প্রেম (আগাপে)—কী এবং কী নয়
“আপনাদের . . . ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও।”—২ পিতর ১:৫, ৭.
১. (ক) বাইবেল কোন্ গুণাবলির উপরে গুরুত্ব দেয়? (খ) কোন্ চারটি গ্রীক শব্দকে প্রায়ই “প্রেম” হিসাবে অনুবাদ করা হয় এবং ১ যোহন ৪:৮ পদে কোন্ শব্দটির কথা বলা হয়েছে?
ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেলে যদি কোন একটি গুণ অথবা অনুভূতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা হল প্রেম অথবা ভালবাসা। খ্রীষ্টীয় শাস্ত্রের আদি ভাষা গ্রীকে, চারটি কথাকে প্রায়ই “প্রেম” হিসাবে অনুবাদ করা হয়। যে প্রেম সম্বন্ধে আমরা এখন আলোচনা করছি, তা ই’রস্ (শব্দটি খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রে পাওয়া যায় না) নয়, যার ভিত্তি হল যৌন আকর্ষণ; অথবা তা আত্মীয়স্বজনদের প্রতি অনুভূতি স্টর্·জি’-ও নয়; বা ফি·লি’য়া, পারস্পরিক ঘনিষ্টতার উপরে ভিত্তি করে আন্তরিক বন্ধুপ্রীতিও নয়, যে সম্বন্ধে আগের প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। বরং, এই প্রেম হল আ·গা’পে—নীতিবোধের উপরে ভিত্তি করে প্রেম, যে প্রেম নিঃস্বার্থপরতার আরেক অভিব্যক্তি, যে প্রেমের কথা প্রেরিত যোহন উল্লেখ করে বলেছিলেন: “ঈশ্বর প্রেম।”—১ যোহন ৪:৮.
২. প্রেম (আ·গা’পে) সম্বন্ধে উপযুক্তরূপেই কী বলা হয়েছে?
২ এই প্রেম (আ·গা’পে) সম্বন্ধে, অধ্যাপক উইলিয়াম বার্কলে তার নূতন নিয়মের শব্দগুলি (New Testament Words) বইতে বলেছেন: “মনের সঙ্গে আগাপে-র সম্পর্ক আছে: আপনা থেকেই আমাদের হৃদয়ে এই অনুভূতি জেগে উঠতে পারে না [ফি·লি’য়া-র ক্ষেত্রে যা হতে পারে]; এই প্রেম হত একটি নীতি যা আমরা ইচ্ছকৃতভাবে পালন করি। আগাপে-র সম্পর্ক একমাত্র ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে। আগাপে একটি বিজয়, একটি সাফল্য, একটি কৃতকার্যতা। কেউ কখনো স্বভাবতই তার শত্রুকে ভালবাসে না। আমাদের শত্রুকে ভালবাসার অর্থ হল আমাদের সমস্ত সাধারণ প্রবৃত্তি এবং অনুভূতিকে জয় করা। বাস্তবপক্ষে, আগাপে হল . . . যাকে ভালবাসা যায় না, তাকে প্রেম করা, এমন লোকেদের ভালবাসা যাদের আমরা পছন্দ করি না।”
৩. যীশু খ্রীষ্ট এবং পৌল প্রেমের উপরে কিভাবে জোর দিয়েছিলেন?
৩ হ্যাঁ, অন্য যে কোন ধরনের উপাসনা থেকে যে বিষয়টি যিহোবা ঈশ্বরের বিশুদ্ধ উপাসনাকে পৃথক করে, তা হল এই ধরনের প্রেমের উপর দেওয়া গুরুত্ব। সবচেয়ে মহান দুটি আজ্ঞা সম্বন্ধে যীশু উপযুক্তরূপেই বলেছেন: ‘প্রথমটী এই, “. . . তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” দ্বিতীয়টী এই, “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই।’ (মার্ক ১২:২৯-৩১) প্রেরিত পৌল, ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে প্রেমের উপর একইভাবে জোর দিয়েছেন। প্রেম যে একমাত্র অপরিহার্য গুণ সেই সম্বন্ধে গুরুত্ব দেওয়ার পরে, তিনি এই বলে শেষ করেছেন: “আর এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম, এই তিনটী আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ।” (১ করিন্থীয় ১৩:১৩) যীশু ঠিকই বলেছিলেন যে তাঁর অনুগামীদের শনাক্তিকরণের চিহ্ন হবে প্রেম।—যোহন ১৩:৩৫.
প্রেম কী নয়
৪. প্রেম সম্বন্ধে, ১ করিন্থীয় ১৩:৪-৮ পদে পৌল কতগুলি ক্ষতিকারক এবং কতগুলি গঠনমূলক বিষয় উল্লেখ করেছেন?
৪ উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রেম কী, তার থেকে প্রেম কী নয় তা বলা সহজ। এই বাক্যটি কিছুটা সত্য, কারণ ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায়ে, ৪ থেকে ৮ পদে প্রেরিত পৌল, প্রেম কী নয় সেই সম্বন্ধে নটি এবং প্রেম যে কী, সেই সম্বন্ধে সাতটি বিষয় উল্লেখ করেছেন।
৫. কিভাবে “ঈর্ষা”-কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং শাস্ত্রে তা কিভাবে গঠনমূলক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে?
৫ প্রেম কী নয় সেই বিষয়ে পৌল প্রথমেই বলেছেন যে প্রেম “ঈর্ষা করে না।” এই কথাটি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন কারণ ঈর্ষা গঠনমূলক এবং ক্ষতিকারক হতে পারে। একটি অভিধান “ঈর্ষা-পরায়ণ” শব্দটির এই সজ্ঞা দেয়, “যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করেন না” এবং “যিনি একাগ্র ভক্তি দাবি করেন।” এইজন্য, যাত্রাপুস্তক ৩৪:১৪ (NW) পদে মোশি বলেছিলেন: “তুমি অন্য দেবতার কাছে প্রণিপাত কর না, কেননা যিহোবা ঈর্ষাপরায়ণ নাম ধারণ করেন; তিনি ঈর্ষাপরায়ণ ঈশ্বর।” যাত্রাপুস্তক ২০:৫ (NW) পদে যিহোবা বলেছেন: “তোমার ঈশ্বর যিহোবা, আমি একাগ্র ভক্তি দাবি করি।” একই অর্থে পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বরীয় ঈর্ষায় আমি তোমাদের জন্য ঈর্ষান্বিত হয়েছি।”—২ করিন্থীয় ১১:২, NW.
৬. কোন্ কোন্ শাস্ত্রীয় উদাহরণ দেখায় যে প্রেম ঈর্ষা করে না?
৬ কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, “ঈর্ষা” মন্দতাকে চিহ্নিত করে, যে জন্য গালাতীয় ৫:২০ পদে পার্থিব কাজগুলির মধ্যে ঈর্ষাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। হ্যাঁ, এই ধরনের ঈর্ষা হল স্বার্থপর ও তা থেকে ঘৃণা উৎপন্ন হয় আর ঘৃণা হল প্রেমের বিপরীত। ঈর্ষার জন্য কয়িন তার ভাই হেবলকে এমনভাবে ঘৃণা করতে শুরু করে যে অবশেষে তাকে হত্যা করে এবং যোষেফের দশ জন সৎ-ভাইরাও ঈর্ষাবশত যোষেফকে এতই ঘৃণা করে যে তাকে মেরে ফেলতে চায়। প্রেম অন্যদের ধনসম্পদ অথবা সুযোগসুবিধাকে হিংসা করে না, যেমন রাজা আহাব নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্রকে হিংসা করত।—১ রাজাবলি ২১:১-১৯.
৭. (ক) কোন্ ঘটনা দেখায় যে যিহোবা আত্মশ্লাঘা পছন্দ করেন না? (খ) এমনকি চিন্তা না করেও প্রেম কেন আত্মশ্লাঘা করে না?
৭ এরপরে পৌল আমাদের বলেছেন যে প্রেম “আত্মশ্লাঘা করে না।” আত্মশ্লাঘা বা অহঙ্কার করার অর্থ প্রেমের অভাব, কারণ অহঙ্কারের জন্য লোকে অন্যদের থেকে নিজেকে বড় মনে করে। যিহোবা অহঙ্কারী ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না, যা বোঝা যায় অহঙ্কার করার জন্য রাজা নবুখদ্নিৎসরকে তিনি যেভাবে নম্র করেছিলেন, সেই ঘটনা থেকে। (দানিয়েল ৪:৩০-৩৫) নিজের কৃতিত্ব অথবা সম্পদ সম্বন্ধে অতিরিক্ত সন্তুষ্ট হয়ে অনেক সময়ে বিবেচনাহীনভাবে অহঙ্কার করা হয়। খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় সাফল্যের জন্য অহঙ্কার করা কারো কারো অভ্যাস হতে পারে। অন্যেরা হয়ত সেই প্রাচীনের মত হতে পারে, যিনি তার বন্ধুদের টেলিফোন করে বলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন যে এইমাত্র তিনি ৫০,০০০ ডলার মূল্যের একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন। এই বিষয়গুলি প্রেম দেখায় না কারণ এইজন্য অহঙ্কারী ব্যক্তিকে তার শ্রোতাদের তুলনায় মহান বলে মনে হয়।
৮. (ক) যারা গর্বিত, তাদের সম্বন্ধে যিহোবার মনোভাব কী? (খ) প্রেম কেন সেইভাবে ব্যবহার করে না?
৮ তারপরে আমাদের বলা হয়েছে যে প্রেম “গর্ব্ব করে না।” যে গর্ব করে অথবা যে উদ্ধত সে অন্যদের থেকে নিজেকে বড় করে তোলে। এই ধরনের মনোভাব খুবই মূর্খতার বিষয় কারণ “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” (যাকোব ৪:৬, NW) প্রেম ঠিক এর বিপরীতভাবে কাজ করে; প্রেম অন্যদের বড় মনে করে। ফিলিপীয় ২:২, ৩ পদে পৌল লিখেছিলেন: “যদি কোন স্নেহ ও করুণা থাকে, তবে তোমরা আমার আনন্দ পূর্ণ কর—একই বিষয় ভাব, এক প্রেমের প্রেমী, একপ্রাণ, এক ভাববিশিষ্ট হও। প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” এই ধরনের মনোভাব থাকলে অন্যেরা সহজ বোধ করে, কিন্তু উদ্ধত ব্যক্তি যেহেতু প্রতিযোগিতার মনোভাব রাখে সেই জন্য অন্যেরা তার সামনে অস্বস্তি বোধ করে।
৯. প্রেম কেন অশিষ্টাচরণ করে না?
৯ পৌল আরও বলেছেন যে প্রেম “অশিষ্টাচরণ করে না।” অভিধানে “অশিষ্ট” শব্দটিকে এইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “আচার-ব্যবহার অথবা নীতির বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তিজনক বা অপ্রীতিকর বিষয়।” যে অশিষ্টাচরণ (প্রেমহীন ব্যবহার) করে, সে অন্যদের প্রতিক্রিয়া উপেক্ষা করে। বহু বাইবেল সংস্করণ গ্রীক শব্দটিকে “অমার্জিত” হিসাবে অনুবাদ করে। এই ধরনের ব্যক্তি যা উপযুক্ত এবং সভ্য তা অবমাননা করে। অপরের প্রতি প্রেমপূর্ণ বিবেচনা থাকলে, তার অর্থ হবে অমার্জিত অথবা অভদ্র ব্যবহার, যা অন্যদের অসন্তুষ্ট এমনকি ক্রুদ্ধ করতে পারে, তা অবশ্যই এড়িয়ে চলা।
প্রেম অন্য আর কী নয়
১০. কিভাবে প্রেম স্বার্থচেষ্টা করে না?
১০ তারপরে আমাদের বলা হয়েছে যে আমাদের ব্যক্তিগত এবং অন্যদের ইচ্ছা সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উঠলে প্রেম “স্বার্থ চেষ্টা করে না।” আরেক জায়গায় প্রেরিত লিখেছেন: “কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে।” (ইফিষীয় ৫:২৯) কিন্তু যখন আমাদের ইচ্ছার সঙ্গে অন্যদের ইচ্ছার মিল হয় না এবং যখন বাইবেলের অন্য কোন নীতি জড়িত থাকে না, তখন আমাদের উচিত অব্রাহাম লোটের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করেছিলেন সেইরকম করা, প্রেমের সাথে অন্য ব্যক্তিটিকে পছন্দ করতে দিন।—আদিপুস্তক ১৩:৮-১১.
১১. প্রেম রেগে ওঠে না, তার অর্থ কী?
১১ এছাড়াও, প্রেম অল্পেতেই অপমানিত বোধ করে না। সুতরাং পৌল বলেছেন যে প্রেম “রাগিয়া উঠে না।” প্রেম অভিমানী নয়। প্রেম আত্ম-সংযম প্রকাশ করে। বিবাহিত ব্যক্তিদের উচিত বিশেষভাবে এই উপদেশ গ্রহণ করে, অধৈর্য হয়ে রাগান্বিতভাবে কথা বলা অথবা একে অপরের প্রতি চিৎকার করা থেকে সাবধান থাকা। কখনও কখনও সহজেই রেগে ওঠা এড়ানো যায় না, সেইজন্য পৌল তীমথিয়কে এই উপদেশ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন: “যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুণ, সহনশীল হওয়া,”—হ্যাঁ, রেগে ওঠা নয়—“এবং মৃদু ভাবে বিরোধীগণকে শাসন করা তাহার উচিত।”—২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫.
১২. (ক) কিভাবে প্রেম অপকার গণনা করে না? (খ) অপকার গণনা কেন মূর্খতার কাজ?
১২ প্রেম কী নয়, সেই সম্বন্ধে পৌল আরও উপদেশ দিয়েছেন: “প্রেম . . . অপকার গণনা করে না।” এর অর্থ নয় যে কেউ অপকার করলে প্রেমবশত আমরা তা উপেক্ষা করব। গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের কী করতে হবে যীশু তা দেখিয়েছেন। (মথি ১৮:১৫-১৭) কিন্তু প্রেম আমাদের মনে বিদ্বেষ, প্রতিশোধের মনোভাব রাখতে দেয় না। অপকার গণনা না করার অর্থ হল, একবার যখন বিষয়টি শাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করা হয়ে যায়, তখন ক্ষমাপ্রবণ হয়ে সেই সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া। হ্যাঁ, কোন অপকার সম্বন্ধে ক্রমাগত চিন্তা করে নিজেকে কষ্ট দেবেন না বা নিজের অশান্তি বাড়াবেন না!
১৩. অধার্মিকতায় আনন্দ না করার অর্থ কী এবং প্রেম কেন তা করে না?
১৩ এছাড়াও, আমাদের বলা হয়েছে যে প্রেম “অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না।” জগৎ অধার্মিকতায় আনন্দ করে, যা হিংস্রতাপূর্ণ এবং অশ্লীল সাহিত্য, সিনেমা এবং টিভি অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা থেকে বোঝা যায়। এই বিষয়ে আনন্দ করা হল স্বার্থপর, ঈশ্বরের ধার্মিক মান অথবা অন্যদের মঙ্গল সম্বন্ধে কোন শ্রদ্ধা না রাখা। এই ধরনের স্বার্থপর সমস্ত আনন্দ হল মাংসের উদ্দেশ্যে বীজ বপন করা এবং যথাসময়ে তা ক্ষয়রূপ শস্য উৎপন্ন করবে।—গালাতীয় ৬:৮.
১৪. নিশ্চিতরূপে কেন বলা যায় যে প্রেম কখনও শেষ হয় না?
১৪ এবারে শেষ বিষয়টি যা প্রেম কখনো করে না: “প্রেম কখনও শেষ হয় না।” প্রেম কখনো শেষ বা ব্যর্থ হয় না তার একটি কারণ হল যে ঈশ্বর নিজেই প্রেম আর তিনি “যুগপর্য্যায়ের রাজা।” (১ তীমথিয় ১:১৭) রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯ পদে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে আমাদের জন্য যিহোবা প্রেম কখনও শেষ হবে না: “আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিতি বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি ঊর্দ্ধ স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্ করিতে পারিবে না।” প্রেম কখনও শেষ না হওয়ার আরেকটি কারণ হল যে তা কখনও কোনকিছু অপূর্ণ রাখে না। প্রেম যে কোন পরিস্থিতি, যে কোন প্রতিদন্দ্বিতার মোকাবিলা করতে পারে।
প্রেম আসলে কী
১৫. প্রেমের গঠনমূলক বিষয়গুলির মধ্যে পৌল কেন দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে প্রথম স্থান দিয়েছেন?
১৫ এখন গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, প্রেম আসলে কী, সেই বিষয়ে পৌল শুরু করেছেন: “প্রেম চিরসহিষ্ণু।” সাধারণত বলা হয়ে থাকে যে, চির অথবা দীর্ঘসহিষ্ণুতা, অর্থাৎ একে অপরের ভুল সহ্য করা ছাড়া খ্রীষ্টীয় মেলামেশা সবে নয়। কারণ আমরা সকলেই অসিদ্ধ আর আমাদের অসিদ্ধতা এবং ভুলভ্রান্তি অন্যদের পরীক্ষা করে। উপযুক্তরূপেই, প্রেম কী সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে পৌল এই বিষয়টিকে প্রথম স্থান দিয়েছেন!
১৬. একটি পরিবারের সদস্যেরা পরস্পরের প্রতি কিভাবে মধুর ব্যবহার করতে পারে?
১৬ পৌল আরও বলেছেন যে প্রেম “মধুর।” অর্থাৎ প্রেম সাহায্যকারী, বিবেচক, অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ছোট এবং বড় বিষয় মাধুর্য অথবা করুণা প্রকাশ পেতে পারে। সেই প্রতিবেশীসুলভ শমরীয় ব্যক্তিটি ডাকাতদের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিটির প্রতি অবশ্যই করুণা প্রকাশ করেছিল। (লূক ১০:৩০-৩৭) প্রেম “দয়া করে” বলতে ভালবাসে। “রুটিটা এদিকে দাও” হল একটি আদেশ। কিন্তু তার আগে “দয়া করে” যোগ দিলে তা একটি অনুরোধ হয়ে দাঁড়ায়। যখন ১ পিতর ৩:৭ পদের উপদেশ পালন করা হয়, তখন স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি মাধুর্য প্রকাশ করেন: “হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়।” স্ত্রীরা যখন তাদের স্বামীদের ‘গভীর শ্রদ্ধা’ দেখান তখন তারা মাধুর্য প্রকাশ করেন। (ইফিষীয় ৫:৩৩) ইফিষীয় ৬:৪ পদের উপদেশ পালন করে পিতারা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতি মাধুর্য দেখান: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”
১৭. কোন্ দুটি উপায়ে প্রেম সত্যের সঙ্গে আনন্দ করে?
১৭ প্রেম অধার্মিকতায় নয়, কিন্তু “সত্যের সহিত আনন্দ করে।” প্রেম এবং সত্যের স্থান পরস্পরের পাশে—ঈশ্বর প্রেম, আর একই সঙ্গে তিনি হলেন “সত্যের ঈশ্বর।” (গীতসংহিতা ৩১:৫) মিথ্যাকে প্রকাশ করে, সত্যকে জয়ী হতে দেখে প্রেম আনন্দিত হয়; কিছু মাত্রায় এই কারণের জন্যই, বর্তমানে যিহোবার উপাসকেদের সংখ্যায় প্রচুর বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, যেহেতু অধার্মিকতার বিপরীতে সত্যকে দেখানো হয়েছে, তাই এও বলা যেতে পারে যে প্রেম ধার্মিকতায় আনন্দ করে। ধার্মিকতার জয়ে সত্য আনন্দ প্রকাশ করে, যেমন মহতী বাবিলের পতনের সময়ে যিহোবার উপাসকেদের করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২০.
১৮. কোন্ অর্থে প্রেম সকলই বহন করে?
১৮ পৌল আমাদের আরও বলেছেন যে প্রেম “সকলই বহন করে।” কিংডম ইন্টারলিনিয়ার-এ যেমন দেখানো হয়েছে, এখানে বলা হয়েছে যে প্রেম সমস্ত বিষয়কে আচ্ছাদিত করে। প্রেম কোন ভাইয়ের “নিন্দা” করে না, যেমন অধার্মিক ব্যক্তিরা করে থাকে। (গীতসংহিতা ৫০:২০; হিতোপদেশ ১০:১২; ১৭:৯) হ্যাঁ, এখানে ১ পিতর ৪:৮ পদের মত একই অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে: “প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।” অবশ্য, যিহোবা এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর বিরুদ্ধে গুরুতর পাপ করলে, বিশ্বস্ততার জন্য তা ঢেকে রাখা হবে না।
১৯. কোন্ অর্থে প্রেম সকলই বিশ্বাস করে?
১৯ প্রেম “সকলই বিশ্বাস করে।” প্রেম গঠনমূলক, ক্ষতিকারক নয়। এর অর্থ নয় যে প্রেম অন্ধ। অবিশাস্য বিষয় প্রেম সহজেই মেনে নেয় না। কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে হলে, বিশ্বাস করার ইচ্ছা থাকা চাই। সুতরাং প্রেম সন্দেহপ্রবণ নয়, অযথা সমালোচনাকারী নয়। প্রেম নিরীশ্বরবাদীদের মত নয়, যারা বদ্ধমূল ধারণা হিসাবে বলে যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই, অথবা অজ্ঞাবাদীদের মতও নয়, যারা অন্ধবিশ্বাসবশত বলে যে আমরা কোথা থেকে এসেছি, কেন এসেছি এবং ভবিষ্যতে কী হবে, তা জানতে পারা অসম্ভব। এই সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়। প্রেম বিশ্বাস করতে প্রস্তুত থাকে কারণ তা আস্থা রাখে, অযথা সন্দেহ করে না।
২০. প্রত্যাশার সঙ্গে প্রেমের কী সম্পর্ক আছে?
২০ প্রেরিত পৌল আমাদের আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে প্রেম “সকলই প্রত্যাশা করে।” প্রেম যেহেতু গঠনমূলক, ক্ষতিকারক নয়, সেই জন্য ঈশ্বরের বাক্যে প্রতিজ্ঞা করা সবকিছুর উপরে তা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। আমাদের বলা হয়েছে: “যে চাষ করে, প্রত্যাশাতেই চাষ করা তাহার উচিত; এবং যে শস্য মাড়ে, ভাগ পাইবার প্রত্যাশাতেই শস্য মাড়া তাহার উচিত।” (১ করিন্থীয় ৯:১০) প্রেম যেমন বিশ্বাস করে, তেমনভাবে আশাও রাখে, সবসময় ভাল বিষয়ের প্রত্যাশা করে।
২১. শাস্ত্রে কোন্ আশ্বাসবাক্য আছে যা দেখায় যে প্রেম ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে?
২১ অবশেষে, আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে প্রেম “সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে।” প্রেম কেন তা করতে সক্ষম হয়, ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদে প্রেরিত পৌল আমাদের তা বলেছেন: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” প্রেম থাকার জন্য আমরা শাস্ত্রে দেওয়া ঈশ্বরের বহু সেবকদের উদাহরণের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারব, যারা ধৈর্য দেখিয়েছেন এবং যীশু খ্রীষ্ট হলেন যাদের মধ্যে প্রধান, যেমন ইব্রীয় ১২:২, ৩ পদের আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২২. ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে, কোন্ গুরুত্বপূর্ণ গুণ প্রদর্শন করতে আমাদের সবসময়ে সচেতন থাকা উচিত?
২২ সত্যই, খ্রীষ্টান অথবা যিহোবার সাক্ষী হিসাবে প্রেমই (আ·গা’পে) হল সেই প্রধান গুণ যা আমাদের প্রদর্শন করা উচিত এবং প্রেম কী এবং কী নয় তাও মনে রাখা উচিত। ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে, ঈশ্বরের আত্মার ফল আমাদের সবসময়ে দেখাতে হবে। তা করা হবে ঈশ্বরতুল্য, কারণ, মনে রাখবেন যে “ঈশ্বর প্রেম।” (w93 10/15)
আপনার কি মনে আছে?
▫ যীশু খ্রীষ্ট এবং পৌল কিভাবে প্রেমের গুরুত্ব দেখিয়েছেন?
▫ কোন্ অর্থে প্রেম ঈর্ষা করে না?
▫ কিভাবে প্রেম ‘সকলই বহন করে?’
▫ কেন বলা যেতে পারে যে প্রেম কখনো শেষ হয় না?
▫ কোন্ দুটি উপায়ে প্রেম সত্যের সহিত আনন্দ করে?
[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
প্রেম (আগাপে)
সেটি কী নয় সেটি কী
১. ঈর্ষা করে না ১. চিরসহিষ্ণু
২. আত্মশ্লাঘা করে না ২. মধুর
৩. গর্ব করে না ৩. সত্যের সহিত আনন্দ করে
৪. অশিষ্টাচরণ করে না ৪. সকলই বহন করে
৫. স্বার্থ চেষ্টা করে না ৫. সকলই বিশ্বাস করে
৬. রেগে ওঠে না ৬. সকলই প্রত্যাশা করে
৭. অপকার গণনা করে না ৭. সকলই ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে
৮. অধার্মিকতায় আনন্দ করে না
৯. কখনও শেষ হয় না
[Pictures on page 24]
আত্মশ্লাঘা করার জন্য যিহোবা নবুখদ্নিৎসরকে নম্র করেছিলেন