ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী চলুন
“চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, . . . গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।”—মীখা ৪:২.
১. মীখার কথা অনুযায়ী, শেষকালে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য কী করবেন?
ঈশ্বরের ভাববাদী মীখা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে “শেষকালে,” আমাদের সময়ে, তাঁকে উপাসনা করার জন্য, অনেকে সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের অন্বেষণ করবে। এরা একে অপরকে উৎসাহ দিয়ে বলবে: “চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, . . . গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।”—মীখা ৪:১, ২.
২, ৩. লোকের অর্থপ্রিয় হওয়া সম্বন্ধে পৌলের ভবিষ্যদ্বাণী আজ কিভাবে পরিপূর্ণ হচ্ছে?
২ “শেষকালে” ঈশ্বরের নির্দেশ পাওয়ার ফল আমরা বুঝতে পারব যদি আমরা ২ তীমথিয় ৩:১-৫ পদ পরীক্ষা করি। পূর্ববর্তী প্রবন্ধে, আমরা লক্ষ্য করেছিলাম যারা “আত্মপ্রিয়” না হওয়া সম্বন্ধে পৌলের উপদেশ গ্রহণ করে, তাদের কী কী উপকার হয়। পৌল আরও বলেছিলেন যে আমাদের দিনে লোকে “অর্থপ্রিয়” হবে।
৩ ঐ কথাগুলি আমাদের দিনের প্রতি কত উপযুক্তরূপে প্রযোজ্য, তা বুঝবার জন্য কারুর আধুনিক ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনি কি অর্থবিনিয়োগকর্তাদের এবং ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির অধ্যক্ষদের কথা পড়েননি যারা প্রতি বছর বহু লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেও সন্তুষ্ট নয়? এমনকি অসৎ উপায় অবলম্বন করেও এই অর্থপ্রিয় লোকেরা আরও চায়। পৌলের কথাগুলি তাদের প্রতিও প্রযোজ্য যারা ধনী না হলেও, ঠিক একই রকম লোভী, কখনও সন্তুষ্ট নয়। আপনার চারিপাশেই হয়ত আপনি এইরকম বহু লোকেদের জানেন।
৪-৬. অর্থপ্রিয় হওয়া থেকে বিরত থাকতে বাইবেল কিভাবে খ্রীষ্টানদের সাহায্য করে?
৪ পৌল যা উল্লেখ করেছিলেন তা কি মানব চরিত্রের একটি অপরিহার্য বিষয়? বাইবেলের লেখক অনুযায়ী নয়, যিনি বহু পূর্বে এই সত্যটি বলেছিলেন: “ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।” লক্ষ্য করুন ঈশ্বর বলেননি যে ‘ধনসম্পদ সকল মন্দের মূল।’ তিনি বলেছেন, “ধনাসক্তি”।—১ তীমথিয় ৬:১০.
৫ আগ্রহের বিষয়, পৌলের বাক্যগুলির ভূমিকা দেখায় যে প্রথম শতাব্দীতে কিছু উত্তম খ্রীষ্টানেরা সেই বিধিব্যবস্থাতেই ধনী ছিলেন, হয়ত তারা ধনসম্পদ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন অথবা তা অর্জন করেছিলেন। (১ তীমথিয় ৬:১৭) সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে, আমাদের আর্থিক অবস্থা যাই হোক না কেন, বাইবেল অর্থপ্রিয় হওয়ার বিপদ সম্বন্ধে আমাদের সাবধান করে দেয়। এই দুঃখজনক এবং সাধারণ দোষ এড়িয়ে চলতে বাইবেল কি আর কোন সাহায্যকারীর শিক্ষা দেয়? বাস্তবিকই দেয়, যেমন পর্বতে দত্ত যীশুর উপদেশ। এই উপদেশের প্রজ্ঞা জগৎ-বিখ্যাত। মথি ৬:২৬-৩৩ পদে যীশু কী বলেছিলেন লক্ষ্য করুন।
৬ লূক ১২:১৫-২১ পদে যেমন লেখা আছে, যীশু একজন ধনী ব্যক্তির কথা বলেছিলেন যিনি ক্রমাগত আরও বেশি অর্থ সঞ্চয় করার চেষ্টা করতেন কিন্তু হঠাৎ তিনি মারা যান। যীশুর কী বোঝাতে চাইছিলেন? তিনি বলেছিলেন: “সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” এইরকম উপদেশের সাথে, বাইবেল অলসতার নিন্দা করে এবং সততাসহকারে পরিশ্রম করার মূল্যের উপর জোর দেয়। (১ থিষলনীকীয় ৪:১১, ১২) অনেকে হয়ত আপত্তি করতে পারে যে এই ধরনের শিক্ষা আমাদের দিনে প্রযোজ্য নয়—কিন্তু এই শিক্ষা অবশ্যই প্রযোজ্য এবং তা কার্যকারী।
নির্দেশপ্রাপ্ত এবং উপকৃত
৭. ধনসম্পদ সম্বন্ধে বাইবেলের উপদেশ যে আমরা সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারব, সেই আস্থা রাখবার কী কারণ আছে?
৭ বহু দেশে, সামাজিক এবং আর্থিক সব স্তরের মানুষের উদাহরণ আপনি পাবেন যারা টাকাপয়সা সম্বন্ধে এই ঐশ্বরিক নীতিগুলি জীবনে প্রয়োগ করেছে। তারা নিজেরা এবং তাদের পরিবার উপকৃত হয়েছে এমনকি যা বাইরের লোকেরাও দেখতে পায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রিন্সটন্ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশক কর্তৃক আধুনিক আমেরিকায় ধর্মের প্রভাব (ইংরাজি) বইতে একজন নৃবিজ্ঞানী লিখেছিলেন: “[সাক্ষীদের] প্রকাশনায় এবং মণ্ডলীর বক্তৃতায় তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে তারা নতুন গাড়ি, দামি পোশাক অথবা অতি প্রাচুর্যপূর্ণ জীবনধারার উপর যেন নির্ভরশীল না থাকে। একই সঙ্গে একজন সাক্ষীর উচিত তার কর্মকর্তার জন্য পরিশ্রম করা [এবং] সবসময় সততাপরায়ণ থাকা। . . . এই ধরণের গুণ থাকলে, এমনকি খুব বেশি দক্ষ না হলেও, একজন কর্মী উপকারী হয়ে উঠতে পারে আর উত্তর ফিলাডেলিফিয়াতে [যুক্তরাষ্ট্রে] কিছু সাক্ষীকে বেশ দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার দেওয়া হয়েছে।” স্পষ্টত, যে মনোভাব থাকলে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে, যারা ঈশ্বরের নির্দেশ গ্রহণ করে, তাদের সেই সম্বন্ধে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে বাইবেলের নির্দেশ আরও ভাল, আরও সুখী জীবন নিয়ে আসে।
৮. “আত্মশ্লাঘী,” “অভিমানী,” ও “ধর্ম্মনিন্দকের” মধ্যে কেন সম্পর্ক আছে, আর এই তিনটি কথার অর্থ কী?
৮ পৌল এর পরে যে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলিকে আমরা একসাথে সম্পর্কযুক্ত করতে পারি। শেষকালে, লোকে “আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক” হবে। এই তিনটি বিষয় একেবারে এক না হলেও, সবকটিই গর্বের সঙ্গে জড়িত। প্রথমটি হল “আত্মশ্লাঘী।” একটি অভিধান আমাদের জানায় যে এর মূল গ্রীক্ শব্দের অর্থ হল: “‘নিজেকে যে অযৌক্তিকভাবে বড় মনে করে’ অথবা ‘সে যা করতে পারে তার চেয়ে বেশি করার প্রতিশ্রুতি দেয়।’” তাই আপনি বুঝতে পারছেন কেন কিছু বাইবেল “গর্বিত” কথাটি ব্যবহার করে। এর পর আসছে “অভিমানী,” অথবা আক্ষরিকভাবে “আত্মাভিমানী।” শেষ বিষয় “ধর্মনিন্দক।” কেউ কেউ মনে করে যে ধর্মনিন্দকেরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধাজনক কথা বলে, কিন্তু শব্দটির প্রকৃত অর্থের মধ্যে মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষতিকারক, অসম্মানজনক অথবা কটুবাক্য বলাও অন্তর্ভুক্ত আছে। সুতরাং পৌল ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়ের নিন্দা করা সম্বন্ধে বলছিলেন।
৯. বর্তমান ক্ষতিকারক মনোভাবের বিপরীতে, কোন্ মনোভাব রাখতে বাইবেল লোকেদের উৎসাহ দেয়?
৯ পৌলের বর্ণনা যে ব্যক্তিদের প্রতি প্রযোজ্য, তাদের সঙ্গে থাকতে আপনার কিরকম মনে হয়, তারা সহকর্মী, সহপাঠী অথবা আত্মীয় যাই হোক না কেন? আপনার জীবন কি আরও সহজ হয়? অথবা এই ধরনের লোকেরা আপনার জীবন আরও জটিল করে তোলে, আমাদের কালের মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে? ঈশ্বরের বাক্য কিন্তু আমাদের এই- রকম মনোভাব পরিত্যাগ করতে শিক্ষা দেয়, ১ করিন্থীয় ৪:৭; কলসীয় ৩:১২, ১৩; এবং ইফিষীয় ৪:২৯ পদের উপদেশের মাধ্যমে।
১০. বাইবেলের নির্দেশ গ্রহণ করে যিহোবার লোকেরা যে উপকৃত হয়, সেই সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত করে?
১০ খ্রীষ্টানেরা অসিদ্ধ হলেও, এই সদুপদেশ প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমাদের সংকটপূর্ণ সময়ে অনেক সাহায্য পাওয়া যায়। ইটালিয়ান্ পত্রিকা লা চিভিল্টা কাটোলিকা বলে যে যিহোবার সাক্ষীরা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার একটি কারণ হল যে এই “সংগঠন তার সদস্যদের একটি নির্দিষ্ট এবং দৃঢ় পরিচয় দেয়।” কিন্তু, “দৃঢ় পরিচয়” বলতে লেখক কি “আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্মনিন্দক” মনোভাব বুঝিয়েছিলেন? না, বরং, জেসুইট পত্রিকা উল্লেখ করে যে এই দলটি “তার সদস্যদের একটি নির্দিষ্ট এবং দৃঢ় পরিচয় দেয় এবং যেখানে তাদের আন্তরিকতা ও ভ্রাতৃত্ব এবং সংহতির মনোভাব নিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়।” সাক্ষীদের যা শেখানো হয়েছে তাদের সেটি সাহায্য করছে তা কি স্পষ্ট নয়?
নির্দেশ পরিবারের সদস্যদের উপকৃত করে
১১, ১২. বহু পরিবারের অবস্থা কী হবে, সেই সম্বন্ধে পৌল সঠিকভাবে কী ইঙ্গিত করেছিলেন?
১১ আমরা পরবর্তী চারটি বিষয় এক দলভুক্ত করতে পারি, যেগুলির মধ্যে কিছুটা সম্পর্ক আছে। পৌল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে শেষকালে অনেকে “পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত,” হবে। আপনি জানেন যে এই দোষগুলির মধ্যে দুটি আমরা চারিদিকে দেখতে পাই—অকৃতজ্ঞতা এবং অসাধুতা। কিন্তু আমরা সহজেই বুঝতে পারব কেন এই দোষগুলিকে পৌল “পিতামাতার অবাধ্য” হওয়া এবং “স্নেহরহিতের” মাঝখানে রেখেছেন। এই চারটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক দেখা যায়।
১২ ফলতঃ যুবক অথবা বৃদ্ধ—যে কোন সচেতন ব্যক্তিকে স্বীকার করতেই হবে যে পিতামাতার অবাধ্যতা খুবই সাধারণ এবং তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু পিতামাতা অভিযোগ করে যে ছেলেমেয়েদের জন্য যা করা হয় তার জন্য তারা কৃতজ্ঞ নয়। বহু যুবক-যুবতীরা অভিযোগ করে যে তাদের পিতামাতারা সত্যই তাদের (অথবা সাধারণভাবে তাদের পরিবারের) প্রতি বিশ্বস্ত নয়, কিন্তু তাদের কর্মক্ষেত্র, আমোদ-প্রমোদ বা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দোষ কাদের, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা না করে আসুন আমরা এর ফল সম্বন্ধে দেখি। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের এবং যুবকদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, প্রায়ই নৈতিকতা অথবা অনৈতিকতা সম্বন্ধে নিজেদের একটি মান গড়ে তুলতে কিশোরকিশোরীদের পরিচালিত করে। এর ফল কী হয়? অল্পবয়সে গর্ভধারণ, গর্ভপাত, এবং যৌন ব্যাধির বৃদ্ধিরত হার। প্রায়ই, স্নেহের অভাব, পরিবারে হিংস্রতা জাগিয়ে তোলে। আপনার এলাকায় কিছু উদাহরণ সম্বন্ধে আপনি হয়ত বলতে পারেন, যা প্রমাণ করে যে স্নেহ হ্রাস পাচ্ছে।
১৩, ১৪. বহু পরিবারে অবনতি হওয়ায়, আমাদের কেন বাইবেলের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত? (খ) পারিবারিক জীবন সম্পর্কে ঈশ্বর কী ধরনের বিজ্ঞ উপদেশ দিয়েছেন?
১৩ এখান থেকে বোঝা যায় যে কেন প্রচুর লোক, একসময়ে যাদের যৌথপরিবারের সদস্য, সহবর্ণ স্বজ্ঞাতি অথবা স্বজাতির লোক মনে হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কিন্তু মনে রাখবেন যে এই সমস্ত বিষয় বলে আমরা জীবনের নৈরাশ্যজনক বিষয়গুলির উপরে জোর দিচ্ছি না। আমাদের দুটি মুখ্য আগ্রহ হল পৌল যে দোষগুলির তালিকা করেছেন তার থেকে রক্ষা পেতে বাইবেলের শিক্ষা কি আমাদের সাহায্য করবে এবং বাইবেলের শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করে আমরা কি উপকৃত হব? উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, যেমন পৌল যে চারটি বিষয় তালিকায় লিখেছেন, সেগুলির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই।
১৪ সাধারণভাবে বলা যেতে পারে: মানসিকরূপে উৎসাহদানকারী এবং সফল পারিবারিক জীবন গড়ে তুলতে বাইবেলের শিক্ষার থেকে ভাল আর কিছু নেই। তা বোঝা যায় বাইবেলে উপদেশের একটি উদাহরণ থেকে, যা পরিবারের সদস্যদের শুধু যে বাধা এড়িয়ে যেতে সাহায্য করে তাই নয় কিন্তু সাফল্যও দিতে পারে। কলসীয় ৩:১৮-২১ পদ তা ভালভাবে চিত্রিত করে, যদিও স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি উদ্দেশ্য করে বহু সুন্দর ও ব্যবহারিক অন্য অংশও আছে। এই উপদেশ আমাদের দিনেও কার্যকর হয়। মানতে হবে যে এমনকি সত্য খ্রীষ্টানদের পরিবারেও, সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু, সর্বমোট ফল দেখায় যে পরিবারের জন্য বাইবেল খুবই সাহায্যকারী শিক্ষা দিচ্ছে।
১৫, ১৬. জাম্বিয়াতে যিহোবার সাক্ষীদের উপর গবেষণা করার সময়ে একজন গবেষিকা কী দেখতে পেয়েছিলেন?
১৫ ক্যানাডার ইউনিভার্সিটি অফ্ লেথ্ব্রিজের একজন গবেষিকা, দেড় বছর ধরে জাম্বিয়ার সামাজিক জীবনের উপর গবেষণা করেছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন: “দৃঢ় বৈবাহিক সম্বন্ধ বজায় রাখতে যিহোবার সাক্ষীরা অন্য শ্রেণীর লোকেদের তুলনায় বেশি সফল হয়েছে। . . . তাদের সাফল্যের কারণ স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক, যারা তাদের নব-আবিষ্কৃত, সুরক্ষিত, সাহায্যমূলক প্রচেষ্টায় একে অপরের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে একজন নতুন উপদেষ্টা, ঈশ্বরকে জবাবদিহি দিতে বাধ্য। একজন যিহোবার সাক্ষী স্বামীকে, তার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে দক্ষ হয়ে উঠতে শিক্ষা দেওয়া হয়। . . . স্বামী এবং স্ত্রীকে বিশ্বস্ততার এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চাহিদা বিবাহকে আরও দৃঢ় করে তোলে।”
১৬ এই পরীক্ষাটি বহু বাস্তব জীবনের ঘটনার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, এই গবেষিকা বলেছিলেন যে, প্রচলিত ব্যবস্থার বিপরীতে, “বাগানের কাজে, শুধুমাত্র প্রস্তুতিকরণের সময় নয়, কিন্তু গাছ লাগানোর এবং মাটি খোঁড়ার সময়ে, যিহোবার সাক্ষী স্বামীদের প্রায়ই তাদের স্ত্রীদের সাহায্য করতে দেখা যায়।” সুতরাং, পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য উদাহরণ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, বাইবেলের শিক্ষা কিভাবে লোকেদের জীবন স্পর্শ করছে।
১৭, ১৮. ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং বিবাহ-পূর্ব যৌন আচরণ সম্বন্ধে কোন্ আশ্চর্যজনক তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে?
১৭ পূর্ববর্তী প্রবন্ধটি জার্নাল ফর দ্যা সায়েন্টিফিক্ স্টাডি অফ্ রিলিজিয়ান পত্রিকার কিছু আবিষ্কার সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিল। সেখানে, ১৯৯১ সালে একটি প্রবন্ধে দেওয়া হয়েছিলে যার শিরোনাম ছিল “ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং বিবাহপূর্ব যৌন অভিজ্ঞতা: যুবক- যুবতীদের একটি জাতীয় দলের নমুনা থেকে প্রমাণ।” আপনি হয়ত জানেন যে বিবাহপূর্ব যৌন আচরণ কত ব্যাপক। বেশ কম বয়স থেকে অনেকে কামেচ্ছার বশবর্তী হয়ে পড়ে এবং কিশোর-কিশোরীদের একাধিক যৌন-সঙ্গী থাকে। বাইবেলের শিক্ষা কি এই সাধারণ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে?
১৮ তিনজন সহযোগী অধ্যাপক একসঙ্গে এই প্রশ্নটি সম্বন্ধে গবেষণা করেছিলেন এবং তারা আশা করেছিলেন যে ‘গোঁড়া খ্রীষ্টীয় ঐতিহ্যের বড় হয়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিবাহপূর্ব যৌন আচরণের ঘটনা অপেক্ষাকৃত কম হবে।’ তারা কী দেখেছিলেন? প্রায় ৭০ থেকে ৮২ শতাংশ যুবক-যুবতী বিবাহের পূর্বে যৌন আচরণে জড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজনের জন্য “একটি গোঁড়া ঐতিহ্য বিবাহ-পূর্বে যৌন আচরণের সম্ভাবনা [কমিয়ে] দিয়েছিল কিন্তু ‘কিশোর-কিশোরীদের যৌন আচরণের’ ক্ষেত্রে নয়।” আপাতদৃষ্টিতে ধর্মীয় পরিবারের কয়েকজন কিশোর-কিশোরীদের সম্বন্ধে গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন, যাদের ক্ষেত্রে “বিবাহ-পূর্ব যৌন আচরণের সম্ভাবনা, সাধারণ প্রোটেস্টান্টদের তুলনায় আরও বেশি ছিল।”—ইটালিক অক্ষর আমাদের দেওয়া।
১৯, ২০. ঈশ্বরের নির্দেশ, যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে বহু যুবক যুবতীদের কিভাবে সাহায্য এবং রক্ষা করেছে?
১৯ সেই অধ্যাপকেরা ঠিক এর বিপরীত তথ্য পান যিহোবার সাক্ষীদের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, যারা “অন্যদের থেকে সবচেয়ে আলাদা ছিল।” কেন? “অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে গড়ে তোলা দায়িত্ববোধ ও সামাজিক একতার মান . . . হয়ত সাধারণভাবে আরও অধিক ক্ষেত্রে বিশ্বাসের নীতি ধরে রাখতে এদের সাহায্য করে।” তারা আরও বলেন যে: কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী হিসাবেও সাক্ষীদের কাছে আশা করা হয় যে তারা সুসমাচার প্রচার করার দায়িত্ব পূর্ণ করবে।
২০ সুতরাং অনৈতিকতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে বাইবেলের শিক্ষা ভালর জন্য যিহোবার সাক্ষীদের প্রভাবিত করে। এর অর্থ যৌন ব্যাধি থেকে সুরক্ষা, যার কয়েকটি হল চিকিৎসার সাধ্যের বাইরে এবং অন্যগুলি মারাত্মক। এর অর্থ গর্ভপাত করানোর জন্য কোন চাপ আসে না, যা বাইবেল বলে যে জীবন নেওয়ার সমান। আরও এর অর্থ হল যুবক-যুবতীরা শুদ্ধ বিবেক নিয়ে, বিশুদ্ধ অবস্থায় বিবাহ করতে পারে। অর্থাৎ বিবাহ আরও দৃঢ় ভিত্তির উপরে স্থাপিত হয়। এই ধরনের শিক্ষাই আমাদের মোকাবিলা করতে, স্বাস্থ্যবান ও সুখী হতে সাহায্য করে।
উৎসাহজনক নির্দেশ
২১. আমাদের দিন সম্বন্ধে পৌল সঠিকভাবে কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
২১ এখন আসুন আমরা ২ তীমথিয় ৩:৩, ৪ পদে ফিরে গিয়ে দেখি যে আর কী কী বিষয় পৌল বলেছিলেন আমাদের দিনে অনেকের জন্য জীবন কষ্টকর করে তুলবে—কিন্তু সকলের জন্য নয়: “[মানুষে] ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, [এবং] ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে।” এই বর্ণনা কত সত্যি! যাইহোক, বাইবেলের শিক্ষা আমাদের রক্ষা করে এবং মোকাবিলা করতে ও সফল হতে সাহায্য করে।
২২, ২৩. কোন্ উৎসাহজনক উপদেশ দিয়ে পৌল তার তালিকা শেষ করেছেন এবং তার গুরুত্ব কী?
২২ প্রেরিত পৌল তার বর্ণনা আশাবাদী মনোভাব নিয়ে শেষ করেছেন। তিনি শেষ বিষয়টিকে ঈশ্বরের একটি আদেশে পরিণত করেছেন যা আমাদের খুবই উপকার করতে পারে। পৌল তাদের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন যারা “ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে; তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও।” স্মরণ করুন যে কিছু গির্জায় যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিবাহ-পূর্ব যৌন আচরণের হার সাধারণের চাইতে বেশি। এই গির্জার লোকেদের অনৈতিকতার হার যদি সাধারণ মাত্রাতেও থাকত, তাহলেও কি প্রমাণ হত না যে তাদের উপাসনার রীতির কোন শক্তি নেই? এছাড়া, লোকে ব্যবসায় তাদের কর্মচারীদের এবং আত্মীয়দের সাথে কিরকম ব্যবহার করে, তা কি ধর্মীয় শিক্ষা পরিবর্তন করতে পারে?
২৩ পৌলের বাক্য দেখায় যে ঈশ্বরের বাক্য থেকে আমরা যা শিখছি তা প্রয়োগ করা প্রয়োজন, আমাদের উপাসনার ধরন এমন হওয়া উচিত যা প্রকাশ করে যে খ্রীষ্টধর্মের প্রকৃত শক্তি আছে। যাদের উপাসনার ধরন শক্তিহীন তাদের সম্বন্ধে পৌল আমাদের বলেছেন: “এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও।” এটি একটি স্পষ্ট আদেশ, যে আদেশ আমাদের নিশ্চয়ই উপকার আনবে।
২৪. প্রকাশিত বাক্য ১৮ অধ্যায়ে দেওয়া উৎসাহের সাথে পৌলের উপদেশের কী সাদৃশ্য আছে?
২৪ কিভাবে? বাইবেলের শেষ বইতে মহতী বাবিল নামে একজন রূপক নারী, একজন বেশ্যার উল্লেখ আছে। প্রমাণ দেখায় যে মহতী বাবিল মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে চিত্রিত করে, যাকে যিহোবা ঈশ্বর পরীক্ষা করেছেন এবং পরিত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমাদের তার মধ্যে থাকার প্রয়োজন নেই। প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪ পদ আমাদের উৎসাহ দেয়: “হে আমার প্রজাগণ, উহা হইতে বাহিরে আইস, যেন উহার পাপ সকলের সহভাগী না হও, এবং উহার আঘাত সকল যেন প্রাপ্ত না হও।” এটি কি পৌলের বার্তার সঙ্গে এক নয়, “এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও”? এই আদেশ অনুযায়ী চলা হবে আরেকটি উপায় যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের নির্দেশ থেকে উপকার পেতে পারি।
২৫, ২৬. এখন যারা যিহোবার নির্দেশ গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে, তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী রয়েছে?
২৫ ঈশ্বর শীঘ্রই মানুষের কাজকর্মে সরাসরিভাবে হস্তক্ষেপ করবেন। তিনি সমস্ত মিথ্যা ধর্ম মুছে ফেলবেন এবং বর্তমানের বাকি মন্দ ব্যবস্থাও ধ্বংস করবেন। এই ঘটনা আনন্দের কারণ হবে, যেমন প্রকাশিত বাক্য ১৯:১, ২ দেখায়। পৃথিবীর, যারা এখন ঈশ্বরের শিক্ষা গ্রহণ এবং পালন করে, তারা এই সংকটপূর্ণ সময় শেষ হয়ে গেলেও তাঁর শিক্ষা পালন করে যেতে পারবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
২৬ পুনর্স্থাপিত পার্থিব পরমদেশে থাকা অবশ্যই অকল্পনীয় আনন্দের কারণ হবে। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন যে আমরা তা পেতে পারি এবং তাঁর উপর আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। সুতরাং তাঁর সাহায্যকারী শিক্ষা গ্রহণ এবং পালন করতে তিনি আমাদের যথেষ্ট কারণ দিয়েছেন। কখন? আসুন আমরা সেই শিক্ষা এখন, এই সংকটপূর্ণ সময়ে এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা সেই পরমদেশেও পালন করি।—মীখা ৪:৩, ৪.
চিন্তা করার বিষয়
▫ ধনসম্পদ সম্বন্ধে যিহোবার উপদেশ থেকে তাঁর লোকেরা কিভাবে উপকৃত হয়?
▫ ঈশ্বরের বাক্য প্রয়োগ করার মাধ্যমে তাঁর সেবকদের মধ্যে যে ভাল ফল দেখা যায়, সেই সম্বন্ধে একটি জেসুইট্ পত্রিকা কী বলেছে?
▫ পরিবারগুলির ঐশ্বরিক নির্দেশ প্রয়োগ করার ফলে কী উপকার এসেছে বলে জাম্বিয়ার একটি পরীক্ষা জানায়?
▫ যুবক-যুবতীদের জন্য ঐশ্বরিক নির্দেশ কী সুরক্ষা নিয়ে আসে?
[২৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
কী ভয়ঙ্কর পরিণতি!
“কিশোর-কিশোরীদের এইডস হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে কারণ তারা যৌন আচরণ ও নেশাকর ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা করতে ভালবাসে, ঝুঁকি নিতে ও জীবন উপভোগ করতে চায়, আর যেহেতু তারা নিজেদের অমর মনে করে, তাই যে কোন কর্তৃত্বকে অবজ্ঞা করে,” এইডস ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্পর্কের উপরে একটি সম্মেলনে রিপোর্ট করা হয়েছিল।—নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ, রবিবার, মার্চ ৭, ১৯৯৩.
“যৌন আচরণে লিপ্ত কিশোরীরা পরবর্তীকালে এইডস মহামারীর ‘সর্বপ্রথম’ বলি হবে, ইউরোপ, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি রাষ্ট্রসংঘ পরীক্ষা জানিয়েছে।”—দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস্, শুক্রবার, জুলাই ৩০,
[Pictures on page 28, 29]
মণ্ডলীতে এবং ঘরে, বাইবেলের নির্দেশ যিহোবার সাক্ষীদের উপকার করে