ভ্রাতৃস্নেহের চাবিকাঠি খুঁজে পাওয়া
“তোমরা . . . ভক্তিতে ভ্রাতৃস্নেহ . . . যোগাও।”—২ পিতর ১:৫-৭.
১. যিহোবার লোকদের সমাবেশ এত আনন্দের উপলক্ষ হওয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি কারণ কী?
একবার একজন চিকিৎসক, যিনি যিহোবার সাক্ষী ছিলেন না, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়ড থেকে তার মেয়ের স্নাতক উপাধি গ্রহণ করার অনুষ্ঠানে যোগ দান করেন যেখানে তার মেয়ে মিশনারী প্রশিক্ষণ পায়। আনন্দিত এই দলটিকে দেখে তিনি এতই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি এই অভিমত পোষণ করেন যে এই লোকেদের মধ্যে খুব কমই অসুস্থতা আছে। সেই দলটি কেন এত আনন্দিত? বাস্তবপক্ষে, মণ্ডলীতে, সীমা অধিবেশনে ও জেলা সম্মেলনে যিহোবার লোকেদের সমস্ত সমাবেশকেই কোন্ বিষয়টি একটি আনন্দের উপলক্ষে পরিণত করে? পরস্পরের প্রতি তারা যে ভ্রাতৃস্নেহ দেখায়, সেটি কি নয়? কোন সন্দেহই নেই যে, ভ্রাতৃস্নেহ হল একটি কারণ যার জন্য বলা হয়, অন্য কোন ধর্মীয় দল ধর্মের মধ্য থেকে এত সুখ, আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি পায় না যা যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ পায়।
২, ৩. কোন্ দুটি গ্রীক শব্দ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে?
২ প্রথম পিতর ১:২২ (NW) পদে প্রেরিত পিতরের বাক্য অনুসারে আমরা সেই প্রকার ভ্রাতৃস্নেহ দেখার আশা করতে পারি: “তোমরা সত্যের আজ্ঞাবহতায় অকল্পিত ভ্রাতৃস্নেহের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণকে বিশুদ্ধ করিয়াছ বলিয়া অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর।” “ভ্রাতৃস্নেহ” হিসাবে যে গ্রীক শব্দটিকে এখানে অনুবাদ করা হয়েছে, তার মূল উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল ফি·লিʹয়া (স্নেহ)। এর অর্থ আ·গাʹপে শব্দের অর্থের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত, যে শব্দটিকে সাধারণত অনুবাদ করা হয় “প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) যদিও ভ্রাতৃস্নেহ এবং প্রেম প্রায়ই পারস্পরিক প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয় এদের বিশেষ গুণাবলি আছে। আমরা এই দুটি একে অপরের সাথে গুলিয়ে ফেলব না, যেমন বহু বাইবেল অনুবাদকেরা করে থাকে। এই প্রবন্ধে এবং এর পরবর্তী প্রবন্ধেও আমরা এই দুটি শব্দ নিয়ে আলোচনা করব।
৩ এই দুটি গ্রীক শব্দের মধ্যে পার্থক্য সম্বন্ধে, এক পণ্ডিত উল্লেখ করেন যে ফি·লিʹয়া হল “নিশ্চয়ই আন্তরিকতা, ঘনিষ্ঠতা ও স্নেহের শব্দ।” অপরপক্ষে, আ·গাʹপে বেশি করে মনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই, যদিও আমাদের শত্রুদের প্রেম (আ·গাʹপে) করতে বলা হয়েছে কিন্তু তাদের প্রতি আমাদের স্নেহ থাকবে না। কেন? কারণ “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) পার্থক্য যে আছে, প্রেরিত পিতরের শব্দগুলি তা আরও দেখায়: “তোমার . . . ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও।”—২ পিতর ১:৫-৭; তুলনা করুন যোহন ২১:১৫-১৭.a
খুবই বিশেষপ্রকৃতির ভ্রাতৃস্নেহের উদাহরণগুলি
৪. কেন যীশু এবং যোহনের পরস্পরের প্রতি বিশেষ স্নেহ ছিল?
৪ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের খুবই বিশেষপ্রকৃতির ভ্রাতৃস্নেহের বেশ কিছু উদাহরণ দেয়। এই বিশেষ স্নেহ কোন খেয়াল বশত দেখান হয় না কিন্তু উল্লেখযোগ্য গুণগুলির প্রতি উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে দেখান হয়। কোন সন্দেহ নেই যে সর্ব পরিচিত উদাহরণ হল প্রেরিত যোহনের প্রতি যীশু খ্রীষ্টের স্নেহ। প্রশ্নাতীতরূপে, যীশুর সকল বিশ্বস্ত প্রেরিতের প্রতি তাঁর স্নেহ ছিল এবং সেটি উত্তম কারণের জন্য। (লূক ২২:২৮) এটি তিনি একটি উপায়ে দেখান তাদের পা ধুয়ে দিয়ে, ফলে তিনি তাদের নম্রতার শিক্ষা দেন। (যোহন ১৩:৩-১৬) কিন্তু যীশুর যোহনের প্রতি বিশেষ স্নেহ ছিল, যা যোহন বার বার উল্লেখ করেন। (যোহন ১৩:২৩; ১৯:২৬; ২০:২) তাঁর প্রেরিত ও শিষ্যদের প্রতি স্নেহ দেখাতে যীশুর কোন কারণ থাকলেও, যোহনের যীশুর প্রতি গভীর উপলব্ধিবোধ থাকার জন্যই হয়ত তিনি যীশুকে তার প্রতি বিশেষ স্নেহ দেখাবার কারণ দেন। আমরা তা যোহনের লেখা সুসমাচার ও পত্রগুলি, উভয় থেকেই দেখতে পাই। সেই লেখাগুলিতে তিনি কতবারই না প্রেম সম্বন্ধে উল্লেখ করেন! যীশুর আধ্যাত্মিক গুণাবলির প্রতি যোহনের বেশি উপলব্ধি দেখা যায় যা তিনি যোহন ১ এবং ১৩ থেকে ১৭ অধ্যায় লিখেছেন তার থেকে, তাছাড়া যীশুর মানব অস্তিত্বের পূর্বাবস্থা সম্বন্ধে তার বারংবার উল্লেখ করা থেকে।—যোহন ১:১-৩; ৩:১৩; ৬:৩৮, ৪২, ৫৮; ১৭:৫; ১৮:৩৭.
৫. পৌল ও তীমথিয়ের পরস্পরের প্রতি বিশেষ স্নেহ সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে?
৫ অনুরূপে, প্রেরিত পৌল ও তার খ্রীষ্টীয় সাথী তীমথিয়ের পরস্পরের প্রতি যে বিশেষ ভ্রাতৃস্নেহ ছিল তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না, যা নিশ্চয়ই একে অপরের গুণাবলিকে উপলব্ধি করার উপর ভিত্তি করেই ছিল। পৌলের লেখাগুলিতে তীমথিয় সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য আছে, যেমন: “আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে, তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। . . . কিন্তু তোমরা ইহাঁর পক্ষে এই প্রমাণ জ্ঞাত আছ যে, পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।” (ফিলিপীয় ২:২০-২২) তীমথিয়ের প্রতি তার পত্রে বহু ব্যক্তিগত উদ্ধৃতি, তার প্রতি পৌলের আন্তরিক স্নেহ প্রদর্শন করে। উদাহরণস্বরূপ, লক্ষ্য করুন ১ তীমথিয় ৬:২০ পদ: “হে তীমথিয়, তোমার কাছে যাহা গচ্ছিত হইয়াছে, তাহা সাবধানে রাখ।” (আরও দেখুন ১ তীমথিয় ৪:১২-১৬; ৫:২৩; ২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৪, ১৫.) বিশেষকরে, তীমথিয়ের প্রতি পৌলের পত্রের সাথে তীতের প্রতি লেখা পত্রের তুলনা করলে আমরা এই যুবকের প্রতি পৌলের বেশি ভালবাসা লক্ষ্য করি। তাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে তীমথিয়ও নিশ্চয় একই মনোভাব রাখতেন, ২ তীমথিয় ১:৩, ৪ পদে পৌলের বাক্য থেকে যা লক্ষ্য করা যায়: “আমার বিনতিতে সতত তোমাকে স্মরণ করিতেছি; তোমার অশ্রুপাত স্মরণ করিয়া রাত দিন তোমাকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি; যেন আনন্দে পূর্ণ হই।”
৬, ৭. দায়ূদ এবং যোনাথনের একে অপরের প্রতি কিরূপ অনুভূতি ছিল এবং কেন?
৬ ইব্রীয় শাস্ত্রও উত্তম উদাহরণ দিয়ে থাকে, যেমন দায়ূদ ও যোনাথনের। আমরা পড়ি যে দায়ূদ গলিয়াৎকে বধ করার পর, “যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন।” (১ শমূয়েল ১৮:১) যিহোবার নামের প্রতি দায়ূদের উদ্দীপনা ও দৈত্য গলিয়াতের সাথে দেখা করার সাহসের উদাহরণই নিশ্চয় দায়ূদের প্রতি যোনাথনের বিশেষ স্নেহ জাগায়।
৭ দায়ূদের প্রতি যোনাথনের এমন স্নেহ ছিল যে তিনি রাজা শৌলের কাছ থেকে দায়ূদকে বাঁচাবার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেন। ইস্রায়েলের পরবর্তী রাজা হিসাবে দায়ূদকে যিহোবার নির্বাচন কোনরূপে যোনাথনকে ক্ষুব্ধ করেনি। (১ শমূয়েল ২৩:১৭) দায়ূদেরও যোনাথনের প্রতি সেইরকমই স্নেহ ছিল, যা যোনাথনের মৃত্যুতে শোক করার সময় তিনি যা বলেন তার থেকে বোঝা যায়: “হা, ভ্রাতা যোনাথন! তোমার জন্য আমি ব্যাকুল। তুমি আমার কাছে অতিশয় মনোহর ছিলে; তোমার ভালবাসা আমার পক্ষে চমৎকার ছিল, রমণীগণের ভালবাসা অপেক্ষাও অধিক ছিল!” সত্যই, তাদের সম্পর্কের সঙ্গে গভীর উপলব্ধি জড়িত ছিল।—২ শমূয়েল ১:২৬.
৮. কোন্ দুইজন নারী পরস্পরের প্রতি বিশেষ স্নেহ প্রদর্শন করেন এবং কেন?
৮ ইব্রীয় শাস্ত্রে বিশেষ স্নেহের সম্বন্ধে দুজন নারী, নয়মী ও তার বিধবা পুত্রবধূ রূৎ, সম্পর্কেও এক উত্তম উদাহরণ আমাদের আছে। নয়মীর প্রতি রূতের কথাগুলি স্মরণ করুন: “তোমাকে ত্যাগ করিয়া যাইতে, তোমার পশ্চাদ্গমন হইতে ফিরিয়া যাইতে, আমাকে অনুরোধ করিও না; তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব; এবং তুমি যেখানে থাকিবে, আমিও তথায় থাকিব; তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর।” (রূৎ ১:১৬) আমরা কি এই পরিসমাপ্তিতে আসতে পারি না যে নয়মীর আচরণ ও যিহোবার সম্বন্ধের তার আলোচনাই রূৎকে উপলব্ধিপূর্ণ সাড়া দিতে উদ্বুদ্ধ করে?—তুলনা করুন লূক ৬:৪০.
প্রেরিত পৌলের উদাহরণ
৯. ভ্রাতৃস্নেহে পৌল উদাহরণযোগ্য ছিলেন, কী তা প্রদর্শন করে?
৯ যেমন আমরা দেখেছি যে তীমথিয়ের প্রতি প্রেরিত পৌলের বিশেষ ভ্রাতৃস্নেহ ছিল। কিন্তু তিনি সমস্ত ভাইদের প্রতিও আন্তরিক ভ্রাতৃস্নেহ দেখাতে এক অপূর্ব উদাহরণ স্থাপন করেন। ইফিষের প্রাচীনদের তিনি বলেন যে “[তিনি] তিন বৎসর কাল রাত দিন প্রত্যেক জনকে অশ্রুপাতের সহিত চেতনা দিতে ক্ষান্ত” হন নাই। আন্তরিক ভ্রাতৃস্নেহ? কোন সন্দেহ নেই! আর তারাও পৌল সম্পর্কে একইরকম বোধ করেছিল। তারা যখন শুনল যে পৌলকে তারা আর দেখতে পাবে না, “তাহাতে সকলে বিস্তর রোদন করিলেন, এবং পৌলের গলা ধরিয়া তাঁহাকে চুম্বন করিতে লাগিলেন।” (প্রেরিত ২০:৩১, ৩৭) উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে ভ্রাতৃস্নেহ? হ্যাঁ, তার ভ্রাতৃস্নেহ ২ করিন্থীয় ৬:১১-১৩ পদে তার বাক্যগুলির মাধ্যমেও দেখা যায়: “হে করিন্থীয়েরা, তোমাদের প্রতি আমাদের মুখ খোলা রহিয়াছে, আমাদের হৃদয় প্রশস্ত রহিয়াছে। তোমরা আমাদিগেতে সঙ্কুচিত নহ; কিন্তু আপন আপন অন্তরে সঙ্কুচিত রহিয়াছ। আমি তোমাদিগকে বৎসের ন্যায় জানিয়া বলিতেছি, অনুরূপ প্রতিদানের জন্য তোমরাও প্রশস্ত হও।”
১০. ভ্রাতৃস্নেহে কোন্ অভাব থাকার জন্য ২ করিন্থীয় ১১ অধ্যায়ে পৌল তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষার কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন?
১০ স্পষ্টরূপেই, করিন্থীয়দের মধ্যে অনেকেরই প্রেরিত পৌলের প্রতি উপলব্ধিমূলক ভ্রাতৃস্নেহের অভাব ছিল। তাই, তাদের মধ্যে কিছু লোক অভিযোগ করে: “তাঁহার পত্র সকল ভারযুক্ত ও তেজস্বী বটে, কিন্তু সাক্ষাতে তাঁহার শরীর দুর্ব্বল এবং তাঁহার বাক্য হেয়।” (২ করিন্থীয় ১০:১০) সেই কারণে পৌল তাদের “প্রেরিত চূড়ামণিদের” সম্পর্কে উল্লেখ করেন এবং নিজের পরীক্ষা সহ্য করা সম্পর্কেও বলতে বাধ্য হন যা ২ করিন্থীয় ১১:৫, ২২-৩৩ পদে লেখা আছে।
১১. থিষলনীকীয়ের খ্রীষ্টানদের প্রতি পৌলের স্নেহের সম্পর্কে কী প্রমাণ আছে?
১১ পৌল যাদের প্রতি পরিচর্যা করেছিলেন তাদের প্রতি তার আন্তরিক স্নেহ বিশেষ করে দেখা যায় তার বাক্য ১ থিষলনীকীয় ২:৮ পদে: “সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে।” আসলে, এই নতুন ভাইদের প্রতি তার এত স্নেহ ছিল যে তাদের কল্যাণের কথা শোনার জন্য তিনি আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না—তারা কিভাবে তাড়না সহ্য করছে তা জানার জন্য এতই উদ্গ্রীব ছিলেন যে—তিনি তীমথিয়কে পাঠান, যিনি উত্তম সংবাদ আনেন যা পৌলকে খুব পরিতৃপ্ত করে। (১ থিষলনীকীয় ৩:১, ২, ৬, ৭) শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (Insight on the Scriptures) উপযুক্তরূপেই লক্ষ্য করে: “পৌল, ও যাদের তিনি পরিচর্যা করেছিলেন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃস্নেহের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।”
উপলব্ধি—ভ্রাতৃস্নেহের চাবিকাঠি
১২. আমাদের ভাইদের প্রতি আন্তরিক স্নেহ দেখানোর কী কারণ আছে?
১২ নিঃসন্দেহে, ভ্রাতৃস্নেহের চাবিকাঠি হল উপলব্ধি। যিহোবার সকল উৎসর্গীকৃত দাসেদের কি কিছু গুণাবলি নেই যা আমরা উপলব্ধি করি, যা আমাদের স্নেহ উদ্রেক করায়, তাদের ভালবাসতে পরিচালিত করে? আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করছে। আমাদের মধ্যে সকলেই আমাদের তিনটি সাধারণ শত্রুর প্রতি সাহসের সাথে যুদ্ধ করছে: শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা, শয়তানের নিয়ন্ত্রনাধীন মন্দ জগৎ এবং উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপপূর্ণ দেহের স্বার্থপর প্রবণতা। আমরা কি সবসময় মনে করব না যে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের ভাইয়েরা বেশ ভালই করছেন? পৃথিবীর মধ্যে সকলেই হয় যিহোবার পক্ষে বা শয়তানের পক্ষে। আমাদের উৎসর্গীকৃত ভাই-বোনেরা যিহোবার পক্ষে, হ্যাঁ, আমাদের পক্ষে তাই আমাদের ভ্রাতৃস্নেহের উপযুক্ত।
১৩. প্রাচীনদের প্রতি আমাদের আন্তরিক স্নেহ থাকা উচিত কেন?
১৩ আমাদের প্রাচীনদের উপলব্ধি করা সম্বন্ধেই বা কি? মণ্ডলীর আগ্রহের জন্য তারা যেরূপে পরিশ্রম করে তার জন্য কি আমাদের তাদের প্রতি বিশেষ ভালবাসা থাকবে না? আমাদের সকলের মতই তাদেরও নিজেদের ও পরিবারের জন্য সংস্থান করতে হয়। আমাদের মত তাদেরও ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে, সভায় যোগ দিতে ও ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যেতে দায়িত্ব রয়েছে। এছাড়াও, তাদের দায়িত্ব আছে সভার কার্যক্রমের অংশগুলি প্রস্তুত করার, জনসাধারণে ভাষণ দেওয়ার ও মণ্ডলীতে সমস্যা দেখা দিলে তা দেখাশোনা করার, যা অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা বিচারের শুনানিও হতে পারে। সত্যই, আমরা “এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর” করতে চাই।—ফিলিপীয় ২:২৯.
ভ্রাতৃস্নেহ প্রকাশ করা
১৪. ভ্রাতৃস্নেহ দেখাতে কোন্ শাস্ত্রগুলি আমাদের আজ্ঞা দেয়?
১৪ যিহোবাকে সন্তুষ্ট করতে হলে যেমন যীশু খ্রীষ্ট ও পৌল দেখিয়েছিলেন আমাদেরও সেই প্রকার সহবিশ্বাসীদের প্রতি আন্তরিকতামূলক ভ্রাতৃস্নেহ দেখান উচিত। আমরা পড়ি: “[ভ্রাতৃস্নেহে] পরস্পর কোমলস্নেহপরায়ণ হও।” (রোমীয় ১২:১০, কিংডম ইন্টারলিনীয়ার) “[ভ্রাতৃস্নেহ] সম্বন্ধে তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক, কারণ তোমরা আপনারা পরস্পর প্রেম করিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইয়াছ।” (১ থিষলনীকীয় ৪:৯, ইন্টার.) “তোমাদের [ভ্রাতৃস্নেহ] ক্রমাগত থেকেই যাক।” (ইব্রীয় ১৩:১, ইন্টার.) আমাদের স্বর্গীয় পিতা প্রকৃতই খুশি হন যখন আমরা তাঁর পার্থিব সন্তানদের প্রতি ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শন করি।
১৫. ভ্রাতৃস্নেহ কী কী উপায়ে প্রদর্শন করা যায়?
১৫ প্রেরিতদের কালে খ্রীষ্টানেরা একে অপরকে “পবিত্র চুম্বনে” অথবা “প্রেমচুম্বনে” সম্ভাষণ করতে অভ্যস্থ ছিল। (রোমীয় ১৬:১৬; ১ পিতর ৫:১৪) সত্যই ভ্রাতৃস্নেহের এক অভিব্যক্তি! বর্তমানে, পৃথিবীর বেশির ভাগ জায়গায় সব থেকে উপযুক্ত অভিব্যক্তি হতে পারে আন্তরিকতার সাথে প্রীতিপূর্ণ হাসি এবং করমর্দন। ল্যাটিন অঞ্চলে, যেমন মেক্সিকোতে, সম্ভাষণের রীতি হল পরস্পর আলিঙ্গন করা, যা সত্যই স্নেহের প্রকাশ। এই সকল ভাইদের পক্ষে আন্তরিকতার সাথে স্নেহের প্রকাশ হয়ত সেই সকল দেশে প্রচুর বৃদ্ধি লাভের একটি কারণ হতে পারে।
১৬. কিংডম হলে ভ্রাতৃস্নেহ দেখাতে আমাদের কোন্ সুযোগ আছে?
১৬ যখন আমরা কিংডম হলে আসি তখন কি আমরা ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শন করতে বিশেষ প্রচেষ্টা করি? এটি আমাদের উৎসাহপূর্ণ কথা বলতে পরিচালিত করবে, বিশেষভাবে তাদের প্রতি যারা হয়ত বিষণ্ণ বোধ করছেন। আমাদের বলা হয়েছে “বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য” বলতে। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪, NW) সেটি হল একটি উপায় যার মাধ্যমে আমাদের ভ্রাতৃস্নেহের আন্তরিকতা প্রকাশ করা যায়। আর একটি উত্তম উপায় হল জনসাধারণের ভাষণ উত্তম হলে, কার্যক্রমের অংশটি উত্তমরূপে পরিচালনা করলে, ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে ছাত্র বক্তা উত্তম প্রচেষ্টা ইত্যাদি করলে, উপলব্ধি প্রকাশ করা।
১৭. একজন প্রাচীন কিভাবে মণ্ডলীর স্নেহ লাভ করেন?
১৭ সভার পরে যদি খুব বেশি দেরি না হয়ে যায় তাহলে আমাদের বাড়িতে বিভিন্ন জনকে খাবারের জন্য বা হয়ত জলখাবারের নিমন্ত্রণ করা সম্বন্ধেও বা কি? লূক ১৪:১২-১৪ পদের যীশুর পরামর্শটিকে পরিচালনা করতে দেব না? একবার এক প্রাক্তন মিশনারী এক মণ্ডলীর পরিচালক অধ্যক্ষরূপে নিয়োজিত হন যেখানে অন্যান্য সকলেই ভিন্ন জাতির ছিল। তিনি সেখানে ভ্রাতৃস্নেহের অভাব লক্ষ্য করেন তাই তিনি এই পরিস্থিতির এক সুরাহা খুঁজে বার করলেন। কিভাবে? প্রতি রবিবার তিনি বিভিন্ন পরিবারকে নিমন্ত্রণ জানালেন। বছরের শেষে সকলেই তার প্রতি আন্তরিক ভ্রাতৃস্নেহ দেখাতে আরম্ভ করে।
১৮. আমাদের অসুস্থ ভাই ও বোনদের প্রতি আমরা কিভাবে ভ্রাতৃস্নেহ দেখাতে পারি?
১৮ যখন এক ভাই বা বোন ঘরে বা হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় থাকে তখন ভ্রাতৃস্নেহ আমাদের পরিচালিত করবে তাকে জানাতে যে আমরা তার যত্ন করি। অথবা যারা নার্সিং হোমে থাকে তাদের সম্পর্কেই বা কি? তাকে দেখতে যাওয়া, ফোন করা বা আন্তরিক অনুভূতি প্রকাশ করে একটি কার্ড পাঠান না কেন?
১৯, ২০. আমাদের ভ্রাতৃস্নেহ প্রসারিত হয়েছে তা আমরা কিভাবে দেখাতে পারি?
১৯ সেই প্রকার ভ্রাতৃস্নেহ প্রকাশ করার সময় আমরা আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারি, ‘আমার ভ্রাতৃস্নেহ কি পক্ষপাতপূর্ণ? বর্ণ, শিক্ষা বা পার্থিব সম্পত্তির মত বিষয়গুলি কি আমার ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শনকে প্রভাবিত করে? ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শনে আমাকে কি প্রসারিত হতে হবে যেমন প্রেরিত পৌল করিন্থের খ্রীষ্টানদের হতে উৎসাহ দেন?’ ভ্রাতৃস্নেহ আমাদের ভাইদের সঠিকরূপে দেখতে, তাদের ভাল গুণগুলি উপলব্ধি করতে আমাদের সাহায্য করবে। ভ্রাতৃস্নেহ আমাদের ভাইদের ঈর্ষা করতে নয়, কিন্তু তাদের উন্নতি দেখে আনন্দিত হতে সাহায্য করবে।
২০ আমাদের ভাইদের পরিচর্যায় সাহায্য করতেও ভ্রাতৃস্নেহ আমাদের সতর্ক করবে। এটি সেইরকম হওয়া উচিত যেমন আমাদের একটি গান (গান সংখ্যা ৯২) বলে:
“দুর্বল সকলকে দয়াপূর্ণ সাহায্য কর,
যাতে তারাও সাহসের সাথে বলতে পারে।
ছোটদের অবহেলা কখনও করবে না,
তাদের দৃঢ় হতে ও ভয় দূর করতে সাহায্য কর।”
২১. যখন আমরা ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শন করি তখন আমরা কিরূপ প্রতিবেদন আশা করতে পারি?
২১ তাই আসুন আমরা ভুলে না যাই যে ভ্রাতৃস্নেহ প্রকাশ করতে, পর্বতে দত্ত উপদেশে যীশুর নীতিটি কার্যকারী হয়: “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।” (লূক ৬:৩৮) যখন আমরা ভ্রাতৃস্নেহ দেখাই তখন আমরা নিজেরাই উপকৃত হই, আমাদের মতই যারা যিহোবার দাস তাদের গণ্য করি। যারা ভ্রাতৃস্নেহ প্রকাশ করতে খুশি হয় তারা প্রকৃতই আনন্দিত হয়!
[পাদটীকাগুলো]
a পরবর্তী প্রবন্ধ দেখুন: “প্রেম (আগাপে)—কী এবং কী নয়।”
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
▫ কোন্ গ্রীক শব্দগুলি আমাদের অনুভূতির প্রতি ব্যবহার করা হয় এবং কিভাবে তারা স্বতন্ত্র?
▫ ভ্রাতৃস্নেহের চাবিকাঠি কী?
▫ বিশেষ ভ্রাতৃস্নেহের কোন্ শাস্ত্রীয় উদাহরণ আমাদের আছে?
▫ আমাদের ভাইদের ও প্রাচীনদের প্রতি আমাদের কেন আন্তরিক স্নেহ থাকা দরকার?
[Pictures on page 21]
প্রেরিত পিতর তার ভাইদের তাদের বিশ্বাসে ও অন্যান্য খ্রীষ্টীয় গুণাবলিতে ভ্রাতৃস্নেহ যোগাতে বলেছেন