“হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর”
“হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; . . . সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।”—গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪.
১. যিহোবা তাঁর সেবকদের সাথে কিরকম ব্যবহার করেন?
আমরা সকলে চাই যে এমন একজন ব্যক্তির সংসর্গে থাকি যিনি আমাদের বোঝেন, আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করেন, যখন ভুল করি তখন আমাদের সাহায্য করেন, আমাদের ক্ষমতার বেশি কিছু যিনি আশা করেন না। যিহোবা ঈশ্বর তাঁর সেবকদের সাথে এইভাবে ব্যবহার করেন। গীতসংহিতা ১০৩:১৪ পদে বলা হয়েছে: “তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” আর যীশু খ্রীষ্ট, যিনি তাঁর পিতাকে নিঁখুতভাবে প্রতিফলিত করেছেন, তিনি এই আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, [অথবা, “আমার সাথে আমার যোঁয়ালির নিচে এস,” ফুটনোট] এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।”—মথি ১১:২৮-৩০.
২. মানুষের তুলনায় যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য দেখান (ক) যীশু খ্রীষ্ট এবং (খ) খ্রীষ্টের অনুগামীদের সম্বন্ধে।
২ মানুষের তুলনায়, যিহোবা প্রায়ই তাঁর সেবকদের খুবই অন্যভাবে দেখেন। তিনি সমস্ত বিষয় একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লক্ষ্য করেন এবং অন্যেরা যে ব্যাপারে কিছুই জানে না তাও বিবেচনা করেন। যীশু খ্রীষ্ট যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন “তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য” হয়েছিলেন। যারা তাঁকে মশীহ বলে বিশ্বাস করত না, তারা “তাঁহাকে মান্য” করত না। (যিশাইয় ৫৩:৩; লূক ২৩:১৮-২১) তবুও ঈশ্বরের চোখে তিনি “[ঈশ্বরের] প্রিয় পুত্ত্র” ছিলেন, যাঁকে পিতা বলেছেন: “তোমাতেই আমি প্রীত।” (লূক ৩:২২; ১ পিতর ২:৪) যীশুর অনুগামীদের মধ্যে এমন লোকেরা ছিলেন যাদের তুচ্ছ বলে মনে করা হত, কারণ তারা গরীব ছিলেন এবং তাদের বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল। তবুও, যিহোবা এবং তাঁর পুত্রের চোখে তারা ছিলেন ধনবান। (রোমীয় ৮:৩৫-৩৯; প্রকাশিত বাক্য ২:৯) দৃষ্টিভঙ্গিতে এইরকম পার্থক্য কেন ছিল?
৩. (ক) কোন ব্যক্তি সম্বন্ধে প্রায়ই যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কেন মানুষের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক? (খ) আমরা অন্তরে কিরকম ব্যক্তি তা পরীক্ষা করা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
৩ যিরমিয় ১১:২০ পদে উত্তর দেওয়া হয়েছে: “সদাপ্রভু . . . মর্ম্মের ও অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া” থাকেন। আমরা অন্তরে কিরকম তা তিনি দেখেন, এমনকি আমাদের ব্যক্তিত্বের যে দিকগুলি অন্যদের চোখে ধরা পড়ে না, তাও তিনি লক্ষ্য করেন। তাঁর পরীক্ষায়, যে গুণগুলির জন্য তাঁর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, যে সব গুণ আমাদের জন্য স্থায়ী উপকার নিয়ে আসতে পারে, তার উপরে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। তা জানতে পেরে আমরা আশ্বাস পাই; কিন্তু বিষয়টি সম্বন্ধে চিন্তা করাও প্রয়োজন। যিহোবা যেহেতু আমাদের অন্তঃকরণ পরীক্ষা করেন, সুতরাং তাঁর নতুন জগতে বাস করতে হলে আমরা অন্তরে কিরকম ব্যক্তি তা আমাদের জানতে হবে। এই পরীক্ষা করতে তাঁর বাক্য আমাদের সাহায্য করে।—ইব্রীয় ৪:১২, ১৩.
ঈশ্বরের সঙ্কল্প সকল কত মূল্যবান!
৪. (ক) ঈশ্বরের সঙ্কল্প গীতরচকের কাছে মূল্যবান, তা বলতে কী তাকে প্ররোচিত করেছিল? (খ) আমাদের কাছেও কেন তা মূল্যবান হওয়া উচিত?
৪ ঈশ্বরের সেবকদের সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানের প্রসারতা ও গভীরতা সম্বন্ধে এবং তাদের প্রয়োজনীয় যে কোন সাহায্য দেওয়ায় ঈশ্বরের অসাধারণ ক্ষমতা সম্বন্ধে চিন্তা করার পরে, গীতরচক দায়ূদ লিখেছেন: “আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৭ক) মানুষের বুদ্ধি যতই প্রখর বলে মনে হোক না কেন, ঈশ্বরের লিখিত বাক্যে প্রকাশিত তাঁর সঙ্কল্প অথবা চিন্তাধারা অনেক বেশি মহান। (যিশাইয় ৫৫:৮, ৯) ঈশ্বরের চিন্তাধারা জীবনে প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে স্মরণে রাখতে এবং তাঁর পরিচর্যায় উদ্যোগী হয়ে উঠতে আমাদের সাহায্য করে। (ফিলিপীয় ১:৯-১১) তা দেখায় যে ঈশ্বর যেভাবে লক্ষ্য করেন সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবকিছু কিভাবে লক্ষ্য করা যায়। নিজেদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে অকপট হতে, আমরা অন্তরে যেরকম ব্যক্তি তার সম্মুখীন হতে তা আমাদের সাহায্য করে। এইসব করতে আপনি কি ইচ্ছুক?
৫. (ক) “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা” কী বেশি করে রক্ষা করতে ঈশ্বর আমাদের বলেছেন? (খ) বাইবেলে দেওয়া কয়িনের বিবরণ কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে? (গ) যদিও আমরা মোশির নিয়মের অধীনে নই, তবুও যিহোবাকে কী খুশি করে তা জানতে সেটি কিভাবে আমাদের সাহায্য করে?
৫ বাহ্যিক চেহারার প্রতি মানুষে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়, কিন্তু শাস্ত্রে আমাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর।” (হিতোপদেশ ৪:২৩) নীতিবাক্য এবং উদাহরণ, উভয়ের দ্বারাই বাইবেল আমাদের তা করতে সাহায্য করে। সেখানে বলা হয়েছে যে কইন ঈশ্বরের প্রতি আন্তরিকতাশূন্য বলি উৎসর্গ করলেও, তার ভাই হেবলের প্রতি তার হৃদয়ে প্রথমে বিতৃষ্ণা ও পরে ঘৃণা জন্মেছিল। আর বাইবেলে আমাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে তার মত না হতে। (আদিপুস্তক ৪:৩-৫; ১ যোহন ৩:১১, ১২) বাধ্যতা সম্পর্কে মোশির নিয়মের আজ্ঞা সেখানে লেখা আছে। এছাড়াও সেখানে জোর দেওয়া হয়েছে যে নিয়মের সর্বপ্রধান আজ্ঞা ছিল, যারা যিহোবার উপাসনা করে, তাদের তাঁকে সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ এবং শক্তি দিয়ে ভালবাসতে হবে; আর সেখানে বলা হয়েছে যে তার পরেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজ্ঞাটি হল আপন প্রতিবেশীকে নিজেদের মত ভালবাসা।—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৩২, ৩৩; মার্ক ১২:২৮-৩১.
৬. হিতোপদেশ ৩:১ পদ প্রয়োগ করার সময়ে কোন্ প্রশ্নগুলি নিজেকে করা উচিত?
৬ হিতোপদেশ ৩:১ পদে আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে যে শুধুমাত্র বাধ্যতা দেখানোর জন্য নয়, কিন্তু আমাদের অন্তরের অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য আমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করব। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, ‘ঈশ্বরের চাহিদার প্রতি আমার বাধ্যতার ক্ষেত্রে কি তা সত্য?’ যদি আমরা উপলব্ধি করি যে কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের প্রেরণা বা চিন্তাধারা উপযুক্ত নয়—আর আমরা কেউই দাবি করতে পারি না যে আমরা সবসময়ে নির্ভুল কাজ করি—তাহলে আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, ‘উন্নতি করার জন্য আমি কি করছি?’—হিতোপদেশ ২০:৯; ১ যোহন ১:৮.
৭. (ক) মথি ১৫:৩-৯ পদে যীশুর ফরীশীদের তিরষ্কার, আমাদের হৃদয় রক্ষা করতে কিভাবে সাহায্য করতে পারে? (খ) কোন্ পরিস্থিতির জন্য আমাদের মন এবং হৃদয়কে শাসন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে?
৭ যিহুদী ফরীশীরা যখন ঈশ্বরকে সম্মান দেখানোর ভান করে ধূর্তভাবে নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করছিল, যীশু তাদের ভণ্ড বলেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে তাদের উপাসনা নিষ্ফল ছিল। (মথি ১৫:৩-৯) যীশু আরও সাবধান করে দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর, যিনি অন্তর পরীক্ষা করেন, তাঁকে খুশি করতে হলে, ভোগবিলাসিতা পাওয়ার আশায় মনে মনে ক্রমাগত অনৈতিক বিষয় চিন্তা করে, বাহ্যিকভাবে নৈতিক জীবনযাপন করাই যথেষ্ট নয়। হৃদয় এবং মনকে শাসন করার জন্য আমাদের কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। (হিতোপদেশ ২৩:১২; মথি ৫:২৭-২৯) আমাদের জাগতিক কাজের জন্য, শিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের উচ্চাশার জন্য এবং আমাদের আমোদপ্রমোদের উপায় বেছে নেওয়ার জন্য যদি আমরা জগতের অনুকরণকারী হয়ে উঠি অথবা জগতের মান অনুযায়ী নিজেদের গড়ে উঠতে দিই, তাহলেও এইধরনের শাসন প্রয়োজন হবে। আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই যে যারা নিজেদের ঈশ্বরের লোক বলে, কিন্তু যারা জগতের বন্ধু হতে চায়, শিষ্য যাকোব তাদের “ব্যভিচারী” বলেছেন। কেন? কারণ “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।”—যাকোব ৪:৪; ১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯.
৮. ঈশ্বরের মূল্যবান সঙ্কল্পসকল থেকে সম্পূর্ণরূপে উপকৃত হওয়ার জন্য আমাদের কী করার প্রয়োজন আছে?
৮ এই ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য বিষয়ে ঈশ্বরের চিন্তাধারা থেকে সম্পূর্ণরূপে উপকৃত হতে হলে, তা পড়তে এবং শুনতে আমাদের সময় করে নিতে হবে। তাছাড়াও, আমাদের তা অধ্যয়ন করতে হবে, সেই সম্বন্ধে বলতে হবে ও চিন্তা করতে হবে। যারা প্রহরীদুর্গ পড়েন তাদের মধ্যে অনেকে যিহোবার সাক্ষীদের মণ্ডলীর সভায় নিয়মিত আসেন, যেখানে বাইবেল সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়। উপস্থিত থাকার জন্য, তারা অন্যান্য কাজকর্মের মধ্যে থেকে সময় করে নেন। (ইফিষীয় ৫:১৫-১৭) পরিবর্তে তারা যা পান, জাগতিক ধনসম্পদের তুলনায় তা অনেক বেশি মূল্যবান। আপনিও কি তাই মনে করেন না?
৯. যারা খ্রীষ্টীয় সভায় উপস্থিত থাকেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ কেন অন্যদের তুলনায় দ্রুত উন্নতি করেন?
৯ কিন্তু, এই সভাগুলিতে যারা আসেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি আধ্যাত্মিক উন্নতি করেন। সত্যকে তাদের জীবনে তারা আরও ভালভাবে প্রয়োগ করেন। এর কারণ কী? প্রায়ই, একটি কারণ হল ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে তাদের আগ্রহ। তারা উপলব্ধি করেন যে বেঁচে থাকার জন্য আমরা একমাত্র রুটির উপরে নির্ভর করি না; নিয়মিত সাধারণ খাদ্য খাওয়ার মত প্রত্যেকদিন আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করাও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ৪:৪; ইব্রীয় ৫:১৪) সুতরাং, প্রত্যেকদিন অন্তত কিছুটা সময় তারা বাইবেল অথবা বাইবেল-বিষয়ক সাহিত্য পড়তে চেষ্টা করেন। তারা মণ্ডলীর সভাগুলির জন্য প্রস্তুতি করেন, নির্ধারিত অংশটি আগে থেকে পড়ে রাখেন এবং শাস্ত্রগুলি খুলে দেখেন। বিষয়টি পড়া ছাড়াও তারা আরো কিছু করেন; তারা সেই সম্বন্ধে চিন্তা করেন। তাদের অধ্যয়ন করার পদ্ধতি হল, তারা যা শিখছেন তা তাদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারে, সেই সম্পর্কে তাদের গুরুত্বসহকারে চিন্তা করা। তাদের আধ্যাত্মিকতা যত বৃদ্ধি পায়, তারাও গীতরচকের মত অনুভব করেন, যিনি লিখেছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! . . . তোমার সাক্ষ্যকলাপ আশ্চর্য্য।”—গীতসংহিতা ১:১-৩; ১১৯:৯৭, ১২৯.
১০. (ক) ঈশ্বরের বাক্য কত দিন পর্যন্ত অধ্যয়ন করা উপকারজনক হতে পারে? (খ) শাস্ত্র কিভাবে তা দেখায়?
১০ আমরা একবছর, ৫ বছর অথবা ৫০ বছর, যতদিন ধরেই ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি না কেন, তা কখনও ক্লান্তিজনক পুনরাবৃত্তি হয়ে পড়ে না—যদি ঈশ্বরের সঙ্কল্প সকল আমাদের কাছে মূল্যবান হয়। আমরা শাস্ত্র থেকে যতই শিক্ষা নিই না কেন, আরও অনেক কিছু আছে যা আমরা এখনো জানি না। “হে ঈশ্বর, . . . তাহার সমষ্টি কেমন অধিক!” দায়ূদ বলেছিলেন। “গণনা করিলে তাহা বালুকা অপেক্ষা বহুসংখ্যক হয়।” ঈশ্বরের সঙ্কল্প সকলের হিসাব রাখা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। সারা দিন ঈশ্বরের সঙ্কল্প সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে যদি আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, জেগে ওঠার পরও বহু বিষয় বাকি থাকবে। সেইজন্য দায়ূদ লিখেছিলেন: “আমি যখন জাগিয়া উঠি, তখনও তোমার নিকটে থাকি।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৭, ১৮) যিহোবা এবং তার পথ সকল সম্বন্ধে আমরা চিরকাল আরও অনেক নতুন বিষয় জানতে পারব। আমরা কখনো এমন একটা সময়ে এসে পৌঁছাবো না, যখন আমাদের আর কিছু জানতে বাকি থাকবে না।—রোমীয় ১১:৩৩.
যিহোবা যা দ্বেষ করেন, তা ঘৃণা করা
১১. শুধুমাত্র ঈশ্বরের সঙ্কল্পসকল জানা নয়, কিন্তু তাঁর মত মনোভাব রাখাও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১১ শুধুমাত্র বিভিন্ন তথ্যের দ্বারা আমাদের মস্তিষ্ক পূর্ণ করার জন্যই আমরা ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি না। আমাদের হৃদয়ে যখন এই বাক্য পৌঁছায়, তখন আমরাও ঈশ্বরের মত অনুভব করতে শুরু করি। আর তা কত গুরুত্বপূর্ণ! যদি আমরা সেইরকম অনুভূতি গড়ে না তুলি, তাহলে কী হতে পারে? যদিও বাইবেল যা বলছে তা আমরা পুনরাবৃত্তি করতে পারলেও, নিষিদ্ধ বিষয়গুলিকে আমরা আকর্ষণীয় মনে করতে পারি অথবা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে বোঝা হিসাবে দেখতে পারি। ভুল বিষয়কে ঘৃণা করলেও, মানব অসিদ্ধতার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। (রোমীয় ৭:১৫) কিন্তু, যদি আমাদের অন্তরের ব্যক্তিত্বকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে আমরা একাগ্রভাবে চেষ্টা না করি, তাহলে ‘চিত্তের পরীক্ষক’ যিহোবাকে খুশি করার আশা কি আমরা রাখতে পারি?—হিতোপদেশ ১৭:৩.
১২. ঐশ্বরিক প্রেম এবং ঐশ্বরিক ঘৃণা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১২ ঐশ্বরিক ঘৃণা ভুল কাজের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বাধাস্বরূপ, ঠিক যেমন ঐশ্বরিক প্রেমের জন্য সঠিক কাজ করা একটি উপভোগ্য বিষয় হয়ে ওঠে। (১ যোহন ৫:৩) শাস্ত্রে বার বার আমাদের মধ্যে ঘৃণা এবং প্রেম, উভয়ই জাগিয়ে তুলতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। “হে সদাপ্রভু-প্রেমিকগণ, দুষ্টতাকে ঘৃণা কর।” (গীতসংহিতা ৯৭:১০) “যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও।” (রোমীয় ১২:৯) আমরা কি তা করছি?
১৩. (ক) মন্দ লোকেদের ধ্বংস সম্বন্ধে দায়ূদের কোন্ প্রার্থনার সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত? (খ) দায়ূদের প্রার্থনায় যেমন দেখানো হয়েছে, কোন্ মন্দ লোকেদের ধ্বংসের জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন?
১৩ মন্দ লোকেদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে ধার্মিকতাপূর্ণ একটি নতুন জগৎ নিয়ে আসা সম্পর্কে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেছেন। (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১; ২ পিতর ৩:১৩) ধার্মিকতার প্রেমিকেরা সেই সময় দেখবার আকাঙ্ক্ষা রাখে। গীতরচক দায়ূদের সঙ্গে তারা সম্পূর্ণরূপে একমত, যিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, তুমি নিশ্চয়ই দুষ্টকে বধ করিবে; হে রক্তপাতীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও। তাহারা দুষ্ট ভাবে তোমার নাম উচ্চারণ করে; তোমার শত্রুগণ তাহা অনর্থক লয়।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৯, ২০) দায়ূদ নিজে মন্দ লোকেদের হত্যা করতে চাননি। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে যিহোবার কাছ থেকেই শাস্তি আসবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩৫; ইব্রীয় ১০:৩০) এই লোকেরা শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে দায়ূদের কোন ক্ষতি করেনি। তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে ভুল ধারণা ছড়িয়েছে, অনর্থক তাঁর নাম নিয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ২০:৭) কপটভাবে, তারা তাঁর পরিচর্যাকারী বলে নিজেদের জাহির করেছে, কিন্তু তাঁর নামে তারা নিজেদের কার্য সিদ্ধি করেছে। ঈশ্বরের শত্রু হিসাবে যারা নিজেদের প্রতিপন্ন করেছে, তাদের জন্য দায়ূদের কোন প্রেম ছিল না।
১৪. এমন মন্দ লোকেরা কি আছে যাদের সাহায্য করা যায়? যদি যায়, তাহলে কিভাবে?
১৪ কোটি কোটি লোক যিহোবার সম্বন্ধে জানে না। অজ্ঞানতাবশত, তাদের মধ্যে অনেকে ঈশ্বরের বাক্য যাকে মন্দ কাজ বলে, তাই করে যায়। তারা যদি এই পথেই চলতে থাকে তাহলে মহাক্লেশের সময়ে যারা ধ্বংস হবে তারা তাদের মধ্যে থাকবে। কিন্তু, মন্দ ব্যক্তিদের মৃত্যুতে যিহোবা খুশি হন না, আমাদেরও হওয়া উচিত নয়। (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) যতক্ষণ সময় থাকবে, যিহোবার পথ সম্বন্ধে জানতে এবং সেই অনুযায়ী চলতে আমরা এই লোকেদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। কিন্তু কিছু ব্যক্তি যদি যিহোবার বিরুদ্ধে অত্যন্ত ঘৃণা প্রকাশ করে, তাহলে কী হবে?
১৫. (ক) দায়ূদ কাদের প্রকৃতই “শত্রু” বলে মনে করতেন? (খ) আমরা আজ কিভাবে দেখাতে পারি যে যারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তাদের আমরা “ঘৃণা” করি?
১৫ তাদের সম্বন্ধে গীতরচক বলেছেন: “হে সদাপ্রভু, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, আমি কি তাহাদিগকে দ্বেষ করি না? যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদের প্রতি কি বিরক্ত হই না? আমি যার পর নাই দ্বেষে তাহাদিগকে দ্বেষ করি; তাহদিগকে আমারই শত্রু মনে করি।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২১, ২২) যেহেতু তারা যিহোবাকে অত্যন্ত ঘৃণা করত, সেইজন্য দায়ূদও তাদের নিতান্তই ঘৃণা করতেন। যারা যিহোবার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিরা তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কারণ তারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। প্রকৃতপক্ষে ধর্মভ্রষ্টতা হল যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কিছু কিছু ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি দাবি করে যে তারা ঈশ্বরকে জানে এবং তাঁর পরিচর্যা করে, কিন্তু তারা তাঁর বাক্যে দেওয়া শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি উপেক্ষা করে। অন্যেরা দাবি করে যে তারা বাইবেলে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা যিহোবার সংগঠনকে পরিত্যাগ করে এবং সক্রিয়ভাবে সেই সংগঠনের কাজে বাধা দিতে চেষ্টা করে। সত্য জানার পরও তারা যখন ইচ্ছাকৃতভাবে মন্দ পথ বেছে নেয়, মন্দতা যখন তাদের মধ্যে এত গভীরভাবে প্রবেশ করে যে তাদের চরিত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে, তখন খ্রীষ্টানদের উচিত যারা নিজেদের এত প্রবলভাবে মন্দতায় জড়িয়ে ফেলেছে তাদের (বাইবেলে ব্যবহৃত অর্থে) ঘৃণা করা। সত্য খ্রীষ্টানেরা ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যিহোবার মনোভাব রাখেন; ধর্মভ্রষ্ট চিন্তাধারা জানতে তারা আগ্রহী নন। বরং, যারা ঈশ্বরের শত্রু বলে নিজেদের প্রতিপন্ন করেছে তাদের প্রতি তারা অত্যন্ত “বিরক্ত” বোধ করেন, কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার কাজ তারা যিহোবার হাতে ছেড়ে দেন।—ইয়োব ১৩:১৬; রোমীয় ১২:১৯; ২ যোহন ৯, ১০.
ঈশ্বর যখন আমাদের অনুসন্ধান করেন
১৬. (ক) দায়ূদ কেন চেয়েছিলেন যে যিহোবা তাকে অনুসন্ধান করুন? (খ) আমাদের নিজেদের হৃদয় সম্বন্ধে কী আছে যা জানতে ঈশ্বরের কাছে আমাদের সাহায্য চাওয়া উচিত?
১৬ দায়ূদ কোনভাবেই মন্দ ব্যক্তিদের মত হতে চাননি। অনেকে নিজেদের অন্তরের ব্যক্তিত্বকে লুকিয়ে রাখতে চায়, কিন্তু দায়ূদ নম্রভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার দুশ্চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে কষ্টদায়ক পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও।” (গীতসংহিতা ১৩৯:২৩, ২৪, NW) অন্তঃকরণ অথবা হৃদয় বলতে দায়ূদ হৃদ্পিণ্ডকে বুঝাননি। এই অভিব্যক্তিটির রূপক অর্থ অনুযায়ী, তিনি প্রকৃতই অন্তরে কেমন ছিলেন, তার অন্তরাত্মার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আমাদেরও উচিত ঈশ্বরকে আমাদের অন্তঃকরণ পরীক্ষা করতে দেওয়া যাতে তিনি বুঝতে পারেন আমাদের মধ্যে কোন অন্যায় আকাঙ্ক্ষা, প্রবৃত্তি, অনুভূতি, উদ্দেশ্য, চিন্তা অথবা অভিসন্ধি আছে কি না। (গীতসংহিতা ২৬:২২) যিহোবা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন: “হে বৎস, তোমার হৃদয় আমাকে দেও, তোমার চক্ষু আমার পথসমূহে প্রীত হউক।”—হিতোপদেশ ২৩:২৬.
১৭. (ক) দুশ্চিন্তা চেপে রাখার বদলে আমাদের কী করা উচিত? (খ) আমাদের হৃদয়ে যদি মন্দ ইচ্ছা থাকে তাহলে কি আশ্চর্য হওয়া উচিত, আর সেই সম্বন্ধে আমাদের কী করা প্রয়োজন?
১৭ অন্যায় ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য অথবা কোন অন্যায় কাজের জন্য আমাদের মনে যদি কষ্টকর দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই চাই যে যিহোবা আমাদের সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেন। “কষ্টদায়ক পথ” না লিখে, মোফ্যাট্ তার অনুবাদে ব্যবহার করেছেন “অন্যায় পথ”; দ্যা নিউ ইংলিশ্ বাইবেল বলেছে: “যে পথ তোমাকে [অর্থাৎ ঈশ্বরকে] দুঃখ দেয়।” আমরা নিজেরা হয়ত নিজেদের দুশ্চিন্তা নাও বুঝতে পারি এবং সেইজন্য আমাদের সমস্যা কিভাবে ঈশ্বরকে জানাতে হবে তা হয়ত ভেবে পাই না, কিন্তু তিনি আমাদের পরিস্থিতি বোঝেন। (রোমীয় ৮:২৬, ২৭) আমাদের হৃদয়ে মন্দ ইচ্ছা থাকলে আমাদের আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়, কিন্তু তাই বলে আমরা অজুহাত দেখাতে চাই না। (আদিপুস্তক ৮:২১) সেগুলিকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের সাহায্য চাওয়া উচিত। যদি আমরা প্রকৃতই যিহোবাকে এবং তাঁর পথসকল ভালবাসি, তাহলে এই সাহায্যের জন্য আমরা তাঁর স্মরণাপন্ন হতে পারি কারণ আমাদের বিশ্বাস আছে যে “ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্, এবং সকলই জানেন।”—১ যোহন ৩:১৯-২১.
১৮. (ক) যিহোবা কিভাবে আমাদের সনাতন পথে গমন করান? (খ) আমরা যদি যিহোবার নির্দেশ মেনে চলি, তাহলে কী প্রশংসা লাভ করার আশা রাখতে পারি?
১৮ গীতরচক যেমন প্রার্থনা করেছেন যে যিহোবা যেন তাকে সনাতন পথে গমন করান, বাস্তবিকই যিহোবা তাঁর নম্র, বাধ্য সেবকদের সেই পথে নিয়ে যান। অন্যায় না করার জন্য অকালে ধ্বংস না হয়ে যে সুদীর্ঘ জীবন পাওয়া যায় শুধুমাত্র তাই নয়, কিন্তু অনন্ত জীবনের পথেও তিনি তাদের পরিচালিত করেন। পাপের প্রায়শ্চিত্তমূলক যীশুর বলিদানের প্রয়োজন সম্বন্ধে তিনি আমাদের অবগত করেন। তাঁর বাক্য এবং সংগঠনের মাধ্যমে তিনি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন যাতে আমরা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে পারি। তাঁর সাহায্যের প্রতি সাড়া দেওয়ার গুরুত্বের প্রতি তিনি জোর দেন, যাতে বাইরে আমরা যেরকম ব্যক্তি বলে নিজেদের দেখাতে চাই, অন্তরে আমরা সতিই সেইরকম ব্যক্তি হতে পারি। (গীতসংহিতা ৮৬:১১) আর একমাত্র সত্য ঈশ্বরের সেবায় ব্যয় করার জন্য অটুট স্বাস্থ্য নিয়ে একটি ধার্মিক নতুন জগতে থাকার আশা দিয়েও তিনি আমাদের উৎসাহ দেন। আমরা যদি তাঁর নির্দেশ বিশ্বস্তভাবে মেনে চলতে থাকি তাহলে বস্তুতপক্ষে তিনি আমাদের সেই কথা বলবেন যা তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন: “তোমাতেই আমি প্রীত।”—লূক ৩:২২; যোহন ৬:২৭; যাকোব ১:১২. (w93 10/1)
আপনার মন্তব্য কী?
▫ যিহোবার সেবকদের সম্বন্ধে প্রায়ই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কেন মানুষের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক?
▫ আমাদের হৃদয় পরীক্ষা করার সময়ে ঈশ্বর কী লক্ষ্য করেন, তা বুঝতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
▫ কোন্ ধরনের অধ্যয়ন প্রকৃত তথ্য জানতে এবং আমাদের হৃদয় রক্ষা করতে আমাদের সাহায্য করে?
▫ শুধুমাত্র ঈশ্বর কী বলেছেন তা নয়, তার মনোভাব জানাও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
▫ ব্যক্তিগতভাবে কেন আমাদের প্রার্থনা করা উচিত: “হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও”?
[Pictures on page 14]
অধ্যয়ন করার সময়ে, ঈশ্বরের সঙ্কল্প এবং অনুভূতি আপন করে নিতে চেষ্টা করুন
[১৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিহোবার সঙ্কল্প সকল “বালুকা অপেক্ষা বহুসংখ্যক”
[সজন্যে]
Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.