সাহসের সাথে যিহোবার পথে চলুন
“ধন্য সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে।”—গীতসংহিতা ১২৮:১.
১, ২. যিহোবার প্রাচীনকালের সাক্ষীদের কথা এবং কাজের যে বর্ণনা বাইবেলে আছে, তা কী সাহায্য করতে পারে?
যিহোবার পবিত্র বাক্যে, তাঁর বিশ্বস্ত সেবকদের পরীক্ষা এবং আনন্দের বহু বর্ণনা রয়েছে। নোহ, অব্রাহাম, সারা, যিহোশূয়, দবোরা, বারক, দায়ূদ এবং অন্যান্যদের অভিজ্ঞতার প্রাণবন্ত বিবরণ সেখানে আছে। তারা সকলেই বাস্তব ব্যক্তি ছিলেন এবং তাদের সকলের মধ্যে একটি সাধারণ কিন্তু বিশেষ গুণ ছিল। তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতেন এবং সাহসের সাথে তাঁর পথে চলতেন।
২ ঈশ্বরের পথে চলতে আমাদের প্রচেষ্টায় আমরা যিহোবার এই প্রাচীনকালের সাক্ষীদের কথা এবং কাজ থেকে উৎসাহ পেতে পারি। এছাড়াও, আমরা আনন্দ পেতে পারি যদি আমরা ঈশ্বরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট করতে হিতকর ভয় দেখাই। জীবনে পরীক্ষায় পড়লেও তা সত্য, কারণ অনুপ্রাণিত গীতরচক গেয়েছিলেন: “ধন্য সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে।”—গীতসংহিতা ১২৮:১.
সাহস কী
৩. সাহস কী?
৩ যিহোবার পথে চলতে, আমাদের সাহস রাখতেই হবে। বাস্তবপক্ষে, শাস্ত্রে, ঈশ্বরের ব্যক্তিদের আদেশ দেওয়া হয়েছে এই গুণ প্রকাশ করতে। উদাহরণস্বরূপ, গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে, সাহস কর, তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক।” (গীতসংহিতা ৩১:২৪) সাহস হল “বিপদ, ভয় অথবা দুষ্কর কাজে এগিয়ে যাওয়া, তা সহ্য করা ও প্রতিরোধ করার জন্য মানসিক অথবা নৈতিক শক্তি।” (ওয়েবস্টারস্ নাইন্থ নিউ কলেজিয়েট ডিক্শনারী) একজন সাহসী ব্যক্তি হলেন শক্তিধর, নির্ভীক, বিক্রমশালী। যিহোবা যে তাঁর সেবকদের সাহস রাখতে সাহায্য করেন, তা পৌল, তার সহকর্মী তীমথিয়কে যে কথাগুলি বলেছিলেন তা থেকে বোঝা যায়: “ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়াছেন।”—২ তীমথিয় ১:৭.
৪. সাহস অর্জন করার একটি উপায় কী?
৪ ঈশ্বর-দত্ত সাহস অর্জন করার একটি উপায় হল যিহোবার বাক্য, বাইবেলের প্রতি প্রার্থনাপূর্বক মনোযোগ দেওয়া। শাস্ত্রে দেওয়া বহু বিবরণ আমাদের আরও সাহসী হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, আসুন আমরা প্রথমে দেখি ইব্রীয় শাস্ত্রের বিবরণ থেকে, যারা সাহসের সাথে যিহোবার পথে চলেছিলেন তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।
ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করার জন্য সাহস
৫. হনোকের সাহস কিভাবে যিহোবার বর্তমানকালের সেবকদের উপকার করতে পারে?
৫ ঈশ্বরের বার্তা সাহসের সাথে প্রচার করতে, হনোকের সাহস বর্তমানকালে যিহোবার সেবকদের সাহায্য করতে পারে। হনোকের জন্ম হওয়ার আগে, “লোকেরা সদাপ্রভুর নামে ডাকিতে আরম্ভ” করেছিল। কিছু গবেষকেরা বলেন যে লোকেরা “অপবিত্রভাবে” যিহোবার নাম নিতে শুরু করেছিল। (আদিপুস্তক ৪:২৫, ২৬; ৫:৩, ৬) ঐশ্বরিক নাম হয়ত মানুষের অথবা এমনকি মূর্তির প্রতিও প্রয়োগ করা হচ্ছিল। সুতরাং, সা.শ.পূ. ৩৪০৪ সালে হনোকের যখন জন্ম হয়েছিল, তখন মিথ্যা ধর্ম পুরোদমে প্রচলিত ছিল। এমনকি, মনে হয় যে ‘ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করতে,’ যিহোবার প্রকাশিত সত্য অনুযায়ী একটি ধার্মিক পথে চলতে তিনি একাই ছিলেন।—আদিপুস্তক ৫:১৮, ২৪.
৬. (ক) কোন্ কঠোর বার্তা হনোক ঘোষণা করেছিলেন? (খ) আমরা কোন্ বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
৬ হনোক সাহসের সাথে ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করেছিলেন, সম্ভবত প্রচারের মাধ্যমে। (ইব্রীয় ১১:৫; ২ পিতর ২:৫ তুলনা করুন।) “দেখ,” সেই নিঃসঙ্গ সাক্ষী ঘোষণা করেছিলেন, “যিহোবা আপন অযুত অযুত পবিত্র লোকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন; আর ভক্তিহীন সকলে আপনাদের যে সকল ভক্তিবিরুদ্ধ কার্য্য দ্বারা ভক্তিহীনতা দেখাইয়াছে, এবং ভক্তিহীন পাপিগণ তাঁহার বিরুদ্ধে যে সকল কঠোর বাক্য কহিয়াছে, তৎপ্রযুক্ত তাহাদিগকে যেন ভর্ৎসনা করেন।” (যিহূদা ১৪, ১৫, NW) ভক্তিহীন লোকেদের ধ্বংস সম্বন্ধে ঘোষণা করার সময়ে যিহোবার নাম ব্যবহার করার সৎ-সাহস হনোকের ছিল। আর সেই কঠোর বার্তা ঘোষণা করতে, ঈশ্বর যেমন হনোককে সাহস দিয়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে পরিচর্যায়, স্কুলে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সাহসের সাথে তাঁর বাক্য জানানোর জন্য যিহোবা তাঁর বর্তমান সেবকদেরও শক্তি দিয়েছেন।—প্রেরিত ৪:২৯-৩১ তুলনা করুন।
পরীক্ষার সম্মুখে সাহস
৭. নোহ, সাহস সম্বন্ধে কী উদাহরণ দিয়েছেন?
৭ পরীক্ষার মধ্যে থেকেও ধার্মিক কাজ করতে সাহস দেখাবার জন্য নোহের উদাহরণ আমাদের সাহায্য করতে পারে। তিনি একটি পৃথিবীব্যাপী জলপ্লাবন সম্বন্ধে ঐশ্বরিক সাবধানবাণী অনুযায়ী সাহস ও বিশ্বাসের সাথে কাজ করে “আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ” করেছিলেন। বাধ্যতা এবং ধার্মিক কাজের দ্বারা নোহ জগতকে তার মন্দ কাজের জন্য দোষারোপ করেছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন যে তা ধ্বংস হওয়ার যোগ্য। (ইব্রীয় ১১:৭; আদিপুস্তক ৬:১৩-২২; ৭:১৬) নোহের জীবনের পথ সম্বন্ধে চিন্তা করলে, বর্তমানকালের ঈশ্বরের সেবকেরা, খ্রীষ্টীয় পরিচর্যার মত ধার্মিক কাজে সাহসের সাথে যোগ দিতে সাহায্য পায়।
৮. (ক) “ধার্মিকতার প্রচারক” হিসাবে সাহসী নোহ কিসের সম্মুখীন হয়েছিলেন? (খ) আমরা যদি ধার্মিকতার সাহসী প্রচারক হই, তাহলে যিহোবা আমাদের জন্য কী করবেন?
৮ আমরা যদি ধার্মিক পথে চলি কিন্তু জানি না যে কিভাবে কোন বিশেষ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে, তাহলে আমরা তার মোকাবিলা করতে প্রজ্ঞার জন্য প্রার্থনা করতে পারি। (যাকোব ১:৫-৮) পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি নোহের আনুগত্যতা দেখায় যে সাহস এবং বিশ্বস্ততার সাথে পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া সম্ভব। মন্দ জগৎ, মনুষ্যরূপধারী স্বর্গদূত এবং তাদের অতিমানব সন্তানদের থেকে সমস্ত চাপ তিনি প্রতিরোধ করেছিলেন। হ্যাঁ, ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া একটি “পুরাতন জগতে” নোহ একজন “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন। (২ পিতর ২:৪, ৫; আদিপুস্তক ৬:১-৯) যদিও তিনি সাহসের সাথে, একজন ঘোষকের মত ঈশ্বরের সাবধানবাণী সম্বন্ধে প্লাবনের পূর্বে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জানিয়েছিলেন, তারা “বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” (মথি ২৪:৩৬-৩৯) কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে নির্যাতন থাকা সত্ত্বেও এবং বর্তমানে অধিকাংশ লোক আমাদের বাইবেল-ভিত্তিক বার্তা প্রত্যাখ্যান করলেও, যিহোবা আমাদের সমর্থন করবেন যেমন তিনি নোহকে করেছিলেন, যদি আমরা ধার্মিকতার প্রচারক হিসাবে তার মতই বিশ্বাস ও সাহস দেখাই।
ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য সাহস
৯, ১০. অব্রাহাম, সারা এবং ইস্হাক কিভাবে সাহসের সাথে বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন?
৯ সাহসের সাথে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতার একটি ভাল উদাহরণ হলেন “ঈশ্বরের বন্ধু” অব্রাহাম। (যাকোব ২:২৩) কলদীয়াতে উর শহর, যেখানে পার্থিব সুখসুবিধার বহু ব্যবস্থা ছিল, তা ছেড়ে আসতে এবং যিহোবার বাধ্য হতে অব্রাহামের পক্ষে বিশ্বাস এবং সাহসের প্রয়োজন ছিল। তার মাধ্যমে “ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী” আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে এবং তার বংশধরদের যে একটি দেশ দেওয়া হবে, ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা তিনি বিশ্বাস করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১২:১-৯; ১৫:১৮-২১) বিশ্বাসের জন্য অব্রাহাম “বিদেশের ন্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবাসী” হয়েছিলেন এবং প্রকৃত “ভিত্তিমূল-বিশিষ্ট সেই নগরের” প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন—ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্য, যার অধীনে তিনি পৃথিবীতে অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য পুনরুত্থিত হবেন।—ইব্রীয় ১১:৮-১৬.
১০ অব্রাহামের স্ত্রী সারারও বিশ্বাস এবং সাহস ছিল, যেজন্য তিনি উর শহর ছেড়ে এসেছিলেন, বিদেশে তার স্বামীকে সঙ্গ দিয়েছিলেন এবং সেখানে তাদের যে সমস্ত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তা সহ্য করেছিলেন। আর সাহসের সাথে ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা দেখানোর জন্য তিনি কতই না পুরস্কৃত হয়েছিলেন! নব্বই বছর বয়স পর্যন্ত নিঃসন্তান থাকলেও এবং “তাঁহার অতিরিক্ত বয়স” হলেও, সারাকে ‘বংশ উৎপাদনের শক্তি দেওয়া হয়েছিল, কারণ তিনি প্রতিজ্ঞাকারী ঈশ্বরকে বিশ্বাস্য জ্ঞান করেছিলেন।’ পরে, তিনি ইস্হাকের জন্ম দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১১, ১২; আদিপুস্তক ১৭:১৫-১৭; ১৮:১১; ২১:১-৭) বহু বছর পরেও, অব্রাহাম সাহসের সাথে ঈশ্বরের বাধ্য থেকেছিলেন এবং ‘ইস্হাককে প্রায় উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন।’ একজন স্বর্গদূত তাকে বাধা দিলে, সেই কূলপতি তার সাহসী এবং বাধ্য পুত্রকে মৃত্যুর মুখ থেকে “দৃষ্টান্তরূপে” ফিরে পেয়েছিলেন। এইভাবে তিনি এবং ইস্হাক পূর্বাভাষ দিয়ে চিত্রিত করেছিলেন, যে যিহোবা তার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে একটি মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করবেন যাতে যারা তাঁকে বিশ্বাস করবে তারা অনন্ত জীবন পেতে পারে। (ইব্রীয় ১১:১৭-১৯; আদিপুস্তক ২২:১-১৯; যোহন ৩:১৬) অব্রাহাম, সারা এবং ইস্হাকের সাহসী বাধ্যতা, যিহোবার বাধ্য থাকতে এবং সবসময়ে তার ইচ্ছা পালন করতে আমাদের অবশ্যই প্ররোচিত করে।
ঈশ্বরের ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাহস
১১, ১২. (ক) যিহোবার ব্যক্তিদের সম্বন্ধে মোশি কিভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন? (খ) মোশির সাহস লক্ষ্য করে, কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে?
১১ মোশি সাহসের সাথে ঈশ্বরের নির্যাতিত লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। সা.শ.পূ. ১৬শ শতাব্দীতে মোশির পিতামাতাও সাহস দেখিয়েছিলেন। নবজাত ইব্রীয় পুত্রসন্তানদের হত্যা করতে রাজার আজ্ঞাকে ভয় না করে তারা মোশিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং পরে তাকে নীলনদের তীরে নলখাগড়ার ঝোঁপের মধ্যে একটি ঝুড়িতে রেখে দিয়েছিলেন। ফরৌণের মেয়ে তাকে খুঁজে পেয়ে নিজের ছেলের মত বড় করে তুলেছিলেন কিন্তু প্রথমে, মোশি তার নিজের বাবা-মার ঘরে আধ্যাত্মিক শিক্ষা পেয়েছিলেন। ফরৌণের পরিবারের অংশ হিসাবে, মোশি “মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত” এবং “তিনি বাক্যে ও কার্য্যে পরাক্রমী” হয়েছিলেন, মানসিক এবং শারীরিক দক্ষতায় নিপুণ হয়ে উঠেছিলেন।—প্রেরিত ৭:২০-২২; যাত্রাপুস্তক ২:১-১০; ৬:২০.
১২ রাজকীয় পরিবারের সুখস্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া সত্ত্বেও, মোশি সাহসের সাথে যিহোবার উপাসকদের সাহায্য করার পথ বেছে নিয়েছিলেন, যারা তখন মিশরীয়দের কাছে বন্দী ছিল। একজন ইস্রায়েলীয়কে বাঁচাতে গিয়ে তিনি একটি মিশরীয়কে হত্যা করেছিলেন আর তারপর মিদিয়নে পালিয়ে গিয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২:১১-১৫) প্রায় ৪০ বছর পরে, বন্দীত্ব থেকে ইস্রায়েলীয়দের মুক্ত করায় নেতৃত্ব দিতে ঈশ্বর তাকে ব্যবহার করেছিলেন। তারপরে মোশি “মিসর ত্যাগ করিলেন, রাজার কোপ হইতে ভীত হন নাই,” ইস্রায়েলের স্বপক্ষে যিহোবার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যিনি তাকে মৃত্যুভয় দেখিয়েছিলেন। মোশি এমনভাবে চলতেন যেন যিহোবা ঈশ্বর, “যিনি অদৃশ্য,” তাঁকে তিনি দেখেছেন। (ইব্রীয় ১১:২৩-২৯; যাত্রাপুস্তক ১০:২৮) দুঃখকষ্ট এবং নির্যাতন সত্ত্বেও যিহোবা এবং তাঁর লোকেদের সঙ্গে থাকার মত বিশ্বাস এবং সাহস কি আপনার আছে?
‘সম্পূর্ণরূপে যিহোবার অনুগত’ হওয়ার জন্য সাহস
১৩. যিহোশূয় এবং কালেব কিভাবে সাহসের উদাহরণ দিয়েছিলেন?
১৩ সাহসী যিহোশূয় এবং কালেব প্রমাণ দিয়েছিলেন যে আমরা ঈশ্বরের পথে চলতে পারি। তারা “সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগত” হয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ৩২:১২) প্রতিজ্ঞাত দেশে গুপ্তচর হিসাবে যে ১২ জন ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছিল, যিহোশূয় এবং কালেব তাদের মধ্যে ছিলেন। সেখানকার বসবাসকারীদের ভয়ে, কনানে প্রবেশ করা থেকে দশজন গুপ্তচর ইস্রায়েলীয়দের নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, যিহোশূয় এবং কালেব সাহসের সাথে বলেছিলেন: “সদাপ্রভু যদি আমাদিগেতে প্রীত হন, তবে তিনি আমাদিগকে সেই দেশে প্রবেশ করাইবেন, ও সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ আমাদিগকে দিবেন। কিন্তু তোমরা কোন মতে সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইও না, ও সে দেশের লোকদিগকে ভয় করিও না; কেননা তাহারা আমাদের ভক্ষ্যস্বরূপ, তাহাদের আশ্রয়-ছত্র তাহাদের উপর হইতে নীত হইল, সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী; তাহাদিগকে ভয় করিও না।” (গণনাপুস্তক ১৪:৮, ৯) বিশ্বাস ও সাহসের অভাবের জন্য, ইস্রায়েলীয়দের সেই বংশটি কোনদিনই প্রতিজ্ঞাত দেশে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু যিহোশূয় এবং কালেব, নতুন একটি বংশের সাথে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন।
১৪, ১৫. (ক) যিহোশূয় ১:৭, ৮, পদ যিহোশূয় পালন করার জন্য, তার এবং ইস্রায়েলীয়দের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল? (খ) যিহোশূয় এবং কালেবের কাছে, সাহস সম্বন্ধে আমরা কী শিক্ষা পাই?
১৪ ঈশ্বর যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “তুমি কেবল বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর; আমার দাস মোশি তোমাকে যে ব্যবস্থা আদেশ করিয়াছে, তুমি সেই ব্যবস্থা যত্নপূর্ব্বক পালন কর; তাহা হইতে দক্ষিণে কি বামে ফিরিও না; যেন তুমি যে কোন স্থানে যাও; সেই স্থানে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার। তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক বিচলিত না হউক; তন্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর; কেননা তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে।”—যিহোশূয় ১:৭, ৮.
১৫ যিহোশূয় এই কথাগুলি পালন করার সাথে, যিরীহো এবং অন্যান্য শহর ইস্রায়েলীয়রা অধিকার করে নেয়। এমনকি ঈশ্বর সূর্যকেও স্থির রেখেছিলেন যাতে গিবিয়নে ইস্রায়েলীয়রা বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তা আলো দিয়েছিল। (যিহোশূয় ১০:৬-১৪) শত্রুপক্ষের একত্রিত দল যখন আক্রমণ করত, তাদের সংখ্যা “সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় অসংখ্য” হলেও, যিহোশূয় সাহস রেখেছিলেন এবং ঈশ্বর আবার ইস্রায়েলীয়দের বিজয়ী করেছিলেন। (যিহোশূয় ১১:১-৯) যিহোশূয় এবং কালেবের মত অসিদ্ধ মানুষ হলেও, আমরা সম্পূর্ণরূপে যিহোবার অনুগত হতে পারি এবং সাহসের সঙ্গে তাঁর পথে চলতে ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিতে পারেন।
ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখার সাহস
১৬. দবোরা, বারক এবং যায়েল কিভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন?
১৬ সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখলে তার সুফল পাওয়া যায়, ইস্রায়েলে যখন বিচারকর্তারা ন্যায় বিচার করতেন, সেই সময়ের ঘটনাগুলি থেকে যেমন বোঝা যায়। (রূৎ ১:১) উদাহরণস্বরূপ, বিচারকর্তা বারক এবং ভাববাদিনী দবোরা সাহসের সাথে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। কনানীয় রাজা যাবীন ২০ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের নির্যাতন করার পরে, দবোরার মাধ্যমে যিহোবা বারককে দিয়ে তাবোর পর্বতে ১০,০০০ লোককে একত্রিত করালেন। যাবীনের সেনাপতি সীষরা তাড়াতাড়ি কীশোনের উপত্যকায় এলেন, কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে এই সমতলভূমিতে ইস্রায়েলের লোকেরা কিছুতেই তার কাঁটা-লাগানো চাকাসমেত ৯০০ যুদ্ধরথের মোকাবিলা করতে পারবে না। ইস্রায়েলীয়রা যখন উপত্যকায় পৌঁছালো, তখন ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেছিলেন, এমন একটি বন্যা হতে দিয়েছিলেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রকে একটি কর্দমাক্ত এলাকা বানিয়ে সীষরার রথগুলিকে অকেজো করে দিয়েছিল। বারকের লোকেরা জয়ী হয়েছিল এবং সীষরার ‘সমস্ত রথ ও সমস্ত সৈন্য খড়্গাধারে ছিন্ন ভিন্ন’ হয়েছিল। সীষরা যায়েলের তাঁবুতে পালিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু যখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন তখন যায়েল সাহস করে তার মাথায় তাঁবুর একটি খুঁটি বিদ্ধ করে তাকে হত্যা করেছিলেন। বারকের প্রতি দবোরার ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল যে এই বিজয়-অভিযানে একজন নারীর “যশ” হবে। যেহেতু দবোরা, বারক এবং যায়েল সাহসপূর্বক ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন, পরবর্তী ‘চল্লিশ বছর ধরে ইস্রায়েল নির্ঝঞ্ঝাটে ছিল।’—বিচারকর্ত্তৃগণ ৪:১-২২; ৫:৩১.
১৭. বিচারকর্তা গিদিয়োন, সাহসের সাথে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখার কী উদাহরণ দিয়েছিলেন?
১৭ মিদিয়নীয়রা এবং অন্যন্য দেশ যখন ইস্রায়েল আক্রমণ করেছিল, তখন বিচারকর্তা গিদিয়োন সাহসের সাথে যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন। যদিও তাদের আক্রমণকারীদের সংখ্যা প্রায় ১,৩৫,০০০ হাজারেরও বেশি ছিল, তবুও ইস্রায়েলের ৩২,০০০ যোদ্ধা হয়ত ঈশ্বর-দত্ত জয়ের কৃতিত্ব নিজেরা গ্রহণ করার প্রবৃত্তি দেখাতে পারত। সুতরাং যিহোবার নির্দেশে, গিদিয়োন তার সৈন্যদের সংখ্যা ১০০ জন ব্যক্তির তিনটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণ ৭:১-৭, ১৬; ৮:১০) রাত্রে সেই ৩০০ জন যখন মিদিয়নীয়দের শিবির ঘিরে ফেলল, তখন প্রত্যেকের কাছে একটি তূরী এবং মশাল সমেত একটি জল রাখার ঘট ছিল। সঙ্কেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তূরী বাজিয়ে, ঘটগুলি ভেঙে, জ্বলন্ত মশাল তুলে ধরে চিৎকার করে উঠল: ‘যিহোবার ও গিদিয়োনের খড়্গ।’ (বিচারকর্ত্তৃগণ ৭:২০) আতঙ্কিত মিদিয়োনীয়রা পালাতে শুরু করে এবং পরাজিত হয়। এই সমস্ত ঘটনার দ্বারা আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে সাহসের সাথে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখলে, বর্তমানেও তার সুফল পাওয়া যায়।
যিহোবাকে সম্মান করতে এবং তাঁর বিশুদ্ধ উপাসনা তুলে ধরতে সাহস
১৮. গলিয়াৎকে হত্যা করার সময়ে, দায়ূদ সাহসপূর্বক কী করেছিলেন?
১৮ বাইবেলের কিছু উদাহরণ যিহোবাকে সম্মান করতে এবং তাঁর বিশুদ্ধ উপাসনা সমর্থন করতে সাহস যোগায়। তরুণ দায়ূদ, যিনি নির্ভয়ে তার পিতার মেষপালকে রক্ষা করতেন, তিনি অতিকায় পলেষ্টীয় যোদ্ধা গলিয়াতের সম্মুখীন হয়েও সাহস দেখিয়েছিলেন। “তুমি খড়্গ, বড়শা ও শল্য নিয়ে আমার কাছে এসেছ,” দায়ূদ বলেছিলেন, “কিন্তু আমি বাহিনীগণের যিহোবার, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁকে টিট্কারি দিয়েছ তাঁরই নামে, তোমার কাছে এসেছি। আজ যিহোবা তোমাকে আমার হাতে সমর্পণ করবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করব, তোমার দেহ হইতে মুণ্ড বিচ্ছিন্ন করব, . . . তাতে ইস্রায়েলে যে এক ঈশ্বর আছেন, তা সমস্ত পৃথিবী জানতে পারবে। আর যিহোবা খড়্গ ও বড়শা দ্বারা নিস্তার করেন না, তাও এই সমস্ত সমাজ জানবে; কেননা এই যুদ্ধ যিহোবার।” (১ শমূয়েল ১৭:৩২-৩৭, ৪৫-৪৭, NW) ঐশ্বরিক সাহায্যের সাথে, দায়ূদ সাহসপূর্বক যিহোবাকে সম্মান করেছিলেন, গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন এবং এইভাবে সত্য উপাসনার প্রতি পলেষ্টীয় আক্রমণ নিবৃত্ত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯. কোন্ প্রকল্পের জন্য শলোমনের সাহসের প্রয়োজন ছিল, আর তার মনোভাব আমাদের দিনে কিভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে?
১৯ রাজা দায়ূদের পুত্র শলোমন যখন ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তার বয়স্ক পিতা তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন: “তুমি বলবান হও, সাহস কর, কার্য্য কর; ভয় করিও না, নিরাশ হইও না; কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তোমার সহবর্ত্তী; সদাপ্রভুর গৃহবিষয়ক কার্য্যের সমস্ত রচনা যাবৎ সমাপ্ত না হয়, তাবৎ তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না।” (১ বংশাবলি ২৮:২০) সাহসের সাথে কাজ করে শলোমন সফলভাবে মন্দির তৈরি করা শেষ করেছিলেন। যখন কোন ঐশিক নির্মাণ প্রকল্প আমাদের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তখন আমাদের দায়ূদের কথাগুলি মনে করা উচিৎ: “তুমি বলবান হও, সাহস কর, কার্য্য কর।” যিহোবাকে সম্মান করার এবং সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার কী অপূর্ব উদাহরণ!
২০. রাজা আসা কিভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন?
২০ ঈশ্বরকে সম্মান করতে এবং সত্য উপাসনাকে সমর্থন করার ইচ্ছার জন্য, রাজা আসা যিহূদা দেশকে প্রতিমা থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং মন্দিরের পুরুষ বেশ্যাদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তার ধর্মত্যাগী মাতামহীকেও তার উচ্চ পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার “ভীষণ প্রতিমা” পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ১৫:১১-১৩) হ্যাঁ, আসা “সাহস পাইয়া যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত দেশ হইতে এবং তিনি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে যে সকল নগর হস্তগত করিয়াছিলেন, সেই সকল নগর হইতে ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর করিলেন, এবং সদাপ্রভুর বারাণ্ডার সম্মুখস্থ সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদি সারাইলেন।” (২ বংশাবলি ১৫:৮) আপনিও কি সাহসের সাথে ধর্মভ্রষ্টতা পরিত্যাগ করেন ও বিশুদ্ধ উপাসনার সমর্থন করেন? রাজ্যের কাজে কি আপনি আর্থিক সাহায্য করছেন? আর যিহোবার একজন সাক্ষী হিসাবে নিয়মিতভাবে সুসমাচার প্রচারে অংশ নিয়ে আপনি কি তাঁকে সম্মান জানাচ্ছেন?
২১. (ক) খ্রীষ্টপূর্বকালের সাহসী বিশ্বস্ততা রক্ষাকারীদের ঘটনা আমাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারে? (খ) পরের প্রবন্ধে কী বিবেচনা করা হবে?
২১ খ্রীষ্টপূর্বকালের এই সাহসী বিশ্বস্ততা রক্ষাকারীদের ঘটনা যে ঈশ্বর শাস্ত্রে লিখে রেখেছেন তার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! সাহস, ঐশ্বরিক ভয় এবং শ্রদ্ধার সাথে যিহোবার পবিত্র পরিচর্যা করতে তাদের অপূর্ব উদাহরণ আমাদের অবশ্যই সাহায্য করে। (ইব্রীয় ১২:২৮) কিন্তু খ্রীষ্টীয় গ্রীক শাস্ত্রেও ঐশ্বরিক সাহসের উদাহরণ পাওয়া যায়। যিহোবার পথে চলতে, সেই উদাহরণগুলি আমাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারে? (w93 11/15)
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
▫ সাহস কী?
▫ হনোক এবং নোহ কিভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন?
▫ অব্রাহাম, সারা এবং ইস্হাক কিভাবে সাহস দেখিয়েছিলেন?
▫ মোশি, যিহোশূয় এবং কালেব সাহসের কিরকম উদাহরণ দিয়েছিলেন?
▫ কিভাবে অন্যেরা দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখতে তাদের সাহস ছিল?
[২৬ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
গিদিয়োন এবং তার যোদ্ধাদের ছোট দল সাহসের সাথে যিহোবার প্রতি আস্থা রেখেছিলেন