পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
যোহন বাপ্তাইজকের পিতা, সখরিয়কে কি বধির এবং নির্বাক করা হয়, যেমন লূক ১:৬২ ইঙ্গিত করে বলে বোধ হয়?
অনেকে এই উপসংহারে এসেছে যে সখরিয় বধিরও হয়ে গিয়েছিল। বাইবেলের বিবরণে আমরা পড়ি: “তাহার পিতার নামানুসারে [বালকটির] নাম সখরিয় রাখিতে চাহিল। কিন্তু তাহার মাতা উত্তর করিয়া কহিলেন: ‘তাহা নয়! ইহার নাম যোহন রাখা যাইবে।’ তাহারা তাহাকে কহিল, ‘আপনার গোষ্ঠীর মধ্যে এ নামে ত কাহাকেও ডাকা হয় না।’ পরে তাহারা তাহার পিতাকে সঙ্কেতে জিজ্ঞাসা করিল, তাহার ইচ্ছা কি, ইহার কি নাম রাখা যাইবে। আর তিনি একখান লিপিফলক চাহিয়া লইয়া লিখিলেন, ‘ইহার নাম যোহন।’”—লূক ১:৫৯-৬৩.
এই বিবরণে, যদিও, স্পষ্টভাবে কিছুই বলা হয়নি যে সখরিয় কিছুকালের জন্য শুনতে অক্ষম ছিল।
এর পূর্বে স্বর্গদূত গাব্রীয়েল সখরিয়র কাছে একটি পুত্রসন্তানের জন্মের কথা ঘোষনা করে যার নাম রাখা হবে যোহন। বয়স্ক সখরিয় তা বিশ্বাস করা কঠিন মনে করে। সেই স্বর্গদূত উত্তর দেয়: “দেখ, এই সকল যে দিন ঘটিবে, সেই দিন পর্য্যন্ত তুমি নীরব থাকিবে, কথা কহিতে পারিবে না; যেহেতুক আমার এই যে সকল বাক্য যথাসময়ে সফল হইবে, ইহাতে তুমি বিশ্বাস করিলে না।” (লূক ১:১৩, ১৮-২০) স্বর্গদূত বলে যে সখরিয়র বাক্শক্তি প্রভাবিত হবে, তার শ্রবণশক্তি নয়।
সেই বিবরণ আরও বলে: “পরে তিনি [ধর্ম্মধাম থেকে] বাহিরে আসিয়া [অপেক্ষারত ব্যক্তিদের সাথে] কথা কহিতে পারিলেন না; তখন তাহারা বুঝিল যে, মন্দিরের মধ্যে তিনি কোন দর্শন পাইয়াছেন; আর তিনি তাহাদের নিকটে নানা সঙ্কেত করিতে থাকিলেন, এবং বোবা হইয়া রহিলেন।” (লূক ১:২২) যে গ্রীক শব্দ এখানে “বোবা” অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে তা এই ধারনা দেয় যে বাক্শক্তি, শ্রবণশক্তি, অথবা উভয়ই রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। (লূক ৭:২২) সখরিয়র ক্ষেত্রে কি হয়? তিনি সুস্থ হলে কি হয় তা বিবেচনা করুন। “তখনই তাহার মুখ ও তাহার জিহ্বা খুলিয়া গেল, আর তিনি কথা কহিলেন, ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে লাগিলেন।” (লূক ১:৬৪) এর দ্বারা যথাযতভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গি রাখা যায় যে শুধুমাত্র সখরিয়র বাক্শক্তি রুদ্ধ হয়েছিল।
তাহলে অন্যেরা কেন সখরিয়কে “সঙ্কেতে জিজ্ঞাসা করিল, তাহার ইচ্ছা কি, [পুত্রসন্তানটির] কি নাম রাখা যাইবে”? কিছু অনুবাদক ইহাকে এমনকি এইভাবে বর্ণনা করেন “সঙ্কেতের ভাষায়” অথবা “সঙ্কেত ভাষা ব্যবহার করে।”
সখরিয়, যিনি স্বর্গদূতের ঘোষনার সময় থেকে নির্বাক ছিলেন নিজেকে ব্যক্ত করতে প্রায়ই ইঙ্গিত ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, এক প্রকার সাঙ্কেতিক ভাষা। উদাহরণস্বরূপ, তিনি যারা মন্দিরে ছিলেন “তাহাদের নিকটে নানা সঙ্কেত করিতে থাকিলেন।” (লূক ১:২১, ২২) পরে যখন তিনি একটি লিপিফলক চাইলেন, তিনি নিশ্চই সঙ্কেত অথবা ইঙ্গিত ব্যবহার করেছিলেন। (লূক ১:৬৩) সুতরাং, ইহা সম্ভব যে, তার নির্বাক থাকাকালীন তার চারিপাশে যারা ছিল তারাও সঙ্কেত ব্যবহার করতে শুরু করে।
যাইহোক, লূক ১:৬২ পদে উল্লিখিত সঙ্কেতের জন্য আরেকটি অধিক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে। ইলীশাবেত সবেমাত্র তার পুত্রের নাম সম্বন্ধে নিজের মতামত জানিয়েছেন। তাই, তার বিরুদ্ধাচরণ না করে, তারা হয়তো তার পরবর্তী এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয় তার স্বামীর সিদ্ধান্ত জানার জন্য। তারা তা করতে পারত শুধুমাত্র ঘাড় নেড়ে অথবা ইঙ্গিত করে। তাদের প্রশ্ন যাতে সখরিয় পড়তে পারে সেই জন্য তারা যে লিখে দেয়নি তা হয়তো প্রমাণ যে তিনি তার স্ত্রীর কথা শুনতে পেয়েছিলেন। তাই, ঘাড় নাড়া অথবা সেইরকম কোন সঙ্কেতের এই অর্থ হতে পারত, ‘আমরা সকলে (তুমিও, সখরিয়) তার পছন্দের কথা শুনলাম, কিন্তু পুত্রসন্তানটির নাম সম্বন্ধে তোমার শেষ সিদ্ধান্ত কি?’
আর তৎক্ষণাৎ আরেকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতির পরিবর্তন করে। “তখনই তাহার মুখ ও তাহার জিহ্বা খুলিয়া গেল, আর তিনি কথা কহিলেন।” (লূক ১:৬৪) যদি তার শ্রবণশক্তি না আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে সেই সম্বন্ধে উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। (w92 4/1)