যিহোবার আশীর্বাদ ধনবান করে
“সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”—হিতোপদেশ ১০:২২.
১-৩. যদিও বা অনেকে বস্তুসকলের প্রতি চিন্তিত কিন্তু পার্থিব ধনসম্পদ সম্বন্ধে কোন্ বিষয় সকলকে উপলদ্ধি করতে হবে?
কিছু লোক অর্থ সম্বন্ধে—অথবা তাদের এর অভাব সম্বন্ধে কথা বলা কখনও বন্ধ করতে পারে না। দুঃখের বিষয় যে সাম্প্রতিক কিছু বছরে তাদের এই সম্পর্কে অনেক কিছু আলোচনার ছিল। এমনকি সমৃদ্ধিশালী পশ্চিমেও ১৯৯২ সালে বাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে এবং কার্যনির্বাহকেরা ও তার সাথে নিম্নপদস্থ কর্মচারীরাও চাকরী হারিয়েছে। অনেকে ভাবে যে তারা আর কখনও স্থায়ী সমৃদ্ধির সময় দেখবে কি না।
২ আমাদের পার্থিব উন্নতির প্রতি চিন্তিত হওয়া কি ভুল? না, কিছু দূর পর্যন্ত তা কেবলই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে, সম্পদ সম্পর্কে আমাদের মূল সত্যটিকে উপলব্ধি করতে হবে। পরিশেষে, সমস্ত পার্থিব বস্তু আসে স্রষ্টার কাছ থেকে। তিনি হলেন “সদাপ্রভু ঈশ্বর, . . . যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিঃশ্বাস দেন, ও তথাকার সমস্ত জঙ্গমকে জীবাত্মা দেন।”—যিশাইয় ৪২:৫.
৩ যদিও বা যিহোবা পূর্বনির্বাচন করেন না যে কে ধনী ও কে দরিদ্র হবে, কিন্তু “ভূতল ও তদুৎপন্ন”-এর প্রতি আমাদের যে কোন অংশ থাকুক না কেন আমরা তা যেভাবে ব্যবহার করছি তার জন্য আমাদের সকলকে জবাবদায়ী হতে হবে। অপরের উপর প্রভুত্ব করার জন্য যদি আমরা সম্পদকে ব্যবহার করি তাহলে যিহোবার কাছে আমাদের উত্তরদায়ী হতে হবে। আর যে কেউ যিহোবার বদলে ধনের দাসত্ব করলে সে নিজেকে এইরূপ অবস্থায় পাবে “যে আপন ধনে নির্ভর করে, সে পতিত হয়।” (হিতোপদেশ ১১:২৮; মথি ৬:২৪; ১ তীমথিয় ৬:৯) যিহোবার প্রতি বাধ্যতামূলক হৃদয় ব্যতীত যে পার্থিব উন্নতি তা অবশেষে মূল্যহীন হয়ে যায়।—উপদেশক ২:৩-১১, ১৮, ১৯; লূক ১৬:৯.
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি
৪. পার্থিব বস্তুর প্রাচুর্যতার থেকে কেন আত্মিক উন্নতি আরও ভাল?
৪ পার্থিব উন্নতির সাথে সাথে বাইবেল আত্মিক উন্নতির বিষয় বলে। এটি স্পষ্টতই অধিক উত্তম প্রকৃতির। (মথি ৬:১৯-২১) আত্মিক উন্নতি যিহোবার সঙ্গে তৃপ্তিদায়ক সম্পর্ক প্রদান করে যা চিরস্থায়ী থাকে। (উপদেশক ৭:১২) তাছাড়া, আত্মিকরূপে ধনী ঈশ্বরের দাসেরা সামগ্রিকভাবে পার্থিব বস্তুসকল থেকে আশীর্বাদচ্যুত হয় না। নতুন জগতে আত্মিক সম্পদের সঙ্গে পার্থিব উন্নতি সংযুক্ত থাকবে। বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা এক পার্থিব সম্পদের সুরক্ষা উপভোগ করবেন যা তিক্ত প্রতিযোগিতা অথবা স্বাস্থ্য ও সুখ ত্যাগ করার দ্বারা লাভ করা যায় না, সাধারণত যা বর্তমানে হয়ে থাকে। (গীতসংহিতা ৭২:১৬; হিতোপদেশ ১০:২৮; যিশাইয় ২৫:৬-৮) তারা প্রতিটি উপায়ে অভিজ্ঞতা করবে “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”—হিতোপদেশ ১০:২২.
৫. পার্থিব বস্তু সম্বন্ধে যীশু কী প্রতিজ্ঞা করেন?
৫ এমনকি বর্তমানে যারা আত্মিক বিষয়কে মূল্য দিয়ে থাকে তারা, যতদূর পার্থিব বস্তু জড়িত আছে সে সম্বন্ধে কিছুটা পরিমাণে শান্তিপূর্ণ অবস্থা অনুভব করে। সত্য যে তাদের খরচাপত্র ভরতে ও পরিবারকে ভরণপোষণ করতে কাজ করতে হয়। এমনকি বাজারে মন্দা দেখা দিলে অনেকে চাকরিও হারায়। কিন্তু সেই প্রকৃতির চিন্তার জন্য তারা বিচলিত হয়ে পড়ে না। পরিবর্তে তারা যীশুর প্রতিজ্ঞাতে বিশ্বাস রাখে যখন তিনি বলেন: “ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ . . . তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে।”—মথি ৬:৩১-৩৩.
বর্তমানে আত্মিক সম্পদ
৬, ৭. (ক) ঈশ্বরের লোকদের আত্মিক উন্নতিলাভের কিছু দিকগুলি বর্ণনা করুন। (খ) বর্তমানে কোন্ ভাববাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে, এবং তা কী প্রশ্ন উত্থাপন করে?
৬ যেহেতু যিহোবার লোকেরা তাদের জীবনে রাজ্যকে প্রথম স্থান দিতে বেছে নিয়েছে তাই তারা কতই না আশীর্বাদপ্রাপ্ত! শিষ্যকরণের কাজে তারা প্রচুর সাফল্যলাভ উপভোগ করেছে। (যিশাইয় ৬০:২২) তারা যিহোবার দ্বারা শিক্ষাপ্রাপ্ত, “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” প্রদত্ত উত্তম আত্মিক বিষয়ের অবিরাম ধারা উপভোগ করছে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; যিশাইয় ৫৪:১৩) আরও, যিহোবার আত্মা তাদের উপরে আছে যা এক অপূর্ব আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসঙ্ঘ গড়ে তুলেছে।—গীতসংহিতা ১৩৩:১; মার্ক ১০:২৯, ৩০.
৭ এটি প্রকৃতই আত্মিক উন্নতিলাভ যা অর্থ কখনও কিনতে পারবে না। তা হল যিহোবার প্রতিজ্ঞার লক্ষণীয় পরিপূর্ণতা: “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভান্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে পরীক্ষা কর, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।” (মালাখি ৩:১০) এই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা আমরা বর্তমানে দেখেছি। যিহোবা যিনি সমস্ত ধনসম্পদের উৎস, তিনি কেন তাঁর দাসদের দশমাংশ বা টাইদ্ আনতে বলছেন? টাইদ্ থেকে কারা উপকৃত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে, যিহোবা সা.শ.পূ পঞ্চম শতাব্দীতে মালাখিকে এই কথাগুলি কেন বলেছিলেন তা বিবেচনা করুন।
দশমাংশ এবং উৎসর্গ
৮. নিয়ম চুক্তি অনুসারে, ইস্রায়েলের পার্থিব শ্রীবৃদ্ধি কিসের প্রতি নির্ভর করত?
৮ মালাখির সময়ে ঈশ্বরের লোকেরা উন্নতিলাভ করছিল না। কেন করছিল না? উৎসর্গ ও দশমাংশ কিছুটা এর জন্য দায়ী ছিল। সেই সময়ে ইস্রায়েল মোশির নিয়ম চুক্তির অধীনে ছিল। যিহোবা চুক্তি করার সময় প্রতিজ্ঞা করেন যে যদি ইস্রায়েল তাদের অংশটি পালন করে তাহলে তিনি তাদের আত্মিকরূপে ও পার্থিবরূপে আশীর্বাদ করবেন। তাই ইস্রায়েলের সমৃদ্ধি নির্ভর করছিল তাদের বিশ্বস্ততার উপরে।—দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১-১৯.
৯. প্রাচীন ইস্রায়েলের কালে কেন যিহোবা চেয়েছিলেন যে তারা যেন দশমাংশ ও উপহার অর্পণ করে?
৯ নিয়মের অধীনে ইস্রায়েলের কর্তব্য ছিল মন্দিরে নৈবেদ্য আনা ও দশমাংশ দান করা। কিছু নৈবেদ্য যিহোবার বেদীতে সম্পূর্ণ দগ্ধ করা হত আবার অন্যগুলির, বিশেষ অংশটি যিহোবাকে অর্পণ করে, বাকি পুরোহিত ও যে নৈবেদ্য অর্পণ করছে তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হত। (লেবীয় পুস্তক ১:৩-৯; ৭:১-১৫) দশমাংশ সম্বন্ধে মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেন: “ভূমির শস্য কিম্বা বৃক্ষের ফল হউক, ভূমির উৎপন্ন সমস্ত দ্রব্যের দশমাংশ সদাপ্রভুর; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র।” (লেবীয় পুস্তক ২৭:৩০) আবাসের ও পরবর্তীকালে মন্দিরের লেবীয়কর্মীদের এই দশমাংশ দেওয়া হত। আবার অযাজকীয় লেবীয়গণ তাদের প্রাপ্ত থেকে দশমাংশ হারোণ বংশীয় পুরোহিতবর্গদের দিত। (গণনা পুস্তক ১৮:২১-২৯) কেন যিহোবা চেয়েছিলেন যে ইস্রায়েলীয়রা দশমাংশ দান করুক? প্রথমত, তারা যাতে বাস্তবে যিহোবার মঙ্গলভাবের প্রতি উপলব্ধি প্রদর্শন করতে পারে। এবং দ্বিতীয়ত, তারা যাতে দান করতে পারে লেবীয়দের ভরণপোষণের জন্য যাতে লেবীয়রা তাদের কর্তব্য পালনে নিমগ্ন থাকতে পারে, যার মধ্যে জড়িত ছিল নিয়ম বিষয়ক শিক্ষাদান। (২ বংশাবলি ১৭:৭-৯) এইরূপে শুদ্ধ উপাসনাকে সমর্থন করা হয় এবং প্রত্যেকেই উপকার লাভ করে।
১০. ইস্রায়েল দশমাংশ ও উপহার আনতে অক্ষম হলে কী ঘটেছিল?
১০ দশমাংশ ও নৈবেদ্য যদিও বা পরে লেবীয়রা ব্যবহার করত, কিন্তু তা আসলে যিহোবাকে উপহার হিসাবে অর্পণ করা হত, তাই সেটি তাঁর যোগ্য এবং উত্তম মানের হওয়া উচিৎ ছিল। (লেবীয় পুস্তক ২২:২১-২৫) যখন ইস্রায়েলীয়রা দশমাংশ আনতে অক্ষম হয় বা নিম্ন মানের নৈবেদ্য আনে, তখন কি হয়? যদিও নিয়মে কোন শাস্তির কথা বলা হয়নি কিন্তু তার ফলভোগ ছিল। যিহোবা তাঁর আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত রাখেন, এবং লেবীয়গণ বস্তুসাহায্য না পাওয়াতে নিজেদের ভরণপোষণ করতে মন্দিরের কাজ ছেড়ে দেয়। ফলে সমস্ত ইস্রায়েল কষ্ট পায়।
“তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর”
১১, ১২. (ক) ইস্রায়েলের নিয়ম রক্ষা করতে অবহেলা করার ফল কী হয়েছিল? (খ) যিহোবা ইস্রায়েলকে কী কার্যভার দিয়েছিলেন যখন তিনি তাদের বাবিলে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন?
১১ ইস্রায়েলের ইতিহাসে, নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে কিছুজন উদাহরণ স্থাপন করেছিল এমনকি দশমাংশ দান করা সম্বন্ধেও। (২ বংশাবলি ৩১:২-১৬) সাধারণভাবে যদিও বা জাতিটি ছিল অবহেলাপূর্ণ। বারে বারে তারা যিহোবার সাথে চুক্তির লঙ্ঘন করেছিল, ও অবশেষে যিহোবা তাদের সা.শ.পূ ৬০৭ সালে পরাজিত হয়ে বাবিলনে নির্বাসিত হতে দেন।—২ বংশাবলি ৩৬:১৫-২১.
১২ সেটি ছিল এক কঠিন শাসন, কিন্তু ৭০ বছর পর যিহোবা তাঁর লোকদের স্বদেশে পুনঃস্থাপন করেন। প্রত্যাবর্তনের পর যিশাইয় পুস্তকের বহু পরমদেশীয় ভাববাণী প্রাথমিক পরিপূর্ণতা লাভ করে। (যিশাইয় ৩৫:১, ২; ৫২:১-৯; ৬৫:১৭-১৯) কিন্তু, পার্থিব পরমদেশ গঠন করার মুখ্য উদ্দেশ্যে যিহোবা তাঁর লোকদের ফিরিয়ে আনেন তা নয়, বরং মন্দির পুনর্নির্মান ও সত্য উপাসনা পুনঃস্থাপন করার জন্য। (ইষ্রা ১:২, ৩) যদি ইস্রায়েল যিহোবার বাধ্য হত তাহলে তারা পার্থিব উপকারগুলিও পেত এবং যিহোবার আশীর্বাদ তাদের পার্থিব ও আত্মিকরূপে ধনবান করত। সেইভাবে সা.শ.পূ ৫৩৭ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার পরই যিহূদীরা যিরূশালেমে একটি বেদী নির্মাণ করে এবং মন্দিরের কাজ আরম্ভ করে দেয়। কিন্তু তারা কঠোর বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং কাজ নিবৃত্ত হয়। (ইষ্রা ৪:১-৪, ২৩) ফলে, ইস্রায়েল যিহোবার আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারে না।
১৩, ১৪. (ক) ইস্রায়েল মন্দির পুনর্নির্মান করতে অসমর্থ হলে কী হয়? (খ) অবশেষে কিভাবে মন্দির পুনর্নির্মান হয়, কিন্তু ইস্রায়েলের পক্ষে আরও কী অক্ষমতা দেখা যায়?
১৩ সা.শ.পূ ৫৩৭ সালে, ইস্রায়েলকে মন্দির নির্মাণ কাজ পুনরারম্ভ করতে উদ্দীপনা প্রদান করতে যিহোবা হগয় ও সখরিয় ভাববাদীদের উত্থান করেন। হগয় প্রদর্শন করেন যে তখন জাতি বস্তুর অভাব ভোগ করছিল সেই কারণে যেহেতু তারা যিহোবার গৃহের জন্য উৎসাহের অভাব বোধ করত। তিনি বলেন: “এই জন্য এখন বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। তোমরা অনেক বীজ বপন করিয়াও অল্প সঞ্চয় করিতেছ, আহার করিয়াও তৃপ্ত হইতেছ না, পান করিয়াও আপ্যায়িত হইতেছ না, পরিচ্ছদ পরিয়াও উষ্ণ হইতেছ না, এবং বেতনজীবী লোক ছেঁড়া থলিতে বেতন রাখে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। পর্ব্বতে উঠিয়া গিয়া কাষ্ঠ আন এই গৃহ নির্মাণ কর, তাহাতে আমি এই গৃহের প্রতি প্রসন্ন হইব, এবং গৌরবান্বিত হইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন।—হগয় ১:৫-৮.
১৪ হগয় এবং সখরিয়র কাছ থেকে উদ্দীপনা পেয়ে ইস্রায়েলীয়রা তাদের পথ আলোচনা করে, এবং মন্দির নির্মিত হয়। প্রায় ৬০ বছর পর নহিমিয় যিরূশালেম পরিদর্শন করার সময় দেখেন যে ইস্রায়েলীয়েরা যিহোবার নিয়মের প্রতি আবার অবহেলাপূর্ণ হয়েছে। তিনি সেটি সংশোধন করেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার পরিদর্শন করার সময় তিনি দেখেন যে পরিস্থিতির আবার অবনতি ঘটেছে। তিনি বিবরণ দেন: “আমি জানিতে পাইলাম, লেবীয়দের অংশ তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই, তজ্জন্য কর্ম্মকারী লেবীয়েরা ও গায়কেরা পলাইয়া প্রত্যেকে আপন আপন ভূমিতে গিয়াছে।” (নহিমিয় ১৩:১০) সমস্যার সমাধান করা হয়, এবং “সমস্ত যিহূদা শস্যের, দ্রাক্ষারসের ও তৈলের দশমাংশ ভান্ডারে আনিতে লাগিল।”—নহিমিয় ১৩:১২.
যিহোবাকে বঞ্চনা
১৫, ১৬. কোন্ অসমর্থতার জন্য যিহোবা মালাখির মাধ্যমে ইস্রায়েলকে সংশোধন করেন?
১৫ মনে হয় মালাখির ভাববাণীটি সাধারণত এই সময়েই হয়েছিল, এবং ভাববাদী ইস্রায়েলের অবিশ্বস্ততা সম্বন্ধে আরও বলেন। ইস্রায়েলের প্রতি যিহোবার বাক্যগুলি তিনি লিপিবদ্ধ করেন: “আমি যদি পিতা হই, তবে আমার সমাদর কোথায়? আর আমি যদি প্রভু হই, তবে আমার প্রতি ভয় কোথায়? হে যাজকগণ, তোমরা যে আমার নাম অবজ্ঞা করিতেছ, তোমাদিগকেই বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন।” কি অন্যায় ছিল? যিহোবা ব্যাখ্যা দেন: “যখন তোমরা যজ্ঞের নিমিত্ত অন্ধ পশু উৎসর্গ কর, [তোমরা বল] সেটী কি মন্দ নয়? এবং যখন খঞ্জ ও রুগ্ন পশু উৎসর্গ কর, [তোমরা বল] সেটী কি মন্দ নয়?”—মালাখি ১:৬-৮, NW.
১৬ এইরূপ চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে, মালাখি প্রদর্শন করেন যে ইস্রায়েলীয়েরা নৈবেদ্য অর্পণ করার সময়, সেইগুলি নিম্ন মানের হওয়াতে তা অত্যধিক মাত্রায় অসম্মান এনেছিল। মালাখি আরও লেখেন: “তোমাদের পিতৃপুরুষের সময়াবধি তোমরা আমার বিধি-কলাপ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, সে সকল পালন কর নাই। আমার কাছে ফিরিয়া আইস, আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” ইস্রায়েলীয়দের বিশেষকরে কি করতে হবে সে সম্বন্ধে তারা ভাবিত হয়, তাই তারা বলে: “আমরা কিসে ফিরিব?” যিহোবা উত্তর দেন: “মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক।” ইস্রায়েল কিরূপে যিহোবাকে ঠকাতে পারে, যিনি সমস্ত সম্পদের উৎস? যিহোবা উত্তর দেন: “দশমাংশে ও উপহারে।” (মালাখি ৩:৭, ৮) হ্যাঁ, তারা দশমাংশ ও নৈবেদ্য অর্পণ করতে অক্ষম হওয়ার দ্বারা যিহোবাকে ঠকায়!
১৭. ইস্রায়েলে দশমাংশ ও নৈবেদ্য কী উদ্দেশ্য সাধন করত, দশমাংশ সম্বন্ধে যিহোবা কী প্রতিজ্ঞা করেন?
১৭ এই ঐতিহাসিক পটভূমি ইস্রায়েলে দশমাংশ ও নৈবেদ্যের গুরুত্ব প্রদর্শন করে। সেটি দাতার পক্ষে উপলব্ধি প্রকাশের পরিচয়। সেগুলি পার্থিবরূপে সত্য উপাসনাকে সহায়তা করে। তাই যিহোবা ইস্রায়েলকে উৎসাহ প্রদান করতে থাকেন: “তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভান্ডারে আন।” যদি তারা আনে তাহলে কি হতে পারে তা দেখিয়ে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন: ‘আমি . . . তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করিব।’ (মালাখি ৩:১০) যিহোবার আশীর্ব্বাদ তাদের ধনবান করবে।
“সত্য প্রভু” দ্বারা বিচারিত
১৮. (ক) কার আগমন সম্বন্ধে যিহোবা সাবধান করেন? (খ) মন্দিরে কখন আসার কথা, কে এর সাথে জড়িত ছিল, এবং ইস্রায়েলের জন্য তা কি ফলাফল আনে?
১৮ যিহোবা মালাখির মাধ্যমে সাবধানও করে দেন যে তিনি তাঁর লোকদের বিচার করতে আসবেন। “দেখ, আমি আপন দূতকে প্রেরণ করিব, সে আমার অগ্রে পথ প্রস্তুত করিবে; এবং তোমরা যে প্রভুর অন্বেষণ করিতেছ, তিনি অকস্মাৎ আপন মন্দিরে আসিবেন; নিয়মের সেই দূত, যাঁহাতে তোমাদের প্রীতি, দেখ, তিনি আসিতেছেন, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন।” (মালাখি ৩:১) মন্দিরে কখন সেই প্রতিজ্ঞাত আগমন হয়? মথি ১১:১০ পদে যীশু মালাখির পথ প্রস্তুতকারক দূতের ভাববাণীটি উদ্ধৃত করেন এবং সেটি যোহন বাপ্তাইজকের প্রতি প্রয়োগ করেন। (মালাখি ৪:৫; মথি ১১:১৪) তাই সা.শ. ২৯ সালে বিচারের দিন উপস্থিত হয়! দ্বিতীয় দূত, নিয়মের দূত কে ছিলেন যিনি মন্দিরের “সত্য প্রভু” যিহোবার সঙ্গে থাকবেন? যীশু নিজেই, এবং দুবার তিনি যিরূশালেমের মন্দিরে আসেন ও অসাধু পোদ্দারদের তাড়িয়ে দিয়ে সেটিকে নাটকীয়রূপে পরিষ্কার করেন। (মার্ক ১১:১৫-১৭; যোহন ২:১৪-১৭) এই প্রথম শতাব্দীর বিচারের সময় সম্বন্ধে যিহোবা ভাববাণীমূলকরূপে জিজ্ঞাসা করেন: “তাঁহার আগমনের দিন কে সহ্য করিতে পারিবে; আর তিনি দর্শন দিলে কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (মালাখি ৩:২) বাস্তবে, ইস্রায়েল দাঁড়ায়নি। তাদের পরিদর্শন করা হয়, তারা দোষী প্রমাণিত হয়, ও সা.শ. ৩৩ সালে তাদের যিহোবার মনোনীত জাতি থেকে পরিত্যক্ত করা হয়।—মথি ২৩:৩৭-৩৯.
১৯. প্রথম শতাব্দীতে কিরূপে এক অবশিষ্টাংশ যিহোবার কাছে প্রত্যাবর্তন করে, এবং তারা কী আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়?
১৯ কিন্তু, মালাখি আরও বলেন: “[যিহোবা] রৌপ্য-পরিষ্কারক ও শুচিকারক হইয়া বসিবেন, তিনি লেবির সন্তানদিগকে শুচি করিবেন, এবং স্বর্ণের ও রৌপ্যের ন্যায় তাহাদিগকে বিশুদ্ধ করিবেন; তাহাতে তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধার্ম্মিকতায় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবে।” (মালাখি ৩:৩) এই বাক্যগুলি অনুসারে, প্রথম শতাব্দীতে বেশীরভাগ লোকেরা যিহোবাকে সেবা করে বলে দাবী করলেও তারা বিতাড়িত হয়, কিন্তু কিছু জন পরিষ্কৃত হয়ে গ্রহণযোগ্য নৈবেদ্য অর্পণ করে যিহোবার কাছে ফিরে আসে। কারা? যারা নিয়মের দূত যীশুর প্রতি সাড়া দেয়। সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীতে এই প্রতিবেদনশীলদের মধ্যে ১২০ জন যিরূশালেমে এক উপরের কুঠরীতে একত্রিত হয়। পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে তারা ধার্মিকতায় তাদের উপহার অর্পণ করতে আরম্ভ করল এবং দ্রুত তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হল। শীঘ্রই তারা সমস্ত রোমীয় সাম্রাজ্যে বিস্তৃতি লাভ করল। (প্রেরিত ২:৪১; ৪:৪; ৫:১৪) এইভাবে, এক অবশিষ্টাংশ যিহোবার কাছে প্রত্যাবর্তন করেছিল।—মালাখি ৩:৭.
২০. যখন যিরূশালেম ও মন্দির ধ্বংস হয়, ঈশ্বরের নতুন ইস্রায়েলের কি হয়?
২০ ইস্রায়েলের এই অবশিষ্টাংশ, যার অন্তর্ভুক্ত পরজাতীয়রা বলা যেতে পারে যেন ইস্রায়েলের মূলকান্ডে জোড় কলমরূপে যুক্ত হয়েছে, তৈরী হয় এক নতুন “ঈশ্বরের ইস্রায়েল,” আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয়দের দ্বারা সৃষ্ট এক জাতি। (গালাতীয় ৬:১৬; রোমীয় ১১:১৭) মাংসিক ইস্রায়েলের উপর ৭০ সা.শ.-তে এক “দিন . . . হাপরের ন্যায় জ্বলছে” আসে যখন রোমীয় সেনাবাহিনীর দ্বারা যিরূশালেম ও মন্দির ধ্বংস হয়। (মালাখি ৪:১; লূক ১৯:৪১-৪৪) ঈশ্বরের আত্মিক ইস্রায়েলের কি হয়? যিহোবা তাদের প্রতি মমতা করেন “কোন মনুষ্য যেমন আপন সেবাকারী পুত্ত্রের প্রতি মমতা করে।” (মালাখি ৩:১৭) অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী যীশুর সাবধান বাণী শোনে। (মথি ২৪:১৫, ১৬) তারা রক্ষাপ্রাপ্ত হয় এবং যিহোবার আশীর্বাদ তাদের ক্রমাগত আত্মিকরূপে ধনবান করে।
২১. মালাখি ৩:১ এবং ১০ পদ সম্পর্কে কী প্রশ্নগুলি থেকে যায়?
২১ যিহোবা কতই না মহিমান্বিত হন! কিন্তু বর্তমানে কিভাবে মালাখি ৩:১ পদ পরিপূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়? মালাখি ৩:১০ পদে লিখিত ভান্ডারে সমস্ত দশমাংশ আনতে উৎসাহের প্রতি এক খ্রীষ্টীয় কিভাবে সাড়া দেবে? এইগুলি পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচিত হবে। (w92 12⁄1)
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
▫ পরিশেষে, কে সমস্ত সম্পদের উৎস?
▫ পার্থিব শ্রীবৃদ্ধির থেকে আত্মিক শ্রীবৃদ্ধি আরও ভাল কেন?
▫ ইস্রায়েলে দশমাংশ ও নৈবেদ্য কী উদ্দেশ্য সাধন করত?
▫ কখন “সত্য প্রভু” যিহোবা ইস্রায়েলকে বিচার করতে মন্দিরে আসেন, ও কি ফলাফলের সাথে?
▫ সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে যিহোবা মন্দিরে আসার পর কারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে?
[Pictures on page 11]
নিয়মের দূত, যীশু, যিহোবাকে প্রতিনিধিত্ব করেন, সা.শ. প্রথম শতাব্দীতে বিচার করতে মন্দিরে আসেন