ইয়োবের পুরস্কার—আশার এক উৎস
“সদাপ্রভু ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।”—ইয়োব ৪২:১২.
১. যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য কী করেন, এমনকি যখন তারা পরীক্ষার দ্বারা সাংঘাতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে?
যিহোবা “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) তাঁর উৎসর্গিকৃত লোকদের তিনি প্রেরণা দেন সাহসের সাথে সাক্ষ্য দিতে এমনকি পরীক্ষা যদি তাদের মৃতের ন্যায় দুর্বল করে দেয়ও। (ইয়োব ২৬:৫; প্রকাশিত বাক্য ১১:৩, ৭, ১১) এটি ইয়োবের ক্ষেত্রে সত্য প্রমাণিত হয়। মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিকরভাবে প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি মানুষের ভয়তে মৌন হয়ে থাকেননি। পরিবর্তে, তিনি সাহসের সাথে সাক্ষী দেন।
২. যদিও যিহোবার সাক্ষীরা নির্যাতন ও কঠিন পরিস্থিতি ভোগ করেছে কিন্তু কিভাবে তারা পরীক্ষাগুলিকে অতিক্রম করেছে?
২ আজকের দিনের যিহোবার সাক্ষীদের অনেকেই সেই একই কঠোর নির্যাতন এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে যার ফলে তারা মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছে। (২ করিন্থীয় ১১:২৩) ইয়োবের মত, তারাও কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি প্রেম প্রদর্শন এবং ধার্মিকতা অনুশীলন করেছে। (যিহিষ্কেল ১৪:১৪, ২০) তারা পরীক্ষা অতিক্রম করার পরও যিহোবাকে খুশি করতে বদ্ধপরিকর, সাহসের সাথে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য শক্তিপ্রাপ্ত এবং প্রকৃত আসা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ইয়োব সাহসের সাথে সাক্ষ্য দেন
৩. তার শেষ বক্তৃতায় ইয়োব কী ধরনের সাক্ষ্য দেন?
৩ তার শেষ বক্তৃতায় ইয়োব আগের থেকে আরও অনেক বেশি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি তার মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের সম্পূর্ণ চুপ করিয়ে দেন। তীব্র ব্যঙ্গের সাথে তিনি বলেন: “তুমি বলহীনের কেমন সাহায্য করিলে!” (ইয়োব ২৬:২) ইয়োব যিহোবার উচ্চ প্রশংসা করেন যাঁর শক্তিতে পৃথিবী শূন্যেতে ঝুলছে এবং জল-ভর্তি মেঘ পৃথিবীর উপর ভাসছে। (ইয়োব ২৬:৭-৯) তবুও, ইয়োব অবাক করে দেওয়া এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে বলেন “সেগুলি কেবলমাত্র তাঁহার মার্গের প্রান্ত।”—ইয়োব ২৬:১৪.
৪. ইয়োব বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে কী বলেন এবং কেন তিনি এইভাবে বলতে পেরেছিলেন?
৪ তিনি নির্দোষ বলে নিশ্চিত ছিলেন তাই ইয়োব ঘোষণা করেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) তার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন কিছুই করেননি যে যার জন্য তিনি এই ধরনের কষ্ট পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। ইয়োব জানতেন যিহোবা ধর্মভ্রষ্টদের প্রার্থনা শোনেন না কিন্তু তিনি বিশ্বস্ততা রক্ষাকারীদের পুরস্কার দেবেন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে খুব শীঘ্রই আরমাগিদনের প্রচণ্ড ঝড় দুষ্টদের তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে এবং তারা ঈশ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের যিহোবার লোকেরা, বিশ্বস্ততায় চলবে।—ইয়োব ২৭:১১-২৩.
৫. ইয়োব প্রকৃত প্রজ্ঞাকে কিভাবে বর্ণনা করেন?
৫ চিন্তা করুন সাংসারিক জ্ঞানসম্পন্ন তিনজন ব্যক্তি ইয়োবের কথাগুলি শুনছিল যখন তিনি দেখাচ্ছিলেন যে, সোনা, রূপো এবং পৃথিবী ও সমুদ্র থেকে অন্যান্য ধনসম্পদ খোঁজার জন্য মানুষ তার দক্ষতাগুলি ব্যবহার করে। “কিন্তু” তিনি বলেন, “পদ্মারাগমণির মূল্য অপেক্ষা প্রজ্ঞার মূল্য অধিক।” (ইয়োব ২৮:১৮, NW) ইয়োবের মিথ্যা সান্ত্বনাকারীরা প্রকৃত প্রজ্ঞা ক্রয় করতে পারিনি। এর উৎস হল বাতাস, বৃষ্টি, বিদ্যুৎ এবং বজ্রপাতের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে। সত্যই শ্রদ্ধার সাথে “যিহোবার ভয়ই—প্রজ্ঞা, দুষ্ক্রিয়া হইতে সরিয়া যাওয়াই সুবিবেচনা”—ইয়োব ২৮:২৮, NW.
৬. ইয়োব তার পূর্বের জীবন সম্বন্ধে কেন কথা বলেছিলেন?
৬ কষ্টকর পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও ইয়োব যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দেননি। সর্বোচ্চের কাছ থেকে সরে যাওয়ার পরিবর্তে এই বিশ্বস্ত ব্যক্তি “ঈশ্বরের গূঢ় মন্ত্রণা”-র জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন। (ইয়োব ২৯:৪) ইয়োব বড়াই করছিলেন না যখন তিনি বর্ণনা করছিলেন যে কিভাবে তিনি ‘আর্ত্তনাদকারী দুঃখীকে উদ্ধার, ধার্মিকতা পরিধান করেছিলেন এবং দরিদ্রগণের পিতা ছিলেন।’ (ইয়োব ২৯:১২-১৬) পরিবর্তে, তিনি যিহোবার সেবক হিসাবে তার জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরেন। আপনি কি সেই একই রেকর্ড গড়ে তুলে ধরেছেন? অবশ্যই, ইয়োব ঐ তিনি ধার্মিক প্রতারক পর্দাফাঁস করছিলেন।
৭. ইয়োব কী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন?
৭ অল্পবয়স্ক যাদের ‘তিনি পিতাদিগকে পালরক্ষক কুকুরদের সহিত রাখিতেও অবজ্ঞা করতেন’ তাদের কাছ থেকে ইয়োবকে পরিহাসপ্রাপ্ত হন। তাকে তারার ঘৃণা করত এবং থুথু ফেলত। যদিও তিনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন তবুও ইয়োবের প্রতি বিবেচনা দেখানো হয়নি। (ইয়োব ৩০:১, ১০, ৩০) কিন্তু, যেহেতু তিনি সম্পূর্ণরূপে যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিলেন, কিন্তু তার শুদ্ধ বিবেক ছিল আর তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “তিনি ধর্ম্মনিক্তিতে আমাকে তৌল করুন, ঈশ্বর আমার সিদ্ধতা জ্ঞাত হউন।” (ইয়োব ৩১:৬) ইয়োব পারদারিক কিংবা কুচক্রী ছিলেন না এবং তিনি যাদের প্রয়োজন তাদের সাহায্য করতে ভুলে যাননি। যদিও তিনি খুব ধনি ছিলেন তবুও তিনি তার ঐশ্বর্যের উপর আস্থা রাখেননি। তার উপর, তিনি মূর্তিপূজক ছিলেন না, জড় পদার্থ যেমন চাঁদের প্রতি তিনি ভক্তি দেখাননি। (ইয়োব ৩১:২৬-২৮) ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখে তিনি এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। এত কষ্ট এবং মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও, ইয়োব দক্ষতার সাথে জবাব এবং উত্তম সাক্ষ্য দেন। তার বাক্য শেষ হওয়ার পর তিনি ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টি করেন তার ন্যায়াধীশ এবং পুরস্কারদাতা হিসাবে।—ইয়োব ৩১:৩৫-৪০.
ইলীহূ কথা বলেন
৮. ইলীহূ কে ছিলেন এবং কিভাবে তিনি সম্মান এবং সাহস দুই দেখিয়েছিলেন?
৮ নিকটবর্তী ছিলেন যুবক ব্যক্তি ইলীহূ যিনি নাহোরের পুত্র বৃষের বংশধর, যিহোবার বন্ধু আব্রাহামের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ছিলেন। (যিশাইয় ৪১:৪) ইলীহূ এই দুইপক্ষের তর্কবিতর্ক শুনে বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তবুও তিনি যে বিষয়গুলি সম্বন্ধে তারা ভুল করছিল সেই সম্বন্ধে সাহসের সাথে কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ, তার ক্রোধ প্রজ্বলিত হয় যখন ইয়োব বলেন “ঈশ্বর অপেক্ষা আপনাকে ধার্ম্মিক জ্ঞান করিয়াছিলেন।” বিশেষ করে মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের বিরুদ্ধে তিনি ক্রুদ্ধ হন। তাদের উক্তি আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছিল যে ঈশ্বরের প্রশংসা করছে কিন্তু আসলে শয়তানের পক্ষ নিয়ে তারা ঈশ্বরের নিন্দা করছিল। “কথায় পরিপূর্ণ” হয়ে এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রেরণা পেয়ে ইলীহূ যিহোবার এক পক্ষপাতহীন সাক্ষী হন।—ইয়োব ৩২:২, ১৮, ২১.
৯. কিভাবে ইলীহূ ইয়োবের পূনর্স্থাপন সম্বন্ধে ইঙ্গিত করেন?
৯ ইয়োব ঈশ্বরের থেকে নিজেকে মহিমান্বিত করা সম্বন্ধে বেশি চিন্তিত ছিল। বস্তুত, তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তর্ক করেন। যতই ইয়োবের প্রাণ মৃত্যুর পথে এগোচ্ছিল ততই করেন। ততই কিন্তু পুনর্স্থাপনের ইঙ্গিত দেখা যায়। কিভাবে? কারণ, ইলীহূ প্রণোদিত হন এই কথা বলতে যে, যিহোবা ইয়োবকে এই কথা বলে কৃপা করেন: “কূপে নামিয়া যাওয়া হইতে ইহাকে মুক্ত কর, আমি প্রায়শ্চিত্ত পাইলাম।” তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে।”—ইয়োব ৩৩:২৪, ২৫.
১০. কোন্ পর্যায় পর্যন্ত ইয়োবকে পরীক্ষিত হতে হবে, ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদ অনুযায়ী আমরা কী বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
১০ আনন্দের সাথে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখাতে কোন লাভ নেই, ইয়োবের এই কথাগুলি ইলীহূ সংশোধন। ইলীহূ বলেন: “ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন, সর্ব্বশক্তিমান্ অন্যায় করিবেন। কারণ তিনি মনুষ্যের কর্ম্মের ফল তাহাকে দেন” নিজের ধার্মিকতাকে উচ্চে ধরে ইয়োব অসঙ্গতভাবে ব্যবহার করেন কিন্তু যথাযথ জ্ঞান আর অন্তর্দৃষ্টি ছাড়াই তিনি তা করেছিলেন। ইলীহূ আরও বলেন: “ইয়োবের পরীক্ষা শেষ পর্য্যন্ত হইলেই ভাল।” (ইয়োব ৩৪:১০, ১১, ৩৫, ৩৬) ঠিক একইভাবে, আমাদের বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হতে পারে যদি আমরা কোন না কোন ভাবে তা “শেষ পর্যন্ত” পরীক্ষিত হই। তবুও, আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা, সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটতে দেবেন না।”—১ করিন্থীয় ১০:১৩.
১১. যখন আমরা কঠোরভাবে পরীক্ষিত হব তখন আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
১১ ইলীহূ কথা বলতে গিয়ে আবার দেখান যে ইয়োব তার ধার্মিকতার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছেন। আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি দৃষ্টি থাকা উচিত। (ইয়োব ৩৫:২, ৬, ১০) ঈশ্বর “দুষ্টদের প্রাণ রক্ষা করেন না, কিন্তু দুঃখীদের পক্ষে ন্যায় বিচার করেন,” ইলীহূ বলেন। (ইয়োব ৩৬:৬) কেউ ঈশ্বরের পথের বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন না এবং বলতে পারে না যে তিনি অধার্মিক। আমরা যতটা জানতে পারি তার থেকে তিনি উচ্চ এবং তাঁর বর্ষ সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায় না। (ইয়োব ৩৬:২২-২৬) যখন কঠোরভাবে পরীক্ষিত হবেন মনে রাখবেন যে আমাদের অনন্তকালীন ঈশ্বর হলেন ধার্মিক এবং তাঁর প্রশংসার বিশ্বস্ত কাজগুলির জন্য তিনি আমাদের পুরস্কার দেবেন।
১২. ইলীহূর শেষ অভিব্যক্তিগুলি থেকে দুষ্টদের উপর ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রকাশ সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত পাওয়া যায়?
১২ যখন ইলীহূ কথা বলছিলেন ঝড় ঘনীভূত হচ্ছিল। তা যত কাছে আসছিল, তার হৃদয় ধুক্ ধুক্ ও কাঁপতে শুরু করে। যিহোবার উত্তম কাজ সম্বন্ধে কথা বলে বলেন: “হে ইয়োব, আপনি ইহাতে কর্ণপাত করুন, স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল বিবেচনা করুন।” ইয়োবের মত আমাদেরও ঈশ্বরের অপূর্ব কাজসকল এবং ভয়-সঞ্চারকারী সম্মান বিবেচনা করা উচিত। “সর্ব্বশক্তিমান্! তিনি পরাক্রমে মহান্ তিনি ন্যায়বিচার ও প্রচুর ধর্ম্মগুণ বিপরীতে করেন না। এ কারণ মনুষ্যগণ তাঁহাকে ভয় করে।” (ইয়োব ৩৭:১, ১৪, ২৩, ২৪) ইলীহূর শেষ উক্তিগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঈশ্বর শীঘ্রই দুষ্টদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন এবং তিনি ন্যায় খর্ব করবেন না এবং তাঁর ভয়শীল উপাসক হিসাবে তাঁকে যারা ভয় করে তিনি তাদের রক্ষা করবেন। যিহোবাকে যারা সার্বিক সার্বভৌম বলে স্বীকার করে তাদের মধ্যে থাকা কত বড়ই না আমাদের সুযোগ! ইয়োব যেমন সহ্য করেছিলেন সেইরকম সহ্য করুন আর কখনও সুখী আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভিড়ের স্থান থেকে দিয়াবল দ্বারা নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে দেবেন না।
যিহোবা ইয়োবকে উত্তর দেন
১৩, ১৪. (ক) যিহোবা কী বিষয় ইয়োবকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন? (খ) ইয়োবকে ঈশ্বরের অন্যান্য প্রশ্নগুলি থেকে কোন্ বিষয়গুলি শেখা যেতে পারে?
১৩ ইয়োব কতই না অবাক হয়েছিলেন যখন যিহোবা তার সঙ্গে ঝড়ের মধ্যে থেকে কথা বলেন! সেই ঝড়টি হল ঈশ্বরের ক্রিয়া কিন্তু সেই শক্তিশালী বাতাস যাতে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে ইয়োবের ছেলেমেয়েরা মারা যায় সেটি ঈশ্বরের ক্রিয়া নয়। ইয়োব হতভম্ব হয়ে পরেন যখন ঈশ্বর জিজ্ঞাসা করেন: “যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? . . . কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল? তৎকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্ত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল।” (ইয়োব ৩৮:৪, ৬, ৭) যিহোবা একের পর এক সমুদ্র, পৃথিবীর মেঘের বস্ত্র, ঊষা, মৃত্যুর কবাট, আলো ও অন্ধকার এবং নক্ষত্রপুঞ্জ সম্বন্ধে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। ইয়োব কিছুই বলতে পারেন না যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়: “তুমি কি আকাশমণ্ডলের বিধান কলাপ জান?”—ইয়োব ৩৮:৩৩.
১৪ অন্যান্য প্রশ্নগুলি ইঙ্গিত করে যে মানব সৃষ্টি হওয়া এবং মাছ, মুরগি, জন্তু এবং সরীসৃপদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়ার আগে ঈশ্বর কোন মানব সাহায্য অথবা উপদেশের ব্যতিরেকে—তাদের দেখাশোনা করেন। যিহোবার অতিরিক্ত প্রশ্নগুলি এই জন্তুগুলির দিকে নির্দেশ করে যেমন বুনো ষাঁড়, উটপাখি এবং ঘোড়া। ইয়োব জিজ্ঞাসা করে: “তোমারই আজ্ঞাতে কি ঈগল ঊদ্ধের্ব উঠে, উচ্চ স্থানে আপনার বাসা করে?” (ইয়োব ৩৯:২৭) নিশ্চয়ই নয়! ইয়োবের প্রতিক্রিয়া চিন্তা করুন যখন ঈশ্বর তাকে জিজ্ঞাসা করেন: “দোষগ্রাহী কি সর্ব্বশক্তিমানের সহিত বিবাদ করিবে?” এটি অবাক হওয়ার কোন বিষয় যখন ইয়োব উত্তর দেয়: “দেখ, আমি অকিঞ্চন; তোমাকে কি উত্তর দিব? আমি নিজ মুখে হাত দিই।” (ইয়োব ৪০:২, ৪) যেহেতু ঈশ্বর হল সবসময় সঠিক, তাই যদি আমরা তাঁর বিরুদ্ধে নালিশ করতে প্রলুব্ধ হই তাহলে আমরা যেন ‘নিজের মুখে হত দিই।’ ঈশ্বরের প্রশ্নগুলি তাঁর উৎকৃষ্টতা, মর্যাদা এবং প্রতিফলিত আলোকপাত করে যা তার সৃষ্টির মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
বেহেমোৎ এবং লিবিয়াথন
১৫. বেহেমোতকে সাধারণত কোন্ জন্তু বলে মনে করা হয় এবং এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য কী কী?
১৫ যিহোবা এর পরে বেহেমোতের বিষয় কথা বলে সাধারণত যা মনে করা হয় জলহস্তী। (ইয়োব ৪০:১৫-২৪) বিরাট আকার, অত্যন্ত বেশি ওজন এবং শক্ত চামড়ার জন্য এটি লক্ষণীয় এবং এই তৃণভোজী জন্তু ‘সবুজ ঘাস খায়।’ এর শক্তি আর তেজের উৎস হল কটি ও পেটের মাংসপেশী। পায়ের হাড়গুলি “পিত্তলময় নলের তুল্য।” বেহেমোত তীব্র স্রোতকে ভয় করে না কিন্তু খুব সহজেই স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে পারে।
১৬. (ক) লিবিয়াথনের বর্ণনা কোন্ প্রাণীর সঙ্গে খাপ খায় এবং এর সম্বন্ধে কিছু তথ্য কী? (খ) বেহেমোতের এবং লিবিয়াথনের শক্তি যিহোবার পরিচর্যায় দায়িত্বগুলি পূর্ণ করা সম্বন্ধে কী হয়ত ইঙ্গিত করতে পারে?
১৬ ঈশ্বর ইয়োবকে আরও জিজ্ঞাসা করেন: “তুমি কি বড়শীতে লিবিয়াথনকে তুলিতে পার? হাতসূতে তাহার জিহ্বা বাঁধিতে পার?” লিবিয়াথনের বর্ণনা কুমীরের সাথে খাপ খায়। (ইয়োব ৪১:১, ৩৪) এটি কারও সাথে শান্তির চুক্তি করে না এবং কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি এত দুঃসাহসী হবে না যে এই সরীসৃপকে জাগাবে। ধনুর্বাণ তাকে তাড়াইতে পারে না এবং সে “বড়শার ধ্বনিতে হাস্য করে।” ক্রোধান্বিত লিবিয়াথন অগাধ জলকে মলমের ন্যায় ফুটায়। লিবিয়াথন আর বেহেমোত যে ইয়োবের থেকে বেশি শক্তিশালী এই বাস্তবতা তাকে নম্র হতে সাহায্য করে। আমাদেরও নম্রভাবে স্বীকার করতে হবে যে আমরাও শক্তিশালী নই। শয়তানের, সর্পের বিষঁদাতকে এড়িয়ে চলার জন্য এবং যিহোবার পরিচর্যায় আমাদের দায়িত্বগুলি পরিপূর্ণ করার জন্য আমাদের ঈশ্বর-দত্ত প্রজ্ঞা এবং শক্তি দরকার।—ফিলীপিয় ৪:১৩; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.
১৭. (ক) কিভাবে ইয়োব ‘ঈশ্বরকে দেখেন?’ (খ) যে সব প্রশ্নগুলির ইয়োব উত্তর দিতে পারেননি তার থেকে কী প্রমাণিত হয় এবং এটি কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৭ সম্পূর্ণ নম্রমনা হয়ে ইয়োব তার ভুল ধারণা স্বীকার করেন এবং মেনে নেন যে তিনি অজ্ঞের মত কথা বলেছেন। তবুও, তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি ‘ঈশ্বরকে দেখেন।’ (ইয়োব ১৯:২৫-২৭) যেহেতু কোন মানুষ যিহোবাকে দেখে বেঁচে থাকতে পারে না তাহলে এটি কিভাবে হতে পারে? (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) আসলে, ইয়োব ঐশিক শক্তির প্রকাশ দেখেন ঈশ্বরের বাক্য শোনেন এবং যিহোবা সম্বন্ধে সত্যতা সম্বন্ধে তার বোধগম্যতা চক্ষু খুলে যায়। ফলে ইয়োব ‘প্রত্যাহার করে এবং ধুলোয় ও ভস্মে অনুতাপ করে। (ইয়োব ৪২:১-৬) যে প্রশ্নগুলির উত্তর ইয়োব দিতে পারেননি, তা ঈশ্বরের সর্বোৎকৃষ্টতাকে প্রমাণ করে আর দেখায় যে মানুষ হল নগণ্য এমনকি ইয়োবের মত যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত ব্যক্তি পর্যন্ত। এটি আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে যিহোবার নামের পবিত্রকরণের আর সার্বভৌমত্বের মহিমান্বিত হওয়ার আগে যেন আমরা আমাদের আগ্রহকে না রাখি। (মথি ৬:৯, ১০) যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখা এবং তাঁর নামকে সম্মানিত করা আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
১৮. ইয়োবের মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের কী করার প্রয়োজন ছিল?
১৮ তাহলে আত্ম-ধার্মিক মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে? ইয়োবের মত সত্য কথা না বলার জন্য যিহোবা ন্যায়ত ইলীফস্, বিলদদ্ এবং সোফারকে মেরে ফেলতে পারতেন। “তোমরা সাতটী বৃষ ও সাতটী মেষ লইয়া আমার দাস ইয়োবের নিকটে গিয়া” ঈশ্বর বলেন “আপনাদের নিমিত্ত হোম- বলি উৎসর্গ কর। আর আমার দাস ইয়োব তোমাদিগের নিমিত্ত প্রার্থনা করিবে।” সেই তিনজন ব্যক্তিকে নম্র হতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হয়েছিল। বিশ্বস্ততা-রক্ষাকারী ইয়োব তাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করেন আর যিহোবা তার প্রার্থনা গ্রাহ্য করেন। (ইয়োব ৪২:৭-৯) কিন্তু ইয়োবের স্ত্রীর সম্বন্ধে কী বলা যায়, যে তাকে ঈশ্বরকে অভিশাপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করতে বলেছিল? মনে হয় যে ঈশ্বরের ক্ষমাশীলতার ফলে সে ইয়োবের সাথে আবার মিলিত হয়।
প্রতিজ্ঞাত পুরস্কার আমাদের আশা দেয়
১৯. ইয়োবের সাথে সংগতি রেখে যিহোবা কিভাবে দিয়াবলের উপর তাঁর সর্বোৎকৃষ্টতা দেখান?
১৯ যত তাড়াতাড়ি ইয়োব তার দুর্দশা সম্বন্ধে চিন্তা করতে বন্ধ করে ঈশ্বরের পরিচর্যায় পুনরুজ্জীবিত হন যিহোবা তার পরিস্থিতির পরিবর্তন করেন। ইয়োব ঐ তিনজনের সম্বন্ধে প্রার্থনা করার ঠিক পরেই ঈশ্বর ‘তাঁহার দুর্দশার পরিবর্ত্তন করেন’ এবং তাকে “পূর্ব্ব সম্পদের দ্বিগুণ সম্পদ দিলেন।” শয়তানের রোগসংক্রমণকারী হাত বন্ধ করে দিয়ে এবং অলৌকিকভাবে ইয়োবকে সুস্থ করে দিয়ে যিহোবা শয়তানের তাঁর সর্বোৎকৃষ্টতা দেখান। ঈশ্বর মন্দ আত্মাদের দলকে হঠিয়ে দেন এবং তাঁর দূতগণের শিবিরের সাহায্যে ইয়োবের চারিধারে বেড়া দিয়ে তাদের সেইখানেই রাখেন।—ইয়োব ৪২:১০; গীতসংহিতা ৩৪:৭.
২০. কোন্ কোন্ দিক দিয়ে যিহোবা ইয়োবকে পুরস্কৃত এবং আশীর্বাদপ্রাপ্ত করেন?
২০ ইয়োবের ভাইরা, বোনেরা এবং পূর্বাকার বন্ধুরা তার কাছে খাবার, সমবেদনা জানানোর জন্য এবং যিহোবা তার উপর যে দুর্দশা আসতে দিয়েছিলেন সে বিষয়ে সান্ত্বনা দিতে আসতেই থাকে। প্রত্যেক ব্যক্তি তাকে টাকা এবং সোনার আংটি দেয়। যিহোবা ইয়োবকে পূর্ব থেকে আরও অধিক আশীর্বাদ করেন ফলে ১৪,০০০ মেষ, ৬,০০০ উঠ, ১,০০০ জোড়া বলদ এবং ১,০০০ গর্দ্দভী তার কাছে ফিরে আসে। ইয়োব সাতটি পুত্র এবং তিনটি কন্যা ফিরে পান যা তার প্রথমে ছিল। তার কন্যাগণ—যিমীমা, কৎসীয়া ও কেরণহপ্পুক—সমস্ত দেশে সবচেয়ে রূপবতী যুবতী ছিল এবং ইয়োব তাদের ভাইদের দায়াধিকার দিলেন। (ইয়োব ৪২:১১-১৫) তার উপর, ইয়োব আরও ১৪০ বছর বেঁচে থাকেন এবং চার পুরুষ দেখেন। বর্ণনা এইভাবে শেষ হয়: “শেষে ইয়োব বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।” (ইয়োব ৪২:১৬, ১৭) তার জীবন বৃদ্ধি পাওয়া হল যিহোবার অলৌকিক কাজ।
২১. ইয়োবের বিষয়ে শাস্ত্রীয় বিবৃতি আমাদের কিভাবে সাহায্য করে এবং কী করতে আমাদের দৃঢ় নিশ্চিত হওয়া উচিত?
২১ ইয়োব সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় বর্ণনা আমাদের শয়তানের চাতুরীর সম্বন্ধে সচেতন করে এবং সার্বিক সার্বভৌমত্ব মানুষের বিশ্বস্ততার সঙ্গে কিভাবে জড়িত তা দেখতে আমাদের সাহায্য করে। ইয়োবের মত যারা যিহোবাকে প্রেম করে তারা পরীক্ষিত হবে। কিন্তু আমরা ইয়োবের মত সহ্য করতে পারি। বিশ্বাস ও আশার সাথে তিনি পরীক্ষা অতিক্রম করেন এবং বিভিন্নভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত হন। যিহোবার সেবক হিসাবে আমাদের কাছে সত্য বিশ্বাস ও আশা আছে। এবং কতই মহান আশা সর্বোচ্চ পুরস্কারদাতা আমাদের প্রত্যেকের সামনেই না রেখেছেন! স্বর্গীয় পুরস্কার মনে রাখলে অভিষিক্তদের পৃথিবীতে তাদের অবশিষ্ট জীবন বিশ্বস্ততার সাথে ঈশ্বরকে সেবা করতে সাহায্য করবে। অনেকে যাদের পৃথিবীতে থাকার আশা আছে তারা কখনও মরবে না, কিন্তু যারা মারা যাবে তারা পরমদেশ পৃথিবীতে ইয়োবের সাথে পুনরুত্থানের দ্বারা পুরস্কারপ্রাপ্ত হবে। এই প্রকৃত আশা হৃদয়ে এবং মনে রেখে, আসুন যারা আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করি বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী হিসাবে যিহোবার পক্ষ নিয়ে শয়তানকে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত করি এবং তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বের দৃঢ় সমর্থনকারী হই।
আপনি কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?
▫ মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের প্রতি ইয়োবের শেষ উত্তরে কী কী বিষয় ছিল?
▫ কিভাবে ইলীহূ যিহোবার পক্ষপাতহীন সাক্ষী হন?
▫ ইয়োবের প্রতি ঈশ্বরের কয়েকটি প্রশ্ন কী কী ছিল এবং এর প্রভাব কী হয়?
▫ ইয়োবের শাস্ত্রীয় বিবৃতি থেকে আপনি কিভাবে উপকৃত হয়েছেন?
[Pictures on page 25]
বেহেমোত এবং লিবিয়াথন সম্বন্ধে যিহোবার উক্তিগুলি ইয়োবকে নম্র হতে সাহায্য করে