খ্রীষ্টীয় মিশনারী কার্যের এক অনুপ্রাণীত আদর্শ
“যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।”—১ করিন্থীয় ১০:৩৪.
১. যীশু কী কী উপায়ে তাঁর অনুসরণকারীদের জন্য অনুকরণ করার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেন? (ফিলিপীয় ২:৫-৯)
যীশু তাঁর শিষ্যদের জন্য কী উল্লেখযোগ্য উদাহরণই না স্থাপন করেন! পাপী মনুষ্যদের মাঝে বসবাস করার জন্য, তিনি আনন্দের সাথে তাঁর স্বর্গীয় মহিমা ত্যাগ করে পৃথিবীতে আসেন। মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাঁর স্বর্গীয় পিতার নাম পবিত্রীকরণের জন্য মহা যন্ত্রণা ভোগ করতেও তিনি রাজী ছিলেন। (যোহন ৩:১৬; ১৭:৪) তাঁর জীবন সম্বন্ধীয় বিচারকালে, যীশু সাহসের সাথে ঘোষণা করেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।”—যোহন ১৮:৩৭.
২. কেন পুনরুত্থিত যীশু, যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন তা তাঁর শিষ্যদের চালিয়ে যেতে আদেশ দিতে পারেন?
২ মৃত্যুর পূর্বে যীশু, শিষ্যদের চমৎকার প্রশিক্ষণ দেন যাতে তারা রাজ্যের সত্য সম্বন্ধে সাক্ষ্যদানের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। (মথি ১০:৫-২৩; লূক ১০:১-১৬) তাই, পুনরুত্থানের পর, যীশু এই আদেশ দিতে পেরেছিলেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।”—মথি ২৮:১৯, ২০.
৩. কিভাবে শিষ্যকরণের কাজ বিস্তারিত হয়, কিন্তু কোন্ অঞ্চলে প্রধানত তা সীমাবদ্ধ ছিল?
৩ পরবর্তী সাড়ে তিন বছর, যীশুর শিষ্যরা এই আজ্ঞা পালন করেন কিন্তু তাদের শিষ্যকরণের কাজ যিহূদীদের, যিহূদী ধর্ম-গ্রহণকারীদের ও ছিন্নত্বক শমরীয়দের মধ্যে সীমিত রাখেন। তারপর, ৩৬ সা.শ.-তে ঈশ্বর নির্দেশ দেন যে, সুসমাচার একজন অছিন্নত্বক ব্যক্তি, কর্ণীলিয় এবং তার পরিবারে প্রচারিত হোক। পরবর্তী দশকে অপর পরজাতীয়দেরও মণ্ডলীতে আনা হয়। যাইহোক, বেশীর ভাগ কাজ মনে হয় ভূমধ্যসাগরীয় পূর্বাঞ্চলেই সীমিত ছিল।—প্রেরিত ১০:২৪, ৪৪-৪৮; ১১:১৯-২১.
৪. প্রায় সা. শ. ৪৭-৪৮ সালে কোন্ বৈশিষ্ট্যমূলক পরিবর্তন হয়?
৪ খ্রীষ্টীয়দের, আরও দূরবর্তী অঞ্চলেতে, যিহূদী ও পরজাতীয়দের শিষ্য করতে অনুপ্রেরণা পেতে এবং সমর্থ হতে কোন কিছুর প্রয়োজন ছিল। তাই, প্রায় সা. শ. ৪৭-৪৮ সালে অরামীয় আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এই ঐশিক সমাচার পান: “আমি বার্ণবা ও শৌলকে যে কার্য্যে আহ্বান করিয়াছি, সেই কার্য্যের নিমিত্ত আমার জন্য এখন তাহাদিগকে পৃথক্ করিয়া দেও।” (প্রেরিত ১৩:২) লক্ষ্য করুন, পৌল তখন শৌল, তার আদি নামে পরিচিত ছিলেন। আরও লক্ষ্য করুন, ঈশ্বর বার্ণবার নাম পৌলের আগে উদ্ধৃত করেন, কারণ হয়ত সেই সময়, বার্ণবাকে দুইজনের মধ্যে বর্ষীয়ান বলে বিবেচনা করা হত।
৫. পৌল ও বার্ণবার সুসমাচার প্রচারার্থে যাত্রার বিবরণ কেন বর্তমান খ্রীষ্টীয়দের কাছে মহা মূল্যবান?
৫ পৌল ও বার্ণবার সুসমাচার প্রচারার্থে যাত্রার বিশদ বিবরণ যিহোবার সাক্ষীদের কাছে মহা উৎসাহের বিষয়বস্তু, বিশেষকরে মিশনারী ও অগ্রগামীদের কাছে, যারা নিজেদের শহর ছেড়ে ঈশ্বরের সেবা করতে বিদেশী সম্প্রদায়ের কাছে গেছেন। তাছাড়া, প্রেরিত ১৩ এবং ১৪ অধ্যায়ের পুনর্বিবেচনা, আরও অনেককে পৌল ও বার্ণবাকে অনুকরণ করতে এবং শিষ্যকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নিশ্চয়ই অনুপ্রাণীত করবে।
কুপ্র দ্বীপ
৬. কুপ্রেতে মিশনারীরা কী উদাহরণ স্থাপন করেন?
৬ কোন সময় নষ্ট না করে মিশনারীরা অরামীয় বন্দর সিলূকিয়া থেকে কুপ্র দ্বীপের অভিমুখে জলযাত্রা করেন। সালামীতে এসে তারা অন্যমনা হয়ে যাননি, পরিবর্তে তারা “যিহূদীদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করিতে লাগিলেন।” খ্রীষ্টের আদর্শ অনুসরণ করে, তারাও সেই নগরে বসবাস করতে ও দ্বীপবাসীরা তাদের কাছে আসবে বলে অপেক্ষা করতে সন্তুষ্ট রইলেন না। পরিবর্তে, তারা দ্বীপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় “সমস্ত দ্বীপে” কাজ করলেন। কোন সন্দেহ নেই যে, এর জন্য তাদের অনেক হাঁটতে হয়েছিল ও বসবাসের স্থানও অনেকবার বদল করতে হয়েছিল, যেহেতু কুপ্র ছিল একটি বড় দ্বীপ ও তাদের যাত্রা সমস্ত বিস্তৃত অংশে পরিব্যাপ্ত ছিল।—প্রেরিত ১৩:৫, ৬.
৭. (ক) পাফঃতে কোন্ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে? (খ) এই বিবরণ আমাদের কোন্ মনোভাব পোষণ করতে উৎসাহ দেয়?
৭ সেখানে থাকার শেষের দিকে, পাফঃ নগরে এই দুইজন এক চমৎকার অভিজ্ঞতা লাভ করে পুরস্কৃত হন। দ্বীপের দেশাধ্যক্ষ, সের্গিয় পৌল, তাদের সংবাদ শোনেন ও “বিশ্বাস করিলেন।” (প্রেরিত ১৩:৭, ১২) পরবর্তীকালে পৌল লেখেন: “কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই।” (১ করিন্থীয় ১:২৬) তবুও, পরাক্রমীদের মধ্যে যিনি সাড়া দেন তিনি হলেন সের্গিয় পৌল। সরকারী কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য দান করায় দৃঢ় মনোভাব গ্রহণ করতে এই অভিজ্ঞতাটি সকলকে, বিশেষকরে মিশনারীদের উৎসাহিত করা উচিৎ, যেমন আমাদের ১ তীমথিয় ২:১-৪ পদে উৎসাহিত করা হয়েছে। অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অনেক সময় ঈশ্বরের সেবকদের অনেক সাহায্য করেছেন।—নহিমিয় ২:৪-৮.
৮. (ক) এই সময়ের পর থেকে পৌল ও বার্ণবার মধ্যে কী পরিবর্তিত সম্বন্ধ স্থাপিত হয়? (খ) কিরূপে বার্ণবা এক উত্তম উদাহরণ?
৮ সের্গিয় পৌলের পরিবর্তনের ব্যাপারে, পৌল যিহোবার আত্মার প্রভাবে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। (প্রেরিত ১৩:৮-১২) তাছাড়া এই সময় থেকেই পৌল নেতৃত্ব গ্রহণ করেন বলে মনে হয়। (তুলনা করুন প্রেরিত ১৩:৭ এর সাথে প্রেরিত ১৩:১৫, ১৬, ৪৩.) পৌল ধর্মান্তরিত হওয়ার সময় যে ঐশিক কর্মভার পান তার সাথে সঙ্গতি রেখেই এটি হয়। (প্রেরিত ৯:১৫) হয়ত এইরূপ পরিবর্তন বার্ণবার নম্রতার পরীক্ষা করে। যাইহোক, এই পরিবর্তনকে ব্যক্তিগত এক প্রকাশ্য অপমানরূপে না নিয়ে বার্ণবা, মনে হয় যে তার নামের অর্থ “সান্ত্বনার পুত্র” অনুযায়ী ব্যবহার করেন, সুসমাচার প্রচারার্থে সম্পূর্ণ যাত্রাকালে এবং পরবর্তীকালেও যখন কিছু যিহূদী খ্রীষ্টীয়েরা অছিন্নত্বক্ পরজাতীয়দের মধ্যে তাদের পরিচর্য্যাকে চ্যালেঞ্জ করে, তখনও তিনি পৌলকে বিশ্বস্তরূপে সমর্থন করেন। (প্রেরিত ১৫:১, ২) আমাদের সকলের জন্য এটি কতই না উত্তম উদাহরণ, এমনকি মিশনারী ও বেথেল গৃহে যারা আছেন তাদের জন্যও! ঐশিক বিন্যাসকে গ্রহণ করতে এবং আমাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিতে যাদের নিয়োজিত করা হয়েছে তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন করতে সবসময় আমাদের ইচ্ছুক থাকা উচিৎ।—ইব্রীয় ১৩:১৭.
এশিয়া মাইনরের মালভূমি
৯. পৌল ও বার্ণবার পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া পর্য্যন্ত যাত্রা করার ইচ্ছুক মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৯ কুপ্র থেকে পৌল এবং বার্ণবা উত্তরে এশিয়া মহাদেশের দিকে জলযাত্রা করলেন। কোন অপ্রকাশিত কারণে মিশনারীরা উপকূলবর্তী অঞ্চলে থাকেননি কিন্তু তারা পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ার অভিমুখে ১৮০ কিলোমিটারের এক দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যাত্রা করেন, যেটি এশিয়া মাইনরের মালভূমির মধ্যস্থানে অবস্থিত ছিল। এর অর্থ হল, পর্বতের গিরিপথ দিয়ে উঠে তারপর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,১০০ মিটার উচ্চ সমভূমিতে নামা। বাইবেল পণ্ডিত জে. এস. হাউসন্ বলেন: “দক্ষিণ উপকূলের সমতলভূমি থেকে . . . মালভূমিকে পৃথক করা এই পর্বতগুলির অধিবাসীদের স্বৈরাচারী এবং লুণ্ঠনকারী অভ্যাস প্রাচীন ইতিহাসে কুখ্যাত ছিল।” তাছাড়া, মিশনারীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপদের সম্মুখীন হন। হাউসন্ আরও বলেন, “একমাত্র পিষিদিয়ার পর্বতাঞ্চল ছাড়া, এশিয়া মাইনরের কোন অঞ্চলই ‘বন্যা’র জন্য এইরূপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল না, যেখানে নদীগুলি হঠাৎ প্রবল বেগে উঁচু পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বেরিয়ে আসে অথবা গভীর সঙ্কীর্ণ গিরিখাত দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বয়ে যায়।” এই বিশদ বিবরণের জন্যে আমরা মনশ্চক্ষুর মাধ্যমে কল্পনা করতে পারি যে সুসমাচার বিস্তার করতে মিশনারীরা কী ধরণের যাত্রা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:২৬) অনুরূপে, যিহোবার লোকেরাও বর্তমানে মানুষের কাছে পৌঁছাতে ও তাদের সুসমাচার প্রদান করতে সাহসের সাথে অনেক বাধার মোকাবিলা করেন।
১০, ১১. (ক) পৌল তার শ্রোতাদের সাথে কিরূপে পারস্পরিক আগ্রহ বজায় রাখেন? (খ) কেন বহু যিহূদীরা মশীহের দুঃখভোগ সম্পর্কে শুনে সম্ভবত স্তম্ভিত হয়? (গ) পৌল তার শ্রোতাদের সামনে কী প্রকৃতির পরিত্রাণ তুলে ধরেন?
১০ যেহেতু পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় যিহূদীদের একটি সমাজ-গৃহ ছিল, তাই মিশনারীরা প্রথমে সেখানে যান সেই সব ব্যক্তিদের সুসমাচার গ্রহণ করার সুযোগ দিতে, যারা ঈশ্বরের বাক্যের সাথে সুপরিচিত ছিল। পৌলকে যখন বলতে আমন্ত্রণ করা হয় তখন তিনি উঠে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের সামনে এক কর্তৃত্বব্যঞ্জক বক্তৃতা দেন। তার সম্পূর্ণ বক্তৃতাতে, শ্রোতাদের মধ্যে তিনি যিহূদী ও যিহূদী ধর্ম-গ্রহণকারীদের সঙ্গে পারস্পরিক আগ্রহ বজায় রেখে কথা বলেন। (প্রেরিত ১৩:১৩-১৬, ২৬) ভূমিকা দেওয়ার পর পৌল, যিহূদীদের সুবিখ্যাত ইতিহাস পুনরালোচনা করেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দেন এই সম্বন্ধে যে যিহোবা তাদের পিতৃপুরুষদের মনোনীত করে মিসর থেকে উদ্ধার করে আনেন ও তাছাড়া প্রতিজ্ঞাত দেশের অধিবাসীদের জয় করতে তিনি কিভাবে সাহায্য করেন। তারপর পৌল, দায়ূদের সাথে যিহোবার ব্যবহারের উপর আলোকপাত করেন। প্রথম শতাব্দীর যিহূদীরা এই প্রকৃতির তথ্যগুলির প্রতি খুব আগ্রহী ছিল কারণ তারা আশা করছিল যে, ঈশ্বর দায়ূদের এক বংশধরকে ত্রাণকর্তা ও চিরন্তন শাসকরূপে উত্থাপন করবেন। আর সেই সময়ে, পৌল সাহসের সাথে ঘোষণা করেন: “তাঁহারই [দায়ূদ] বংশ হইতে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞানুসারে ইস্রায়েলের নিমিত্ত এক ত্রাণকর্ত্তাকে, যীশুকে, উপস্থিত করিলেন।”—প্রেরিত ১৩:১৭-২৩.
১১ কিন্তু, বহু যিহূদী সেই প্রকৃতির ত্রাণকর্তার অপেক্ষায় ছিল, যে হবে একজন সামরিক নায়ক ও যে তাদের রোমীয় শাসন থেকে মুক্ত করবে এবং যিহূদী জাতিকে অন্যান্য জাতি থেকে সর্বোন্নত করবে। তাই কোন সন্দেহ নেই যে তারা স্তম্ভিত হয়, যখন তারা পৌলকে বলতে শোনে যে, তাদের নিজেদের ধর্মীয় নেতারাই মশীহকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার জন্য সমর্পণ করেছিল। “কিন্তু ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইলেন।” পৌল সাহসের সাথে ঘোষণা করেন। তার বক্তৃতার সমাপ্তির দিকে, তিনি শ্রোতাদের প্রদর্শন করেন যে তারাও এক অপূর্ব ধরণের পরিত্রাণ পেতে পারে। “হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা জানিও,” তিনি বলেন, “এই ব্যক্তি দ্বারা পাপের মোচন তোমাদিগকে জ্ঞাত করা যাইতেছে; আর মোশির ব্যবস্থাতে তোমরা যে সকল বিষয়ে ধার্ম্মিক গণিত হইতে পারিতে না, যে কেহ বিশ্বাস করে, সে সেই সকল বিষয়ে এই ব্যক্তিতেই ধার্ম্মিক গণিত হয়।” বহুজন যারা পরিত্রাণের এই অপূর্ব ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করবে বলে ঈশ্বর ভাববাণী করেন, তাদের শ্রেণীভূক্ত না হতে শ্রোতাদের সবিনয়ে অনুরোধ করে, পৌল তার বক্তৃতার পরিসমাপ্তি করেন।—প্রেরিত ১৩:৩০-৪১.
১২. পৌলের বক্তৃতার ফলাফল কী হয়েছিল, এবং তা আমাদের কিভাবে উৎসাহিত করে?
১২ কী অপূর্ব শাস্ত্র-ভিত্তিক বক্তৃতা দান! শ্রোতৃবর্গ কিরূপ সাড়া দেন? “অনেক যিহূদী ও যিহূদি-ধর্ম্মাবলম্বী ভক্ত লোক পৌল ও বার্ণবার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল।” (প্রেরিত ১৩:৪৩) আমাদের জন্য বর্তমানে কতই না উৎসাহজনক! অনুরূপে, আমরাও যেন আমাদের সর্বোপরি চেষ্টা করি কার্যকারীরূপে সত্য প্রদান করতে, তা সাধারণ্যে পরিচর্য্যায় হোক অথবা আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলিতে মন্তব্য দানে এবং বক্তৃতা দানেই হোক।—১ তীমথিয় ৪:১৩-১৬.
১৩. কেন মিশনারীদের পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া ত্যাগ করতে হয়, এবং নতুন শিষ্যদের সম্পর্কে কী প্রশ্ন ওঠে?
১৩ পিষিদিয়ার নতুন আগ্রহী ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে এই সুসমাচারটি চেপে রাখতে পারল না। ফলে, “পরবর্ত্তী বিশ্রামবারে নগরের প্রায় সমস্ত লোক ঈশ্বরের বাক্য শুনিতে সমাগত হইল।” আর খুব শীঘ্রই সংবাদ নগরের বাইরেও পৌঁছে গেল। এমনকি, “প্রভুর বাক্য সেই দেশের সর্ব্বত্র ব্যাপিয়া গেল।” (প্রেরিত ১৩:৪৪, ৪৯) ঈর্ষাপরায়ণ যিহূদীরা এই সত্যটি গ্রহণ করার পরিবর্তে, মিশনারীদের নগর থেকে বাইরে বার করে দিতেও সক্ষম হল। (প্রেরিত ১৩:৪৫, ৫০) এতে নতুন শিষ্যদের উপর কী প্রভাব পড়ল? তারা কী নিরুৎসাহিত হয়ে ছেড়ে দিয়েছিল?
১৪. মিশনারীরা যে কাজ শুরু করেছিলেন তা কেন বিরোধীরা নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারল না, এবং এর থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি?
১৪ না তা হয়নি, কারণ এটি ছিল ঈশ্বরের কাজ। তাছাড়া, মিশনারীরা পুনরুত্থিত প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাসের এক দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাই সুস্পষ্ট যে, নতুন শিষ্যরা তখন খ্রীষ্টকে তাদের নেতারূপে দেখেছিল, মিশনারীদের নয়। ফলে আমরা পড়ি যে তারা “আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইতে থাকিল।” (প্রেরিত ১৩:৫২) মিশনারীদের ও বর্তমানে শিষ্যকরণের কাজ করছেন যারা সেই অন্যান্যদের জন্য এটি কতই না উৎসাহজনক! যদি আমরা নম্রতা ও উদ্যমতার সাথে আমাদের অংশটি করে যাই, তাহলে যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পরিচর্য্যাকে নিশ্চয়ই আশীর্বাদ করবেন।—১ করিন্থীয় ৩:৯.
ইকনিয়, লুস্ত্রা ও দর্বী
১৫. মিশনারীরা ইকনিয়াতে কী পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তার ফলাফল কী হয়?
১৫ পৌল এবং বার্ণবা এবার দক্ষিণপূর্ব দিকে, পরবর্তী নগর ইকনিয়াতে যেতে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার যাত্রা করেন। তাড়নার ভয় তাদের আন্তিয়খিয়ার সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে দমিয়ে রাখল না। বাইবেল বলে, ফলে “যিহূদী ও গ্রীকদের বিস্তর লোক বিশ্বাস করিল।” (প্রেরিত ১৪:১) যে যিহূদীরা সুসমাচার গ্রহণ করল না তারা আবার বিরোধীতা করার জন্য উত্তেজিত করতে লাগল। কিন্তু মিশনারীরা তা সহ্য করে, নতুন শিষ্যদের সাহায্য করার জন্য বেশ কিছু সময় ইকনিয়াতে অতিবাহিত করলেন। তারপর, যিহূদী বিরোধীরা তাদের পাথর মারতে সচেষ্ট হচ্ছে জানতে পেরে, পৌল ও বার্ণবা বিজ্ঞতার সাথে পরবর্তী অঞ্চল “লুস্ত্রা ও দর্বী নগরে এবং চারিদিকের অঞ্চলে” পালিয়ে গেলেন।—প্রেরিত ১৪:২-৬.
১৬, ১৭. (ক) লুস্ত্রাতে পৌলের কী হয়? (খ) প্রেরিতের সঙ্গে ঈশ্বরের ব্যবহার কিভাবে লুস্ত্রার এক যুবক পুরুষকে প্রভাবিত করে?
১৬ সাহসপূর্বক তারা এই নতুন, প্রথম-যাওয়া ক্ষেত্রতে “সুসমাচার প্রচার করিতে লাগিলেন।” (প্রেরিত ১৪:৭) যখন পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ার ও ইকনিয়ের যিহূদীরা এই বিষয়ে শুনল, তখন তারা সমস্ত পথ অতিক্রম করে লুস্ত্রাতে এল এবং পৌলকে পাথর মারার জন্য জনতাকে প্ররোচিত করল। পালাবার সময় না পাওয়াতে, পৌল পাথরে প্রবল আঘাতপ্রাপ্ত হন, ফলে বিরোধীরা মনে করল যে তিনি মারা গেছেন। তাই তাকে শহরের বাইরে তারা টেনে বার করে আনল।—প্রেরিত ১৪:১৯.
১৭ আপনি কী ধারণা করতে পারছেন যে তা নতুন শিষ্যদের মনে কতটা দুঃখকষ্ট এনেছিল? কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, তারা যখন পৌলকে ঘিরে দাঁড়াল, তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন! বাইবেল বলে না যে, নতুন শিষ্যদের মধ্যে তীমথিয় নামক কোন যুবক সেখানে ছিলেন কি না। নিশ্চয়ই কোন এক সময়ে পৌলের সঙ্গে ঈশ্বরের ব্যবহার সম্বন্ধে সে জানতে পারে এবং সেটি তার তরুণ মনে গভীর দাগ কাটে। পৌল তার দ্বিতীয় পত্রে তীমথিয়কে লেখেন: “তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার, . . . অনুসরণ করিয়াছ; আন্তিয়খিয়াতে, ইকনিয়ে, লুস্ত্রায় আমার প্রতি কি কি ঘটিয়াছিল; কত তাড়না সহ্য করিয়াছি। আর সেই সমস্ত হইতে প্রভু আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন।” (২ তীমথিয় ৩:১০, ১১) পাথর মারার ঘটনার প্রায় এক বা দুই বছর পর, পৌল লুস্ত্রাতে ফিরে আসেন এবং যুবক তীমথিয়কে উদাহরণযোগ্য এক খ্রীষ্টীয়রূপে পান, যার সম্বন্ধে ‘লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ সাক্ষ্য’ দেয়। (প্রেরিত ১৬:১, ২) তাই পৌল তাকে যাত্রার সাথীরূপে বেছে নেন। এই কারণই তীমথিয়কে আত্মিক গুণে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে, এবং সময়ে বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করতে পৌলের দ্বারা প্রেরিত হতে তিনি যোগ্যও হন। (ফিলিপীয় ২:১৯, ২০; ১ তীমথিয় ১:৩) সেইভাবে আজ ঈশ্বরের উদ্যমী দাসেরাও যুব ব্যক্তিদের জন্য এক অপূর্ব প্রভাবস্বরূপ, যাদের মধ্যে অনেকেই তীমথিয়র মতো মূল্যবান ঈশ্বরের দাসরূপে গড়ে উঠেছে।
১৮. (ক) দর্বীতে মিশনারীদের প্রতি কী ঘটে? (খ) তাদের জন্য এখন কী সুযোগ খোলা ছিল, কিন্তু তারা কোন্ পথ অনুসরণ করতে বেছে নিলেন?
১৮ লুস্ত্রাতে মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পেয়ে পরের দিন সকালে, পৌল বার্ণবার সাথে, দর্বীর অভিমুখে রওনা হলেন। এইবারে কোন বিরোধীরা তাদের অনুসরণ করল না, এবং বাইবেল বলে যে, ‘তাহারা অনেক লোককে শিষ্য করলেন।’ (প্রেরিত ১৪:২০, ২১) দর্বীতে মণ্ডলী স্থাপন করার পর, পৌল ও বার্ণবাকে এক সিদ্ধান্ত নিতেই হয়েছিল। দর্বী থেকে তার্ষ পর্য্যন্ত, রোমীয়দের দ্বারা নির্মিত এক সুগম রাস্তা ছিল। সেখান থেকে অরামীয় আন্তিয়খিয়াতে ফিরে আসার রাস্তার দূরত্বটি ছিল অল্প। ফিরে আসার জন্য সম্ভবত সেটি হবে সবথেকে সুবিধাজনক পথ, এবং সেই মিশনারীরা হয়ত তখন মনে করতে পারতেন তাদের এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু তাদের প্রভুকে অনুসরণ করে, পৌল ও বার্ণবা আরও বৃহৎ প্রয়োজনের বিষয় অনুভব করেছিলেন।—মার্ক ৬:৩১-৩৪.
ঈশ্বরের কাজ সম্পূর্ণ সম্পাদন করা
১৯, ২০. (ক) লুস্ত্রা, ইকনিয়া ও আন্তিয়খিয়াতে ফিরে আসাতে যিহোবা মিশনারীদের কিরূপে আশীর্বাদ করেন? (খ) বর্তমানে যিহোবার লোকদের জন্য তা কী শিক্ষা প্রদান করে?
১৯ ঘরে ফিরে আসতে অল্প দূরত্বের রাস্তা দিয়ে না যাওয়ার পরিবর্তে, মিশনারীরা সাহসের সাথে ফিরে গিয়ে, সেই নগরগুলিকে পুনর্দর্শন করেন যেখানে তাদের জীবন বিপন্ন হয়েছিল। নতুন মেষদের প্রতি তাদের এই নিঃস্বার্থপর উদ্বেগের জন্য যিহোবা কী তাদের আশীর্বাদ করেন? হ্যাঁ, নিশ্চয়, কারণ বিবরণ বলে যে “তাঁহারা শিষ্যদের মন সুস্থির করিলেন, এবং তাহাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা বিশ্বাসে স্থির থাকে,” এবং তারা সফলকামীও হয়েছিলেন। তাই উপযুক্তরূপে তারা নতুন শিষ্যদের বলেন, “অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে।” (প্রেরিত ১৪:২১, ২২) আসন্ন ঈশ্বরের রাজ্যের সহ-দায়াদরূপে তাদের আহূত করা হয়েছে বলে পৌল ও বার্ণবা তাদের স্মরণও করিয়ে দেন। বর্তমানে, আমাদেরও নতুন শিষ্যদের অনুরূপ উৎসাহ দেওয়া দরকার। পৌল ও বার্ণবা যে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করেছিলেন, সেই একই রাজ্যের শাসনের অধীনে পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা তাদের সামনে তুলে ধরে, তাদের আমরা সমস্ত পরীক্ষা সহ্য করতে দৃঢ় করতে পারি।
২০ প্রতিটি নগর ত্যাগ করার পূর্বে, পৌল ও বার্ণবা স্থানীয় মণ্ডলীকে সুসংগঠিত হতে সাহায্য করেন। স্পষ্টত, তারা যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষদের প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের নেতৃত্ব নিতে নিয়োজিত করেন। (প্রেরিত ১৪:২৩) কোন সন্দেহ নেই যে এর ফলে আরও বৃদ্ধি হয়। ঠিক সেইভাবে বর্তমানে, মিশনারীরা ও অপরেরা অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করা পর্য্যন্ত উন্নতি করতে সাহায্য করার পর, অনেক সময় সেখান থেকে চলে গিয়ে অন্য জায়গাগুলিতে গিয়ে তাদের উত্তম কার্য চালিয়ে যান, যেখানে সেটির বেশী প্রয়োজন থাকে।
২১, ২২. (ক) পৌল ও বার্ণবা তাদের সুসমাচার প্রচারার্থে যাত্রা সম্পূর্ণ করার পর কী ঘটে? (খ) এর ফলে কী প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়?
২১ অবশেষে মিশনারীরা অরামীয় আন্তিয়খিয়াতে ফিরে আসার পর সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত বোধ করেন। প্রকৃতপক্ষে, বাইবেলের বিবরণ বলে যে, তাদের উপরে ঈশ্বর যে কাজের ভার অর্পণ করেন তা তারা সম্পূর্ণ “সাধন” করেন। (প্রেরিত ১৪:২৬) বোঝা যায় যে তাদের অভিজ্ঞতাগুলির বর্ণনাতেই “ভ্রাতৃগণের পরমানন্দ” হয়। (প্রেরিত ১৫:৩) ভবিষ্যতের বিষয়েই বা কি? তারা কী তাদের কৃতিত্বে সন্তুষ্ট হয়ে নিশ্চল হয়ে বসে থাকবে, যেমন প্রবাদ বলে? কখনই না। ছিন্নত্বক সম্বন্ধীয় বিতর্কের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পেতে যিরূশালেমে পরিচালক গোষ্ঠীকে দর্শন করার পর, দুজনে আবার সুসমাচার প্রচারার্থে যাত্রা শুরু করলেন। এই বারে তারা ভিন্ন ভিন্ন দিকে গেলেন। বার্ণবা, যোহন মার্ককে নিয়ে কুপ্রে যাওয়াতে, পৌল নতুন সাথী পেলেন, সীলকে এবং তারা সুরিয়া ও কিলিকিয়া দিয়ে ভ্রমণ করলেন। (প্রেরিত ১৫:৩৯-৪১) এই যাত্রাতেই তিনি যুবক তীমথিয়কে পছন্দ করেন, ও তার সাথে নিয়ে যান।
২২ বার্ণবার দ্বিতীয় যাত্রার ফলাফল সম্বন্ধে বাইবেল কিছু প্রকাশ করেনি। আর পৌল ক্রমাগত ইউরোপের নতুন ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করে যান এবং অন্তত পাঁচটি শহরে নতুন মণ্ডলী স্থাপন করেন—ফিলিপী, বিরয়া, থিষলনীকী, করিন্থ এবং ইফিষ। পৌলের এই উল্লেখযোগ্য সফলতার চাবিকাঠিটি কী? বর্তমানে শিষ্যকরণ কাজের কর্মীদের ক্ষেত্রে কী একই নীতি প্রযোজ্য? (w92 9/1)
আপনি কী স্মরণ করতে পারেন?
▫ অনুকরণ করার জন্য যীশু কেন এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ?
▫ কিরূপে বার্ণবা এক উদাহরণস্বরূপ?
▫ পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়াতে পৌলের বক্তৃতা থেকে আমরা কী শিক্ষা করতে পারি?
▫ কিভাবে পৌল ও বার্ণবা তাদের কার্যভার সম্পূর্ণরূপে সম্পাদন করেন?
[Pictures on page 8]
প্রেরিত পৌলের তাড়নার সহনক্ষমতা, যুবক তীমথিয়র মনে গভীর প্রভাব আনে