আপনার আত্মসংযম স্থায়ী হোক ও উপচিয়া উঠুক
“আপনাদের বিশ্বাসে . . . জিতেন্দ্রিয়তা (আত্মসংযম, NW) . . . যোগাও।”—২ পিতর ১:৫, ৬.
১. কোন্ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একজন খ্রীষ্টানকে সাক্ষ্য দিতে হতে পারে?
যীশু বলেছিলেন: “আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, . . . সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে।” (মথি ১০:১৮) আপনাকে যদি একজন রাজ্যপাল, বিচারক অথবা একজন রাষ্ট্রপতির সামনে ডাকা হয়, তাহলে আপনি কী বলবেন? প্রথমে হয়ত কেন আপনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন, আপনার উপরে দোষারোপ সম্বন্ধে। কথা বলতে ঈশ্বরের আত্মা আপনাকে সাহায্য করবে। (লূক ১২:১১, ১২) কিন্তু আপনি কি আত্মসংযম সম্বন্ধে বলার কথা চিন্তা করতে পারেন? আমাদের খ্রীষ্টীয় বার্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে কি আপনি আত্মসংযমকে দেখেন?
২, ৩. (ক) পৌল যে ফীলিক্স এবং দ্রুষিল্লার সামনে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল? (খ) সেই পরিস্থিতিতে আত্মসংযম সম্বন্ধে কথা বলা পৌলের পক্ষে উপযুক্ত ছিল কেন?
২ বাস্তব জীবনে একটি উদাহরণের কথা বিবেচনা করুন। একজন যিহোবার সাক্ষীকে গ্রেপ্তার করে বিচারসভায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কথা বলতে সুযোগ দেওয়া হলে, একজন খ্রীষ্টান, একজন সাক্ষী হিসাবে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে তিনি জানাতে চেয়েছিলেন। রেকর্ড পরীক্ষা করে আপনি দেখবেন যে তিনি “ন্যায়পরতা, আত্মসংযম এবং আগামী বিচারের বিষয়ে” আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আমরা কৈসরিয়াতে প্রেরিত পৌলের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি। একটি প্রাথমিক জেরা করা হয়েছিল। “কয়েক দিন পরে ফীলিক্স, তার স্ত্রী দ্রুষিল্লা, যিনি একজন যিহূদী ছিলেন, তার সাথে এসেছিলেন এবং তিনি পৌলকে ডেকে খ্রীষ্ট যীশুর বিশ্বাস সম্বন্ধে তার কাছ থেকে শুনেছিলেন।” (প্রেরিত ২৪:২৪) ইতিহাসে লেখা আছে যে ফীলিক্স “যতরকম নিষ্ঠুরতা এবং অভিলাষ থাকা সবে সবই প্রকাশ করতেন, রাজার ক্ষমতা অত্যন্ত নীচ মনোবৃত্তির সাথে জাহির করতেন।” তিনি আগেও দুইবার বিবাহ করেছিলেন কিন্তু তারপরেও দ্রুষিল্লাকে তার স্বামীকে (ঈশ্বরের নিয়ম লঙ্ঘন করে) বিবাহ-বিচ্ছেদ দিতে বাধ্য করে, তিনি তার তৃতীয় স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করেছিলেন। হয়ত দ্রুষিল্লাই এই নতুন ধর্ম, খ্রীষ্টধর্ম সম্বন্ধে শুনতে চেয়েছিলেন।
৩ “ন্যায়পরতা, আত্মসংযম এবং আগামী বিচারের বিষয়ে” পৌল আরও বলে যেতে থাকেন। (প্রেরিত ২৪:২৫) এর মাধ্যমে, ধার্মিকতা সম্বন্ধে ঈশ্বরের মান এবং ফীলিক্স ও দ্রুষিল্লা যে নিষ্ঠুরতা ও অন্যায়ের মাঝে বাস করতেন, তার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য ধরা পড়া উচিৎ ছিল। পৌল হয়ত আশা করেছিলেন যে তার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করতে তিনি ফীলিক্সকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। কিন্তু “আত্মসংযম এবং আগামী বিচারের বিষয়ে” কথা বলে কী লাভ? এই অনৈতিক দম্পতি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে “খ্রীষ্ট যীশুর বিশ্বাসের” সঙ্গে কী জড়িত আছে? তাই তাদের জানানো প্রয়োজন ছিল যে তাঁকে অনুসরণ করার অর্থ হল নিজের চিন্তাধারা, বাক্য এবং কাজ সংযত রাখা, যার অর্থ হল আত্মসংযম। চিন্তা, কথাবার্তা এবং কাজের জন্য সমস্ত মানুষকে ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি দিতে হবে। সুতরাং, পৌলের ক্ষেত্রে ফীলিক্সের যে কোন বিচার-সিদ্ধান্তের থেকে, সেই দেশাধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী ঈশ্বরের সামনে যে বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (প্রেরিত ১৭:৩০, ৩১; রোমীয় ১৪:১০-১২) স্বভাবতই, পৌলের কথা শুনে “ফীলিক্স ভীত” হয়েছিলেন।
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সহজ নয়
৪. আত্মসংযম সত্য খ্রীষ্টধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেন?
৪ আত্মসংযম যে খ্রীষ্টধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, প্রেরিত পৌল তা উপলব্ধি করেছিলেন। যীশুর একজন অন্তরঙ্গ সঙ্গী, প্রেরিত পিতর এই বিষয়টি সমর্থন করেছিলেন। যারা স্বর্গে “ঈশ্বরীয় স্বভাবের সহভাগী” হবেন তাদের কাছে লেখার সময়ে, পিতর কিছু প্রয়োজনীয় গুণাবলি প্রদর্শন করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন, যেমন বিশ্বাস, প্রেম এবং আত্মসংযম। সুতরাং, এই আশ্বাসবাণীর সঙ্গে আত্মসংযমও জড়িত ছিল: “এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না।”—২ পিতর ১:১, ৪-৮.
৫. আমাদের কেন আত্মসংযম সম্বন্ধে বিশেষভাবে সচেতন থাকা উচিৎ?
৫ কিন্তু, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে আমাদের আত্মসংযম দেখানো উচিৎ বলার চাইতে, দৈনন্দিন জীবনে তা পালন করা অনেক বেশি কঠিন। একটি কারণ হল যে আত্মসংযম বেশ দুর্লভ গুণ। দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:১-৫ পদে আমাদের দিনে, “শেষকালে” যে মনোভাব দেখা যাবে সেই সম্বন্ধে পৌল বর্ণনা দিয়েছেন। আমাদের যুগকে চিহ্নিত করতে অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে “অজিতেন্দ্রিয়তা”ও একটি। এই বিষয়টি যে সত্য, আমাদের চারিপাশে আমরা তা দেখতে পাই, তাই নয় কি?
৬. বর্তমানে আমরা কিভাবে আত্মসংযমের অভাব দেখতে পাই?
৬ অনেকে বিশ্বাস করে যে সাধারণত “অনুভূতি প্রকাশ করা” অথবা “রাগ ঝেড়ে ফেলা” স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এবং বিখ্যাত লোকেরা, যাদের অনেকে অনুকরণ করে, তারা এই মনোভাব আরও দৃঢ় করে তোলে, কারণ তারা আত্মসংযম উপেক্ষা করে সবরকম অভিলাষ চরিতার্থ করে। উদাহরণস্বরূপ: যারা পেশাগত খেলাধুলা ভালবাসে, তারা উন্মাদ আবেগ প্রদর্শন, এমনকি প্রচণ্ড ক্রোধ প্রকাশে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সংবাদপত্রের বিবরণ থেকে, আপনি কি এমন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবেন না যে কোন খেলাধুলার মাঠে সাংঘাতিক মারামারি অথবা জনতার ক্ষিপ্র আচরণ দেখা গেছে? কিন্তু, আত্ম-সংযমের অভাব সম্বন্ধে বহু উদাহরণ দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আত্মসংযম দেখানোর প্রয়োজন, এমন বহু ক্ষেত্রের কথা আপনি উল্লেখ করতে পারেন—আমাদের খাওয়া-দাওয়া ও পান করার ক্ষেত্রে, বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের আচরণে এবং আমাদের শখের পিছনে সময় এবং অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলির সবকটি অল্প অল্প বিবেচনা না করে, আসুন আমরা একটি ক্ষেত্র দেখি যেখানে আমাদের অবশ্যই আত্মসংযম দেখাতে হবে।
আমাদের আবেগ সম্বন্ধে আত্ম-সংযম
৭. আত্মসংযম সম্বন্ধে কোন্ বিষয়টির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিৎ?
৭ নিজেদের পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ অথবা পরিচালিত করতে আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশ কিছুটা সফল হয়েছি। আমরা চুরি করি না, অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়ি না, খুন করি না; এই সমস্ত পাপ সম্বন্ধে ঈশ্বরের নিয়ম কী, তা আমরা জানি। কিন্তু, আমাদের আবেগ-প্রকাশের ক্ষেত্রে আত্মসংযম দেখাতে আমরা কতটা সফল হয়েছি? যারা তাদের আবেগ সংযমে রাখতে পারে না, পরে তারা তাদের কাজের সময়ে প্রায়ই আত্মসংযম হারিয়ে ফেলে। সুতরাং, আসুন আমাদের আবেগ-প্রকাশের প্রতি মনোযোগ দিই।
৮. আমাদের আবেগ-প্রকাশ সম্বন্ধে যিহোবা কী আশা করেন?
৮ আমরা যে রোবটের মত কোন আবেগ-অনুভূতিহীন হই, তা যিহোবা ঈশ্বর আশা করেন না। লাসারের সমাধিস্থলে, যীশু “আত্মাতে উত্তেজিত . . . এবং উদ্বিগ্ন” হয়ে উঠেছিলেন। তারপরে, ‘যীশু কেঁদেছিলেন।’ (যোহন ১১:৩২-৩৮) মন্দির থেকে পোদ্দারদের তাড়িয়ে দেওয়ার সময়ে, তিনি সম্পূর্ণ অন্যরকম আবেগ প্রকাশ করেছিলেন, যদিও তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। (মথি ২১:১২, ১৩; যোহন ২:১৪-১৭) তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যরাও গভীর আবেগ প্রকাশ করেছিলেন। (লূক ১০:১৭; ২৪:৪১; যোহন ১৬:২০-২২; প্রেরিত ১১:২৩; ১২:১২-১৪; ২০:৩৬-৩৮; ৩ যোহন ৪) তবুও তাদের আবেগের প্রকাশ যাতে পাপ করতে পরিচালিত না করে, সেই জন্য আত্মসংযম রাখা সম্বন্ধে তারা সচেতন ছিলেন। ইফিষীয় ৪:২৬ এই বিষয়ে স্পষ্ট বলেছে: “ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক।”
৯. আমাদের আবেগ-প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
৯ একজন খ্রীষ্টান আত্মসংযম বজায় রাখছে মনে হলেও, তার আবেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বিপদ রয়েছে। ঈশ্বর যখন হেবলের উৎসর্গ গ্রহণ করেছিলেন, তার কী ফল হয়েছিল সেই সম্বন্ধে মনে করুন: “কয়িন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল, তাহার মুখ বিষণ্ণ হইল। তাহাতে সদাপ্রভু কয়িনকে কহিলেন, তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে? যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে।” (আদিপুস্তক ৪:৫-৭) কয়িন তার আবেগকে বশে রাখতে পারেনি, যে জন্য সে হেবলকে খুন করেছিল। অবাধ আবেগ তাকে একটি নিয়ন্ত্রণহীন কাজে পরিচালিত করেছিল।
১০. হামনের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিক্ষা পেয়েছেন?
১০ মর্দখয় এবং ইষ্টেরের সময়কার আরও একটি ঘটনা বিবেচনা করুন। হামন নামে একজন রাজকর্মচারী খুবই রেগে গিয়েছিল কারণ মর্দখয় তার সামনে মাথা নত করে প্রণাম করত না বলে। পরে হামন ভুল বুঝেছিল যে তার হয়ত পদোন্নতি হবে। “সেই দিন হামন আহ্লাদিত ও হৃষ্টচিত্ত হইয়া বাহিরে গেল, কিন্তু যখন রাজদ্বারে মর্দখয়ের দেখা পাইল, এবং তিনি তাহার সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইলেন না ও সরিলেন না, তখন হামন মর্দখয়ের প্রতি ক্রোধে পরিপূর্ণ হইল। তথাপি হামন ক্রোধ সম্বরণ করিল, এবং নিজ গৃহে” ফিরিয়া আসিল। (ইষ্টের ৫:৯, ১০) খুব সহজে সে খুশির আবেগে মেতে উঠত। তবুও, যার প্রতি সে ইতিমধ্যেই ক্ষুব্ধ ছিল, তার দেখা পাওয়া মাত্র সে রেগেও উঠেছিল। বাইবেল যখন বলে যে হামন “ক্রোধ সংবরণ করিল,” তখন আপনার কি মনে হয় যে আত্ম-সংযমের ক্ষেত্রে সে উদাহরণযোগ্য ছিল? অবশ্যই না। তখনকার মত, হামন নিজেকে এবং কোনরকম আবেগ-প্রকাশকে সম্বরণ করেছিল, কিন্তু তার হিংসাজনিত ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে অসফল হয়েছিল। আর আবেগবশত সে খুন করার পরিকল্পনায় মেতে উঠেছিল।
১১. ফিলিপীয় মণ্ডলীতে, কোন্ সমস্যা ছিল এবং সেই সমস্যার উদয় কিভাবে হতে পারত?
১১ একইভাবে, আবেগ-প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে, বর্তমানেও খ্রীষ্টানদের অনেক ক্ষতি হতে পারে। অনেকে মনে করতে পারেন যে, ‘মণ্ডলীতে এই সমস্যা দেখা দেবে না।’ কিন্তু দেখা গেছে। ফিলিপীয় মণ্ডলীতে দুইজন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানের মধ্যে বেশ ভালরকম মতবিরোধ ছিল, কোন্ বিষয়ে, তা বাইবেলে বলা নেই। মনে করুন যে এইরকম কিছু হয়ত ঘটেছিল: ইবদিয়া হয়ত কিছু খাওয়াদাওয়া অথবা মেলামেশা করার জন্য কয়েকজন ভাই-বোনকে ডেকেছিল। সুন্তুখীকে হয়ত ডাকা হয়নি, আর সে মনক্ষুণ্ণ হয়েছিল। পরে হয়ত ইবদিয়াকে আমন্ত্রণ না করে, সে প্রত্যুত্তর দিয়েছিল। তারপর দুজনেই একে অপরের ভুলত্রুটি খুঁজতে শুরু করে; ক্রমে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা প্রায় বন্ধ করে দেয়। এই রকম পরিস্থিতিতে, প্রধান সমস্যা কি খাওয়াদাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ না জানানোর জন্য। না। এই ঘটনাটি সামান্য একটি স্ফুলিঙ্গ মাত্র। এই দুইজন অভিষিক্ত ভগ্নী যখন তাদের আবেগকে বশে রাখতে পারেনি, তখন সেই স্ফুলিঙ্গ একটি দাবানলে পরিণত হয়েছিল। সমস্যা বাড়তেই থাকে যতক্ষণ না একজন প্রেরিত সেখানে হস্তক্ষেপ করেছিলেন।—ফিলিপীয় ৪:২, ৩.
আপনার আবেগ ও আপনার ভাইয়েরা
১২. উপদেশক ৭:৯ পদের উপদেশ ঈশ্বর কেন আমাদের দিয়েছেন?
১২ যখন কাউকে উপেক্ষা করা হয়, আঘাত দেওয়া হয় অথবা তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব দেখানো হয়, তখন আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই কঠিন। যিহোবা তা জানেন, কারণ তিনি প্রথম থেকে মানুষের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক লক্ষ্য করেছেন। ঈশ্বর আমাদের উপদেশ দিয়েছেন: “তোমার আত্মাকে সত্বর বিরক্ত হইতে দিও না, কেননা হীনবুদ্ধি লোকদেরই বক্ষঃ বিরক্তির আশ্রয়।” (উপদেশক ৭:৯) লক্ষ্য করুন যে ঈশ্বর প্রথমে আবেগের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন, কাজের প্রতি নয়। (হিতোপদেশ ১৪:১৭; ১৬:৩২; যাকোব ১:১৯) নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ‘আমার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি আমার কি আরও চেষ্টা করা উচিৎ?’
১৩, ১৪. (ক) আবেগ-প্রকাশকে বশে না রাখতে পারার জন্য, জগতে সাধারণত কী দেখা যায়? (খ) কোন্ কোন্ কারণের জন্য একজন খ্রীষ্টান বিদ্বেষ পোষণ করতে পারেন?
১৩ জগতে অনেক লোক যারা তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে—নিজেদের অথবা কোন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে করা সত্যিকার অথবা অনুমানিত ভুলের জন্য কঠোর এমনকি হিংসাত্মক প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। একবার আবেগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, তার ক্ষতিকারক প্রভাব অনেক দিন থাকে। (তুলনা করুন আদিপুস্তক ৩৪:১-৭, ২৫-২৭; ৪৯:৫-৭; ২ শমূয়েল ২:১৭-২৩; ৩:২৩-৩০; হিতোপদেশ ২৬:২৪-২৬) জাতিগত অথবা সামাজিক পটভূমিকা যাই হোক না কেন, খ্রীষ্টানদের মধ্যে এই ধরনের বিদ্বেষ এবং ঘৃণা পোষণ করা অবশ্যই ভুল এবং তা এড়িয়ে চলা উচিৎ। (লেবীয়পুস্তক ১৯:১৭) বিদ্বেষ প্রকাশ না করাকে কি আপনি আপনার আবেগ সম্বন্ধে আত্মসংযম রাখার অংশ হিসাবে দেখেন?
১৪ ইবদিয়া ও সুন্তুখীর ঘটনার মত, আবেগপ্রবণতাকে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে এখনও সমস্যা দেখা দিতে পারে। একজন ভগ্নীকে কোন বিবাহ ভোজে আমন্ত্রিত না করা হলে তিনি হয়ত তাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে ভাবতে পারেন। অথবা হয়ত সেই ভগ্নীর ছেলেমেয়ে বা ভাইবোনকে ডাকা হয়নি। অথবা কোন ভাই তার সহ-খ্রীষ্টানের কাছ থেকে একটি ব্যবহৃত গাড়ি কিনলে হয়ত শীঘ্রই সেটি খারাপ হয়ে যেতে পারে। কারণ যাই হোক না কেন, এর জন্য তারা আঘাত পেতে পারেন এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়তে পারেন। এরপর কী হতে পারে?
১৫. (ক) খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিদ্বেষ মনোভাব থাকার জন্য কী দুঃখজনক ফল হয়েছে? (খ) বাইবেলের কোন্ উপদেশে বিদ্বেষ মনোভাব রাখার প্রবণতা সম্বন্ধে বলা হয়েছে?
১৫ সেই ক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার আবেগকে যদি বশে রেখে সেই ভাইয়ের সাথে শান্তি স্থাপন না করে নেন্, তাহলে তার মনে বিদ্বেষ গড়ে উঠতে পারে। এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে একজন সাক্ষী মণ্ডলীর একটি বিশেষ বুকস্টাডিতে তাকে না পাঠাতে অনুরোধ করেছেন কারণ সেখানকার কোন খ্রীষ্টানকে অথবা পরিবারকে তিনি “পছন্দ করেন না।” কী দুঃখজনক বিষয়! বাইবেল বলে খ্রীষ্টীয় ব্যক্তিদের একে অপরকে জাগতিক আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়া নিজেদের পরাজয় হওয়ার মত হবে, কিন্তু পূর্বে কেউ আমাদের বা কোন আত্মীয়ের প্রতি অন্যায় করেছে বলে তার সঙ্গ এড়িয়ে চললে, তাও কি পরাজিত হওয়ার মত হবে না? আমাদের আবেগ কি প্রকাশ করে যে আমাদের ভাই বোনেদের সাথে শান্তির সম্পর্ক বজায় রাখার থেকেও রক্তের সম্বন্ধকে আমরা আগে স্থান দিই? আমরা বলি যে আমাদের কোন আত্মিক বোনের জন্য মৃত্যুবরণ করতেও আমরা প্রস্তুত আছি, কিন্তু আমাদের আবেগবশত এখন তার সাথে কথাই বলি না? (যোহন ১৫:১৩ তুলনা করুন।) ঈশ্বর আমাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; . . . যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও।”—রোমীয় ১২:১৭-১৯; ১ করিন্থীয় ৬:৭.
১৬. আবেগ-প্রকাশ সম্বন্ধে অব্রাহাম কোন্ ভাল উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১৬ আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রতি একটি ধাপ হল, বিদ্বেষ মনোভাব বাড়তে না দিয়ে শান্তি স্থাপন করা অথবা অভিযোগের কারণ সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করা। আপনার মনে থাকতে পারে, যে অব্রাহাম এবং লোট, দুজনেরই বিশাল পশুপালের জন্য যথেষ্ট খাদ্য সেই দেশে ছিল না এবং দুজনের কর্মীরা ঝগড়া করতে শুরু করে দিয়েছিল। অব্রাহাম কি আবেগের বশবর্তী হয়ে পড়েছিলেন? অথবা তিনি আত্মসংযম দেখিয়েছিলেন? এই ব্যবসায়িক সমস্যার জন্য তিনি যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার জন্য তাকে প্রশংসা করা উচিৎ: তিনি বলেছিলেন যে তাদের দুজনের আলাদা জমি থাকা উচিৎ। আর তিনি লোটকে প্রথমে বেছে নিতে সুযোগ দিয়েছিলেন। অব্রাহামের মনে যে কোন বিদ্বেষ ছিল না এবং তিনি যে রাগ পুষে রাখেননি, তার প্রমাণস্বরূপ পরে তিনি লোটের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।—আদিপুস্তক ১৩:৫-১২; ১৪:১৩-১৬.
১৭. একবার কিভাবে পৌল এবং বার্ণবা ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরে কী হয়েছিল?
১৭ পৌল এবং বার্ণবাকে কেন্দ্র করে আরেকটি ঘটনা থেকেও আমরা আত্মসংযম শিখতে পারি। বহু বছর ধরে সহকর্মী থাকার পরে, মার্ককে একটি যাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়। “ইহাতে এমন বিতণ্ডা হইল যে, তাঁহারা পরস্পর পৃথক্ হইলেন; বার্ণবা মার্ককে সঙ্গে করিয়া জাহাজে কুপ্রে গমন করিলেন।” (প্রেরিত ১৫:৩৯) এদের মত পরিপক্ক ব্যক্তিরা যে নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি, এই ঘটনাতে আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা আছে। তাদের ক্ষেত্রে যদি হতে পারে, তাহলে আমাদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। অবশ্য তাদের মধ্যে কোন স্থায়ী বিদ্বেষ-মনোভাব অথবা প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা গড়ে ওঠেনি। বাইবেলের বিবরণ থেকে জানা যায় যে এই দুইজন ভাই তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন এবং পরে শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।—কলসীয় ৪:১০; ২ তীমথিয় ৪:১১.
১৮. মনোক্ষুণ্ণ হলে, পরিপক্ক খ্রীষ্টানদের কী করা উচিৎ?
১৮ ঈশ্বরের লোকেরাও যে মনক্ষুন্ন হতে পারে অথবা এমনকি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে, তা আশ্চর্যের কিছু নয়। ইব্রীয়দের দিনে এবং প্রেরিতদের দিনে তা হয়েছিল। আমাদের দিনেও যিহোবার সেবকদের মধ্যে তা দেখা গেছে, কারণ আমরা সকলে অসিদ্ধ। (যাকোব ৩:২) ভাইদের মধ্যে কোন সমস্যার শীঘ্র সমাধান করতে যীশু উৎসাহ দিয়েছিলেন। (মথি ৫:২৩-২৫) কিন্তু আত্মসংযম বজায় রাখায় উন্নতি করে প্রথম থেকেই সমস্যার উত্থাপন হওয়া বন্ধ করা আরও ভাল। আপনার ভাই অথবা বোনের সামান্য কোন কথা বা কাজের জন্য আপনি যদি অপমান বোধ করেন, তাহলে আপনার আবেগকে বশে রেখে সেই সম্বন্ধে ভুলে যাওয়াই ভাল। সেই ব্যক্তির সম্মুখীন হয়ে, যতক্ষণ না সে স্বীকার করছে যে সে ভুল করেছে ততক্ষণ সন্তুষ্ট না হওয়া কি সত্যিই প্রয়োজনীয়? আপনার আবেগকে আপনি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন?
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব!
১৯. আমাদের আবেগ-প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্বন্ধে আলোচনা করা উপযুক্ত কেন?
১৯ আমরা প্রধানত আত্ম-সংযমের একটি দিক সম্বন্ধে বিবেচনা করেছি, আবেগকে বশে রাখা সম্বন্ধে। আর এই বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ আমাদের আবেগ প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে, আমরা আমাদের কথাবার্তা, যৌন আকাঙ্ক্ষা, খাওয়াদাওয়া এবং জীবনের আরও অনেক ক্ষেত্রে যেখানে আত্মসংযম দেখানো প্রয়োজন, সেখানে আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারি। (১ করিন্থীয় ৭:৮, ৯; যাকোব ৩:৫-১০) কিন্তু ধৈর্য হারাবেন না কারণ আপনি আত্মসংযম বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
২০. আমরা কিভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে উন্নতি করা সম্ভব?
২০ যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক। কিভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি? আত্মসংযম আসলে আত্মার একটি ফল। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) সুতরাং যিহোবার কাছ থেকে পবিত্র আত্মা লাভ করতে যোগ্য হয়ে উঠতে এবং আত্মার ফল প্রদর্শন করতে আমরা যত বেশি চেষ্টা করব, আমাদের মধ্যে আত্মসংযম তত বেশি গড়ে উঠবে। কখনও যীশুর আশ্বাসবাণী ভুলে যাবেন না: “স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।”—লূক ১১:১৩; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫.
২১. আপনার আবেগ-প্রকাশ এবং আত্মসংযম সম্বন্ধে ভবিষ্যতে কি করতে আপনি সংকল্প করেছেন?
২১ মনে করবেন না আত্মসংযম রাখা সহজ হবে। আর যারা এমন লোকেদের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে যারা তাদের আবেগকে অবাধে প্রকাশ করে, যারা অল্পেতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে অথবা যারা আত্মসংযম রাখার কোন চেষ্টাই করেনি, তাদের পক্ষে আত্মসংযম বজায় রাখা আরও কঠিন হবে। সেইরকম একজন খ্রীষ্টানের ক্ষেত্রে পূর্ণ মাত্রায় আত্মসংযম বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবুও, তা সবে। (১ করিন্থীয় ৯:২৪-২৭) বর্তমান ব্যবস্থার শেষ যত এগিয়ে আসবে, সমস্যা এবং চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে। অল্প নয়, কিন্তু আমাদের অনেক, অনেক বেশি আত্মসংযম প্রয়োজন! আত্মসংযম সম্বন্ধে নিজেকে পরীক্ষা করুন। (গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪) ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মা আরও বেশি করে প্রার্থনা করুন। তিনি আপনার প্রার্থনা শুনবেন এবং আপনার আত্মসংযম স্থায়ী হতে এবং উপছে পড়তে আপনাকে সাহায্য করবেন।—২ পিতর ১:৫-৮. (w93 8/15)
চিন্তা করার বিষয়
▫ আপনার আবেগ-প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
▫ হামন, ইবদিয় ও সুন্তুখীর উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
▫ যদি কোন অসন্তোষের কারণ ঘটে তাহলে কী করতে আপনার একাগ্রভাবে চেষ্টা করা উচিৎ?
▫ কোন বিদ্বেষ না রাখতে আত্মসংযম কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
[Pictures on page 26]
ফীলিক্স এবং দ্রুষিল্লার সামনে পৌল ধার্মিকতা এবং আত্ম-সংযম সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন