জগতের তুলনায় বুদ্ধিপূর্বক চলা
“তোমরা বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর।”—কলষীয় ৪:৫.
১. প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কিসের সম্মুখীন হতে হত এবং কলসী মণ্ডলীকে পৌল কী উপদেশ দেন?
প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা যারা রোমীয় সাম্রাজ্যের নগরগুলিতে বাস করতেন তাদের প্রতিমাপূজা, অনৈতিক আমোদ-প্রমোদ এবং পৌত্তলিক আচার ও প্রথাগুলির বারংবার সম্মুখীন হতে হত। এশিয়া মাইনরের মধ্য-পশ্চিমের একটি শহর কলসীতে যারা থাকতেন, নিঃসন্দেহে তাদের স্থানীয় ফ্রিজিয়ার লোকেদের মাতৃ-দেবীর উপাসনা এবং প্রেতচর্চার, গ্রীক অধিবাসীদের পৌত্তলিক দর্শনশাস্ত্রের ও যিহূদী রাজ্যের জুডাইজ্মের সম্মুখীন হতে হত। প্রেরিত পৌল খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে উপদেশ দিয়েছিলেন “তোমরা” এইরূপ “বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর।”—কলসীয় ৪:৫.
২. আজও কেন যিহোবার সাক্ষীদের বাইরের লোকেদের সাথে বুদ্ধিপূর্বক চলতে হবে?
২ আজ, যিহোবার সাক্ষীদের একই ধরনের ভুল প্রথাগুলির, এমনকি আরও অধিক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। সেইজন্য, তাদেরও, সত্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বাইরে যারা আছেন তাদের সাথে মেলামেশার সময়ে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলতে হবে। ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি ও এমনকি জন-সংযোগ মাধ্যমেরও বহু ব্যক্তি তাদের বিরোধিতা করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি আক্রমণ করে অথবা প্রায়ই পরিহাস করে, যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে প্রতিকূল ধারণা গড়ে তুলে তাদের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করে। ঠিক যেমন প্রাথমিক খ্রীষ্টানদেরও অন্যায়ভাবে অত্যন্ত গোঁড়া ও এমনকি বিপজ্জনক “দল” হিসাবে দেখা হত, আজ যিহোবার সাক্ষীরাও প্রায়ই ক্ষতিকর এবং ভুল ধারণার শিকার হয়ে থাকে।—প্রেরিত ২৪:১৪; ১ পিতর ৪:৪.
ভুল ধারণা জয় করা
৩, ৪. (ক) সত্য খ্রীষ্টানেরা কেন জগতের কাছ থেকে ভালবাসা পাবে না, কিন্তু আমাদের কী করার চেষ্টা করা উচিৎ? (খ) নাৎসী কন্সেন্ট্রেশান্ ক্যাম্পে যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে একজন লেখিকা কী লিখেছিলেন?
৩ যেহেতু প্রেরিত যোহনের বাক্যানুযায়ী, “আর সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে,” (১ যোহন ৫:১৯) সেইজন্য সত্য খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিরা জগতের ভালবাসা পাওয়ার আশা রাখে না। তবুও, বাইবেল খ্রীষ্টানদের চেষ্টা করতে উৎসাহ দেয় যাতে ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে পরিচালনা করে যিহোবা ও তাঁর পবিত্র উপাসনার প্রতি নিয়ে আসতে পারে। এটি আমরা সরাসরি সাক্ষ্যদান ও আমাদের ভাল আচরণের দ্বারাও করি। প্রেরিত পিতর লিখেছেন: “আর পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।”—১ পিতর ২:১২.
৪ ফরগিভ্—বাট্ ডু নট্ ফরগেট্ বইয়ের লেখিকা, সিলভিয়া সালভেসন্ মহিলা সাক্ষীদের সম্বন্ধে বলেছেন যারা নাৎসী কন্সেন্ট্রেশন্ ক্যাম্পে তার সহ-বাসিন্দা ছিলেন: “ওরা দুজনে, ক্যাথি ও মারগারেথ্ এবং আরও অনেকে, আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন, শুধু তাদের বিশ্বাস দ্বারা নয় কিন্তু ব্যবহারিক ব্যাপারেও। আমাদের ক্ষতের জন্য পরিষ্কার কাপড় প্রথমে তারাই সংগ্রহ করে আনেন . . . কেউ অসুস্থ থাকলে তারা সাহায্য করতেন, সমস্ত ব্যাপারেই তাদের কাছে অভিমত পাওয়া যেত, সব কিছুর জন্য তাদের কাছে সময় ছিল। সংক্ষেপে, আমরা এমন লোকেদের মাঝে ছিলাম যারা আমাদের ভাল চাইত এবং যারা তাদের আচরণ দ্বারা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছিল।” “বাহিরের লোকদের“ থেকে কত সুন্দর সাক্ষ্য!
৫, ৬. (ক) খ্রীষ্ট বর্তমান সময়ে কোন্ কাজ সম্পন্ন করছেন, আর আমাদের কী ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়? (খ) জগতের মানুষের প্রতি আমাদের মনোভাব কিরূপ হওয়া উচিৎ এবং কেন?
৫ বাইরের লোকেদের সঙ্গে আমরা যেরকম বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করি তার মাধ্যমে তাদের মন থেকে ভুল ধারণা দূর করতে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। সত্যই, আমরা এমন সময়ে বাস করছি যখন আমাদের শাসনরত রাজা, খ্রীষ্ট যীশু জগতের লোকেদের আলাদা করছেন, “যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্ করে।” (মথি ২৫:৩২) কিন্তু আমাদের কখনও ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে খ্রীষ্টই বিচারক; তিনিই বিচার করবেন কারা “মেষ” এবং কারা “ছাগ।”—যোহন ৫:২২.
৬ এটি যারা যিহোবার সংগঠনের অংশ নন তাদের প্রতিও আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করা উচিৎ। আমরা তাদের জাগতিক লোক হিসাবে ভাবতে পারি, কিন্তু তারা মানবজাতিরই অংশ যাকে “ঈশ্বর . . . এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) এরা ছাগ তা গর্ব-সহকারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার থেকে মানুষদের সম্ভাব্য মেষ হিসাবে গণ্য করা অনেক ভাল। একসময়ে যারা হিংসাত্মকভাবে সত্যের প্রতি বিরোধিতা করেছিলেন তারাই এখন উৎসর্গীকৃত সাক্ষী। সরাসরি সাক্ষ্যতে সাড়া দেওয়ার আগে, এদের মধ্যে অনেককেই প্রথমে সদাশয় আচরণ দ্বারা জয় করা হয়েছিল।
উদ্যমী, কিন্তু উপদ্রবকারী নয়
৭. পোপ কিরূপ সমালোচনা ব্যক্ত করেছেন, কিন্তু আমরা কোন্ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি?
৭ পোপ জন্ পল্ ২য় সাধারণভাবে দলগুলির এবং বিশেষভাবে যিহোবার সাক্ষীদের সম্বন্ধে সমালোচনা করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “প্রায় উপদ্রবকারী উদ্যম নিয়ে যারা গৃহ থেকে গৃহে গিয়ে, অথবা রাস্তার মোড়ে পথযাত্রীদের থামিয়ে নতুন অনুগামীদের খোঁজে, তারা প্রেরিত এবং মিশনারী উৎসাহের এক নকল সাম্প্রদায়িক উপদল।” তাহলে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে, আমাদেরটি যদি “প্রেরিত ও মিশনারী উৎসাহের এক নকল” দল হয়, তাহলে প্রকৃত সুসমাচার প্রচারকদের মত উৎসাহ কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে? নিশ্চয় ক্যাথলিক অথবা এই বিষয়ে প্রোটেস্টান্ট্ অথবা অর্থোডক্স গির্জার সদস্যদের মধ্যে নয়।
৮. গৃহ থেকে গৃহের সাক্ষ্যদান আমাদের কিভাবে করা উচিৎ, কোন্ পরিণামের আশা নিয়ে?
৮ যাইহোক, আমাদের সাক্ষ্যদানের প্রতি আনা উপদ্রবের দোষারোপকে ভুল প্রতিপাদন করতে, আমাদের সবসময়েই লোকেদের কাছে যাওয়ার সময়ে সদয়, সম্মানপূর্বক এবং নম্র মনোভাব দেখাতে হবে। শিষ্য যাকোব লিখেছেন: “তোমাদের মধ্যে জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান্ কে? সে সদাচরণ দ্বারা জ্ঞানের মৃদুতায় নিজ ক্রিয়া দেখাইয়া দিউক।” (যাকোব ৩:১৩) প্রেরিত পৌল আমাদের সনির্বন্ধ মিনতি করেন “নির্ব্বিরোধ” হতে। (তীত ৩:২) উদাহরণস্বরূপ, একজনকে যখন আমরা সাক্ষ্যদান করছি তার বিশ্বাসকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার থেকে, তার মতামতের উপর আন্তরিক আগ্রহ দেখান না কেন? তারপর বাইবেলে সুসমাচার যেমন আছে ব্যক্তিটিকে বলুন। উৎসাহজনক মনোভাব নিয়ে ও অন্যান্য বিশ্বাসের লোকেদের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেখিয়ে আমরা তাদের শুনবার এবং হয়ত তাদের জন্য বাইবেলের বার্তার মূল্য বোঝার উত্তম মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারি। পরিণাম হতে পারে যে কেউ কেউ “ঈশ্বরের গৌরব করিবে।”—১ পিতর ২:১২.
৯ পৌলের উপদেশ আমরা কিভাবে পালন করতে পারি (ক) কলসীয় ৪:৫ পদে? (খ) কলসীয় ৪:৬ পদে?
৯ প্রেরিত পৌল উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর, সুযোগ কিনিয়া লও।” (কলসীয় ৪:৫) শেষের উক্তিটি ব্যাখ্যা করে, জে. বি. লাইটফুট লিখেছেন: “আমাদের বলার অথবা করার কোন সুযোগকে হাত ছাড়া করবেন না, যা ঈশ্বরের কাজকে অগ্রসর করে।” (ইট্যালিক্স্ আমাদের) হ্যাঁ, বাক্য এবং কাজ সমেত সুযোগের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিৎ। দিনের মধ্যে সাক্ষাৎ করার সঠিক সময় বেছে নেওয়ার বিজ্ঞতাও এর সাথে জড়িত। আমাদের বার্তা যদি প্রত্যাখ্যাত হয়, তার কারণ কি লোকেরা এটি উপলদ্ধি করেন না, অথবা আমরা সঠিক সময়ে সাক্ষাৎ করতে যাইনি বলে? পৌল আরও লিখেছেন: “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।” (কলসীয় ৪:৬) এর জন্য আগে থেকে চিন্তার ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রকৃত প্রেমের প্রয়োজন আছে। আসুন আমরা রাজ্যের বার্তাটি সর্বদা সৌজন্যের সাথে উপস্থাপিত করি।
সশ্রদ্ধ এবং “সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত”
১০. (ক) ক্রীতের খ্রীষ্টানদের পৌল কী উপদেশ দিয়েছিলেন? (খ) যিহোবার সাক্ষীরা কিভাবে পৌলের উপদেশ পালনে উদাহরণস্বরূপ হয়েছেন?
১০ বাইবেলের নীতি সম্পর্কে আমরা আপোশ করতে পারি না। অপরপক্ষে, যেখানে কোন প্রশ্ন খ্রীষ্টীয় বিশ্বস্ততার সাথে সম্বন্ধ রাখে না সেইখানে অনাবশ্যকভাবে তর্ক করা উচিৎ নয়। প্রেরিত পৌল লিখেছেন: “তুমি তাহাদিগকে [ক্রীতের খ্রীষ্টানদের] স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মানুষের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।” (তীত ৩:১, ২) বাইবেল বিশারদ ই. এফ্. স্কট্ এই অনুচ্ছেদের বিষয়ে লেখেন: “খ্রীষ্টানদের শুধু আধিপত্যের বাধ্য হওয়া নয়, কিন্তু তাদের সর্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিৎ। এর . . . অর্থ এই যে, প্রয়োজনার্থে জনসাধারণকে সাহায্য করার আগ্রহ খ্রীষ্টানদের সর্বাগ্রে থাকা উচিৎ। অগ্নিকাণ্ড, মহামারী, নানা ধরনের দুর্যোগ সবসময়ে লেগেই থাকে, ও এই রকম পরিস্থিতিতে উত্তম নাগরিকের তাদের প্রতিবেশীকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকা উচিৎ।” জগতে দুর্যোগের বহু ঘটনার নজির আছে যেখানে যিহোবার সাক্ষীরা প্রথমে সেবা করার জন্য হাজির হয়েছেন। তারা শুধু তাদের ভাইদেরই সাহায্য করেননি কিন্তু বাইরের লোকেদেরও করেছেন।
১১, ১২. (ক) অধিকর্তাদের সাথে খ্রীষ্টানদের কেমন ব্যবহার করা উচিৎ? (খ) কিংডম হল নির্মাণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষদের কাছে বশীভূত হওয়ার মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত আছে?
১১ তীতের প্রতি পৌলের চিঠির এই একই অনুচ্ছেদে আধিপত্যের প্রতি সম্মানজনক মনোভাব গড়ে তোলার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। নিরপেক্ষতার জন্য যখন যুবক খ্রীষ্টানদের বিচারকের সামনে আসতে হয় তাদের বিশেষকরে বাইরের লোকেদের কাছে বুদ্ধিপূর্বক চলা উচিৎ। যিহোবার সাক্ষীদের সুনাম তারা গড়তে পারে অথবা ক্ষতি করতে পারে তাদের বেশভূষা, আচরণ এবং কর্তৃপক্ষের সাথে কিভাবে তারা কথা বলছে, তার দ্বারা। তাদের উচিৎ “যাহার যাহা প্রাপ্য . . . যাঁহাকে সমাদর করিতে হয়, সমাদর করা,” ও মৃদুতার সাথে উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকা।—রোমীয় ১৩:১-৭; ১ পিতর ২:১৭; ৩:১৫.
১২ “আধিপত্য” এর অন্তর্ভুক্ত স্থানীয় সরকারী অধিকর্তারা। এখন যখন আরো অধিক কিংডম হল নির্মাণ হচ্ছে, স্থানীয় অধিকর্তাদের সাথে লেন-দেন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। প্রাচীনদের প্রায়ই সংস্কারের সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু দেখা গেছে যেখানে মণ্ডলীর প্রতিনিধিরা অধিকর্তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করেছেন এবং শহরের পরিকল্পনা কমিশনের সাথে সহযোগিতা করেছেন, সেখানে সংস্কারের ব্যাপারটি ভেঙ্গে দেওয়া গেছে। যারা আগে যিহোবার সাক্ষীদের ও তাদের বার্তা সম্বন্ধে খুব কম জানতেন অথবা কিছুই জানতেন না, প্রায়ই সেই লোকেদের ভাল সাক্ষ্য দেওয়া গেছে।
‘যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক’
১৩, ১৪. রোমের খ্রীষ্টানদের পৌল কী উপদেশ দিয়েছিলেন এবং আমরা বাইরের লোকেদের সম্পর্কে তা কিভাবে পালন করতে পারি?
১৩ পৌত্তলিক রোমে যে খ্রীষ্টানেরা বাস করতেন তাদের পৌল নিম্নে লিখিত উপদেশ দিয়েছিলেন: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর। যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু বলেন।’ বরং ‘তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে পান করাও; কেননা তাহা করিলে তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবে।’ তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।”—রোমীয় ১২:১৭-২১.
১৪ বাহিরের লোকেদের সাথে তাদের সম্পর্কে সত্য খ্রীষ্টানেরা অপরিহার্য-রূপেই বিরোধীদের সম্মুখীন হন। উপরের অনুচ্ছেদে পৌল দেখান যে বুদ্ধিপূর্বক পথে চলা হবে সদয় আচরণ দ্বারা বিরোধিতা এড়ানোর প্রচেষ্টা করা। জলন্ত অঙ্গারের মত, সদয় এই আচরণগুলি হয়ত শত্রুতা গলিয়ে দিয়ে বিরোধীদের জয় করে যিহোবার সাক্ষীদের প্রতি দয়ার মনোভাব দেখাতে পারে, হয়ত এমনকি সুসমাচারের প্রতি তাদের আগ্রহ গড়ে উঠতে পারে। এরূপ যখন হয়, তখন মন্দকে উত্তমের দ্বারা পরাজয় করা হয়।
১৫. বাইরের লোকেদের সাথে খ্রীষ্টানদের বুদ্ধিপূর্বক চলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কখন সাবধান থাকা উচিৎ?
১৫ বাহিরের লোকেদের সাথে বুদ্ধিপূর্বক চলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সেই গৃহে যেখানে বিবাহিত সঙ্গীদের মধ্যে একজন সত্যে নেই। বাইবেলের নীতিগুলি মেনে চললে উত্তম স্বামী, উত্তম স্ত্রী, উত্তম পিতা, উত্তম মাতা হওয়া যায় এবং সন্তানেরা বেশি বাধ্যতা দেখায় ও স্কুলে কঠোর অধ্যয়ন করে। অবিশ্বাসী দেখতে পাবেন যে বাইবেলের নীতি তার বিশ্বাসী সাথীর উপর কেমন গঠনমূলক প্রভাব ফেলেছে। এইভাবে, পরিবারের উৎসর্গীকৃত সদস্যদের দ্বারা কাউকে “বাক্য বিহীনে আচার ব্যবহার দ্বারা লাভ কর হয়।”—১ পিতর ৩:১, ২.
‘সকলের প্রতি সৎকার্য কর’
১৬, ১৭. (ক) ঈশ্বর কী ধরনের উৎসর্গে আনন্দিত হন? (খ) আমাদের ভাইয়েদের এবং বাইরের লোকেদের প্রতি আমরা কিভাবে “সৎকর্ম” করতে পারি?
১৬ সব থেকে উত্তম কাজ যা আমরা আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি করতে পারি তা হল তাদের জীবনের বার্তাটি দিয়ে যীশুর মাধ্যমে যিহোবার সাথে সম্বন্ধ গড়ে তুলতে শেখানো। (রোমীয় ৫:৮-১১) সেইজন্য প্রেরিত পৌল আমাদের বলেন: “তাঁহারই [খ্রীষ্টের] দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি।” (ইব্রীয় ১৩:১৫) পৌল যোগ করেন: “আর উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন।” (ইব্রীয় ১৩:১৬) জনসাধারণ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার সাথে সাথে, “উপকার” করতে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। যে বলিদানগুলিতে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন এটি সেগুলির এক অখণ্ড অংশ।
১৭ স্বাভাবিকভাবে, আমরা আমাদের আত্মিক ভাইয়েদের উপকার করি, যাদের মানসিক, আত্মিক, দৈহিক অথবা দ্রব্যাদির প্রয়োজন রয়েছে। পৌল এটি ইঙ্গিত করেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “এজন্য আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০; যাকোব ২:১৫, ১৬) আমাদের, কখনও পৌলের আগের কথাগুলি “সকলের প্রতি” ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা সহকর্মীর প্রতি যদি দয়া দেখাই তাহলে আমাদের প্রতি তাদের ভুল ধারণা ভেঙ্গে যাবে এবং ব্যক্তিটির সত্যের প্রতি হৃদয় উন্মুক্ত হতে পারে।
১৮. (ক) কোন্ বিপদগুলি আমাদের এড়িয়ে চলা উচিৎ? (খ) জনসাধারণ্যে সাক্ষ্য দেওয়ায় সাহায্য করতে আমাদের খ্রীষ্টীয় মাধুর্য কিভাবে ব্যবহার করতে পারি?
১৮ এটি করার জন্য, আমাদের বাইরের লোকেদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব করার প্রয়োজন নেই। এইরূপ সংসর্গ বিপজ্জনক হতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) আর জগতের সাথে মিত্রতা করার কোন অভিপ্রায় নেই। (যাকোব ৪:৪) কিন্তু খ্রীষ্টীয় মাধুর্য আমাদের প্রচারকাজকে সাহায্য করতে পারে। কোন কোন দেশে লোকেদের সাথে তাদের বাড়িতে কথা বলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। কোন কোন বহু-তল বাড়িতে এমন ব্যবস্থা থাকে যাতে কোন বাসিন্দাদেরই সাথে যোগাযোগ করা যায় না। উন্নত দেশগুলিতে টেলিফোন হচ্ছে প্রচার করার এক পন্থা। প্রায় সব দেশেতেই রাস্তায় সাক্ষ্যদান করা যায়। তবুও, সব দেশেতেই সদয়, নম্র এবং সাহায্যকারী হলে ভুল ধারণা ভেঙ্গে ফেলার সুযোগ খুলে দেয় এবং ভাল সাক্ষ্য দেওয়া হয়।
বিরোধীদের চুপ করানো
১৯. (ক) আমরা যেহেতু মানুষকে খুশি করার জন্য বার হইনি, তাই আমরা কী আশা করতে পারি? (খ) আমরা কিভাবে দানিয়েলের উদাহরণ এবং পৌলের উপদেশ পালন করার প্রচেষ্টা করতে পারি?
১৯ যিহোবার সাক্ষীরা লোক-ভয় করে না অথবা লোকেদের তুষ্টি বিধানও করে না। (হিতোপদেশ ২৯:২৫; ইফিষীয় ৬:৬) তারা ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পারে যে তারা উদাহরণস্বরূপ উত্তম নাগরিক হয়ে সম্পূর্ণ কর দিলেও, বিরোধীরা তাদের সম্বন্ধে বিদ্বেষপরায়ণ মিথ্যা বলে বেড়াবে এবং অবজ্ঞা করবে। (১ পিতর ৩:১৬) এটি জেনে, তারা দানিয়েলকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে, যার সম্বন্ধে তার শত্রুরা বলেছিল: “আমরা ঐ দানিয়েলের অন্য কোন দোষ পাইব না; কেবল তাহার ঈশ্বরের ব্যবস্থা লইয়া যদি তাহার কোন দোষ পাই।” (দানিয়েল ৬:৫) মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমরা কখনও বাইবেলের নীতি সম্বন্ধে আপোশ করব না। অপরপক্ষে, আমরা শহিদও হতে চাই না। আমরা শান্তিতে থাকার প্রচেষ্টা করব এবং প্রেরিতের উপদেশ শুনব: “কেননা ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যেন, এইরূপে তোমরা সদাচরণ করিতে করিতে নির্ব্বোধ মনুষ্যদের অজ্ঞানতাকে নিরুত্তর কর।”—১ পিতর ২:১৫.
২০. (ক) আমরা কী বিশ্বাস করেছি, আর যীশু কী উৎসাহ দিয়েছিলেন? (খ) আমরা বাইরের লোকেদের সাথে কিভাবে বুদ্ধিপূর্বক চলতে পারি?
২০ আমরা বিশ্বাস করেছি যে জগতের থেকে পৃথক থাকার আমাদের পরিস্থিতি পূর্ণরূপে বাইবেলের সাথে মিল রেখে চলে। এটি প্রথম-শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের ইতিহাস দ্বারা সমর্থিত। আমরা যীশুর বাক্য দ্বারা উৎসাহ পাই: “জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩৩) আমরা ভয় করি না। “আর যদি তোমরা সদাচরণের পক্ষে উদ্যোগী হও, তবে কে তোমাদের হিংসা করিবে? কিন্তু যদিও ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর, তবু তোমরা ধন্য। আর তোমরা উহাদের ভয়ে ভীত হইও না, এবং উদ্বিগ্ন হইও না, বরং হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় সহকারে উত্তর দিও।” (১ পিতর ৩:১৩-১৫) এইভাবে কাজ করলে, বাইরের লোকেদের সাথে আমরা বুদ্ধিপূর্বক চলব। (w93 7/1)
পুনরালোচনা
▫ কেন যিহোবার সাক্ষীদের বাইরের লোকেদের সাথে বুদ্ধিপূর্বক চলা উচিৎ?
▫ কেন সত্য খ্রীষ্টানেরা আশা করে না যে জগৎ তাদের ভালবাসবে, কিন্তু তাদের কিসের চেষ্টা করা উচিৎ?
▫ জগতের লোকেদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ এবং কেন?
▫ আমরা কিভাবে শুধু আমাদের ভাইয়েদের নয় কিন্তু বাইরের লোকেদের প্রতিও “সৎকর্ম” করতে পারি?
▫ বুদ্ধিপূর্বক চললে তা কিভাবে আমাদের জনসাধারন্যে সাক্ষ্যদানে সাহায্য করবে?
[Pictures on page 15]
বাঁদিকে: ফ্রান্সে সত্য খ্রীষ্টানেরা বন্যার পর তাদের প্রতিবেশীদের সাহায্য করছেন
[Pictures on page 17]
খ্রীষ্টীয় মাধুর্যপূর্ণ ব্যবহার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে অনেক সাহায্য করতে পারে
[Pictures on page 20]
খ্রীষ্টানদের “সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত” হওয়া উচিৎ