পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
খাদ্যের মধ্যে হয়ত মিশানো রক্তের উপাদান যেমন শুষ্ক প্লাজমার মত পদার্থ সম্বন্ধে খ্রীষ্টীয়গণ কতটা চিন্তিত থাকবেন?
যদি প্রকৃতই কোন কারণ থাকে বিশ্বাস করার যে স্থানীয় খাদ্যসামগ্রীতে জন্তুর রক্ত (অথবা রক্তের কোন উপাদান) নিশ্চয় করে ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে খ্রীষ্টীয়দের উপযুক্তরূপে সাবধান হতে হবে। তবুও, শুধুমাত্র সন্দেহবশত বিভ্রান্ত বা ভিত্তিহীন চিন্তা নিয়ে বাস করা বুদ্ধিহীনের কাজ হবে।
মানব ইতিহাসের প্রথমে আমাদের স্রষ্টা রক্ত না খাওয়ার নিয়ম দেন। (আদিপুস্তক ৯:৩, ৪) তিনি বলেন যে রক্ত জীবনের প্রতীক, যা হল ঈশ্বরের কাছ থেকে পুরস্কারস্বরূপ। কোন জীবের রক্ত, শুধুমাত্র বেদীতেই বলিদানেতে ব্যবহার করা যেতে পারত। তা না হলে ঈশ্বরকে পুনরায় ফেরৎ দেওয়ার অর্থে কোন জীবের রক্ত ভূমিতে ঢেলে দেওয়া হত। তাঁর লোকদের জীবন রক্ষার জন্য রক্ত নেওয়া এড়াতে হত। তিনি আজ্ঞা দেন: “তোমরা কোন প্রাণীর রক্ত ভোজন করিবে না, কেননা প্রত্যেক প্রাণীর রক্তই তাহার প্রাণ; যে কেহ তাহা ভোজন করিবে, সে উচ্ছিন্ন হইবে।” (লেবীয় পুস্তক ১৭:১১-১৪) রক্ত খাওয়া সম্বন্ধে ঈশ্বরের বিধিনিষেধ খ্রীষ্টীয়দের জন্য পুনরুল্লিখিত করা হয়। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯) তাই যে সব খাদ্যে রক্ত মিশ্রিত ছিল, যেমন গলা টিপে মারা প্রাণীর মাংস, রক্তমিশ্রিত সসেজের মত খাদ্য প্রাথমিক খ্রীষ্টীয়দের এড়াতে হত।
ব্যবহারিক অর্থে, কিভাবে সেই খ্রীষ্টীয়রা ‘রক্ত থেকে দূরে থাক’ সেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত অনুসারে চলত? (প্রেরিত ২১:২৫) তারা কী প্রেরিত পৌলের বাক্যগুলি শুধুমাত্র কাজে লাগাবে: “যে কোন দ্রব্য বাজারে বিক্রয় হয়, সংবেদের জন্য কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া তাহা ভোজন করিও”?
না। ১ করিন্থীয় ১০:২৫ পদের সেই শব্দগুলি হয়ত সেই মাংস সম্বন্ধে বলে যা দেবদেবীর মন্দিরে পশুবলি থেকে আসে। সেই সময়ে, মন্দিরের অতিরিক্ত মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হত, আর সেই মাংস হয়ত সে তার দোকানের আরও মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করার জন্য রাখত। পৌলের বক্তব্য ছিল যে মন্দিরের মাংস একদম খারাপ বা দূষিত ছিল না। মনে হয় এই প্রথা ছিল যে পশুবলির রক্ত বার করে নিয়ে মূর্তিপূজকদের বেদীতে ব্যবহার করা হত। তাই, যদি কিছুটা অতিরিক্ত মাংস বাজারে বিক্রি হত, যার সঙ্গে মন্দিরের কোন যোগাযোগ থাকত না বা যার মধ্যে মূর্তিপূজকদের কোন ভুল ধারণা থাকত না, তাহলে সেই মাংস খ্রীষ্টীয়রা বিক্রির জন্য মাংস হিসাবে কিনতে পারত যা পরিচ্ছন্ন এবং যার থেকে উপযুক্তরূপে রক্ত বার করে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু, যদি সেই খ্রীষ্টীয়েরা জানত যে, গলা টিপে মারা প্রাণীর মাংস (অথবা রক্তমিশ্রিত সসেজ) স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায় তাহলে বিষয়টি আলাদা হত। তখন কোন্ মাংসটি কিনতে হবে সেই ক্ষেত্রে তাদের সাবধান হতে হত। তারা হয়ত সেই মাংসের খাদ্যসামগ্রীকে চিনতে পারত যাতে রক্ত মিশান থাকত যদি সেগুলিতে একটি বিশেষ রং থাকত (এমনকি বর্তমানেও যে সব দেশে রক্তের সসেজ সাধারণ খাদ্য সেখানেও সেটিকে সহজেই সনাক্ত করা যায়)। অথবা খ্রীষ্টীয়রা হয়ত জনপ্রিয় কোন কসাই বা মাংস ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করত। কোন বিশেষ মাংসে রক্ত আছে বলে বিশ্বাস করার তাদের যদি কোন কারণ না থাকত তাহলে তারা সহজেই কিনে খেতে পারত।
পৌল আরও লেখেন: “তোমাদের শান্তভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।” (ফিলিপীয় ৪:৫) এটি মাংস কেনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। ইস্রায়েলের নিয়ম বা প্রথম শতাব্দীর পরিচালক গোষ্ঠীর আজ্ঞা ইঙ্গিত করেনি যে ঈশ্বরের লোকদের মাংস সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে অনেক সময় ও প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হবে, এবং এমনকি মাংসে রক্ত আছে বলে একটুমাত্র সন্দেহ থাকলে শাকাহারী হতে হবে।
এক ইস্রায়েলীয় শিকারি যে পশু বধ করত তাকে রক্ত বার করে দিতে হত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১৫, ১৬ তুলনা করুন।) যদি তার পরিবার সমস্ত মাংসটি খেতে পারত না, তাহলে সে হয়ত কিছুটা বিক্রি করে দিত। এমনকি কাটা মাংস থেকে উপযুক্তরূপে রক্ত নির্গত করলেও কিছুটা রক্ত মাংসেতে থেকে যায়, কিন্তু বাইবেলে সেই রকম কোন কিছু বলে না যে এক যিহূদীকে মাংস কেনার সময় সেই সব অতিরিক্ত মাত্রায় দেখতে হবে যেমন মাংস কাটা ও রক্ত নির্গত করার মধ্যে কত মিনিট চাই, কোন্ ধমনী বা শিরা কাটা হবে রক্ত বার করার জন্য, কিভাবে জন্তুটিকে ঝোলান হয়েছে এবং কতক্ষণ সময়ের জন্য। তাছাড়া পরিচালক গোষ্ঠী লেখেননি যে, এই ক্ষেত্রে খ্রীষ্টীয়দের অতিরিক্ত পূর্ব-সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে, যেন মনে হয় তাদের মাংস খাওয়ার আগে অন্তিম উত্তরের প্রয়োজন ছিল।
বর্তমানে বহু দেশে, পশুদের মাংসের খাদ্য সামগ্রীর (অসাধারণ দ্রব্যগুলি ছাড়া, যেমন রক্তমিশ্রিত সসেজ) মাংস কাটার সময় যেন উপযুক্তরূপে রক্ত নির্গত করা হয় সেই সম্বন্ধে নিয়ম, প্রথা বা ধর্মীয় প্রথা আছে। তাই সেই এলাকার খ্রীষ্টীয়দের সাধারণত মাংস কাটা সম্বন্ধে বা তৈরী মাংস সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তিত হতে হবে না। বর্দ্ধিত অর্থে তারা ‘বাজারে বিক্রীত মাংস কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করেই খেতে পারে’ এবং তারা রক্ত থেকে দূরে আছে বলে তাদের পরিষ্কার বিবেক থাকবে।
যদিও অনেকসময়, রক্তের ব্যবসায়িক ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োগগত রিপোর্ট কিছু খ্রীষ্টীয়কে বিক্ষুব্ধ করেছে। মাংস-প্রকরণ শিল্পের কিছু ব্যবসায়ীরা যুক্তি দেয় যে জন্তু কাটার পর অনেক পরিমাণে রক্ত জমা করে ব্যবহারিক কার্যে এবং লাভের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন সার অথবা পশুর খাদ্যের জন্য। গবেষকগণ পরীক্ষা করেন যে সেই সব রক্ত (অথবা উপাদান) প্রক্রিয়াগত মাংসে ব্যবহার করা যাবে কি না। কিছু ব্যবসায়ী শিল্প তরল, জমানো অথবা গুঁড়ো প্লাজমার (অথবা বিবর্ণ লোহিত রক্ত কণিকা) কিছুটা অংশ এমনকি তৈরী করেছে, যা মাংসের এক অল্প শতাংশ পরিবর্ত হিসাবে সসেজ জাতীয় খাবারে অথবা প্যাটিসে ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য গবেষণা করা হয় গুঁড়ো রক্তের ব্যবহারের উপর যা খাদ হিসাবে অথবা বাটা মাংসে জল ও চর্বিকে জমাট বাঁধাতে, বেকারীর খাদ্য সামগ্রীতে বা অন্যান্য খাদ্য ও পানীয়তে প্রোটিন ও আয়রন যোগ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে সেই প্রকৃতির গবেষণা অনেক দশক ধরে চলে আসছে। তবুও মনে হয় সেই প্রকৃতির সামগ্রীর ব্যবহার বেশীরভাগ দেশে খুব সীমিত অথবা প্রচলনের বাইরে। কয়েকটি বিশেষ রিপোর্ট এর কারণটি দেখতে সাহায্য করে:
“রক্ত হল পুষ্টিজনিত ও প্রক্রিয়াগত প্রোটিনের উৎস। যাইহোক, মানুষের সরাসরি গ্রহণের জন্য গরুর মাংসের রক্ত মাত্র সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয় কারণ তার অতিরিক্ত গাঢ় রং ও বিশেষ স্বাদের জন্য।”—জারনাল অফ্ ফুড সায়েন্স, খন্ড ৫৫, নম্বর ২, ১৯৯০.
“রক্ত প্লাজমা প্রোটিনে কার্যকারী গুণাবলী আছে যেমন তা অতি দ্রবণীয়, ক্কাথের মত কাজ করে ও জলের সাথে মিশ্রিত হয় না . . . এবং খাদ্য তৈরী করতে এইগুলি ব্যবহার করলে খুব সুবিধা হয়। কিন্তু, প্লাজমাকে জলশূন্য করার পর সেটিকে বীজানু মুক্ত করতে কার্যকরীরূপে কোন ব্যবস্থাই জাপানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”—জারনাল অফ্ ফুড সায়েন্স, খন্ড ৫৬, নম্বর ১, ১৯৯১.
যেহেতু বহু সরকার চায়, যেন উপাদানগুলির তালিকা লেখা থাকে, তাই কিছু খ্রীষ্টীয়েরা সময়ে সময়ে প্যাকেট খাবারের লেবেলটি দেখে নেয়। যদি তাদের মনে হয় যে কোন এক খাদ্যতে রক্ত মিশানো আছে তাহলে তারা সেই সব সামগ্রীর উপাদান সবসময় দেখে নিতে পারে। যে সব সামগ্রীর উপাদানের তালিকাতে রক্ত, রক্ত প্লাজমা, প্লাজমা, গ্লোবিন (বা গ্লোবিউলিন) প্রোটিন অথবা হিমোগ্লোবিন (বা গ্লোবিন) আয়রন আছে সেই সব সামগ্রী এড়িয়ে চলা ভাল। এক ইউরোপীয় কম্পানীর ক্রয়বিক্রয়ের তথ্যাদি এই ক্ষেত্রে স্বীকার করে যে: “উপাদান হিসাবে গ্লোবিনের ব্যবহার খাদ্যের প্যাকেটে এমনভাবে লেখা উচিৎ যাতে ক্রেতা খাদ্যের মিশ্রন বা মূল্য সম্বন্ধে ভুল না বোঝে।”
যাইহোক, লেবেল দেখা বা কসাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষেত্রেও যুক্তিসম্পন্নতার প্রয়োজন। এর অর্থ এই নয় যে জগদ্ব্যাপী প্রত্যেক খ্রীষ্টীয়দের প্রত্যেকটি প্যাকেট খাদ্যের লেবেল ও খাদ্যের উপাদানগুলি দেখে কিনতে হবে অথবা রেস্টুরেন্ট বা খাবারের দোকানের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। একজন খ্রীষ্টীয় নিজেকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করতে পারে, ‘এই এলাকা বা দেশে সাধারণ খাদ্য সামগ্রীতে রক্ত বা তার থেকে নিষ্কাশিত কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তার সাক্ষ্য প্রমাণ আছে কি?’ বেশীরভাগ এলাকায় এর উত্তর হবে, না। তাই, বহু খ্রীষ্টীয়রা এই ক্ষেত্রে নামেমাত্র সোবনার জন্য ব্যক্তিগতরূপে তাদের প্রচুর সময় ও মনোযোগ না দিতে সিদ্ধান্ত করেছেন। যে ব্যক্তি এইরূপ বোধ করে না সে অপরকে, যারা হয়ত ঈশ্বরের সামনে উত্তম বিবেক নিয়ে বিষয়টি অন্যভাবে দেখে, তাদের বিচার না করে তার বিবেক অনুসারে কাজ করুক।—রোমীয় ১৪:২-৪, ১২.
যদিও বা রক্ত মিশ্রিত খাদ্য তৈরী করা হয়, তবুও খরচা, আইনপ্রনয়নের জন্য বা অন্যান্য কারণের জন্য তা ব্যাপকভাবে করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ফুড প্রসেসিং (সেপ্টেম্বর ১৯৯১) বলে: “মিশ্রণে যদি ১%-এর কম (তৈরী মাংসের প্যাটিসে) জলীয় বীফ প্লাজমা নিয়ে খাদ্য প্রস্তুতকারকদের কোন সমস্যা থাকে, তাহলে তারা ঘন দুগ্ধ প্রোটিন মিশ্রণে বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করে যা ইহুদি বিধিসম্মত খাদ্য কোশাররূপে সম্মতি পেতে পারে।”
জোর দেওয়া প্রয়োজন যে বহু দেশের আইন, প্রথা অথবা স্বাদের জন্য সাধারণত পশু কাটলে তার রক্ত বার করে দেওয়া হয় এবং সেই রক্ত অন্য কোন খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয় না। স্থানীয় পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হয়েছে বা সাম্প্রতিক বৃহৎ পরিবর্তন ঘটেছে বলে চিন্তা করার বাস্তবিক যদি কোন কারণ না থাকে তাহলে খ্রীষ্টীয়দের সন্দেহ বা গুজবে বিচলিত হওয়া এড়াতে হবে। কিন্তু যখন এ বিষয় নিশ্চিত হই বা তীব্র সম্ভাবনা থাকে যে রক্ত ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে—খাদ্যতে অথবা চিকিৎসাতে—তখন রক্ত থেকে দূরে থাকতে ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করতে আমাদের দৃঢ় নিশ্চিত হওয়া দরকার। (w92 10⁄15)