যিহোবা আপনাকে শক্তিশালী করতে পারেন
“তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন।”—যিশাইয় ৪০:২৯.
১, ২. যিহোবার প্রচুর শক্তির কিছু কিছু নির্দশন কী?
যিহোবা হলেন “অতিশয় শক্তিমান্” ঈশ্বর। তাঁর পার্থিব সৃষ্টির বিশালতার মধ্যেই আমরা ঈশ্বরের “অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব” এর নির্দশন পাই। যারা তাঁর ঈশ্বরত্বের প্রমাণ পেয়েও স্বীকার করে না, তারা ক্ষমার অযোগ্য।—গীতসংহিতা ১৪৭:৫; রোমীয় ১:১৯, ২০
২ বৈজ্ঞানিকেরা যতই মহাবিশ্বের গভীরে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন, যেখানে অগণিত ছায়াপথ কোটি কোটি আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত, ততোই যিহোবার শক্তি স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়েছে। এক অন্ধকার অথচ পরিষ্কার রাত্রে আকাশের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন এবং খুব সম্ভবতঃ আপনিও গীতরচকের মত উপলব্ধি করতে পারবেন: “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?” (গীতসংহিতা ৮:৩, ৪) আর কত ভালোভাবেই না যিহোবা মানুষের অর্থাৎ আমাদের যত্ন নিয়েছেন! তিনি প্রথম পুরুষ ও নারীকে একটি মনোরম পার্থিব গৃহে রেখেছিলেন। এমনকি সেই মাটি- রও ক্ষমতা ছিল—শাকসবজি উৎপন্ন করার, পুষ্টিকর ও বিশুদ্ধ খাদ্য যোগান দেবার। ঈশ্বরের এইধরনের শক্তি প্রদর্শনের ফলে মানুষ ও জন্তুরা উভয়েই শারীরিকভাবে শক্তি অর্জন করতে পারতো।—আদিপুস্তক ১:১২; ৪:১২; ১ শমূয়েল ২৮:২২.
৩. মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক বিষয়গুলি ছাড়া আর কী ঈশ্বরের শক্তিকে স্পষ্টরূপে প্রকাশ করে?
৩ আকাশমণ্ডল মনকে মুগ্ধ করে এবং পৃথিবীর গাছপালা ও জীবজন্তু দেখতে মনোরম হওয়া ছাড়াও এগুলি আমাদের ঈশ্বরের শক্তির নিদর্শন দেয়। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।” (রোমীয় ১:২০) কিন্তু ঈশ্বরের শক্তির আর একটি নিদর্শন আছে যা আমাদের মনোযোগ ও উপলব্ধির উপযুক্ত। আপনি হয়তো বলবেন যে ‘মহাবিশ্ব ছাড়া আর কী ঈশ্বরের শক্তির আরও বেশি নির্দশন দেয়?’ এর উত্তর হল যীশু খ্রীষ্ট। প্রকৃতপক্ষে, অনুপ্রাণিত হয়ে প্রেরিত পৌল বলেন, খ্রীষ্ট যে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন সেটাই হল “ঈশ্বরেরই পরাক্রম ও ঈশ্বরেরই জ্ঞানস্বরূপ।” (১ করিন্থীয় ১:২৪) ‘এমন কেন?’ আপনি হয়তো জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আমার বর্তমান জীবনের সঙ্গে এর কী বা সম্পর্ক থাকতে পারে?’
তাঁর পুত্রের মাধ্যমে শক্তির সুস্পষ্ট প্রকাশ
৪. তাঁর পুত্রের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের শক্তি কিভাবে দেখানো হয়েছিল?
৪ ঈশ্বরের শক্তি সুস্পষ্টভাবে প্রথম প্রকাশ পায় যখন তিনি তাঁর একজাত পুত্রকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করে। এই আত্মিক পুত্রটি অন্যান্য সকল বস্তু সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঈশ্বরের অফুরন্ত শক্তিকে “কার্যকারী” রূপে কাজে লাগিয়ে যিহোবার সেবা করেন। (হিতোপদেশ ৮:২২, ৩০) পৌল কলসীতে তার খ্রীষ্টীয় ভাইদের লিখেছিলেন: “তাঁহাতেই সকলই সৃষ্ট হইয়াছে; স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যে কিছু আছে, . . . সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে।”—কলসীয় ১:১৫, ১৬.
৫-৭. (ক) অতীতে ঈশ্বরের শক্তি কিভাবে দেখানো হয়েছিল? (খ) বর্তমানে খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রেও যে ঈশ্বরের শক্তির প্রকাশ দেখা যেতে পারে তা বিশ্বাস করার কী কারণ থাকতে পারে?
৫ আমরা হলাম ‘পৃথিবীতে সৃষ্ট সকল’ কিছুর অংশ বিশেষ। তাহলে, আমাদের মত মানুষকে কি ঈশ্বর তাঁর শক্তি দেবেন বলে আশা করা যায়? হ্যাঁ, অসিদ্ধ মানুষের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য তাঁর দাসেদের কখনও কখনও অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে এসেছেন। মোশি জানতেন যে সাধারণ অসিদ্ধ মানুষের আয়ু হল ৭০ বা ৮০ বৎসর। (গীতসংহিতা ৯০:১০) মোশির নিজের সম্পর্কে কী বলা যায়? তিনি ১২০ বৎসর জীবিত ছিলেন আর তবুও “তাঁহার চক্ষু ক্ষীণ হয় নাই, ও তাঁহার তেজের হ্রাস হয় নাই।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৭) যদিও এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বর তাঁর প্রত্যেক দাসকেই মোশির মত আয়ু অথবা শক্তি প্রদান করেন, কিন্তু তা প্রমাণ করে যে যিহোবা মানুষকে ক্ষমতা প্রদান করতে সমর্থ।
৬ তিনি যে পুরুষ ও নারীকে ক্ষমতা প্রদান করতে সমর্থ, তার আরও পরিচয় পাওয়া যায় অব্রাহামের স্ত্রীর প্রতি তিনি যা করেছিলেন তা থেকে। “সারাও বংশ উৎপাদনের শক্তি পাইলেন, যদিও তাঁহার অতিরিক্ত বয়স হইয়াছিল, কেননা তিনি প্রতিজ্ঞাকারীকে বিশ্বাস্য জ্ঞান করিয়াছিলেন।” অথবা বিবেচনা করুন, ঈশ্বর কিভাবে ইস্রায়েলের বিচারক ও অন্যান্যদের ক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন। “গিদিয়োন, বারক, শিম্শোন, যিপ্তহ, এবং দায়ূদ ও শমূয়েল ও ভাববাদিগণ, . . . ইহাঁরা দুর্ব্বলতা হইতে বলপ্রাপ্ত হইলেন।”—ইব্রীয় ১১:১১, ৩২-৩৪.
৭ এইধরনের শক্তি আমাদের ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে। হ্যাঁ, আমরা হয়তো আশা করি না যে আশ্চর্যভাবে আমাদের সন্তান হবে, অথবা শিম্শোনের মত শক্তি প্রদর্শনও করি না। কিন্তু পৌল কলসীর যে সাধারণ লোকেদের কথা উল্লেখ করেছিলেন, আমরা তাদের মত শক্তিশালী হতে পারি। হ্যাঁ, পৌল নারী, পুরুষ ও শিশুদের লিখেছিলেন, ঠিক যেমন বর্তমান দিনের মণ্ডলীগুলিতেও দেখতে পাই এবং তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে তারা যেন “সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্” হয়।—কলসীয় ১:১১.
৮, ৯. প্রথম শতাব্দীতে, আমাদের মত সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কিভাবে ঈশ্বরের শক্তি প্রকাশ পায়?
৮ যীশুর পার্থিব পরিচর্যা চলাকালীন যিহোবা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে তাঁর পুত্রের মাধ্যেমে তাঁর শক্তি কাজ করছিল। উদাহরণস্বরূপ, এক সময়ে যখন কফরনাহূম শহরে জনতার ভীর যীশুকে ঘিরে ধরেছিল, তখন “যিহোবার শক্তি যীশুর সঙ্গে ছিল সুস্থ করার জন্য।”—লূক ৫:১৭. NW.
৯ পুনরুত্থানের পর, যীশু তাঁর অনুগামীদের নিশ্চিত করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ‘পবিত্র আত্মা তাদের উপরে আসলে তারা শক্তি প্রাপ্ত হবে।’ (প্রেরিত ১:৮) কতই না সত্য! সা.শ. ৩৩ খ্রীষ্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর অল্প কয়েকদিন পরে যে সকল ঘটনা ঘটেছিল, সেই সম্বন্ধে একজন ঐতিহাসিক জানান: “প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন।” (প্রেরিত ৪:৩৩) পৌল নিজেই একজন এইরূপ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ঈশ্বর নির্দেশিত কাজ সম্পন্ন করার জন্য শক্তি মান হয়ে উঠেছিলেন। ধর্মান্তকরণ ও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার পর, তিনি “উত্তর উত্তর শক্তিমান্ হইয়া উঠিলেন, এবং দম্মেশক-নিবাসী যিহূদীদিগকে নিরুত্তর করিতে লাগিলেন, প্রমাণ দিতে লাগিলেন যে, ইনিই সেই খ্রীষ্ট।”—প্রেরিত ৯:২২.
১০. পৌলের ক্ষেত্রের ঈশ্বরের শক্তি কিভাবে তাকে সাহায্য করেছিল?
১০ যখন আমরা তিনটি মিশনারী যাত্রায় হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পৌলের মানসিক ও আধ্যাত্মিক পরিশ্রম সহ্যের বিষয় বিবেচনা করি, তখন বুঝতে পারি যে নিঃসন্দেহে পৌলের অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন ছিল। তাকে সর্বপ্রকার কষ্ট, কারাবদ্ধ অবস্থা সহ্য ও সামনাসামনি মৃত্যুবরণ করতে হয়। তিনি কিভাবে তা করেছিলেন? তিনি নিজেই উত্তর দেন: “প্রভু আমার নিকটে দাঁড়াইলেন, এবং আমাকে বলবান্ করিলেন, যেন আমা দ্বারা প্রচার-কার্য্য সম্পন্ন হয়।”—২ তীমথিয় ৪:৬-৮, ১৭; ২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৭.
১১. কলসীতে তার সহদাসদের ঈশ্বরের শক্তির বিষয়ে পৌল কী আশা দিয়েছিলেন?
১১ তাহলে, এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে পৌল যখন কলসীতে তার ‘ভ্রাতা যারা খ্রীষ্টে আছেন’ তাদেরকে লিখেছিলেন, তখন তাদেরকে তিনি আশ্বস্ত করেন তারা যেন “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্থে [যিহোবার] প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্” হয়। (কলসীয় ১:২, ১১) যদিও এই কথাগুলি প্রাথমিকভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল, তবুও সকলেই যারা খ্রীষ্টের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে তারা পৌল যা লিখেছিলেন তা থেকে বহুভাবে উপকৃত হতে পারে।
কলসীতে শক্তিপ্রদান করেন
১২, ১৩. কলসীয়দের প্রতি লিখিত পত্রের পটভূমিকা কী ছিল এবং সম্ভবত তার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?
১২ খুব সম্ভবত, কলসী মণ্ডলী, যার অবস্থান ছিল এশিয়ার রোমীয় সাম্রাজ্যে, গঠিত হয়েছিল বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান ইপাফ্রার প্রচারের ফলে। মনে হয় প্রায় সা.শ. ৫৮ সালে যখন প্রেরিতের কারাবাসের খবর পান, তখন ইপাফ্রা পৌলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মনস্থির করেন এবং কলসীতে তার ভাইদের প্রেমের ও দৃঢ়তার এক উত্তম সংবাদ দিয়ে তাকে উৎসাহিত করেন। সম্ভবত কলসীয় মণ্ডলীর কিছু সমস্যা সম্পর্কে এক বিশ্বসনীয় তথ্যও ইপাফ্রা জানিয়েছিলেন যেগুলি সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। ফলে পৌল মণ্ডলীকে উৎসাহের ও উপদেশের একটি পত্র লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। সেই পত্রের ১ অধ্যায় থেকে আপনিও উৎসাহ পেতে পারেন, কারণ যিহোবা কিভাবে তাঁর দাসেদের শক্তির অধিকারী করেন, সেই বিষয়ে পত্রটি আলোকপাত করে।
১৩ আপনি অনুমান করেত পারেন যে কলসীর ভাই ও বোনেরা কেমন অনুভব করেছিলেন যখন পৌল তাদের “বিশ্বস্ত ভ্রাতা খ্রীষ্টে আছেন” বলে সম্বোধন করেছিলেন। ‘সকল পবিত্র লোকেদের জন্য তাদের প্রেম’ এবং খ্রীষ্টান হওয়ার সময় থেকে তাদের ‘সুসমাচারের কাজে ফলবান্’ হওয়ার জন্য তারা ছিল প্রশংসার যোগ্য! আমাদের মণ্ডলীর, বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ক্ষেত্রে কি এই একইরকম উক্তি প্রযোজ্য?—কলসীয় ১:২-৮.
১৪. কলসীয়দের জন্য পৌলের কী ইচ্ছা ছিল?
১৪ তাদের সম্পর্কে পৌল যে বিবরণ পেয়েছিলেন তাতে পৌল এতই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে কলসীয়দের বলেছিলেন যে তিনি তাদের জন্য অবিরত প্রার্থনা ও বিনতি করবেন যেন তারা “সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে [ঈশ্বরের] ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হয়, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ” করে। তিনি প্রার্থনায় এও বলেছিলেন যে তারা যেন ‘সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হয়, আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্থে তাঁহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্ হয়।’—কলসীয় ১:৯-১১.
বর্তমান সময়েও শক্তি প্রদান করেন
১৫. কলসীয়দের প্রতি লিখিত পত্রে যা প্রকাশ পায়, আমরা কিভাবে সেই একই মনোভাব পোষণ করতে পারি?
১৫ কী উত্তম উদাহরণই না পৌল আমাদের জন্য রেখেছেন! জগদ্ব্যাপী ভাইদের জন্য আমাদের প্রার্থনা করা প্রয়োজন যাতে তারা তাড়না সত্ত্বেও তা সহ্য করতে এবং তাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারে। অন্য দেশ বা মণ্ডলীর ভাইদের সম্পর্কে যখন আমরা কষ্ট বা তাড়নার খবর পাই, তখন পৌলের মত আমাদের ভাইদের জন্য আমরা যেন নির্দিষ্টভাবে প্রার্থনা করি। হতে পারে যে নিকটবর্তী কোন মণ্ডলীর ভাইয়েরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে অথবা আধ্যাত্মিকভাবে কোন সমস্যায় পড়েছে। অথবা এমনও হতে পারে যে আমাদের খ্রীষ্টান ভাইয়েরা এমন জায়গায় রয়েছে যেখানে গৃহযুদ্ধ বা সাম্প্রদায়িক হত্যা চলছে, যার ফলে তাদের কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় আমরা যেন ব্যক্ত করি যাতে আমাদের ভাইয়েরা “প্রভুর যোগ্যরূপে” আচরণ করে এবং তাড়নার মধ্যেও সুসমাচারের কাজে ফলবান ও জ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হয়। এইভাবে ঈশ্বরের দাসেরা “সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান” হতে তাঁর আত্মার শক্তি পায়। আপনিও নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার পিতা শুনবেন ও সাড়া দেবেন।—১ যোহন ৫:১৪, ১৫.
১৬, ১৭. পৌলের লিখিত পত্র অনুযায়ী আমরা কিসের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো? (খ) কী অর্থে আজ ঈশ্বরের লোকেদের মুক্তি ও ক্ষমা করা হয়েছে?
১৬ পৌল লিখেছিলেন যে কলসীয়দের উচিত ‘পিতাকে ধন্যবাদ জানানো, যিনি তাদেরকে দীপ্তিতে পবিত্রগণের অধিকারের অংশী হবার উপযুক্ত করেছেন।’ তাহলে আসুন আমরাও স্বর্গীয় পিতাকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি তাঁর আয়োজনে আমাদের স্থান দিয়েছেন, তা তাঁর স্বর্গরাজ্য অথবা তাঁর পার্থিব রাজ্যে, যেখানেই হোক না কেন। এই অসিদ্ধ মানুষকে কিভাবে তিনি উপযুক্ত মনে করেছেন? পৌল তার অভিষিক্ত ভাইদের লিখেছিলেন: “তিনিই আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্ত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন; ইহাঁতেই আমরা মুক্তি, পাপের মোচন, প্রাপ্ত হইয়াছি।”—কলসীয় ১:১২-১৪.
১৭ আমাদের স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যে আশাই থাক না কেন, আমরা যেন প্রতিদিন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি আমাদের এই দুষ্ট অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যবস্থা থেকে উদ্ধার করেছেন এবং তা সম্ভব হয়েছে যিহোবার প্রিয় পুত্রের মুক্তির মূল্যের যে মহামূল্য আয়োজন, তার প্রতি আমাদের বিশ্বাস দ্বারা। (মথি ২০:২৮) আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের প্রতি এই মুক্তির মূল্য এক বিশেষ অর্থে প্রয়োগ করার ফলে তারা উপকৃত হয়েছেন, যাতে করে তাদেরকে তাঁর “প্রেমভূমি পুত্ত্রের রাজ্যে আনয়ন” করা যায়। (লূক ২২:২০, ২৯, ৩০) কিন্তু “অপর মেষ”ও এখনই এই মুক্তির মূল্য থেকে উপকৃত হচ্ছে। (যোহন ১০:১৬) তারা ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা পেতে পারে যাতে তাঁর বন্ধু হিসাবে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারে। এই শেষকালে “রাজ্যের এই সুসমাচার” প্রচারের কাজে তাদের এক বিশাল অবদান রয়েছে। (মথি ২৪:১৪) এগুলি ছাড়াও খ্রীষ্টের সহস্র বৎসরের রাজত্বের শেষে তাদের সম্পূর্ণরূপে ধার্মিক ও দৈহিকভাবে সিদ্ধ হওয়ার অপূর্ব আশা রয়েছে। যখন আপনি প্রকাশিত বাক্য ৭:১৩-১৭ পদের বিবরণ পড়েন, তখন খুব সম্ভবত আপনি একমত হবেন যে সেখানে যে বিবরণ আছে সেগুলি উদ্ধার ও আশীর্বাদের প্রমাণস্বরূপ।
১৮. কলসীয়দের লিখিত পত্রে পুনরায় কোন্ সন্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা আজও ঈশ্বর সম্পন্ন করছেন?
১৮ পৌলের পত্র আমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করে যে সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন, তাঁর কাছে আমরা কিভাবে ঋণী। ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাধ্যমে কি সম্পাদন করেছিলেন? “তাঁহার ক্রুশের রক্ত দ্বারা সন্ধি করিয়া, তাঁহার দ্বারা যেন আপনার সহিত কি স্বর্গস্থিত, কি মর্ত্ত্যস্থিত, সকলই সম্মিলিত করেন, তাঁহার দ্বারাই করেন।” ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল যেন সকল সৃষ্টি আবার তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্যতায় আসে, ঠিক যেমন এদনে বিদ্রোহীতার পূর্বে ছিল। তখন সকল সৃষ্টির কাজে যাকে ব্যবহার করা হয়েছিল, আজ ঈশ্বরের এই সমন্বয় সাধনের কাজে সেই একই ব্যক্তি তা সম্পন্ন করছেন।—কলসীয় ১:২০.
শক্তিশালী করা হয়েছিল কী উদ্দেশ্যে?
১৯, ২০. কিসের উপর আমাদের পবিত্রতা ও নিষ্কলঙ্ক হওয়া নির্ভর করে?
১৯ আমাদের মধ্যে যাদের সঙ্গে ঈশ্বরের সমন্বয় ঘটেছে তাদের উপরে দায়িত্ব আছে। একসময়ে আমরা পাপী ও ঈশ্বরের থেকে বহুদূরে ছিলাম। কিন্তু যীশুর বলিদানের উপরে বিশ্বাস এবং আমাদের মন আর দুষ্টতার দিকে যায় না বলে এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে “পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ” হয়ে “ঈশ্বরের সাক্ষাতে” দাঁড়াতে পারি। (কলসীয় ১:২১, ২২) চিন্তা করে দেখুন, ঠিক অতীতের সাক্ষীদের বিষয়েও ঈশ্বর যেমন লজ্জিত হননি, তেমনি আমাদের ঈশ্বর বলে আখ্যাত হতেও তিনি লজ্জিত হবেন না। (ইব্রীয় ১১:১৬) আজ তাঁর সুবিখ্যাত নাম বিকৃত অর্থে বহন করার জন্য কেউ আমাদের দোষারোপ করতে পারবে না, সেই সঙ্গে পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত সেই নাম ঘোষণা করতেও আমরা ভীত নই।
২০ তবুও লক্ষ্য করুন কী সাবধানবাণী পৌল যুক্ত করেছেন কলসীয় ১:২৩ পদে: “যদি তোমরা বিশ্বাসে বদ্ধমূল ও অটল হইয়া স্থির থাক, এবং সেই সুসমাচারের প্রত্যাশা হইতে বিচলিত না হও, যাহা শুনিয়াছ, যাহা আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে, আমি পৌল যাহার পরিচারক হইয়াছি।” তাঁর প্রিয় পুত্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা একান্তই প্রয়োজন। যিহোবা এবং যীশু কতই না আমাদের জন্য করেছেন! পৌলের উপদেশ পালন করে আসুন আমরা তাঁদের প্রতি প্রেম দেখাই।
২১. বর্তমানে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কী বিরাট কারণ আছে?
২১ ‘যে সুসমাচার তারা শুনেছিল,’ যা ইতিমধ্যেই “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে,” তা জেনে কলসীয় খ্রীষ্টানেরা কতই না অভিভূত হয়েছিল। বর্তমানে এটা জানা আরও কত রোমাঞ্চকর যে ২৩০টিরও বেশি দেশে ৪৫ লক্ষেরও বেশি সাক্ষীর মাধ্যমে কতটা পরিমাণ রাজ্যের এই সুসমাচার প্রচারিত হয়েছে। বিস্ময়করই বটে, প্রতি বছর সকল জাতির মধ্য হতে প্রায় ৩,০০,০০০ ব্যক্তি ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে আসছে।—মথি ২৪:১৪, ২৮:১৯, ২০.
২২. এমনকি যদি আমাদের উপরে তাড়না আসে তবুও ঈশ্বর আমাদের জন্য কী করতে পারেন?
২২ যদিও কলসীয় মণ্ডলীকে এই চিঠি লেখার সময় পৌল স্পষ্টতই কারাগারে বন্দী ছিলেন, তিনি কিন্তু কোন ভাবেই নিজের বিষয়ে আকুল ছিলেন না। বরং, তিনি বলেছিলেন, “এখন তোমাদের নিমিত্ত আমার যে সকল দুঃখভোগ হইয়া থাকে, তাহাতে আনন্দ করিতেছি।” পৌল জানতেন যে “আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা” রাখার অর্থ কী? (কলসীয় ১:১১, ২৪) কিন্তু তিনি জানতেন যে এই কাজ তিনি তার নিজ শক্তিতে করেননি। যিহোবা তাকে শক্তিশালী করেছিলেন! আজকের দিনের ঠিক তাই। হাজার হাজার সাক্ষীরা যারা কারাবদ্ধ হয়েছে, তাড়না পেয়েছে, তারা কেউ যিহোবার সেবায় তাদের আনন্দ হারায়নি। পরিবর্তে, তারা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যতা উপলব্ধি করেছে যা পাওয়া যায় যিশাইয় ৪০:২৯-৩১ পদে: “তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন . . . যাহারা সদাপ্রভুতে অপেক্ষা করে তাহারা উত্তরোত্তর নুতন শক্তি পাইবে।”
২৩, ২৪. কোন্ নিগূঢ়তত্ত্বের কথা কলসীয় ১:২৬ পদে উল্লেখ করা হয়েছে?
২৩ খ্রীষ্টকে কেন্দ্র করে সুসংবাদের যে পরিচর্যা, তা পৌলের কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চেয়েছিলেন যে অপরেরাও যেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে খ্রীষ্টের ভূমিকার মূল্যটি উপলব্ধি করে, সেইজন্য তিনি এটাকে “সেই নিগূঢ়তত্ত্ব, যাহা যুগযুগানুক্রমে ও পুরুষ পুরুষানুক্রমে গুপ্ত ছিল” বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু, এটা চিরকালের জন্য গুপ্ত বিষয় থাকবে না। পৌল আরও বলেন: “এখন তাঁহার পবিত্রগণের কাছে প্রকাশিত হইল।” (কলসীয় ১:২৬) যখন এদনে বিদ্রোহিতা দেখা দেয়, তখন যিহোবা আরও ভাল পরিস্থিতি আসবে বলে প্রতিজ্ঞা করেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ‘নারীর বংশ সর্পের মস্তক চূর্ণ করবে।’ (আদিপুস্তক ৩:১৫) এর অর্থ কী ছিল? বহুকাল, বহু শতাব্দী ব্যাপী এটা ছিল একটা রহস্য। তারপর যীশু আসেন এবং তিনি “সুসমাচার দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দীপ্তিতে” আনেন।—২ তীমথিয় ১:১০.
২৪ হ্যাঁ, এই “নিগূঢ়তত্ত্ব” খ্রীষ্ট ও মশীহ রাজ্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপ্ত। পৌল যখন “স্বর্গেতে যাহা কিছু”-র বিষয় উল্লেখ করেন, তখন তিনি খ্রীষ্টের সাথে যারা স্বর্গীয় রাজ্যে শাসনে অংশ নেবেন তাদের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন এগুলি সহায়ক হবে “পৃথিবীতে যাহা কিছু”-র উপর অফুরন্ত আশীর্বাদ নিয়ে আসতে, যারা এখানে এক অনন্তকালীন পরমদেশ উপভোগ করবে। তাহলে, আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন পৌল যে “নিগূঢ়তত্ত্বের গৌরব ধনে”-র বিষয় উল্লেখ করেছিলেন তা কতই না উপযুক্ত ছিল।—কলসীয় ১:২০, ২৭.
২৫. কলসীয় ১:২৯ পদের ইঙ্গিত অনুযায়ী এখন আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?
২৫ পৌল সেই রাজ্যে তার স্থান কোথায় তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলেন। তথাপি তিনি বুঝেছিলেন যে এর জন্য আশা করে বসে থাকলেই সব হয়ে যাবে না। “তাঁহার যে কার্য্যসাধক শক্তি আমাতে সপরাক্রমে নিজ কার্য্য সাধন করিতেছে, তদনুসারে প্রাণপণ করিয়া আমি সেই অভিপ্রায়ে পরিশ্রমও করিতেছি।” (কলসীয় ১:২৯) লক্ষ্য করে দেখুন যে যিহোবা, খ্রীষ্টের মাধ্যমে পৌলকে শক্তিশালী করেছিলেন জীবনরক্ষাকারী পরিচর্যার কাজকে সম্পন্ন করার জন্য। আজ আমাদের জন্য যিহোবা সেই একই কাজ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, ‘আমার কি সেই প্রচারকের মত মনোভাব এখনও আছে, প্রথম যখন সত্য শিখেছিলাম সেই সময়ে যেমন ছিল? আপনার উত্তর কী? ‘যিহোবার শক্তির প্রাচুর্যের কার্যকারিতা অনুযায়ী ক্রমাগতভাবে কঠোর পরিশ্রম এবং প্রাণপণ করে যাওয়ার জন্য’ আমাদের সকলকে কী সাহায্য করতে পারে? পরবর্তী প্রবন্ধটি এই বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন?
▫ আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি যে মানুষের জন্য যিহোবা তাঁর শক্তি ব্যবহার করতে পারেন?
▫ কলসীয় ১ অধ্যায়ে পৌলের বাক্যের পটভূমিকা কী?
▫ কলসীয় ১:২০ পদে যে সন্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ঈশ্বর কিভাবে সম্পন্ন করেছেন?
▫ আমাদের মাধ্যমে তাঁর শক্তি ব্যবহার করে যিহোবা কী সম্পাদন করতে পারেন?