ঐশিক শিক্ষা বনাম মন্দ আত্মাদের শিক্ষা
“কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।”—১ তীমথিয় ৪:১.
১. খ্রীষ্টানেরা কোন্ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে?
কল্পনা করুন যে আপনি সারা জীবন এক যুদ্ধ এলাকায় বাস করছেন। রাতে গোলাবর্ষনের আওয়াজ শুনে ঘুমাতে যাওয়া এবং ভোরে কামানের শব্দ শুনে জেগে ওঠা, কেমন হবে? দুঃখের বিষয় যে জগতের কিছু কিছু অংশে, এইভাবেই লোকে বাস করছে। কিন্তু আধ্যাত্মিক অর্থে সকল খ্রীষ্টানেরাই এইভাবে বাস করছে। তারা এক মহা যুদ্ধের মধ্যে বাস করছে যা প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে চলে আসছে এবং আমাদের দিনে তা চরম সীমায় পৌঁছেছে। কিসের এই দীর্ঘদিনব্যাপী যুদ্ধ? সত্য বনাম মিথ্যার, ঐশিক শিক্ষা বনাম মন্দ আত্মাদের শিক্ষার যুদ্ধ। মানবজাতির ইতিহাসে এই বিবাদকে সবচেয়ে নির্দয় এবং সবচেয়ে মারাত্মক বলা অতিরঞ্জিত করা হবে না—বিরোধী পক্ষের মধ্যে অন্তত এক পক্ষের কার্যগুলির ক্ষেত্রে।
২. (ক) পৌলের বাক্য অনুসারে, কোন্ দুটি পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে? (খ) “বিশ্বাস” বলতে পৌল কী বুঝিয়েছিলেন?
২ এই বিবাদের দুটি পক্ষ সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন যখন তিনি তীমথিয়কে লেখেন: “কিন্তু আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীমথিয় ৪:১) লক্ষ্য করুন যে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা “উত্তরকালে” বিশেষকরে প্রভাবশালী হবে। পৌলের দিনে যেমন দৃষ্টিভঙ্গি রাখা হত, সেই অনুযায়ী আমরা সেই সময়েই বাস করছি। এও লক্ষ্য করুন, যে বিষয়টি মন্দ আত্মাদের শিক্ষার বিরোধী, তা হল “বিশ্বাস।” এখানে, “বিশ্বাস” হল ঐশিক শিক্ষা, যার ভিত্তি বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত ঐশিকরূপে অনুপ্রাণিত ঈশ্বরের উক্তিগুলির উপর। সেই ধরনের বিশ্বাস জীবন-দানকারী। এটি একজন খ্রীষ্টানকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে শিক্ষা দেয়। এটি হল সেই সত্য যা অনন্ত জীবনে নিয়ে যায়।—যোহন ৩:১৬; ৬:৪০.
৩. (ক) সত্য বনাম মিথ্যার যুদ্ধের শিকারদের কী হয়? মন্দ আত্মাদের শিক্ষার পিছনে কে আছে?
৩ যারা বিশ্বাস থেকে পতিত হয় তারা অনন্ত জীবন হারায়। তারা হল যুদ্ধে হত ব্যক্তি। মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দ্বারা নিজেদের চালিত হতে দেওয়ার জন্য কতই না দুঃখজনক ফল! (মথি ২৪:২৪) আমরা কিভাবে ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধের শিকার হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি? এই মিথ্যা শিক্ষাগুলিকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে, যেগুলি “ভূতগণের অধিপতি” দিয়াবল শয়তানের উদ্দেশ্য সাধন করে। (মথি ১২:২৪) বলা যায় যে শয়তানের শিক্ষাগুলি হল মিথ্যা, যেহেতু শয়তান “মিথ্যাবাদীর পিতা।” (যোহন ৮:৪৪) আমাদের প্রথম পিতামাতাকে ভ্রান্ত করার জন্য কত দক্ষতার সাথে সে মিথ্যাকে ব্যবহার করেছিল তা বিবেচনা করুন।
মন্দ আত্মাদের শিক্ষা প্রকাশ পায়
৪, ৫. শয়তান হবাকে কোন্ মিথ্যা বলে এবং কেন সেটি মন্দ ছিল?
৪ ঘটনাগুলি বাইবেলের আদিপুস্তক ৩:১-৫ পদে লিপিবদ্ধ আছে। একটি সর্পকে ব্যবহার করে শয়তান হবার কাছে যায় এবং জিজ্ঞাসা করে: “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?” প্রশ্নটিকে অত ক্ষতিকারক মনে হয় না, কিন্তু আবার বিবেচনা করুন। “ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন?” শয়তান এখানে মনে হচ্ছে আশ্চর্য হয়ে গেছে, যেন সে বলতে চায় ‘ঈশ্বর কেন এই ধরনের কিছু বলবেন?’
৫ হবা সরলভাবে বলে যে ঈশ্বর তাই বলেছেন। এই বিষয়ে ঐশিক শিক্ষাটি সে জানত, কারণ ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন যে যদি তারা সদসদ্ জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ থেকে ফল খায় তাহলে তারা মারা যাবে। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) মনে হয় শয়তানের প্রশ্ন তাকে আগ্রহী করে তুলেছিল তাই শয়তান যখন তার তর্কের মুখ্য বিষয়ে আসে, সে তা শোনে: “তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না।” কতই না মন্দ বিষয় বলেছিল! সত্যের ঈশ্বর, প্রেমের ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা যিহোবা তাঁর সন্তানদের কাছে মিথ্যা বলেছেন শয়তান এই অভিযোগ করেছিল!—গীতসংহিতা ৩১:৫; ১ যোহন ৪:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.
৬. শয়তান কিভাবে যিহোবার মঙ্গলভাব ও সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ করে?
৬ কিন্তু শয়তান আরও কিছু বলে। সে আরও বলে চলে: “কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।” শয়তানের কথা অনুযায়ী, যিহোবা ঈশ্বর—যিনি আমাদের প্রথম পিতামাতার জন্য প্রচুর পরিমাণে দান করেন—কিছু অপূর্ব বিষয় থেকে তাদের বঞ্চিত করতে চান। তাদের ঈশ্বরের সদৃশ হতে বঞ্চিত করতে চান। ফলে, শয়তান ঈশ্বরের মঙ্গলভাবকে চ্যালেঞ্জ করে। সে আত্মতুষ্টি, এবং ইচ্ছা করে ঈশ্বরের নিয়ম লঙ্ঘন করার জন্য উৎসাহ দেয় এই বলে, যে এইভাবে কাজ করলে উপকারজনক হবে। আসলে, শয়তান ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি তাঁর সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযোগ করে যে মানুষ যা করবে তার সীমা নির্ধারণ করার কোন অধিকার ঈশ্বরের নেই।
৭. মন্দ আত্মাদের শিক্ষা কখন প্রথম শোনা যায় এবং বর্তমানেও কিভাবে সেইগুলি একই?
৭ শয়তানের ওই সকল বাক্যগুলির সাথে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা প্রকাশ পেল। এই মন্দ শিক্ষাগুলি এখনও একইরকম অনৈশ্বরিক নীতিগুলি শিক্ষা দিয়ে থাকে। ঠিক যেমন সে এদন উদ্যানে করে, শয়তান অন্যান্য বিদ্রোহী আত্মাদের সাথে মিলিত হয়ে যে কোন কাজের ক্ষেত্রে মান নির্ণয় করার ঈশ্বরের অধিকারকে এখনও চ্যালেঞ্জ করে। সে এখনও যিহোবার সার্বভৌমত্বকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান জানায় এবং স্বর্গীয় পিতার অবাধ্য হতে মানুষকে প্রভাবিত করে।—১ যোহন ৩:৮, ১০.
৮. এদনে আদম ও হবা কী হারায়, কিন্তু যিহোবা কিভাবে সত্য প্রমাণিত হন?
৮ ঐশিক শিক্ষা বনাম মন্দ আত্মাদের শিক্ষার বিবাদের প্রথম বিরোধিতায় আদম ও হবা ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং অনন্ত জীবনের আশা হারায়। (আদিপুস্তক ৩:১৯) সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তাদের স্বাস্থ্যের ভাঙ্গন ধরে, তখন তারা সম্পূর্ণরূপে স্থির করতে পারে যে এদনে কে সত্য এবং কে মিথ্যা বলেছিল। যাইহোক, পার্থিব অর্থে মারা যাওয়ার শত শত বছর আগে তারা সত্য বনাম মিথ্যার যুদ্ধের প্রথম শিকার হয় যখন তারা তাদের স্রষ্টা, জীবনদাতার চোখে জীবিত থাকার জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে। আধ্যাত্মিক অর্থে তখন তারা মারা গিয়েছিল।—গীতসংহিতা ৩৬:৯; তুলনা করুন ইফিষীয় ২:১.
বর্তমানে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা
৯. শতাব্দী ধরে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা কতটা প্রভাবশালী হয়েছে?
৯ প্রকাশিত বাক্যের পুস্তকে যেমন লেখা আছে, প্রেরিত যোহন আত্মাবিষ্ট হয়ে “প্রভুর দিনে” চলে যান যা ১৯১৪ সালে শুরু হয়। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০) সেই সময়েই শয়তান ও তার মন্দ দূতদের পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়—আমাদের মহান স্রষ্টার এই বিরোধীর পক্ষে এক মহা বাধার সৃষ্টি হয়। যিহোবার দাসদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগ করতে তার স্বর স্বর্গে আর শোনা যায় না। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০) এদনের ঘটনার পর থেকে মন্দ আত্মাদের শিক্ষার পৃথিবীতে কেমন উন্নতি হয়? বিবরণ বলে: “সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) সমস্ত পৃথিবী শয়তানের মিথ্যাতে নিমজ্জিত হয়েছে! তাই কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে শয়তানকে “জগতের অধিপতি” বলা হয়।—যোহন ১২:৩১; ১৬:১১.
১০, ১১. শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা কিভাবে বর্তমানে সক্রিয় আছে?
১০ স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কি শয়তান নতি স্বীকার করেছে? কখনই না! ঐশিক শিক্ষা ও যারা সেটি ধরে রেখেছে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর, শয়তান তার যুদ্ধ চালিয়ে যায়: “সেই স্ত্রীলোকটির প্রতি নাগ [শয়তান] ক্রোধান্বিত হইল, আর তাহার বংশের সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল।”—প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.
১১ ঈশ্বরের দাসদের বিরোধিতা করা ছাড়াও, শয়তান তার প্রচার দিয়ে জগতকে পূর্ণ করেছে, মানবজাতিকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখার চেষ্টা করছে। প্রভুর দিন সম্বন্ধীয় প্রকাশিত বাক্যের দর্শনের একটিতে, প্রেরিত যোহন তিনটি বন্য পশুকে দেখেন যা রূপকভাবে শয়তানকে, তার পার্থিব রাজনৈতিক সংগঠনকে এবং আমাদের দিনের শাসনরত বিশ্ব শক্তিকে চিত্রিত করে এই তিনটির মুখ থেকে ভেক্ বার হয়ে আসে। এটি কী চিত্রিত করে? যোহন লেখেন: “তাহারা ভূতদের আত্মা, নানা চিহ্ন-কার্য্য করে; তাহারা জগৎ সমুদয়ের রাজাদের নিকটে গিয়া সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে তাহাদিগকে একত্র করে।” (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪) স্পষ্টতই মন্দ আত্মাদের শিক্ষা পৃথিবীতে খুবই সক্রিয়। শয়তান ও তার মন্দ আত্মারা ক্রমাগত ঐশিক শিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছে, আর তারা যুদ্ধ করেই যাবে যতক্ষণ না মশীহ খ্রীষ্ট তাদের জোর করে বন্ধ করাবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২০:২.
মন্দ আত্মাদের শিক্ষা শনাক্ত করা
১২. (ক) মন্দ আত্মাদের শিক্ষার প্রতিরোধ করা সম্ভব কেন? (খ) ঈশ্বরের দাসদের মাধ্যমে শয়তান কিভাবে তার উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়?
১২ ঈশ্বর-ভীরু মানুষেরা কি মন্দ আত্মাদের শিক্ষাকে প্রতিরোধ করতে পারে? তারা নিশ্চয়ই পারে, দুটি কারণের জন্য। প্রথমত, ঐশিক শিক্ষা হল বেশি শক্তিশালী; আর দ্বিতীয়ত, যিহোবা শয়তানের কৌশলগুলিকে প্রকাশ করে দিয়েছেন যাতে আমরা তার প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন প্রেরিত পৌল বলেন, “তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করিন্থীয় ২:১১) আমরা জানি যে শয়তান তার উদ্দেশ্য সাধন করতে তাড়নাকে ব্যবহার করে। (২ তীমথিয় ৩:১২) কিন্তু যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করে তাদের মন ও হৃদয়কে সে খুব ধূর্তভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করে। সে হবাকে বিপথে নিয়ে যায় ও তার হৃদয়ে মন্দ ইচ্ছা প্রদান করে। বর্তমানেও সে একই জিনিস করার চেষ্টা করে। পৌল করিন্থীয়দের লেখেন: “আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ত্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়।” (২ করিন্থীয় ১১:৩) সাধারণভাবে মানবজাতির চিন্তাধারাকে সে কিভাবে কলুষিত করেছে তা বিবেচনা করুন।
১৩. এদনের সময় থেকে শয়তান মানবজাতিকে কী মিথ্যা বলে আসছে?
১৩ হবার কাছে শয়তান, যিহোবা মিথ্যা বলছে বলে অভিযোগ করে এবং বলে যে যদি তারা স্রষ্টার অবাধ্য হয় তাহলে তারা ঈশ্বরের সদৃশ হতে পারবে। মানবজাতির পাপপূর্ণ পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে যিহোবা নয়, কিন্তু শয়তানই ছিল মিথ্যাবাদী। বর্তমানে মানুষেরা ঈশ্বরে পরিণত হয়নি! কিন্তু, শয়তান একটার পর একটা মিথ্যা বলেই চলে। মানব আত্মা অমর, অবিনশ্বর এই মতবাদটি সে প্রবর্তন করে। ফলে সে ভিন্নরূপে ঈশ্বরের সদৃশ হওয়ার সম্ভাবনাকে মানবজাতির সামনে তুলে ধরে। তারপর, সেই মিথ্যা মতবাদের উপর ভিত্তি করে সে নরকাগ্নির শিক্ষা, পুরগাতরি, প্রেতচর্চা, পূর্বপুরুষদের উপাসনার প্রবর্তন করে। এই মিথ্যাগুলি কোটি কোটি লোকেদের দাসত্বে রেখেছে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:৯-১৩.
১৪, ১৫. মৃত্যু এবং মানুষের ভবিষ্যতের আশা সম্বন্ধে সত্যটি কী?
১৪ অবশ্যই, আদমকে যিহোবা যা বলেছিলেন তা সত্য ছিল। যখন আদম ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে সে মারা যায়। (আদিপুস্তক ৫:৫) যখন আদম ও তার বংশধরেরা মারা যায় তারা তখন হয় মৃত ব্যক্তি, অচেতন, নিষ্ক্রিয়। (আদিপুস্তক ২:৭; উপদেশক ৯:৫, ১০; যিহিষ্কেল ১৮:৪) আদম থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাপ আসার জন্য সকল মানুষই মারা যায়। (রোমীয় ৫:১২) কিন্তু এদনে, যিহোবা এক বীজ আসার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেন যা দিয়াবলের কাজের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫) সেই বীজ ছিল ঈশ্বরের নিজের একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট। যীশু মারা যান নিষ্পাপরূপে, আর মানবজাতিকে মৃত দশা থেকে ক্রয় করতে তাঁর বলিদানমূলক জীবন হয় মুক্তির মূল্য। যারা বাধ্যতার সাথে যীশুর প্রতি বিশ্বাস রাখে তারা আদম যা হারায়, সেই অনন্ত জীবন লাভ করার সুযোগ পায়।—যোহন ৩:৩৬; রোমীয় ৬:২৩; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬.
১৫ মুক্তির মূল্য হল মানবজাতির বাস্তব আশা, মৃত্যুর পরে আত্মা বেঁচে থাকে এইরূপ কোন অনিশ্চিত মতবাদ নয়। এটি হল ঐশিক শিক্ষা। এটি হল সত্য। এটি হল যিহোবার প্রেম ও প্রজ্ঞারও অপূর্ব প্রদর্শন। (যোহন ৩:১৬) এই সত্য জানার জন্য এবং এই বিষয়ে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা থেকে মুক্তি লাভ করার জন্য আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ থাকা উচিত!—যোহন ৮:৩২.
১৬. যখন মানুষ নিজেদের প্রজ্ঞার অনুসরণ করে তখন তার দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল কী হয়?
১৬ এদন উদ্যানে তার মিথ্যার দ্বারা শয়তান আদম ও হবাকে ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হতে এবং নিজেদের প্রজ্ঞায় নির্ভর করতে উৎসাহ দেয়। তার দীর্ঘস্থায়ী ফল আমরা দেখি বর্তমান জগতে অপরাধ, আর্থিক সঙ্কট, যুদ্ধ, প্রচুর বৈষম্যের মধ্যে। তাই কোন আশ্চর্যের নয় যে বাইবেল বলে: “এই জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা”! (১ করিন্থীয় ৩:১৯) তবুও, বেশির ভাগ মানুষ যিহোবার শিক্ষায় মনোযোগ না দিয়ে মূর্খের মত দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পছন্দ করে। (গীতসংহিতা ১৪:১-৩; ১০৭:১৭) যে সকল খ্রীষ্টানেরা ঐশিক শিক্ষা গ্রহণ করেছে তারা সেই ফাঁদকে এড়িয়ে চলে।
১৭. শয়তান কোন্ “অযথারূপ বিদ্যার”র প্রসার করেছে এবং তার ফলাফল কী হয়েছে?
১৭ পৌল তীমথিয়কে লেখেন: “হে তীমথিয়, তোমার কাছে যাহা গচ্ছিত হইয়াছে, তাহা সাবধানে রাখ; যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে বিমুখ হও; সেই বিদ্যা অঙ্গীকার করিয়া কেহ কেহ বিশ্বাস সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৬:২০, ২১) সেই “বিদ্যা” মন্দ আত্মাদের শিক্ষাকেও প্রতিনিধিত্ব করে। পৌলের দিনে তা হয়ত ছিল ধর্মভ্রষ্ট মতবাদগুলি যাতে মণ্ডলীর কিছু জন উৎসাহ দেখাচ্ছিল। (২ তীমথিয় ২:১৬-১৮) পরর্বতীকালে, যাকে অযথারূপে বিদ্যা বলা হত, যেমন প্রাচীনকালের খ্রীষ্টানদের রহস্যবাদ ও গ্রীক দর্শনবাদ, মণ্ডলীকে কলুষিত করে। বর্তমান জগতে নিরীশ্বরবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, ক্রমবিবর্তনবাদতত্ত্ব ও বাইবেলের সূক্ষ্ণ সমালোচনা হল অযথারূপে বিদ্যার উদাহরণ, আধুনিক ধর্মভ্রষ্টদের অশাস্ত্রীয় মতবাদগুলির মত। অযথারূপে এই বিদ্যার ফলগুলি হল নৈতিক অধঃপতন, কর্তৃপক্ষের প্রতি ব্যাপকভাবে অশ্রদ্ধা, অসাধুতা এবং স্বার্থপরতা, যা শয়তানের ব্যবস্থার চরিত্র মাত্র।
ঐশিক শিক্ষা ধরে রাখা
১৮. বর্তমানে কারা ঐশিক শিক্ষার অন্বেষণ করে?
১৮ এদনের কাল থেকে শয়তান পৃথিবীকে মন্দ আত্মাদের শিক্ষা দ্বারা জর্জরিত করলেও সবসময় কিছু লোক থেকে গেছে যারা ঐশিক শিক্ষার অন্বেষণ করেছে। সেই ধরনের লোকেদের সংখ্যা আজ বহু লক্ষ। তাদের অন্তর্ভুক্ত হল অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশ যাদের যীশুর সাথে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যে রাজত্ব করার আশা আছে এবং “অপর মেষ”দের বৃদ্ধিরত বিস্তর লোক যাদের আশা হল সেই রাজ্যের পার্থিব অংশ অধিকার করা। (মথি ২৫:৩৪; যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৩, ৯) বর্তমানে, এরা এক জগদ্ব্যাপী সংগঠনে একত্রিত হয়েছে যাদের ক্ষেত্রে যিশাইয়ের এই কথাগুলি প্রযোজ্য হয়: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে।”—যিশাইয় ৫৪:১৩.
১৯. যিহোবার দ্বারা শিক্ষা প্রাপ্ত হওয়ার মধ্যে কী অন্তর্ভুক্ত?
১৯ যিহোবার দ্বারা শিক্ষিত হওয়ার অর্থ সত্য মতবাদগুলি জানা ছাড়াও আরও কিছু—যদিও সেগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে জীবন-যাপন করতে হয়, কিভাবে ব্যক্তিগত জীবনে ঐশিক শিক্ষা প্রয়োগ করতে হয়, যিহোবা আমাদের শিক্ষা দেন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা স্বার্থপরতা, অনৈতিকতা এবং স্বাধীনতা মনোভাবকে প্রতিরোধ করি, যা জগতে আমাদের চারিপাশে বৃদ্ধিশীল। এই জগতে ধন-সম্পদের পিছনে অযথা দৌড় আসলে কী, আমরা তা উপলব্ধি করি—মারাত্মক। (যাকোব ৫:১-৩) প্রেরিত যোহনের বাক্য উচ্চারিত ঐশিক শিক্ষা আমরা কখনও ভুলে যাই না: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই।”—১ যোহন ২:১৫.
২০, ২১. (ক) মানুষকে অন্ধ করতে শয়তান কী ব্যবহার করে? (খ) যারা ঐশিক শিক্ষাকে ধরে রাখে তাদের প্রতি কী আশীর্বাদ আসে?
২০ মন্দ আত্মাদের শিক্ষার শিকারদের প্রতি যে প্রভাব হয় তা করিন্থীয়দের প্রতি পৌলের বাক্যে দেখা যা: “[শয়তান] অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচারদীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৪) শয়তান এইভাবেও সত্য খ্রীষ্টানদের অন্ধ করতে চায়। অতীতে এদনে, ঈশ্বরের এক দাসকে ভ্রান্ত করতে সে একটি সর্পকে ব্যবহার করেছিল। বর্তমানে সে মারামারির অথবা অনৈতিক চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের কার্যক্রমগুলি ব্যবহার করে। সে রেডিও, সাহিত্য এবং সঙ্গীতের দুর্ব্যবহার করে। তার হাতে এক শক্তিশালী অস্ত্র হল মন্দ সঙ্গী-সাথী। (হিতোপদেশ ৪:১৪; ২৮:৭; ২৯:৩) এইগুলির আসল পরিচয়টি সবসময় উপলব্ধি করুন—মন্দ আত্মাদের শিক্ষা ও অস্ত্র।
২১ স্মরণে রাখুন, এদনে শয়তানের কথাগুলি ছিল মিথ্যা; যিহোবার কথাগুলিই সত্য প্রমাণিত হয়। সেই আদি কাল থেকে এখনও পর্যন্ত একই বিষয় চলে আসছে। শয়তান সবসময় মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হয়েছে এবং ঐশিক শিক্ষা অব্যর্থভাবে সত্য হয়েছে। (রোমীয় ৩:৪) যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে ধরে থাকি তাহলে সত্য বনাম মিথ্যার যুদ্ধেতে আমরা সবসময় বিজয়ীর পক্ষেই থাকব। (২ করিন্থীয় ১০:৪, ৫) তাহলে আসুন, মন্দ আত্মাদের সকল শিক্ষাকে পরিত্যাগ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই। এইভাবে আমরা সেই সময় পর্যন্ত থাকতে পারব যখন সত্য বনাম মিথ্যার যুদ্ধের অবসান হবে। সত্যের জয় হবে। শয়তান আর থাকবে না ও পৃথিবীতে কেবলমাত্র ঐশিক শিক্ষাই শোনা যাবে।—যিশাইয় ১১:৯.
আপনি কি বর্ণনা করতে পারেন?
▫ কখন প্রথম মন্দ আত্মাদের শিক্ষা শোনা যায়?
▫ শয়তান ও তার মন্দ আত্মাদের দ্বারা কোন্ কোন্ মিথ্যার প্রসার হয়েছে?
▫ কিরূপে শয়তান বর্তমানে প্রচণ্ডভাবে সক্রিয়?
▫ মন্দ আত্মাদের শিক্ষা প্রসার করতে শয়তান কী ব্যবহার করে?
▫ যারা ঐশিক শিক্ষা ধরে রাখে তাদের প্রতি কী আশীর্বাদ আসে?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
মন্দ আত্মাদের শিক্ষা প্রথম এদন উদ্যানে শোনা যায়
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
মুক্তির মূল্য এবং রাজ্য সম্বন্ধে ঐশিক শিক্ষা মানবজাতির জন্য একমাত্র আশা প্রদান করে