কাদের জন্য সত্যই স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে?
যিহোবা মানবজাতিকে ভালবাসেন। কেন, এই ভালবাসা এত মহান যে আমাদের পূর্বপুরুষ আদম যা হারিয়েছিল তা পুনরুদ্ধার করার প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে তিনি তার পুত্র, যীশু খ্রীষ্টকে প্রেরণ করেন! আর সে কি হারিয়েছিল? অনন্ত, সিদ্ধ মানবজীবন, সমস্ত অধিকার এবং প্রত্যাশা সমেত। (যোহন ৩:১৬) এই প্রায়শ্চিত্ত মানবজাতির প্রতি যীশুর প্রেমেরও নিদর্শন ছিল।—মথি ২০:২৮.
ঐশ্বরিক প্রেম প্রদর্শিত হয় যখন দুটি ঈশ্বর-দত্ত আশা সম্ভবপর হয় যীশুর প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের ওপর ভিত্তি করে। (১ যোহন ২:১, ২) মানুষ হিসাবে মৃত্যুবরণ করার পূর্বে, যাদের প্রতি ঐশ্বরিক অনুমোদন ছিল, তাদের জন্য শুধু একটিমাত্র আশা ছিল, পার্থিব পরমদেশে জীবন। (লূক ২৩:৪৩) ৩৩ সাধারণ শতাব্দীর পরে, যাইহোক, একটি “ক্ষুদ্র” মেষপালকে যিহোবা স্বর্গীয় আশা প্রদান করেন। (লূক ১২:৩২) কিন্তু সম্প্রতিকালে কি ঘটেছে? ১৯৩১ সাল থেকে রাজ্যের সংবাদ “অপর মেষের” প্রতি অধিক আধারিত হয়েছে, আর ১৯৩৫ সাল থেকে ঈশ্বর সেই রকম মেষতুল্য ব্যক্তিদের এক “বিরাট জনতা” খ্রীষ্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। (যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) তাদের হৃদয়ে ঈশ্বর পার্থিব পরমদেশে অনন্ত জীবনের আশা স্থাপিত করেছেন। তারা উৎকৃষ্ট খাদ্য উপভোগ করতে চায়, পশুপক্ষীর ওপরে প্রেমপূর্ণ কর্তৃত্ব পেতে চায়, এবং ধার্মিক সহমানবদের সান্নিধ্যে চিরকাল আনন্দ করতে চায়।
সহানুভূতিশীল রাজা এবং যাজকগণ
যেহেতু যীশু প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে জীবন দিয়েছিলেন আমাদের প্রতি প্রেমের কারণে, আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে তিনি একজন সহানুভূতিশীল রাজা হবেন। কিন্তু তার সহস্র বছরের রাজত্বে মানবজাতিকে সিদ্ধতায় নিয়ে যেতে তিনি একমাত্র ব্যক্তি হবেন না। যিহোবা স্বর্গে অন্যান্য সহানুভূতিশীল রাজাদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। হ্যাঁ, “তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সাথে রাজত্ব করিবে।”—প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৬.
কতজন সহশাসক খ্রীষ্টের সাথে থাকবে, আর এই মহান সুযোগের জন্য তাদের কিভাবে বেছে নেওয়া হবে? প্রেরিত যোহন সিয়োন পর্বতে ১৪৪,০০০ জনকে দেখেছিলেন মেষশাবক, যীশু খ্রীষ্টের সাথে। “পৃথিবী হইতে ক্রীত” হওয়ার জন্য, তারা জানবে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া, অসিদ্ধতার ভার বহন করা, ক্লেশ ভোগ করা, এবং মানুষ হিসাবে মৃত্যুবরণ করার অর্থ কি। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৫; ইয়োব ১৪:১) সুতরাং, কত সহানুভূতিশীল রাজা-যাজক তারা হবেন!
আত্মার সাক্ষ্য
এই ১৪৪,০০০ “সেই পবিত্রতম হইতে অভিষেক” লাভ করেছেন, যিনি যিহোবা। (১ যোহন ২:২০) ইহা স্বর্গীয় আশার জন্য অভিষেক। ঈশ্বর ‘তাহাদিগকে মুদ্রাঙ্কিতও করিয়াছেন, এবং আমাদের হৃদয়ে আত্মাকে বায়না দিয়াছেন।’—২ করিন্থীয় ১:২১, ২২.
হ্যাঁ, যাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছ এই বিষয়ে ঈশ্বরের আত্মার সাক্ষ্য তারা লাভ করেছেন। এই সম্বন্ধে পৌল রোমীয় ৮:১৫-১৭ পদে লেখেন: “তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা ‘আব্বা, পিতা,’ বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই।” ঈশ্বরের আত্মা, অথবা কার্য্যকারী শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ডেকে ওঠে, “আব্বা, পিতা!”
একজন ব্যক্তি যে স্বর্গীয় আহ্বান পেয়েছে, তার প্রধান প্রমাণ হল পুত্রাধিকারের এক দৃঢ় অনুভূতি, অথবা আত্মা। (গালাতীয় ৪:৬, ৭) এই রকম একজন ব্যক্তি সুনিশ্চিত যে তাকে ঈশ্বর আত্মিক পুত্র রূপে নিযুক্ত করেছেন স্বর্গ রাজ্যের ১৪৪,০০০ সহ দায়াদের অংশ হিসাবে। সে শপৎ করতে পারে যে স্বর্গীয় আশা তার নিজের ইচ্ছা অথবা কল্পনা নয়; বরঞ্চ, ইহার উৎস যিহোবা কারণ ঈশ্বরের আত্মা তার ওপরে কাজ করছে।—১ পিতর ১:৩, ৪.
ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার প্রভাবে, তার আত্মা, অর্থাৎ অভিষিক্ত ব্যক্তিদের প্রধান মনোভাব, কার্য্যকারী শক্তি হিসাবে কাজ করে। ইহার দ্বারা তারা চালিত হয় স্বর্গীয় আশা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য যা বলছে তার প্রতি ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে। তাদের প্রতি পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবার আচরণের প্রতিও তারা ইতিবাচক সাড়া দেয়। তাই তারা নিশ্চিত যে তারা ঈশ্বরের আত্মিক সন্তান এবং উত্তরাধিকারী।
যখন অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য তাঁর আত্মিক পুত্রদের সম্বন্ধে যা বলে, তা পড়েন, তাদের সহজাত প্রবৃত্তি বলে ওঠা, ‘এর অর্থ আমি!’ হ্যাঁ, তারা আনন্দের সাথে উত্তর দেয় যখন তাদের পিতার বাক্য এক স্বর্গীয় পুরস্কারের প্রতিজ্ঞা করে। তারা বলে, ‘এর অর্থ আমি!’ যখন তারা পড়েন: “প্রিয়তমেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান।” (১ যোহন ৩:২) আর যখন অভিষিক্ত ব্যক্তিরা পড়েন যে ঈশ্বর “তাঁহার সৃষ্ট বস্তু সকলের এক প্রকার অগ্রিমাংশ” হিসাবে বেছে নিয়েছেন তাদের ইচ্ছা হয় বলতে যে, ‘হ্যাঁ, তিনি আমাকে এই জন্য বেছে নিয়েছেন।’ (যাকোব ১:১৮) তারা জানে যে তারা “খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশ্যে” এবং তার মৃত্যুর উদ্দেশ্যে বাপ্তাইজিত হয়েছেন। (রোমীয় ৬:৩) তাই তাদের দৃঢ় আস্থা আছে যে তারা খ্রীষ্টের আত্মিক দেহের অংশ এবং তার মত মৃত্যুবরণ করার এবং স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার আশা রাখেন।
স্বর্গীয় রাজ্যের উত্তরাধিকার হওয়ার জন্য, অভিষিক্ত ব্যক্তিদের তারা যে ‘আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন’ করা উচিৎ। (২ পিতর ১:৫-১১) তারা বিশ্বাস দ্বারা চলেন এবং আত্মিক উন্নতি করতেই থাকেন, যেমন পার্থিব আশা-সম্পন্ন ব্যক্তিরাও করেন। তাই, আত্মার সাক্ষ্যের সঙ্গে আর কি জড়িত রয়েছ?
কেন তারা অংশগ্রহণ করেন
অভিষিক্ত ব্যক্তিরা স্বর্গে যেতে চান কারণ তারা বর্তমান পার্থিব জীবনের প্রতি অসন্তুষ্ট, এমন নয়। (যিহুদা ৩, ৪, ১৬ তুলনা করুন।) বরঞ্চ, পবিত্র আত্মা তাদের আত্মার সাথে সাক্ষ্য দেয় যে তারা ঈশ্বরের সন্তান। তারা এ বিষয়েও নিশ্চিত যে তাদের নতুন চুক্তির অন্তর্গত করা হয়েছে। এই চুক্তির অংশীদার যিহোবা ঈশ্বর এবং আত্মিক ইস্রায়েল। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪; গালাতীয় ৬:১৫, ১৬; ইব্রীয় ১২:২২-২৪) এই চুক্তি, যা কার্য্যকারী হয়েছে যীশুর পতিত রক্তের মাধ্যমে, যিহোবার নামপ্রযুক্ত এক জাতিকে পৃথক করেছে এবং এই অভিষিক্ত ব্যক্তিদের অব্রাহামের “বীজের” অংশে পরিণত করেছে। (গালাতীয় ৩:২৬-২৯; প্রেরিত ১৫:১৪) এই নতুন চুক্তি কার্য্যকারী থাকবে যতক্ষণ না সমস্ত আত্মিক ইস্রায়েলীয়রা স্বর্গে অমর জীবনে পুনরুত্থিত হচ্ছেন।
উপরন্তু, যাদের সত্যই স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছ তাদের কোন সন্দেহ থাকে না যে তারাও স্বর্গীয় রাজ্যের জন্য চুক্তির অন্তর্গত। যীশু তার এবং তার অনুগামীদের মধ্যে এই চুক্তির কথা উল্লেখ করেন যখন তিনি বলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার সাথে চুক্তি করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের সাথে এক রাজ্যের চুক্তি করিতেছি, যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” (লূক ২২:২৮-৩০, NW) যীশুর শিষ্যদের প্রতি এই চুক্তি উদ্বোধন করা হয় যখন ৩৩ খ্রীষ্টাব্হের পঞ্চাশত্তমীর দিনে তাদের পবিত্র আত্মা দ্বারা অভিষিক্ত করা হয়। খ্রীষ্ট এবং তার সহ শাসকদের প্রতি ইহা চিরকাল কার্য্যকারী থাকবে।—প্রকাশিত বাক্য ২২:৫.
যাদের প্রতি স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে তারা নিশ্চিত যে তারা নতুন চুক্তির এবং রাজ্যের চুক্তির অন্তর্গত। তাই ন্যায়সঙ্গতই তারা প্রভুর সান্ধ্য ভোজ অথবা যীশু খ্রীষ্টের স্মরণার্থক সভার বাৎসরিক উদ্যাপনে প্রতীকচিহ্নমূলক রুটী এবং দ্রাক্ষারস গ্রহণ করেন। তাড়িশূণ্য রুটী যীশুর নিষ্পাপ মানব দেহকে চিত্রিত করে, এবং দ্রাক্ষারস তার সিদ্ধ রক্ত যা পতিত হয় তার মৃত্যুর মাধ্যমে এবং নতুন চুক্তিকে বলবৎ করে।—১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৬.
যদি যিহোবা আপনার ক্ষেত্রে স্বর্গীয় জীবনের অদম্য আশা রাখেন, তাহলে তার ওপর আপনি আস্থা রাখছেন। আপনি সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে প্রার্থনা করে থাকেন। ইহা আপনাকে নিমগ্ন করে রাখে, এবং ইহাকে আপনার জীবনধারা থেকে আপনি বাদ দিতে পারেন না। আপনার আত্মিক বিষয়ের জন্য ব্যাকুল বাসনা রয়েছ। কিন্তু যদি আপনি বিভক্ত এবং অনিশ্চিত হন তাহলে অবশ্যই আপনার প্রভুর সান্ধ্য ভোজের প্রতীকচিহ্ন গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
কেন ভুল ধারণা?
কিছু ব্যক্তি হয়তো অযথা স্মরণার্থক প্রতীক গ্রহণ করতে পারে কারণ তারা প্রকৃতই স্বীকার করে না যে অভিষিক্তকরণ “যে ইচ্ছা করে, বা দৌড়ে, তাহা হইতে হয় না, কিন্তু দয়াকারী ঈশ্বর হইতে হয়।” (রোমীয় ৯:১৬) কোন একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে না যে সে নতুন চুক্তির অন্তর্গত হয়ে খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গ রাজ্যে সহ দায়াদ হতে চায় কিনা। যিহোবার নির্বাচন প্রকৃত অর্থ রাখে। প্রাচীণ ইস্রায়েলে, ঈশ্বর নির্বাচিত করেন কারা তাঁর যাজক হবেন, এবং কোরহকে মৃত্যুদণ্ড দেন উদ্ধতভাবে যাজকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করার জন্য যার প্রকৃত অধিকারী ছিল হারোণের বংশ। (যাত্রাপুস্তক ২৮:১; গণনাপুস্তক ১৬:৪-১১, ৩১-৩৫; ২ বংশাবলী ২৬:১৮; ইব্রীয় ৫:৪, ৫) তদ্রুপ, যিহোবা অসন্তুষ্ট হবেন যদি আহ্বান করা হয়নি সেই ব্যক্তি নিজেকে স্বর্গীয় রাজা এবং যাজক হিসাবে ঘোষনা করে।—১ তীমথিয় ৫:২৪, ২৫ তুলনা করুন।
প্রবল সমস্যার জন্য আবেগবশত একজন ব্যক্তি হয়তো ভ্রান্তিপূর্বক মনে করতে পারে যে তার স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছ। সঙ্গীর মৃত্যু অথবা অন্য কোন দুঃখজনক ঘটনার জন্য কেউ হয়তো পার্থিব জীবনে আগ্রহ হারাতে পারে। অথবা একজন ঘনিষ্ট বন্ধু অভিষিক্ত হতে পারে, আর সেইজন্য সেই ব্যক্তি একই লক্ষ্যস্থানে পৌঁছাতে চায়। এই সব কারণের জন্য তার মনে হতে পারে যে স্বর্গে জীবন তার জন্য। কিন্তু ইহা কাউকে পুত্রাধিকারের আত্মা দেওয়ার ঈশ্বরের ব্যবস্থা নয়। পৃথিবী সম্বন্ধে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যর প্রতি উপলব্ধির অভাব বোঝাবে যদি কেউ অপ্রীতিকর অবস্থার জন্য অথবা পার্থিব জীবনসংক্রান্ত মানসিক উদ্বেগের জন্য স্বর্গে যেতে চায়।
অতীতের কোন ধর্মীয় ধারণার জন্যেও একজন ভ্রান্তিপূর্বক মনে করতে পারে যে তার স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছ। হয়তো সে একসময় কোন মিথ্যা ধর্মের সাথে জড়িত ছিল যেখানে দেখানো হত যে বিশ্বাসীদের জন্য একমাত্র আশা স্বর্গীয় জীবন। তাই, একজন খ্রীষ্টানকে সতর্ক থাকতে হবে আবেগবশত অথবা পূর্বের ভ্রান্তিজনক ধারণার দ্বারা যেন সে চালিত না হয়।
সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ
প্রেরিত পৌল অতি উপযুক্ত কথা বলেন যখন তিনি লেখেন: “যে কেহ অযোগ্যরূপে প্রভুর রুটী ভোজন কিম্বা পানপাত্রে পান করিবে, সে প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী হইবে। কিন্তু মনুষ্য আপনার পরীক্ষা করুক, এবং এই প্রকারে সেই রুটী ভোজন ও সেই পানপাত্রে পান করুক। কেননা যে ব্যক্তি ভোজন ও পান করে, সে যদি তাঁহার শরীর না চিনে, তবে সে আপনার বিচারাজ্ঞা ভোজন পান করে।” (১ করিন্থীয় ১১:২৭-২৯) সুতরাং, একজন বাপ্তিষ্মিত ব্যক্তি যে সম্প্রতিকালে মনে করতে শুরু করেছে যে তাকে স্বর্গে আহ্বান করা হয়েছে তার উচিৎ প্রার্থনা সহকারে বিষয়টি অতি সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা।
সেইরকম একজন ব্যক্তি নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে পারে: ‘স্বর্গীয় জীবনের আশা রাখতে আমাকে কি অন্যেরা প্রভাবিত করেছে?’ ইহা ভুল হবে, কারণ ঈশ্বর কাউকে নিযুক্ত করেননি অন্যদের এই সুযোগ লব্ধ করাবার জন্য। কাল্পনিক জগতের প্রতি প্রবণতা থাকার অর্থ এই নয় যে কেউ ঈশ্বর কর্ত্তৃক অভিষিক্ত, আর তিনি রাজ্যের উত্তরাধিকারদের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে জানিয়ে অভিষিক্ত করেন না।
কিছু ব্যক্তি নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারে: ‘খ্রীষ্টান হওয়ার আগে, আমি কি নেশাকর ওষুধের ব্যবহার করতাম? আমি কি এমন ওষুধ ব্যবহার করছি যা আবেগ-অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে? আমি কি মানসিক অথবা আবেগঘটিত সমস্যার জন্য চিকিৎসা করিয়েছি?’ কেউ কেউ বলেছে যে প্রথমে তারা যাকে মনে করে স্বর্গীয় আশা তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অন্যেরা বলে যে কিছু সময়ের জন্য ঈশ্বর তাদের পার্থিব আশা সরিয়ে নিয়ে অবশেষে স্বর্গীয় আশা দান করেছেন। কিন্তু এই রকম পদ্ধতি ঐশ্বরিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায়। উপরন্তু, বিশ্বাস অনিশ্চিত নয়; ইহা দৃঢ় নিশ্চিৎ।—ইব্রীয় ১১:৬.
একজন আরও জিজ্ঞাসা করতে পারে নিজেকে: ‘আমি কি খ্যাতি লাভ করার ইচ্ছা করি? আমি কি দায়িত্বসম্পন্ন পদের জন্য এখন উচ্চাকাঙ্খী অথবা খ্রীষ্টের সাথে একজন রাজা এবং যাজক হিসাবে?’ প্রথম শতাব্দীতে, যখন স্বর্গীয় রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছিল তখন প্রত্যেক খ্রীষ্টান গভার্নিং বডির সদস্য অথবা প্রাচীণ কি পরিচারক দাস হিসাবে উল্লেখযোগ্য স্থানে ছিলেন না। অনেকে নারী ছিলেন, এবং তাদের কোন বিশেষ কর্তৃত্ত্বভার ছিল না; এমনকি আত্মা দ্বারা অভিষিক্তকরণ ঈশ্বরের বাক্যের অতিরিক্ত জ্ঞান নিয়ে আসে না, কারণ পৌলের প্রয়োজন হয়েছিল কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তিদের উপদেশ ও শিক্ষা দেওয়ার। (১ করিন্থীয় ৩:১-৩; ইব্রীয় ৫:১১-১৪) যাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছ তারা নিজেদের বিশিষ্ট ব্যক্তি মনে করেন না, এবং তারা যে অভিষিক্ত এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন না। বরঞ্চ, তারা প্রদর্শন করেন সেই নম্রতা যা যাদের “খ্রীষ্টের মন আছে” তাদের কাছ থেকে আশা করা যায়। (১ করিন্থীয় ২:১৬) তারা আরও উপলব্ধি করে যে ঈশ্বরের ধার্মিক মান সকল খ্রীষ্টানদের রক্ষা করা উচিৎ, তাদের আশা স্বর্গীয় বা পার্থিব যাই হোক।
স্বর্গীয় আশার অধিকারী বলে দাবি করলেই কোন ব্যক্তি বিশেষ জ্ঞান লাভ করবে না। তাঁর পার্থিব সংগঠনকে আত্মিক খাদ্য প্রদান করার জন্য ঈশ্বর একটি মাধ্যম ব্যবহার করেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তাই কেউ যেন মনে না করে যে অভিষিক্ত খ্রীষ্টান হওয়ার জন্য পার্থিব আশাসম্পন্ন “বিরাট জনতার” থেকে তার প্রজ্ঞা অধিক। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) সাক্ষ্যদানে দক্ষতা, শাস্ত্রীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, অথবা বাইবেল-ভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়া থেকে আত্মা দ্বারা অভিষিক্তকরণ বোঝা যায় না, কারণ পার্থিব আশাসম্পন্ন খ্রীষ্টানরাও এই বিষয়গুলিতে অতি উত্তম দক্ষতা দেখায়। অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মতই তারাও অনুকরণযোগ্য খ্রীষ্টীয় জীবন যাপন করছে। এমনকি, খ্রীষ্টের আবির্ভাবের পূর্বে শিমশোন এবং অন্যরা ঈশ্বরের আত্মাপ্রাপ্ত এবং উদ্যোগ ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ ছিলেন। কিন্তু, এই ‘বৃহৎ সাক্ষীমেঘের’ একজনও স্বর্গীয় আশার অধিকারী ছিলেন না।—ইব্রীয় ১১:৩২-৩৮; ১২:১; যাত্রাপুস্তক ৩৫:৩০, ৩১; বিচারকর্ত্তৃগণ ১৪:৬, ১৯; ১৫:১৪; ১ শমূয়েল ১৬:১৩; যিহিষ্কেল ২:২.
মনে রাখবেন কে নির্বাচন করেন
যদি একজন সহবিশ্বাসী স্বর্গীয় আহ্বান সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, একজন প্রাচীণ অথবা অন্য অভিজ্ঞ খ্রীষ্টান ব্যক্তি তার সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু একজন ব্যক্তি অন্যজনের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আর যিহোবা স্বর্গীয় আশা প্রদান করেন। অভিষিক্ত ব্যক্তিরা “ক্ষয়ণীয় বীর্য্য হইতে নয়, কিন্তু অক্ষয় বীর্য্য হইতে ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা পুনর্জাত” হয়েছে। (১ পিতর ১:২৩) তাঁর আত্মা ও বাক্যের মাধ্যমে, ঈশ্বর সেই “বীর্য্য” বপন করেন যা কোন ব্যক্তিকে স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন “নূতন সৃষ্টি” করে তোলে। (২ করিন্থীয় ৫:১৭) হ্যাঁ, যিহোবা নির্বাচন করেন।
নতুন ব্যক্তিদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করার সময়, তাই, ইহা উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় নয় যে তারা নির্ণয় করার চেষ্টা করুক তাদের স্বর্গীয় আহ্বান আছে কিনা। কিন্তু যদি একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি অবিশ্বাসী প্রমাণিত হয় এবং অন্য একজনকে তার জায়গায় নেওয়ার প্রয়োজন হয়? তাহলে যে আমাদের স্বর্গীয় পিতার বহু বছর ধরে বিশ্বস্ত ভাবে উল্লেখযোগ্য পরিচর্য্যা করে এসেছে তাকে ঈশ্বর এই স্বর্গীয় আহ্বান জানাবেন ইহাই সম্ভাব্য।
বর্তমানে, ঈশ্বরের সংবাদের প্রধান লক্ষ্য খ্রীষ্টের স্বর্গীয় ভার্য্যার অংশ হওয়ার জন্য নয়। বরঞ্চ, “আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, ‘আইস!’” ইহা একটি পার্থিব পরমদেশে জীবনের জন্য আমন্ত্রণ। (প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২, ১৭) যখন অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এই কাজে নেতৃত্ত্ব গ্রহণ করেন, তারা “নম্রতা” প্রদর্শন করেন আর তারা ‘যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে যত্ন’ করেন।—ইফিষীয় ৪:১-৩; ২ পিতর ১:৫-১১. (w91 3/15)