পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
এক খ্রীষ্টান অসুস্থ থাকলে বা যাত্রা করলে যদি স্মরণার্থক সভায় যোগ দিতে না পারে, তাহলে কি সে এক মাস পরে সেটি উদ্যাপন করতে পারে?
প্রাচীন ইস্রায়েলে, নিসান (অথবা আবিব) নামক প্রথম মাসের ১৪তম দিনে বাৎসরিকরূপে নিস্তারপর্ব উদ্যাপিত হত। কিন্তু আমরা এক বিশেষ ব্যবস্থা সম্বন্ধে দেখি গণনাপুস্তক ৯:১০, ১১, (NW) পদে: “ইস্রায়েল সন্তানগণকে বল, তোমাদের মধ্যে কিম্বা তোমাদের ভাবী সন্তানদের মধ্যে যদ্যপি কেহ শব স্পর্শ করিয়া অশুচি হয়, কিম্বা দূরস্থ পথে থাকে, তথাপি সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিবে। দ্বিতীয় মাসে (আইয়ার বা জিইভ্ নামে পরিচিত) চতুর্দ্দশ দিবসের সন্ধ্যাকালে তাহারা তাহা পালন করিবে; তাহারা তাড়ীশূন্য রুটী ও তিক্ত শাকের সহিত ভক্ষণ করিবে।”
লক্ষ্য করুন যে নিস্তারপর্বের জন্য দুটি বিকল্প তারিখ দেওয়া হয়নি যাতে যেকোন ইস্রায়েলীয় বা পরিবার তাদের সুযোগ সুবিধামত তারিখটি বেছে নিতে পারে। দ্বিতীয় মাসে নিস্তারপর্বের খাদ্যের ব্যবস্থাটি সীমিত ছিল। নিসান ১৪ তারিখে যে ইস্রায়েলীয়রা আনুষ্ঠানিকরূপে অশুচি থাকত বা যেখানে সেটি সাধারণত উদ্যাপন করা হত তার থেকে যদি তারা দূরে থাকত তবেই তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা ছিল।
দ্বিতীয় দিনটির ব্যাপকভাবে ব্যবহারের একমাত্র লিপিবদ্ধ ঘটনাটি পাওয়া যায়, যখন বিশ্বস্ত রাজা হিষ্কিয় তাড়ীশূন্য রুটির পর্বের উদ্যাপনকে পুনরায় উজ্জীবিত করেন। কারণ প্রথম মাসের জন্য প্রস্তুত হতে সময় ছিল না (যাজকেরা প্রস্তুত ছিল না এমনকি লোকেরাও একত্রিত হয়নি), তাই সেটি দ্বিতীয় মাসের ১৪তম দিনে উদ্যাপিত হয়।—২ বংশাবলি ২৯:১৭; ৩০:১-৫.
সেইরূপ কোন বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া যিহুদীরা, ঈশ্বর দত্ত দিনেতেই নিস্তারপর্ব পালন করত। (যাত্রাপুস্তক ১২:১৭-২০, ৪১, ৪২; লেবীয়পুস্তক ২৩:৫) যীশু ও তাঁর শিষ্যগণ নিয়ম অনুযায়ী তা উদ্যাপন করেন, এটিকে তারা সাধারণ বিষয় বলে মনে করেননি। লূক বলেন: “পরে তাড়ীশূন্য রুটীর দিন, অর্থাৎ যে দিন নিস্তারপর্ব্বের মেষশাবক বলিদান করিতে হইত, সেই দিন আসিল। তখন [যীশু] পিতর ও যোহনকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, তোমরা গিয়া আমাদের জন্য নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত কর।”—লূক ২২:৭, ৮.
সেই উপলক্ষে যীশু বাৎসরিক উদ্যাপন প্রবর্তন করেন যা খ্রীষ্টানেরা প্রভুর সান্ধ্যভোজরূপে জানে। এতে উপস্থিত থাকার মূল্য সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদের আর বেশী জোর দিয়ে বলতে হবে না। যিহোবার সাক্ষীগণের জন্য এটি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। যীশুর বাক্য প্রদর্শন করে, কেন; তিনি বলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯) তাই, প্রত্যেক যিহোবার সাক্ষীদের অনেক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করা উচিৎ যেন সেই উদ্যাপনের সময় অন্য কোন কিছু বিষয়ে তারা ব্যস্ত না থাকেন। প্রভুর সান্ধ্যভোজ মঙ্গলবার, এপ্রিল ৬, ১৯৯৩ সালে স্থানীয়ভাবে সূর্যাস্ত হওয়ার পর উদ্যাপিত হবে।
কখনও হঠাৎ কোন অসুবিধাজনক পরিস্থিতি এসে গেলে, যেমন অসুস্থতা বা যাত্রা করতে হলে, এক খ্রীষ্টান পরিকল্পনা করেও উপস্থিত থাকতে পারে না। সেই পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে?
উদ্যাপনের সময়, তাড়ীশূন্য রুটি ও লাল দ্রাক্ষারস দেওয়া হয় এবং যারা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত ও স্বর্গে জীবনের জন্য মনোনীত তারাই তা গ্রহণ করেন। (মথি ২৬:২৬-২৯; লূক ২২:২৮-৩০) যারা প্রতি বছর সেটি গ্রহণ করে থাকেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি ঘরে বা হাসপাতালে অসুস্থ থাকেন, তাহলে স্থানীয় মণ্ডলীর প্রাচীনেরা তাদের মধ্যে একজনকে অসুস্থ ব্যক্তির কাছে রুটি ও দ্রাক্ষারস নিয়ে যেতে, তার সাথে সেই বিষয়ের উপরে উপযুক্ত বাইবেল শাস্ত্র আলোচনা করার পর তাকে প্রতীকটি দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করবেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টান যদি তার নিজের মণ্ডলীর থেকে দূরে থাকেন, তাহলে সেই দিনে তিনি যেখানে থাকবেন সেখানকার মণ্ডলীতে যাওয়ার জন্য তার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
এই সমস্ত বিবেচনা করে, একমাত্র খুবই অসাধারণ পরিস্থিতিতে পড়লে এক অভিষিক্ত খ্রীষ্টানকে, গণনাপুস্তক ৯:১০, ১১ পদের আজ্ঞা ও ২ বংশাবলি ৩০:১-৩, ১৫ পদের উদাহরণ অনুযায়ী প্রভুর সান্ধ্যভোজ ৩০ দিন পরে (এক চান্দ্রিক মাস) উদ্যাপন করতে হতে পারে।
যারা যীশুর “অপর মেষ” শ্রেণী, যাদের পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা আছে, তাদের রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করার আজ্ঞা দেওয়া হয়নি। (যোহন ১০:১৬) বাৎসরিক উদ্যাপনে উপস্থিত থাকা হল গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তারা প্রতীক গ্রহণ করেন না। যদি এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ থাকেন বা যাত্রা করছেন বলে সেই সন্ধ্যাবেলা কোন মণ্ডলীতেই আসতে পারেননি তাহলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে উপযুক্ত শাস্ত্রপদগুলি পড়তে (এই উদ্যাপনটি প্রবর্তন করার যীশুর বিবরণটিসহ) ও জগদ্ব্যাপী এই উপলক্ষের প্রতি যিহোবার আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে এক মাস পরে কোন অতিরিক্ত সভা বা বিশেষ বাইবেল আলোচনার ব্যবস্থা করার কোন প্রয়োজন নেই। (w93 2/1)