ওয়াচটাওয়ার অনলাইন লাইব্রেরি
ওয়াচটাওয়ার
অনলাইন লাইব্রেরি
বাংলা
  • বাইবেল
  • প্রকাশনাদি
  • সভা
  • w৯৪ ১২/১ পৃষ্ঠা ১৩-১৮
  • ‘অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করুন’

এই বাছাইয়ের সঙ্গে কোনো ভিডিও প্রাপ্তিসাধ্য নেই।

দুঃখিত, ভিডিওটা চালানো সম্বভব হচ্ছে না।

  • ‘অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করুন’
  • ১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • উপশিরোনাম
  • অনুরূপ বিষয়বস্ত‌ু
  • “যিহোবার দান”
  • মন্দিরের জন্য দান
  • খ্রীষ্টীয় সময়ে সঙ্গতির সঠিক ব্যবহার
  • বিশ্বস্ত দাসেরা
  • উদারতার এক নমুনা
  • ‘অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করুন’
  • প্রকৃত ধন লাভ করার চেষ্টা করুন
    প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে (অধ্যয়ন)—২০১৭
  • সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বেচ্ছাকৃত দান
    ১৯৯৯ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
  • মুক্তহস্তে দান করে আনন্দ পাওয়া যায়
    ২০০০ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
১৯৯৪ প্রহরীদুর্গ যিহোবার রাজ্য ঘোষণা করে
w৯৪ ১২/১ পৃষ্ঠা ১৩-১৮

‘অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করুন’

“আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর, . . . যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েরও বিশ্বস্ত।”—লূক ১৬:৯, ১০.

১. মিশর থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মোশি এবং ইস্রায়েল সন্তানেরা কিভাবে যিহোবার প্রশংসা করে?

অলৌকিকভাবে উদ্ধারপ্রাপ্তি​—⁠কতই না বিশ্বাস দৃঢ়কারী অভিজ্ঞতা! মিশর থেকে ইস্রায়েলের যাত্রার যে কৃতিত্ব তা আর কাউকে নয় কেবলমাত্র সর্বশক্তিমান যিহোবাকেই দেওয়া যেতে পারে। এটা আশ্চর্য়ের বিষয় নয় যে মোশি এবং ইস্রায়েলীয়রা গান গেয়েছিল: “সদাপ্রভু আমার বল ও গান, তিনি আমার পরিত্রাণ হইলেন; এই আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহার প্রশংসা করিব; আমার পৈতৃক ঈশ্বর, আমি তাঁহার প্রতিষ্ঠা করিব।”—যাত্রাপুস্তক ১৫:১, ২; দ্বিতীয় বিবরণ ২৯:⁠২.

২. মিশর থেকে বার হয়ে আসার সময় যিহোবার লোকেরা তাদের সঙ্গে কী নিয়ে এসেছিল?

২ ইস্রায়েলের এই নবপ্রাপ্ত স্বাধীনতা, মিশরে থাকাকালীন তাদের পরিস্থিতির থেকে কতই না আলাদা ছিল! এখন তারা নির্বিঘ্নে যিহোবার উপাসনা করতে পারবে। এছাড়া তারা মিশর থেকে খালি হতে আসেনি। মোশি বিবৃতি দেন: “ইস্রায়েল-সন্তানেরা . . . মিস্রীয়দের কাছে রৌপ্যালঙ্কার স্বর্ণালঙ্কার ও বস্ত্র চাহিল; আর সদাপ্রভু মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে তাহাদিগকে অনুগ্রহপাত্র করিলেন, তাই তাহারা যাহা চাহিল, মিস্রীয়েরা তাহাদিগকে তাহাই দিল। এইরূপে তাহারা মিস্রীয়দের ধন হরণ করিল।” (যাত্রাপুস্তক ১২:৩৫, ৩৬) কিন্তু মিশরের এই ধনকে তারা কিভাবে ব্যবহার করেছিল? এর ফলে কি ‘যিহোবা উচ্চান্বিত হয়েছিলেন’? তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কি শিখি?​—⁠তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১০:১১.

“যিহোবার দান”

৩. মিথ্যা উপাসনায় ইস্রায়েলের যে স্বর্ণের ব্যবহার তার প্রতি যিহোবার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

৩ ইস্রায়েলের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের নির্দেশ পাওয়ার জন্য সিনয় পর্বতে মোশির ৪০ দিন থাকাকালীন, লোকেরা যারা নিচে অপেক্ষা করছিল তারা অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়ে। সোনার দুল তারা খুলে ফেলে এবং হারোণকে নির্দেশ দেয় যে তা দিয়ে তিনি যেন উপাসনার জন্য একটি প্রতিমা নির্মাণ করেন। এছাড়াও হারোণ তাদের জন্য একটি বেদী তৈরি করে দেন, আর সেখানে তারা পরের দিন প্রত্যূষে হোমবলি উৎসর্গ করে। স্বর্ণালঙ্কারের এই ব্যবহার পরিত্রাতার কাছে তাদেরকে কি প্রিয়পাত্র করে তুলেছিল? কখনই নয়! “এখন তুমি ক্ষান্ত হও,” যিহোবা মোশির কাছে ঘোষণা করেন, “তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হউক, আমি তাহাদিগকে সংহার করি।” কেবল মাত্র মোশির অনুরোধে যিহোবা সেই জাতিকে ছেড়ে দেন, যদিও বিদ্রোহী দলপতিরা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা মহামারীর দ্বারা নিহত হয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৩২:১-৬, ১০-১৪, ৩০-৩৫.

৪. “যিহোবার উপহার,” কী এবং কারা তা অর্পণ করে?

৪ পরবর্তী কালে, ইস্রায়েলদের তাদের গচ্ছিত ধন ব্যবহার করার এমন একটা সুযোগ এসেছিল যা অবশ্যই যিহোবাকে খুশি করেছিল। তারা আবাস নির্মাণ ও তা সুসজ্জিত করার জন্য “সদাপ্রভুর নিমিত্তে . . . উপহার নিয়েছিল।a সোনা, রূপো, পেতল, নীল সূতো, নানা ধরনের রঞ্জক দ্রব্য, ছাগলের লোম, তহশচর্ম, শিটীম কাঠ ইত্যাদি, দান হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই বিবরণটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় দানকারীদের মনোভাবের প্রতি। “কেহ মনে ইচ্ছুক, সে সদাপ্রভুর উপহারস্বরূপ এই সকল দ্রব্য আনিবে” (যাত্রাপুস্তক ৩৫:৫-৯) ইস্রায়েল অভূতপূর্বরূপে সাড়া দিয়েছিল। এর ফলে আবাসটি, একজন পণ্ডিত ব্যক্তির বর্ণনা অনুসারে হয়ে উঠেছিল এক “সুন্দর ও নিসর্গ মহিমার,” প্রকাশ।

মন্দিরের জন্য দান

৫, ৬. মন্দিরের ক্ষেত্রে, দায়ূদ কিভাবে তার ঐশ্বর্য ব্যবহার করেন এবং অন্যেরা কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

৫ যদিও রাজা শলোমন যিহোবার উপাসনার জন্য যে স্থায়ী গৃহ তার নির্মাণ কাজকে পরিচালনা করেছিলেন, কিন্তু তার পিতা, দায়ূদ, এর জন্য আগে থেকেই এক ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। দায়ূদ প্রচুর পরিমাণে সোনা, রূপো, তামা, লোহা, কাঠ, এবং মূল্যবান পাথর সংগ্রহ করেন। “আমার ঈশ্বরের গৃহের প্রতি অনুরাগ প্রযুক্ত,” দায়ূদ তাঁর লোকেদেরকে বলেন, “তদ্ব্যতীত আমার নিজস্ব স্বর্ণ ও রৌপ্যধনও আছে; তাহাও দিলাম; ফলতঃ গৃহদ্বয়ের ভিত্তি সকল মুড়িবার জন্য তিন সহস্র তালন্ত স্বর্ণ . . . ও সাত সহস্র তালন্ত নির্ম্মল রৌপ্য দিলাম।” দায়ূদ অন্যদেরকেও উদারমনা হতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল অপরিসীম: আরও অধিক পরিমাণে সোনা, রুপো, তামা লোহা, এবং মূল্যবান পাথর আসতে লাগল। “একাগ্রচিত্তে” লোকেরা “সদাপ্রভুর উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিল।”​—⁠১ বংশাবলি ২২:৫; ২৯:১-৯.

৬ এই ইচ্ছাপূর্বক দানের মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উপাসনার প্রতি তাদের গভীর উপলব্ধিবোধ প্রকাশ করেছিল। দায়ূদ নম্রতার সাথে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি কে, আমার প্রজারাই বা কে যে, আমরা এই প্রকারে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিতে সমর্থ হই?” কেন? কারণ “সমস্তই ত তোমা হইতে আইসে, এবং তোমার হস্ত হইতে যাহা পাইয়াছি, তাহাই তোমাকে দিলাম। . . . আমি আপন অন্তঃকরণের সরলতায় ইচ্ছাপূর্ব্বক এই সকল দ্রব্য দিলাম।”—১ বংশাবলি ২৯:১৪, ১৭.

৭. আমোষের দিনের থেকে আমরা কোন্‌ সতর্কতামূলক শিক্ষা পাই?

৭ তবুও, ইস্রায়েল জাতি তাদের মনে ও হৃদয়ে যিহোবার উপাসনাকে প্রাধান্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। সা.শ.পূ. নবম শতাব্দীর মধ্যে, এক বিভক্ত ইস্রায়েল আত্মিক অবহেলার দোষে দোষী হয়ে পড়ে। উত্তরে অবস্থিত দশ-বংশীয় ইস্রায়েল রাজ্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যিহোবা আমোষের মাধ্যমে ঘোষণা করেন: “ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা সিয়োনে নিশ্চিন্ত রহিয়াছে, ও তাহাদিগকে, যাহারা শমরিয়া পর্ব্বতে নির্ভয়ে রহিয়াছে;” তিনি তাদেরকে এমন ব্যক্তিদের সাথে তুলনা করেন যারা “হস্তিদন্তের শয্যায় শয়ন করে, খট্টার উপরে আপন আপন গাত্র লম্বা করে, . . . পালের মধ্য হইতে মেষশাবকদিগকে, ও গোষ্ঠীর মধ্য হইতে গোবৎসদিগকে আনিয়া ভোজন করে; . . . তাহারা বড় বড় ভাণ্ডে দ্রাক্ষারস পান করে।” কিন্তু তাদের ধনাঢ্যতা সুরক্ষার মাধ্যমে পরিণত হয়নি। ঈশ্বর সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “তাহারা প্রথম নির্ব্বাসিত লোকদের সহিত নির্ব্বাসিত হইবে, ও গাত্রলম্বকারীদের হর্ষনাদ লুপ্ত হইবে।” সা.শ.পূ. ৭৪০ সালে অশূরীয়দের হাতে ইস্রায়েল তাড়ীত হয়। (আমোষ ৬:১, ৪, ৬, ৭) আর কালক্রমে যিহূদার দক্ষিণ রাজ্যও বস্তুবাদিতার ফাঁদে পড়ে।​—⁠যিরমিয় ৫:২৬-২৯.

খ্রীষ্টীয় সময়ে সঙ্গতির সঠিক ব্যবহার

৮. সঙ্গতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যোষেফ ও মরিয়ম কী ধরনের উত্তম আদর্শ রেখেছিলেন?

৮ তুলনামূলকভাবে, পরবর্তী কালে ঈশ্বরের দাসেদের দুস্থ পরিস্থিতি তাদেরকে সত্য উপাসনার প্রতি উদ্যোগ প্রদর্শন করার থেকে বঞ্চিত করতে পারেনি। বিবেচনা করুন মরিয়ম ও যোষেফের কথা। কৈসর আগস্তের আদেশ অনুসারে, তারা তাদের পৈত্রিক শহর বৈৎলেহমে যান। (লূক ২:​৪, ৫) সেখানেই যীশুর জন্ম হয়। চল্লিশ দিন পর, যোষেফ ও মরিয়ম নিকটবর্তী যিরূশালেমের মন্দিরে যান নির্দেশ অনুসারে শুচিমূলক বলি উৎসর্গ করতে। তাদের আর্থিক অনটনের পরিপ্রেক্ষিতে, মরিয়ম দুটি ছোট পাখি উৎসর্গ করেন। কিন্তু তিনি অথবা যোষেফ, উভয়ের মধ্যে কেউই তাদের দারিদ্রতার অজুহাত দেননি। বরঞ্চ তারা তাদের সীমিত সঙ্গতি বাধ্যতার সাথে ব্যবহার করেছিলেন।​—⁠লেবীয় পুস্তক ১২:৮; লূক ২:​২২-২৪.

৯-১১. (ক) কিভাবে আমরা অর্থের ব্যবহার করব তা মথি ২২:২১ পদে যীশুর বাক্য কিভাবে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? (খ) বিধবার সেই ক্ষুদ্র দান কেন ব্যর্থ হয়নি?

৯ পরবর্তী কালে, ফরীশীরা এবং হেরোদের দলের অনুগামীরা এই বলে যীশুকে ফ্যাসাদে ফেলার চেষ্টা করে: “ভাল, আমাদিগকে বলুন, আপনার মত কি? কৈসরকে কর দেওয়া বিধেয় কি না?” যীশুর উত্তর তাঁর বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিল। তারা যে মুদ্রাটি তাঁকে দিয়েছিল, সেটির সম্বন্ধে যীশু জিজ্ঞাসা করেন: “এই মূর্ত্তি ও এই নাম কাহার?” তারা উত্তর দেয়: “কৈসরের।” তিনি বিজ্ঞতার সাথে বলেন: “তবে কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মথি ২২:​১৭-২১) যীশু জানতেন যে, যে কর্তৃপক্ষ মুদ্রাটির প্রকাশ করেছে তারা অবশ্যই এর কর আশা করে। কিন্তু এখানে তিনি তাঁর অনুগামীদের ও শত্রুদের বোঝাতে সাহায্য করছিলেন যে সত্য খ্রীষ্টানদের অবশ্যই উচিত “ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” দেওয়া। এর অন্তর্ভুক্ত হল একজনের পার্থিব সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার।

১০ একটি ঘটনা যা যীশু মন্দিরের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সেটাই এর প্রমান দেয়। ‘বিধবাদের ঘর গ্রাস করার জন্য’ তিনি সবেমাত্র লোভী অধ্যাপকদের তিরস্কার করেছেন, হঠাৎ “তিনি চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে আপন আপন দান রাখিতেছে,” লূক জানান। “আর তিনি দেখিলেন, একটী দীনহীনা বিধবা সেই স্থানে দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে; তখন তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল; কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল।” (লূক ২০:৪৬, ৪৭; ২১:১-৪) কিছু লোক বলে যে মন্দিরটি মূল্যবান পাথরের দ্বারা সজ্জিত। যীশু উত্তর করেন: “তোমরা এই যে সকল দেখিতেছ, এমন সময় আসিতেছে, যখন ইহার একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে।” (লূক ২১:​৫, ৬) বিধবার সেই ক্ষুদ্রদান কি ব্যর্থ হয়েছিল? অবশ্যই নয়। সেই সময় যিহোবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি সে সমর্থন জানিয়েছিল।

১১ যীশু তাঁর প্রকৃত অনুগামীদের বলছিলেন: “কোন ভৃত্য দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয় এক জনকে ঘৃণা করিবে, অন্যকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনে অনুরক্ত হইবে, অন্যকে তুচ্ছ করিবে। তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” (লূক ১৬:১৩) অতএব, আর্থিক সঙ্গতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে সঠিক ভারসাম্য দেখাতে পারি?

বিশ্বস্ত দাসেরা

১২-১৪. (ক) কোন্‌ সঙ্গতির ক্ষেত্রে খ্রীষ্টানেরা দাস? (খ) বর্তমান দিনে কোন্‌ অসাধারণ ক্ষেত্রে যিহোবার লোকেরা বিশ্বস্ত সহকারে তাদের এই দাসত্বের দায়িত্বকে পালন করে চলেছে? (গ) আজকের দিনে ঈশ্বরের কাজকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থ তা কোথা থেকে আসে?

১২ যখন আমরা যিহোবার কাছে আমাদের জীবন উৎসর্গ করি, তখন আমরা বস্তুতপক্ষে এটাই বলি যে, আমাদের যা কিছু আছে, আমাদের যা কিছু সঙ্গতি, সবই তাঁর। তাহলে, আমাদের যা আছে তা আমরা কিভাবে ব্যবহার করব? মণ্ডলীতে খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে প্রহরীর্দুগ সমিতির প্রথম সভাপতি, ভাই সি. টি. রাসেল লেখেন: “প্রত্যেক জন নিজস্ব সময়, প্রভাব, অর্থ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিজেকে প্রভুর অনুমোদিত দাস হিসাবে গণ্য করবে এবং প্রত্যেককে নিজের সাধ্যমতো এই তালন্তকে প্রভুর মহিমার জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।”​—⁠নতুন সৃষ্টি (ইংরাজি) পৃষ্ঠা ৩৪৫.

১৩ “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়,” ১ করিন্থীয় ৪:২ পদ বলে। এক আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী হিসাবে যিহোবার সাক্ষীরা এই বর্ণনা অনুসারে চলার চেষ্টা করে, খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় যতখানি সম্ভব ততোখানি সময় ব্যয় করে, সন্তর্পণে শিক্ষা দেওয়ার যে ক্ষমতা, তার মানকে উন্নত করার চেষ্টা করে। এছাড়াও, আঞ্চলিক নির্মাণ কমিটির তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবকদের দল, স্বেচ্ছায় তাদের সময়, শক্তি ও কর্মকৌশলতার দ্বারা উপাসনার জন্য উত্তম সভাগৃহ তৈরি করে থাকে। এই সমস্ত কিছুর জন্য যিহোবার অত্যন্ত খুশি হন।

১৪ এই ব্যাপক শিক্ষা ও নির্মাণ কাজের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসে? স্বেচ্ছামূলক হৃদয় যাদের আছে তাদের কাছ থেকে, ঠিক যেমন আবাস নির্মাণ কাজের সময় এসেছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কি এর মধ্যে অংশ আছে? আমরা যে ভাবে আমাদের অর্থ ব্যবহার করি, তা কি প্রমাণ করে যে যিহোবার পরিচর্যা আমাদের কাছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? অর্থের ক্ষেত্রে, আসুন আমরা যেন বিশ্বস্ত দাস হতে পারি।

উদারতার এক নমুনা

১৫, ১৬. (ক) পৌলের দিনে কিভাবে খ্রীষ্টানের তাদের উদার মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিল? (খ) এই আলোচ্য বিষয়টিকে আমাদের কিভাবে দেখা উচিত?

১৫ প্রেরিত পৌল, মাকিদনিয়া ও আখায়ার খ্রীষ্টানদের উদার মনোভাব সম্বন্ধে লিখেছিলেন। (রোমীয় ১৫:২৬) নিজেরা পীড়িত থাকা সত্ত্বেও, তারা ভাইদেরকে সাহায্য করার জন্য দান করতে প্রস্তুত থাকত। ঠিক একই রকমভাবে পৌল করিন্থীয় খ্রীষ্টানদেরকে উৎসাহ দেন তাদের বারতি যে সম্পত্তি তা উদারভাবে দান করতে যাতে করে যাদের অভাব আছে তাদের তা মোচন হয়। অপরকে শোষণ করার অভিযোগ কেউ পৌলের উপর সঙ্গতভাবে দিতে পারেনি। তিনি লিখেছিলেন: “যে অল্প পরিমাণে বীজ বুনে, সে অল্প পরিমাণে শস্যও কাটিবে; আর যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।”—২ করিন্থীয় ৮:১-৩, ১৪; ৯:৫-৭, ১৩.

১৬ আজকের দিনে আমাদের ভাইয়েরা ও আগ্রহী ব্যক্তিরা জগদ্ব্যাপী রাজ্যের কাজের জন্য যে ভাবে উদারচিত্তে দান করে, এটাই প্রমাণ দেয় যে তারা এই সুযোগকে কতই না বড় ভাবে দেখে। কিন্তু, পৌল যেমন করিন্থীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, আমরাও ভাল করব যদি এই আলোচনাকে আমরা স্মারক হিসাবে গ্রহণ করি।

১৭. কী ধরনের দান দিতে পৌল উৎসাহ দেন এবং এটি কি আমাদের দিনে প্রয়োগ করা যেতে পারে?

১৭ পৌল ভাইয়েদেরকে উৎসাহ দিয়েছিলেন যে তারা যেন তাদের দানের ক্ষেত্রে একটি ধারাকে মেনে চলে। “সপ্তাহের প্রথম দিনে,” তিনি বলেন, “তোমরা প্রত্যেকে আপনাদের নিকটে কিছু কিছু রাখিয়া আপন আপন সঙ্গতি অনুসারে অর্থ সঞ্চয় কর।” (১ করিন্থীয় ১৬:​১, ২) আমরা মণ্ডলীর অথবা সরাসরি ওয়াচ টাওয়ার সমিতির নিকটস্থ শাখা অফিস যার মাধ্যমেই তা করি, দান করার ক্ষেত্রে এটি আমাদের ও আমাদের সন্তানদের জন্য একটি উদাহরণস্বরূপ। এক মিশনারী দম্পতি পূর্ব আফ্রিকার একটি শহরে প্রচার করার সময় কয়েক জন আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে বাইবেল অধ্যয়নে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। প্রথম সভাটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর, সেই মিশনারীরা সন্তর্পণে কিছু পয়সা একটি বাক্সের মধ্যে রাখলেন, যার উপরে লেখা ছিল “রাজ্যের কাজের জন্য দান।” অন্যান্যরা যারা যোগদান করেছিল তারাও ঠিক তাই করল। পরবর্তী কালে, এই নতুনেরা মণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর, সীমা অধ্যক্ষ তার পরিদর্শনে তাদের নিয়মিত দান সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন।​—⁠গীতসংহিতা ৫০:​১০, ১৪, ২৩.

১৮. দুর্দশাগ্রস্ত ভাইয়েদেরকে আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

১৮ এছাড়াও যারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বসবাস করছে, আমাদের সঙ্গতির মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করারও সুযোগ আমাদের রয়েছে। পূর্ব ইউরোপে পাঠানো সেই ত্রাণ কাজের খবর পেয়ে আমরা কতই না আনন্দিত হয়েছিলাম যখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উত্তোলন পৃথিবীর ঐ অংশটিকে ধুইয়ে নিয়ে গিয়েছিল! সামগ্রী ও অর্থ দান উভয়ই দুর্দশাগ্রস্ত খ্রীষ্টানদের সাথে আমাদের ভাইয়েদের উদারতা ও একতার প্রমাণ দেয়।b​—⁠২ করিন্থীয় ৮:​১৩, ১৪.

১৯. যারা পূর্ণ-সময় পরিচর্যার কাজ করছে তাদেরকে আমরা কিভাবে বাস্তব উপায়ে সাহায্য করতে পারি?

১৯ আমাদের ভাইয়েরা যারা পূর্ণ-সময়ে জন্য অগ্রগামী, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, মিশনারী এবং বেথেলের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করছে, আমরা তাদের কাজকে খুবই উপলব্ধি করি, তাই নয় কি? আমাদের পরিস্থিতি যেমন সুযোগ দেয় সেই অনুসারে সরাসরি হয়তো আমরা তাদের কিছু বস্তু-সামগ্রী সাহায্য করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, যখন সীমা অধ্যক্ষ আপনার মণ্ডলী পরিদর্শনে আসেন, তখন হয়তো আপনি তার থাকার, খাওয়ার, অথবা যাতায়াতের খরচ দিতে পারেন। এই ধরনের উদারতা আমাদের স্বর্গীয় পিতার অগোচরে যায় না, যিনি চান যে তাঁর দাসেদেরকে যেন দেখাশোনা করা হয়। (গীতসংহিতা ৩৭:২৫) কিছু বছর আগে এক ভাই যিনি তার সামর্থ অনুসারে হাল্কা জলখাবারের আয়োজন করেন এবং এক ভ্রমণ অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। সেই দিন বিকেলে দম্পতিটি যখন ক্ষেত্রের পরিচর্যায় বার হন, তখন সেই ভাইটি তার অতিথিদের হাতে একটি খাম ধরিয়ে দেন। ভিতরে ছিল একটি ব্যাঙ্ক নোট (একটি মার্কিন ডলারের সমান), আর তার সাথে হাতে লেখা একটি চিঠি: “এক কাপ চা অথবা সাড়ে চার লিটার পেট্রলের জন্য।” নম্রভাবে উপলব্ধি বোধের কী অপূর্ব প্রকাশ!

২০. কোন্‌ সুযোগ ও দায়িত্বকে আমরা অবহেলা করতে চাইবো না?

২০ যিহোবার লোকেরা আধ্যাত্মিকভাবে আশীর্বাদ প্রাপ্ত! আমরা আধ্যাত্মিক ভোজ উপভোগ করি অধিবেশন ও সম্মেলন গুলিতে, যেখানে আমরা নতুন প্রকাশনা, উত্তম শিক্ষা এবং বাস্তবধর্মী উপদেশ পেয়ে থাকি। আধ্যাত্মিক আশীর্বাদের জন্য হৃদয়পূর্ণ উপলব্ধি বোধের সাথে সাথে জগদ্ব্যাপী ঈশ্বরের রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে অর্থ দানের সুযোগ ও দায়িত্ব আমাদের আছে তা আমরা ভুলে যাই না।

‘অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ করুন’

২১, ২২. শীঘ্রই এই “অধার্ম্মিকতার ধন” এর কী হবে এবং আমাদের এখনই কী করার প্রয়োজন?

২১ প্রকৃতপক্ষে, যিহোবার উপাসনা যে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান নিয়েছে তা প্রকাশ করার প্রচুর উপায় রয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যীশুর উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করা: “আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর, যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে।”—লূক ১৬:৯.

২২ লক্ষ্য করুন যে যীশু অধার্মিকতার যে ধন তার শেষ হবে বলেছেন। হ্যাঁ, এমন একটা দিন আসবে যখন এই বিধিব্যবস্থার যে অর্থ তার আর কোন মূল্য থাকবে না। “তাহারা আপন আপন রৌপ্য চকে ফেলিয়া দিবে, তাহাদের সুবর্ণ অশুচি বস্তু হইবে,” যিহিষ্কেল ভাববাণী করেন। “সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাহাদের স্বর্ণ কি রৌপ্য তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারিবে না” (যিহিষ্কেল ৭:১৯) যতক্ষণ না এটি ঘটে, ততক্ষণ আমাদের পার্থিব সঙ্গতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা অবলম্বন করতেই হবে। তাহলে কখনও যীশুর সতর্কবাণী শুনতে আমাদের ব্যর্থতার জন্য অনুশোচনার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে তাকাতে হবে না যা জানায়: “তোমরা যদি অধার্ম্মিকতার ধনে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে বিশ্বাস করিয়া তোমাদের কাছে সত্য ধন রাখিবে? . . . তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।”—লূক ১৬:১১-১৩.

২৩. কোন জিনিসটি আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত এবং আমাদের পুরস্কার কী হবে?

২৩ অতএব আসুন, আমরা সকলে বিশ্বস্ত সহকারে এগুলি স্মরণে রাখি যাতে করে যিহোবার উপাসনাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থান দিতে পারি এবং আমাদের সঙ্গতির সঠিক ব্যবহার করতে পারি। এইভাবে যেন আমরা যিহোবা ও যীশুর সাথে আমাদের বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পারি, যাঁরা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে যখন অর্থের শেষ হবে তখন তাঁরা আমাদেরকে “অনন্ত আবাসে” গ্রহণ করবেন, যার অন্তর্ভুক্ত হল স্বর্গীয় রাজ্যে অথবা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন।—লূক ১৬:৯.

[পাদটীকাগুলো]

a যে ইব্রীয় শব্দটি “উপহার’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি একটি ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে যার আক্ষরিক মানে হল “উচ্চীকৃত হওয়া; মহিমান্বিত হওয়া; উত্তোলিত হওয়া”।

b দেখুন যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ​—⁠ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী, (ইংরাজি) পৃষ্ঠা ৩০৭-১৫, ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল এণ্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক ইনক্‌ দ্বারা ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত।

আপনি কি মনে রেখেছেন?

▫ আবাস নির্মাণের জন্য যিহোবা যে দান করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার প্রতি ইস্রায়েলীয়রা কিভাবে সাড়া দিয়েছিল?

▫ কেন বিধবার দান ব্যর্থ হয়নি?

▫ সঙ্গতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে খ্রীষ্টানদের কী ধরনের দায়িত্ব রয়েছে?

▫ অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে অনুশোচনাকে এড়িয়ে চলতে পারি?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিধবার দান যদিও ক্ষুদ্র ছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়নি

[Pictures on page 16, 17]

আমাদের দান জগদ্ব্যাপী রাজ্যের কাজকে সাহায্য করে

    বাংলা প্রকাশনা (১৯৮৯-২০২৬)
    লগ আউট
    লগ ইন
    • বাংলা
    • শেয়ার
    • পছন্দসমূহ
    • Copyright © 2025 Watch Tower Bible and Tract Society of Pennsylvania
    • ব্যবহারের শর্ত
    • গোপনীয়তার নীতি
    • গোপনীয়তার সেটিং
    • JW.ORG
    • লগ ইন
    শেয়ার