যীশু যেভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন আপনি কি সেইভাবে শিক্ষা দেন?
“লোকসমূহ তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল; কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, তাহাদের অধ্যাপকদের ন্যায় নয়।”—মথি ৭:২৮, ২৯.
১. যীশু যখন গালীলে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, কারা তাঁকে অনুসরণ করেছিল এবং যীশুর প্রতিক্রিয়া কিরূপ ছিল?
যীশু যেখানেই গিয়েছিলেন, জনতা তাঁকে ঘিরে ছিল। “যীশু সমুদয় গালীলে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং লোকদের সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার পীড়া ভাল করিলেন।” তাঁর কাজের সংবাদ যত ছড়াতে লাগল “গালীল, দিকাপলি, যিরূশালেম, যিহূদিয়া ও যর্দ্দনের পরপার হইতে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল।” (মথি ৪:২৩, ২৫) তাদের দেখে, “তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল। “যখন তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন, তিনি যে তাদের জন্য করুণা অথবা দয়া অনুভব করতেন তা তারা বুঝতে পারত; এটি ছিল যেন তাদের ক্ষতস্থানের উপর প্রলেপ দেওয়ার মত যা তাঁর কাছে আসার জন্য তাদের আকৃষ্ট করেছিল।—মথি ৯:৩৫, ৩৬.
২. যীশুর অলৌকিক কাজগুলি ছাড়াও, কী বিরাট জনতার আকর্ষণ করেছিল?
২ কী অলৌকিক দৈহিক আরোগ্য সাধনই না যীশু সম্পাদন করেছিলেন—কুষ্ঠরোগীদের সুস্থ করে, বধিরদের শুনতে দিয়ে, অন্ধদের দেখতে দিয়ে, খঞ্জদের চলতে দিয়ে, মৃতদের পুনরায় জীবনে ফিরিয়ে এনে! সত্যই যীশুর মাধ্যমে যিহোবার ক্ষমতার এই দৃষ্টি আকর্ষণীয় ঘটনাগুলি সাধন, বিরাট সংখ্যক জনতাকে আকৃষ্ট করে- ছিল! কিন্তু এই অলৌকিক কাজগুলিই একমাত্র তাদের আকর্ষণ করেনি; বিরাট সংখ্যক লোক আধ্যাত্মিক আরোগ্য লাভের জন্যও এসেছিল, যখন যীশু তা শিক্ষাদানের দ্বারা যুগিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, পর্বতে দত্ত তাঁর বিখ্যাত উপদেশ শোনার পর, তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন: “যীশু যখন এই সকল বাক্য শেষ করিলেন, লোকসমূহ তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল; কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, তাহাদের অধ্যাপকদের ন্যায় নয়।” (মথি ৭:২৮, ২৯) অধিকার হিসাবে তাদের রব্বিরা প্রাচীন রব্বিদের থেকে মৌখিক রীতিনীতিগুলিকে উদ্ধৃতি করত। যীশু ঈশ্বর থেকে অধিকার পেয়ে তাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন: “আমি জানি যে, তাঁহার আজ্ঞা অনন্ত জীবন। অতএব আমি যাহা যাহা বলি, তাহা পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন, তেমনি বলি।”—যোহন ১২:৫০.
তাঁর শিক্ষা হৃদয়ে পৌঁছেছিল
৩. অধ্যাপক ও ফরীশীদের থেকে কিভাবে যীশুর শিক্ষা দান পৃথক ছিল?
৩ যীশুর শিক্ষা এবং অধ্যাপক ও ফরীশীদের শিক্ষার বিষয়বস্তুর—ঈশ্বর থেকে সত্যের সাথে বিপরীতে মানুষের দুর্বহ মৌখিক রীতিনীতির মধ্যেই পার্থক্য ছিল না—কিন্তু শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতির মধ্যেও পার্থক্য ছিল। অধ্যাপক ও ফরীশীরা উদ্ধত, রূঢ়, গর্বিতভাবে উচ্চ উপাধিগুলির আকাঙ্ক্ষী ছিল এবং “দুর্ভাগা মানুষ” হিসাবে জনতাকে ঘৃণা ভরে অগ্রাহ্য করেছিল। কিন্তু, যীশু ছিলেন নম্র, মৃদুশীল, সমব্যথী এবং প্রায়ই পরিবর্তনশীল আর তাদের প্রতি করুণা দেখাতে পরিচালিত হয়েছিলেন। যীশু কেবলমাত্র সঠিক বাক্যই শিক্ষা দিতেন না কিন্তু তাঁর হৃদয় থেকে মর্মস্পর্শী বাক্য বলতেন যা সরাসরি তাঁর শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছেছিল। তাঁর আনন্দদায়ক বার্তা লোকেদের তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছিল, তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল যথাসময়ের পূর্বে মন্দিরে গিয়ে তাঁর কথা শুনতে, অবিকলভাবে তাঁকে অনুসরণ করতে এবং আনন্দের সাথে তাঁর কথা শুনতে। বিরাট সংখ্যক লোকেরা তাঁর কথা শুনতে এসে, ঘোষণা করেছিল: “কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।”—যোহন ৭:৪৬-৪৯; মার্ক ১২:৩৭; লূক ৪:২২; ১৯:৪৮; ২১:৩৮.
৪. যীশুর প্রচারের ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টি বিশেষভাবে অনেককে আকৃষ্ট করেছিল?
৪ অবশ্যই, লোকেদের তাঁর শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কারণগুলির মধ্যে একটি কারণ ছিল, শিক্ষাদানে তাঁর দৃষ্টান্তগুলির ব্যবহার। অন্যেরা যা দেখেছিল যীশুও তা লক্ষ্য করেছিলেন, কিন্তু তিনি সেই বিষয়গুলির বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন যেগুলি তারা কখনও ভাবেনি। মাঠে কানুড় পুষ্প বেড়ে উঠছে, পাখিরা তাদের বাসা তৈরি করছে, মানুষেরা শস্য বপন করছে, মেষপালকেরা হারানো মেষগুলিকে আনছে, স্ত্রীলোকেরা পুরনো কাপড়ের উপর তালি দিয়ে সেলাই করছে, শিশুরা বাজারে খেলা করছে, জেলেরা তাদের জাল টেনে তুলছে—সাধারণভাবেই পাওয়া জিনিসগুলি যা প্রত্যেকেই দেখেছিল—যীশুর দৃষ্টিতে সেগুলি কখনও সাধারণ বিষয় ছিল না। প্রতিটি স্থানে তিনি দৃষ্টিপাত করেছিলেন, ঈশ্বর ও তাঁর রাজ্যকে চিত্রিত করতে অথবা তাঁর চারপাশে মানব সমাজ সম্বন্ধে কিছু বিষয় বলার জন্য কী তিনি ব্যবহার করতে পারতেন তা তিনি দেখেছিলেন।
৫. যীশুর দৃষ্টান্তগুলি কিসের উপর ভিত্তি করে ছিল এবং কী তাঁর উপদেশমূলক গল্পগুলিকে কার্যকারী করেছিল?
৫ যীশুর দৃষ্টান্তগুলি প্রাত্যহিক বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে ছিল যা লোকেরা বহুবারই দেখেছে আর যখন সত্যগুলি এই সব পরিচিত বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েছিল, তাদের মনে গেঁথে গিয়েছিল। এইধরনের সত্য কেবল শোনা নয়; মনশ্চক্ষু দ্বারা দেখাও যায় এবং সহজেই পরে সেগুলিকে স্মরণ করা যায়। যীশুর উপদেশমূলক গল্পগুলি বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়েছিল সরলতার দ্বারা, অপ্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া যা হয়ত তাদের বাধা দিতে পারত এবং তাদের সত্যের বোধগম্যতাকে ব্যাহত করতে পারত। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশিসুলভ শমরীয়ের উপদেশমূলক গল্পটি বিবেচনা করুন। আপনি স্পষ্টভাবে দেখুন কী উত্তমই এক প্রতিবেশি। (লূক ১০:২৯-৩৭) তারপর যীশু দুই পুত্রের দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন—একজন যে বলেছিল আমি দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করব, কিন্তু করেনি, অন্য জন যে বলেছিল করবে না কিন্তু করেছিল। আপনি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারেন যে প্রকৃত বাধ্যতার মূল বিষয় কী—নির্ধারিত কাজ করা। (মথি ২১:২৮-৩১) যীশুর প্রাণবন্ত শিক্ষা চলাকালীন কেউ তন্দ্রালু অথবা কারও মন অন্যদিকে থাকত না। তাদের মন শোনা ও দেখা উভয়েতে বিভোর ছিল।
যখন প্রেম অনুকূল্যে ছিল যীশু পরিবর্তন করেছিলেন
৬. কখন যুক্তিবাদী, অথবা পরিবর্তনশীল হওয়া নির্দিষ্টভাবে সাহায্যকারী হয়?
৬ অনেক বার যখন বাইবেল যুক্তিবাদী হওয়ার কথা বলে, একটি পাদটীকা দেখায় যে ইহার অর্থ পরিবর্তনশীল হওয়া। যে প্রজ্ঞা ঈশ্বর থেকে আসে তা অপরাধের গুরুত্ব লাঘবকারী পরিস্থিতে পরিবর্তনীয় হয়। সময়ে সময়ে আমাদের যুক্তিবাদী অথবা পরিবর্তনশীল হতে হবে। প্রাচীনদের পরিবর্তনশীল হতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত, যখন প্রেম ইঙ্গিত করে তা করতে আর অনুশোচনা তা সমর্থন করে। (১ তীমথিয় ৩:৩; যাকোব ৩:১৭) যখন দয়া অথবা করুণা ইঙ্গিত করেছিল এটি সঠিক, সাধারণ নিয়মগুলিকে না মেনে যীশু পরিবর্তন হওয়ার অপূর্ব উদাহরণগুলি রেখেছিলেন।
৭. যীশুর পরিবর্তন হওয়ার কিছু উদাহরণগুলি কী?
৭ যীশু এক সময়ে বলেছিলেন: “কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব।” কিন্তু তিনি পিতরকে প্রত্যাখ্যান করেননি, এমনকি যদিও পিতর তাঁকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন। সেখানে অপরাধের গুরুত্ব লাঘবকারী পরিস্থিতি ছিল, যেটি যীশু স্পষ্টত বিবেচনা করেছিলেন। (মথি ১০:৩৩; লূক ২২: ৫৪-৬২) সেখানে আরও অপরাধের গুরুত্ব লাঘবকারী পরিস্থিতি এসেছিল, যখন রক্তস্রাবে ভোগা অশুচি স্ত্রীলোকটি জনতার মধ্যে প্রবেশ করে মোশির নিয়মকে ভঙ্গ করেছিল। যীশু কিন্তু তাকে নিন্দা করেননি। তিনি তার নৈরাশ্য বুঝেছিলেন। (মার্ক ১:৪০-৪২; ৫:২৫-৩৪; এছাড়া লূক ৫:১২, ১৩ পদও দেখুন।) যীশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন তাঁকে মশীহ হিসাবে শনাক্ত না করতে, কিন্তু কূয়ার ধারে শমরীয় স্ত্রীলোকের কাছে যখন তিনি নিজে মশীহ হিসাবে শনাক্তিকৃত হন, তখন কিন্তু তিনি সেই নিয়মকে দৃঢ়রূপে আকড়ে ধরে থাকেননি। (মথি ১৬:২০ যোহন ৪:২৫, ২৬) এই সকল ক্ষেত্রে, প্রেম, দয়া এবং করুণা এই পরিবর্তন হওয়াকে উপযোগী করেছিল।—যাকোব ২:১৩.
৮. অধ্যাপক ও ফরীশীরা কখন নিয়মগুলিকে পরিবর্তন করত এবং কখন তারা করত না?
৮ এটি অপরিবর্তনশীল অধ্যাপক ও ফরীশীদের ক্ষেত্রে অন্যরকম ছিল। নিজেদের স্বার্থে তারা তাদের বলদকে জল পান করাতে বিশ্রামবার রীতিগুলিকে লঙ্ঘন করত। অথবা বিশ্রামবারে তাদের বলদ অথবা তাদের সন্তান কূয়োর মধ্যে পড়ে গেলে, তাদের সেখান থেকে তুলতে তারা বিশ্রামবার নিয়ম লঙ্ঘন করত। কিন্তু সাধারণ লোকেদের বেলায়, তারা একেবারে পরিবর্তন করত না! তারা “অঙ্গুলি দিয়াও [চাহিদাগুলি] সরাইতে চাহিত না।” (মথি ২৩:৪; লূক ১৪:৫) যীশুর কাছে, নিয়মগুলির থেকে লোকেরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল; ফরীশীদের ক্ষেত্রে মানুষ অপেক্ষা নিয়মগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
“আজ্ঞার পুত্র” হওয়া
৯, ১০. যিরূশালেমে ফিরে আসার পর, কোথায় যীশুর পিতামাতারা তাঁকে খুঁজে পান এবং যীশুর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কী ইঙ্গিত করেছিল?
৯ কেহ কেহ দুঃখ করে বলে যে যীশুর বাল্যকালের একটি ঘটনাই কেবলমাত্র লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু অনেকেই সেই ঘটনাটির গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়। এটি আমাদের জন্য লূক ২:৪৬, ৪৭ পদে বর্ণনা করা হয়েছে: “তিন দিনের পর তাঁহারা তাঁহাকে ধর্ম্মধামে পাইলেন; তিনি গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন; আর যাহারা তাঁহার কথা শুনিতেছিল, তাহারা সকলে তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তর অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।” কিটেলের থিওলজিক্যাল ডিকস্নারী অব দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট এই দেখায় যে এই ক্ষেত্রে “প্রশ্ন” করা গ্রীক শব্দটি কেবলমাত্র বালকের কৌতূহলতাই ছিল না। তা ইঙ্গিত করতে পারে বিচার সংক্রান্তে, অনুসন্ধানে, জেরা করায় ব্যবহৃত প্রশ্নও হতে পারে, এমনকি “অধ্যাপক ও ফরীশীদের অনুসন্ধানী ও কৌশলী প্রশ্নসকল” হতে পারে, যেগুলি মার্ক ১০:২ এবং ১২:১৮-২৩ পদে উল্লেখ করা আছে।
১০ একই অভিধান আরও বলে: “এই প্রয়োগটি অনুসারে হয়ত জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে . . . [লূক] ২:৪৬ পদটি ইঙ্গিত করে, বালকটির প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার কৌতূহলতা নয়, কিন্তু বরং তাঁর সফল যুক্তিপ্রদর্শন। [পরবর্তী পদ] ৪৭ এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত।”a রার্দারহামের ৪৭ পদের অনুবাদ এটিকে এক নাটকীয় বিবাদ হিসাবে উপস্থিত করে: “সকলেই যারা তাঁর কথা শুনেছিল তারা নিজেরা তাঁর বোধগম্যতায় ও তাঁর উত্তরে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।” রবার্টসনের ওয়ার্ড পিকচার্স ইন্ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট বলে যে তাদের অবিচল বিহ্বলতার অর্থ যে “তারা আত্মহারা হয়ে গিয়ে হকচকিয়ে গিয়েছিল।”
১১. তারা যা দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন তাতে মরিয়ম ও যোষেফের কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল এবং একটি ঈশ্বরতত্ত্ব বিষয়ক অভিধান কী বলে?
১১ অবশেষে যীশুর পিতামাতা যখন মন্দিরে আসলেন, “তাঁহারা চমৎকৃত হইলেন।” (লূক ২:৪৮) রবার্টসন বলেন যে এই অভিব্যক্তির গ্রীক শব্দের অর্থ “হতভম্ব হওয়া, আঘাতের দ্বারা সরিয়ে দেওয়া।” তিনি আরও বলেন যে তারা যা দেখিলেন ও শুনেছিলেন তাতে যোষেফ এবং মরিয়ম “হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।” এক কথায় যীশু ইতিমধ্যেই একজন বিস্ময়কর শিক্ষক ছিলেন। আর মন্দিরে এই ঘটনা থেকে অনুমান করে কিটেলের অভিধান দাবি করে যে, “ইতিমধ্যে ছেলেবেলা থেকেই যীশু তাঁর বিরোধীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করেন যাতে অবশেষে তাঁর বিরোধীদের হার মানতে হবে।”
১২. ধর্মীয় নেতাদের সাথে পরে যীশুর রীতিবহির্ভূত বিতর্ক কী ইঙ্গিত করেছিল?
১২ আর যীশুর বিরোধীরা পরাজয় স্বীকার করেছিল! অনেক বছর পরে, এইরকম প্রশ্নের দ্বারা যীশু ফরীশীদের পরাজয় করেন, যতক্ষণ না তাদের “সেই দিন অবধি তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে কাহারও সাহস হইল না।” (মথি ২২:৪১-৪৬) একইভাবে সদ্দুকীরা পুনরুত্থানের প্রশ্নে নীরব ছিল এবং “সেই অবধি তাঁহাকে আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে তাহাদের সাহস হইল না।” (লূক ২০:২৭-৪০) অধ্যাপকরাও কোন ভাবে সফল হয়নি। যীশুর সাথে অধ্যাপকদের একজনের বাদানুবাদের পর “তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে আর কাহারও সাহস হইল না।”—মার্ক ১২:২৮-৩৪.
১৩. মন্দিরের ঘটনাটির মধ্যে কী ছিল যা যীশুর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এবং আর কী সচেতনতা এটি ইঙ্গিত করে?
১৩ কেন মন্দিরেতে যীশু ও শিক্ষকদের সাথে জড়িত ঘটনাটি ছিল পুনরায় বিবেচনার জন্য তাঁর ছেলেবেলায় একটি নির্বাচিত ঘটনা? এটি ছিল যীশুর জীবনের একটি সন্ধিক্ষণ। যখন তিনি ১২ বছরের ছিলেন, যিহূদী কর্তৃক “আজ্ঞার পুত্র” বলে সম্বোধিত হয়েছিলেন যিনি সমস্ত নিয়মাবলী পালনে দায়বদ্ধ ছিলেন। যখন মরিয়ম তার ও যোষেফের মানসিক ক্লেশের জন্য যীশুকে অভিযোগ করেছিলেন, তার পুত্রের উত্তর ইঙ্গিত করেছিল যে তিনি খুব সম্ভবত তাঁর জন্মের অলৌকিক প্রকৃতি ও তাঁর মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যৎ উপলব্ধি করেছিলেন। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছিল যখন তিনি বলেন যে, ঈশ্বর তাঁর পিতা ছিলেন: “কেন আমার অন্বেষণ করিলে? আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে, ইহা কি জানিতে না?” প্রসঙ্গত, এইগুলিই হল যীশুর প্রথম কথা যা বাইবেলে লিপিবদ্ধ হয় আর সেগুলি নির্দেশ করে যিহোবার উদ্দেশ্যের প্রতি তাঁর সচেতনতা যার জন্য তিনি পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছিলেন। তাই, এই সমগ্র উপাখ্যানটি হল এক মহান গূঢ়ার্থ।—লূক ২:৪৮, ৪৯.
যীশু শিশুদের ভালবাসেন ও বোঝেন
১৪. মন্দিরেতে বালক যীশুর ঘটনাটির, কিশোর-কিশোরীদের কাছে কী কী আকর্ষণীয় বিষয় জ্ঞাত করে?
১৪ এই বর্ণনা বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের কাছে রোমাঞ্চকর হওয়া উচিত। এটি দেখায় তিনি পূর্ণবয়স্কের দিকে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যীশু কিভাবে অধ্যবসায়ের সাথে অধ্যয়ন করেছিলেন। মন্দিরেতে এই ১২ বছর বয়স্ক “আজ্ঞার পুত্রের” জ্ঞানে রব্বিরা সন্ত্রস্ত হয়েছিল। তবুও তিনি যোষেফের সাথে ছুতোর মিস্ত্রির দোকানে কাজ করে তার ও মরিয়মের প্রতি “বশীভূত থাকিলেন” এবং “ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকটে অনুগ্রহে” বৃদ্ধি পেতে লাগলেন।—লূক ২:৫১, ৫২.
১৫. তাঁর পার্থিব পরিচর্যাকালে ছোট ছেলেমেয়েদের যীশু কিভাবে সমর্থন করেছিলেন আর আজকের দিনে কিশোর-কিশোরীদের জন্য এর অর্থ কী?
১৫ তাঁর পার্থিব পরিচর্যাকালে যীশু কিশোর-কিশোরীদের প্রতি খুবই সমর্থক ছিলেন: “কিন্তু প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল দেখিয়া, আর যে বালকেরা ‘হোশান্না দায়ূদ-সন্তান,’ বলিয়া ধর্ম্মধামে চেঁচাইতেছিল, তাহাদিগকে দেখিয়া, রুষ্ট হইল; এবং তাঁহাকে কহিল, শুনিতেছ, ইহারা কি বলিতেছে? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, হাঁ; তোমরা কি কখনও পাঠ কর নাই যে, “তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে স্তব সম্পন্ন করিয়াছ”?” (মথি ২১:১৫, ১৬; গীতসংহিতা ৮:২) তিনি আজকের দিনেও হাজার হাজার কিশোর-কিশোরীদের সমর্থক, যারা তাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখছে এবং প্রশংসা করছে, এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের জীবনের বিনিময়ে তা করেছে!
১৬. (ক) একটি ছোট শিশুকে তাদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে যীশু তার প্রেরিতদের কী শিক্ষা দিয়েছিলেন? (খ) যীশুর জীবনের সবচেয়ে কোন্ কষ্টকর সময়েও তিনি শিশুদের জন্য সময় করে নিয়েছিলেন?
১৬ যখন প্রেরিতেরা কে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে বাদানুবাদ করে, তখন যীশু সেই ১২ জনকে বলেছিলেন: “কেহ যদি প্রথম হইতে ইচ্ছা করে তবে সে সকলের শেষে থাকিবে ও সকলের পরিচারক হইবে। পরে তিনি একটী শিশুকে লইয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইয়া দিলেন এবং তাহাকে কোলে করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আমার নামে ইহার মত কোন শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে কেহ আমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে নয় কিন্তু যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তাঁহাকেই গ্রহণ করে।” (মার্ক ৯:৩৫-৩৭) এছাড়াও, যখন তিনি এক কষ্টকর কঠিন পরীক্ষা ও মৃত্যুর সম্মুখীন হতে শেষবারের মত যিরূশালেমের দিকে যাত্রা করেছিলেন, তখনও তিনি শিশুদের জন্য সময় করে নিয়েছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না। পরে তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।”—মার্ক ১০:১৩-১৬.
১৭. কেন যীশুর পক্ষে শিশুদেরকে বর্ণনা করা সহজ ছিল এবং তাঁর সম্বন্ধে শিশুদের অবশ্যই কী মনে রাখতে হবে?
১৭ যীশু জানেন প্রাপ্ত বয়স্কের জগতে এক শিশুর মত হওয়ার অর্থ কী। তিনি বয়স্কদের সাথে থেকেছেন, তাদের সাথে কাজ করেছেন, তাদের বশীভূত হয়েছেন এবং তাদের ভালোবাসার অনুভূতিতে আন্তরিকতা, সুরক্ষা অনুভবও করেছেন। শিশুরা এই একই যীশু হলেন তোমাদের বন্ধু; তিনি তোমাদের জন্য মৃত্যু বরণ করেছেন আর তোমরা যদি তাঁর আজ্ঞা পালন কর তাহলে তোমরা অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।—যোহন ১৫:১৩, ১৪.
১৮. কী রোমাঞ্চকর চিন্তা আমাদের মনে রাখা উচিত, বিশেষত কঠিন চাপের অথবা বিপদের সময়?
১৮ যীশু যেমন আদেশ করেছিলেন তা করা যতটা শক্ত বলে মনে হয় ততটা শক্ত নয়। কিশোর-কিশোরীরা, তিনি তোমাদের এবং অন্য যে কারও জন্য সমর্থন যোগানোর জন্য প্রস্তুত, যেমন আমরা মথি ১১:২৮-৩০ পদে পড়ি: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” কেবল কল্পনা কর, যখন তুমি জীবন দিয়ে যিহোবার সেবা করে চলেছো, যোঁ- য়ালি সহজ ও ভার লঘু করে যীশু তোমার সাথে সাথে চলছেন। সেটি আমাদের সকলের কাছে এক রোমাঞ্চকর চিন্তা!
১৯. যীশুর শিক্ষার পদ্ধতি সম্বন্ধীয় কোন্ প্রশ্নগুলি আমরা হয়ত সময়ে সময়ে পুনরালোচনা করতে পারি?
১৯ যীশুর শিক্ষাদানের উপায়গুলির মাত্র কয়েকটি পুনরালোচনার করার পর আমরা কি দেখি, যীশু যেভাবে শিক্ষা দিয়েছিলেন সেইভাবে আমরা শিক্ষা দিই? যখন আমরা দেখি যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ অথবা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্থ, আমরা কি তাদের জন্য যা করতে পারি, দয়ার সাথে তা করতে পরিচালিত হই? যখন আমরা অন্যদের শিক্ষা দিই, আমরা কি ঈশ্বরের বাক্যের শিক্ষা, অথবা ফরীশীদের মত আমরা আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা শিক্ষা দিই? আমরা কি আমাদের চারপাশের প্রাত্যহিক বিষয়গুলি সম্পর্কে সতর্ক থাকি, যা ব্যাখ্যা করতে, মানশ্চক্ষুতে দেখতে, সঠিকভাবে দেখতে এবং আধ্যাত্মিক সত্যের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহৃত হতে পারে? যখন পরিস্থিতির কারণে, প্রেম ও দয়া আরও বেশি সঠিকভাবে প্রকাশিত হয়, এইধরনের নিয়মগুলির প্রয়োগের পরিবর্তনের দ্বারা আমরা কি নির্দিষ্ট নিয়মগুলি আঁকড়ে ধরে রাখা এড়িয়ে চলছি? আর শিশুদের সম্পর্কে বা কী? আমরা কি তাদের প্রতি সেই একই মৃদুশীল চিন্তা ও প্রেমময়-সদায়তা দেখাই যেমন যীশু দেখিয়েছিলেন? আপনি কি আপনার ছেলেমেয়েকে উৎসাহিত করেন সেইভাবে অধ্যয়ন করতে যেমন যীশু বালক হিসাবে করেছিলেন? আপনি কি দৃঢ়তার সাথে আচরণ করবেন কিন্তু কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নিচে একত্র করে, আন্তরিকতার সাথে অনুতপ্তদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকবেন যেমন যীশু করেছিলেন?—মথি ২৩:৩৭.
২০. যখন আমরা আমাদের ঈশ্বরের সেবা করি, কোন্ আনন্দদায়ক চিন্তাধারার দ্বারা আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি?
২০ যীশু যেমন শিক্ষা দিয়েছিলেন সেইভাবে শিক্ষা দিতে যদি আমরা প্রচেষ্টা করি, নিশ্চিতরূপে তিনি আমাদের ‘তার সাথে যোঁয়ালির নিচে আসতে দেবেন।’—মথি ১১:২৮-৩০.
[পাদটীকাগুলো]
a অবশ্যই, আমাদের বিশ্বাস করার প্রতিটি কারণ আছে যে যারা তাঁর থেকে বড়, তাদের প্রতি যীশু সঠিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন, বিশেষ করে পক্বকেশ প্রাচীন ও যাজকদের। তুলনা করুন লেবীয় পুস্তক ১৯:৩২; প্রেরিত ২৩:২-৫.
আপনার কি স্মরণে আছে?
◻ কেন জনতা যীশুকে ঘিরে রেখেছিল?
◻ কেন কোন কোন সময়ে যীশু কিছু নিয়মকে পরিবর্তন করেছিলেন?
◻ যীশুর মন্দির শিক্ষকদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
◻ শিশুদের সাথে যীশুর সম্পর্ক থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করতে পারি?