সঠিক ধর্ম জানার সাথে দায়িত্ববোধ আসে
“ধন্য তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে।”—লূক ১১:২৮.
১. একবার সঠিক ধর্মকে শনাক্ত করার পরে, কী ধরনের ব্যক্তিরা সেই ধর্মকে কেন্দ্র করে তাদের জীবন গড়ে তোলে?
সত্য ধর্মকে শনাক্ত করাই যথেষ্ট নয়। আমরা যদি ন্যায় ও সত্যকে ভালবাসি, তাহলে একবার তা পেলে, আমাদের জীবন আমরা সেই সত্যকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলব। সত্য ধর্ম শুধুমাত্র মনের মধ্যে একটি দর্শনবাদ নয়; এটি জীবনধারণের পথ।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; যিশাইয় ২:৩; তুলনা করুন প্রেরিত ৯:২.
২, ৩. (ক) ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার উপরে যীশু কিভাবে জোর দিয়েছিলেন? (খ) যারা সঠিক ধর্ম জানে তাদের প্রত্যেকের উপরে কী দায়িত্ব রয়েছে?
২ ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছা বলে যা প্রকাশ করেছেন তা পালন করার গুরুত্বের উপরে যীশু খ্রীষ্ট জোর দিয়েছিলেন। যাকে পর্বতে দত্ত উপদেশ বলা হয়, তা শেষ করবার সময়ে যীশু জানিয়েছিলেন যে যারা তাঁকে প্রভু বলবে (অর্থাৎ খ্রীষ্টান বলে দাবি করবে), তাদের সকলেই রাজ্যে প্রবেশ করবে না; কিন্তু একমাত্র তারাই করবে যারা তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে। অন্যদের, তিনি বলেছিলেন, “অধর্ম্মাচারী” হিসাবে পরিত্যাগ করা হবে। কেন অধর্মাচারী? কারণ বাইবেল বলে যে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করায় ব্যর্থতাই হল পাপ, আর সমস্ত পাপ হল অধর্মাচরণ। (মথি ৭:২১-২৩; ১ যোহন ৩:৪; তুলনা করুন রোমীয় ১০:২, ৩.) একজন ব্যক্তি সঠিক ধর্মকে হয়ত চিনতে পারে, যারা তা শিক্ষা দেয় তাদের ও যারা তা পালন করে তাদেরও প্রশংসা করতে পারে, কিন্তু তার নিজের জীবনেও তা পালন করার দায়িত্ব তার আছে। (যাকোব ৪:১৭) যদি সে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে তার জীবন পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে, আর সে এমন আনন্দ লাভ করবে যা অন্য কোনভাবে আসতে পারে না।
৩ আগের প্রবন্ধে, সত্য ধর্মকে শনাক্ত করবার জন্য ছটি চিহ্ন আমরা বিবেচনা করেছিলাম। সেগুলির প্রত্যেকটি শুধুমাত্র সঠিক ধর্মকেই শনাক্ত করে না কিন্তু আমাদের সামনেও ব্যক্তিগতভাবে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ স্থাপন করে। কিভাবে?
ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আপনি কিভাবে সাড়া দেন?
৪. (ক) নতুন ব্যক্তিরা যখন যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করে, তখন সাক্ষীদের বাইবেল ব্যবহার করা সম্বন্ধে তারা কী লক্ষ্য করে? (খ) আধ্যাত্মিকভাবে যথেষ্ট খাদ্য লাভ করার জন্য যিহোবার সেবকেরা কিভাবে প্রভাবিত হয়?
৪ যিহোবার সাক্ষীরা যখন নতুন আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করে, তখন এদের মধ্যে অনেকে শীঘ্রই বুঝতে পারে যে যা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা বাইবেল থেকেই নেওয়া। তাদের প্রশ্নের উত্তরের জন্য, গির্জার কোন মতবাদ, মানুষের পরম্পরা অথবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতামতের প্রতি নির্ভর করতে বলা হয় না। ঈশ্বরের নিজস্ব বাক্যই হল ভিত্তি। যখন তারা কিংডম হলে যায়, সেখানেও তারা লক্ষ্য করে যে বাইবেলই মুখ্য পাঠ্যপুস্তক। যিহোবার সাক্ষীদের মধ্যে যে আনন্দ দেখতে পাওয়া যায়, তার প্রধান একটি কারণ যে তারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে যথেষ্ট আধ্যাত্মিক খাদ্য গ্রহণ করে, যারা প্রকৃতই সত্য খুঁজছে, তাদের তা বুঝতে দেরি হয় না।—যিশাইয় ৬৫:১৩, ১৪.
৫. (ক) যারা যিহোবার সাক্ষীদের লক্ষ্য করে, তাদের সামনে কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে? (খ) সাক্ষীদের আনন্দে তারাও কিভাবে অংশ নিতে পারে?
৫ এই বিষয়টি যদি আপনি মানেন, তাহলে কিভাবে আপনি তার প্রতি সাড়া দেন? আপনি যদি প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি শুধুমাত্র একজন নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে থাকতে পারবেন না, আপনার থাকতে চাওয়াও উচিত নয়। বাইবেল দেখায় যারা “বাক্যের কার্য্যকারী” না হয়ে “শ্রোতামাত্র” হয়, তারা ‘মিথ্যা যুক্তিতে নিজেদের ভুলায়।’ (যাকোব ১:২২) তারা নিজেদের ভুলায় কারণ মুখে তারা যাই বলুক না কেন, ঈশ্বরকে মেনে চলায় তাদের ব্যর্থতা দেখায় যে তারা প্রকৃতই তাঁকে প্রেম করে না। যে বিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য কোন কাজ থাকে না তা হল নিষ্ফল বিশ্বাস। (যাকোব ২:১৮-২৬; ১ যোহন ৫:৩) এর বিপরীতে, যিহোবার প্রতি প্রেমের জন্য যারা “বাক্যের কার্য্যকারী” হতে প্রেরণা পায়, তারা “আপন কার্য্যে ধন্য হইবে।”—যাকোব ১:২৫; লূক ১১:২৮; যোহন ১৩:১৭.
৬. যদি আমরা সত্যিই ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করি, তাহলে কোন্ সুযোগ আমরা ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করবার চেষ্টা করব?
৬ সেই আনন্দ আরও গভীর হবে, যখন আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে আরও জানতে পারবেন এবং তা প্রয়োগ করবেন। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করতে আপনার কতটা প্রচেষ্টা করা উচিত? হাজার হাজার নিরক্ষর ব্যক্তিরা পড়তে শিখবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে, বিশেষত যাতে তারা শাস্ত্র পড়তে পারে এবং অন্যদের তা শিক্ষা দিতে পারে। অন্যেরা প্রতি দিন ভোরবেলায় ওঠে, যাতে তারা বাইবেল ও বাইবেল-অধ্যয়নে সহায়কগুলি, যেমন প্রহরীদুর্গ পড়তে পারে। আপনি ব্যক্তিগতভাবে যখন নিয়মিত বাইবেল পড়বেন অথবা অন্য অধ্যয়ন প্রবন্ধে উল্লিখিত শাস্ত্র খুলে দেখবেন, তখন যিহোবার নিয়ম ও আদেশগুলি সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করুন, আর আমাদের জন্য সেখানে দেওয়া বহু নীতিগুলি বুঝবার চেষ্টা করুন। ঈশ্বর সম্বন্ধে, তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে এবং মানবজাতির সঙ্গে তাঁর ব্যবহার সম্বন্ধে প্রত্যেকটি অংশ যা প্রকাশ করে, সেই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। এইসবের দ্বারা আপনার হৃদয়কে পরিচালিত হতে সময় দিন। আপনার নিজের জীবনে বাইবেলের উপদেশ আরও বেশি করে প্রয়োগ করার কোন উপায় আছে কি না, তা বিবেচনা করুন।—গীতসংহিতা ১:১, ২; ১৯:৭-১১; ১ থিষলনীকীয় ৪:১.
যিহোবার প্রতি আপনার ভক্তি কি সম্পূর্ণ?
৭. (ক) ত্রিত্ব মতবাদের দ্বারা ঈশ্বরকে উপাসনা করায় লোকেদের চেষ্টা কিভাবে হয়েছে? (খ) একজন ব্যক্তি, যিহোবার সম্বন্ধে সত্য জানলে কী হতে পারে?
৭ সত্য ঈশ্বর যে ত্রিত্ব নন্, তা জেনে লক্ষ লক্ষ লোক স্বস্তি পেয়েছে। “এই বিষয়টি একটি রহস্য” এই ব্যাখ্যা তাদের কখনই সন্তুষ্ট করেনি। যে ঈশ্বরকে বোঝা যায় না তাঁর নিকটবর্তী তারা কিভাবে হতে পারে? এই শিক্ষার জন্য, তারা পিতাকে (যার নাম তারা গির্জায় কোনদিন শোনেনি) উপেক্ষা করতে থাকে এবং যীশুকে ঈশ্বর হিসাবে অথবা মরিয়মকে (যাকে “ঈশ্বরের মাতা” হিসাবে তাদের শিখানো হয়েছে) উপাসনা করতে থাকে। কিন্তু যিহোবার কোন সাক্ষী যখন বাইবেল খুলে তাদের দেখায় যে ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নাম যিহোবা, তখন তাদের হৃদয় আনন্দিত হয়ে ওঠে। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮) ভেনিজুয়েলার একজন মহিলাকে যখন ঈশ্বরের নাম দেখানো হয়েছিল তখন সে এতই খুশি হয়েছিল যে, তার কাছে এই মূল্যবান সত্যটি যে যুবতী সাক্ষী নিয়ে এসেছিল, তাকে সে জড়িয়ে ধরেছিল এবং গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয়েছিল। এই ধরনের লোকেরা যখন জানতে পারে যে যীশু তাঁর পিতার সম্বন্ধে বলেছিলেন “আমার পিতা ও তোমাদের পিতা” এবং তিনি তাঁর পিতাকে সম্বোধন করেছিলেন “একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর” হিসাবে, তখন তারা বুঝতে পারে যে বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে যা শিক্ষা দেয় তা দুর্বোধ্য নয়। (যোহন ১৭:৩; ২০:১৭) তারা যখন যিহোবার গুণাবলী সম্বন্ধে জানতে পারে, তারা তাঁর প্রতি আকর্ষিত হয়, তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করে এবং তাঁকে খুশি করতে চায়। তার ফল কী হয়?
৮. (ক) যিহোবার প্রতি প্রেমের জন্য এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি কী করেছে? (খ) খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
৮ গত দশ বছরে, ছটি মহাদেশে এবং বহু দ্বীপে ২৫,২৮,৫২৪ জন ব্যক্তি যিহোবার প্রতি তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে এবং তারপর এই উৎসর্গীকরণকে বাপ্তিস্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করেছে। আপনি কি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, অথবা আপনি কি বাপ্তিস্ম নেওয়ার প্রস্তুতি করছেন? প্রত্যেকটি সত্য খ্রীষ্টানের জীবনে বাপ্তিস্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যীশু তাঁর শিষ্যদের ভার দিয়েছিলেন যেন তারা সমস্ত জাতির লোকেদের শিষ্য করে ও তাদের বাপ্তিস্ম দেয়। (মথি ২৮:১৯, ২০) আরও, উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে যীশুর নিজের বাপ্তিস্মের ঠিক পরেই যিহোবা স্বয়ং স্বর্গ থেকে বলেছিলেন: “তুমি আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।”—লূক ৩:২১, ২২.
৯. যিহোবার সাথে মনোনীত সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে, আমাদের কী করতে হবে?
৯ যিহোবার সাথে প্রীতির সম্পর্ক খুবই আনন্দের বিষয়। উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্মের মাধ্যমে আপনার যদি সেইরকম সম্পর্ক হয়ে থাকে, তাহলে এমন কিছু করা এড়িয়ে চলুন যা সেই সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। জীবনের বিভিন্ন উদ্বেগ এবং ধনসম্পত্তির জন্য চিন্তার কারণে, এই সম্পর্কে দ্বিতীয় স্থানে সরে যেতে দেবেন না। (১ তীমথিয় ৬:৮৮-১২) হিতোপদেশ ৩:৬ পদের উপদেশ অনুযায়ী প্রকৃতই চলতে চেষ্টা করুন: “তোমার সমস্ত পথে [যিহোবাকে] স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।”
খ্রীষ্টের প্রেম কত গভীরভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে?
১০. যিহোবার উপাসনা করলেই, যীশুকে কেন উপেক্ষা করা হয় না?
১০ অবশ্য, একমাত্র সত্য ঈশ্বর হিসাবে যিহোবার প্রতি উপযুক্ত উপলব্ধির জন্য, যীশু খ্রীষ্টকে উপেক্ষা করা হয় না। বরং, প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০ পদ বলে: “যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা।” আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত, অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলিতে যিহোবার উদ্দেশ্যে যীশুর ভূমিকা সম্বন্ধে বিশদ বর্ণনা দেওয়া আছে। এই বিস্তারিত বর্ণনার সঙ্গে পরিচিত হলে, একজন ব্যক্তি একটি অপূর্ব চিত্র পেতে পারে যা খ্রীষ্টজগতের মিথ্যা শিক্ষা থেকে উৎপন্ন বিকৃতি ও ভুল ধারণা থেকে মুক্ত।
১১. বাইবেল ঈশ্বরের পুত্র সম্বন্ধে প্রকৃতই কী শিক্ষা দেয়, তা জানতে পারায় পোল্যান্ডের একটি মহিলা উপর কী প্রভাব পড়ে?
১১ ঈশ্বরের পুত্রের বিষয় সত্য বুঝতে পারলে, একজন ব্যক্তির উপরে তা প্রভুত প্রভাব ফেলতে পারে। পোল্যাণ্ডের একজন মহিলা, ডানুতার ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল। সে আট বছর ধরে যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মেলামেশা করত, তাদের শিক্ষা উপভোগ করত, কিন্তু সত্য উপাসনাকে তার জীবনের পথ করে নিচ্ছিল না। তারপরে, সে সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইটি হাতে পায়, যাতে খ্রীষ্টের জীবন সহজভাবে দেওয়া আছে।a সেই দিন সন্ধ্যায় একটি অধ্যায় পড়ার জন্য সে বইটি খোলে। কিন্তু ভোর পর্যন্ত, যতক্ষণ না পড়া শেষ হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সে বইটি বন্ধ করতে পারে না। সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। “যিহোবা আমাকে ক্ষমা কর,” সে মিনতি করে। সে যা পড়েছিল তার ফলে, আগের থেকে অনেক স্পষ্টভাবে সে যিহোবা ও তাঁর পুত্রের প্রেমকে বুঝতে পেরেছিল। সে বুঝতে পারে যে ঈশ্বর ধৈর্যের সাথে তাকে যে সাহায্য দিয়ে আসছেন, আট বছর ধরে সে তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। যীশু খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিতে যিহোবার প্রতি তার উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসাবে ১৯৯৩ সালে তার বাপ্তিস্ম হয়।
১২. যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান কিভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে?
১২ একজন সক্রিয় এবং কার্যকারী খ্রীষ্টান হওয়ার সাথে “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান” জড়িত আছে। (২ পিতর ১:৮) রাজ্যের বার্তা অন্যদের জানানোর মাধ্যমে এই কাজে আপনি কতটা অংশ নেবেন? বিভিন্ন ব্যক্তি কতটা করতে পারবে তা বহু পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে। (মথি ১৩:১৮-২৩) কিছু পরিস্থিতি আমরা পরিবর্তন করতে পারি না; অন্যগুলি পারি। যেখানে সম্ভব, সেই বিষয়গুলি শনাক্ত করে পরিবর্তন করতে কী আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “কারণ খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে”; অথবা, আমাদের জন্য নিজের জীবন দিয়ে যে প্রেম তিনি দেখিয়েছেন তা এতই মহান যে আমাদের উপলব্ধি যত বাড়তে থাকে, আমাদের হৃদয় ততই প্রভাবিত হয়। ফলস্বরূপ, আমরা বুঝতে পারি যে স্বার্থপর উদ্দেশ্য সাধন অথবা প্রধানত নিজেদের সন্তুষ্ট করতে বেঁচে থাকা খুবই অনুপযুক্ত হবে। বরং, খ্রীষ্ট যীশু তাঁর শিষ্যদের যে কাজ করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাকে প্রথম স্থান দিতে আমরা নিজেদের কার্যসূচী মানিয়ে নিই।—২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫.
জগতের থেকে পৃথক—কতটা ব্যাপকভাবে?
১৩. যে ধর্ম নিজেকে জগতের অংশ করে নিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক থাকা উচিত নয় কেন?
১৩ খ্রীষ্টজগৎ ও অন্যান্য ধর্মের কার্যকলাপ লক্ষ্য করা কঠিন নয়, কারণ তারা জগতের অংশ হতে চায়। বিপ্লবীদের আর্থিক সাহায্য করবার জন্য গির্জার তহবিল ব্যবহার করা হয়। পাদ্রিরা গেরিলা যোদ্ধায় পরিণত হয়েছে। দিনের পর দিন, বিভিন্ন ধর্মীয় দল সম্বন্ধে সংবাদপত্রে রিপোর্ট করা হয়, যারা পৃথিবীর বহু জায়গায় একে অপরের বিরুদ্ধে মারামারি করছে। তাদের হাত রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। (যিশাইয় ১:১৫) আর জগদ্ব্যাপী পাদ্রিবর্গ রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সত্য উপাসকেরা এই সবকিছুতে অংশ নেয় না।—যাকোব ৪:১-৪.
১৪. (ক) জগৎ থেকে পৃথক থাকতে হলে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কী এড়িয়ে চলতে হবে? (খ) জাগতিক মনোভাব ও কাজকর্মের দ্বারা ফাঁদে এড়িয়ে চলতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৪ কিন্তু জগতের থেকে পৃথক থাকায় আরও কিছু জড়িত আছে। জগতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল অর্থ এবং অর্থের দ্বারা যা কিছু কেনা যায় তা প্রতি আকর্ষণ, ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, আর আমোদপ্রমোদের পিছনে অবরত দৌড়ান এবং তার সাথে অন্যদের জন্য প্রকৃত উদ্বেগের অভাব, মিথ্যা ও খারাপ কথা বলা, কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও আত্মসংযম প্রকাশ করায় ব্যর্থতা। (২ তীমথিয় ৩:২-৫; ১ যোহন ২:১৫, ১৬) আমাদের অসিদ্ধতার জন্য, কখনও কখনও আমরা হয়ত এই মনোভাবগুলির কয়েকটি প্রদর্শন করতে পারি। এই ফাঁদ এড়িয়ে চলবার যুদ্ধে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে? আমাদের নিজেদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে এই সবকিছুর পিছনে কে রয়েছে। “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) কোন কাজ যতই আকর্ষণীয় দেখাক না কেন, যত জন লোকই সেইভাবে চলুক না কেন, তার পিছনে যখন আমরা দেখি যে যিহোবার প্রধান শত্রু, শয়তান দিয়াবল রয়েছে, তখন আমরা বুঝতে পারি যে সেই কাজ কত বিতৃষ্ণাজনক।—গীতসংহিতা ৯৭:১০.
আপনার প্রেমের প্রসার কতটা?
১৫. যে নিঃস্বার্থ প্রেম আপনি দেখেছেন, তা সঠিক ধর্মকে শনাক্ত করতে আপনাকে কিভাবে সাহায্য করেছে?
১৫ আপনি যখন প্রথম যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিলেন, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে যে প্রেম দেখা যায় তা আপনার ভাল লেগেছিল, কারণ জগতের মনোভাব থেকে তা অনেক পৃথক। নিঃস্বার্থ প্রেমের উপরে যে জোর দেওয়া হয়, তা অন্য সব ধরনের উপাসনা থেকে যিহোবার বিশুদ্ধ উপাসনাকে পৃথক করে তোলে। হয়ত এইজন্যই আপনি নিশ্চিৎ হয়েছিলেন যে যিহোবার সাক্ষীরা সঠিক ধর্ম পালন করছে। যীশু খ্রীষ্ট নিজে বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.
১৬. আমাদের প্রেম আরও বাড়িয়ে তুলতে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কী সুযোগ আছে?
১৬ এই গুণাবলীর জন্য আপনাকেও কি খ্রীষ্টের একজন শিষ্য হিসাবে শনাক্ত করা যায়? প্রেম দেখাবার বিষয়ে আপনি কি আরও কিছু করতে পারেন? নিঃসন্দেহে, আমরা সকলেই কিছু করতে পারি। কিংডম হলে অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছাড়াও এর সঙ্গে আরও কিছু জড়িয়ে আছে। যারা আমাদের প্রেম করে, আমরা যদি শুধু তাদের প্রতিই প্রেম প্রদর্শন করি, তাহলে কিভাবে আমরা জগতের থেকে পৃথক হতে পারি? “সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর। (১ পিতর ৪:৮) কার প্রতি আমরা বেশি প্রেম দেখাতে পারি? সে কি একজন খ্রীষ্টীয় ভাই অথবা বোন যার পরিস্থিতি আমাদের থেকে ভিন্ন অথবা যার কাজ করার কিছু পদ্ধতি আমাদের বিরক্ত করে তোলে? সে কি এমন কেউ, যে অসুস্থতা বা বার্ধক্যের জন্য নিয়মিতভাবে সভায় আসতে পারছে না? সে কি আমাদের বিবাহ-সঙ্গী? অথবা তারা আমাদের বয়স্ক বাবা-মা? কেউ কেউ, যারা প্রেম সহ আত্মার ফল ভালভাবেই প্রদর্শন করছিল, তারা মনে করে যে এই সমস্ত কিছু তাদের আবার শিখতে হয় যখন তাদের পরিবারের একজন বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ায় তার সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়ার কঠিন পরিস্থিতিতে তারা পড়ে। এই পরিস্থিতিতে পড়লেও, আমাদের পরিবারের বাইরেও আমাদের অবশ্যই প্রেম দেখাতে হবে।
রাজ্য সাক্ষ্যদান—আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৭. যিহোবার সাক্ষীরা আসার জন্য আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হয়ে থাকি, তাহলে এখন কী করতে আমাদের প্রেরণা পাওয়া উচিত?
১৭ আমাদের প্রতিবেশিদের প্রতি প্রেম দেখাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া। একটি মাত্র দল এই কাজ করছে, যা যীশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (মার্ক ১৩:১০) এই দলটি যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ। এইজন্য আমরা ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হয়েছি। এখন অন্যদের সাহায্য করা আমাদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ। এই বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমাদের থাকে, তাহলে এই কাজ আমাদের জীবনে মুখ্য ভূমিকা নেবে।
১৮. যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী বইটি পড়ার দ্বারা আমরা কিভাবে রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নিতে প্রভাবিত হতে পারি?
১৮ এই শেষকালে রাজ্যের বার্তা কিভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার রোমাঞ্চকর বিবরণ যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী বইতে দেওয়া হয়েছে। যদি আপনি ইংরাজি পড়তে পারেন, তাহলে বইটি পড়তে ভুলবেন না। পড়ার সময়ে, বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন কিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিরা রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার অংশ নিয়েছে। কারো উদাহরণ আপনি কি অনুকরণ করতে পারেন? আমাদের সকলের সামনে অনেক সুযোগ রয়েছে। যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম যেন সেই সুযোগগুলির সদ্ব্যবহার করতে আমাদের প্রেরণা দেয়।
১৯. সত্য ধর্ম জানার সাথে যে দায়িত্ব আসে, তা গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা কিভাবে উপকৃত হতে পারি?
১৯ যখন আমরা যিহোবার ইচ্ছা পালন করায় এইভাবে নিজেদের প্রয়োগ করি, তখন জীবনের অর্থ কী? এই প্রশ্নটির উত্তর আমরা খুঁজে পাই। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) আমরা আর হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছি না, আমাদের মধ্যে আর শূন্যতা নেই। যিহোবা ঈশ্বরের কাজে সম্পূর্ণচিত্তে নিয়োগ করা ছাড়া আরও কোন জীবিকা নেই যার মাধ্যমে আপনি আরও বেশি পরিতৃপ্তি পেতে পারেন। আর কী অপূর্ব ভবিষ্যৎ আমাদের সামনে রয়েছে! তাঁর নতুন জগতে অনন্তকাল ধরে সন্তুষ্টিজনক জীবন, যেখানে আমরা ঈশ্বর যে প্রেমময় উদ্দেশ্য নিয়ে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছিলেন তার সাথে সমতা রেখে আমাদের ক্ষমতা আমরা পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে পারব।
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচটাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক, ইংক্. দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
▫ একটি ধর্মের পক্ষে বাইবেলকে ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে এবং যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসাবে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
▫ পরিত্রাতা হিসাবে যীশুর ভূমিকা সম্বন্ধে সৎ ধর্ম কী শিক্ষা দেয়?
▫ খ্রীষ্টানদের কেন জগৎ থেকে পৃথক থাকতে এবং নিঃস্বার্থ প্রেম দেখাতে হবে?
▫ সঠিক ধর্মে রাজ্যের সাক্ষ্য দেওয়ার কী ভূমিকা আছে?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
সত্য উপাসনার দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রতি বাপ্তিস্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতি মাসে, প্রায় ২৫,০০০ ব্যক্তি এই পদক্ষেপ নেয়
রাশিয়া
সেনেগাল
পাপুয়া নিউ গিনি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেলের সত্য অন্যদের জানানো হল সত্য উপাসনার অংশ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ব্রাজিল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
হং কং