রার্থনা জানাবার পর একলাই ঘরে ঘরে প্রচারে বেরিয়ে পড়লাম, সব কটি ম্যাগাজিন অর্পণ করতে পারলাম, এমনকি ঐ দিনে একটি বাইবেল স্টাডিও শুরু হয়ে গেল। আমি দৃঢ়মনা হলাম যে যিহোবাকে জীবনে প্রথম স্থান দেব, আর সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভরতা তারই উপর রাখলাম। অনেকের নিন্দা সহ্য করেও জনগণে প্রচার আমার জীবনের দৈনন্দিন অঙ্গ হয়ে দাঁড়াল। বিরোধীতা থাকা সত্ত্বেও আমার কার্য্যকলাপ অনেকের উপর দৃঢ় ছাপ ফেলল।

পরে অনেক বছর বাদে এই বিষয়টি বুঝতে পারলাম যখন একদিন আমি ও আমার মেয়ে মাদ্রাজে ঘরে ঘরে প্রচারে রত ছিলাম। এক হিন্দু ভদ্রলোক যিনি হাইকোর্টের এক বিচারক আমার বয়স বুঝতে না পেরে বলেছিলেন: “আমি এই সমস্ত ম্যাগাজিনের সঙ্গে পরিচিত তোমার জন্মেরও আগে থেকে! তিরিশ বছর আগে এক মহিলা মাউন্ট রোডে দাঁড়িয়ে এই পত্রিকা দিতেন।” সেইদিন তিনি গ্রাহক হতে চাইলেন।

আর একটি বাড়ীতে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ, একজন রিটায়ার্ড অফিসার, ভিতরে ডাকলেন ও বললেন: “অনেক বছর আগে এক মহিলা মাউন্ট রোডে দাঁড়িয়ে এই ওয়াচটাওয়ার দিত। তার প্রতি শ্রদ্ধার জন্য আমি যে পত্রিকা আপনি দিচ্ছেন তা নেব।” আমি শুধু হেসেছিলাম, কারণ আমি জানি আমিই সেই মহিলা যার সম্বন্ধে এই দুজন বলেছেন।

শক্তি ও আশীর্বাদপ্রাপ্ত

১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে আমি উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসাবে বাপ্তিস্মগ্রহণ করলাম। সেই সময়ে সম্পূর্ণ রাজ্যে কেবলমাত্র আমি একলা তামিলভাষী মহিলা প্রচারিকা, তবে এখন শত শত তামিল মহিলা আছেন যারা যিহোবার বিশ্বস্ত, সক্রিয় সাক্ষী।

বাপ্তিস্মিত হওয়ার পর চারিদিক থেকে বিরোধীতা শুরু হয়ে গেল। আমার ভাই লিখলেন: “তুমি সব নীতি ও শালীনতা অতিক্রম করেছ।” আমি স্কুল থেকে, যেখানে কাজ করতাম, ও পারিপার্শ্বিক সমাজ থেকে বিরোধীতা পেতে লাগলাম। কিন্তু আমি ক্রমাগত হৃদয় থেকে প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবাকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরলাম। মাঝরাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যেত, তৎক্ষণাৎ কেরোসিন লাইট জ্বালিয়ে অধ্যয়ন করতাম।

যতই আমি শক্ত হলাম, ততই যেন অন্যদের সাহায্য ও সান্ত্বনা দেবার উপযুক্ত স্থানে এগিয়ে গেলাম। এক বয়স্কা হিন্দু মহিলা, যার সঙ্গে আমি অধ্যয়ন করি, তিনি যিহোবার উপাসনার পক্ষে দৃঢ় ভাবে দাঁড়ালেন। যখন তিনি মারা যান, সেই বাড়ীর আর একটি মহিলা বলেন, “আমরা এই বিষয়টি দেখে খুশী যে তিনি তার ঈশ্বরের প্রতি শেষ পর্য্যন্ত অনুগত ছিলেন, যাকে তিনি উপাসনা করতে বেছে নিয়েছিলেন।”

আর একটি মহিলার সঙ্গে আমি স্টাডি করি যিনি কখনোই হাসতেন না, সর্বদাই তার মুখে ছিল দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখের ছাপ। কিন্তু তাকে যিহোবার সম্বন্ধে শিখাবার পর, তাকে আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে উৎসাহ দিই, যেহেতু তিনি আমাদের সমস্যাগুলি জানেন এবং আমাদের যত্ন নেন। পরের সপ্তাহে দেখলাম তার মুখে ঔজ্জ্বল্য। আর এই প্রথম বার আমি তাকে হাসতে দেখলাম। তিনি ব্যাখ্যা করলেন “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করছিলাম, আর আমার হৃদয় ও মন এখন শান্ত।” তিনি যিহোবাকে তার জীবন উৎসর্গ করেন, এবং বহু কষ্ট থাকা সত্ত্বেও বিশ্বস্ত থাকেন।

দায়িত্বগুলির ভারসাম্যতা

ছোট দুটি সন্তানের রক্ষনাবেক্ষণ করার পর, আমি মনে করতে লাগলাম, যিহোবাকে সম্পূর্ণ সময় এক অগ্রগামী হিসাবে দেওয়া আমার দ্বারা হবেনা। কিন্তু তখন এক নতুন পরিচর্য্যার পথ আমার জন্য খুলে গেল, কারণ বাইবেল সাহিত্যগুলির অনুবাদের জন্য এক তামিল ভাষীর প্রয়োজন। যিহোবার সাহায্যে আমি এই পরিচর্য্যার সুযোগটি ব্যবহার করতে পারলাম, একই সঙ্গে এক শিক্ষিকার কাজও করলাম, বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া, ঘরসংসারের সব কাজকর্ম, সমস্ত সভাগুলিতে যোগদান, ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় রত থাকতেও পারলাম। অবশেষে যখন সন্তানেরা বড় হয়ে গেল আমি বিশেষ অগ্রগামী হতে পারলাম, এই সুযোগ আমি বিগত ৩৩ বছর ধরে উপভোগ করে চলেছি।

যখন সুন্দর ও রত্না খুব ছোট ছিল, তখন থেকেই তাদের হৃদয়ে গেঁথে দিতে চেষ্টা করেছিলাম যিহোবার প্রতি ভালবাসা এবং যিহোবাকে জীবনে প্রথম স্থান দেওয়ার ইচ্ছা। তারা জানত জেগে উঠে যে প্রথম ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে তিনি হলেন যিহোবা এবং ঘুমাতে যাবার আগে তিনিই শেষ ব্যক্তি যার সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে। তারা এটিও জানত স্কুলের হোমওয়ার্ক আছে বলে সভাতে বা প্রচারে যাবার প্রস্তুতিতে উপেক্ষা চলবে না। আমি তাদের স্কুলেতে ভাল কাজ দেখাতে উৎসাহ হয়ত দিতাম, কিন্তু কখনও জোর করিনি যে উচ্চ স্থান পেতেই হবে, কারণ ভয় পেতাম যে সেটিই হয়ত তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

বাপ্তিস্মিত হবার পর তারা স্কুলের ছুটি অগ্রগামীর কাজ করে ব্যয় করত। আমি সবসময় রত্নাকে সাহসী হতে বলতাম, লাজুক বা ভীরু হতে শিখাইনি যেরকম আমি ছিলাম। স্কুলের পড়া শেষ করে এবং কিছু ট্রেনিং নেবার পর, সেও অগ্রগামীর কাজ শুরু করে, পরে বিশেষ অগ্রগামী হয়। পরে, রিচার্ড গাব্রিয়েল নামে এক ভ্রমণকারী অধ্যক্ষর সঙ্গে তার বিবাহ হয়, যিনি এখন ভারতের ওয়াচটাওয়ার সোসাইটির ব্রাঞ্চ কমিটি কোয়ার্ডিনেটর রূপে পরিচর্য্যা করছেন। তারা এবং তাদের মেয়ে এবিগ্যাল এই ব্রাঞ্চে পূর্ণ সময় কাজ করেন। আর তাদের ছোট ছেলে এণ্ড্রু সুসমাচারের একজন প্রকাশক।

কিন্তু ১৮ বছর বয়সে, সুন্দর আমার মনে বড় আঘাত দেয়, যখন সে যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। এরপরের কটি বছর আমার জন্য বড়ই বিষাদময় হয়ে ওঠে। আমি ক্রমাগত যিহোবাকে অনুরোধ করে চললাম, যদি ওকে পালন করার সময় হয়ত কোনও ভুল আমি করেছি, যেন তিনি ক্ষমা করে দেন, আর সুন্দরকে যেন তিনি চেতনা দেন, যাতে ও আবার ফিরে আসে। সেই সময় আমি সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ১৩ বছর বাদে একদিন সে এসে আমাকে বলল, “মা, চিন্তা কোর না, আমি ঠিক হয়ে যাব।”

এরপরই সুন্দর বহু প্রচেষ্টা করে চলল যেন আত্মিক ভাবে পরিপক্ক হতে পারে। সে এত উন্নতি করে যে যিহোবার সাক্ষীদের এক মণ্ডলীর পালনের দায়িত্ব তাকে অর্পণ করা হয়। পরে সে তার উচ্চ আয়ের চাকরী ছেড়ে দিয়ে অগ্রগামী হয়। এখন সে ও তার স্ত্রী এসথার, দুজনে মিলে এই পরিচর্য্যার কাজ ভারতের দক্ষিণে ব্যাঙ্গালোরে করে চলেছে।

জীবনব্যাপী সান্ত্বনা

প্রায়ই আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ জানাই যে বহুবছর ধরে তিনি আমার প্রতি চাপ ও সমস্যা থাকতে অনুমাত দিয়েছিলেন। ঐ ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকলে আমি যিহোবার মহত্ত্ব, ক্ষমা, কোমল রক্ষনাবেক্ষণের অভিব্যক্তি এবং আন্তরিকতা আস্বাদনের যে বিশেষ সুযোগ তা বুঝতেই পারতাম না। (যাকোব ৫:১১) এটি সত্যই হৃদয় ভরিয়ে তোলে যখন বাইবেলে পড়ি যিহোবার যত্ন ও বিবেচনার ক্ষমতা, “বিধবা ও পিতৃহীনের প্রতি।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৯-২১) তবে বাস্তবে সেই যত্ন ও বিবেচনা উপভোগ করার যে আনন্দ ও সান্ত্বনা তার কাছে তুলনা হতে পারে না।

আমি যিহোবার প্রতি আমার অটল নির্ভরতা ও বিশ্বাসস্থাপন করতে শিখেছি। নিজের বোধশক্তির উপর কখনই নির্ভর করিনি, আমার সমস্ত পথে তাকেই আমি স্বীকার করেছি। (গীতসংহিতা ৪৩:৫; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) এক তরুণী বিধবা হিসাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন তার বাক্যের দ্বারা সান্ত্বনা পাই। আর আজ আমার এই ৬৯ বছর বয়সে আমি সত্যই বলতে পারি যে বাইবেলের জ্ঞান দ্বারা ও তার উপদেশ প্রয়োগ করে যে সান্ত্বনা আমি পেয়েছি তা মাপা যায় না।

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

[Pictures on page 27]

লিলি আর্থার ও তার পরিবারের সদস্যরা

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার