“সঙ্কটের কাল” থেকে কে রক্ষা পাবে?
“আর যে কেহ যিহোবার নামে ডাকিবে সেই রক্ষা পাইবে।”—যোয়েল ২:৩২, NW.
১. দানিয়েল এবং মালাখি অনুসারে, যারা “সঙ্কটের কাল”এ পরিত্রাণ পাবে তাদের কি চরিত্র বর্ণনা করে?
আমাদের দিনের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে, ভাববাদী দানিয়েল লেখেন: “আর এমন সঙ্কটের কাল উপস্থিত হইবে, যাহা মনুষ্যজাতির স্থিতিকাল অবধি সেই সময় পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই; কিন্তু তৎকালে তোমার স্বজাতীয় যে কাহারও নাম পুস্তকে লিখিত পাওয়া যাইবে, সে উদ্ধার পাইবে।” (দানিয়েল ১২:১) কথাগুলি অবশ্যই সান্তনাদায়ক! যিহোবার অনুমোদনপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তিনি স্মরণ করবেন, যেমন মালাখি ৩:১৬ পদ ঘোষনা করে: “তখন, যাহারা যিহোবাকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং যিহোবা কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা যিহোবাকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” (NW).
২. যিহোবার নামের উপর ধ্যান করার দ্বারা কি ফল হয়?
২ যিহোবার নামের বিষয় ধ্যান আমাদের পরিচালনা করে সঠিক জ্ঞানের প্রতি যা সম্পর্কযুক্ত তাঁর সাথে, তাঁর খ্রীষ্টের সাথে, ও তাঁর সকল মহৎ উদ্দেশ্যগুলির সঙ্গে। সেইকারনে, তাঁর লোকেরা শেখে তাঁকে শ্রদ্ধা করতে, তাঁর সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে, এবং তাঁকে তাদের ‘সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রেম করতে।’ (মার্ক ১২:৩৩; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) যিহোবা এই করুণাময় ব্যবস্থা করেছেন, যীশু খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে, যাতে পৃথিবীর যে নম্র লোকেরা আছে তারা অনন্তজীবন পায়। সেইজন্য, ইহারা আস্থার সাথে স্বর্গীয় বাহিনী যা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করে যীশুর জন্মের সময় তাদের সেই কথার প্রতিধ্বনি করতে পারে, এই বলে: “উর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”—লূক ২:১৪.
৩. এই পৃথিবীতে শান্তি আসার পূর্বে, যিহোবার কি কর্ম সম্পন্ন হবে?
৩ অনেক লোকে যা মনে করে তার থেকে সেই শান্তি অনেক নিকটে। কিন্তু প্রথমে আসতে হবে যিহোবার বিচার এই বিকৃত জগতের উপর। তাঁর ভাববাদি সফনিয় ঘোষনা করেন: “যিহোবার মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে।” ইহা কি ধরনের দিন? ভাববাণী বলে চলে: “ঐ যিহোবার দিনের শব্দ; সেখানে বীর তীব্র আর্ত্তরব করিতেছে। সেই দিন ক্রোধের দিন, সঙ্কটের ও সঙ্কোচের দিন, নাশের ও সর্ব্বনাশের দিন, অন্ধকারের ও তিমিরের দিন, মেঘের ও গাঢ় তিমিরের দিন, তূরীধ্বনির ও রণনাদের দিন; তাহা প্রাচীরবেষ্টিত নগর ও উচ্চ দুর্গ সকলের বিপক্ষ। আমি মনুষ্যদিগকে দুঃখ দিব; তাহারা অন্ধের ন্যায় ভ্রমণ করিবে, কারণ তাহারা যিহোবার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে।”—সফনিয় ১:১৪-১৭; আরও দেখুন হবক্কূক ২:৩; ৩:১-৬, ১৬-১৯.
৪. কারা আজ সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছে ঈশ্বরকে জানার ও সেবা করার ক্ষেত্রে?
৪ আনন্দের সাথে আজ লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা ঈশ্বরকে জানার ও সেবা করার এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছে। মনোনীত খ্রীষ্টানদের, যাদের নতুন চুক্তিতে নেওয়া হয়েছে, তাদের সম্বন্ধে ভাববাণী করা ছিল: “‘কারণ তাহারা ক্ষুদ্র কি মহান সকলেই আমাকে জ্ঞাত হইবে’, ইহা যিহোবা কহেন।” (যিরমিয় ৩১:৩৪, NW) বর্তমান-দিনের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ইহারা মূখ্য ভূমিকা নিয়েছে। আর এখন যখন আরও বেশী সংখ্যায় মনোনীত অবশিষ্টাংশরা তাদের পার্থিব জীবনযাত্রা শেষ করছে, “অপর মেষদের” সেই “বিরাট জনতা” আগিয়ে এসেছে ‘ঈশ্বরকে দিবারাত্র ঐশিক সেবা প্রদান করার জন্য’ তাঁর মন্দিরতুল্য ব্যবস্থার অধীনে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫; যোহন ১০:১৬) আপনি কি তাদের মধ্যে একজন যিনি এই অমূল্য সুযোগ উপভোগ করছেন?
কি করে “মনোরঞ্জন বস্তু সকল” আসবে
৫, ৬. সমস্ত জাতিদের ধ্বংসের জন্য কম্পান্বিত করার আগে, রক্ষার কি কাজ সম্পন্ন হয়?
৫ আসুন এবার আমরা দেখি হগয় ২:৭, যেখানে যিহোবা ভবিষৎবাণী করেন তাঁর আত্মিক উপাসনার ঘৃহ সম্বন্ধে। তিনি বলেন: “আর আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই ঘৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব।” বাইবেলের ভবিষৎবাণী দেখায় যে ‘সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত’ করা বোঝায় সব জাতির উপর যিহোবার বিচারজ্ঞা। (নাহূম ১:৫, ৬; প্রকাশিত বাক্য ৬:১২-১৭) সেইকারণে, হগয় ২:৭ পদে যিহোবার যে কর্মের কথা বর্ণনা করা আছে তা তুঙ্গে পৌঁছাবে যখন জাতিগণকে তাদের আস্তিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে—সম্পূর্ণ ধ্বংস। কিন্তু জাতিগণের “মনোরঞ্জন বস্তু সকল” কি হবে? তাদেরও কি সেই শেষ কম্পমান ধ্বংস পর্য্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নিয়ে আসার জন্য? না।
৬ যোয়েল ২:৩২ পদ বলে যে “যে কেহ যিহোবার নামে ডাকিবে সে রক্ষা পাবে; কারণ যিহোবার বাক্যানুসারে সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকিবে, এবং পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকিবে, যাহাদিগকে যিহোবা ডাকিবে।” যিহোবা তাদের বাহির করে আনেন, আর তারা তাঁর নামে ডাকে যীশুর প্রায়শ্চিত্তের উপর বিশ্বাস করে সেই চরম পরিণতিমূলক কম্পমান মহাক্লেশ আসার পূর্বে। (তুলনা করুন যোহন ৬:৪৪; প্রেরিত ২:৩৮, ৩৯) আনন্দের সাথে, সেই মূল্যবান বিরাট জনতা, যাদের সংখ্যা এখন প্রায় ৪০ লক্ষের উপরে, যিহোবার উপাসনার ঘৃহে ‘তারা এসেছে’ এই পূর্বজ্ঞানে যে তাঁর ‘সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত’ করা হর্মাগিদোনে হবে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০, ১৪.
৭. ‘যিহোবার নামে ডাকার সাথে’ কি জড়িত আছে?
৭ এই রক্ষাপ্রাপ্তরা কি করে যিহোবার নামে ডাকে? যাকোব ৪:৮ পদ এই বিষয় আমাদের ইঙ্গিত দেয়, এই বলে: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন। হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর।” যেমন মনোনিত অবশিষ্টাংশেরা পথ প্রদর্শন করে, যারা আশা করে যে হর্মাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত সেই বিরাট জনতার মধ্যে থাকবে তাদেরও এখন পথ প্রর্দশক মনোনীতদের মত নিস্পত্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি আপনি আশা করেন রক্ষা পাওয়ার, তাহলে আপনাকে যিহোবার বিশুদ্ধ বাক্যের গভীরে গিয়ে পান করতে হবে এবং তার ধার্ম্মিক মানকে আপনার জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। আপনাকে নিস্পতিমূলক ধাপ নিতে হবে আপনার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে, এবং তা বাপ্তিস্মের মাধ্যমে প্রদর্শন করে। বিশ্বাসে আপনার যিহোবাকে ডাকার সাথে অন্তর্ভুক্ত আছে তাঁর সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া। সেইজন্য, রোমীয় ১০ অধ্যায়, ৯ এবং ১০ পদে, পৌল লেখেন: “কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।” তারপর ১৩ পদে, প্রেরিত উদ্ধৃত করেন যোয়েলের ভাববাণী, এবং জোর দেন যে “যে কেহ যিহোবার নামে ডাকিবে সে রক্ষা পাইবে।” (NW)
‘অন্বেষণ, অন্বেষণ, অন্বেষণ’
৮. (ক) ভাববাদী সফনিয়ের কথা অনুসারে, যিহোবা পরিত্রণের জন্য কি চান? (খ) সফনিয় ২:৩ পদে যে “হয় ত” কথা ব্যবহার করা হয়েছে তা আমাদের কাছে কি জ্ঞাপন করে?
৮ যদি আমারা বাইবেলের বই সফনিয়, ২ অধ্যায়, ২ এবং ৩ পদে যাই, সেখানে আমরা পড়ি যিহোবা পরিত্রাণের জন্য কি চান: “হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা যিহোবার অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীনল কর। হয় ত যিহোবার ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্ত স্থানে রক্ষা পাইবে।” লক্ষ্য করুন বলা হয়েছে “হয় ত।” এটা একবার রক্ষা পেয়েছি, তাই সব সময়ে রক্ষা পাব তেমন ঘটনাও নয়। সেই দিনে আমাদের গুপ্ত স্থানে রক্ষা পাওয়া নির্ভর করছে আমদের ক্রমাগত তিনটি জিনিষ করে যাওয়ার উপরে। আমাদের যিহোবাকে অন্বেষণ করতে হবে, ধার্ম্মিকতার অনুশীলন করতে হবে, এবং নম্রতার অনুশীলন করতে হবে।
৯. যারা নম্রতার অনুশীলন করে তারা কিভাবে পুরস্কৃত হয়?
৯ কি অপূর্ব, না, নম্রতার অনুশীলন করা! গীতসংগীতা ৩৭, ৯ থেকে ১১ পদে, আমরা পড়ি: “কারণ দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হইবে কিন্তু যাহারা যিহোবার অপেক্ষা করে, তাহারা দেশের অধিকারী হইবে। . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” আর ধার্ম্মিকতার অনুশীলন সম্বন্ধে কি? ২৯ পদ বলে: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” আর যিহোবাকে অন্বেষণ করা সম্বন্ধে, ৩৯ থেকে ৪০ পদ আমাদের বলে: “কিন্তু ধার্ম্মিকদের পরিত্রাণ যিহোবা হইতে, তিনি সঙ্কটকালে তাহাদের দৃঢ় দুর্গ। যিহোবা তাহাদের সহায্য করেন, তাহাদিগকে রক্ষা করেন ও তাহাদের পরিত্রাণ করেন, কারণ তাহারা তাঁহার শরণ লইয়াছে।” (NW).
১০. কারা বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যিহোবা এবং নম্রতার অনুশীলন করা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে?
১০ খ্রীষ্টীয় জগতের সম্প্রদায়গুলি যিহোবার অনুশীলন করায় বিফল হয়েছে। তার পাদ্রিরা তাঁর বহুমূল্য নামকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং দাম্ভীকভাবে তা তাদের বাইবেলের অনুবাদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তারা পছন্দ করে উপাসনা করতে এক নামহীন প্রভু অথবা ঈশ্বরকে এবং এক পৌত্তলিক ত্রিত্বকে শ্রদ্ধা করতে। আরও, খ্রীষ্টীয় জগত ধার্ম্মিকতার অনুশীলন করে না। তার অনেক অনুগতরা অনৈতিক জীবনযাপন হয় গ্রহণ করে নয় তা উৎসাহিত করে। যীশুর মতো নম্রতা অনুশীলন করার বদলে, তারা এক আড়ম্বর করে, যেমন উদাহরণস্বরূপ টেলিভিশনে, বিলাসপ্রিয় ও অনৈতিক জীবনধারা দেখিয়ে। পাদ্রিরা তাদের নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করে তাদের পালের দ্বারা। যাকোব ৫:৫ অনুসারে, “তোমরা পৃথিবীতে সুখভোগ ও বিলাস করিয়াছ, তোমরা হত্যার দিনে আপন আপন হৃদয় তৃপ্ত করিয়াছ।” যিহোবার দিন যত নিকটে আসে, তারা তত দেখবে যে এই অনুপ্রাণিত বাক্য তাদের প্রতি প্রযোজ্য: “ক্রোধের দিনে ধন উপকার করে না।”—হিতোপদেশ ১১:৪.
১১. সেই পাপ-পুরুষ কে, এবং সে কি ভাবে অনেক রক্তপাতের দোষ জমা করেছে?
১১ বর্তমান শতাব্দীর প্রথম শতাব্দীতে, যেমন প্রেরিত পৌল তার থিষলনীকীয়ের দ্বিতীয় পত্রে বর্ণনা করেন, কিছু খ্রীষ্টানেরা তখন উত্তেজিত হয় এই ভেবে যে যিহোবার দিন তাদের উপরে তখনই এসে পড়েছে। কিন্তু পৌল সাবধান করেন যে প্রথমে সেই ধর্ম্ম-ভ্রষ্টতা আসতে হবে, এবং তারপর “সেই পাপ-পুরুষ”কে প্রকাশ পেতে হবে। (২ থিষলনীকীয় ২:১-৩) এখন, এই বিংশ শতাব্দীতে, আমরা উপলব্ধি করতে পারি এই ধর্ম্মভ্রষ্টতার ব্যাপকতা এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে খ্রীষ্টীয় জগতের পাদ্রিরা কত ধর্ম্ম-ভ্রষ্ট। এই শেষের দিনে ১৯১৪ সাল থেকে, পাদ্রিরা দারুণ রক্তপাতের দোষ জড় করেছে ‘ফাল ভাঙ্গিয়া খড়গ গড়কে’ উৎসাহ দিয়ে। (যোয়েল ৩:১০) তারা মিথ্যা মতবাদ শিক্ষা দিয়ে চলেছে, যেমন তারা ধরে আছে যে মানুষের আত্মা অমর, পুরগাতরি, নরক অগ্নি, শিশু বাপ্তিস্ম, ত্রিত্ব, এবং আরও এইরূপ শিক্ষা। যিহোবা যখন তার বিচারজ্ঞা দেবেন তারা তখন কোথায় দাঁড়াবে? হিতোপদেশ ১৯:৫ বলে: “মিথ্যাভাষী রক্ষা পাইবে না।”
১২. (ক) মানুষের “আকাশ” এবং “পৃথিবী” কি যাহা শীঘ্রই ধ্বংস হবে? (খ) এই মন্দ জগতের আগত ধ্বংস থেকে আমরা কি শিখতে পারি?
১২ আমরা ২য় পিতর ৩:১০ পদে, পড়ি: “কিন্তু প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমন্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তার কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” কলুষিত যে শাসনব্যবস্থা যা মানবজাতির উপর আচ্ছাদন করছে, তার সাথে যা কিছু আজকের যে ক্ষয়নীয় মানব সমাজকে তৈরি করেছে, ঈশ্বরের জগত থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। যে উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা যারা ধ্বংসের অস্ত্র তৈরি করে, প্রতারক, যে ভণ্ড ধর্ম্ম ও তার পাদ্রিরা, যারা লম্পটতার, হিংস্রতা এবং অপরাধের উদ্যেক্তা—তারা সকলে অদৃশ্য হবে। তারা যিহোবার ক্রোধের দ্বারা গলে যাবে। কিন্তু খ্রীষ্টানদের জন্য পিতর এক সতর্কবাণী যোগ করেন ১১ এবং ১২ পদে: “এইরূপে যখন সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিৎ! যিহোবার সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে আপনাদের কিরূপ প্রকারের ব্যক্তি হওয়া চাই।” (NW).
মীখায়েল কর্মে রত হন!
১৩, ১৪. যিহোবার রাজত্বের মহান্ প্রতিষ্ঠাতা কে, এবং ১৯১৪ সাল থেকে সে কিভাবে সক্রিয়?
১৩ যিহোবার সেই “সঙ্কটের কাল” থেকে কি করে কেউ বেঁচে যেতে পারে? মুক্তির জন্য ঈশ্বরের প্রদত্ত প্রতিনিধি হলেন প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল, যার নামের অর্থ হচ্ছে “ঈশ্বরের তুল্য কে?” সঠিকভাবে তিনি হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি যিহোবার শাসনকে প্রতিষ্ঠা করেন, এবং যিহোবাকে একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং সমস্ত বিশ্বের ন্যায়সম্মত কর্ত্তারূপে তুলে ধরেন।
১৪ প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায় ৭ থেকে ১৭ পদ, “প্রভুর দিনে” যা ১৯১৪ সাল থেকে আরম্ভ হয়েছে তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বর্ণনা দিয়ে থাকে! (প্রকাশিত বাক্য ১:১০) সেই প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল বিশ্বাসঘাতক শয়তানকে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে ফেলে দেন। পরে যেমন প্রকাশিত বাক্য ১৯ অধ্যায়, ১১ থেকে ১৬তে বর্ণনা বলে, তাকে ডাকা হয় “বিশ্বাস্য ও সত্যময়” বলে ‘এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধরূপ মদিরাকুণ্ড দলন করেন।’ এই শক্তিমান স্বর্গীয় যোদ্ধাকে নাম দেওয়া হয়েছে “রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু।” অবশেষে, প্রকাশিত বাক্য ২০ অধ্যায় ১ এবং ২ পদ, এক মহান্ দূতের কথা বলে যে শয়তানকে অগাধলোকে ফেলে দেয় এবং হাজার বৎসরের জন্য তাকে সেখানে বদ্ধ রাখে। অবশ্যই এই সব শাস্ত্রীয় বচন একই দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করে তার প্রতি যিনি যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিজয় সাধন করেন, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, যাকে যিহোবা তার মহিমান্বিত সর্গীয় সিংহাসনে বসিয়েছেন ১৯১৪ সালে।
১৫. কি বিশেষ উপায়ে মীখায়েল শীঘ্রই “পক্ষে দাঁড়াইবেন”?
১৫ মীখায়েল যিহোবার লোকদের পক্ষে “দাঁড়াইয়া থাকেন” যেমন বর্ণনা করা আছে দানিয়েল ১২:১ পদে, ১৯১৪ সাল থেকে যখন থেকে তিনি রাজারূপে প্রতিষ্ঠিত হন। কিন্তু খুব শীঘ্রই মীখায়েল এক বিশেষ অর্থে “উঠিয়া দাঁড়াইবেন”—তা হল সমস্ত দুষ্টতাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার জন্য এবং ঈশ্বরের লোকদের বিশ্বব্যাপী সংগঠনের উদ্ধারকারী হিসাবে যিহোবার প্রধান প্রতিনিধি রূপে কাজ করবেন। সেই সময়ের “মহাক্লেশ” কত ভয়ানক হবে তা নির্দেশ করা আছে যীশুর কথাগুলিতে মথি ২৪:২১, ২২ পদে: “কেননা তৎকালে এরূপ “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত হয় নাই কখনও হইবেও না।” আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে।”
১৬. মহাক্লেশে কোন প্রাণী রক্ষা পেয়ে যাবে?
১৬ আমরা কি আনন্দিত হতে পারি যে সেই সময় কিছু প্রাণী রক্ষা পাবে! না, যিরুশালেমে আটকে পড়া ৭০ সা.শ. বিদ্রোহী যিহৃদীদের মত নয়, যাদের কাউকে কাউকে দাস হিসাবে বন্দী করে রোমে নিয়ে যাওয়া হয়। বরংঞ্চ, যারা “শেষের সময়” বেঁচে যাবে তারা সেই খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মত যারা যিরুশালেম থেকে পালিয়ে যায় অন্তিম অবরোধ শুরু হওয়ার আগে। লক্ষ লক্ষ বিরাট জনতা, অবশিষ্টাংশের কোন কোন জন যারা হয়ত তখন পৃথিবীতে থাকতে পারে, তারা হবে ঈশ্বরের নিজের লোক। (দানিয়েল ১২:৪) বিরাট জনতা “সেই মহাক্লেশের মধ্যে হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছে।” কেন? কারণ “মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে।” তারা যীশুর মুক্তির মূল্যের রক্তের যে শক্তি তাতে বিশ্বাস করে এবং সেই বিশ্বাস প্রদর্শন করে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরকে সেবা করে। এখনই, যিহোবা, “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন,” তিনি তার রক্ষার বেষ্টনী তাদের উপর দেন, এবং মেষশাবক যীশু খ্রীষ্ট, তাদের পালন ও পরিচালনা করেন জীবন জলের উনুইয়ের দিকে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫; NW.
১৭. বিরাট জনতাকে বিশেষ কোনভাবে কাজ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছ যাতে তারা আগত সঙ্কটকালে রক্ষা পেতে পারে?
১৭ যিহোবার, ধার্ম্মিকতার, এবং নম্রতার অনুশীলন করার ক্ষেত্রে, লক্ষ লক্ষ বিরাট জনতার উচিত তারা যেন সত্যের প্রতি তাদের যে প্রথম প্রেম ছিল তা কখন শিথিল হতে না দেয়! আপনি যদি এইরূপ একজন মেষতুল্য ব্যক্তি হন, আপনার কি করা উচিৎ? যেমন কলসীয় ৩ অধ্যায় ৫ থেকে ১৪ পদে বর্ণনা করা আছে, আপনাকে সম্পূর্ণভাবে “পুরাতন মুনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ” করতে হবে। ঐশিক সাহায্যের অন্বেষন করে, সাগ্রহে চেষ্টা করুন ‘নিজেকে নূতন মনুষ্যে ভূষিত করতে, যার ভিত্তি হচ্ছে সঠিক জ্ঞান।’ নম্রতায়, আপনার উদ্দীপনা যিহোবার প্রসংশা ও তার মহৎ উদ্দেশ্য অন্যদের জানাবার জন্য ব্যবহার করুন। এইভাবে, আপনি “সঙ্কটের কাল” রক্ষা পেয়ে যাবেন সেই দিন যা হল “যিহোবার ক্রোধের দিন।”
১৮, ১৯. কি করে পরিত্রাণের জন্য ধৈর্য্য খুব জরুরী হয়ে পড়েছে?
১৮ সেই দিন নিকটে! তা আমাদের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। বিরাট জনতার ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবে একত্র করার কাজ এখন প্রায় ৫৭ বৎসর ধরে চলছে। এদের অনেকে মারা গেছেন এবং পুনরুত্থানের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু প্রকাশিত বাক্যের ভবিষৎবাণীর দ্বারা আমরা নিশ্চিত যে একটি দল হিসাবে বিরাট জনতা মহাক্লেশের মধ্যে থেকে “নূতন পৃথিবী”র সমাজের এক মূল অংশরূপে বেরিয়ে আসবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১) আপনি কি সেখানে থাকবেন? তা সম্ভব, কারণ যীশু বলেন মথি ২৪:১৩ পদে “কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।”
১৯ যিহোবার লোকেরা এই শেষের দিনে যে চাপের সম্মুখীন হয় তা আরও বাড়তে থাকবে। আর যখন সেই চরম দুর্দশাময় মহাক্লেশ আঘাত করবে, আপনি হয়ত কষ্ট ভোগ করবেন। কিন্তু যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের কাছাকাছি থাকুন। জাগ্রত থাকুন! “এই জন্য যিহোবা কহেন, তোমরা সেই দিন পর্য্যন্ত আমার অপেক্ষায় থাক, যে দিন আমি হরণ করিতে উঠিব; কেননা আমার বিচার এই; আমি জাতিগণকে সংগ্রহ করিয়া ও রাজ্য সকল একত্র করিয়া তাহাদের উপর আমার ক্রোধ, আমার সমস্ত কোপাগ্নি ঢালিয়া দিব; বস্তুতঃ আমার অন্তর্জ্বালার তাপে সমস্ত পৃথিবী অগ্নিভক্ষিত হইবে।”—সফনিয় ৩:৮, NW.
২০ সেই “সঙ্কটের কাল” যত কাছে এগিয়ে আসছে, আমাদের কি করা উচিত?
২০ আমাদের রক্ষার্থে ও উৎসাহের জন্য, যিহোবা আমাদের তাঁর লোকদের অনুগ্রহের সাথে “বিশুদ্ব ওষ্ঠ” দিয়েছেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত তাঁর আগত রাজ্যের মহৎ সংবাদ, “যেন সকলেই যিহোবার নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে।” (সফনিয় ৩:৯, NW) সেই “সঙ্কটের কাল” যত দ্রুত আগিয়ে আসছে, আমরা যেন উদ্দীপনার সাথে সেবা করে যাই, অন্য নম্রদের সাহায্য করি যাতে তারা ‘যিহোবার নামে ডাকতে পারে’ পরিত্রাণের জন্য। (w92 5/1)
আপনার কি মনে আছে?
▫ পৃথিবীতে শান্তি আনার আগে যিহোবার কোন কাজ সম্পন্ন হবে?
▫ যোয়েলের কথা অনুসারে, একজনের রক্ষা পাওয়ার জন্য কি করা উচিত?
▫ সফনিয়ের কথা অনুসারে, যিহোভার ক্রোধ থেকে নম্ররা কি ভাবে রক্ষা পেতে পারে?
▫ সেই “পাপ-পুরুষ”কে, এবং কি ভাবে সে রক্তপাতের দোষ জমা করেছে?
▫ পরিত্রাণের ক্ষেত্রে ধৈর্য্য কত গুরুত্বপূর্ণ?