আপনি কি যিহোবার প্রশংসা করবেন?
“যেমন তোমার নাম, হে ঈশ্বর, তেমনি তোমার প্রশংসা পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত।” কোরহের সন্তানেরা যে ভাববাণীমূলক গান গেয়েছিল এই বাক্যগুলি হচ্ছে তারই অন্তর্ভুক্ত। (গীতসংহিতা ৪৮:১০) আজকে, লক্ষাধিক যিহোবা সাক্ষীদের ঐকতান তাঁর রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রশংসা করছে ও তাঁর নাম জানাচ্ছে। এই কাজটি ৩০০ এরও বেশি ভাষায় ২৩২টি দেশে ও সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জে করার দ্বারা, তারা আক্ষরিকভাবে “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” পৌঁছাচ্ছে।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ভাষাগত পটভূমিকা থেকে আসা সত্ত্বেও কোন্ জিনিসটি লোকেদের প্ররোচিত করছে যিহোবার প্রশংসা করতে? ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধই হল একটা প্রধান কারণ। আধ্যাত্মিক সত্য তাদের মুক্তি দিয়েছে নানা কুসংস্কার এবং দাসত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি যেমন অনন্তকালীন যন্ত্রণা তার থেকে। (যোহন ৮:৩২) এছাড়াও সত্য তাদের সাহায্য করেছে ঈশ্বরের অপূর্ব গুণগুলিকে উপলবদ্ধি করতে যেমন, তাঁর প্রেম, শক্তি, প্রজ্ঞা এবং ন্যায়বিচার যা দয়ার সাথে সঙ্গতি বজায় রাখে। তাঁর একজাত পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে, মানবজাতির জন্য মুক্তির মূল্য হিসাবে ঈশ্বরের যে দান, সে সম্বন্ধে জ্ঞান সহৃদয় ব্যক্তিদের প্ররোচিত করে যিহোবাকে প্রশংসা ও সেবা করতে।
বাইবেলের বই প্রকাশিত বাক্য অনুসারে, স্বর্গীয় ঐকতান বিস্ময় প্রকাশ করে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) এই ধরনের প্রশংসা কেবলমাত্র কর্তব্যের খাতিরেই আসে না। বরঞ্চ, যিহোবার প্রতি সম্মান থেকেই তা আসে।
সুসমাচার ঘোষণা করার দ্বারা ঈশ্বরের প্রশংসা করুন
যিহোবাকে প্রশংসা করার দ্বারা একজন, যীশু খ্রীষ্টের অতি উত্তম উদাহরণকে অনুকরণ করে, যিনি ছিলেন ঈশ্বরের প্রধান প্রশংসাকারী। যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করার মানে হল ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা। (মথি ৪:১৭, ২৩; ২৪:১৪) যিহোবাকে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে এই প্রচার কাজ হল জগদ্ব্যাপী সবচাইতে মহান প্রচেষ্টা।
এই প্রচার কাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ যে বাইবেল এটিকে স্পষ্টভাবে পরিত্রাণের সাথে সংযোগ করছে। রোমীয় ১০:১৩-১৫ বলে: “‘যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে। তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে? যেমন লিখিত আছে: ‘যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়!’”
শুধুমাত্র গতবছরেই কেবল যিহোবার সাক্ষীরা প্রচার কাজে এক কোটিরও বেশি ঘন্টা ব্যয় করেছে। আর এইভাবে ঈশ্বরকে প্রশংসা করার দ্বারা কী উত্তম ফলই না এসেছিল! জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণ চিত্রিত করার দ্বারা প্রায় ৩,১৪,০০০ জন প্রশংসার ঐকতানে যোগদান করে।
তথাপি, ১,২২,৮৮,৯১৭ জন যারা ১৯৯৪ সালে খ্রীষ্টের মৃত্যুর স্মরণার্থক সভায় যোগদান করেছিল তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদের মধ্যে ৭০,০০,০০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি এখনও সুসমাচার প্রচার করার দ্বারা যিহোবার প্রশংসা করতে আরম্ভ করেনি। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি পরিশেষে আরও লক্ষাধিক সংখ্যায় প্রশংসার ঐকতানকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই আগ্রহী ব্যক্তিদের যিহোবার প্রশংসাকারী করে তোলার জন্য কী করা যেতে পারে?
সাহায্য প্রাপ্তি
অনেক আগ্রহী ব্যক্তিদের হয়ত যিহোবাকে প্রশংসা করার ইচ্ছা আছে কিন্তু তারা মনে করে যে তাদের যোগ্যতা নেই। তারা ভাল করবে যদি তারা গীতরচকের কথাগুলি মনে রাখে: “আমি পর্ব্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব; কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে? সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা।” (গীতসংহিতা ১২১:১, ২) বস্তুতপক্ষে, গীতরচক যিরূশালেমের পর্বতের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন যেখানে যিহোবার মন্দির এবং তাঁর ঈশতান্ত্রিক সরকারের পার্থিব প্রাঙ্গন অবস্থিত ছিল। এখান থেকে আমরা সঠিক উপসংহারে আসতে পারি যে ঈশ্বরকে প্রশংসা করার ও তাঁর রাজ্যের সংবাদ প্রচার করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য একমাত্র যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আসে।—গীতসংহিতা ৩:৪; দানিয়েল ৬:১০.
আজকে, যারা যিহোবার প্রশংসা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তারা তাঁর পার্থিব সংগঠন থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সাক্ষীরা আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে বিনা মূল্যে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার মাধ্যমে সাহায্য করে থাকে। এই শিক্ষামূলক কর্মসূচিটির মধ্যে বাইবেলের মতবাদ ছাড়াও আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত। এটা ছাত্রকে সাহায্য করে সে যা শিখছে তার প্রতি এবং যিহোবা যে সংগঠনকে ব্যবহার করছেন তার প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে।
এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, যে সাক্ষীটি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছেন তিনি এবিষয় নিশ্চিত হন যে নবপ্রাপ্ত সত্যটি যেন কেবলমাত্র মাথার মধ্যে না থাকে কিন্তু এটা যেন হৃদয়েও প্রবেশ করে। আর শিক্ষক যেন কখনও ছাত্রকে এটা দেখানোর থেকে বিরত না থাকেন যে যিহোবা কিভাবে তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করছেন পৃথিবীতে তাঁর উদ্দেশ্যকে সাধন করার জন্য। যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ একত্রে পৃথিবীব্যাপী ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন (ইংরাজি) এই ব্রোশারটি এবং যিহোবার সাক্ষীবৃন্দ—নামের পিছনে যে সংগঠন (ইংরাজি), নামক ভিডিও টেপটি এই উদ্দেশ্য সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রায়ই সাহায্যকারী প্রমাণিত হয়েছে।
যিহোবার ভাবী প্রশংসাকারীদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে খ্রীষ্টীয় সভাগুলিও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার প্রথম দিকেই ছাত্রদের খ্রীষ্টীয় সভায় যোগদান করার জন্য আহ্বান জানানো যেতে পারে। কালক্রমে, সেও বুঝতে পারবে সমস্ত সভাতে নিয়মিত যোগদান করা ও অংশ গ্রহণ করার গুরুত্বকে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) অধ্যক্ষেরা সভাগুলি যা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে গঠনমূলক ও কার্যকারী, তা প্রস্তুত করার দ্বারা সহবিশ্বাসী ও যিহোবার ভাবী প্রশংসাকারীদের অমূল্য সাহায্য প্রদান করতে পারেন।
যিহোবাকে প্রশংসা করতে ছোটদের সাহায্য করুন
অনেকের মধ্যে ছোটরাও অন্তর্ভুক্ত যারা অদূর ভবিষ্যতে সুসমাচারের প্রকাশক হতে পারে। বিশেষকরে পিতাদের বাইবেল-ভিত্তিক দায়িত্ব রয়েছে তাদের সন্তানদের “প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া” তোলা। (ইফিষীয় ৬:৪) যখন ঈশ্বরীয় পিতামাতার দ্বারা সঠিকভাবে শাসন পাওয়া যায়, তখন খুব ছোট শিশুরাও যিহোবার প্রশংসা করার ইচ্ছাকে গড়ে তুলতে পারে।
আর্জেন্টিনার একটি ছোট মেয়ে অনেক মাস ধরে মণ্ডলীর প্রাচীনদের বারে বারে বলে তাকে সাহায্য করার জন্য যাতে করে সে রাজ্যের প্রকাশক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। একসময়, মেয়েটির বাবা-মা ও মণ্ডলীর প্রাচীনেরা তাকে অবাপ্তাইজিত প্রকাশক হওয়ার অনুমতি দেন। মেয়েটি ইতিমধ্যেই রাজ্যের সংবাদ সক্রিয়ভাবে ঘরে ঘরে উপস্থাপনা করতে শুরু করে দেয়। যদিও সেই মেয়েটির বয়স ছিল পাঁচ বছর এবং সে জানতো না যে কিভাবে পড়তে হয়, কিন্তু বাইবেলের কিছু অংশ কোথায় রয়েছে তা সে কন্ঠস্থ করে ফেলেছিল। শাস্ত্র পদটি বের করার পর সে গৃহকর্তাকে বলত তা পড়তে এবং এরপর সে তার ব্যাখ্যা করত।
এটা পরিষ্কার যে প্রাচীনেরা এবং পিতামাতা উভয়ই, যারা যিহোবার প্রশংসা করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে তাদের উৎসাহ ও সাহায্য করার মাধ্যমে অনেক উত্তম কিছু সম্পাদন করতে পারেন।—হিতোপদেশ ৩:২৭.
যিহোবার সাথে এক অনন্তকালীন সম্পর্ক
কিন্তু, আপনি নিজে যদি যিহোবার সাক্ষীদের সাথে অনেক দিন ধরে মেলামেশা করছেন অথচ এখনও তাদের প্রচার কাজের সাথে যুক্ত হননি তাহলে কী বলা যায়? নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলি নিজেকে করা হয়ত আপনার জন্য উপকারী হবে, ‘আমি কি বিশ্বাস করি যে আমি সত্য পেয়েছি এবং যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর? আমি কি নিশ্চিত যে ঈশ্বরের রাজ্যই হল মানবজাতির সমস্যাগুলির একমাত্র সমাধান? যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে এমন সমস্ত মিথ্যা ধর্ম এবং জাগতিক রীতিনীতি ও কার্যকলাপকে কি আমি পরিত্যাগ করেছি? ঈশ্বরের প্রতি ও তাঁর ধার্মিক মানের প্রতি আমার কি গভীর প্রেম আছে?’ (গীতসংহিতা ৯৭:১০) আপনি যদি আন্তরিকভাবে এই প্রশ্নগুলির উত্তরে হ্যাঁ বলতে পারেন, তাহলে যিহোবাকে প্রশংসা করার ক্ষেত্রে, কী আপনাকে বাধা দিচ্ছে? —তুলনা করুন প্রেরিত ৮:৩৬.
যিহোবাকে প্রশংসা করার অন্তর্ভুক্ত সুসমাচার প্রচার করা ছাড়াও আরও বেশি কিছু। যদি আপনি সঠিক জ্ঞান নিয়ে থাকেন, আপনার যদি সত্য বিশ্বাস থাকে এবং আপনি যদি আপনার জীবনকে ঐশিক যোগ্যতা অনুসারে মানিয়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে ঈশ্বরের সাথে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে হবে। কিভাবে? প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর কাছে উৎসর্গ করা এবং তারপর জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার দ্বারা তা চিত্রিত করা। অনন্ত জীবন বিপন্ন। অতএব যীশুর উপদেশ অনুসারে এখনই কাজ করুন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর; কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।”—মথি ৭:১৩, ১৪.
যেহেতু এই বর্তমান বিধিব্যবস্থা শেষের এক চরম পর্যায় এগিয়ে চলেছে, অতএব ইতস্তত করার এখন আর সময় নেই। এই মুহূর্তে যিহোবার সাথে অনন্তকালীন সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য পদক্ষেপ নিন। অবশ্যই, এখনই হল ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার সময়, আপনি কি যিহোবার প্রশংসা করবেন?