যিহোবার প্রতি আস্থা রাখুন!
“তুমি সমস্ত চিত্তে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখ।”—হিতোপদেশ ৩:৫, NW.
১. হিতোপদেশ ৩:৫ পদ কিভাবে একটি যুবককে প্রভাবিত করেছিল আর তাতে কী দীর্ঘস্থায়ী ফল হয়েছিল?
বহুদিন ধরে মিশনারীর কাজে রত একজন ব্যক্তি লিখেছেন: “‘তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।’ ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় একটি বাড়ির দেওয়ালে ঝোলানো থাকতে দেখে, বাইবেলের এই কথাগুলি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাকি দিন আমি সেই সম্বন্ধে চিন্তা করতে থাকি। আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কি সমস্ত চিত্তে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পেরেছি?” তখন এই ব্যক্তিটির বয়স ছিল ২১ বছর। নব্বই বছর বয়সে এখনও অট্রেলিয়ার পার্থ্ শহরে একজন প্রাচীন হিসাবে কাজ করার সময়ে, তিনি পূর্ণহৃদয়ে যিহোবার প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে সমৃদ্ধ একটি জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে পারেন, যার অন্তর্ভুক্ত সিলন্ (এখন শ্রীলঙ্কা), বার্মা (এখন মিয়ান্মার), মালয়, থাইল্যাণ্ড, ভারত এবং পাকিস্তানের মত নতুন জায়গায় মিশনারী কাজে ২৬টি পরিশ্রমবহুল বছর।a
২. হিতোপদেশ ৩:৫ পদ আমাদের মধ্যে কী আস্থা গড়ে তুলতে পারে?
২ “তুমি সমস্ত চিত্তে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখ”—নিউ ওয়ার্ল্ড ট্র্যান্সলেশন অনুসারে, হিতোপদেশ ৩:৫ পদের এই কথাগুলির মাধ্যমে আমাদের সকলের উচিত যিহোবার কাছে সম্পূর্ণরূপে আমাদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রেরণা পাওয়া, পর্বতপ্রমাণ বাধাও অতিক্রম করতে যে তিনি আমাদের বিশ্বাস দৃঢ় করে তুলবেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া। (মথি ১৭:২০) আসুন এখন আমরা প্রসঙ্গ অনুযায়ী হিতোপদেশ ৩:৫ পদ পরীক্ষা করি।
পিতৃসুলভ নির্দেশ
৩. (ক) হিতোপদেশের প্রথম নয়টি অধ্যায়ে কী উৎসাহ পাওয়া যায়? (খ) হিতোপদেশ ৩:১, ২ পদের প্রতি কেন আমাদের গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৩ বাইবেলের হিতোপদেশ বইটির প্রথম নয়টি অধ্যায় পিতৃসুলভ নির্দেশে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, স্বর্গে যারা পুত্রের পদ উপভোগ করবে অথবা পার্থিব পরমদেশে যারা “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” পাবে, তাদের প্রতি যিহোবার বিজ্ঞ উপদেশ সেখানে দেওয়া হয়েছে। (রোমীয় ৮:১৮-২১, ২৩) ছেলেমেয়েদের বড় করে তুলতে পিতামাতারা এই বিজ্ঞ উপদেশ ব্যবহার করতে পারেন। হিতোপদেশ ৩ অধ্যায়ের উপদেশ সত্যিই উল্লেখযোগ্য, যা এই সাবধানবাণী দিয়ে শুরু হয়েছে: “বৎস, তুমি আমার ব্যবস্থা ভুলিও না; তোমার চিত্ত আমার আজ্ঞা সকল পালন করুক।” শয়তানের মন্দ জগতের শেষ ঘনিয়ে আসার সময়ে, আমাদের উচিত যিহোবার কাছ থেকে আসা অনুস্মারকগুলির প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া। পথ খুবই দীর্ঘ মনে হলেও, যারা ধৈর্য রাখবে, তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে “আয়ুর দীর্ঘতা, জীবনের বৎসর-বাহুল্য, এবং শান্তি”—যিহোবার নতুন বিধিব্যবস্থায় অনন্ত জীবন তাদের দেওয়া হবে।—হিতোপদেশ ৩:১, ২.
৪, ৫. (ক) যোহন ৫:১৯, ২০ পদে কোন্ আনন্দময় সম্পর্ক সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে? (খ) দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮-২১ পদের উপদেশ কিভাবে আমাদের দিনেও প্রযোজ্য হতে পারে?
৪ পিতা এবং পুত্রের মধ্যে একটি আনন্দময় সম্পর্ক অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে। আমাদের স্রষ্টা, যিহোবা ঈশ্বর ব্যবস্থা করেছেন যেন তাই হয়। যিহোবার সঙ্গে নিজের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সম্বন্ধে খ্রীষ্ট যীশু বলেছিলেন: “পুত্ত্র আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না, কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই করেন; কেননা তিনি যাহা যাহা করেন, পুত্ত্রও সেই সকল তদ্রূপ করেন। কারণ পিতা পুত্ত্রকে ভাল বাসেন, এবং আপনি যাহা যাহা করেন, সকলই তাঁহাকে দেখান।” (যোহন ৫:১৯, ২০) যিহোবা চেয়েছিলেন যে তাঁর ও পৃথিবীতে তাঁর সমস্ত পরিবারের মধ্যে এবং মানব পিতা ও সন্তানদের মধ্যেও যেন একই রকম অন্তরঙ্গতা থাকে।
৫ প্রাচীন ইস্রায়েলে পরিবারের মধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে উৎসাহ দেওয়া হত। সেখানে পিতাদের যিহোবা উপদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা আমার এই সকল বাক্য আপন আপন হৃদয়ে ও প্রাণে রাখিও, চিহ্নরূপে আপন আপন হস্তে বাঁধিয়া রাখিও, এবং সে সকল ভূষণরূপে তোমাদের দুই চক্ষুর মধ্যে থাকিবে। আর তোমরা গৃহে উপবেশন ও পথে গমন কালে এবং শয়ন ও গাত্রোত্থান কালে ঐ সকল কথার প্রসঙ্গ করিয়া আপন আপন সন্তানদিগকে শিক্ষা দিও। আর তুমি আপন গৃহ-দ্বারের পার্শ্বকাষ্ঠে ও আপন দ্বারে তাহা লিখিয়া রাখিও। তাহাতে সদাপ্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে ভূমি দিতে দিব্য করিয়াছেন, সেই ভূমিতে তোমাদের আয়ুঃ ও তোমাদের সন্তানদের আয়ুঃ ভূমণ্ডলের উপরে আকাশমণ্ডলের আয়ুর ন্যায় বৃদ্ধি পাইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮-২১) আমাদের মহান নির্দেশক, যিহোবা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য, বাস্তবিকই পিতাদের ও তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে তাঁর অন্যান্য পরিচারকদের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে।—যিশাইয় ৩০:২০, ২১.
৬. ঈশ্বর এবং মানুষের কাছে কিভাবে আমরা অনুগ্রহ পেতে পারি?
৬ হিতোপদেশ ৩ অধ্যায়ের ৩ এবং ৪ পদে, ঈশ্বরের লোকেদের জন্য আরও পিতৃসুলভ বিজ্ঞ উপদেশ দেওয়া হয়েছে: “দয়া ও সত্য তোমাকে ত্যাগ না করুক; তুমি তদুভয় তোমার কণ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ, তোমার হৃদয়-ফলকে লিখিয়া রাখ। তাহা করিলে অনুগ্রহ ও সুবুদ্ধি পাইবে, ঈশ্বরের ও মনুষ্যের দৃষ্টিতে পাইবে।” দয়া ও সত্য প্রদর্শন করতে যিহোবা ঈশ্বর নিজেই সবচেয়ে ভাল উদাহরণ দিয়েছেন। গীতসংহিতা ২৫:১০ পদে যেমন বলা হয়েছে, “সদাপ্রভুর সমস্ত পথ দয়া ও সত্য।” যিহোবাকে অনুকরণ করে, আমাদের উচিত এই গুণাবলিগুলি এবং সুরক্ষা করতে তাদের ক্ষমতাকে মূল্যবান মনে করা, ঠিক যেন সেগুলি একটি অমূল্য অলংকার এবং আমাদের উচিত এমনভাবে সেগুলি আমাদের হৃদয়ে লিখে রাখা যেন কখনও তা মুছে না যেতে পারে। সুতরাং, আমরা একান্তভাবে প্রার্থনা করতে পারি: “হে সদাপ্রভু, . . . তব দয়া ও তব সত্য সতত আমাকে রক্ষা করুক।”—গীতসংহিতা ৪০:১১.
স্থায়ী আস্থা
৭. যিহোবা কী কী উপায়ে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা দেখিয়েছেন?
৭ ওয়েব্স্টারস্ নাইন্থ নিউ কলেজিয়েট ডিক্শনারীতে আস্থাকে এইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, “কোন ব্যক্তি অথবা কোনকিছুর চরিত্র, ক্ষমতা, শক্তি অথবা সত্যের প্রতি নিশ্চিত নির্ভরতা।” যিহোবার চরিত্রে তাঁর দয়ার একটি মুখ্য স্থান আছে। আর তিনি যা প্রতিজ্ঞা করেছেন তা করতে তিনি যে সক্ষম সেই বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, কারণ তাঁর নাম, যিহোবার মাধ্যমেই তাঁকে মহান উদ্দেশ্যসাধনকারী হিসাবে শনাক্ত করা যায়। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪; ৬:২-৮) স্রষ্টা হিসাবে তিনি হলেন শক্তি একং সামর্থের উৎস। (যিশাইয় ৪০:২৬, ২৯) তিনি হলেন সত্যের সর্বোচ্চ প্রকাশ কারণ “মিথ্যা কথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।” (ইব্রীয় ৬:১৮) সুতরাং আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে সকল সত্যের মহান উৎস আমাদের ঈশ্বর যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে, যাঁর ক্ষমতা আছে তাঁর প্রতি বিশ্বাসী ব্যক্তিদের রক্ষা করতে এবং তাঁর সমস্ত মহান উদ্দেশ্যকে গৌরবের সাথে সফল করতে।—গীতসংহিতা ৯১:১, ২; যিশাইয় ৫৫:৮-১১.
৮, ৯. দুঃখজনকরূপে, জগতে কেন আস্থার অভাব দেখা যায় এবং যিহোবার লোকেরা কিভাবে এর ব্যতিক্রম?
৮ আমাদের চারিপাশের অধঃপতিত জগতে দুঃখের বিষয় হল যে আস্থার অভাব রয়েছে। পরিবর্তে, আমরা সর্বত্র লোভ এবং দুর্নীতি দেখতে পাই। ওয়ার্ল্ড প্রেস রিভিউ পত্রিকার ১৯৯৩ সালের মে মাসের সংস্করণের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় এই ঘোষণাটি তুলে ধরা হয়েছিল: “দুর্নীতির বিস্ফোরণ—নতুন জগৎ-ব্যবস্থায় কালো টাকা।” ব্রাজিল থেকে জার্মানী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আর্জেন্টিনা, স্পেন থেকে পেরু, ইটালী থেকে মেক্সিকো, ভ্যাটিকান থেকে রাশিয়া, সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। ঘৃণা, লোভ এবং সংশয়ের উপরে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা মানুষের নতুন জগৎ-ব্যবস্থা, মানবজাতির জন্য আরও বেশি দুঃখ ছাড়া আর কিছু নিয়ে আসেনি।
৯ রাজনৈতিক জাতিগুলির বিপরীতে, “সেই জাতি, যাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু” তার অংশ হতে পেরে যিহোবার সাক্ষীরা আনন্দিত। একমাত্র তারাই প্রকৃতভাবে বলতে পারে যে “আমরা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখি।” তাদের মধ্যে প্রত্যেকে আনন্দের সাথে বলতে পারে: “ঈশ্বরে আমি তাঁহার বাক্যের প্রশংসা করিব; আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না।”—গীতসংহিতা ৩৩:১২; ৫৬:৪, ১১.
১০. বিশ্বস্ততা রাখতে বহু অল্পবয়স্ক খ্রীষ্টানদের কী শক্তি দিয়েছে?
১০ এশিয়ার একটি দেশে যেখানে হাজার হাজার অল্পবয়স্ক সাক্ষীদের মারধোর এবং কারাবদ্ধ হওয়া ভোগ করতে হয়েছে, যিহোবার প্রতি আস্থা সেখানকার অধিকাংশ লোকেদের তা সহ্য করতে সাহায্য করেছে। একদিন রাত্রে একটি জেলখানায়, একজন যুবক সাক্ষীকে এত অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছিল যে সে আর পারছিল না। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে নিঃশব্দে আরেকটি যুবক তার কাছে এসেছিল। ফিস্ফিস্ করে সে বলেছিল: “হাল ছেড়ে দিও না; আমি আপোষ করেছি আর তখন থেকে আমার মনে কোন শান্তি নেই।” প্রথম যুবকটি দৃঢ় থাকতে নতুন করে সংকল্প করেছিল। আমাদের বিশ্বস্ততা ভঙ্গ করতে শয়তানের সমস্ত প্রচেষ্টা অতিক্রম করতে যে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন, সে বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি।—যিরমিয় ৭:৩-৭; ১৭:১-৮; ৩৮:৬-১৩, ১৫-১৭.
১১. যিহোবার প্রতি আস্থা রাখতে আমরা কিভাবে প্রেরণা পাই?
১১ প্রথম আজ্ঞাটিতে আংশিকভাবে বলা হয়েছে: “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ . . . দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” (মার্ক ১২:৩০) ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে চিন্তা করার সময়ে, যে অপূর্ব সত্য আমরা শিখছি তা আমাদের হৃদয়ের গভীরে পৌঁছায় এবং আমাদের মহান ঈশ্বর, সার্বভৌম প্রভু যিহোবার পরিচর্যায় সমস্ত কিছু করতে আমরা প্রেরণা পাই। তিনি আমাদের যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন এবং করবেন, সেই জন্য তাঁর প্রতি উপলব্ধিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে, পরিত্রাণ করতে তাঁর ক্ষমতার উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে আমরা উদ্বুদ্ধ হই।—যিশাইয় ১২:২.
১২. কিভাবে বহু খ্রীষ্টানেরা যিহোবার প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন?
১২ এই আস্থা বহু বছর ধরে গড়ে ওঠে। যিহোবার একজন নম্র সাক্ষী, যিনি এপ্রিল ১৯২৭ সাল থেকে শুরু করে, ব্রুকলীনে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে ৫০ বছরেরও বেশি কাজ করেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “সেই মাসের শেষে, একটি খামের মধ্যে আমি ৫·০০ ডলার হাতখরচ পেয়েছিলাম ও তার সাথে একটি সুন্দর কার্ড যেখানে বাইবেলের হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ লেখা ছিল। . . . যিহোবার প্রতি আস্থা রাখবার জন্য বহু কারণ ছিল, কারণ প্রধান কার্যালয়ে আমি শীঘ্রই উপলব্ধি করতে শিখলাম যে যিহোবার একটি ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস’ শ্রেণী আছে, যারা বিশ্বস্তভাবে পৃথিবীতে রাজ্যের আগ্রহের যত্ন নিচ্ছেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.”b এই খ্রীষ্টানের মন টাকাপয়সার জন্য প্রেমের প্রতি ছিল না, কিন্তু “স্বর্গে অক্ষয় ধন সঞ্চয়” করার প্রতি ছিল। একইভাবে বর্তমানে, সমস্ত পৃথিবীতে ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির বেথেল গৃহগুলিতে যে হাজার হাজার ব্যক্তিরা কাজ করেন, তারা এক ধরনের দরিদ্রতার জীবনযাপনের শপথ করেছেন। তাদের দৈনিক প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার জন্য তারা যিহোবার উপরে আস্থা রাখেন।—লূক ১২:২৯-৩১, ৩৩, ৩৪.
যিহোবার প্রতি নির্ভর করুন
১৩, ১৪. (ক) একমাত্র কোথায় বিজ্ঞ উপদেশ পাওয়া যেতে পারে? (খ) নির্যাতন সহ্য করার জন্য কী এড়িয়ে চলতে হবে?
১৩ আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন: “তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” (হিতোপদেশ ৩:৫) যিহোবা যে প্রজ্ঞা এবং বোধশক্তি দেখিয়েছেন, জাগতিক উপদেশজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা তার ধারে কাছে পৌঁছানোর আশাও করতে পারেন না। “তাঁহার বুদ্ধির ইয়ত্তা নাই।” (গীতসংহিতা ১৪৭:৫) জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অথবা আমাদের নিজস্ব সীমিত অনুভূতির উপরে নির্ভর না করে, বিজ্ঞ উপদেশের জন্য আসুন আমরা যিহোবা, তাঁর বাক্য এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রাচীনদের উপরে নির্ভর করি।—গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১ করিন্থীয় ২:৫.
১৪ দ্রুত আগত পরীক্ষার দিনে, মানব প্রজ্ঞা অথবা উচ্চ পদের গর্ব আমাদের জন্য কোন লাভ নিয়ে আসবে না। (যিশাইয় ২৯:১৪; ১ করিন্থীয় ২:১৪) দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে, জাপানে ঈশ্বরের লোকেদের একজন যোগ্য কিন্তু উদ্ধত পরিচালক নিজের বুদ্ধির উপরে নির্ভর করা বেছে নিয়েছিলেন। চাপের সম্মুখীন হয়ে তিনি ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং মণ্ডলীর অনেকে নির্যাতনের মুখে কাজ থামিয়ে দিয়েছিলেন। একজন বিশ্বস্ত জাপানী ভগ্নি, যিনি নোংরা জেলখানার ঘরে জঘন্য ব্যবহারও সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “যারা বিশ্বস্ত ছিলেন তাদের কোন বিশেষ গুণ ছিল না এবং তারা সাধারণ ছিলেন। আমাদের সকলের অবশ্যই উচিত সবসময়ে সম্পূর্ণ চিত্তে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখা।”c
১৫. যদি আমরা যিহোবাকে খুশি করতে চাই তাহলে কোন্ ঐশ্বরিক গুণাবলির প্রয়োজন আছে?
১৫ আমাদের নিজেদের বুদ্ধির পরিবর্তে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখার সঙ্গে নম্রতা জড়িত আছে। যারা যিহোবাকে খুশী করতে চায়, তাদের জন্য এই গুণটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ! কেন, সমস্ত মহাবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু হলেও, এমনকি আমাদের ঈশ্বরও তাঁর বুদ্ধিমান সৃষ্টির সঙ্গে ব্যবহারে নম্রতা প্রকাশ করেন। এই জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। “তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন।” (গীতসংহিতা ১১৩:৬, ৭) তাঁর মহান করুণাবশত, তাঁর প্রিয় পুত্র খ্রীষ্ট যীশুর মূল্যবান প্রায়শ্চিত্তমূলক বলিদানের মাধ্যমে তিনি আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন। তাঁর অযাচিত করুণার জন্য আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ থাকা উচিত!
১৬. মণ্ডলীতে সুযোগ পাওয়ার জন্য ভাইয়েরা কিভাবে প্রচেষ্টা করতে পারেন?
১৬ যীশু নিজে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন: “যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে।” (মথি ২৩:১২) বাপ্তিস্মপ্রাপ্ত ভাইদের উচিত নম্রতার সাথে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে যাওয়া। তবুও, অধ্যক্ষদের তাদের পদকে মর্যাদার কোন প্রতীক হিসাবে নয় কিন্তু নম্রভাবে, উপলব্ধিপূর্ণভাবে, আগ্রহ সহকারে দায়িত্ব পালন করা হিসাবে দেখা উচিত, যীশুর মত, যিনি বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।”—যোহন ৫:১৭; ১ পিতর ৫:২, ৩.
১৭. আমাদের সকলের কী উপলব্ধি করা উচিত, সেই জন্য আমাদের কী করা উচিত?
১৭ আমরা যেন নম্রভাবে এবং প্রার্থনাসহকারে সবসময়ে উপলব্ধি করি যে যিহোবার দৃষ্টিতে আমরা ধূলিকণা ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং, আমাদের কত আনন্দিত হওয়া উচিত যে “সদাপ্রভুর দয়া, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত থাকে; এবং তাঁহার ধর্ম্মশীলতা পুত্ত্র পৌত্ত্রদের প্রতি বর্ত্তে!” (গীতসংহিতা ১০৩:১৪, ১৭) সুতরাং আমাদের সকলের উচিত ঈশ্বরের বাক্যের একাগ্র ছাত্র হওয়া। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধ্যয়নে এবং মণ্ডলীর সভায় যে সময় ব্যয় করা হয়, তা আমাদের কাছে সপ্তাহের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হওয়া উচিত। এইভাবে আমরা “পবিত্রতম-বিষয়ক জ্ঞান” গড়ে তুলি। আর তাই হল “সুবিবেচনা।”—হিতোপদেশ ৯:১০.
“তোমার সমস্ত পথে . . .”
১৮, ১৯. আমরা হিতোপদেশ ৩:৬ পদ কিভাবে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি এবং তার ফল কী হবে?
১৮ সুবিবেচনার ঐশ্বরিক উৎস, যিহোবার প্রতি নির্দেশ করে হিতোপদেশ ৩:৬ পদ এর পরে বলেছে: “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” যিহোবাকে স্বীকার করার অর্থ হল প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে নিকট সম্পর্ক রাখা। আমরা যেখানেই অথবা যে কোন পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন কাজে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় প্রস্তুতির সময়ে, তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে ঘরে-ঘরে প্রচার করার সময়ে ক্রমাগত আমাদের প্রার্থনা হওয়া উচিত তিনি যেন আমাদের কাজকে আশীর্বাদ করেন। এইভাবে আমরা ‘ঈশ্বরের সাথে চলার’ অকল্পনীয় সুযোগ ও আনন্দ পাব, আমরা নিশ্চিত থাকব যে তিনি ‘আমাদের পথ সরল করবেন,’ যেমন তিনি ঈশ্বরভীরু হনোক, নোহ এবং যিহোশূয় ও দানিয়েলের মত বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের করেছিলেন।—আদিপুস্তক ৫:২২; ৬:৯; দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৬; যিহোশূয় ২২:৫; দানিয়েল ৬:২৩; আরও দেখুন যাকোব ৪:৮, ১০.
১৯ যখন আমরা যিহোবার কাছে আমাদের আবেদন জানাই, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে ‘সমস্ত চিন্তার অতীত ঈশ্বরের শান্তি আমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করবে।’ (ফিলিপীয় ৪:৭) ঈশ্বরের এই শান্তি তাদের হাসিখুশি চেহারাতেও দেখা যায় আর প্রচার কাজের সময়ে যে গৃহকর্তাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের কাছে আমাদের বার্তা সুপারিশ করতে তা সাহায্য করতে পারে। (কলসীয় ৪:৫, ৬) বর্তমান জগতে অত্যন্ত সাধারণ চাপ অথবা অন্যায়ের জন্য যারা জর্জরিত, তাদেরও তা উৎসাহ দিতে পারে, নিচের ঘটনাটি যেমন প্রদর্শন করে।d
২০, ২১. (ক) নাৎসি আতঙ্কের সময়ে, বিশ্বস্ততা রাখতে যিহোবার সাক্ষীরা কিভাবে অন্যদের উৎসাহ দিয়েছিল? (খ) ঈশ্বরের স্বরের দ্বারা আমাদের মধ্যে কোন্ সংকল্প জেগে ওঠা উচিত?
২০ জন্মসূত্রে একজন যিহুদী, ম্যাক্স লিবস্টার যিনি প্রায় অলৌকিকভাবে জার্মান হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, তিনি একটি নাৎসি মৃত্যু শিবিরে যাওয়ার ঘটনা এইভাবে বর্ণনা করেছেন: “আমাদের একটি রেলের কামরায় আটকে রাখা হয়েছিল, যেটিকে দুজনের থাকবার মত অনেকগুলি ছোট ছোট খাঁচায় পরিণত করা হয়েছিল। সেগুলির একটিতে লাথি মেরে আমাকে ঢোকানোর পর, আমি একজন বন্দীর সাক্ষাৎ পেলাম যার চোখেমুখে একটি শান্তভাব ফুটে উঠেছিল। সে সেখানে ছিল ঈশ্বরের নিয়মের প্রতি তার শ্রদ্ধার জন্য, অন্যদের রক্তপাত করার তুলনায় জেলখানা এবং সম্ভাব্য মৃত্যু বেছে নেওয়ার জন্য। তিনি যিহোবার একজন সাক্ষী ছিলেন। তার ছেলেমেয়েদের তার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল। সে জানত যে তারও একই পরিণতি হবে। চোদ্দ দিন ধরে এই যাত্রা আমার প্রার্থনার উত্তর নিয়ে এসেছিল, কারণ মৃত্যুর পথে এই যাত্রার সময়েই আমি অনন্ত জীবনের আশা খুঁজে পেয়েছিলাম।”
২১ তার কথা অনুযায়ী “সিংহের গুহা” অশ্উইটসের অভিজ্ঞতা ও বাপ্তিস্মিত হওয়ার পর, এই ভাই একজন যিহোবার সাক্ষীকে বিবাহ করে, যে নিজেও বন্দী ছিল এবং যার বাবা ডাশউ কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নির্যাতিত হয়েছিল। যখন তার বাবা সেখানে ছিল, সে জানতে পেরেছিল যে তার স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে: “আমি খুবই চিন্তিত ছিলাম। তারপর একদিন যখন স্নান করার জন্য আমি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন একটি কণ্ঠস্বরকে হিতোপদেশ ৩:৫, ৬ পদ উদ্ধৃতি করতে আমি শুনতে পাই। . . . স্বর্গ থেকে ভেসে আসার মত সেই স্বর প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। শক্তি ফিরে পেতে আমার ঠিক এটিরই প্রয়োজন ছিল।” আসলে, সেই কণ্ঠস্বর ছিল আরেকজন বন্দীর, যে এই শাস্ত্রটি উদ্ধৃতি করছিল, কিন্তু এই ঘটনাটি দেখায় যে ঈশ্বরের বাক্য আমাদের উপরে কত প্রভাব ফেলতে পারে। (ইব্রীয় ৪:১২) উনিশ্শো চুরানব্বই সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদের মাধ্যমে যিহোবার স্বর যেন আরও দৃঢ়ভাবে আমরা শুনতে পাই: “তুমি সমস্ত চিত্তে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখ”! (w93 12/15)
[পাদটীকাগুলো]
a ডিসেম্বর ১৫, ১৯৭৩ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৭৬০-৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া ক্লড এস্. গুডম্যান কর্তৃক লিখিত “সম্পূর্ণ হৃদয়ে যিহোবার প্রতি আস্থা রাখা” প্রবন্ধটি দেখুন।
b জুলাই ১৫, ১৯৬৮ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৪৩৭-৪০ পৃষ্ঠায় দেওয়া হ্যারি পিটারসন কর্তৃক লিখিত “যিহোবার প্রশংসা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ” প্রবন্ধটি দেখুন।
c মে ১, ১৯৮৮ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২১-৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া মাতসুয়ে ইশি কর্তৃক লিখিত “যিহোবা তাঁর সেবকদের পরিত্যাগ করেন না” প্রবন্ধটি দেখুন।
d অক্টোবর ১, ১৯৭৮ সালের প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২০-৪ পৃষ্ঠায় দেওয়া ম্যাক্স লিবস্টার কর্তৃক লিখিত “পরিত্রাণ! আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা,” প্রবন্ধটিও দেখুন।
সারাংশে
▫ হিতোপদেশে কী ধরনের উপদেশ দেওয়া হয়েছে?
▫ যিহোবার প্রতি আস্থা কিভাবে আমাদের উপকার করতে পারে?
▫ যিহোবার প্রতি নির্ভর করার সাথে কী জড়িত আছে?
▫ কিভাবে আমরা আমাদের সমস্ত পথে যিহোবাকে স্বীকার করতে পারি?
▫ যিহোবা কিভাবে আমাদের পথ সকল সরল করেন?
[Pictures on page 21]
রাজ্যের আনন্দময় বার্তা সহৃদয় লোকেদের কাছে আকর্ষণীয় হয়