ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯২ ১১/১ পৃষ্ঠা ১৩-১৮
  • জীবনের জন্য দৌড়ে আপনি কিরূপে দৌড়াচ্ছেন?

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • জীবনের জন্য দৌড়ে আপনি কিরূপে দৌড়াচ্ছেন?
  • ১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • জীবনের জন্য দৌড়
  • সর্ববিষয়ে আত্মসংযমের অনুশীলন করুন
  • “বিনালক্ষ্যে” দৌড়াবেন না
  • আপনি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারেন
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • “এরূপে দৌড়”
    ২০০১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • ‘নিরুপিত পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়ান’
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০২০
  • ধৈর্যপূর্বক ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ান
    ২০১১ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
আরও দেখুন
১৯৯২ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯২ ১১/১ পৃষ্ঠা ১৩-১৮

জীবনের জন্য দৌড়ে আপনি কিরূপে দৌড়াচ্ছেন?

“তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪.

১. আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনকে বাইবেল কিসের সাথে তুলনা করে?

অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের অন্বেষণকে বাইবেল একটি দৌড়ের সাথে তুলনা করেছে। প্রেরিত পৌল তাঁর জীবনের শেষের দিকে নিজের সম্বন্ধে বলেন: “আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি।” তিনি তাঁর সহ-খ্রীষ্টিয়দের একই কাজ করতে উৎসাহ দেন যখন তিনি বলেন: “আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—২ তীমথিয় ৪:৭; ইব্রীয় ১২:১.

২. জীবনের জন্য দৌড়ে কোন্‌ উৎসাহজনক শুরু আমরা দেখতে পাই?

২ এই তুলনাটি যথাযথ কারণ একটি দৌড়ের শুরু, নির্দিষ্ট পথ, ও সীমারেখা, অথবা লক্ষ্যস্থল আছে। জীবনের প্রতি এগিয়ে যেতে আত্মিক উন্নতি করার ক্ষেত্রেও তাই। যেমন আমরা দেখেছি, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবনের জন্য দৌড় উত্তমরূপে শুরু করছে। উদাহরণস্বরূপ, গত পাঁচবছরে, ১৩,৩৬,৪২৯ জন উৎসর্গীকরণ ও জলে বাপ্তিস্মের দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে দৌড় শুরু করেছে। এই রকম প্রাণবন্ত শুরু অত্যন্ত উৎসাহজনক। যাইহোক, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল সীমারেখায় না পৌঁছানো পর্যন্ত দৌড় চালিয়ে যাওয়া। আপনি কী তা করছেন?

জীবনের জন্য দৌড়

৩, ৪. (ক) দৌড়ের গতি বজায় রাখা সম্বন্ধে পৌল কিভাবে জোর দেন? (খ) কিভাবে কিছু লোক পৌলের উপদেশের প্রতি মনোযোগ দিতে অক্ষম হয়েছে?

৩ দৌড়ে রত থাকার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার জন্য পৌল নির্দেশ দেন: “তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪.

৪ সত্য, প্রাচীন খেলাধুলায় শুধুমাত্র একজন পুরস্কার পেতে পারত। কিন্তু, জীবনের জন্য দৌড়ে, প্রত্যেকে পুরস্কারের জন্য যোগ্য। শুধুমাত্র শেষ পর্যন্ত দৌড়ের জন্য নির্ধারিত পথে থাকা প্রয়োজন! আনন্দের বিষয়, অনেকে তাদের জীবনের শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত পথে দৌড়েছেন, প্রেরিত পৌলের মত। আর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি এখনও দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু, কিছু লোক সীমারেখায় পৌঁছাতে এগিয়ে যেতে অথবা উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিবর্তে, তারা অন্য বিষয়ের দ্বারা নিজেদের বাধাপ্রাপ্ত হতে দিয়েছে, যার ফলে তারা হয় দৌড় ত্যাগ করেছে অথবা কোন না কোন ভাবে অযোগ্য হয়েছে। (গালাতীয় ৫:৭) এই কারণে আমাদের সকলের পরীক্ষা করা উচিৎ আমরা কিরূপে জীবনের দৌড়ে দৌড়াচ্ছি।

৫. পৌল কী জীবনের জন্য দৌড়কে একটি প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়ার সঙ্গে তুলনা করছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

৫ এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে: যখন পৌল বলেন “কেবল এক জন পুরস্কার পায়” তখন তিনি কী বোঝাতে চাইছিলেন? আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তার কথার অর্থ এই নয় যে যারা জীবনের জন্য দৌড় শুরু করেছে, তাদের সকলের মধ্যে শুধুমাত্র একজন অনন্ত জীবনের পুরস্কার পাবে। স্পষ্টতই সেইরকম হতে পারে না, কারণ বহুবার, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে ঈশ্বরের ইচ্ছা, সকল ধরনের লোক যেন রক্ষা পায়। (রোমীয় ৫:১৮; ১ তীমথিয় ২:৩, ৪; ৪:১০; তীত ২:১১) না, তিনি বলছিলেন না যে জীবনের জন্য দৌড় একটি প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী অন্য সকলকে হারিয়ে দিতে চেষ্টা করে। করিন্থীয়রা খুব ভাল করেই জানত ইস্থ্‌মিয়ান গেম্‌স্‌, যাকে সেইসময় অলিম্পিক্‌ গেম্‌স্‌-এর চাইতেও মর্যাদাপূর্ণ মনে করা হত, তার প্রতিযোগীদের মধ্যে কী ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব থাকত। তাহলে, পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন?

৬. দৌড়বিদ এবং দৌড় সম্বন্ধে পৌলের কথার প্রসঙ্গ কী জানায়?

৬ দৌড়বিদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে, পৌল প্রধানত পরিত্রাণের জন্য তাঁর নিজের সম্ভাবনা সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন। পূর্ববর্তী পদগুলিতে, তিনি বর্ণনা করেন কিভাবে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং কিভাবে বহু বিষয়ে সাধন করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। (১ করিন্থীয় ৯:১৯-২২) তারপর, ২৩ পদে, তিনি বলেন: “আমি সকলই সুসমাচারের জন্য করি, যেন তাহার সহভাগী হই।” তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে শুধুমাত্র একজন প্রেরিতরূপে মনোনীত হওয়ার জন্য অথবা বহু বছর অন্যদের কাছে প্রচার করার জন্য, তাঁর পরিত্রাণ নিশ্চিত ছিল না। সুসমাচারের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য, তাঁকে সুসমাচারের জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। তাঁকে জয়ী হওয়ার পূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে দৌড়াতে হবে, কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে ঠিক যেন ইস্থ্‌মিয়ান গেম্‌স্‌-এর একটি দৌড়ে তিনি দৌড়াচ্ছেন, যেখানে “কেবল এক জন পুরস্কার পায়।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪ক.

৭. “এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও,” এর জন্য কী প্রয়োজন আছে?

৭ এখান থেকে আমরা অনেককিছু শিখতে পারি। যদিও যারা দৌড়ে যোগ দেয় তাদের সকলে জয়ী হওয়ার আশা করে, শুধুমাত্র যারা জেতার জন্য সম্পূর্ণরূপে মনকে প্রস্তুত করে তাদের জয়ের কিছু সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং, কেবল দৌড়ে যোগ দিয়েই সন্তুষ্ট থাকা আমাদের উচিৎ নয়। আমাদের মনে করা উচিৎ নয় যে সবকিছু ভালভাবে চলবে কারণ আমরা ‘সত্যে আছি।’ আমরা হয়ত খ্রীষ্টান নামধারী হতে পারি, কিন্তু একজন খ্রীষ্টিয় ব্যক্তি হওয়ার জন্য যে বস্তু প্রয়োজন তা কি আমাদের মধ্যে আছে? উদাহরণস্বরূপ, একজন খ্রীষ্টানের যা যা করা উচিৎ তা কি আমরা করি—খ্রীষ্টিয় সভায় উপস্থিত থাকি, ক্ষেত্রের পরিচর্য্যায় অংশগ্রহণ করি, ইত্যাদি। যদি করি, তাহলে তা প্রশংসনীয়, এবং আমাদের চেষ্টা করা উচিৎ এইরকম চমৎকার অভ্যাস দৃঢ়ভাবে বজায় রাখা। যাইহোক, আমরা যা করছি তা থেকে কী আরও উপকার লাভ করা সম্ভব? উদাহরণস্বরূপ, সভাগুলির প্রতি কিছু অবদান করতে আমরা কী সর্বদা প্রস্তুত থাকি? আমরা যা শিখি তা ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ করার কী যথাসাধ্য চেষ্টা করি? আমাদের দক্ষতার কী উন্নতি করার চেষ্টা করি যাতে ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হলেও আমরা উত্তমরূপে সাক্ষ্য দিতে পারি? আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছে ফিরে গিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর চ্যালেঞ্জ কী আমরা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক? “তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও,” প্রেরিত পৌল উৎসাহ দেন।—১ করিন্থীয় ৯:২৪খ.

সর্ববিষয়ে আত্মসংযমের অনুশীলন করুন

৮. তাঁর সহ-খ্রীষ্টিয়দের ‘সর্ববিষয়ে আত্মসংযমের অনুশীলন কর’ বলতে কী পৌলকে প্ররোচিত করে?

৮ পৌল, তাঁর জীবনকালে, বহু ব্যক্তিকে ধীর গতি হয়ে পড়তে, লক্ষ্যহীনভাবে বিপথে চলতে, অথবা জীবনের জন্য দৌড় পরিত্যাগ করতে দেখেছিলেন। (১ তীমথিয় ১:১৯, ২০; ইব্রীয় ২:১) সেইজন্য তিনি তাঁর সহ-খ্রীষ্টিয়দের বারংবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তারা একটি শ্রমসাধ্য ও অবিরাম প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। (ইফিষীয় ৬:১২; ১ তীমথিয় ৬:১২) দৌড়বিদের দৃষ্টান্তটি আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “ক্রীড়া-প্রতিযোগীমাত্রই সর্ববিষয়ে আত্মসংযমের অনুশীলন করে থাকে।” (১ করিন্থীয় ৯:২৫ক, NW) এই কথা বলার দ্বারা, ইস্থ্‌মিয়ান গেম্‌স্‌-এর প্রতিযোগীরা যে কঠোর নিয়মানুবর্তী প্রশিক্ষণ লাভ করত, যার সঙ্গে করিন্থীয়রা সুপরিচিত ছিল, পৌল তার প্রতি পরোক্ষভাবে উল্লেখ করছিলেন।

৯, ১০. (ক) ইস্থ্‌মিয়ান্‌ গেম্‌স্‌-এর প্রতিযোগীদের সম্বন্ধে একটি সূত্র কিভাবে বর্ণনা করে? (খ) এই বর্ণনায় কোন্‌ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়?

৯ প্রশিক্ষণরত একজন প্রতিযোগী সম্বন্ধে এখানে একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:

“খুশীমনে এবং কোনরকম অসন্তোষ প্রকাশ না করে সে তার দশ মাসের প্রশিক্ষণপর্বের নিয়মকানুন মেনে চলে, যা না করলে অংশ নেওয়াই তার পক্ষে বৃথা। . . . সে তার ছোটখাট কষ্টগুলি, পরিশ্রম, এবং বঞ্চিত অবস্থা সম্বন্ধে গর্বিত, এবং কোনকিছু, যা যৎসামান্য মাত্রায়ও তার সাফল্যের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে, তা থেকে অত্যন্ত সতর্কভাবে সরে থাকাকে সম্মানের বিষয় মনে করে। সে অন্য লোকেদের ইচ্ছামত খাওয়াদাওয়া করতে, বিশ্রাম নিতে দেখে যখন সে শ্রান্তিতে হাঁপাচ্ছে, স্নানঘরে বিলাসিতা উপভোগ করতে, সুখভোগে জীবন কাটাতে দেখে; কিন্তু তার মনে ঈর্ষার ঝলক হয়ত কদাচিৎ আসে, কারণ পুরস্কার লাভ করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তার হৃদয়ে আছে, এবং তার জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। সে জানে যে জেতার সোবনা সে হারাবে যদি কোন সময়ে বা কোন কারণে সে তার কঠোর অভ্যাস শিথিল করে দেয়।”—দ্যা এক্স্‌পোজিটারস্‌ বাইবেল, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬৭৪.

১০ এই বিষয়টিও বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যে প্রশিক্ষণরত ব্যক্তি আত্মত্যাগমূলক এই শ্রমসাপেক্ষ নিয়ম মেনে চলাকে “সম্মানের বিষয় মনে করে।” বস্তুতপক্ষে, অন্যদের আরাম ও বিলাসিতা উপভোগ করতে দেখে “তার মনে ঈর্ষার ঝলক হয়ত কদাচিৎ আসে।” আমরা কী এর থেকে কিছু শিখতে পারি? অবশ্যই।

১১. জীবনের জন্য দৌড়ে রত থাকাকালীন কোন্‌ অনুচিত চিন্তাধারার বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে?

১১ যীশুর কথাগুলি স্মরণ করুন যে “সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।” (মথি ৭:১৩, ১৪) ‘দুর্গম পথে’ চলার প্রচেষ্টা করার সময়, যারা অন্য পথটিতে চলছে আপনি কি তাদের স্বাধীনতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগকে ঈর্ষা করেন? আপনি কী মনে করেন যে অন্যরা যা করছে তার কিছু আপনি হারাচ্ছেন, যা হয়ত ততটা খারাপ নাও মনে হতে পারে? এইরকম মনে করা সহজ যদি যে কারণে আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি তা মনে না রাখি। “তাহার ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করে, কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য করি,” পৌল বলেছিলেন।—১ করিন্থীয় ৯:২৫খ.

১২. কেন বলা যেতে পারে লোকে যে গৌরব এবং খ্যাতি অর্জন করার চেষ্টা করেছে তা ইস্থ্‌মিয়ান্‌ গেম্‌স্‌-এ প্রদত্ত ক্ষয়ণীয় মুকুটের মত?

১২ ইস্থ্‌মিয়ান্‌ গেম্‌স্‌-এর বিজেতা ইস্থ্‌মিয় পাইন অথবা সেইরকম কোন গাছের পাতা দিয়ে তৈরী একটি মুকুট লাভ করত, যা হয়ত কয়েক দিন অথবা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যেত। অবশ্যই, দৌড়বিদরা কোন নশ্বর মুকুটের জন্য প্রতিযোগিতা করত না, কিন্তু তার সাথে যে গৌরব, সম্মান, ও খ্যাতি আসত, সেইজন্য। একটি সূত্র জানায় যে যখন বিজেতা গৃহে ফিরে আসত, তাকে একজন দিগ্বিজয়ী বীরের মত অভ্যর্থনা জানানো হত। প্রায়ই তার শোভাযাত্রা যাওয়ার জন্য শহরের প্রাচীর ভেঙে ফেলা হত, এবং তার সম্মানে তার মূর্তি স্থাপন করা হত। এই সব সত্ত্বেও তার গৌরব ক্ষয়ণীয় ছিল। বর্তমানে, খুব অল্পসংখ্যক লোক জানে সেই দিগ্বিজয়ী বীরেরা কারা ছিল, এবং অধিকাংশই সে সম্বন্ধে গ্রাহ্য করে না। যারা তাদের সময়, শক্তি, স্বাস্থ্য, এমনকি পারিবারিক সুখ পরিত্যাগ করে ক্ষমতা, খ্যাতি, এবং ঐশ্বর্য অর্জন করার চেষ্টা করে, অথচ ঈশ্বরের প্রতি ধনী নয়, তারা দেখবে যে তাদের জাগতিক “মুকুট,” তাদের জীবনের মতই শুধুমাত্র ক্ষণস্থায়ী।—মথি ৬:১৯, ২০; লূক ১২:১৬-২১.

১৩. জীবনের জন্য যে দৌড়াচ্ছে তার সাথে একজন দৌড়বিদের জীবনধারার পার্থক্য কোথায়?

১৩ একটি ক্রীড়াপ্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা হয়ত উপরে বর্ণিত প্রয়োজনীয় কঠোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হতে পারে, কিন্তু মাত্র অল্প কিছুসময়ের জন্য। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর তারা তাদের সাধারণ জীবনধারায় ফিরে যায়। তাদের দক্ষতা বজায় রাখতে হয়ত সময়ে সময়ে তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারে, কিন্তু আর সেই কঠোর আত্ম-সংযমের পথ অনুসরণ করে না, অন্তত পরবর্তী প্রতিযোগিতা না আসা পর্যন্ত। যারা জীবনের জন্য দৌড়ে যোগ দিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। তাদের জন্য, প্রশিক্ষণ এবং আত্ম-ত্যাগ তাদের জীবনধারা হওয়া উচিৎ।—১ তীমথিয় ৬:৬-৮.

১৪, ১৫. কেন জীবনের জন্য দৌড়ে অংশগ্রহণকারীকে ক্রমাগত আত্মসংযম প্রদর্শন করতে হবে?

১৪ “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে,” যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের এবং অন্যান্য লোকেদের একটি সমাগমে বলেন, “সে আপনাকে অস্বীকার করুক, (অথবা, “তাকে নিজেকে ‘না’ বলতে হবে,” চার্লস্‌ বি. উইলিয়াম্‌স্‌) আপন যাতনাদণ্ড তুলিয়া লউক, এবং ক্রমাগত আমার পশ্চাদগামী হউক।” (মার্ক ৮:৩৪, NW) যখন আমরা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করি, “ক্রমাগত” তা করতে আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিৎ, এই জন্য নয় যে আত্ম-ত্যাগ করায় কোন বিশেষ কৃতিত্ব আছে, কিন্তু যেহেতু এক মুহুর্তের হঠকারিতা, সুবিবেচনায় একটি ত্রুটি, এ পর্যন্ত যা গড়ে তোলা হয়েছে সব ভেঙে দিতে পারে, এমনকি আমাদের চিরকালীন মঙ্গলসাধনও বিপন্ন করতে পারে। সাধারণত আত্মিক উন্নতি বেশ ধীর গতিতে করা হয়, কিন্তু যদি আমরা সজাগ না থাকি তাহলে কত দ্রুত তা বাতিল হয়ে যেতে পারে!

১৫ আরও, পৌল আমাদের “সর্ববিষয়ে” আত্মসংযমের অনুশীলন করতে উৎসাহ দেন, তার অর্থ, জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিয়মিত আমাদের তা করে যাওয়া উচিৎ। তা খুবই অর্থপূর্ণ কারণ যদি একজন শিক্ষার্থী কিছুর প্রতি অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ে অথবা কামলালসাপূর্ণ জীবন যাপন করে, তাহলে সে যত দৈহিক কষ্ট ও পরিশ্রম সহ্য করেছে তার থেকে কী উপকার পাবে? সেইভাবে জীবনের জন্য দৌড়ে, আমাদের সর্ববিষয়ে আত্মসংযমের অনুশীলন করতে হবে। একজন ব্যক্তি হয়ত মাতাল হওয়া এবং ব্যভিচার থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করতে পারে, কিন্তু এর মূল্য কমে যায় যদি সে উদ্ধত ও কলহপ্রবণ হয়। অথবা যদি সে দীর্ঘসহিষ্ণু এবং অন্যদের প্রতি দয়ালু হয়, কিন্তু নিজের জীবনে কোন গোপন পাপ অভ্যাস করে তাহলে কী? আত্মসংযম সম্পূর্ণরূপে উপকারী হওয়ার জন্য, “সর্ববিষয়ে” আত্ম-সংযমের অনুশীলন করা উচিৎ।—যাকোব ২:১০, ১১ তুলনা করুন।

“বিনালক্ষ্যে” দৌড়াবেন না

১৬. “বিনালক্ষ্যে” না দৌড়ানোর অর্থ কী?

১৬ জীবনের জন্য দৌড়ে সাফল্যের জন্য যে শ্রমসাপেক্ষ প্রচেষ্টা করা প্রয়োজন তা লক্ষ্য করে, পৌল বলে চলেন: “অতএব আমি এরূপে দৌড়াইতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্টিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করিন্থীয় ৯:২৬) “বিনালক্ষ্যে” কথাটির আক্ষরিক অর্থ “অপ্রতীয়মানতায়” (কিংডম ইন্টারলিনিয়ার), “অজ্ঞাতসারে, অলক্ষিতে” (ল্যাংগেজ্‌ কমেন্টারী)। সুতরাং, “বিনালক্ষ্যে” না দৌড়ানোর অর্থ হল প্রত্যেক দর্শকের কাছে প্রতীয়মান হওয়া উচিৎ যে দৌড়বিদ কোন্‌দিকে এগোচ্ছে। দ্যা অ্যাংকর বাইবেল এইভাবে বলেছে “আঁকাবাঁকা পথ অনুযায়ী নয়।” যদি আপনি একজোড়া পদচিহ্ন দেখেন যা সমুদ্রতটের উপর সর্পিল পথে অথবা ইতস্তত চক্রাকারে চলেছে, এমনকি এক-এক সময় পিছনেও গেছে, তাহলে ব্যক্তিটি যে দৌড়াচ্ছিল তা মনে করা দূরে থাকুক, তার যে কোন লক্ষ্যস্থল আছে তাও আপনার মনে হবে না। কিন্তু যদি আপনি একজোড়া পদচিহ্ন দেখেন যা একটি লম্বা সরলরেখায় চলছে, সবকটি পদক্ষেপ আগের পদক্ষেপের ঠিক সামনে পড়েছে এবং প্রত্যেকটি একে অপরের থেকে সমান দূরত্বে পড়েছে, আপনি এই সিদ্ধান্তে আসবেন যে পদচিহ্নগুলি যার সে জানে ঠিক কোথায় সে যাচ্ছে।

১৭. (ক) কিভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে তিনি “বিনালক্ষ্যে” দৌড়াচ্ছিলেন না? (খ) এই বিষয়ে আমরা পৌলকে কিভাবে অনুকরণ করতে পারি?

১৭ পৌলের জীবন স্পষ্টভাবে দেখায় যে তিনি “বিনালক্ষ্যে” দৌড়াচ্ছিলেন না। তিনি যে একজন খ্রীষ্টিয় পরিচারক এবং প্রেরিত তা দেখাতে তাঁর কাছে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল। তাঁর একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল, এবং সারা জীবন ধরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা লাভ করতে তিনি প্রচেষ্টা করেছিলেন। খ্যাতি, ক্ষমতা, ধনসম্পদ, অথবা ভোগবিলাসিতার দ্বারা তিনি পথভ্রষ্ট হয়ে যাননি, যদিও বা হয়ত তিনি এইগুলির যে কোনটি লাভ করতে পারতেন। (প্রেরিত ২০:২৪; ১ করিন্থীয় ৯:২; ২ করিন্থীয় ৩:২, ৩; ফিলিপীয় ৩:৮, ১৩, ১৪) আপনার জীবনের পথের দিকে ফিরে তাকিয়ে আপনি কী ধরনের পথ দেখতে পান? একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সরলরেখা-পথ অথবা একটি আঁকাবাঁকা উদ্দেশ্যহীন পথ? আপনি যে জীবনের জন্য দৌড়ে যোগ দিয়েছেন তার প্রমাণ আছে কি? মনে রাখবেন, আমরা শুধু ভান করার জন্য দৌড়ে যোগ দিইনি, কিন্তু লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাবার জন্য দিয়েছি।

১৮. (ক) আমাদের ক্ষেত্রে “শূন্যে আঘাত” করার সঙ্গে কিসের তুলনা করা যায়? (খ) কেন তা বিপজ্জনক পথে চলা?

১৮ আরেকটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করে পৌল বলেন: “এরূপে মুষ্টিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করিন্থীয় ৯:২৬খ) জীবনের জন্য প্রতিযোগিতায় আমাদের বহু শত্রু আছে, যার অন্তর্ভুক্ত শয়তান, এই জগত, এবং আমাদের নিজেদের অসিদ্ধতা। একজন প্রাচীন মুষ্টিযোদ্ধার মত, অব্যর্থলক্ষ্য আঘাতের দ্বারা আমাদের এগুলিকে পরাস্ত করতে হবে। আনন্দের বিষয়, এই লড়াইতে যিহোবা ঈশ্বর আমাদের শিক্ষা দেন ও সাহায্য করেন। তাঁর বাক্যে, বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনায়, এবং খ্রীষ্টিয় সভাগুলিতে তিনি নির্দেশ দেন। যাইহোক, যদি আমরা বাইবেল ও সাহিত্যাদি পড়ি এবং সভায় যাই কিন্তু যা শিখছি তা অভ্যাস না করি, আমাদের প্রচেষ্টা কী ব্যর্থ হচ্ছে না, আমরা কী “শূন্যে আঘাত” করছি না? তা করা আমাদের খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলে। আমরা মনে করি আমরা লড়াই করছি আর তাই নিরাপত্তার একটি মিথ্যা অনুভূতি আমাদের মনে জাগে, কিন্তু আমরা আমাদের শত্রুদের পরাজিত করছি না। সেইজন্য শিষ্য যাকোব সতর্ক করেন: “বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না।” ঠিক যেমন “শূন্যে আঘাত” করা আমাদের শত্রুদের পরাস্ত করবে না, তেমনভাবে “শ্রোতামাত্র” হলেই যে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছি তার নিশ্চয়তা নেই।—যাকোব ১:২২; ১ শমূয়েল ১৫:২২; মথি ৭:২৪, ২৫.

১৯. কিভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে আমরা কোনক্রমে অগ্রাহ্য না হয়ে পড়ি?

১৯ অবশেষে, পৌল তাঁর সাফল্যের গুপ্তকথা আমাদের বলেন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।” (১ করিন্থীয় ৯:২৭) পৌলের মত আমাদেরও উচিৎ আমাদের অসিদ্ধ দেহকে আমাদের উপর প্রভুত্ব করতে না দিয়ে, তার উপরে আমাদের প্রভুত্ব করা। মাংসিক প্রবণতা, ইচ্ছা, ও আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের উপড়ে ফেলতে হবে। (রোমীয় ৮:৫-৮; যাকোব ১:১৪, ১৫) তা করা কষ্টকর হতে পারে, কারণ যে শব্দটি “প্রহার” হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে তার আক্ষরিক অর্থ ‘চোখের নিচে আঘাত করা’ (কিংডম ইন্টারলিনিয়ার)। কিন্তু, কালশিটে পড়া আহত চোখ নিয়ে বেঁচে থাকা কী অসিদ্ধ দেহের মাংসিক অভিলাষের কাছে নতিস্বীকার করে মৃত্যুবরণ করার থেকে ভাল নয়?—তুলনা করুন মথি ৫:২৮, ২৯; ১৮:৯; ১ যোহন ২:১৫-১৭.

২০. কেন এখনই বিশেষভাবে প্রয়োজন পরীক্ষা করে দেখা যে জীবনের জন্য দৌড়ে আমরা কিভাবে দৌড়াচ্ছি?

২০ বর্তমানে, আমরা প্রায় দৌড়ের সীমারেখার কাছে পৌঁছে গেছি। পুরস্কার দেওয়ার সময় এসে গেছে। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য পুরস্কার হল “খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধদিক্‌স্থ আহ্বানের পণ” পাওয়া। (ফিলিপীয় ৩:১৪) বিরাট জনতার জন্য পুরস্কার, পার্থিব পরমদেশে অনন্ত জীবন। যখন এরূপ পুরস্কার জড়িত রয়েছে, আসুন আমরা দৃঢ় সংকল্প করি, যেমন পৌল করেছিলেন, যেন আমরা “কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া” না পড়ি। এই নির্দেশ আমাদের সকলের গ্রহণ করা উচিৎ: “তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও।”—১ করিন্থীয় ৯:২৪, ২৭. (w92 1/8)

আপনি কী স্মরণ করতে পারেন?

▫ একজন খ্রীষ্টানের জীবনকে একটি দৌড়ের সাথে তুলনা করা কেন যথাযথ?

▫ কিভাবে জীবনের জন্য দৌড় সাধারণ দৌড়ের থেকে পৃথক?

▫ কেন আমাদের ক্রমাগত “সর্ববিষয়ে” আত্ম-সংযম প্রদর্শন করতে হবে?

▫ একজন যখন দৌড়ায় তখন কিভাবে তা “বিনালক্ষ্যে নয়” হতে পারে?

▫ “শূন্যে আঘাত” করা কেন বিপজ্জনক?

[Pictures on page 16]

বিজেতার মুকুট, ও সেইসাথে তার গৌরব ও সম্মান, সমস্তই ক্ষয়ণীয়

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার