আশা হতাশাকে জয় করে!
ওয়েবস্টার্স নাইনথ্ নিউ কলেজিয়েট ডিকশনারী-তে হতাশার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে “সম্পূর্ণরূপে আশা হারিয়ে ফেলা” হিসাবে। স্পষ্টতই, তাহলে, হতাশাকে জয় করতে হলে, আমাদের আশার দরকার!
একজন হতভাগ্য ব্যক্তি যে পরিস্থিতির জন্য ফুটপাথে বাস করতে বাধ্য হয়েছে সে হতাশাগ্রস্থ হবে না যদি তার আশা থাকে। যারা ডিপ্রেশনের যাতনায় ভুগছে, আশা এমনকি তাদেরও সহ্য করার সাহস ও শক্তি দিতে পারে। কিন্তু সেই আশা নির্ভরযোগ্য হওয়া চাই! এর অর্থ কি?
আশার ভিত্তি
কুলপিতা অব্রাহামের স্ত্রী সারার কি হয়েছিল তা বিবেচনা করুন। ৯০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে তিনি তখনও নিঃসন্তান ছিলেন এবং তিনি যে কখনও সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন সে সম্বন্ধেও বহুপূর্বেই সব আশা ত্যাগ করেছিলেন। তবুও, তার স্বামী যখন ৯৯ বছর বয়স্ক ছিলেন, যিহোবা বহু বছর আগে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার পুনরুক্তি করেন—অব্রাহামের বাস্তবিকই একজন “বীজ” বা উত্তরাধিকারী থাকবে। অব্রাহাম জানতেন যে এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিজ্ঞা। অনুমান করুন সারা কত খুশী হন যখন অলৌকিকভাবে এই আনন্দপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে, এবং তিনি ইস্হাকের জন্ম দেন। (আদিপুস্তক ১২:২, ৩; ১৭:১-৪, ১৯; ২১:২) ঈশ্বরের প্রতি অব্রাহামের বিশ্বাস অযথা ছিল না, যেমন প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “তথাপি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি লক্ষ্য করিয়া [অব্রাহাম] অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ করিলেন না; কিন্তু বিশ্বাসে বলবান্ হইলেন, ঈশ্বরের গৌরব করিলেন।”—রোমীয় ৪:২০.
যে যিহূদীরা তার দিনে খ্রীষ্টান হয়েছিল তাদের কাছে লেখার সময়ে, পৌল যুক্তি দেখান যে তারা দুটি নির্ভরযোগ্য কারণের জন্য যীশুর মাধ্যমে পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার উপরে আস্থা রাখতে পারে। অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা এবং সেইসাথে তাঁর ঐশ্বরিক শপথের কথা উল্লেখ করে, প্রেরিত যুক্তি দেন: “মনুষ্যেরা ত মহত্তর ব্যক্তির নাম লইয়া শপথ করে; এবং দৃঢ়ীকরণার্থে শপথই তাহাদের সমস্ত প্রতিকূলবাদের অন্তক। এই ব্যাপারে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞার দায়াধিকারীদিগকে আপন মন্ত্রণার অপরিবর্ত্তনীয়তা আরও অতিরিক্তরূপে দেখাইবার বাসনায় শপথের প্রয়োগ দ্বারা মধ্যস্থতা করিলেন; অভিপ্রায় এই, যে ব্যাপারে মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য, এমন অপরিবর্ত্তনীয় দুই ব্যাপার দ্বারা আমরা—যাহারা সম্মুখস্থ প্রত্যাশা ধরিবার জন্য শরণার্থে পলায়ন করিয়াছি—যেন দৃঢ় আশ্বাস প্রাপ্ত হই।” (ইব্রীয় ৬:১৬-১৮) হ্যাঁ, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সত্য এবং নির্ভরযোগ্য। যিহোবা সর্বশক্তিমান এবং একমাত্র তিনিই নিজ বাক্যের পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দিতে পারেন।
আশা—“অটল ও দৃঢ়”
সুতরাং, পৌল লেখেন যে খ্রীষ্টিয় আশা “অটল ও দৃঢ়।” (ইব্রীয় ৬:১৯) পৌল জানতেন তার বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায় ছিল। তিনি ব্যাখ্যা করেন: “[আশা] তিরস্করিণীর ভিতরে যায়।” এর মানে কি? পৌল স্পষ্টতই যিরূশালেমে প্রাচীন মন্দিরের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। এখানে একটি অতি পবিত্র স্থান ছিল, যেটি অন্য জায়গাগুলি থেকে একটি তিরস্করিণীর দ্বারা পৃথক করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ২৬:৩১, ৩৩; মথি ২৭:৫১) অবশ্যই যিরূশালেমের আক্ষরিক মন্দির বহু দিন আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব, আজ অতি পবিত্র স্থানের সাথে কিসের তুলনা করা যায়?
সাক্ষাৎ স্বর্গের সাথে, যেখানে স্বয়ং ঈশ্বর সিংহাসনে বসে আছেন! পৌল এটি বুঝিয়ে দেন যখন তিনি বলেন যে যীশু তাঁর আরোহণের পর “হস্তকৃত পবিত্র স্থানে [যিরূশালেমের মন্দিরে] প্রবেশ করেন নাই—এ ত প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপমাত্র—কিন্তু স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন।” (ইব্রীয় ৯:২৪) তাই, খ্রীষ্টিয় আশা, যা হতাশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমাদের সাহায্য করে, মনুষ্য রাজনীতিবিদদের উপরে নয়, কিন্তু একটি স্বর্গীয় ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করে। এটি নির্ভর করে যাঁকে ঈশ্বর নিযুক্ত করেছেন তাঁর উপর, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি আমাদের পাপের জন্য মুক্তির মূল্য হিসাবে নিজের জীবন দেন এবং যিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হয়েছেন। (১ যোহন ২:১, ২) উপরন্তু, যেমন এই পত্রিকার পাতায় প্রায়ই দেখানো হয়েছে, এই একই যীশু ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে রাজা হিসাবে রাজত্ব করার জন্য ঐশিকভাবে নিযুক্ত হয়েছেন এবং ১৯১৪ সাল থেকে তিনি রাজত্ব করে আসছেন। এই স্বর্গীয় রাজ্য শীঘ্রই যে বিষয়গুলি এতজনকে হতাশাগ্রস্ত করে তা সরিয়ে দেবে।
আশা—“প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ”
যীশুর মাধ্যমে তাদের আশা যে দৃঢ় ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত সেই সম্বন্ধে তার পাঠকদের নিশ্চিত করতে, পৌল একটি উপমা ব্যবহার করেন। “আমাদের সেই প্রত্যাশা আছে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন, “তাহা প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ।”—ইব্রীয় ৬:১৯.
পৌলের মত যাত্রীদের কাছে লঙ্গর সুপরিচিত ছিল। প্রাচীন লঙ্গরগুলি অনেকটা আধুনিকগুলির মতই ছিল, প্রায়ই লোহা দিয়ে তৈরী যার শেষপ্রান্তদুটি দাঁতের মত যাতে সমুদ্রতল আঁকড়ে ধরতে পারে। প্রায় ৫৮ সা. শ. তে রোম যাওয়ার পথে, পৌলের জাহাজ চড়ায় ধাক্কা খাওয়ার বিপদে পড়ে। কিন্তু নৌকাটি যখন আরো অগভীর জলে পৌঁছায়, নাবিকরা “জাহাজের পশ্চাদ্ভাগ হইতে চারিটী লঙ্গর ফেলিয়া” দেয়। সেই লঙ্গরগুলির সাহায্যে জাহাজটি নিরাপদে ঝড় থেকে রক্ষা পায়।—প্রেরিত ২৭:২৯, ৩৯, ৪০, ৪৪.
তাহলে, আপনার কি করা উচিৎ আপনার আশাকে লঙ্গরের মত দৃঢ় করার জন্য যাতে আপনি আর্থিক দুরবস্থা, দৈহিক অথবা মানসিক অসুস্থতা, অথবা অন্য যে কোন “ঝড়” আপনার জীবনে আসতে পারে তা থেকে রক্ষা পেতে পারেন? প্রথমে, বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলি যে বিশ্বাসযোগ্য সেই সম্বন্ধে নিজেকে নিশ্চিত করুন। “সর্ববিষয়ে পরীক্ষা কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) উদাহরণস্বরূপ, পরের বার যখন যিহোবার সাক্ষীরা আপনার সাথে কথা বলবেন, তাদের কথা শুনুন। যদি আপনি যেখানে থাকেন সেখানে তারা কদাচিৎ আসে, নিকটবর্তী কিংডম হলে তাদের খোঁজ করুন। তাদের সাথে যোগ দিতে আপনাকে জোর করা হবে না, কিন্তু আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বিনামূল্যে বাইবেল অধ্যয়ন করতে, আপনার পক্ষে যেখানে এবং যখন সুবিধাজনক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে।
এইরকম অধ্যয়ন আপনাকে নিশ্চিত করবে যে ঈশ্বর “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) আপনি শিখবেন যে শীঘ্রই ঈশ্বরের রাজ্য, রাজা যীশু খ্রীষ্টের অধীনে, যে ভ্রষ্টাচার এবং বৈষম্যতা আজ এত লোকের হতাশার কারণ তা দূর করবে। সেই রাজ্যের অধীনে, পৃথিবী একটি পরমদেশে পুনঃস্থাপিত হবে, এবং যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের ঈশ্বর অনন্ত জীবন দেবেন। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) কি অপূর্ব আশা!
ভালভাবে বাইবেল পড়ুন যাতে বুঝতে পারেন যে এই আশা সত্য। তারপর ঈশ্বরের সাথে একটি ঘনিষ্ঠ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলবার চেষ্টা করুন, তাঁর বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন যেমন অব্রাহাম ছিলেন। (যাকোব ২:২৩) যেহেতু যিহোবা “প্রার্থনা শ্রবণকারী,” তাঁকে আপনার উদ্বিগ্নতা সম্বন্ধে বলুন। যখন আপনার প্রার্থনা আন্তরিক হবে, তা আপনার বোঝা লাঘব করতে এবং আপনার হতাশাকে জয় করতে সাহায্য করবে। ঈশ্বরের আত্মা এমনকি যে পরিস্থিতির জন্য আপনি উদ্বিগ্ন হয়েছেন তা পরিবর্তনের পথও খুলে দিতে পারে।—গীতসংহিতা ৫৫:২২; ৬৫:২; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.
“ধরিয়া রাখ”!
তার সহশিষ্যরা যেন “সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা” করে এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে, পৌল যোগ দেন: “যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২১) এটি করার একটি উপায় যারা খ্রীষ্টিয় আশা ধরে থাকে তাদের সাথে মেলামেশা করা। জ্ঞানী রাজা শলোমন সতর্ক করে দেন: “জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।” (হিতোপদেশ ১৩:২০) মনের সংকীর্ণতা অথবা অস্বস্তি-ভাবের জন্য সৎসঙ্গ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবেন না। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে এমন লোকেরা আছেন যারা অতীতে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু বাইবেল অধ্যয়ন ও সেইসঙ্গে সহবিশ্বাসীদের সাথে আনন্দপূর্ণ মেলামেশার কারণে যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে এবং তাদের একটি নির্ভরযোগ্য, লঙ্গরস্বরূপ আশা যুগিয়েছে। এটি কি সত্যই হতাশাকে জয় করে? অবশ্যই করে।
অ্যানমারীর কথা বিবেচনা করুন, যে তার স্বামীর কাছ থেকে নৃশংস আচরণ পাওয়ার জন্য নিরাশ হয়ে পড়েছিল। “আমি নিজের জীবন শেষ করে দিতে মনস্থ করি,” সে বলে, “কিন্তু কোন কারণের জন্য প্রথমে আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব স্থির করি। আমার মনে আছে আমি বলি, ‘কেন তুমি আমাকে সাহায্য করতে পার না? এতদিন ধরে আমি তোমার ওপর আশা রেখেছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি।’ আমি প্রার্থনা শেষ করি এই ভেবে যে জীবনের কোন উদ্দেশ্য নেই, তাই আমার মরে যাওয়াই ভাল। সেই মুহুর্তে দরজায় কেউ করাঘাত করে। আমি তা উপেক্ষা করি, এই মনে করে যে যেই হোক না কেন অবশেষে সে চলে যাবে।
“করাঘাত চলতেই থাকে, এবং আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। চোখ মুছে আমি দেখতে যাই কে এসেছে, তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়ার আশা নিয়ে যাতে আমি যা করতে চাই তা যেন করতে পারি। কিন্তু,” অ্যানমারী বলে, “যিহোবাকে ধন্যবাদ, তা হয়নি, কারণ দরজা খুলে আমি দেখি দুইজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সত্যি, আমি হতবুদ্ধি হয়ে যাই, আর তারা কি বলছে আমি বুঝতে পারি না। কিন্তু তারা আমাকে একটি বই দিতে চায় যেটি ব্যাখ্যা করে যে জীবনের একটি উদ্দেশ্য আছে। ঠিক আমার যা প্রয়োজন ছিল জীবনের প্রতি আমার আগ্রহ ফিরিয়ে আনার জন্য।” তার অতিথিরা তার সাথে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যবস্থা করে। অ্যানমারী ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠতে শেখে। যথাক্রমে, এর জন্য সে জীবনে উদ্দেশ্য ফিরে পায়। এখন সে অন্যদের সাহায্য করে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে।
হয়তো আপনি যা কিছু জড়িত আছে তা না জেনেই হতাশার সমাপ্তি আশা করেছেন। কিন্তু যদি আপনি কখনও প্রার্থনা করে থাকেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতে হউক,” তাহলে আপনি যীশু খ্রীষ্টের অধীনে ঈশ্বরের রাজ্য আসার জন্য প্রার্থনা করেছেন, যা সহৃদয় ব্যক্তিদের হতাশাগ্রস্ত হওয়ার কারণগুলি দূর করবে। (মথি ৬:১০) আপনার ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন এবং যাদের এই একইরকম আস্থা আছে তাদের সাথে নিয়মিত মেলামেশা, যিহোবার রাজ্য, যা পৃথিবীতে পরমদেশ নিয়ে আসবে, সেই সম্বন্ধে আশা আপনার মনে দৃঢ় করবে। (১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯) এই অপূর্ব আশা এই পত্রিকাটি প্রত্যেক সংখ্যায় ঘোষনা করে। হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সাদরে এই আশা গ্রহণ করুন। সত্যই, আশা “নিরুৎসাহ করে না।”—রোমীয় ৫:৫, NW. (w92 7/1)
[Pictures on page 7]
বাইবেল পড়া আমাদের যে আশা দেয় তা “প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ” কাজ করে