বর্তমান মানবসমাজ এবং খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিরা
“আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।”—মথি ২৪:৯.
১. খ্রীষ্টধর্মের একটি স্পষ্ট চিহ্ন কী হওয়া উচিৎ ছিল?
জগৎ থেকে পৃথক থাকার জন্য প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যেত। স্বর্গীয় পিতা, যিহোবার কাছে তাঁর প্রার্থনায়, খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৪) যখন পন্তীয় পীলাতের সামনে যীশুকে আনা হয়, তিনি বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) প্রাচীন খ্রীষ্টতত্ত্ব জগৎ থেকে পৃথক ছিল যা খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্র এবং ঐতিহাসিকদের দ্বারা সমর্থিত হয়েছে।
২. (ক) সময় অতীত হওয়ার সাথে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের এবং জগতের মধ্যে সম্পর্কে কোন পরিবর্তন হওয়া কি উচিৎ ছিল? (খ) জাতিগণের ধর্মান্তকরণের দ্বারা কি যীশুর রাজত্ব আসার ছিল?
২ যীশু কি পরে প্রকাশ করেছিলেন যে জগতের সাথে তাঁর অনুগামীদের সম্পর্কে এক পরিবর্তন হবে এবং জগৎ খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হলে তাঁর রাজ্য আসবে? না। যীশুর মৃত্যুর পরে তাঁর অনুগামীরা অনুপ্রাণিত হয়ে এমন কিছু লিখেছেন, তার কোন আভাষও নেই। (যাকোব ৪:৪ [সা.শ.৬২র কিছু পূর্বেই লেখা হয়]; ১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯ [প্রায় ৯৮ সা. শ. তে লেখা হয়েছে]) পরিবর্তে, বাইবেল যীশুর “উপস্থিতি” এবং রাজ্যের ক্ষমতায় পরবর্তী “আগমন”-কে “যুগান্ত,” যা এর “শেষ” অথবা ধ্বংসে পরিণত হবে তার সাথে সংযুক্ত করে। (মথি ২৪:৩, ১৪, ২৯, ৩০; দানিয়েল ২:৪৪; ৭:১৩, ১৪) যীশু তাঁর পা‘রৌ‘সি‘য়া অথবা উপস্থিতির চিহ্ন হিসাবে তাঁর সত্য অনুগামীদের সম্বন্ধে বলেছিলেন: “সেই সময়ে লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।”—মথি ২৪:৯.
বর্তমান দিনে সত্য খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিরা
৩, ৪. (ক) একটি ক্যাথলিক বিশ্বকোষ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কিভাবে বর্ণনা করে? (খ) কিভাবে একটি বিশ্বকোষ যিহোবার সাক্ষীদের এবং প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সমরূপে বর্ণনা করে?
৩ আজ কোন্ ধর্মীয় দলটি তার সদস্যদের ঘৃণা ও তাড়না করা সমেত জগৎ থেকে পৃথক থাকা এবং খ্রীষ্টীয় রীতিনীতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকার সুনাম কিনে নিয়েছে? প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের ঐতিহাসিক বর্ণনা জগদ্ব্যাপী কোন্ খ্রীষ্টীয় সংগঠনের অনুরূপ? এর সম্বন্ধে, নিউ ক্যাথলিক্ এন্সাইক্লোপিডিয়া কী বলে তা বিবেচনা করুন: “প্রাচীন খ্রীষ্টীয় সম্প্রদায়কে, যদিও প্রথমে বিবেচনা করা হত যিহূদী পরিবেশের মধ্যেই আর একটি গোষ্ঠীরূপে, তারা তাদের ঐশিক শিক্ষায় অদ্বিতীয় প্রমাণিত হয়েছিল, আরও বিশেষভাবে সদস্যদের মধ্যে উৎসাহের ব্যাপারে, যারা ‘সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত’ খ্রীষ্টের সাক্ষী হিসাবে সেবা করতেন।’ (প্রেরিত ১.৮).”—খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৯৪.
৪ এই অভিব্যক্তিগুলি লক্ষ্য করুন “বিবেচনা করা হত . . . আর একটি গোষ্ঠী,” “তাদের . . . শিক্ষায় অদ্বিতীয়,” “উৎসাহের ব্যাপারে . . . সাক্ষী হিসাবে।” আর এখন একই এনসাইক্লোপিডিয়া যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে কী বর্ণনা দেয় তা লক্ষ্য করুন: “একটি দল . . . সাক্ষীরা খুবই গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই জগতের শেষ আসবে। এই প্রগাঢ় বিশ্বাস তাদের অক্লান্ত উৎসাহের পিছনে পরিচালক শক্তি হিসাবে কাজ করছে। . . . এই দলটির প্রত্যেকটি সদস্যের প্রধান বাধ্যতা হচ্ছে যিহোবার আসন্ন রাজ্যের ঘোষণা করে তাঁর প্রতি সাক্ষ্য দেওয়া। . . .তাদের বিশ্বাস ও আচার-আচরণের নিয়মের জন্য তারা বাইবেলকেই একমাত্র উৎস হিসাবে গণ্য করে . . . প্রকৃত সাক্ষী হতে গেলে কোন না কোন উপায়ে কার্যকারীভাবে প্রচার করতেই হবে।”—খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৮৬৪-৫.
৫. (ক) যিহোবার সাক্ষীদের শিক্ষা কোন্ কোন্ বিষয়ে অদ্বিতীয়? (খ) উদাহরণ দিয়ে দেখান যে যিহোবার সাক্ষীদের বিশ্বাসগুলি শাস্ত্রের সাথে সঙ্গতি রাখে।
৫ কোন্ দিক দিয়ে যিহোবার সাক্ষীদের শিক্ষা অদ্বিতীয়? তার কিছু কিছু নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া উল্লেখ করেছে: “তারা [যিহোবার সাক্ষীরা] ত্রিত্বকে পৌত্তলিক মূর্তিপূজা হিসাবে বাতিল করে . . .তারা যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে সর্বোত্তম বলে যীশুকে বিবেচনা করে, যিনি ‘একজন ঈশ্বর’ (যোহন ১:১ তারা এইভাবেই অনুবাদ করে), ও একমাত্র শুধু যিহোবারই অধীনে আর কারও নয়। . . . যীশু মানুষ হিসাবে মারা যান এবং অমর আত্মিক পুত্ররূপে উত্থাপিত হন। পৃথিবীতে মানবজাতি যেন অনন্তকাল বাস করতে অধিকার পায় তার জন্য তিনি যন্ত্রণাভোগ ও মৃত্যুবরণ করে তার মূল্য দিয়েছিলেন। প্রকৃতই, সত্য সাক্ষীদের ‘বিস্তর জনতা’ (Ap 7.9) পৃথিবীতে পরমদেশের আশা রাখেন; শুধুমাত্র বিশ্বস্ত ১৪৪,০০০ জন (Ap 7.4; 14.1, 4) খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গীয় মহিমা উপভোগ করবেন। দুষ্টেরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হবে। . . . বাপ্তিস্ম—যা জলে নিমজ্জিত হওয়া দ্বারা সাক্ষীরা পালন করেন . . . [হচ্ছে] তাদের যিহোবার প্রতি পরিচর্যায় উৎসর্গীকরণের বাহ্যিক চিহ্ন। . . . রক্ত গ্রহণ অস্বীকার করার দরুণ যিহোবার সাক্ষীরা জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে . . . তাদের দাম্পত্য জীবন ও যৌন সংক্রান্ত নৈতিকমান বেশ কঠোর।” যিহোবার সাক্ষীরা এইসব দিক দিয়ে অদ্বিতীয় হতে পারেন, কিন্তু তাদের এই বিষয়গুলির মান দৃঢ়ভাবে বাইবেল ভিত্তিক।—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; মথি ৩:১৬; ৬:১০; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; রোমীয় ৬:২৩; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ৮:৬; প্রকাশিত বাক্য ১:৫.
৬. যিহোবার সাক্ষীদের কী পরিবর্তন হয়নি? কেন?
৬ এই রোমান ক্যাথলিক গ্রন্থটি আরও বলে যে ১৯৬৫ সালে (মনে হয় ওই বছরেই প্রবন্ধটি লেখা হয়েছিল) “সাক্ষীরা যদিও তখনও সমাজেই বাস করে কিন্তু সেই সমাজের বলে তারা নিজেদের বিবেচনা করত না।” সেই লেখক মনে করেছিলেন যে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সাক্ষীরা আরও যত সংখ্যায় বাড়বে এবং “একটি দলের বদলে গির্জার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি অর্জন করবে,” তারা এই জগতের অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু এইরকম হয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই। আজ, ১৯৬৫ সালের থেকে চারগুণ অধিক সাক্ষী আছেন, কিন্তু যিহোবার সাক্ষীরা জগতের তুলনায় তাদের উন্নত মান নিয়মিতরূপে বজায় রেখে চলেছেন। “তাহারা জগতের নয়,” ঠিক যেমন যীশুও “জগতের” ছিলেন না।—যোহন ১৭:১৬.
পৃথক কিন্তু বিরোধী নয়
৭, ৮. প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের জন্য যা সত্য ছিল, তা কি আজ যিহোবার সাক্ষীদের জন্যও সত্য?
৭ দ্বিতীয়-শতাব্দীর কৈফিয়ত-দাতা জাস্টিন্ মার্টারের প্রারম্ভিক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের সমর্থনকে উল্লেখ করে, রবার্ট এম. গ্রান্ট তার পুস্তক আর্লি খ্রীশ্চিয়ানিটি অ্যাণ্ড সোসাইটিতে লিখেছেন: “যদি খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিরা বিপ্লবপন্থী হত তাহলে তাদের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখত। . . . শান্তি ও উপযুক্ত শাসন বজায় রাখার জন্য সম্রাটের তারা উত্তম মিত্র।” সেইরকমই, আজ জগদ্ব্যাপী যিহোবার সাক্ষীরা শান্তি-প্রিয় এবং সুনিয়ন্ত্রিত নাগরিক। যে কোন রকমেরই সরকার হোক না কেন, তারা জানে যে যিহোবার সাক্ষীদের কাছ থেকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
৮ উত্তর আমেরিকার এক সম্পাদক লিখেছেন: “যিহোবার সাক্ষীদের দিক থেকে কোন রাজনৈতিক সরকারের কোন রকম বিপদের আশঙ্কা হতে পারে তা বিশ্বাস করতে গোঁড়া এবং ভ্রান্তিজনক কল্পনাশক্তির দরকার; একটি ধর্মীয় দল যতটা অ-ক্ষতিকারক ও শান্তি-প্রিয় হতে পারে তারা ঠিক তাই।” জঁ-পিয়ের কাটলেইন্ তার বই লব্জেকসিয়ন্ ডে কন্সিয়ানস্ এ লিখেছেন: “সাক্ষীরা সম্পূর্ণরূপে কর্তৃপক্ষের বশীভূত থাকেন এবং সাধারণত আইন মেনে চলেন; তারা কর দেন এবং কোন সরকার সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলার, পরিবর্তনের বা ধ্বংসের চেষ্টা করেন না, কারণ জগতের ব্যাপারে তারা নিজেদের জড়ায় না।” কাটলেইন্ আরও বলেন, যদি সরকার তাদের জীবন অথবা সময়ের জন্য দাবি করে, যা তারা পূর্ণরূপে ঈশ্বরকে উৎসর্গ করেছেন, তাহলে তারা মান্য করতে অস্বীকার করে। এই ব্যাপারে তারা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের অনুরূপ।—মার্ক ১২:১৭; প্রেরিত ৫:২৯.
শাসকবর্গ দ্বারা ভুল বোঝা
৯. জগৎ থেকে পৃথক থাকা সম্বন্ধে, প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের এবং আধুনিক-দিনের ক্যাথলিকদের মধ্যে কিসের একটি পার্থক্য আছে?
৯ বেশির ভাগ রোমীয় সম্রাটেরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের ভুল বুঝে তাড়না করেছিল। তা কেন দেখাতে, দা এপিস্ল্ টু ডিঅগনেটুস্, কেউ কেউ মনে করে শা.স. দ্বিতীয় শতাব্দীর সময়কালীন, ঘোষণা করে: “খ্রীষ্টানেরা জগতেই বাস করে কিন্তু তারা এই জগতের কোন অংশ নয়।” অপর দিকে, দা সেকেণ্ড ভ্যাটিক্যান্ কাউন্সিল, তার চার্চের মতবাদের সংবিধানে, বলেছে যে ক্যাথলিকদের উচিৎ “পার্থিব কাজে অংশ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের খোঁজ করা” এবং “জগতের ভিতরে থেকেই জগতের পবিত্রীকরণের জন্য কাজ করা।”
১০. (ক) শাসকবর্গেরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতেন? (খ) যিহোবার সাক্ষীদের প্রায়ই কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা হয় এবং তাদের প্রতিক্রিয়া কী?
১০ ঐতিহাসিক ই. জি. হার্ডি ব্যাখ্যা করেন যে রোমীয় সম্রাটেরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের “একপ্রকার অবজ্ঞেয় উদ্যমী ব্যক্তি” বলে বিবেচনা করতেন। ফরাসী ঐতিহাসিক এটিয়েন্ ত্রকমে “শিক্ষিত গ্রীক এবং রোমান অধিকর্তারা যাকে একটি অতি অদ্ভুত প্রাচ্য দল [খ্রীষ্টানদের] বলতেন, সেই দলটির প্রতি ঘৃণা” সম্বন্ধে বলেছেন। প্লিনি দা ইয়ংগার, বিথিনিয়ার রোমীয় গর্ভনর এবং সম্রাট ট্রাজানের একে অপরের প্রতি চিঠি থেকে জানা যায় যে শাসক শ্রেণী সাধারণত খ্রীষ্টতত্ত্বের প্রকৃত ধরন সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিল। ঠিক একইভাবে আজও, যিহোবার সাক্ষীদের প্রায়ই ভুল বোঝা হয় এমনকি জগতের শাসকবর্গ দ্বারা তারা অবজ্ঞাত হয়। কিন্তু, এটি সাক্ষীদের আশ্চর্য বা আতঙ্কিত করে না।—প্রেরিত ৪:১৩; ১ পিতর ৪:১২, ১৩.
“সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে”
১১. (ক) প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে কী বলা হত এবং যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধেই বা কী বলা হয়? (খ) যিহোবার সাক্ষীরা কেন রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করে না?
১১ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে বলা হত: “এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে।” (প্রেরিত ২৮:২২) শা.স. দ্বিতীয় শতাব্দীতে, পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বী সেলসেস্ দাবি করেছিলেন যে খ্রীষ্টতত্ত্ব কেবলমাত্র নিকৃষ্ট মানব সমাজের ভাল লাগত। সমরূপে যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধেও তাই বলা হয় যে ‘বেশির ভাগ, আমাদের সমাজের বঞ্চিতদের থেকে নেওয়া হয়েছে।” গির্জার ঐতিহাসিক অ্যাগাস্টাস্ নিয়ানডার্ রিপোর্ট করেছিলেন যে খ্রীষ্টানেরা জগতের কাছে মৃতলোকেদের তুল্য এবং জীবনের সমস্ত কাজের জন্য তারা অকেজো; . . . আর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সকলে ওই প্রকার হয়ে গেলে জীবনের কার্যধারা কিরূপ হবে?” যেহেতু যিহোবার সাক্ষীরা রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করেন না, অনেক সময়ে তাদেরও মানব সমাজের জন্য মৃতবৎ বলে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু কিভাবে তারা একই সাথে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারে আবার ঈশ্বরের রাজ্যই মানবজাতির একমাত্র আশার বিষয়ে ঘোষণা করতে পারে? যিহোবার সাক্ষীরা পৌলের কথাগুলি হৃদয়ে গ্রহণ করে: “খ্রীষ্ট যীশুর যোগ্য সৈনিক হইয়া ক্লেশভোগ স্বীকার কর। কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক ব্যাপারে বদ্ধ হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে।”—২ তীমথিয় ২:৩, ৪, রিভাইজড্ স্ট্যানডার্ড ভারশন্, একটি ইকিউমেনিকাল্ সংস্করণ।
১২. পৃথক থাকা সম্বন্ধে কোন্ গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে যিহোবার সাক্ষীরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের সদৃশ?
১২ প্রফেসার কে. এস. লাটুরেট্ তার বই এ হিস্ট্রি অফ্ খ্রীশ্চিয়ানিটিতে লিখেছেন: “গ্রীকো-রোমান জগতের সাথে প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের পার্থক্যের বিষয়ের একটি কারণ ছিল যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে। প্রথম তিন শতাব্দীর কোন খ্রীষ্টীয় গ্রন্থে যা আজ পর্যন্ত রক্ষিত আছে তাতে খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে সমর্থন করে না।” এডওয়ার্ড গিবন্সের পুস্তক দ্যা হিস্ট্রি অফ্ দ্যা ডিক্লাইন অ্যাণ্ড ফল্ অফ্ দ্যা রোমান এম্পায়ারে বলে: “খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের পক্ষে এক অধিক পবিত্র কর্তব্যকে না ছেড়ে সৈন্য বা বিচারক বা রাজার পদে কাজ করতে পারা অসম্ভব ছিল। ঠিক একইভাবে যিহোবার সাক্ষীরাও নিরপেক্ষতাকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকে এবং প্রাথমিক খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের মত, যিশাইয় ২:২-৪ এবং মথি ২৬:৫২ পদে দেওয়া বাইবেল নীতির অনুসরণ করে।
১৩. যিহোবার সাক্ষীদের উপর কী দোষারোপ করা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কী দেখায়?
১৩ যিহোবার সাক্ষীদের শত্রুরা তাদের দোষারোপ করে যে তারা পরিবার ভেঙ্গে দেয়। প্রকৃতই, এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি অথবা তার বেশি সদস্যেরা যিহোবার সাক্ষী হওয়ার পর পরিবার বিভক্ত হয়ে গেছে। যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এমন ঘটবে। (লূক ১২:৫১-৫৩) পরিসংখ্যান দেখায় যে এই কারণে যে বিবাহগুলি ভেঙ্গে গেছে সেগুলি ব্যতিক্রম। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষীদের ক্ষেত্রে, ৩টি দম্পতির মধ্যে একটির ক্ষেত্রে একজন সাথী সাক্ষী নয়। তবুও, এইরকম বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদের হার, জাতীয় গড়ের তুলনায় অধিক নয়। কেন? প্রেরিত পৌল, যারা খ্রীষ্টান কিন্তু অবিশ্বাসীদের সাথে বিবাহিত, তাদের জ্ঞানসম্পন্ন অনুপ্রাণিত উপদেশ দিয়েছেন এবং যিহোবার সাক্ষীরা তাদের উপদেশ পালন করার চেষ্টা করেন। (১ করিন্থীয় ৭:১২-১৬) যদি কোন বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে বিবাহ ভেঙ্গে যায়, তাহলে প্রায় সবসময়েই যিনি সাক্ষী নন তিনিই এর উদ্যোক্তা হন। অপর দিকে, হাজার হাজার বিবাহ রক্ষা পেয়েছে কারণ বিবাহ-সঙ্গীরা যিহোবার সাক্ষী হয়েছেন এবং বাইবেলের নীতিগুলি তাদের জীবনে প্রয়োগ করতে আরম্ভ করেছেন।
খ্রীষ্টান, ত্রিত্ববাদী নয়
১৪. প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের উপর কোন্ দোষারোপ আনা হয়েছিল এবং কেন এটি পরিহাসজনক ছিল?
১৪ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল যে তারা নাস্তিক, রোমীয় সাম্রাজ্যের সময়ে এক পরিহাসজনক ব্যাপার। ডা: অ্যাগাস্টাস্ নিয়ানডার্ লেখেন: “দেবতাদের অস্বীকারকারী, নাস্তিক, . . . খ্রীষ্টীয় বাক্তিদের প্রতি এইপ্রকার সাধারণ আখ্যাগুলি লোকেদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।” কতই না বিস্ময়কর, যে খ্রীষ্টানেরা যারা জীবন্ত সৃষ্টিকর্তাকে উপাসনা করতেন, তাদের পৌত্তলিকেরা নাস্তিক আখ্যা দিত যারা “ঈশ্বর নয়, কিন্তু মনুষ্যের হস্তের কার্য্য, কাষ্ঠ ও প্রস্তর” এর উপাসনা করত।—যিশাইয় ৩৭:১৯.
১৫, ১৬. (ক) কিছু ধর্মীয় ব্যক্তিরা যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে কী বলেছেন, কিন্তু এটি কোন্ প্রশ্ন উত্থাপিত করে? (খ) কী দেখায় যে যিহোবার সাক্ষীরা প্রকৃতই খ্রীষ্টান?
১৫ সমরূপে আজও পরিহাসজনক যে খ্রীষ্টজগতের কিছু অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তিরা যিহোবার সাক্ষীদের খ্রীষ্টান হিসাবে অস্বীকার করে। কেন? কারণ তারা ত্রিত্বকে প্রত্যাখ্যান করে। খ্রীষ্টজগতের গোঁড়া ব্যাখ্যানুযায়ী, “খ্রীষ্টান তারাই যারা খ্রীষ্টকে ঈশ্বর হিসাবে গ্রহণ করে।” এর বিপরীতে, একটি আধুনিক অভিধান “খ্রীষ্টান” বিশেষ্যটির ব্যাখ্যা এইভাবে করে, “যে ব্যক্তি যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে ও তাঁর শিক্ষা মেনে চলে” এবং “খ্রীষ্টধর্মের” ব্যাখ্যা এইভাবে দেয় যে “এটি একটি ধর্ম যার ভিত্তি যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষার উপর এবং সেই বিশ্বাসের উপর যে তিনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।” কারা এই বর্ণনার সাথে ভালভাবে মিলে যায়?
১৬ যিহোবার সাক্ষীরা যীশুর নিজের দেওয়া সাক্ষ্য গ্রহণ করেন যে তিনি কে। তিনি বলেছিলেন: “আমি ঈশ্বরের পুত্র,” এই নয় “আমি পুত্র ঈশ্বর।” (যোহন ১০:৩৬; তুলনা করুন যোহন ২০:৩১.) খ্রীষ্ট সম্বন্ধে প্রেরিত পৌলের অনুপ্রাণিত ব্যাখ্যা তারা মেনে নেন: “ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না।”a (ফিলিপীয় ২:৬, দ্যা নিউ যিরূশালেম বাইবেল) দ্যা পেগানিজ্ম ইন আওয়ার খ্রীশ্চিয়ানিটি বইটি বলে: “এই [ত্রিত্বের] বিষয়ে যীশু কখনও উল্লেখ করেননি এবং নতুন নিয়মে কোথাও ‘ত্রিত্ব’ শব্দটি পাওয়া যায় না। এই ধারণাটি আমাদের প্রভুর মৃত্যুর তিনশ বছর পরে গির্জা দ্বারা গ্রহণ করা হয়েছিল; এবং এই ধারণার উৎপত্তি সম্পূর্ণরূপে পৌত্তলিক।” যিহোবার সাক্ষীরা খ্রীষ্ট সম্নন্ধে বাইবেলের শিক্ষা মেনে নেন। তারা খ্রীষ্টান, ত্রিত্ববাদী নয়।
গির্জাগোষ্ঠী নয়
১৭. কেন যিহোবার সাক্ষীরা গির্জাগোষ্ঠী অথবা বিধর্মী আন্দোলনে সহযোগিতা করেন না?
১৭ আরও দুটি অভিযোগ যিহোবার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে করা হয় যে তারা গির্জাগোষ্ঠীর কোন আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করা প্রত্যাখ্যান করে এবং “জোর করে ধর্মান্তরিত” করে বলে বলা হয়। প্রাথমিক খ্রীষ্টানদেরও এই দুটি দোষের জন্য নিন্দা করা হয়েছিল। খ্রীষ্টজগৎ তার ক্যাথলিক, অর্থোডক্স এবং প্রোটেস্টাণ্ট্ অংশ সহ এই জগতেরই যে অংশ তা অস্বীকার করা যায় না। যীশুর মত, যিহোবার সাক্ষীরাও “জগতের নয়।” (যোহন ১৭:১৪) তারা কি করে ধর্মীয় সংঠনগুলি যেগুলি অ-খ্রীষ্টীয় আচরণ এবং বিশ্বাসগুলি উন্নীত করে তাদের সাথে বিধর্মী আন্দোলনে আবদ্ধ হতে পারে?
১৮. (ক) যিহোবার সাক্ষীরা যে দাবি করে একমাত্র তারাই সত্যধর্ম পালন করে তার জন্য তাদের কেন সমালোচনা করা যায় না? (খ) সাক্ষীদের ও রোমান ক্যাথলিকদের মধ্যে কী বিশিষ্ট পার্থক্য আছে?
১৮ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মত যিহোবার সাক্ষীরাও বিশ্বাস করে যে একমাত্র তারাই সত্য ধর্মের অনুশীলন করে, তা ন্যায়সঙ্গতভাবে কে সমালোচনা করতে পারবে? এমনকি ক্যাথলিক চার্চ গির্জাগোষ্ঠীর আন্দোলনে সহযোগিতা করে বলে কপটতার সাথে দাবি করে, তারাও ঘোষণা করে: “আমরা বিশ্বাস করি যে এই সত্য ধর্ম ক্যাথলিক এবং অ্যাপস্টোলিক গির্জাতেই বিরাজ করে, যা প্রভু যীশু সমগ্র লোকেদের মধ্যে প্রসারিত করার ভার দিয়েছেন যখন তিনি প্রেরিতদের বলেছিলেন: ‘অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।’” (ভ্যাটিক্যান্ কাউন্সিল্ ২, “ডিক্লেরেশান্ অন্ রিলিজিয়াস্ লিবার্টি”) স্পষ্টতই, যদিও এই ধরনের বিশ্বাস শিষ্যকরণ করতে ক্যাথলিকদের মধ্যে “অক্লান্ত উৎসাহ” উদ্দীপিত করতে যথেষ্ট নয়।
১৯. (ক) যিহোবার সাক্ষীরা কী করতে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছেন এবং কী মনোভাবের সাথে? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে কী পরীক্ষা করা হবে?
১৯ যিহোবার সাক্ষীদের এইপ্রকার উৎসাহ আছে। ঈশ্বর যতদিন পর্যন্ত তাদের করাতে চাইবেন তারা সাক্ষ্য দিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্প করেছেন। (মথি ২৪:১৪) তাদের সাক্ষ্যদান জোরপূর্বক নয় কিন্তু উৎসাহপূর্ণ। মানবজাতির জন্য ঘৃণায় নয় কিন্তু প্রতিবাসীর প্রতি প্রেমই তাদের প্ররোচিত করে। তারা আশা করে মানবজাতির যত জন সবে রক্ষা পাবে। (১ তীমথিয় ৪:১৬) প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মত “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকতে তারা চেষ্টা করে। (রোমীয় ১২:১৮) কিভাবে তারা তা করে পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে। (w93 7/1)
[পাদটীকাগুলো]
a ত্রিত্ব মতবাদ সম্পর্কে এই আলোচনার জন্য, প্রহরীদুর্গ, জুন ১৫, ১৯৭১, পৃষ্ঠা ৩৫৫-৬ দেখুন।
পুনরালোচনা
▫ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কী বৈশিষ্ট্য ছিল এবং কিভাবে তাদের সাথে যিহোবার সাক্ষীদের মিল আছে?
▫ কোন্ কোন্ দিক দিয়ে যিহোবার সাক্ষীরা দেখায় যে তারা উত্তম নাগরিক?
▫ শাসকবর্গেরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতেন এবং আজকে তার কোন পার্থক্য আছে কি?
▫তাদের যে সত্য আছে সাক্ষীদের এই দৃঢ় বিশ্বাস তাদের কী করতে প্ররোচিত করে?
[Pictures on page 9]
ঈশ্বর যতদিন তাদের দিয়ে করাতে চাইবেন যিহোবার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়ে যেতে দৃঢ় সংকল্প করেছেন
[Pictures on page 14]
পীলাত বলেছিলেন: “দেখ! সেই মানুষ”—যিনি এই জগতের অংশ ছিলেন না
[সজন্যে]
“Ecce Homo” by A. Ciseri: Florence, Galleria d’Arte Moderna / Alinari/Art Resource, N.Y.