সত্য ঈশ্বরকে ভয় করার উপকারসকল
“আমি সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭.
১. ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা কোন্ চরম দুর্দশাগুলিকে অপসারিত করা সম্ভব হত?
আদম যদি ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তুলত, তবে তা হয়ত তাকে পাপ করার থেকে বিরত করতে পারত, যে পাপ তার নিজের অনন্ত ধ্বংস এবং তার বংশধরদের শত-সহস্র বৎসর যাবৎ দুঃখকষ্ট এনেছে। অতীতে ইস্রায়েল জাতি যদি যিহোবাকে ভয় এবং তাঁকে প্রেম করার উপদেশ গ্রহণ করত, তাহলে তাদের বাবিলনের বন্দীত্বে আবদ্ধ হতে হত না, না তারা ঈশ্বরের পুত্রকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করত এবং তাঁর রক্তপাতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হত। আর যদি আধুনিক জগতের ঈশ্বরীয় ভয় থাকত, তাহলে বর্তমানের সরকার অথবা বাণিজ্য হত দুর্নীতিমুক্ত, না থাকত সেখানে অপরাধ অথবা যুদ্ধ।—হিতোপদেশ ৩:৭.
২. আমাদের চারিপাশে জগতের পরিস্থিতি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও, কেন আমাদের ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলা উচিত?
২ আমাদের চারিপাশে জগতের লোকেরা যাই করুক না কেন, যিহোবার সেবক হিসাবে আমরা ব্যক্তিগত, পরিবার এবং মণ্ডলীগতভাবে সত্য ঈশ্বরের প্রতি ভয় গড়ে তুলতে পারি এবং তা থেকে উপকারলাভ করতে পারি। বিষয়টা মোশি ইস্রায়েল জাতিকে যখন স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল, তারই অনুরূপ: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার কাছে কি চাহেন? কেবল এই, যেন তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সকল পথে চল ও তাঁহাকে প্রেম কর, এবং তোমার সমস্ত হৃদয় ও তোমার সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর, . . . তোমার মঙ্গলার্থে সদাপ্রভুর . . . আজ্ঞা . . . সকল যেন পালন কর।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩) আমরা কী কী উপকার পেয়ে থাকি সত্য ঈশ্বর যিহোবাকে ভয় করার মাধ্যমে?
প্রজ্ঞা—স্বর্ণ অপেক্ষা মহামূল্যবান
৩. (ক)সর্বপ্রধান উপকার কী যা আমরা পেতে পারি? (খ) গীতসংহিতা ১১১.:১০ পদের প্রকৃত অর্থ কী?
৩ সর্বপ্রথম উপকার হল যথার্থ প্রজ্ঞা লাভ। গীতসংহিতা ১১১:১০ পদ জানায়: “সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার আরম্ভ।” ওই কথাগুলির অর্থ কী? প্রজ্ঞা হল জ্ঞানকে সমস্যা সমাধানের, বিপদ হতে মুক্ত হবার এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য যথার্থভাবে ব্যবহার করার যোগ্যতা। এর সঙ্গে জড়িত আছে সুযুক্তিপূর্ণ বিচার। শুরুতেই, প্রথম অংশে, এরূপ প্রজ্ঞার ভিত্তিমূল হল যিহোবার প্রতি ভয়। কেন? কারণ সমস্ত সৃষ্ট জিনিসই তাঁর হাতে তৈরি। এটা তাঁর উপরে নির্ভরশীল। তিনি মানবজাতিকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর নির্দেশনা ব্যতিরেকে সফলতার সঙ্গে নিজেদের পদক্ষেপগুলি পরিচালনা করার যোগ্যতা দেননি। (যিহোশূয় ২৪:১৫; যিরমিয় ১০:২৩) জীবনের এইসব প্রাথমিক বিষয়গুলি শুধুমাত্র যদি আমরা উপলব্ধি ও সেইমত জীবন-যাপন করি, তাহলেই আমরা স্হায়ী সফলতা পাব। যিহোবা বিষয়ক জ্ঞান যদি আমাদের এমন অকম্পিত দৃঢ়প্রত্যয় দেয় যে ঈশ্বরের ইচ্ছা সাধিত হবেই এবং তার প্রতিজ্ঞাসকল ও বিশ্বস্ততারক্ষাকারীদের তাঁর পুরস্কার দেবার যোগ্যতা আছে, তবেই বলা যায় যে ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের বিজ্ঞতার সাথে চলতে পরিচালনা দিচ্ছে।—হিতোপদেশ ৩:২১-২৬; ইব্রীয় ১১:৬.
৪, ৫. (ক) একজন যুবক ব্যক্তি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা পেয়েও যথার্থ প্রজ্ঞা অর্জন করতে পারেনি? (খ) সেই ব্যক্তিটি এবং তার স্ত্রী পরবর্তীকালে যথার্থ প্রজ্ঞা অর্জন করেছিল এবং তা কিভাবে তাদের জীবনে পরিবর্তন এনেছিল?
৪ একটি উদাহরণ বিবেচনা করুন। কয়েক দশক আগে, কানাডার স্যাসক্যাচওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন যুবক ব্যক্তি পড়াশুনা করতেন। তার পাঠ্যক্রমের ভিতরে ছিল জীবনবিজ্ঞান এবং তাকে সেখানে ক্রমবিবর্তনের বিষয়ও শিখতে হয়। স্নাতক হওয়ার পর সেই ব্যক্তিটি পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন এবং টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বৃত্তি পান। কালক্রমে, তিনি উপলব্ধি করেন যে পারমাণবিক কাঠামোর মধ্যে অদ্ভুত শৃঙ্খলা ও নকসা রয়েছে। কিন্তু এইসব প্রশ্নগুলির কোন উত্তর তাকে দেওয়া হয়নি: কে এগুলি নির্মাণ করেছেন? কখন করেছেন? এবং কেনই বা করেছেন? এই বিষয়গুলির উত্তর ছাড়া কি সেই সময়কার যুদ্ধবিদ্ধস্ত পৃথিবীতে তিনি বিজ্ঞতার সাথে তার জ্ঞানকে ব্যবহার করতে পারতেন? কে তাকে পথ দেখাবে? জাতীয়তাবাদ? বস্তুগত পুরস্কার লাভের আকাঙ্ক্ষা? সত্যই কি তিনি যথার্থ প্রজ্ঞা অর্জন করেছিলেন?
৫ স্নাতক হওয়ার অল্পকাল পরেই সেই যুবক ব্যক্তিটি ও তার স্ত্রী যিহোবার সাক্ষীদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। ঈশ্বরের বাক্য থেকে তারা সেইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে শুরু করেন যেগুলি তারা আগে পাননি। সৃষ্টিকর্তা যে যিহোবা, তা তারা জানতে পারেন। যখন তারা লোহিত সমুদ্রে মোশির বিষয়ে এবং বাবিলনে দানিয়েল এবং তার সঙ্গীদের বর্ণনা পড়েন, তখন তারা মানুষ নয়, কিন্তু ঈশ্বরীয় ভয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করে। (যাত্রাপুস্তক ১৪:১০-৩১; দানিয়েল ৩:৮-৩০) এমন ঈশ্বরীয় ভয় এবং যিহোবার প্রতি প্রকৃত প্রেম তাদের পরিচালিত করতে থাকে। শীঘ্রই তাদের সম্পূর্ণ জীবনধারা পাল্টিয়ে যায়। শেষপর্যন্ত সেই যুবক ব্যক্তিটি তাঁকে জানতে পারে যে তার জীবনবিজ্ঞানের পাঠ্য বিষয়গুলির নির্মাতা কে ছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্যসকল তিনি উপলব্ধি করতে আরম্ভ করেন এবং যাঁর প্রজ্ঞা তিনি পদার্থবিদ্যা অধ্যয়নের সময়ে লক্ষ্য করেছিলেন। তার প্রাপ্ত জ্ঞানকে প্রতিবেশীদের ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করার পরিবর্তে তিনি ও তার স্ত্রী অপরকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন যাতে তারাও ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের প্রেম করে। ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষক হিসাবে তারা পূর্ণ-সময়ের কাজে যোগ দেয়। পরবর্তীকালে তারা ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল স্কুল অফ গিলিয়ডে যোগ দেন এবং মিশনারীরূপে বিদেশে তাদের পাঠানো হয়।
৬. যদি আমাদের এমন প্রজ্ঞা থাকে, যা যিহোবার প্রতি ভয় থেকে উৎপন্ন হয়, তাহলে কোন্ অদূরদর্শীতার কাজ আমরা এড়িয়ে চলব এবং পরিবর্তে কী করব?
৬ অবশ্য, সকলেই মিশনারী হতে পারে না। কিন্তু আমরা সকলে যিহোবাকে ভয় করার মাধ্যমে যে প্রজ্ঞা অর্জন করা যায়, সেই আনন্দ উপভোগ করতে পারি। আমরা যদি সেই প্রজ্ঞা অর্জন করার প্রয়াস করি, তাহলে আমরা মানুষের দর্শনবিদ্যাকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করব না, যারা শুধুমাত্র জীবনের অস্তিত্ব সম্পর্কে কল্পনাই করে থাকে। জীবনের উৎস যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা বাইবেল অধ্যয়নের প্রতি মনোনিবেশ করব, যিনি আমাদের অনন্ত জীবন দিতে পারেন। (গীতসংহিতা ৩৬:৯; কলসীয় ২:৮) এমন এক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা যা ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে, তার দাসত্ব না করে, আমরা গ্রাসাচ্ছাদনে সন্তুষ্ট থাকা সম্বন্ধে যিহোবার যে উপদেশ, তা গ্রহণ করব এবং যিহোবার সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখাটাই যেন আমাদের জীবনের সর্বপ্রথম কাজ হয়। (১ তীমথিয় ৬:৮-১২) এই জগতে আমাদের ভবিষ্যৎ আরো ভাল হবে, এমন মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে আমরা যিহোবার বাক্যের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করব, যখন তা বলে যে এই জগৎ ও তার অভিলাষ বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকাল স্থায়ী হবে।—১ যোহন ২:১৭.
৭. (ক) হিতোপদেশ ১৬:১৬ পদ কিভাবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারসাম্য রেখে চলতে সাহায্য করে? (খ) ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু করলে কী পুরস্কার আসে?
৭ হিতোপদেশ ১৬:১৬ পদ সততা সহকারে এই বলে আমাদের উৎসাহ দেয়: “সুবর্ণ অপেক্ষা প্রজ্ঞালাভ [যিহোবার ভয় থেকে যে প্রজ্ঞালাভ শুরু হয়] কেমন উত্তম। রৌপ্য অপেক্ষা বিবেচনালাভ বরণীয়।” এমন প্রজ্ঞা ও বিবেচনা আমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু করতে পরিচালিত করবে। মানব ইতিহাসের এই বর্তমান সময়ে ঈশ্বর তাঁর সাক্ষীদের কোন্ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন? রাজ্যের বিষয়ে প্রচার এবং সহৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিদের যীশুর প্রকৃত শিষ্য হতে সাহায্য করা। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) এটা হল এমন কাজ যার পুরস্কারস্বরূপ পাওয়া যায় যথার্থ পরিতৃপ্তি এবং প্রচুর সুখ। তাহলে উত্তম কারণের জন্যই বাইবেল দৃঢ়তাসহকারে ঘোষণা করে: “ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়।”—হিতোপদেশ ৩:১৩.
অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে
৮. (ক) ঈশ্বরীয় ভয় থেকে যে দ্বিতীয় উপকার আসে, সে বিষয়ে উল্লেখ করুন? (খ) কোন খারাপ জিনিসের থেকে আমরা রক্ষা পাই? (গ) ঈশ্বরীয় ভয় কিভাবে একটি শক্তিশালী প্রেরণাদায়ক শক্তিরূপে কাজ করে?
৮ ঈশ্বরীয় ভয় হতে যে দ্বিতীয় উপকার আসে, তা হল অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে এটি আমাদের রক্ষা করে। যারা গভীরভাবে ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে, তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয় না ভাল-মন্দ বিষয়ে। ঈশ্বর যে বিষয়টিকে ভাল বলেন, তারা সেটিকে মন্দ মনে করে না, বা ঈশ্বর যাকে মন্দ বলেন, সেটাকে তারা উত্তম বিবেচনা করে না। (গীতসংহিতা ৩৭:১, ২৭; যিশাইয় ৫:২০, ২১) এছাড়াও যে ব্যক্তি ঈশ্বরীয় ভয়ের দ্বারা প্ররোচিত, সে শুধুমাত্র ভাল-মন্দ বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি জনেই চুপ করে থাকে না। কিন্তু সেই ব্যক্তি যিহোবা যা ভালবাসেন, সেও সেই বিষয়টিকে ভালবাস এবং যিহোবার মত মন্দ বিষয়কে ঘৃণা করে। ফলে সে ঈশ্বরের মানকে সামনে রেখে কাজ করে। এইজন্য, যেমন হিতোপদেশ ১৬:৬ পদ ব্যাখ্যা দেয়, “সদাপ্রভুর ভয়ে মনুষ্য মন্দ হইতে সরিয়া যায়।” এইধরনের ঈশ্বরীয় ভয় সেই ব্যক্তির কাছে এক শক্তিশালী প্রেরণাদায়ক বল হয়ে দাঁড়ায় কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য, যেটা সে হয়ত তার নিজের শক্তিতে করতে পারবে না।
৯. যিহোবাকে অসন্তুষ্ট না করার কোন প্রবল আকাঙ্ক্ষা মেক্সিকোতে এক নারীকে সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে এবং তার ফল কী দাঁড়ায়?
৯ এমনকি যদি ঈশ্বরীয় ভয় সবেমাত্র এক ব্যক্তির মধ্যে গড়ে উঠছে, তা হয়ত তাকে এমন কিছু করা থেকে বিরত করতে পারে, যে ভুলের জন্য হয়ত সে তার বাকি জীবনে দুঃখ পেত। উদাহরণস্বরূপ, মেক্সিকো শহরের এক মহিলা একজন যিহোবার সাক্ষীর কাছে গর্ভপাতের বিষয়ে প্রশ্ন করে। সেই সাক্ষী মহিলাটিকে বেশ কিছু শাস্ত্রপদ পড়ে শোনায় এবং যুক্তি সহকারে বলে: “সৃষ্টিকর্তার কাছে জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি যে শিশু এখনও জন্মায়নি, সেও।” (যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩; গীতসংহিতা ১৩৯: ১৩-১৬) চিকিৎসাগত নিরীক্ষা সঙ্কেত দিয়েছিল যে তার শিশুসন্তান হয়ত বিকলাঙ্গ হবে। এখন ঈশ্বরের বাক্য থেকে তিনি যা কিছু দেখেছিলেন, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেই মহিলাটি শিশুটির জন্ম হতে দেবেন বলে মনস্থ করেন। তার চিকিৎসক তাকে আর চিকিৎসা করতে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার স্বামী তাকে ত্যাগ করবেন বলে ভয় দেখায়, কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন। যথাসময়ে তিনি একটি কন্যার জন্ম দেন—স্বাভাবিক, সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন এবং সুন্দর। কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়ে মহিলাটি সেই সাক্ষীকে খুঁজে বার করেন এবং ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করতে শুরু করে। বছর পার হওয়ার আগেই সে ও তার স্বামী বাপ্তিস্ম নেয়। বেশ কয়েক বছর বাদে একটি জেলা সম্মেলনে তাদের সাথে আবার সেই প্রথম সাক্ষীটির সাক্ষাৎ হয় এবং তারা তখন সেই চার বছরের সুন্দর শিশুটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ঈশ্বরের প্রতি যথার্থ সন্মান এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট না করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই একজনের জীবনে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
১০. ঈশ্বরীয় ভয় একজনকে কিধরনের অন্যায় কাজ ত্যাগ করতে শক্তি যোগায়?
১০ ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের অনেক প্রকারের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলে। (২ করিন্থীয় ৭:১) যখন যথার্থভাবে ঈশ্বরীয় ভয় গড়ে তোলা হয়, তখন তা একজন ব্যক্তিকে তার গুপ্ত পাপ বন্ধ করতে প্ররোচিত করে, যা একমাত্র যিহোবা এবং ব্যক্তিবিশেষ জানে। এটা তাকে ড্রাগ অথবা মদের অপব্যবহারের দাসত্ব হতে মুক্ত হতে সাহায্য করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন প্রাক্তন ড্রাগে আসক্ত ব্যক্তি ব্যাখ্যা দেন: “যখন থেকে আমি ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করেছি, তখন থেকে আমি তাঁকে অসন্তুষ্ট করার ভয়ও গড়ে তুলেছি। আমি জানতাম যে তিনি সব দেখছেন এবং তাঁর দৃষ্টিতে অনুমোদন পাওয়ার আমার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। এই ভয় আমাকে প্ররোচিত করেছিল, সমস্ত ড্রাগ যা আমার কাছে ছিল, সেগুলি বাথরুমে জলে ফেলে নষ্ট করে দিতে।” ঈশ্বরীয় ভয় একইভাবে হাজার হাজার ব্যক্তিকে সহায়তা করেছে।—হিতোপদেশ ৫:২১; ১৫:৩.
মানুষের ভয় হতে রক্ষা করে
১১. যিহোবার প্রতি স্বাস্থ্যকর ভয় কিভাবে সাধারণ প্রলোভন থেকে আমাদের রক্ষা করে?
১১ ঈশ্বরের প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় আমাদের মানুষকে ভয় পাওয়ার থেকে রক্ষা করে। অধিকাংশ লোকই অল্প অথবা বেশিভাবে মানুষের ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে। এমনকি যীশুর প্রেরিতরাও তাঁকে ত্যাগ করে পালিয়ে যায় যখন গেৎশিমানীর বাগানে সৈন্যরা যীশুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে, প্রধান যাজকের প্রাঙ্গনে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং তাদের ভয় পেয়ে গিয়ে পিতর নিজেকে যীশুর শিষ্য বলে শনাক্ত করতে অস্বীকার করেছিল এমনকি তাঁকে চেনেও না বলেছিল। (মার্ক ১৪:৪৮-৫০, ৬৬-৭২; যোহন ১৮:১৫-২৭) কিন্তু প্রেরিতদের সাহায্য করা হয়েছিল আধ্যাত্মিক ভারসাম্য ফিরে পেতে। অপরদিকে, রাজা যিহোয়াকীমের সময়ে শময়িয়ের পুত্র যিহোয়াকীম ভয়ে এতই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল যে যিহোবার ভাববাদীরূপে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, শুধুমাত্র বন্দী অবস্থায় নিহত হবার অপেক্ষায়।—যিরমিয় ২৬:২০-২৩.
১২. (ক) হিতোপদেশ ২৯:২৫ পদ মানুষের ভয়ের থেকে কিভাবে একজনকে রক্ষা করে? (খ) ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কিভাবে গড়ে ওঠে?
১২ কী একজনকে মানুষের ভয় মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে? “লোক-ভয় ফাঁদজনক,” এই বলে সতর্ক করে দেওয়ার পর হিতোপদেশ ২৯:২৫ পদ বলে: “কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে।” চাবিকাঠি হল যিহোবার প্রতি বিশ্বাস। এই ধরনের বিশ্বাস নির্ভর করে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার উপর। তাঁর বাক্য অধ্যয়নের মাধ্যমে যিহোবার ন্যায্য পথের প্রমাণ আমরা পাই। আমরা সেই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে পরিচিত হই, যেগুলি তাঁর উপরে নির্ভরতা, তাঁর প্রতিজ্ঞাসকলের নিশ্চয়তা (পুনরুত্থানের আশাও অন্তর্ভুক্ত), তাঁর প্রেম এবং তাঁর অনন্ত পরাক্রমের বিষয় জানায়। তারপর যখন সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমরা কাজ করি, ঠিক যিহোবা যেভাবে নির্দেশ দেন, যে বিষয়ে তিনি সতর্কবাণী দেন তা দৃঢতার সাথে পরিত্যাগ করি, তখন প্রথম আমরা তাঁর প্রেমপূর্ণ যত্ন এবং তাঁর উপরে ভরসা করার অভিজ্ঞতা লাভ করি। আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রমাণ দেখতে পাই যে তাঁর শক্তি তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য কার্যকারী হয়। তাঁর প্রতি আমাদের আস্থা বৃদ্ধি পায়, আর সেইসঙ্গে আমাদের প্রেম এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট না করার ঐকান্তিক ইচ্ছা। একটি দৃঢ ভিত্তিমূলের উপরে এমন বিশ্বাস গড়ে উঠে। এটা মানুষের ভয় হতে নিরাপত্তার উপায়স্বরূপ কাজ করে।
১৩. আমাদের কর্মস্থল, বাড়ি এবং স্কুলে ঈশ্বরীয় ভয় কিভাবে সহায়তা করে?
১৩ যিহোবার প্রতি বিশ্বাস ও সেইসঙ্গে ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের সঠিক কাজ করতে দৃঢ় করবে, যখন কোন নিয়োগকর্তা আমরা অসৎ কাজ না করার দরুন চাকুরির ভয় দেখায়। (তুলনা করুন মীখা ৬:১১, ১২) এইধরনের ঈশ্বরীয় ভয় হাজার হাজার খ্রীষ্টানকে অবিশ্বাসী পারিবারিক সদস্যদের বিরোধিতার সামনে সত্য উপাসনায় স্হির থাকতে সাহায্য করেছে। এটা স্কুলের যুবকদেরও যিহোবার সাক্ষীরূপে নিজেদের পরিচয় দিতে সাহস যুগিয়েছে এবং সহপাঠীদের ঠাট্টা, যারা বাইবেলের মানকে তাচ্ছিল্য করে, তাদের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে শক্তি যুগিয়েছে। এইজন্য একজন কিশোরী সাক্ষী বলেছিল: “জাগতিক যুবকেরা কী মনে করে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কিন্তু যিহোবা কী ভাবেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
১৪ জীবন বিপন্ন হওয়ার সময়ে যিহোবার দাসেরা কিভাবে জয়ী হতে পারে?
১৪ এই একই দৃঢ়প্রত্যয় সত্য খ্রীষ্টানদের শক্তিশালী করে রাখে যিহোবার মানকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে এমনকি যখন তাদের জীবনও বিপন্ন হয়। তারা জানে যে এই জগতের থেকে তারা নির্যাতনই পাবে। তারা জানে যে প্রেরিতদের প্রহার করা হয়েছিল এবং যীশু নিজেই দুষ্ট লোকেদের দ্বারা প্রহারিত এবং নিহত হয়েছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৫; ১৫:১৫-৩৯; প্রেরিত ৫:৪০; তুলনা করুন দানিয়েল ৩:১৬-১৮) কিন্তু যিহোবার দাসেদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে তিনি তাদের সহ্য করার শক্তি যোগাবেন; যে ঈশ্বরের সহায়তায় তারা জয়ী হবে; যে নিঃসন্দেহে যিহোবা তাদের পুরস্কার দেবেন যারা বিশ্বস্ততা বজায় রাখবে—এমনকি যদি প্রয়োজন হয় তো নতুন জগতে পুনরুত্থানের মাধ্যমেও। ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেম এবং সশ্রদ্ধ ভয় প্রখরভাবে তাদের পরিচালনা করে এমন কোন কাজ করার থেকে, যা তাকে অসন্তুষ্ট করবে।
১৫ নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যিহোবার সাক্ষীদের আনুগত্যতা বজায় রাখতে কী সহায়তা করেছিল?
১৫ এই প্রেরণাই ১৯৩০ এবং ১৯৪০ এর দশকে নাৎসি কনশেনট্রেসন শিবিরের যে বিভীষিকা, তার মোকাবিলা করতে সমর্থ করেছিল। লূক ১২:৪,৫ পদে উল্লেখিত যীশুর উপদেশ তারা হৃদয়ে গ্রহণ করেছিল: “হে আমার বন্ধুরা, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যাহারা শরীর বধ করিয়া পশ্চাৎ আর কিছুই করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না। তবে কাহাকে ভয় করিবে, তাহা বলিয়া দিই; বধ করিয়া পশ্চাৎ নরকে নিক্ষেপ করিতে যাঁহার ক্ষমতা আছে, তাঁহাকেই ভয় কর; হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাঁহাকেই ভয় কর।” এইভাবে, গাস্টব আশনার নামে একজন সাক্ষী, যিনি একসময়ে সাসেনহাউসেন কনশেনট্রেসন শিবিরে ছিলেন, পরবর্তীকালে লিখেছিলেন: “আগস্ট ডিকম্যানকে এস. এস. -রা গুলিবিদ্ধ করে এবং অবশিষ্ট আমাদের সকলকেই তা করার হুমকি দেয়, যদি আমরা লিখিতভাবে ও শপথপূর্বক আমাদের বিশ্বাস পরিত্যাগ না করি। আমরা কেউই তাতে সাক্ষর করিনি। তাদের বুলেটের চেয়ে যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করার যে ভয়, সেটাই ছিল আমাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের প্রতি ভয় আপোশ করতে পরিচালিত করে, কিন্তু ঈশ্বরীয় ভয় একজনকে সততার প্রতি দৃঢ় করে।
জীবনকে নিরাপদে রাখা
১৬. দশকের পর দশক ধরে জলপ্লাবন পর্যন্ত কী নোহকে ক্ষমতা যুগিয়েছিল সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে এবং তার ও তার পরিবারের কী পরিণতি হয়েছিল?
১৬ জলপ্লাবনের পূর্ববর্তীকালের জগতে নোহ বেঁচে ছিলেন। মানুষের দুষ্টতাহেতু যিহোবা তখনকার দুষ্ট জগৎকে বিনষ্ট করতে মনস্থির করেন। ইতিমধ্যে, নোহ সেই জগতে জীবিত ছিলেন, যা ছিল দৌরাত্ম্যে, ব্যাপক অনৈকতায় ভরা এবং মানুষ ছিল ঐশিক ইচ্ছার বিরোধী। ধার্মিকতার সাথে নোহ প্রচার করা সত্ত্বেও তারা “বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” (মথি ২৪:৩৯) তৎসত্ত্বেও ঈশ্বর নোহকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, তা থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। “নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।” (আদিপুস্তক ৬:২২) জলপ্লাবনের সময়োবধি সুদীর্ঘ বৎসরব্যাপী কী নোহকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে প্রেরণা যুগিয়েছিল? ইব্রীয় ১১:৭ পদ এর উত্তর দেয়: “বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত” ভয় প্রদর্শন করিলেন। তার ফলে, সে ও তার স্ত্রী, তার পুত্ররা এবং তাদের স্ত্রীরা সেই প্লাবন থেকে রক্ষা পায়।
১৭. (ক) অপর লোকেরা যাই করুক না কেন, আমাদের কী করা উচিত? (খ) যারা যিহোবাকে ভয় করে, তারা প্রকৃতই সুখী লোক কেন?
১৭ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নোহের দিনের সমতুল্য পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছি। (লূক ২৬, ২৭) পুনরায় একটি সতর্কবাণীর ধ্বনি শোনা যায়। প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬, ৭ পদ একটি স্বর্গদূতের বিষয়ে ঘোষণা করে, যে আকাশের মধ্যপথে উড়ছে, আর সে পৃথিবীর সকল জাতির, বর্ণের এবং ভাষার মানুষকে ‘ঈশ্বরকে ভয় করতে এবং তাঁর আজ্ঞাসকল পালন করতে’ উদ্দীপ্ত করছে। আমাদের চারিধারে জগতের লোকেরা যাই করুক না কেন, এই কথাগুলিতে মনোনিবেশ করুন, আর সেই আমন্ত্রণ অপরকেও দিন। নোহের মত বিশ্বাসের কর্ম করুন, সেইসঙ্গে ঈশ্বরীয় ভয় প্রদর্শন করুন। এমন করলে আপনার নিজের জীবন ও অন্যান্য অনেকের জীবন রক্ষা করতে পারবেন। সত্য ঈশ্বরকে ভয় করে যারা উপকার লাভ করেছেন, সে বিষয়ে যখন আমরা গভীরভাবে ধ্যান করি, তখন অনুপ্রাণিত গীতরচক যা গেয়েছিলেন, তার সঙ্গে একতাবদ্ধ হই: “ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার আজ্ঞাতে অতিমাত্র প্রীত হয়।”—গীতসংহিতা ১১২:১.
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ বিশেষ উপকারগুলি কী যা সত্য ঈশ্বরকে ভয় করলে পাওয়া যায়?
◻ ঈশ্বরীয় ভয় থেকে যে প্রজ্ঞা উৎপন্ন হয়, তা কিভাবে আমাদের রক্ষা করতে পারে?
◻ কেন ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের মন্দ থেকে দূরে রাখে?
◻ ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের কিভাবে মানুষের ভয় হতে রক্ষা করে?
◻ আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের প্রত্যাশার উপর ঈশ্বরীয় ভয় কী প্রভাব ফেলে?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
“ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার আজ্ঞাতে অতিমাত্র প্রীত হয়।”—গীতসংহিতা ১১২:১